নামাজে মনযোগ না থাকার কারনের মধ্যে অনেকগুলো কারন।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১০:০৫:২১ রাত
ইসলামের স্তম্ভ হলো পাঁচটি-ঈমান নিয়ে আসা( আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা: এর প্রতি এবং এটা শর্থহীন আনুগত্য),নামাজ কায়েম করা,যাকাত আদায় করা,রমজানের রোজা রাখা ও বায়তুল্লাহর হজ্জ করা।এর মধ্যে যাকাত আর্থিক ইবাদত এবং বায়তুল্লাহের হজ্জ আর্থিক ও দৈহিক ইবাদত।পাঁচটি মুলস্তম্ভের দ্বিতীয় হলো নামাজ আর ঈমান আনার পরই এর স্হান।রাসূল সা: বলেছেন,'তোমরা নামাজ পড় যেভাবে আমাকে নামাজ পড়তে দেখ।' একজন নামাজির কাজ হলো নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছা।আর নামাজই বান্দাকে আল্লাহর নিকটে নিয়ে যাওয়ার জন্য সাহায্য করে।বান্দাহ যখন সেজদায় যায় তখন আল্লাহর নিকটবর্তী হয়ে যায়।আলকুরআনে নামাজ ও যাকাতকে একসাথে প্রায় ৮২ বার উচ্চারিত হতে দেখা যায়।নামাজের মাধ্যমেই একজন মুসলিম ও অমুসলিমের মধ্যে পার্থক্য নিরুপিত হয়।নামাজ মানুষকে সমস্ত প্রকার অশ্লীলতা থেকে মুক্ত রাখে।ঈমান শব্দের অর্থ হলো প্রশান্তি।এখন যদি ঈমান আনার পর মনে শান্তি অনুভূত না হয় তাহলে ভাবতে হবে আমার ঈমানে কোন দুর্বলতা ঠাঁই করে নিয়েছে।একমাত্র নামাজই মানুষকে শান্তি দিতে পারে।কিন্তু নামাজ আদায় করতে গিয়ে আমাদের মন নামাজে থাকে না অর্থাৎ মনোযোগ দূরে সরে যায়।সূরা ইসরার ১১ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'মানুষ মন্দের জন্য কামনা করে যেমন করে করা উচিত ভালর জন্য আর মানুষ সদা ব্যাস্ত সমস্ত।' সূরা মু'মিনুনের ১-২ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,'মুমিনরা সাফল্য লাভ করেই চলছে,যারা তাদের নামাজে বিনম্র।' নামাজে খুশু খুজু ও বিনয়ী হওয়ার মধ্যে তারতম্য দেখা যায়।যেমন ধরুন-একজন মানুষ তার পিতামাতার কাছে এক রকম বিনয়ী,তার অন্যান্য মুরুব্বিদের কাছে একরকম বিনয়ী,বন্ধুদের কাছে একরকম বিনয়ী,শিক্ষকদের কাছে এক রকম বিনয়ী,একজন উর্ধতনের কাছে এক রকম বিনয়ী,একজন প্রশাসকের কাছে এক রকম বিনয়ী,একজন দেশের প্রেসিডেন্ট বা প্রধান মন্ত্রীর কাছে এক রকম বিনয়ী।দুনিয়ার জীবনে এই বিনয় ও নম্রতার পার্থক্য হয়ে থাকে।কিন্তু একজন মু'মিন বহুরুপী হতে পারে না।আর যিনি দুনিয়ার এই সমস্ত বড় মাপের মানুষগুলির সৃষ্টিকর্তা তাঁর সামনে দাঁড়াতে হলে কি রকম বিনম্র হওয়া দরকার তা বুঝানো মুশকিল।মোটকথা যার সামনে আমরা নামাজে দাঁড়াই তিনি হলেন রাজাধিরাজ।দুনিয়া ও আখেরাতের রাজা যার হাতে সমস্ত ক্ষমতা।তার সামনে ভয় ও আশা নিয়ে দাঁড়াতে হবে যাতে করে নামাজ কায়েম হয়ে যায়।
তবে নামাজ কায়েম হওয়ার কিছু পূর্বশর্ত রয়েছে।যেমন তাহরাত(পবিত্রতা) হতে হয় পূর্নাংগভাবে।ওজু,গোসল বা তায়াম্মুমের নিয়মাবলী মেনে একজন নামাজি পবিত্র হলো কিনা।তারপর নামাজের ভিতর ও বাহিরের ১৩টি ফরয ও ১৪টি ওয়াজিব ঠিক আছে কিনা।তাছাড়া নামাজটি আরো সুন্দর হওয়ার জন্য সূন্নত মোস্তাহাব জনিত বিষয়গুলো জেনে নামাজ আদায় করা।নামাজে অমনযোগী হওয়ার কিছু বাস্তব কারন কম বেশি সবারই থাকে।অনেক সময় কোন কঠিন বিষয়ের সমাধান হচ্ছে না বা মনে আসছে না কিন্তু নামাজে দাঁড়ালে মনে হয়।আবার কোন একটি হিসাব মিলছে না কিন্তু নামাজে দাঁড়ালে তা মনে হয়।এ সময় মনে করতে হবে এটা একটি শয়তানি ওয়াসোয়াসা।তবে নামাজিকে সাথে সাথে সেগুলো পরিহার করে নামাজে মনোনিবেশ করে আল্লাহর সান্নিধ্যে যেতে হবে।আমাদের মনে রাখতে হবে কেয়ামতের দিন প্রথম হিসাব হবে নামাজের।যার নামাজ নেই তার আর কোন ভাল আমল কাজে আসবে না।আমাদের অনেক ভাই বোনদের দেখি প্রায়ই মক্কা মদিনা যায় কিন্তু নামাজ কায়েম নেই।তাদের বুঝতে হবে একটি ওমরাহ করা নফল ইবাদত বা মদিনায় যাওয়াও নফল ইবাদত।এগুলো করতে হবে কিন্তু ফরযকে বাদ দিয়ে নয়।মোটামুটি 'ক'টি বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করা গেল:
১- নামাজকে নিছক ধর্মীয় অনুষ্ঠান মনে করা:- নামাজ আল্লাহর ফরয বিধানের একটি।আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর জন্য ফরয ও ওয়াজিব বিষয়গুলোকে যথাযথ সামনে নিয়ে আসতে হবে।কেবল মাত্র কিছু সূরা ও দোয়া মন্ত্রের মত পড়া বা দ্রুত রুকু সেজদা করে নামাজ শেষ করলেই নামাজ হয় না।নামাজের সাথে অন্তরের যে সম্পর্ক আছে আল্লাহর সাথে তা প্রতিষ্ঠিত না করা পর্যন্ত নামাজ পড়ে কোন লাভ হয় না।নামাজে এহসান থাকতে হবে।রাসূল সা: এহসান সম্পর্কে বলেছেন,'তুমি ভাববে নামাজে তুমি আল্লাহকে দেখছ আর না হলে আল্লাহ তোমাকে দেখছেন।'
২-নামাজকে যথাযথ মুল্যায়ন না করা:-নিজের পার্থিব জীবনের অন্যান্য কাজের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে নামাজকে।কারন হলো আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদত করার জন্য।নামাজকে বলা হয় বেহেস্তের চাবি।রাত তিনটা বাজে নিজের কোন কাজ থাকলে ঘুম থেকে উঠতে পারি কিন্তু ভোরে আযান হলে নামাজে উঠতে পারিনা।অনেকে অফিস আদালতে যে কয় ওয়াক্ত নামাজ আছে তা মালিকের খেয়ানত করে হলেও মসজিদে গিয়ে আগে বসে থাকে।কিন্তু যখন সে তার বাসায় থাকে তখন নিজের কাজ নিয়ে ব্যাস্ত থাকে।জামাতে তার নামাজ আদায় করা সম্ভব হয় না।অধিকাংশ মানুষ ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে না।
৩-পাপ জনিত কাজে ডুবে থাকা:-অনেকে নিয়মিত নামাজ আদায় করছেন কিন্তু প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে পাপ করেন।সুদ-ঘুষ,ব্যাভিচার ,অপরের সম্পদ হরন,এতিমের সম্পদের তছরুপ,স্ত্রী-ছেলে মেয়ের হক্ক যথাযথ আদায় না করা,গীবত,ছোগলখুরি সহ এ সমস্ত পাপ করেন।এখন তো ঘুষ হাতে হাতে দিতে হয়।অফিস আদালতে ঘুষ ছাড়া কোন কাজই হয় না।অনেক আগে একটি বাস্তব ঘটনা চোখে পড়েছিল।একজন কন্ট্রাক্টর রোজার দিনে জোহরের নামাজের সময় তার চেক আনতে হিসাব রক্ষকের কাছে গিয়েছিল।হিসাব রক্ষক সাহেব তখন নামাজের ওজু করতে যাবেন।এমন সময় বাহক তার কক্ষে ঢুকে হিসাব রক্ষক সাহেবকে দশ হাজার টাকার একটি খাম হাতে দিতেই হিসাব রক্ষক সাহেব বলে উঠলেন,'মিয়া সাহেব রোজার দিন আমার হাতে খামটি দিচ্ছেন,আমি ওজু করে এখন নামজে যাব।খামটি ড্রয়ারে রাখুন।অধিকাংশ মানুষের নামাজ হলো এ রকম।তারা প্রতারনা আল্লাহর সাথে করে না,করে তাদের নিজেদের সাথে।
৪-অর্থ না বুঝে নামাজ পড়ে:-নামাজে সূরা ক্কেরাত পড়তে হয় আরবীতে বাআলকুরআনের ভাষায়।নামাজে খুশুর জন্য সূরা ক্কেরাত,দোয়া দূরুদের অর্থ বুঝা আবশ্যক।আমি মহান আল্লাহর সামনে দাঁড়ালাম।কি পড়লাম আমি নিজেই বুঝলাম না তাহলে তা থেকে কি ফল আসবে।আমাদের সূরা ক্কেরাত যেমন মুখস্ত করতে হবে আবার তার অর্থও বুঝতে হবে।আমরা দুনিয়ার প্রয়োজনে অনেক ডিগ্রি আহরন করি,অনেক বড় ভলিউম আকারে বই পড়ি কিন্তু যখনই কোন দ্বীনের কথা আসে সেখানে আমরা ব্যার্থ।জেনে বুঝে কোন কিছু করলে সেটার আছর বেশী হয়।তোতা পাখির মত কোন কিছু আউড়ালে কোন লাভ হয় না।একই নামাজে কেউ অর্জন করবে ১০০%,কেউ ৮০%,কেউ ৫০%,কেউ ৩০% বা কেউ আরো কম।আবার এই নামাজিরাই জাহান্নামে অন্তর্ভুক্ত হবে।
৫-আখেরাতের তুলনায় দুনিয়াকে বেশী প্রাধান্য দেয়া:-আজকের দুনিয়ায় এটি সহজে অনুমান করা যায়।আমরা নগদে বিশ্বাসী। নগদ কিছু পেলে সব ভুলে যাই।নামাজের সময় পার্থিব কাজ করি যখন কাজ শেষ হয় তখন বৈতরনী পার হওয়ার জন্য নামাজে দাঁড়াই।মা-বোনরা ও ঘরে গড়ি মসি করেন।হাতের কাজ শেষ করে আরেক নামাজের সময় হলে তড়িঘড়ি করে নামাজ পড়তে যায়।এই গড়িমসির জন্যও আযাব রয়েছে। দুনিয়ার বুদ্ধিজীবিরা কত ডিগ্রি নেন কত সেমিনার করেন বক্তৃতা দেন কিন্তু আল্লাহর কুরআনকে চিনেন না,নামাজ পড়তে জানেন না।মরে গেলে আল্লাহর রাস্তা তাদের ধরতে হয় আর রাসূলের মিল্লাতের হাওলা করতে হয়।যে জীবনে আল্লাহর কাজ ছিলনা ,রাসূলের অনুসরন ছিলনা সে জীবন কিভাবে আখেরাতে কামিয়াবি হবে সেটা আল্লাহই ভাল জানেন।আল্লাহপাক ক্ষমাশীল ও তার হাতেই সব ক্ষমতা।আমাদের দৃষ্টিতে কেউ ভাল,হতে পারে সে আল্লাহর দৃষ্টিতে খারাপ কারন আমরা কারো অন্তর সম্পর্কে জানি না।সূরা মা'য়েদার শেষের আয়াতগুলোতে আল্লাহ পাক মরিয়ম পুত্র ঈসাকে জিজ্গেস করবেন,তুমি কি লোকদের বলেছিলে,"আমাকে ও আমার মাকে আল্লাহ ছাড়া দু'জন উপাস্য রুপে গ্রহন কর।' ঈসা আ: অস্বীকার করবেন ও বলবেন,হে আল্লাহ তুমি তো আমার অন্তর সম্পর্কে জান।' তিনি আরো বলবেন,'তুমি যদি তাদের শাস্তি দাও তবে তারা তো তোমারই দাস।আর যদি তাদের ক্ষমা কর তবে তুমি মহাশক্তিশালী ও পরম জ্গানী।' সুতরাং আল্লাহর কাছে সর্বময় ক্ষমতা কিন্তু আল্লাহর অবাধ্য হয়ে কেউ বাঁচতে পারবে কি?
৫-নক্ক্সা যুক্ত কাপড় বা যায়নামাজে নামাজ পড়া:-অনেকে জামা কাপড় এমন পরে বা নক্ক্সাযুক্ত যায়নামাজ সামনে রাখে যাতে নামাজের খুশু থাকে না।রাসূল সা: নক্ক্সাযুক্ত জামা কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন কারন এতে নামাজের একাগ্রতা নষ্ট হয়।
৬-শয়তানের প্রভাব:-নামাজ যেহেতু বড় ইবাদত সেহেতু শয়তানের প্রভাবও এতে বেশি।শয়তান তার দলবল নিয়ে নামজের সময় তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করে।মুয়াজ্জিন যখন আযান দেয় তখন সে দৌড়ে দূরে সরে যায় এমনকি তার পিছনে বাতাস বের হতে থাকে।আবার সে ফিরে এসে মানুষকে নামাজে ওয়াসোয়াসা দেয়।অনেকে নামাজে তাকবিরে তাহরিমা বাঁধার পর দাঁড়ি নাড়ে,টুপি ঠিক করে,এদিক ওদিক তাকায়,গায়ের জামা বা রুমাল ঠিক আছে কিনা দেখে,আকাশের দিকে তাকিয়ে সূরা পড়ে এগুলো সব শয়তানের ওয়াসোয়াসা।
৭-নিয়মিত কুরআন ও হাদিস পাঠ না করা:-নিয়মিত কুরআন ও হাদিস পাঠ করলে অন্তর পবিত্র থাকে।সব সময় তাছবিহ পাঠ করলে শয়তান কাছে আসতে পারে না।সময়কে বাজে পথে খরচ না করে নফল নামাজ,দাওয়াতি কাজ ও সামাজিক ভাল ভাল কাজ করা আর যারা প্রাত্যহিক জীবনে পড়াশুনা ও লেখালেখির কাজে সময় ব্যায় করতে পারে আল্লাহর ইচ্ছায় তারা আল্লাহর নৈকট্যে যেতে সক্ষম হতে পারে কারন খুব কম সময় তাদের শয়তান ওয়াসোয়াসা দেয়।তবে ইসলামের যে কোন কাজের জন্য ধৈর্য থাকতে হবে।এই কাজগুলোর মধ্যে নগদ কিছু নেই তবে যারা জ্গানী তারা এই দুনিয়ার জীবনকে পিছনে ফেলে সামনের জীবনের পথ ফাঁড়ি দেওয়ার জন্য আপ্রান চেষ্টা করবে যাতে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ হয় আর ৫ ওয়াক্ত নামাজই হলো মু'মিনের আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়ার পরম উপায়।
বিষয়: বিবিধ
১৭৬৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন