নিজেকে স্বার্থক মানুষ করতে পারলে জাতি স্বার্থক হবে।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৯:৫১:৫১ রাত
দেখতে দেখতে একটি বছর পার হয়ে গেল।আর চারদিন পরই নতুন বছরে পদার্পন করবো আমরা।গত একটি বছর কেটেছে নানা অভিজ্গতায়।একটি সরকার শেষ হয়ে বিনা ভোটে আর একটি সরকার ক্ষমতায় এলো।বিরোধীদলের হুমকি ধমকির মধ্যে বছর শেষে আবার অন্ধকার ছেয়ে আসছে মনে হচ্ছে।নিজের ফেলে আসা দিনগুলো নিয়ে মনের আয়নায় বার বার দেখছি।কতটুকু স্বার্থক হয়েছি জানিনা তবে আগের তুলনায় কিছু পরিবর্তনসূচিত হয়েছে।আমার মত হয়ত অন্যরাও আয়নায় দেখছেন নিজের ফেলে আসা দিনগুলো।ফেলে আসা দিনগুলো থেকে চমৎকার তথ্য সংগ্রহ করা যায়।যদি একটি লিষ্ট তৈরি করা যায় তাহলে তুলনা করা যেতে পারে।ভুলভ্রান্তিগুলো উপড়ে ফেলে ভাল ভাল কাজগুলো রেখে দেয়া যায়।আবার ভাবনার জাল বুনা যায় আগামি একটি বছর কি করবো? কেমন করে কাজ করবো? কিভাবে কাজের ক্ষেত্রে নিজেকে নবউদ্দমে সাজিয়ে নিব?
জীবন তার বিপন্ন আলসে যে জন কাটায় মুহূর্ত।আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই আমাদের কল্যান বা অকল্যান।যদি সময়গুলোকে ভালভাবে কঠিন পরিশ্রম দিয়ে সাজিয়ে নেয়া যায় তাহলে কল্যান অবশ্যম্ভাবি।আর যদি আলসে কাটে সময় তাহলে অকল্যানের বোঝা বইতে হবে বই কি?সফলতা ও ব্যর্থতা প্রাত্যহিক জীবনে পাশাপাশি চলে।সফল হলে আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে,মন থাকে উৎফুল্ল আবার আর একটি কাজ করতে উৎসাহ জাগে।আর ব্যার্থতা বেদনা দেয় কিন্তু ব্যার্থতা থেকে জন্ম নিতে অপার সম্ভাবনা ও একটি কঠিন বিজয়।রবার্ট ব্রুস একটি মাকড়সাকে ছয় বার ব্যার্থ হয়ে সাত বারে বিজিত হতে দেখে নিজের বিজয় নিয়ে আসতে সমর্থ হয়েছিলেন।আমাদের প্রত্যকের জীবন একটি ক্ষনস্হায়ী জীবন।এই জীবনে পূর্ন স্বার্থকতা নেই আবার পূর্ন বেদনাও নেই।কখনো ভাল কিছু ঘটে আবার কিছু খারাপ ঘটে যায়।এই দুই অবস্হাকে আমাদের মেনে নিয়ে সুখী হতে হয়।যারা এই দুই অবস্হায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে তাদের জন্য রয়েছে বিরাট প্রতিদান।
আমি ব্যার্থতার বেদনাকে ক্ষনস্হায়ী করে নিতে সদা আগ্রহী সেজন্য সফলতাপ্রাপ্তির অবগাহন করাকেই অধিক পছন্দ করি। তাই ফেলে আসা সময়কে মূল্যায়ন করতে গেলে সব সময়ই মনে হয় আমি তো ভালোই ছিলাম।নিজের ও পরিবারের কাজকে প্রাধান্য দিয়েছি এ কারনে যে রাসূল সা: বলেছেন,পরিবার সংরক্ষন হলো উত্তম ছদাকা।আত্মীয় প্রতিবেশীর হক্ক আদায়ে সচেষ্ট ছিলাম।জাতীর মননশীলতার পরিবর্তনে লেখালেখি করে অসংখ্য মানুষের সাথে সখ্যতা করতে সমর্থ হয়েছি।বাকী জীবনে এ কাজ অব্যাহত রাখার অংগীকার রয়েছে।এই সময়গুলো একমাত্র আমার রবের জন্যই বরাদ্ধ এবং কোন ফলাফল পার্থিব জীবনে কারো কাছ থেকে আশা করিনা একমাত্র কেয়ামতের দিন পাওয়ার আশা রাখি কারন সেদিন আল্লাহ ছাড়া আমাকে সহযোগিতা করার আর কেউ থাকবে না।গত সালটি কেটেছে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে। আমার মনের মতো করে যা আমি চেয়েছি, যেভাবে চেয়েছি সব কাজ সেভাবে হয়েছে বলেই প্রাপ্তির আনন্দ অনেক বেশি।একজন হিসাব রক্ষক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি সেবামূলক কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়িত রাখতে পছন্দ করি। তাই আমি আমার পেশাগত জীবনের সঙ্গে সাংসারিক ও জনকল্যাণমূলক সব কাজই সমানভাবে এগিয়ে নিতে চাই। আমার পুরো সময়টাকে আমি বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে নেই এবং চেষ্টা করি দক্ষতার সঙ্গে সে সময়গুলোকে ব্যবহার করে আমার কাজের আনন্দকে পুরোপুরি উপভোগ করতে।তাই আমার প্রতিটি দিন কাটে ব্যস্ততার সঙ্গে, কেননা আমি মনে করি 'কাজই ধর্ম'। পাশা পাশি অনেককেই দেখি অশ্লিতায় ঢুবে থাকে ইন্টারনেট ও ফেসবুকে।আবার অনেকে দুনিয়ার সামান্য প্রাপ্তির জন্য অনৈতিকতায় ডুবে থাকে। আল্লাহর কাছে তখন ফরিয়াদ জানাই এই বলে ,হে আমর রব মানুষকে রক্ষা কর এগুলোর অকল্যান থেকে।সবচেয়ে বড় অকল্যানের মধ্যে এখন ইন্টারনেট ও ফেস বুক হলো বড় অকল্যান-ব্যাবহার না জানার কারনে।
হে আল্লাহ, তুমি মুসলিম জাতিকে এ ফেসবুকের যন্ত্রণা থেকে বাঁচাও। এই পৃথিবীতে সাম্প্রতিককালে ফেসবুক নামক জিনিসটি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ক্লাস ফাইভে পড়া বালক-বালিকা থেকে শুরু করে মৃত্যুপথযাত্রী ৯০-৯৫ বছরের বুড়াবুড়ি পর্যন্ত আজ ফেসবুক জ্বরে আক্রান্ত। তারা ফেসবুকের মাধ্যমে প্রেম করে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হয় আবার তালাকও দিয়ে দেয়। তারা অহরহ পরকীয়া এবং অসম প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। ১৫-১৬ বছরের কিশোরী অনায়াসে ৭০-৭৫ বছরের বুড়ার গলা জড়িয়ে ধরে প্রেম নিবেদন শুরু করেছে। অন্যদিকে ২০-২২ বছরের ছোকড়া তার নানী বা দাদির বয়সী বৃদ্ধার গলায় প্রেমের মালা পরানোর জন্য দিওয়ানা হয়ে পড়েছে। বিবাহিত পুরুষ তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যার ভালোবাসা ভুলে অন্য বিবাহিতা নারীর সংসার ভাঙছে। আবার বিবাহিতা মহিলারাও সমান তালে পরকীয়ার টানে উন্মত্ত হয়ে বিবাহিত পুরুষদের ফাঁদে ফেলছে। এসব অপকর্ম করার জন্য বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানি অতি সাশ্রয়ী দামে ইন্টারনেট দিচ্ছে। অন্যদিকে খুবই কম দামে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বাহারি মোবাইল সেটও পাওয়া যাচ্ছে। ফলে মহানগরের বাসিন্দারা সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ফেসবুক নামক প্রেম-পীরিতি আর পরকীয়ার রূপ সাগরে।
ফেসবুকের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে বয়স্ক এবং বিবাহিতরা রাত-বিরাতে পার্কে চলে আসে। তারা প্রাথমিক হাতাহাতির কাজটি সেখানেই সেরে নেয়। পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য কোনো হোটেল, বাগানবাড়ি, বন্ধুর বাড়ি কিংবা সুযোগমতো নিজেদের বাড়িকেই বেছে নেয়। তারা জীবনের গোপনীয় কর্ম এবং শরীরের গোপন বিষয় নিয়ে খুবই অশ্লীল এবং বাজে কথা বলে। তারা জড়াজড়ি করে ছবি তোলে। তারা নিজেদের স্বামী বা স্ত্রীর বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ তৈরি করে পরস্পরকে শোনায় এবং ফন্দি অাঁটতে থাকে কী করে আপন আপন সংসারে আগুন লাগিয়ে নতুন সংসার গড়া যায়। তাদের এই পাপ কর্ম অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনার জন্ম দেয়। প্রতিটি সংসারে মারামারি, কাটাকাটি, অশান্তি, বিবাহবিচ্ছেদ থেকে খুন-খারাবি পর্যন্ত ঘটে যায়। পরিবারের ছোট্ট সোনামণিরা এবং বৃদ্ধ পিতা-মাতারা আমার মতো অসহায় হয়ে তোমার কাছে ফরিয়াদ জানাতে থাকে।ফেসবুকের সবচেয়ে মারাত্মক ধ্বংসাত্মক দিক হচ্ছে তারা আমার কোমলমতি একটি প্রজন্মকে ভবিষ্যতের জন্য শেষ করে দিচ্ছে। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে সারা দিন-রাত ফেসবুকের মধ্যে ডুবে থাকে। তারা প্রেম-ভালোবাসার টানে কখনো সমবয়সীদের সঙ্গে অনৈতিক শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। আবার কখনো বা ওসব প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে নিজে শেষ হয় এবং পুরো পরিবার, দেশ ও জাতিকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। এ কারণে কত পরিবার যে পুড়ছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
আগামী বছরের শুরুতে আমরা আমাদের জীবনকে স্বার্থক করার জন্য সব অশ্লীলতাকে বন্ধ করে দিব বলে অংগীকার করতে পারি কি?আমরা অনেকে এগুলো থেকে ভাল কিছু থাকলে সংগ্রহ করছি খারাপগুলোকে বর্জন করছি।বাজারে অনেক জিনিসের সমাগম থাকবে সেটা নির্ভর করবে ক্রেতার রুচি ও পছন্দের উপর।আমরা যদি আমাদের খারাপ রুচিবোধকে ভাল দিয়ে সাজাতে পারি তাহলে তাহলে নিশ্চই আমাদের উন্নতি অবশ্যম্ভাবি।আমরা আমাদের মত করে কিছু ছোট ছোট প্রজেক্ট হাতে নিতে পারি।সমাজের অসহায় ও গরীব মানুষদের কল্যানে সমিতি গঠন করতে পারি যাতে তাদের জীবন মানকে উন্নত করা যায়।এলাকায় কুটিশিল্প,মৎস খামার,পতিত জমিগুলোতে খামার বা ফলফলাদির চাষ যগ্গে সহায়তা দান,মানুষকে দ্বীনের কাজগুলোর প্রশিক্ষনদান,মাদ্রাসা মসজিদ গুলোতে সহায়তা করন ইত্যাদি কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারি।পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির আন্দোলনকে আমরা সফলভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।আমরা যে যে পেশায়ই থাকি না কেন ইচ্ছে থাকলে দেশকে সাহায্য করতে পারি।আমরা প্রতিটি শিক্ষিত মানুষ যদি বছরে ৫ জনকে শিক্ষিত করতে পারি তাওতো অনেকে।সমাজে এমন অনেক আছেন যারা ইচ্ছে করলে একটা সমাজকে আলোকিত করতে পারেন কিন্তু তারা করেননা।এমনও মানুষ রয়েছেন ২০/৩০ বছরে তার গ্রামে যাচ্ছেন না আর তিনি রাজনীতি করছেন মানুষের জন্য। জাতির জীবনে এরা ভন্ড ও ঠক নয় কি?
আমাদের অধিকাংশ মানুষের জীবন কাটছে অলসতায়।রাতজেগে দু'চারজন ভাল মানুষ ছাড়া অধিকাংশ টকশোর ভন্ডদের আবল তাবল কথা শুনে,একে অন্যের বিরুদ্ধে গীবত ও চোগলখুরি করে,অপরাজনীতির পিছনে হেঁটে হেঁটে।এভাবে যদি আগামি সময়গুলো কাটানোর বাসনা রাখি তাহলে আর পরিত্রান নেই।আমি আশাবাদি,আশাহত হতে চাই না।আমি অংগীকারাব্ধ গত বছরের মন্দকাজগুলো থেকে কাটিয়ে উঠবো ইনশাআল্লাহ আর এভাবেই প্রতি বছরের মতো আগামি বছরও কাটবে ভীষণ ব্যস্ততায়, সে আশা করে জীবনকে স্বার্থক করতে চাই।নিশ্চই অনেক স্বার্থক মানুষের সমষ্টিই একটি জাতিকে উন্নত ও পরিশীলিত করতে পারে।
বিষয়: বিবিধ
১২৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন