ইনি(প্রধানমন্ত্রী- শেখ হাসিনা) বলেন উনি খারাপ,উনি(প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী-বেগম খালেদা জিয়া) বলেন ইনি খারাপ-অভাগা প্রজারা বলে আমাদের ভাগ্যই খারাপ।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৯:৩৯:১০ রাত

নাতিশীতোষ্ন এমন একটি দেশ,অফুরন্ত বায়ুপ্রবাহ,আঁকা বাঁকা নদী,পানি ও মৎস সম্পদ,সবুজ প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য,ছড়ানো চিটানো বাগান,প্রচুর বনজ সম্পদ,উর্বর ভূমি,সড়কে সড়কে স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় তার সাথে গবেষনা প্রতিষ্ঠান,প্রবীন ও নবীন উদ্যোক্তাশ্রেনী,উৎপাদনক্ষম নারী সমাজ,দাতাদেশ গুলোর সহযোগিতা,প্রবাসী শ্রমিকদের রেমিটেন্স সর্বোপরি ১৬ কোটি মানুষের ৩২কোটি সবল হাত আমাদের উন্নতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।আমাদের তালিকা দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশের সীমারেখার মধ্যে।গত ৪৩ বছর ধরেই আমরা শুনেছি আমরা দরিদ্র,আমরা অনুন্নত,আমরা উন্নয়নশীল,আমরা জংগী দ্বারা আক্রান্ত আরো কত কি---? এর জন্য দায়ী কে? প্রজা সম্প্রদায় না আর অন্য কেউ?আমাদের দুই মহান নেত্রী ও দুটি মহান দল।এক একজন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী।প্রতিবারই তারা ক্ষমতায় আসেন সানাই বাজিয়ে।দীর্ঘ অংগীকার থাকে সামনে কিন্তু বাস্তবে এলে আর রুপায়িত হয় না।বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সবসময়ই বলেন আমরা ক্ষমতায় এলে দেশের মানুষ ভাল থাকে এটা বিরোধীদলের পছন্দ নয়।আবার বিরোধী দলের নেত্রী বলেন সরকার লুটপাট করে দেশকে রসাতলে নিয়ে গেল।বিগত ইলেকশন যেভাবেই হয়েছে দেশের মানুষ অনেক হতাশার মাঝেও দুটো বক্তব্যে দুটো আলোর ঝলকানি খুঁজে পেয়েছিল। হতাশা ও নিরাশার মাঝে এ যেন দু'খন্ড শুভ্র আলোর হাতছানি। তাদের দেয়া দু'দুটো বক্তব্যই হতভাগা প্রজাদের জন্যে এই দুর্দিনে এক দুর্লভ অমৃতের মতো। মেঘাচ্ছন্ন আকাশে মেঘ আর আলোর এই ক্ষণিক লুকোচুরিই বা কম কি ছিল?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, গত নির্বাচনের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, কোনো দুর্নীতিবাজের দায়িত্ব দেয়া হবে না। মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে তিনি এও বলেছেন সবাই যেন অতীত থেকে শিক্ষা নেয়।এই কথাগুলো যে এই প্রথম বলেছেন তা নয়।তিনি তৃতীয় বারের মত নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। তবু তার এই বক্তব্যে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছিল তাহলো, অতীতের দুর্নীতি কার্যত স্বীকার করে নিয়ে ভবিষ্যতে দুষ্টু পথ পরিহার করে সঠিক পথে মনোনিবেশ করার জন্যে সবাইকে হুশিয়ার করে দিয়েছিলেন।আর সেই জন্যই হয়তো পুরানো অদক্ষ, অযোগ্য ও দুর্নীতিবাজদের বাদ দিয়ে(দুই চার জন বাদে) একটি ক্লিন ইমেজের নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন।সেই জন্যে প্রজাদের কিছু করার না থাকলেও নতুন সরকারকে মেনে নিয়ে কায়ক্লেষে জীবন নির্বাহ করছে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দিয়ে কাউকে দুর্নীতি করতে না দেয়ার কঠিন শপথ নিয়েছিলেন।আর এই শপথটি ছিল তার সংবিধানিক শপথও বটে।তবুও,এই দুর্দিনে দুর্লভ এই অঙ্গীকার হতভাগ্য প্রজাদের জন্যে আশার আলো জাগিয়েছিল।আবার প্রজারা ভাবলেন আসলে তিনি পারবেন কি? এই একটি মাত্র অনুশাসন রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা করে যেতে? এই দ্বিধাদ্বন্দের মধ্যে ছিল প্রজাসাধারন।এর সুফল শুধু তিনি নন প্রতিটি প্রজা পেতে থাকবে অনন্ত কাল ধরে।এই একটি মাত্র শপথ তার ভিশনারি বিপ্লবকে সফল করার জন্যে যথেষ্ঠ ছিল। প্রজারা শুধু শুনেই থাকলোনা,তাকে স্মরন করে দিয়ে বললেন, মনে রাখবেন,নতুন সরকারে আপনার অভিষেককে প্রজারা ততদিন পর্যন্ত স্বাগত জানাবে যতদিন পর্যন্ত দুর্নীতির কোনো সংবাদ তাদের চোখে না পড়ে।কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একা কি করবেন।দুর্নীতি প্রবহমান চলছে ও চলবেই----।

আবার মাননীয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তিনিও বলেছিলেন এখন থেকে জামায়াতের সহিংসতা ও তান্ডবের দায়ভার তিনি আর কাঁধে নিবেনা।কর্মসূচির নামে সহিংসতা না করতে জামাতকে তিনি কড়া নির্দেশও দিয়েছেন।জামায়াত নেতাদের উদ্দশ্যে তিনি স্পষ্ট করে এও বলে দিয়েছিলেন জোটে থেকে রাজনীতি করতে হলে তান্ডব, নৈরাজ্য ও সহিংসতা ত্যাগ করতে হবে। তার বক্তব্যেও একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছিল আর তাহলো, নিকট অতীতে আন্দোলনের নামে আমার দলের সাথে সম্পৃত্ত হয়ে জামাত-শিবির(জামাতের স্ট্রং স্ট্রাইকিং ফোর্স) যে নৈরাজ্য, সহিংসতা ও তান্ডব চালিয়ে লাশের রাজনীতি করেছে তা স্পষ্ট করেই তিনি স্বীকার করে নিয়েছিলেন এবং জামায়াত সহিংসতা ছাড়লে জামায়াতকে জোটে রেখেই রাজনীতি করবেন।কিন্তু দেশনেত্রী শুধু জামাতকে কেন শাসালেন? সহিংসতা কি শুধু জামাতই করে? জামাতের নামে অন্যরাওতো করতে পারে।যাই হোক সেজন্য প্রজাগন তাকেও স্বাগত জানিয়েছিল।দুইটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় তারা পৃথকভাবে স্বীকার করে নেয়ায় তাদের দুই জনকেই হতভাগা প্রজাদের পক্ষ থেকে প্রজাগন অান্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছিল।

অভাগা প্রজাদের যদি বুজতে অসুবিধা না হয়ে থাকে তা হলে যে বিষয়টি পরিষ্কার তা হলো আপনারা দুইজনই রাষ্ট্র ও সমাজের দুইটি বিষ ফোঁড়া কেটে দেয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন।এবং অন্যেরা এই ব্যাধিতে জড়িয়ে গেলে এর দায়ভার আপনারা বহন করবেন না বলে স্পষ্ট ভাষায় সঙ্গীদের জানিয়ে দিয়েছেন।

দেশ ও জনগনের কল্যাণকর কাজে নিজেকে উৎসর্গ করায় আপনারা দুই জনেই পৃথক দুইটি খেতাবে ভূষিত হয়েছেন অনেক আগেই।একজন জননেত্রী আর একজন দেশনেত্রী।আর এই জন্যই আপনারা অনেক জনপ্রিয়। এবং তাতে কোনো সন্দেহ নেই।তবে আপনারা দেশপ্রিয় কিনা এনিয়ে প্রজাদের মনে অনেক সন্দেহ রয়েছে। আপনাদের নিয়ে প্রজাদের মনে অনেক দুঃখ-কষ্টও আছে।প্রজারা দীর্ঘ দিন ধরে আপনাদের বিতর্কিত রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিয়ে একই কথা বলে আসছে বার বার।আর তা হলো এক কথায় বলতে গেলে আপনারা কখনো পরিশীলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু করতে পারেননি।আপনাদের পারস্পরিক চরম অবিশ্বাস আর সন্দেহ থেকে সৃষ্ট আজকের এই অরাজক পরিস্থিতি।এই ক্ষেত্রে আপনাদের প্রজাদের যেমন সন্দেহ নেই, তেমনি আপনাদের বৈদেশিক বন্ধুদের মধ্যেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই।দেশে একটি টেকসই নির্বাচনী সংস্কৃতি চালু করতে গিয়েও তা থেমে গেছে।আপনারা দুই জনই ওই নির্বাচনী সংস্কৃতির কঠোর সমালোচক ছিলেন।আবার নিজ স্বার্থের প্রয়োজনে জোর সমর্থনও দিয়েছেন।এটা নিয়ে প্রজারা এখনো গোলক ধাধায় হাবুডুবু খাচ্ছে। সুতরাং আপনাদের রাজনৈতিক দর্শন যে চরম সুবিধাবাদী এতে প্রজাদের কোনো সন্দেহ নেই।এই নিয়ে বিতর্ক থাকলেও কোন পক্ষ কতটা শক্তিশালী তা প্রজাদের কাছে এখনো স্পষ্ট নয়।তাই বলছি সেই বিতর্কে না যাওয়া-ই ভালো।

আপনারা ভালভাবেই জানেন দেশের রাজনৈতিক অস্হিতিশীলতা সম্পর্কে তাই দেশ সমৃদ্ধ হতে পারছেনা।আপনারা কি বলতে চান এদেশের মানুষ খারাপ? এই অস্হিরতা কি দেশের মানুষ করছে, না আপনাদের অধিনস্তরা করাচ্ছেন? যতগুলো সহিংসতা ঘটছে এর ৯৫% ঘটছে আপনাদের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়।আমরা তো প্রজাদের খারাপ বলতে পারিনা।প্রজারা ভোট দেয়,নেতা নির্বাচন করে।আসলে আমাদের বড় ধররনের এক সাংস্কৃতিক বিপ্লব প্রয়োজন পরিবর্তনের জন্য।যথার্ত নেতা পেতে হলে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে দীর্ঘ সময়।জার্মানীর কবি গেটে বলেছেন,মহান বক্তার জন্য দরকার মহান শ্রোতৃমন্ডলী।বাংগালীর পক্ষে মহান শ্রোতৃমন্ডলী হওয়া সম্ভবত কঠিন।না হলে কি একজন পুরুষ, শ্রোতার আসন থেকে উঠে বলেছে আমরা আমাদের অপকর্মগুলোর অবসান ঘটাবো?

দেশের এই দুর্দিনের জন্যে দায়ী কে? এই বিতর্কে গেলে 'ডিম আগে না মুরগি আগে' সেই বিতর্কের মতই এর কোনো শেষ পাওয়া যাবে না।তবে এর উত্তর খুবই স্পষ্ট এবং একটাই।এর জন্যে সর্বপ্রথম দায়ী আপনারা দু'জন।দুই দলের দুই শীর্ষ নেত্রী।দীর্ঘ দুই যুগ আপনারা সরকারের শীর্ষ পদে থেকেও কেন একটি টেকসই গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া গড়ে তুলতে পারেননি? এর জবাব তো প্রজাদের কাছে সর্বপ্রথম আপনাদেরকেই দিতে হবে।আজ অন্য কোনো জটিল প্রসঙ্গে না গিয়ে যে দুইটি বিষয়ে আপনারা অঙ্গীকার করেছেন সেটাই আবার পুনরাবৃত্তি করছি।দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির সবচেয়ে বড় বাধা হলো দুর্নীতি এবং সহিংসতা।দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় আপনারা এটা ভালো করেই জানেন।একই সাথে প্রজাদের হতাশার জায়গা গুলো কোথায় তাও আপনারা অবহিত।সাভার ট্রাজেডির কথা,তাজরিনে ও স্পেক্ট্রামের পুড়ে যাওয়া আমাদের পোষাক কর্মী বোনদের আর্তনাদের কথা, নিরন্ন দিনমজুরদের হতাশার কথা, গুম হওয়া স্বজনদের প্রতিক্ষা আর আর্তনাদের কথা, সংখ্যালঘু নির্যাতিত নারী-পুরুষ আর শিশুদের চাপা কান্নার কথা, পেট্রোল বোমার আঘাতে সন্তান হারা পিতা-মাতার আর্তনাদের কথা,রাস্তায় দুর্ঘটনায় মৃত ব্যাক্তিদের পরিবারের আর্তনাদের কথা,ধর্ষীতাদের বুকচাপা কান্নার কথা, এই সব কিছুই আপনাদের জানা।তাই বলছি, অপনাদের বয়স হয়েছে,অরো দীর্ঘজীবী হোন।আপনাদের বয়সে অনেকে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। আর সময় নষ্ট না করে সংলাপে বসে ঠিক করুন দেশ, জাতি, রাষ্ট্র ও প্রজা সবাইকে কিভাবে রক্ষা করবেন।আলাহর পরে আপনাদের দায়িত্ব এই দেশের মাটি মানুষের জন্য কাজ করা।

আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ,আপনাদের প্রজারা প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি চায়না। বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, এরা চায় দু'মুঠো খেয়ে শুধু শান্তি আর স্বস্তিতে দিন যাপন করতে। এই সহজ কথাটা একটু বুজতে চেষ্টা করুন।দেশের সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু মানুষগুলোর হেফাজত করুন। একই সাথে দেশের ধর্মপ্রাণ সহজ-সরল মানুষগুলোকে রাজনীতির নোংরা খাঁচায় বন্দী না করে তাদের মত করে বসবাস করতে সুযোগ দিন।আল্লাহর শপথ, বিশ্বাস করুন তারা রাজনীতির মার প্যাঁচ কিছুই বুঝেনা,যারা আপনাদের সাধ দেয় আপনারা লোভ দেখান আর তারা না বুঝে আপনাদের পিছনে দৌড় ঝাঁপা করে সামান্য উচ্ছিষ্টের জন্য।আপনাদের অনেক ব্যর্থতা সত্বেও এই দেশের প্রজাদের কাছে আপনারা দুই জনই বিশেষভাবে পূজনীয়।এটা আবারো প্রমানিত, আপনাদের স্থলাভিষিক্ত কাউকে প্রজারা এখনো মেনে নিতে চায়না কারন এখানে নেতৃত্ব দেয়ার মত কোন পুরুষ নেই বা প্রজারা খুঁজে পায় না। কেন এমনটি হলো সেই তর্কে না গিয়ে ঘেন্না ধরা রাজনীতির কর্কশ শব্দের মাঝেও আপনাদের কাছ থেকে হঠাৎ ভেসে আসা সুমধুর সুরের ঝংকার দুটো শুনে প্রজাদের বার বার বলতে ইচ্ছা করছে-'হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের তোমার শীতল ছায়ায় স্হান দাও,আমাদের নৈরাজ্য থেকে রেহাই দাও, আমাদের আর কোথায়ও যাবার পথ নেই, আর কিচ্ছু করার নেই'.......

বিষয়: বিবিধ

১১০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File