বছরের শেষ রাত্র - এক অসম্ভব বেহায়াপনা ও ব্যাভিচারের রাত্র।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৫:০২:০২ বিকাল
কৈশোর ও যৌবনের মাঝামাঝি সময় সন্তানদের পাশে বাবা মাকে থাকতে হয় একজন বিচক্ষন ডাক্তারের ভূমিকায়।
আঠারো থেকে বাইশ বছর বয়সটা অদ্ভুত এক সময়। যা আমরা বয়োজেষ্ঠরা পেরিয়ে এসেছি আর যারা এ পথে ফাঁড়ি জমিয়ে পার করছে। কৈশোরের সিঁড়ি থেকে যৌবনের সিঁড়িতে পা রাখার ঠিক আগের মুহূর্ত যেন এটা। আশেপাশের মানুষজন ছোট হিসেবেও দেখছে না,আবার কেউ পূর্ণবয়স্ক হিসেবে মেনেও নিচ্ছে না। অদ্ভুত কিছু পরিবর্তন দেখা যায় নিজের মধ্যে।চলাফেরায় উঠাবসায় এক নব দীগন্ত উম্মোচনের এ ক্রান্তিলগ্ন।এ সময়কে কারো উপেক্ষা করার উপায় নেই।আজ আমরা যারা বৃদ্ধের কোঠায় , অবচেতন মনে চিন্তা করলে অতীতের কথামালা গুলো ভেসে আসে।এ বয়সের চন্চলতা এক নতুন জীবনের সন্ধান করতে চায়।এ সময়টা জীবনকে দাঁড় করানোর শ্রেষ্ঠ সময় আবার নিস্তেজ করারও শ্রেষ্ঠ সময়।বিশেষ করে শারিরিক গঠন , যৈবনের উম্মাদনা প্রকটভাবে নাড়া দেয়।কৃষক যেমন ভাল ফলন ফলানোর জন্য জমি চাষ করার একটা পরিকল্পনা নেন আগে থেকেই,প্রতিটি দম্পতিকেও বিয়ের পূর্বেই একটি সঠিক পরিকল্পনার ছক এঁকে নিতে হয়।এই পরিকল্পনায় যদি ব্যার্থতা আসে তাহলে অনাগত ভবিষ্যতে যারা আসবে তাদের জীবনে এর প্রভাব নিশ্চয়ই পড়বে। আর সেজন্যই আমরা পারিবারিক জীবনে দেখি শান্তি ও অশান্তির ফলন।মেয়েদের মধ্যে এই পরিবর্তনগুলো বেশ লক্ষণীয়, ছেলেদের মাঝে অনেকটাই থাকে চাপা।
এ সময় আবার কারো কারো মধ্যে বড় আকারে, আবার কারো মধ্যে ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন আসে। কৈশোরের চঞ্চলতা স্থিমিত হয়ে আসে। নিজেকে নতুন রূপে দেখতে ভালো লাগে। বিভিন্ন ধরনের কথা ভাবতে ভালো লাগে।ভাষার ভাব গাম্ভীর্য বৃদ্ধি পায়। গানের প্রতি মোহ তৈরি হয়।বন্ধুদের নিয়ে ঘুরা ঘুরির প্রবনতা বৃদ্ধি পায়। ছোটখাটো যে ব্যাপারগুলো যা আগে ভালোমতো খেয়ালই করা হয়নি, সেই ব্যাপারগুলোই এখন লক্ষণীয় হয়ে উঠে। এমন অনেক জিনিস- যা আগে বিরক্ত লাগত- সেগুলোই প্রিয় হয়ে উঠে ধীরে ধীরে। কিছুটা স্বাধীনতা পাবার চেষ্টা, সেই সাথে নতুন কিছু করার আগ্রহ জন্মে। প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যায় অনেকেই। যদিও সবার ক্ষেত্রে একই ব্যাপার ঘটে না কিন্তু ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন এই বয়সের সবার মধ্যেই আসে।বাসায় অতিথি এলে এ বয়সের ছেলে মেয়েরা একে অন্যের সাথে মেলামেশা করতে চায়।বাবা মা যদি চোখে চোখে রাখতে চান তা আর কতক্ষন পারেন।উঁকি ঝূঁকি মারা,বাহানা করে বেড়াতে যাওয়া ইত্যাদি এ বয়সের ছেলে মেয়েদের কাজ।যৌবনের উম্মাদনায় একে অন্যের সাথে মন বিনিময় তার ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে স্তিমিত করে ফেলে অনেক ক্ষেত্রেই।এ কারনে ইসলাম অশ্লিলতাকে পরিহার করার জন্য পর্দার ব্যবস্হা করা হয়েছে।সূরা আহযাবের ২৮ থেকে ৩৪ পর্যন্ত অশালিনতা ও অন্তরের এসব ব্যাধির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে যা মেনে চললে পারিবারিক ও সমাজ জীবনে খুব কমই সমস্যার সম্মুখিন হয়।
কৈশোর পার করার পর মানসিকতার পরিবর্তন হয় বড় আকারে। হুটহাট এখানে-সেখানে যাওয়া, এটা-সেটা করে ফেলার প্রবণতা ক্রমশ বাড়তে শুরু করে। আগে যেমন সব পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন ভালো লাগতো, এখন সেসব পারিবারিক পরিবেশে যেতেই লজ্জাবোধ হয়।নিজের নতুন পৃথিবীতে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে ইচ্ছা হয়। কলেজ পার হয়ে ইউনিভার্সিটির আঙিনায় এসে নতুন ভাবে নিজেকে চিনতে শেখার সময় এটা। ইউনিভার্সিটি জীবনের ব্যস্ততার ফাঁকে নিজেকে সময় দেয় অনেকেই। আগের মত চাঞ্চল্যতা ঝেড়ে ফেলে একলা সময় কাটানোতে আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায় এই বয়সে।১৫-১৮ বয়সের কিশোর কিশোরীদের সাথে ৪-৫ বছর বয়েসী বাচ্চাদের খুনসুটি লাগা নতুন কিছু নয়। চঞ্চল বাচ্চাদের দুষ্টুমি ও ছোটবাচ্চাদের কান্না অনেকের কাছে অসহনীয় ব্যাপার মনে হলেও ছোট শিশুদের প্রতি মায়া মমতা বাড়তে শুরু করে আঠারোর পর থেকেই। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে। এই ব্যাপারটি অনেকেই লক্ষ্য করেন না। কিন্তু এই সময়ে বাচ্চাদের উপস্থিতি অনেক আনন্দদায়ক ও উপভোগ্য লাগে। তারুণ্যের এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।বিশেষ করে যৌবনের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মধ্যেই আর একটি জনিস পাওয়ার আশায় হৃদয়কে পুলকিত করে আর এ সময় অনেকে চরম ভাল রেজাল্ট করার আগ্রহে আগ্রহি হয়ে উঠে।কেমন মেয়েটি হবে জীবন সংগিনী।ভাল পরিবেশে নিজেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোন প্রফেশনটা চুজ করলে ভাল।এনগেজমেন্ট রিং ও বিয়ের পোশাকের প্রতি আগ্রহ জন্মে। আমার বিয়েতে এই ধরনের পোশাক পরবো, ওই ধরনের গহনা থাকবে, এনগেজমেন্ট রিংটা এমন হবে এই ধরনের চিন্তা মাথায় আসতে শুরু করে।এ ধাপে আনেকে সফল হয় আর আনেকে বিফল জীবনে প্রবেশ করে।বাবা মা'কে ভালবাসা ও বন্ধুত্বের আলোকে খোলামেলা আলোচনা করতে হয় যেন সন্তান ফসকে না পড়ে।স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যেখানে যেখানে হোছট খেতে পারে তা আলোচনা করা ও সন্তানদের প্রতিনিয়ত মনিটর করা জরুরি। স্কুল ,কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসতে দেরি হলো কেন? বা হোষ্টেলে থাকলে নিয়মিত খবর রাখা এসব বাবা মাকে নিতে হয়।অধিকাংশ ক্ষেত্রে কম বাবা মা ছেলে মেয়েদের খবর রাখে। যার পরিনতি ভোগ করতে হয় পুরো পরিবারকে।বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই বেশির ভাগ প্রেমের উপাখ্যান তৈরি হয়। এই সময়ে প্রেম সম্পর্কিত ব্যাপারটি অনেক আগ্রহ ও গুরুত্বের সাথে নিয়ে থাকে ছেলেমেয়েরা। ক্লাসে কিংবা ইউনিভার্সিটির বিশেষ কোন একজনকে ভালো লাগা শুরু করে। তাকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে। পছন্দের মানুষটির পাশে নিজেকে কল্পনা করে আনন্দ পেতে ভালো লাগে। যদি কারো সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়া হয়, তবে তার সাথে সময় কাটাতে বেশি ভালো লাগে। গভীর রাতে ফোনালাপ করতে পছন্দ করে অনেকে। সেই বিশেষ মানুষটিকেই জীবনের লক্ষ্য বলে মনে করে।ইসলামে এগুলোকে হারাম করা হয়েছে যা বাবা মাকে আগে থেকেই সতর্ক করে দেয়া বা নৈতিক ও ইসলামিক নীতিমালার সাথে যুক্তিগুলো উপস্হাপন করা উচিত। অনেক বাবা মাকে দেখেছি সন্তানের সাথে খোলামেলা আলাপ করতে ল্জ্জাবোধ করেন।রাসূল সা: শরিয়তের ব্যাপার গুলো মহিলা সাহাবিয়াতদের শিক্ষা দিতেন।
অনেকের এ সময় দায়িত্বশীলতা বাড়ে।নিজেকে বড় প্রমাণ করার তাগিদ থেকেই দায়িত্ব নেয়ার প্রবণতা আসে। এমন কিছু কাজ যা আগে করতে চাইত না, সে সব কাজ নিজ দায়িত্বে করে থাকে অনেকেই। নিজের কাজকর্মের প্রতি মনোযোগ বাড়ে। ছোট খাট কাজ ও দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধা ও মনোযোগী হয়ে উঠে মনের অজান্তেই। নিজেকে সবার সামনে দায়িত্বশীল ও কর্মঠ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারলে খুব আনন্দ হয়।নতুন কিছু করতে আগ্রহ প্রকাশ করে ।নিজের ছোট গণ্ডি পার হয়ে কৈশোর পরবর্তী জীবনে পা রেখে নতুন অনেক কিছুই করতে আগ্রহ জাগে এই সময়ে। বন্ধু বান্ধবের সহযোগিতায় এবং প্রভাবে ভালোমন্দ উভয় ধরনের "নতুন" কিছুতে আগ্রহ বাড়ে। ভালো কাজের ক্ষেত্রে বন্ধুদের সাথে মিলে গঠনমূলক কাজে অংশ নেয়ার দিকটি দেখা যায়। অপরদিকে বন্ধু বান্ধবের সাথে মিলে দু একবার ধূমপান অথবা মদ্যপানে আগ্রহী হতে দেখা যায় অনেককেই। এছাড়াও অনেককে পরিবারের কাছে ছোটখাটো মিথ্যে বলে ভ্রমনে বের হওয়ার প্রবণতা দেখা যায় শুধুমাত্র নতুন কিছু করার নেশায়।
আর অনেকের মধ্যে খরচের প্রবণতা বেশি দেখা দেয়। কৈশোর কালে টাকা খরচ ব্যাপারটি ঠিক বোধগম্য না এবং যৌবন বয়সে টাকা খরচের ব্যাপারে মায়া- এই দুইয়ের ঠিক মাঝামাঝি সময় হল কৈশোর পরবর্তী তারুণ্যের সময়। আগে যে জিনিষটি হয়ত টাকা খরচ করে কিনতে বা করতে চাইত না, এখন সেই জিনিষটি সহজেই টাকা খরচ করে কিনে বা করে ফেলা হয়। এই সময়ে অনেক কিছুই ভালো লাগে, সেটা পেতে ইচ্ছা হয়। বন্ধু বান্ধবকে টাকা ধার দিতে দ্বিধাবোধ করে না কেউ।পরবর্তী সময়ে নিজেকে অনেক বয়স্ক ভাবেন অনেকেই। তারই প্রেক্ষিতে নিজের থেকে কমবয়সী ছেলেমেয়েকে নানান বিষয়ে উপদেশ দিতে ভালো লাগে। ছোটদের কিভাবে পড়ালেখা করা উচিত, কি কি করলে ভালো হবে, কেমন ভাবে চলতে হবে এই ধরনের উপদেশ দেয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এমনকি ছোটখাটো অনেক বিষয় আছে যা নিজে কিশোর বয়সে করেছে, সেসব বিষয়েও বাঁধা দিতে চায় ছোটোদের।সবার ক্ষেত্রে একই ধরনের পরিবর্তন আসবে এমন কোন কথা নেই। কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে সবারই একই ধাঁচের পরিবর্তন আসে এই সময়ে।
আমাদের বর্তমান সামাজিক অবস্হা পর্যালোচনা করলে সহজেই অনুমান করা যায়, তরুন সমাজ আজ ইসলামি ঐতিহ্য থেকে অনেক দূরে সরে যাছ্ছে।অনেক বাবা মা চেষ্টা করেও পারিপার্শিকতার কারনে ছেলেমেয়েকে আগলে রাখতে পারেন না। বিগত প্রায় দু’দশক যাবত এ দেশের এক শ্রেণীর তরুণ-তরুণী থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করে আসছে মহা সমারোহে। লাজ-শরমের মাথা খেয়ে সকল প্রকার অশ্লীলতা আর অসভ্যতাকে হার মানিয়ে মেতে উঠে ইংরেজি নববর্ষকে বরণ করে নিতে। ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে ঘড়ির কাঁটা পৌঁছতেই হাজার হাজার তরুণ-তরুণী একযোগে উদ্যাম নৃত্য, বেসামাল আচরণ আর হ্যাপি নিউ ইয়ার, হ্যাপি নিউ ইয়ার ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে আবাল বৃদ্ধবনিতা, সুস্থ-অসুস্থ সকলের ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দেয়। রাত যতই বাড়তে থাকে আনন্দের হিল্লোল ততই যেন উপচে পড়তে থাকে। উচ্চ ভলিউমে উত্তেজক গানের সুর আর উগ্র তরুণ-তরুণীদের সম্মিলিত কন্ঠে ধ্বনিত হয় হ্যাপি নিউ ইয়ার বা শুভ নববর্ষ। আমাদের দেশের কিছু বুদ্ধির ফেরিওয়ালা ও আত্মবিসৃত মিডিয়া এই বেসামাল আচরণ আর বেহায়াপনায় আরও সুড়সুড়ি দিয়ে বলে এসব তারুণ্যের উন্মাদনা। এ সকল জ্ঞানপাপী ও অসাধু মিডিয়ার অনৈতিক সুড়সুড়িতে উন্মাদ হওয়ার এবং বিজাতীয় সংস্কৃতির গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসানোর আগে ভাবতে হবে আমাদের প্রধান ও প্রথম পরিচয় হলো আমরা মুসলমান ও আমরা মু'মিন। মু'মিনের জীবন তো হলো আত্মসমালোচনার জীবন। মহামূল্যবান যে বছরটি আমার জীবন থেকে হারিয়ে কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেল আমার সে বছরটি কীভাবে কেটেছে? আল্লাহ ও রাসূলে সা: এর আনুগত্যে নাকি নাফরমানি আর অবাধ্যতায়। আর যে বছরটির শুভ সূচনা হলো তা কাটাবো কীভাবে? কীভাবে কাটালে খুশি হবেন মহামহিম আল্লাহ পাক ও পরম প্রিয় রাসূলুল্লাহ সা.। একজন মু'মিন মুসলমানের চিন্তা-চেতনা তো এমনটি হওয়াই উচিৎ ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো। নতুন বছরের শুভ সূচনায় মেতে উঠে যতসব ভয়ানক অপরাধে।
সময়ের গুরুত্ব কারো অজানা নয়। এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। কেবল ইসলামই নয়, পৃথিবীর সকল ধর্ম, মতবাদ ও ইজমই সময়ের গুরুত্ব দিয়েছে এবং উপদেশ দিয়েছে সময়কে কাজে লাগানোর। এ কথা সবাই বুঝে ও জানে যে, যে মুহূর্তটি চলে গেল তা আর ফিরে আসবে না। এবং এ কথাও সবাই বুঝে যে, সময়ের অপচয় মানে জীবনের অপচয়। আর কোন বিবেকবান মানুষ কি নিজের জীবন অপচয় করতে পারে? অন্তত একজন মু'মিন তা পারে না। কারণ সে বিশ্বাস করে যে, জীবনের মহামূল্যবান সম্পদ, সময় অপচয়ের হিসাব তাকে দিতে হবে। এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে আল্লাহ'র দরবারে। অথচ নির্মম ও নিদারুণ বাস্তবতা হলো-এই অশ্লীল ও বিজাতীয় উৎসব উপলক্ষে আমরা নির্দয়ভাবে আমাদের মহামূল্যবান সময় ধ্বংস করে চলছি। এই অমূল্য সম্পদ ধংসের মহোৎসব হয় থার্টি ফার্স্ট নাইট আসার বেশ আগে থেকেই। এই উচ্ছৃঙ্খল পশ্চিমা কালচার ও নষ্টামী উদযাপন করতে গিয়ে প্রচুর অর্থেরও অপচয় হয়।অবৈধ অর্থের আগমনে অনেকেই এই অনুষ্ঠান উদযাপন করে থাকে বিদেশের মাটিতে। কী পরিমাণ অর্থের অপচয় তা সহজেই অনুমান করা যায় নাইট ক্লাব, অভিজাত হোটেলগুলোর জমকালো আয়োজন দেখেই। অথচ এ ব্যাপারে এসেছে কঠোর সতর্কবাণী। আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, “আত্মীয়-স্বজন, অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকে তাদের হক দিয়ে দিন আর কখনই অপব্যয় করবেন না। নিশ্চয় অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার প্রভুর প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।” (সূরা ইসরা:আয়াত ২৬-২৭)। এ রাত্রিতে পর্দার বিধান লঙ্ঘিত হয় চূড়ান্তভাবে।পর্দা ও মানবিকতার সকল বাঁধন ছিন্ন করে চরম নির্লজ্জতা ও পাশবিকতায় মেতে উঠে বোধহীনরা। অথচ মানব সংসারে পর্দার গুরুত্ব সীমাহীন। কুরআনে পাকে ইরশাদ হয়েছে, “তোমারা নারীদের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এই বিধান তোমাদের (পুরুষদের) এবং তাদের (নারীদের) অন্তরের জন্য অধিক পবিত্রতার কার্যকর উপায়।” (সূরা আহযাব :আয়াত ৫৩) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, “হে নবী আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা ও মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন স্বীয় চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। (সূরা আহযাব :আয়াত ৫৯)। সাহাবি আবু উসামা রা. বলেন, মহানবী সা. ইরশাদ করেন, “যে মুসলমান কোন রূপসীর রূপ লাবণ্যে দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে স্বীয় দৃষ্টিকে অবনত করে ফেলে তাকে আল্লাহ্ তায়ালা এমন ইবাদত করার তাওফিক দিবেন যার স্বাদ সে অনুভব করতে পারবে।” (আহমাদ)।
এ রাতে ব্যভিচারে লিপ্ত হয় অসংখ্য তরুণ-তরুণী। ব্যভিচার মূলত সতর্কতার বাঁধা ডিঙ্গিয়ে সতীত্বের বিপক্ষে চরম সীমায় উপনীত হওয়া ও আল্লাহ'র বিধানাবলীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিদ্রোহ ঘোষণার নামান্তর। ব্যভিচার স্বয়ং একটি বৃহৎ ও ভয়াবহ অপরাধ, তদুপরি সে নিজের সাথে বয়ে নিয়ে আসে আরও শত শত অপরাধ এবং এর অশুভ ফলাফল প্রকাশ পায় সমগ্র মানবতার বিপর্যয় ও ধ্বংসের আকারে। পৃথিবীতে যত হত্যা ও লুন্ঠনের মতো জঘণ্য ঘটনাবলী হয়, অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, অধিকাংশ ঘটনার কারণ কোন নারী ও তার সাথে অবৈধ সম্পর্ক। এছাড়া ব্যভিচার নারী-পুরুষকে নিক্ষেপ করে সুমহান মর্যাদার আসন থেকে নোংরা নর্দমায়। মানব সমাজকে রূপ দেয় পশুর সমাজে। মূলত এ কারণেই নানাবিধ অপরাধের যেসব শাস্তি কুরআন-হাদীসে নির্ধারিত রয়েছে তন্মধ্যে ব্যভিচারের শাস্তি সবচেয়ে ভয়াবহ ও কঠোরতর। এক বর্ণনায় মহানবী সা. ব্যভিচার থেকে সতর্ক করে বলেন, “হে লোক সকল তোমরা ব্যভিচারকে ভয় কর। কেননা তার ছয়টি অশুভ পরিণাম রয়েছে। তিনটি দুনিয়ায় ও তিনটি আখেরাতে। দুনিয়ার তিনটি হলো- (১) দেহের সৌন্দর্য নষ্ট কওে, (২) অভাব-অনটন ডেকে আনে, (৩) আয়ুষ্কাল হ্রাস করে। আর পরপারের তিনটি হলো- (১) আল্লাহ্র অসন্তুষ্টি, (২) পরকালের হিসাবে মন্দ পরিণাম এবং (৩) দোযখের আযাব। গান-বাজনা থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ। অথচ গান বাজনা ইসলামে হারাম ও ভয়াবহ অপরাধ। এ রাতে মাদক দ্রব্য সেবনের মাত্রা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। নাইট ক্লাব ও অভিজাত হোটেলগুলোতে বসে মদের আসর। তরুণ-তরুণীদের প্রলুদ্ধ করার লক্ষ্যে থাকে নানা রকম আয়োজন। ফলে বছরের প্রথম রাতটি পংকিল হয়ে উঠে নারী আর মদে। মানব জমিন পত্রিকার এক রিপোর্টে প্রকাশ- “রাত ০২.০৩ মিনিট বারিধারার দিক থেকে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে আসছিল এক মাতাল যুবক, সাথে ছিল নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ে থাকা তিন তরুণী। পুলিশ যতগুলো গাড়িকে চ্যালেঞ্জ করে চেক করে সব কটিতেই ছিল মাতাল তরুণ-তরুণী, বিয়ার, হুইস্কির অসংখ্য ক্যান, বোতল। (মানব জমিন : ১ জানুয়ারি ২০০১) “যুগান্তরের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে এ রাতে হোটেল সোনারগাঁও, শেরাটন, ঢাকা রিজেন্সি, রেডিসন ও পূর্বাণীতে জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ সব অনুষ্ঠানে পানীয় ছাড়াও রাখা হয়েছে নানা আয়োজন। ইতোমধ্যেই এসব অনুষ্ঠানের টিকিট শেষ হয়ে গেছে। (যুগান্তর : ৩১ ডিসেম্বর ২০০৯) অথচ এই সর্বগ্রাসী মাদক ডেকে আনে ইহকাল ও পরকালের ভয়াবহ বিপর্যয়। আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, “হে ঈমানদারগণ! নিশ্চই মদ, জুয়া, পূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্যবস্তু ও শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর। এতে তোমরা সফল হবে। নিশ্চই শয়তান তো চায় মদ ও জুয়ার দ্বারা তোমাদের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহ্র স্মরণ ও নামাযে বাধা দিতে। অতএব তোমরা কি এ কাজগুলো পরিহার করবে?” (সূরা মায়েদাহ :আয়াত ৯০-৯১)
থার্টি ফার্স্ট নাইটের আরেকটি জঘণ্য দিক হলো এটি একটি বিজাতীয় সংস্কৃতি। খ্রিস্টান জাতি তাদের বর্ষবরণ উপলক্ষে এ রাতে উন্মাদ হয়। বিজাতির অন্ধ অনুকরণের উন্মাদনায় আমাদের দেশের এক শ্রেণীর আত্মবিসৃত মুসলিম তরুণ-তরুণীও উন্মাদ হয় এ রাতে। কোন আত্মমর্যাদাশীল জাতি নির্বিচার পরানুকরণের শিকার হতে পারে না। পরন্তু স্বমহিমায় ভাস্বর আমাদের গর্বের ধন ইসলামে বিজাতীয় অনুকরণ নিষিদ্ধ। রাহমাতুল্লিল আ'লামিন রাসূল সা: এর ভাষায় “যে বিজাতীয় সাদৃশ্য গ্রহণ করবে সে তাদেরই একজন পরিগণিত হবে।” (আবু দাউদ ) অন্য বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেন, “তোমরা পথ-পন্থা, রীতি-নীতি, চাল-চলন ও লেবাস-পোশাকে পৌত্তলিকদের প্রতিকূলে চলো, অনুকূলে নয়।” (ছহি বুখারী )
এ রাতের উন্মাদনা ও বাঁধ ভাঙ্গা বিকৃত উল্লাস এতোটাই প্রকট রূপ লাভ করে যে, রীতিমতো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। পাঠকবৃন্দ লক্ষ করুন, আমরা আসলে কোন দেশে বসবাস করছি। প্রশাসন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সকলেই জানে “অপ্রীতিকর” ঘটনা ঘটবে। অতীত বলে এ রাতে অসংখ্য অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। অপরদিকে এই ‘উৎসব’ পালনে দেশ-জাতির কোন স্বার্থ কিংবা লাভও নেই। এরপরও কোন ঠেকায় এই উৎসব নামের নষ্টামী পুলিশ ও বিশেষ ফোর্সের পাহারায় একটি ইসলামী রাষ্ট্রের সরকার উদযাপনের সুযোগ দেয়-তা আমাদের মতো সাধারণ নাগরিকের জানার উপায় নেই। তবে এতোটুকু বলতে পারি, এই নোংরা ও বর্বর কালচারটি আমদানি করেছেন এদেশেরই কিছু বুদ্ধির ফেরিওয়ালা। এরা একটি শালীন ও সভ্য সমাজের বুনিয়াদ স্থাপনের পরিবর্তে নষ্টামী ও অশ্লীলতার নর্দমা সৃষ্টিতেই বেশি পারঙ্গম। আজব ব্যাপার হলো-এরাই আবার দেশবাসীকে নছিহত করেন- মাদক, সন্ত্রাস ও নারী নির্যাতনকে না বলুন। এভাবে উচ্ছৃঙ্খলতা ও পাপাচারের অসংখ্য উপলক্ষ তৈরি করে মাদক, সন্ত্রাস ও নারী নির্যাতন বন্ধ করা কি আদৌ সম্ভব? রুচির বিকৃতি না ঘটলে কোন মানুষ পাপ-পঙ্কিলতা ও নোংরামীতে ভরপুর থার্টি ফার্স্ট নাইট নামের এই বিজাতীয় উৎসব পালন করতে পারে না। মুসলিম পিতা-মাতার সন্তানেরা তো নয়ই। এই ধরনের পাপাচার ও নোংরামী বন্ধ করতে সচেষ্ট হওয়া প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের অপরিহার্য কর্তব্য। আর একটি মুসলিম দেশের অভিভাবক হিসেবে দেশের সরকারের কর্তব্য এই ধরনের চরিত্র বিধ্বংসী ও ঈমানঘাতী বিজাতীয় উৎসব কঠোর হস্তে রোধ করার যাবতীয় ব্যবস্থা করা। তবে আমাদের সবার উচিত পারিবারিক বন্ধনকে আরো সুদৃড় করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।পাড়ায় পাড়ায় সুস্হ ইসলামি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুলতে পারলে মা'রা সন্তানদের নিয়ে অবসর সময়গুলো কাটাতে পারেন।আমাদের মিডিয়াগুলো যদি অশ্লিলতা পরিহার করে সমাজ বিনির্মানে প্রোগ্রাম তৈরি করতে পারেন তাহলে তারা বেড়ে উঠবে সঠিক বাড়ায়। মাদক ও অন্যান্য ব্যাপারে সরকার যদি কঠোর নীতি গ্রহন ও আইন শৃংখলা বাহিনী যদি তাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করে অসম্ভব নয় আমাদের সন্তানরা আবার নতুন ভাবে গড়ে উঠবে।আর প্রত্যেক বাবা মা'কে ছেলেমেয়ের নেগেটিভ দিকগুলোকে একজন বিচক্ষন ডাক্তারের ভূমিকায় অবতীর্ন হয়ে তাদের সুস্হ করে তোলার দায়িত্ব নিলেই একটা সভ্য সমাজ বিনির্মান করা সম্ভব ও ৩১ শে ডিসেম্বরের মত এই রাত্রটিকে এবাদত বন্দেগীতে নিয়ে আসতে পারলে ধীরে ধীরে সমাজ পরিবর্তন হবে বলে আমার বিশ্বাস।
বিষয়: বিবিধ
১৮৩৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন