ইসলামে মানবজাতি।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২১ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০২:৪৫:১৮ দুপুর
সৃষ্টিগত দিক থেকে মানুষ:--- মানুষ আল্লাহ পাকের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ও তাকে সর্বোৎকৃষ্ট ক্ষমতা দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে।তাকে তার ইচ্ছা ও কাজের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে।রাসূল সা: এর মাধ্যমে তাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেছেন এবং সে কৃতজ্গ হবে , না হয় অকৃতজ্গ হবে তাও নির্ধারন করেছেন।তার জন্য একটি হায়াত বরাদ্ধ করেছেন।দুনিয়ার এই জীবনে সে উন্নতি করবে না অবনতি হবে তা নির্ভর করবে তার কৃত কর্মের উপর।ইসলাম মানুষকে তার ব্যাক্তিগত জীবনে পবিত্রতা শিখায় এবং ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে সে সমান অধিকার ভোগ করে।মানুষকে এজন্যই সৃষ্টির সেরা করা হয়েছে যে,সে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করে এবং দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর আইন কানুন জেনে বুঝে তাঁর কাজের বাস্তবায়ন করে।তাকে পাপী করে সৃষ্টি করা হয় নি।তাকে নির্দোষ এবং আল্লাহর অনুগ্রহ দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে।এই স্বাধীনতার কারনে সে হতে পারে একজন ভাল মানুষ আবার হয়ে যেতে পারে একজন স্বৈরাচারী।এ পৃথিবীতে তার কাজের কোন বিচার হবে না,আল্লাহ তার এই দুনিয়ার ভাল ও মন্দ কাজের ভিত্তিতে আখেরাতে বিচার করবেন।যদি সে সৎ বিশ্বাস ও নেক কাজ নিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করতে পারে তাহলে জান্নাত নামক স্হায়ী আবাস দেয়া হবে আর যদি অবিশ্বাসী হয় তাহলে জাহান্নাম রুপী আযাবের ব্যাবস্হা করবেন।
আল্লাহ পাক পরিষ্কারভাবে আলকুরআনে মানজাতির জন্য সবকিছু বর্ননা করেছেন ও রাসূল সা: কে শ্রেষ্ঠ উদাহরন হিসেবে উপস্হাপন করেছেন যেন বান্দাহ আখেরাতে কোন আর্জি পেশ না করতে পারে। মানজাতির মধ্যে তিনি কোন বিভেদ তৈরি করেননি।সবাইকে সমানাধিকার দিয়েছেন।কিন্তু মানবজাতি নিজেরা নিজেদের পথকে বিভক্ত করেছে।আমরা যদি সাধারন ইবাদতের ক্ষেত্রগুলো দেখি সেখানে মানুষের মধ্যে কোন পার্থক্য দেখা যায় না।যেমন-আমাদের ঈমান আনার ক্ষেত্রে একজন রাজা ও প্রজার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।রাজা যেমন আল্লাহ ও তার রাসূল সা: এর উপর ঈমান আনেন তেমনি একজন প্রজা সে ভিক্ষুক হলেও সেভাবে ঈমান আনে।আবার আমরা যখন নামাজ কায়েম করি তখনো রাজার পাশেই একজ সাধারন প্রজা দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে।রাজা তাকে বলতে পারেনা তুমি পিছনের কাতারে নামাজ পড়।এ ভাবে ইসলামের প্রতিটি কাজে ফিৎরাত আমরা লক্ষ্য করি।কিন্তুবিভক্ত হয়ে যায় যখন আমরা মসজিদের বাইরে চলে আসি।মসজিদে যে কাজটি হয়েছিল মানবতার ভিত্তিতে যেখানে কোন বিভেদ ছিল না।সেটাই পরবর্তীতে বিভেদে পরিনত হলো। আমরা যখন আল্লাহর সাথে নামাজে অংগীকার করি পরবর্তীতে সে অংগীকার রক্ষা করি না।সামাজিক যত রকম বিভক্তি আছে তা মানুষের সৃষ্টি।সমাজে যেমন ব্যাক্তিগত পর্যায়ে বুর্জুয়া তৈরি করে শোষন করা যাবে না তেমনি সমাজতন্ত্রের নামে সমস্ত সম্পদ রাষ্ট্রের কাছে পুন্জিভূত ও করা যাবে না।ব্যাক্তির সম্পদ একদিক থেকে আসবে আর একদিকে আল্লাহর রাস্তায় খরচ হবে। কোন মানুষের প্রতি অন্য আর একজন মানুষের প্রভুত্ব থাকবে না।ইসলামে একজন পুরুষ ও নারীর অধিকার সমান তবে সম্মানের ক্ষেত্রে পুরুষের অধিকার একটু উপরে।আলকুরআনে তাদের পোষাকের সাথে তুলনা করা হয়েছে।যেমন একটি পোষাক শরীরের সাথে লেগে থাকে,স্বামি স্ত্রীর সম্পর্কও তেমনি।
ইসলামে মানুষের অবস্হান:--- ইসলামে মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি।এই পৃথিবীতে সে আল্লাহর দেয়া আদেশে নিষেধ সার্বক্ষনিক মেনে চলবে।এই দুনিয়াটা হলো একটি বিশ্বাসের বস্তু এবং মানুষ হলো বিশ্বাসী।আল্লাহ পাক তার দান মানুষকে ভোগ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত হস্তান্তর করেছেন এর সঠিক ব্যাবহারের জন্য কিন্তু তার অপব্যাবহার করা যাবে না।মানুষের গোটা শরীরটা যেমন আমানত তেমনি এই দুনিয়ার যা কিছু আছে সবই তার আমানত।এই আমানতের ক্ষেয়ানত করলে আল্লাহর কাছে জবাবদীহি করতে হবে।সেজন্য মানুষের দায়িত্ব হলো আল্লাহর আইন মেনে তার জীবন চলার পথ ঠিক করা।এই বিশ্ব ভ্রমান্ড এবং তার ভিতর যা কিছু আছে যেমন-পশু পাখি,জীব জন্তু,গাছপালা,নদী নালা,সাগর উপসাগর,পাহাড় পর্বত,সোনা রুপা ইত্যাদি যাবতীয় বস্তুসমূহ আল্লাহ পাক মানুষের অধিকার ভুক্ত করে দিয়েছেন।মানুষ এগুলোকে পরিচালনা করবে সঠিকভাবে এবং তার জন্য এসব এক একটি আমানত।যদি মানুষ তার এই অবস্হান সঠিকভাবে ধরে রাখতে পারে ও জীবন চালিত করতে পারে তাহলেই সে পরকালে সফলকাম।আর তার বিপরীত হলে তার পরিনতি হবে অত্যন্ত ভয়াভহ।
একমাত্র মানুষই এই পৃথিবী সুন্দরভাবে আবাদ করতে পারে:--
আল্লাহ পাক যখন আদম আ: কে সৃষ্টি করলেন একজন প্রতিনিধি হিসেবে,ফেরেস্তারা-যারা ছিল আল্লাহর অনুগত, তারা নির্দোষ,কোন পাপ নেই তাদের এবং সর্বদা তারা আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকে,তারা আল্লাহকে মানুষ সম্পর্কে তাদের ইচ্ছা প্রকাশ করলো যে, তোমার এই সৃষ্ট মানুষেরা পৃথিবীতে রক্তপাত করবে।আমরাইতো সব সময় তোমার স্তুতিগান গাইছি।আল্লাহ পাক তাদের বললেন,আমি পৃথীবি সম্পর্কে যা জানি তোমরা তা জাননা।তখন তিনি আদম ও ফেরেস্তাদের এই পৃথিবী সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করে পরীক্ষা করলেন।আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি থেকে এবং তিনি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেন এবং ফেরেস্তারা উত্তর দিতে ব্যার্থ হলো।মানুষের অনেক দুর্বলতা স্বত্তেও আল্লাহ পাক এই দুনিয়ায় তাদের প্রতিষ্ঠিত করলেন কারন তারাই এই দুনিয়াকে আবাদ করার উপযুক্ত।ফেরেস্তারা হলো আগুনের তৈরি।মাটির এই পৃথিবীতে তাদের পক্ষে আবাদ করা সম্ভব ছিলনা এবং আল্লাহর প্রতিনিধি হওয়ার দায়িত্ব ও তারা পালন করতে পারতো না।আল্লাহ পাক মানুষকে সম্মানিত করে সৃষ্টি করেছেন কিন্তু মানুষের মধ্যে একটি অংস অজ্গ যারা আল্লাহর নিয়মনীতির বাইরে চলা তাদের পছন্দ।এদেরই জন্য তৈরি করা আছে অগ্নিশিখা ও বেড়ী যাতে তারা থাকবে অনন্তকাল।
মানুষই একমাত্র আল্লাহর সফল ও উপযুক্ত প্রতিনিধি:--আমাদের স্মরন রাখতে হবে প্রতিনিধির দায়িত্ব কি ও কিভাবে পালন করা যায়।একজন প্রতিনিধি তখনি হতে পারে যখন সে তার মালিকের কথা ও কাজ সঠিকভাবে পালন করে।মালিকের যে গাইডলাইনটি থাকে সে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে।তার ব্যাক্তিত্ব ও আচার আচরনের মাধ্যমে মালিকের কাজগুলো সে অন্যদের মধ্যে প্রচার প্রসার করে।এভাবেই সে মালিকের কাছে বিশ্বস্ততা অর্জন করে ও পুরস্কৃত হয়।প্রকৃত প্রতিনিধি হতে হলে মালিকের ধারনা,অবস্হান,গুনগত মান এবং তার চাওয়া পাওয়াকে আমলে নিতে হবে।মানুষকে এই দুনিয়ায় প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করতে হলে আল্লাহ পাকের অসীম জ্গান,তার দয়া মায়া,তার প্রশাসনিক ক্ষমতা,তার বিচার ক্ষমতা ও কঠোরতা ,তার সৌন্দর্য সম্পর্কে প্রখর ধারনা রাখতে হবে।রাসূল সা: আল্লাহ পাকের গুনাবলী সম্পর্কে মানুষকে শিখিয়েছেন যাতে করে মানুষ এই দুনিয়ায় সঠিকভাবে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।আল্লাহ পাক জানেন মানুষের জ্গান সীমাবদ্ধ এবং আমরাও আলকুরআন পাঠে জানতে পারি মানুষকে তাঁর জ্গানের খুব সামান্যই দেয়া হয়েছে।মানুষের কাজ হলো তার জ্গানের আলোকে ভাল জিনিসটা বেচে নিয়ে সংগ্রাম করা যাতে করে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে সর্বাত্মক ভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।একজন মানুষ যখন নিজেকে ইসলামের কাছে পূর্ন আনুগত্য করে তখনি সে হয়ে উঠে আল্লাহপাকের সফল একজন দাস ও প্রতিনিধি।
বিষয়: বিবিধ
১১৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন