উন্নতির শ্লোগান উঁচকপালে নীতিহীনদের দরদী কন্ঠে প্রতিধনিত হচ্ছে।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৪:৩৬:০১ বিকাল

আজকের লিখাটি শুরু করতেই আমি হারিয়ে ফেলছি আমার ভাষা,আমার হাতের আংগুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ছে কি-বোর্ডে।কি লিখবো ও কাকে লিখবো? কে শুনবে আর কে প্রতিকার করবে? কতগুলো নিষ্প্রান ঝরে গেল যারা প্রতিদিনের মত এসেছিল দীক্ষা নিতে,ভবিষ্যতে আলো জ্বালাতে।মনে পড়ে সেই দেশেই জন্ম নিয়েছিল এক ক্ষনজন্মা পন্ডিত,দার্শনিক মহাকবি স্যার ড. আল্লামা মুহম্মদ ইকবাল। তিনি ছিলেন একজন বহুমুখী প্রতিভার বিরল ব্যক্তিত্ব, যিনি ছিলেন একাধারে মহাকবি, বিশ্বনন্দিত দার্শনিক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক ‍ও আইনজীবি (ব্যারিস্টার)।তার মুখনি:সৃত অমর বানী-

‘আরব আমার, ভারত আমার, চীনও আমার-

নহে তো পর-

মুসলিম আমি,- জাহান জুড়িয়া

ছড়ানো রয়েছে আমার ঘর।’

সেই দেশের অর্থাৎ পাকিস্তানের পেশোয়ারে সেনাবাহিনী পরিচালিত স্কুলে তালিবান জঙ্গিদের পৈশাচিক হামলায় শতাধিক শিশুসহ ১৪৫ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো ১২২ শিশু। তাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ঘটনায় পাকিস্তানে তিনদিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। জিম্মি উদ্ধার অভিযানের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গুলিবিনিময়ে নয় জঙ্গি নিহত হয়েছে। সেখানে আর কোনো জঙ্গি নেই বলে জানানো হয়েছে। একটি ক্লাসরুমে ৬০ জন শিক্ষার্থী ছিল এমন একটি ক্লাসরুমে ঢুকে নিজেকে বোমায় উড়িয়ে দেয়। অন্য রুমের ছাত্রদের জিম্মি করে একজন শিক্ষককে পুড়িয়ে মারে তালেবানরা। আর এ দৃশ্য দেখতে বাধ্য করে কোমলমতি শিশুদের। তালেবানরা এ হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে জানিয়েছে, দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে সেনা অভিযানে শত শত তালেবানকে হত্যার বদলায় এটা একটা ট্রেইলার মাত্র।বারাক ওবামা, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা এ নৃশংস হামলার নিন্দা ও শোক জানিয়েছেন। ডেভিড ক্যামেরন এ ঘটনাকে ‘গভীর বেদনাদায়ক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ হামলাকে কাপুরুষতা বলে আখ্যা দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম টুইটারে দেয়া এক বার্তায় মোদি বলেছেন, “আমি পেশোয়ারের স্কুলে এই কাপুরুষোচিত হামলার নিন্দা জানাই।”পেশোয়ারের একটি স্কুলে বর্বর জঙ্গি হামলায় ১৩২ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও শোক প্রকাশ করেছেন দেশটির নোবেলজয়ী শিক্ষা অধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাই। গতকাল সকালের এ হামলার ঘটনায় সন্ধ্যায় সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এ নিন্দা ও শোক জানান তিনি। মালালা তার বিবৃতিতে বলেন, এই ঠান্ডা মাথার হত্যাকান্ড আমার হৃদয় ভেঙে দিয়েছে। কেন এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটলো তা এখনও আমাদের কাছে অজ্ঞাত। স্কুলে শিশুদের হত্যার মতো ভয়াবহ ঘটনা আর হতে পারে না।নারী ও শিশু শিক্ষার কথা বলে তালেবানেরই গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুর খাদের কিনারা থেকে ফিরে আসা মালালা বলেন, নৃশংস এবং কাপুরুষোচিত হামলার নিন্দা জানাই এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার সশস্ত্র বাহিনীর পাশে দাঁড়াতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানাই।আমরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি না কেন? যে ধর্ম ও বর্নেরই হইনা কেন? এই নৃসংশহত্মাকান্ড ও পাপিষ্ঠদের দলমত নির্বিশেষে তালেবানদের বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে আসার আহ্বান জানাই।সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্তদের দীর্ঘমেয়াদি দেশীয় ও অন্তর্জাতিক সহযোগিতা কামনা করছি।

একটি সময় ছিল মিডিয়ার বিড়ম্বনা ছিল সীমিত।প্রিন্টমিডিয়াতে জানতে হতো সংবাদ।সংবাদের স্বচ্ছতা ছিল কিছুটা।নীতি-নৈতিকতা কিছুটা হলেও কাজ করতো।মানুষের মধ্যে মুল্যবোধ কাজ করতো।আজ মিডিয়ার ব্যাপক প্রসার হয়েছে।একদিক থেকে ভাল যে অনৈতিকতা ও অরাজকতা প্রকাশিত হয়ে পড়ছে দ্রুত।কারো এখন গোপন করার ক্ষমতা নেই।আর একদিকে চলছে অনৈতিক ও অশ্লিল খবর পরিবেশন।যদি ভাল ভাল সব খবর প্রকাশিত হতো তাহলে কোন অসুবিধা ছিলনা।দেশের মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়েছে দলে দলে।সমস্ত পেশাজীবি মানুষ এখন দলে বিভক্ত।আর মিডিয়াতে আসছে বেশীর ভাগ দলের লোক।তাদের কথা মুখ থেকে বেরুলেই বুঝা যায় তারা কার প্রতিনিধিত্ব করতে এসেছে।এরাই উঁচকপালে যারা টু-পাইস কামাই করছে দলদাস হয়ে।তারা আবার নীতির কথাও বলছে।আবার তারাই দুর্নীতির হোথা।নীতির বিপরীত শব্দ হলো দুর্নীতি কথাটি সুন্দর করে ব্যাখ্যা করেছেন প্রাক্তন জজ জনাব ইকতেদার আহম্মদ এবং আমি তার প্রতিটি কথার সাথে সহমত পোষন করছি। যে কোনো ধরনের অনিয়মই দুর্নীতি।তবে অনেকে সুদ ও ঘুষকেই দুর্নীতি মনে করে এটা ঠিক নয়।নীতি বহির্ভূত যে কাজই করা হবে তা-ই দুর্নীতি।একজন দূর্নিতি গ্রস্ত অফিসার যদি তার অধিনস্তকে আর্থিক দুর্বল বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করে তাকে লাভবান করান সেটা তার একটি দুর্নীতি। আর এই দূর্নিতিটি এখন ঘরে বাইরে,প্রতিটি অফিস আদালতে বিদ্যমান।কোন চাকুরি পেতে হলে চাকুরি প্রার্থিকে হয় টাকা থাকতে হবে না হয় আত্মীয় ও শুভাকাংখীর বেকিং থাকতে হবে।এইভাবেই

সরকারের কোনো বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সততা, দক্ষতা ও যোগ্যতাকে অবমূল্যায়ন করে যদি কনিষ্ঠ কাউকে বিভাগের সর্বোচ্চ পদে বসানো বা পদোন্নতি দেয়া হয় সেটিও দুর্নীতি। ঘুষ বা উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে চাকরি দেয়া যেমন দুর্নীতি, তেমনি নিজের আত্মীয়স্বজন বা নিজ গ্রামের বা নিজ জেলার কোনো ব্যক্তিকে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে চাকরি দেয়াও দুর্নীতি।একজন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অর্থ দ্বারা যদি জীবনযাপন করেন তাও দুর্নীতি। আবার একজন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী কর্তৃক সরকারি সম্পদের যে কোনো ধরনের অপব্যবহারও দুর্নীতি- যেমন গাড়ির অপব্যবহার, টেলিফোনের অপব্যবহার,অধীনস্তদের ব্যাক্তিগত কাজে ব্যাবহার,অফিসের সময় নিজের কাজে ব্যাবহার, অফিসে কাজ ফাঁকি দিয়ে গল্পগুজবে সময় আপচয়---ইত্যাদি ও দূর্নীতি।আমাদের দেশের অর্থনীতি হলো সুদভিত্তিক অর্থনীতিতে।গোটা সমাজ ব্যাবস্হা ঠিক করা তো আমার আর আপনার কাজ নয়।সরকারের ভূমিকা হলো মুখ্য।আমরা সরকারকে আমাদের কথা জানাতে পারি।দেশের উন্নয়নে কোন কিছু বাস্তবায়ন করা তাদের কাজ।আমরা কোন নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারিনা তবে আমাদের উচিত হলো ভাল জিনিসটির জন্য দলব্ধভাবে সংগ্রাম করা আর কেয়ামত পর্যন্ত মুসলমানের একটি দলই থাকতে হবে।আর এ সাহেবগন যখন কোন সেমিনারে কথার বোল ফুটান তখন নীতির কথাই বলেন আর এদেরই মানুষ জনদরদী হিসেবে জানে।

আমাদের মুক্তিসংগ্রামের মূল চেতনা ছিল গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণ করা, যেখানে দেশের সব নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হবে।বাঙালি জাতি ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পাকিস্তানের শাসনক্ষমতা পরিচালনার অধিকার অর্জন করলেও পাকিস্তানের সামরিক শাসকরা সেই গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ফলাফলকে অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করে বাঙালিদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। পাকিস্তানি সামরিক শাসকদের বাঙালি জাতির প্রতি এ অন্যায়ও দুর্নীতি।বাঙালি জাতি গণতন্ত্র হরণের জন্য মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল, মুক্তিসংগ্রামের পর এ দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা স্থায়ী রূপ পাবে, যার মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দেশটি উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর বিজয়ের মাস এলেই আমার একদিন ঢাকঢোল বাজিয়ে হিসাবের কথা বলছি।ধরুন - একজন মানুষকে সব সসময়-ই সৎ থাকতে হবে।তাকে দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজ বছরের সব সময়ই পড়তে হবে।এ হলো তার সারাজীবনের কাজ ও তাহলেই সে সফলতা অর্জন করতে পারবে।কিন্তু যদি বছরে একদিন এ কাজটি করে তাহলে তাকে আমরা কি বলবো? আর এর দ্বারা সে কি সফলতাই বা অর্জন করবে? আমাদের জাতীয় জীবনে দলবাজরা এই কাজটি করে মানুষকে ধোকা দিচ্ছে মাত্র আর মানুষ না বুঝে তাদের পিছনে ছুটছে।আমরা যে শোষনমুক্ত সমাজের কথা সভা সেমিনারে আউড়াচ্ছি,আমরা দেখছি তারাই অনৈতিক কাজের মাধ্যমে সমাজ ও জাতিকে শোষন করছে।যে সংস্থাটি বিভিন্ন দেশের দুর্নীতির মাত্রা পরিমাপপূর্বক মান নির্ধারণ করে সেটির নাম ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)। এ সংস্থাটির কার্যক্রম রয়েছে বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই। এ সংস্থার ধারণা সূচকে বাংলাদেশ ২০০০ থেকে ২০০৪ সাল- এ পাঁচ বছর পরপর বিশ্বের সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল।

এরপর ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হতে থাকলেও বিগত বছরের চেয়ে এ বছর দু’ধাপ নেমে বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিক থেকে ১৪তম হয়েছে। অতীতে দেখা গেছে, যখনই বাংলাদেশ টিআই কর্তৃক শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে অথবা দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান নিম্নমুখী হয়েছে, তখনই ক্ষমতাসীনরা একে সহজভাবে নেয়নি। এ বছরও বাংলাদেশের অবস্থান ১৬তম থেকে ১৪-তে নেমে এলে সরকার এটিকে সহজভাবে নেয়নি এবং সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে বলা হল, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) দেশের রাঘব বোয়ালদের দুর্নীতিকে অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করে ছোটখাটোদের দুর্নীতি নিয়ে বেশি ব্যস্ত।টিআইবি কর্তৃক দেশের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বিষয়ে অতীতে যেসব জরিপ পরিচালিত হয়েছে তা পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশের প্রধান বিভাগগুলোর মধ্যে ভূমি প্রশাসন, রাজস্ব, পুলিশ, বিচার ব্যবস্থাপনা, জনপ্রশাসন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির যে কোনো একটি বা একাধিক কোনো না কোনো বছর শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত বিভাগ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। যে বছর এক বা একাধিক বিভাগ শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, সে বছর দেখা গেছে, টিআইবির প্রতিবেদন যে বস্তুনিষ্ঠ নয় তা সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করে খণ্ডন করার প্রয়াস নেয়া হয়নি বা নেয়া হলেও তা খণ্ডন করতে ব্যর্থ হয়েছে।টিআইবি একটি ট্রাস্টি বোর্ড দ্বারা পরিচালিত। প্রতিষ্ঠানটি দেশের সব বিভাগের দুর্নীতি নিয়ে মাথা ঘামালেও একবার টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হলেও দুঃখজনক হলেও সত্য, অদ্যাবধি টিআইবি এ বিষয়ে লিখিত বা মৌখিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। তাছাড়া টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডে এবং নির্বাহী দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের সবাই যে ধোয়া তুলসী পাতা, দেশবাসী সেটাও মনে করে না।বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটি। ’৭০-এর দশকে প্রতিবছর আমাদের খাদ্য আমদানি করতে হতো।

আজ আমাদের জনসংখ্যা ’৭০-এর দশকের তুলনায় দ্বিগুণ অতিক্রম করলেও আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এটি সম্ভব হয়েছে একমাত্র কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে। যে কৃষক আমাদের অর্থনীতিতে অনন্য অবদান রেখে চলেছেন, তার ন্যূনতম চাহিদা গণতন্ত্র ও শোষণমুক্ত সমাজ আমরা কি দিতে পেরেছি? পারিনি বলেই এখন পর্যন্ত আমাদের কাংক্ষিত অগ্রগতি ও উন্নতি সম্ভব হয়নি। স্বাধীনতার পর বারবার আমাদের দেশে গণতন্ত্র ব্যাহত হওয়ার কারণে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি। শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের পূর্বশর্ত হল সুশাসন এবং একমাত্র গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাই সুশাসন নিশ্চিত করতে পারে।দেশে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিতে একদিকে যেমন সুশাসন নিশ্চিত হয়নি, অপরদিকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে জাতি আজ দুটি ধারায় বিভক্ত। এ ধরনের বিভাজন একটি জাতির উন্নতি ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে অন্তরায়। তাই এ বিভাজন রোধের উপায় রাজনীতিকদেরই বের করতে হবে।আমরা ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপন করব। সরকারের পক্ষ থেকে জোর দিয়ে বলা হচ্ছে, ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে এবং এর ২০ বছর পর বাংলাদেশের স্থান হবে উন্নত দেশের সারিতে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারবে কি-না অথবা ২০৪১ সালে উন্নত দেশের সারিতে পৌঁছতে পারবে কি-না তা নিয়ে দেশের সচেতন জনমানুষের অনেকের মনে সংশয় থাকলেও এটি অনেকটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, আমরা যদি গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারতাম অর্থাৎ প্রতি পাঁচ বছর পরপর অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যেত এবং দুর্নীতিকে সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসা সম্ভব হতো, তাহলে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার বহু আগেই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো যেত।যে কোনো দেশের জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ এবং সশস্ত্র বাহিনী সে দেশের মেরুদণ্ড। একটি দেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে এবং দেশটিকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে হলে এসব বিভাগে জ্যেষ্ঠতা, দক্ষতা, যোগ্যতা, সততা ও ন্যায়পরায়ণতার মাধ্যমে নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়ন ও বদলি আবশ্যক। কিন্তু আমাদের দেশে দেখা যায়, বিভাগগুলোয় এক সরকারের সময় যারা মূল্যায়িত হচ্ছেন, অপর সরকারের আগমনে রাজনৈতিক কারণে তাদের অবমূল্যায়িত হতে হচ্ছে। অতিমূল্যায়ন ও অবমূল্যায়নের দোলাচলে আজ এসব বিভাগের শৃংখলা অনেকটাই বিনষ্ট।

উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তা বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে চরম হতাশায় দিনাতিপাত করছেন। আবার আত্মসম্মান আছে এমন অনেক কর্মকর্তা অবমাননাকর পরিস্থিতি এড়াতে চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই স্বেচ্ছা অবসরে চলে গেছেন।বাংলাদেশে অদ্যাবধি ‘মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দটি সংজ্ঞায়িত না হওয়ায় কে মুক্তিযোদ্ধা এবং কে মুক্তিযোদ্ধা নয় এটি নিরূপণ করা কঠিন। দেখা গেছে, সরকারের শীর্ষ পদধারী সচিবসহ অনেকেই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। এসব সচিবসহ যারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ সংগ্রহ করেছেন, শোনা যায় তাদের অনেকে তা সংগ্রহের পেছনে লাখো-কোটি টাকা ব্যয় করেছেন। তা করবেন নাইবা কেন? উচ্চ বা লোভনীয় পদে চাকরির মেয়াদ ২-৩ বছর বৃদ্ধির অর্থই হচ্ছে এর পেছনে যে টাকা লগ্নি করা হয়েছে তা সুদে-আসলে উঠে আসবে।গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অনুসৃত হয় এমন সব দেশের নাগরিকরা চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক্ স্বাধীনতা যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে ভোগ করে থাকেন। একটি দেশের সরকারি-বেসরকারি পদে আসীন সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি মুক্তভাবে ব্যক্তি ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক্ স্বাধীনতার চর্চা করতে পারেন, তবে সে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর হয় এবং দুর্নীতি লাঘবের পথ সুগম হয়। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর আমরা কি বলতে পারি, আমাদের দেশের নাগরিকরা যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তি ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক্ স্বাধীনতা ভোগ করছে?এটি অনস্বীকার্য, যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এ দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ মহান মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তার মূলে ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ বিনির্মাণ। আজ আমরা এ দেশের জনমানুষের আকাক্সক্ষার গণতন্ত্র এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ থেকে বহু দূরে। এ অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তা দুর্নীতির কারণে বাস্তব রূপ নিতে পারছে না।

বিষয়: বিবিধ

১১২২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

295246
১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:০১
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
295319
১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৫৯
যা বলতে চাই লিখেছেন : সময়যোগী লেখা। ভাল লাগলো। অনেক ধন্যবাদ। Rose

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File