ইসলামি পরিভাষায় মানুষ কি ও কেন?
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৯:৪৭:০২ রাত
সৃষ্টি জগতের সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট সৃষ্টি হলো মানুষ যাকে 'আশারাফুল মাখলুকাত' বলা হয়।চিন্তাশীল মানুষেরা নিশ্চই এ বিষয়ে চিন্তা করে থাকেন।সূরা আলইমরানের ১৯০ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং দিন ও রাতের আবর্তন এই দু'য়ের মধ্যে জ্গানীদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।' সৃষ্টবস্তুর মধ্যে একমাত্র মানুষকে বিবেক বুদ্ধি ও প্রজ্গা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং আল্লাহ বাকী সমস্ত সৃষ্টিকে মানুষের পদানত করেছেন।মানুষের সৃষ্টি লক্ষ্য করলে বুঝা যায় তার কোন অতীত ছিল মৃত,তাকে জীবিত করা হলো,আবার সে মরবে , আবার সে আল্লাহর ইচ্ছায় জীবিত হবে।মানুষ তার পিতা মাতা থেকে সনির্গত সামান্য পানি থেকে সৃষ্টি হয়েছে।সূরা মু'মিনুনের ১২-১৬ আয়াতে এভাবে,' “আমরা নিশ্চই মানুষকে সৃষ্টি করেছি কাদার নির্যাস থেকে।তারপর আমরা তাকে বানাই শুক্রকীট এক নিরাপদ অবস্হান স্হলে।তারপর শুক্রকীটকে বানাই রক্তপিন্ড,তারপর রক্তপিন্ডকে বানাই একটি মাংসের তাল,তারপর মাংসের তালে সৃষ্টি করি হাড়গোড়,তারপর হাড়গোড়কে ঢেকে দেই মাংসপেশি দিয়ে,তারপর তাকে সৃষ্টি করি এক অন্য সৃষ্টিতে।সেজন্য আল্লাহরই অপার মহিমা,কত শ্রেষ্ঠ এই শ্রষ্টা।তারপর নি:সন্দেহে তোমরা মৃত্যুবরন করবে।তারপর তোমাদের কেয়ামতের দিন পুনরুত্থিত করা হবে ”। ঠিক একইভাবে আলমু'মিনুনের ৬৭-৬৮ আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন,“তিনিই সেজন যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে।তারপর শুক্রকীট থেকে,তারপর রক্তপিন্ড থেকে,তারপর তিনি তোমাদের বের করে আনেন শিশুরুপে,তারপর তোমরা যেন বাড়তে পার তোমাদের পূর্নযৌবনে,তারপর তোমরা যেন বৃদ্ধ হতে পার,তোমাদর মধ্যে কাউকে মরতে দেয়া হয় আগেই,কাজেই তোমরা যেন নির্ধারিত সময় সীমায় পৌঁছাতে পার আর যেন তোমরা বুঝতে পার।তিনিই সেইজন যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান।সুতরাং তিনি যখন কোন ব্যাপারে বিধান করেন তখন শুধুমাত্র তিনি সে সম্বন্ধে বলেন,"হও" আর তা হয়ে যায় ”।
মানুষের জীবন একটি প্রসেসে বাড়তে থাকে।অন্য একটি প্রানী জন্মের পরই উঠে দাঁড়ায়,ছুটা ছুটি করে কিন্তু মানুষের বেলায় তা হয় না।আল্লাহই মানুষকে লালন পালন করেন কিন্তু যেহেতু পৃথিবীতে তাঁর পিজিকেল মুভমেন্ট নেই সেজন্য মানুষকে তার পিতামাতার মাধ্যমে লালন পালন করেন।সেজন্য আল্লাহ তাঁর পরই পিতামাতার মর্যাদার কথা তুলে ধরেছেন সূরা নিসার ৩৬ আয়াতে এভাবে,'আল্লাহর এবাদত কর আর তার সাথে কাউকে শরীক করোনা আর পিতামাতার প্রতি সুন্দর ব্যাবহার কর।' সূরা ইসরার ২৩/২৪ আয়াতেও একইভাবে বলা হয়েছে।এখানে বুঝার ব্যাপার হলো,সন্তান তার পিতা-মাতার অপকর্মের জন্য দায়বদ্ধ নয় আবার পিতা-মাতাও সন্তানের অপকর্মের জন্য দায়বদ্ধ নয়।কিন্তু পিতামাতা যেহেতু পূর্বশূরি তাদের দায় দায়িত্ব রয়েছে যার জন্য জবাবদীহি করতে হবে।আবার সন্তান যখন বড় হবে তাকেও দায়িত্ব পালন করতে হবে। যে তারবিয়ার মাধ্যমে মানুষ বেড়ে উঠে সেখানে মানুষ চিন্তা করতে শিখে,সে নিজের সম্পর্কে চিন্তা করে,সৃষ্ট সব বস্তু সম্পর্কে চিন্তা করে এমনকি তার নশ্বর একটি সীমাবদ্ধ জীবন সম্পর্কে সে ভাবনা চিন্তা করে।জীবনের এক তৃতীয়াংশ সময় তার কেটে যায় পৃথীবির সাথে সম্পর্ক গড়তে।তাকে জানতে ও বুঝতে হয় এ পৃথিবীতে আসার তার কারন কি? এখানে এসে তার কাজ কি? এখান থেকে সে কি সুবিধা পাবে? তার জীবন উদ্দেশ্য কি? প্রতিনিয়ত তার চার পাশ থেকে আপন জন চলে যাচ্ছে।তারা যা অর্জন করেছে কিছুই নিয়ে যাচ্ছে না।এতকিছু দেখার পর তার ভাবনা কাজ করে যে,এ সংক্ষিপ্ত জীবনে একমাত্র উদ্দেশ্য হলো যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা।ইসলামিক তারবিয়া মানুষকে তৈরি করে একজন বুদ্ধিভাবাপন্য হতে, রবের কাছে প্রার্থনায় নিজেকে সমর্পন করতে এবং সাংবিধানিক বিধিবদ্ধ(কোরানিক) নিয়মকানুনে অনুগত থাকতে।
একজন মানুষের জন্য মৌলিকভাবে যে জিনিসটি প্রয়োজন সেটি হলো প্রতিভার বিকাশ(Intellectual Development) ঘটানো।প্রতিটি মানুষের মধ্যে প্রতিভার প্রভাব রয়েছে।কেউ একে ভালভাবে কাজে লাগায় আবার কেউ লাগাতে পারে না।এতে পরিবেশের একটি প্রভাব রয়েছে।আমরা যদি এটিকে বিশ্লেষন করতে পারি তাহলে দেখবো এখানে তিনটি জিনিস পাই।ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ,ইসলামের দৃষ্টিতে এ বিশ্ব-ভ্রমান্ড এবং ইসলামের দৃষ্টিতে এই জাগতিক পৃথিবী।আলকুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে এগুলো এক একটি বিশাল বিষয় চিন্তাশীলদের জন্য।একজন মানুষ তাকে জানতে পেরছে কিনা? বা একজন মানুষ তাকে ভাবে কিভাবে? স্বাভাবিকভাবে প্রতিটি মানুষই নিজেকে নির্দোষ মনে করে যদিও সে দিনে-রাতে হাজারটি অপকর্ম করে।ইসলাম জোর দিয়ে বলছে একজন মানুষ তাকে খুব ভাল করে জানে কারন সে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি জ্গান(divine knowledge) পেয়ে আসছে।মানবাত্মাগুলোকে সৃষ্টি করে আল্লাহ তাদের জিজ্গেস করেছেন তোমাদের রব কে? তারা উত্তর দিয়েছে হাঁ-তুমিই আমাদের রব।পৃথীবির সব ব্যাপারে সে নিজেকে উত্তীর্ন করছে কিন্তু আল্লাহর সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সে নিজেকে অপারগ মনে করছে।এখানেই সে সরলপথ থেকে চু্ত হয়ে হতবুদ্ধির জালে আটকা পড়ে যাচ্ছে আল্লাহর শত্রু শয়তানের প্রলোভনে।সে তখন শুধু ছোট খাট পাপেই সীমাবদ্ধ থাকে না,করে ফেলে শির্কের মত কাজ। সে নামাজ পড়ছে,রোজা রাখছে,যাকাত দিচ্ছে, হজ্জ করছে আবার ভাল ভাল কথা ও বলছে।এর সাথে ব্যাভিচারে জড়িয়ে আছে,সুদ-ঘুষ খাচ্ছে,সন্তানের অধিকার হরন করছে,সত্রীর হক্ক আদায় করছে না,জীবনের সর্বক্ষেত্রে অসংখ্য ক্ষেয়ানত করে চলছে।এ কাজগুলো হওয়ার কারন হলো-আল্লাহর সাথে যেভাবে সম্পর্ক রাখার কথা সেভাবে রাখছেনা।সে কুরআন ও হাদিছের সাথে বুঝে শুনে সম্পর্ক গড়ে না,সে নিজের প্রবৃত্তিকে মেনে ইসলামের কাজ করে।তার সবচেয়ে অসৎ প্রবনতা( evil tendency) হলো নিজেকে বড় করে দেখা।নিজের আমিত্বকে সে প্রাধান্য দিয়ে আল্লাহর বড় শক্রুতে পরিনত হয়।তার মধ্যে জন্ম নেয় স্ব-ভোগের প্রবনতা,অন্যকে বন্চিত করার প্রবনতা ও সর্বোপরি একরোখা মনভাবের প্রবনতা।আল্লাহ পাক আলকুরআনে 'আদ' জাতিকে সূরা ফুচ্ছিলাতের ১৫ আয়াতের মাধ্যমে আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন এভাবে,'বস্তুত 'আদের'ক্ষেত্রে-তারা তখন পৃথিবীতে যুক্তি ছাড়া অহংকার করতো আর বলতো-আমাদের চেয়ে বলবিক্রকে শক্তিশালী আর কে আছে?তারা কি তবে দেখতে পায় নি যে,আল্লাহ যিনি তাদের সৃষ্টি করেছেন তিনি বলবিক্রমে কত বলিয়ান? ঠিক একইভাবে ফেরাউনও বলেছে যা সূরা ক্কাছাছের ৩৮আয়াতে বলা হয়েছে এভাবে,'আর ফেরাউন বললো ওহে প্রধানগন!তোমাদের জন্য আমি ছাড়া কোন উপাস্য আছে বলে তো আমি জানি না।হে হামান! তুমি আমার জন্য ইট পোড়াও,তারপর আমার জন্য একটি উঁচু দালান তৈরি কর হয়ত আমি মুসার রবের সন্নিকটে উঠতে পারবো।তবে আমি অবশ্যই তাকে মিথ্যাবাদিদের একজন বলে জ্গান করি।' আবার অন্যদিকে কিছু মানুষ অজ্গতার কারনে নিজেদের খুবই ছোট,দুর্বল এবং হীনতাম মনে করে।তাই সে তার মাথা নত করে ও পূজা করে তার রব ব্যাতীত একটি কবরকে,একটি গাছকে,একটি পাথরকে,একটি পশুকে,চন্দ্র-সূর্য ও তারকাকে,আগুনকে এরকম সৃষ্ট বস্তুকে যাদের হাতে কোন ক্ষমতা নেই।তারা মনে করে এদের মাধ্যমে আসল রবের কাছে তারা পৌঁছে যাবে।
মানুষের বাস্তবতা হলো তার সৃষ্টি এবং সৃষ্টির প্রতিটি স্তর।সূরা সেজদার ৭-৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন,যিনি সুন্দর করেছেন প্রত্যকটি জিনিস যা তিনি সৃষ্টি করেছেন আর তিনি মানুষ সৃষ্টির সূচনা করেছেন কাদা থেকে।তারপর তার বংশধর সৃষ্টি করলেন এক তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস থেকে।তারপর তিনি সুঠামো করলেন এবং তাতে ফুঁকে দিলেন তার আত্মা থেকে,আর তোমাদের জন্য তৈরি করলেন শ্রবন শক্তি,দর্শনশক্তি ও অন্তকরন।অল্পমাত্রায়ই তোমরা কৃতজ্গতা পালন কর।' আল্লাহ পাক মানুষকে সম্মানিত করে সৃষ্টি করেছেন।আর এই পৃথিবীতে ইসলামকে অনুসরনের কারনে তাদের মর্যাদা অন্য সব প্রানীর উর্ধে।কিন্তু মানুষ তার মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করে পশুর আশনে নিয়ে চলছে।আল্লাহ পাক সূরা ইসরার ৭০ আয়াতে মানব জাতিকে দেয়া সম্মানের পক্ষে বলছেন,'আমরা অবশ্য আদম সন্তানদের মর্যাদা দান করেছি।আমরা তাদের বহন করি স্হলে ও জলে এবং তাদের রিজিক দান করেছি উৎকৃষ্ট বস্তু দিয়ে,আর আমরা যাদের সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপরে ও আমরা তাদের প্রাধান্য দিয়েছি শ্রেষ্ঠত্বের সাথে।' শুধু কি তাই? এই পৃথিবীকে মানুষের করায়ত্ব করে দিয়েছেন যাতে তারা সৃষ্ট বস্তুর উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।সূরা লোকমানের ২০ আয়াতে এর স্বপক্ষে বলেন,'তোমরা কি দেখতে পাওনি যে আল্লাহ তোমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন যা কিছু আছে মহাকাশমন্ডলিতে ও যা কিছু আছে পৃথিবীতে।আর তোমাদের প্রতি তিনি পূর্নমাত্রায় অর্পন করেছেন তার অনুগ্রহ সামগ্রী প্রকাশ্য ও অ-প্রকাশ্য।' এ্তসব নেয়ামতের কথা বিবেচনা করে মানুষের কি করা উচিত? আল্লাহর সামনে তাদের মাথা নত করা ও আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে নেয়া উচিত নয় কি? আল্লাহ মানুষকে ভাল ও মন্দের পার্থক্য নিরুপন করার সে জ্গান দান করেছেন।সূরা আশ্ শামসের ৭-১০ আয়াতে পরিষ্কার করে বলেছেন,'আর মানবাত্মার কথা যিনি তাকে সুঠাম করেছেন।তাতে আবেগসন্চার করেছেন তার মন্দ কাজের ও তার ধর্মপরায়নতার।সেই সফলতা অর্জন করবে যে তাকে শোধিত করবে আর সেই ব্যার্থ হবে যে একে পংগু করবে।' আল্লাহ পাক মানুষকে জ্গান অর্জন করার ক্ষমতা দিয়েছেন যার মাধ্যমে সে সমস্ত সৃষ্ট বস্তুর উপর প্রভুত্ব করবে।সে মানুষ(মুসলিম) তার ঐতিহ্যকে পদদলিত করে দীক্ষা গ্রহন করছে বেদীন থেকে।আল্লাহ পাক শ্রেষ্ঠ বিচারক।তিনি কাউকে ঠকান না।যারাই পৃথীবীতে নিজেদের সঠিক ভাবে পরিচালিত করবে তারা জয়ী হবে।মুসলমানদের জ্গান বিজ্গান এখন অমুসলিমদের হাতে।তারা চর্চা করছে জ্গানের আর মুসলমান চর্চা করছে সম্পদ আহরন ও অনৈতিকতার।যার পরিনতিতে মুসলমান আজ পদদলিত হচ্ছে অমুসলিমের কাছে।সূরা আলাক্কের ৩-৫ আয়াতে আল্লাহ পাক মুসলমানদের পড়ার প্রতি অনুপ্রানিত করেছেন এভাবে,'পড় তোমার প্রভু মহাসম্মানিত যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলমের সাহায্যে।'
আল্লাহ পাক যাদের এত সম্মান দিয়ে সৃষ্টি করলেন,অবাধ্যতার কারনে তাদের জন্য আবার মহাশাস্তিরও ব্যাবস্হা রেখেছেন।আলকুরআনে অসংখ্য আয়াত রয়েছে জাহান্নামের শাস্তির।সূরা আল আ'রাফের ১৭৯ আয়াতে বলেন,'আমরা জাহান্নামের জন্য ছড়িয়ে দিয়েছি জীন ও মানুষের মধ্যকার অনেককে-তাদের হৃদয় আছে তা দিয়ে তারা বুঝে না-তাদের চোখ আছে তা দিয়ে তারা দেখে না-তাদের কান আছে তা দিয়ে তারা শুনে না।তারা গবাদি পশুর ন্যায় বরং তারা আরো নিকৃষ্ট।' প্রতিটি মানুষ দায়িত্বশীল এবং আল্লাহর কাছে তাদের কর্মের জবাবদীহি করতে হবে।আল্লাহ পাক জানেন মানুষের মধ্যে একটি শ্রেনী তার আদেশ নিষেধ মানবেনা।আর একটি শ্রেনী তার দীন রক্ষায় জীবন দান করবে।যখন আল্লাহ বললেন আমি পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি পাঠাব তখন ফেরেস্তারা মানুষ সম্পর্কে বিরুপ ধারনা দিল।আল্লাহ পাক সূরা আল বাক্কারার ৩০ আয়াতে এর উত্তরে বললেন,'আর স্মরন কর-তোমার প্রভু ফেরেস্তাদের বললেন,আমি অবশ্যই পৃথিবীতে খলিফা বসাতে যাচ্ছি।তারা(ফেরেস্তারা) বললো-তুমি কি সেখানে এমন কাউকে বসাতে যাচ্ছ যে সেখানে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করবে ও রক্তপাত করবে।অথচ আমরা তোমার গুনগান করছি।তিনি(আল্লাহ বললেন,আমি নিশ্চই যা জানি তোমরা তা জান না।' এর পর আল্লাহ পাক আদমকে সমস্ত কিছুর নাম শিখালেন এবং ফেরস্তাদের বললেন তোমরা আদমকে সেজদা কর।আল্লাহ পাক এখানেও প্রমান করে দিলেন যে মানুষ সমস্ত সৃষ্টির সেরা।মানুষ পৃথিবীতে তার কর্ম করবে আল্লাহ তা বিফলে যেতে দিবেন না।সূর আযযালযালার ৭-৮ আয়াতে বলেছেন,'যে বিন্দু পরিমান সৎ কাজ করবে সে দেখতে পাবে আর যে বিন্দু পরিমান বদ কাজ করবে তাও দেখতে পাবে।' তিরমিযিতে রাসূল সা: বলেছেন,কেয়ামতের মাঠে কোন মানুষ ৫টি প্রশ্নের উত্তর দেয়া ছাড়া এ পা ও এগুতে পারবে না।তার সারা জীবন সে কি করেছে? তার যৌবনকাল কিভাবে ব্যায় করেছে? সে কিভাবে আয় করেছে ও তা ব্যায় করেছে।এবং তার জ্গান কোথায় সে কাজে লাগিয়েছে? মানুষের অংগপ্রত্যংগের হিসাব নিকাশ হবে কড়ায় গন্ডায়।সূরা ইসরার ৩৬ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'শ্রবনশক্তি,দৃষ্টিশক্তি ও অন্তকরন-এদের প্রত্যেকের সওয়াল জওয়াব করা হবে।'
আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করে পথনির্দেশ দিয়েছেন যে,হয় সে কৃতজ্গ হবে না হয় সে অকৃতজ্গ হবে।অকৃতজ্গদের জন্য তৈরি করে রাখা হয়েছে শিকল,বেড়ি ও জ্বলন্ত আগুন।আর পূর্নাত্মাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের অসংখ্য নেয়ামত।তারা পান করবে একটি পাত্র থেকে যার মেজাজ হবে কর্পুরের।একটি ফোয়ারা- যা প্রবহমান থাকবে ও আল্লাহর বান্দারা পান করবে।তারা আল্লাহর মহব্বতে ফকির মিসকিনকে খাওয়াতো আর বলতো,'আমরা তোমাদের খেতে দিচ্ছি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য,আমরা তোমাদের কাছে প্রতিদান চাইনা এবং কোন কৃতজ্গতাও নয়।' তারা আল্লহকে ভয় করে প্রতিটি কাজে।গুন কীর্তন করে সকালে ও বিকেলে।তারা বলে,'আমাদের প্রভু আমরা নিশ্চই ঈমান এনেছি,আমাদের অপরাধ তুমি ক্ষমা করে দাও আর জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদের রক্ষা কর।'তারা ধৈর্যশীল,তারা সত্যবাদি,তারা অনুগত,তারা দানশীল ও রাত জাগরনকারী। একজন মানুষকে এই ৫টি গুনে গুনান্নিত হতে হবে তাহলেই আল্লাহর বান্দা হিসেবে পরিগনিত হবে।
উপসংহারে আমরা মানুষ হিসেবে আমাদের কাজকে কিভাবে দেখতে পারি যাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।আমরা ভুল করে থাকি তবে ফিরে আসতে হবে ফিরে আসার মত।জীবন থেকে শির্ককে উপড়ে ফেলতে হবে।শির্কের ৭০ প্রকার রয়েছে।হতে পারে আমাদের ইবাদতের মধ্যে শির্ক লুকিয়ে আছে মারা জানি না।কিন্তু বড় শির্কতো দেখা যায়।পিতা-মাতার হক্ক নষ্ট করা,স্ত্রী ছেলে সন্তানের হক্ক নষ্ট করা,জ্বেনা -ব্যাভিচারে জড়িয়ে যাওয়া,মানুষ হত্যা করা,এতিমের সম্পদ ভক্ষন করা,মানুষের সম্পদ কুক্ষিগত করা এরকম---- অনেক।আর ছোট শির্কতো দেখাই যায় না যাকে রাসূল সা: বলেছেন,কালো পাথরের উপর কালো পিঁপড়া।এ ছাড়াও আমরা দৈনন্দিন কত পাপ করছি গীবত ও চোগলখুরি করে তার কোন ইয়ত্তা নেই।
আমরা প্রতিটি মানুষ মানুষ হিসেবে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করছি কিনা আমাদের ভেবে দেখা দরকার।মানুষকে দুনিয়ার কাজ করেই আখেরাতের কল্যান লাভ করতে হবে।আমাদের দুনিয়ার প্রয়োজন কতটুকু? ২৪ ঘন্টা সময়ের কতটুকু সময় লাগে ৫ওয়াক্ত নামাজে।খুব বেশী হলে ৩ঘন্টা সময়।সে সময়টুকু দিতে আমরা ব্যার্থ।বছরে একমাস ফরয রোজা তা আমরা অনেকে পালন করলেও হারাম কাজগুলো থেকে বিরত থাকি না।আমাদের কাছে টাকা আসলেও আমরা গড়িমসি করি হ্জ্জ করতে।আমাদের দাওয়াতের কাজ সার্বক্ষনিক কিন্তু আমরা তা করছিনা। কেউ কেউ সময় নির্ধারিত করে রেখেছে এ কাজের জন্য।এ কাজ অবিরাম করতে হবে যে যে অবস্হায় আছে।আমাদের নিজেকে জানতে হবে তাহলেই আমাদের রবকে জানতে সহজ হবে।রাসূল সা: এর জীবন কর্মকে আমরা যতক্ষন মডেলে রুপান্তরিত করার চেষ্টা না করবো ততক্ষন আমাদের জীবন বিশৃংখল জীবনে পর্যবসিত হবে।আসুন আমরা নিজেকে নিয়ে ভাবি,আমাদের রব'কে নিয়ে ভাবি,আমাদের রাসূল সা: পথকে জীবনের পথ হিসেবে বেচে নেই।তাহলেই আমরা পূর্নাংগ
মানুষ হওয়ার আশা করতে পারি।আমাদের অবিরাম চেষ্টা আমাদের রবের সাথে মিলিয়ে দিবে।সূরা ইনশিক্কাকের ৬ আয়াতে আল্লাহ এভাবেই বলছেন,'ওহে মানব!নিশ্চই তোমার প্রভুর দিকে তোমাকে প্রচেষ্টা চালাতে হবে বিশেষ উদ্যমে,তাহলেই তুমি তার সাক্ষাৎ পাবে।'
বিষয়: বিবিধ
২৩৫২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন