তোমার প্রতিটি কাজের জন্য তুমি জিজ্গাসিত হবে।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৮:০৫:০৮ রাত
একজন মানুষকে দায়িত্ববান তখনি বলা হয় যখন সে তার দায়িত্ব পালন করে।দায়িত্ব হলো কোন কাজের দায়ভার গ্রহন করা।মানুষ জন্মগতভাবে আল্লাহকে স্বীকার করে নিয়েছে যে,তুমিই আমাদের রব'।সেজন্য আল্লাহ সূরা হাসরের ১৯ আয়াতে বলেন,'তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা আল্লাহকে ভুলে যায়।' আল্লাহকে মানুষ যদি ভুলে যায় তাহলে আল্লাহর কোন লাভ বা ক্ষতি নেই।আল্লাহ তার বান্দাদের সৃষ্টি করেছেন,বাঁচার প্রয়োজনে যা যা দেয়ার প্রয়োজন সব-ই দান করেছেন।একটি হায়াত দান করেছেন যাতে তিনি পরীক্ষা করতে পারেন।কৃতকর্মের জবাবদীহির জন্য কেয়ামতের একটি দিন ধার্য করেছেন যেন তাদের বিচার করতে পারেন।তাদের সামনে একটি কিতাব খোলা হবে যা বলা হয়েছে সূরা ইসরার ১৪ আয়াতে,'পড় তোমার গ্রন্হ,আজকের দিনে তোমার আত্মাই তোমার উপর হিসাব তলবকারি রুপে যথেষ্ট।'আমাদের প্রিয় রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সা ঘোষণা করেছেন : তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই জিজ্ঞাসিত হবে স্বীয় দায়িত্বের ব্যাপারে।'
দু:খ ও পরিতাপের বিষয় আমরা মুসলিমরা আমাদের প্রতিমুহূর্তের কাজের হিসাব নিতে ব্যার্থ হচ্ছি।আমরা পরের হিসাব নিতে খুব ভালবাসি কিন্তু নিজেকে জানার আগ্রহ আমাদের নেই।আমাদের অনেকের কথা ও কাজ দেখে মনে হয় আল্লাহ যেন আমাদের পরের জন্য জিজ্গাসা করবেন।তা কখনো নয়,আল্লাহ আমাদের হিসাব নিবেন এবং কেয়ামতের দিন আমার মাথায় পিতা ধরে আমার চারপাশের হিসাব নিবেন।৯০ ভাগ বা কারো মতে তারও বেশী মুসলিম জনগোষ্ঠী থাকার পরও ব্যাক্তি, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলাম ও ইসলামী ব্যাবস্হায় চরম দৈন্যতা লক্ষ্য করার মত।আমরা আমাদের ইসলামিক,ইসলামিস্ট,ইসলামপ্রিয় বলে থাকি ও আমরা এক একজন মুসলমান।ইসলামকে গ্রহন করে আমরা মুসলমান হয়েছি।ইসলামের ভিত্তিকে মেনে কিছু কাজও করি।এই মৌসুমি কাজ করাই কি একজন মুসলিমের কাজ? সূরা আল ইমরানের ১০২ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'ওহে যারা ঈমান এনেছ! আল্লাহকে ভয় শ্রদ্ধা কর যেমন তাঁকে ভয় শ্রদ্ধা করা উচিত আর তোমরা প্রানত্যাগ করোনা আত্মসমর্পিত না হয়ে।' এই আয়াতে বলা হয়েছে মুসলিম হতে হলে পরিপূর্ন আত্মসমর্পন করতে হবে।আমাদের দেশ যখন স্বাধীন হয়েছিল তখন পশ্চিমা হানাদার বাহিনী পুরোপুরি আত্মসমর্পন করেছে বলেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।তাহলে বুঝা গেল আংশিক কোন আত্মসমর্পন নেই আর আংশিক আত্মসমর্পনে কোন মুক্তিও নেই।ইসলামের চিরন্তন ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যের মধ্যে মিশে আছে বাংলাদেশের অস্তিত্বের এক নিগূঢ় সম্পর্ক। আর সেই সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধা ও আনুগত্যের প্রকাশ রেখেই চলছে বাংলাদেশী জনজীবন। এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসেবে সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের সন্নিবেশনকে পেশ করা।এই কথাগুলো যারাই সন্নিবেশিত করেছে তারা রাজনৈতিক মুল্যায়নেই করেছে যাতে তাদের ভোটব্যান্ক নষ্ট না হয়।এ কথাগুলো তাদের মনের কথা নয়। আমরা যদি তাদের জীবনকর্ম দেখি সেখানে ইসলামের কোন স্হান নেই।ইসলাম বিরোধী যত কাজই হউক না কেন তারা সে ব্যাপারে মাথা ঘামায় না এবং তাতে তারা নমনীয় থাকে।কিন্তু যখনই কেউ ইসলামের পক্ষে কথা বলে বা ইসলামের আইন কানুন গুলো পেশ করে তখন তারা মৌলবাদের ধূয়া তুলে একে নস্যাত করার চেষ্টা করে।সুতরাং এ কথাগুলো যৌক্তিক হলেও, দেশে ইসলামের স্বকীয় প্রতিষ্ঠা পছন্দ নয় ইসলাম বিদ্বেষী গোষ্ঠীর। ফলে, ইসলামবিরোধী চক্রান্ত, তৎপরতাও এখানে নতুন কিছু নয়।
দূর প্রতিবেশী ও কাছের প্রতিবেশী দেশের অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, তথাকথিত প্রগতিবাদের ধ্বজাধারী বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠীর ইসলামবিরোধী অবিরাম প্রচারণা, এনজিওর মাধ্যমে ইসলামী ভিতে গড়ে ওঠা পরিবারব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করার সর্বগ্রাসী তৎপরতা ও গোড়ায় পচন ধরানোর লক্ষ্য নিয়ে অসহায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সুদভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিকাশ, ইসলামী আদর্শ ও স্বাতন্ত্র্যবিরোধী সরকারি পদক্ষেপ, প্রিন্টিং ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় নেতিবাচক প্রচারণা, ইসলামী প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিত্ব ও ইসলামের পক্ষে কথা বলে এমন ব্যাক্তিত্ব ও নেতা-কর্মীর ওপর হামলা-মামলা এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্র বাংলাদেশে ইসলামের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে উদ্বেগ ও শঙ্কার জন্ম দিয়েছে, তা শতগুণ বাড়িয়ে দেয় সাম্প্রতিককালে ইসলামী স্বার্থের প্রশ্নে আমাদের চরম ঔদাসীন্য।গনতন্ত্রে সমানাধিকার না দিয়ে একদল আরেকদলের উপর জুলুম নির্যাতন যদি বাড়াতে থাকে তাহলে এর পরিনতি হয় ভয়ংকর।এর ফলে নি:শেষ হতে থাকে জাতির আশা আকাংখ্যা।ব্রিটিশ শাসনকালে এ জনপদের মুসলমানদের আদর্শবিচ্যুতি ছিল ভয়াবহ বাস্তবতায় উপনীত। সে সময়ে তাদের সনাতন ধর্মীয় পূজা-অর্চনায় অংশগ্রহণ, মসজিদ-বিস্মৃত জীবনবৈশিষ্ট্য এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কিন্তু হক্কানি উলামায়ে কিরামদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও নিঃস্বার্থ সংগ্রামের ফলে ইসলামের আলো জ্বলতে থাকে এবং এটি আল্লাহর অংগীকার যে তারা যত চেষ্টাই করুক,ইসলামের আলোকে তারা নির্বাপিত করতে পারবেনা।
মানুষের মধ্যে থাকতে হবে আদর্শ ও চেতনাবোধ, ত্যাগ ও কোরবানির প্রেরণা, আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার উদ্দীপনা, ইসলামী রেনেসাঁ সৃষ্টির ইমানী শক্তি।কালের ধারাবাহিকতায় যার উত্তরাধিকারত্ব আজ আমাদের ওপরই ন্যাস্ত। কিন্তু, সেই বোধ বা চেতনা ফিরে আসছে না আমাদের ব্যাক্তি ও সমাজ জীবনে। তথ্যপ্রযুক্তির সহজ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে আল্লাহ বিরোধী ও ইসলামবিদ্বেষী তৎপরতা উন্নীত হয়েছে নতুন মাত্রায়।মহান মুক্তির দূত ও মহান আদর্শ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা, ইসলাম, আহলে বাইত ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় , ইজ্জত ও উদ্দেশ্যের প্রতি চরম অবমাননা, ব্যঙ্গ-বিদ্রুফ করে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইট ও ব্লগে লেখালেখি চলছে রাষ্ট্রযন্ত্রের গোচরে নির্দ্বিধায় ও বাধাহীন। বিস্ময়ের আরো বিষয় হলো, এসব কুখ্যাত, আল্লাহ ও তাঁর রসূল বিরোধীদের প্রতি সরকার তেমন কোন আইন প্রনয়ন করছে না, আর করছেনা তাৎক্ষনিক বিচার।বরং ইসলামবিদ্বেষী ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদে উজ্জীবীত শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন, মন্ত্রীর মুখে মাদরাসা বন্ধের ঘোষণা, ইসলামী বৈশিষ্ট্য ধারণের অপরাধে সাধারণ মানুষদের উৎপীড়ন এবং একই অপরাধে শিক্ষার্থীদের শীর্ষস্থানীয় বিদ্যাপীঠ থেকে বহিষ্কার করন ও এর বাস্তবোচিত কোনোরূপ প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করণ, ইসলামী বইপত্র রাখার অপরাধে সাধারণ মানুষের প্রতি রাষ্ট্রীয় হয়রানি, ইত্যাদি চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রধর্মী তৎপরতা এবং ব্যাপকভিত্তিক আদর্শ ও সাংস্কৃতিক বিচ্যুতিই সাম্প্রতিক বাংলাদেশের বাস্তবতা। স্পর্শকাতর ও আরো ঘৃণ্যতর বিষয় হলো, নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা), হজ ও ইসলামের একটি বিশেষ মৌলিক উপাদানের প্রতি সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীর (বর্তমানে পদচ্যুত) জঘন্যতম মন্তব্য করণ ও এর ফলে যথার্থ বিচারের মুখোমুখি না করন। অতীত ইতিহাসের নিরিখে বলা যায়, বাংলাদেশের নাগরিক জীবনে এমন বাস্তবতা তো ছিল নিতান্তই কল্পনার অতীত! সময়ের এই দুঃসহ গতি বহমান থাকলে আগামী দিনের বাংলাদেশ ধর্মপ্রাণ মানুষের জন্যে দুর্ভেদ্য কারাগারে পরিণত হলে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।মুসলিম বিশ্বের মুসলমানদের অন্তরে আঘাতকারি এই মন্ত্রী ধম্ভের সাথে চলে এলো দেশে অথচ প্রশাসনের কারো শাহস হলো না তাকে গ্রেফতার করার।এর সহজ অর্থ দাঁড়ায় সরকারের কেউ না কেউ তাকে সমর্থন দিয়েছে।এখন কারাগারে থাকলেও তাকে জামাই আদরে রাখা হয়েছে।ইসলামের উপর লিখা ও আঘাত করার কারনে তসলিমা নাসরিনকে আজো ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে দেশের বাইরে তবে মন্ত্রীর মত বেকিং থাকলে সেও চলে আসতো যে কোন সময়ে আর সে তো একজন মহিলা মাত্র! ইসলাম সব ধর্মের সহঅবস্হানে বিশ্বাস করে তবে কারো ধর্মীয় চেতনার উপর আঘাত করে না।আমরা যে যা-ই করিনা কেন আমাদের ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হোক আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে এবং আমাদের প্রতিটি কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদীহি করতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১২২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন