রাজনৈতিক ভাবনা রাজনিতিবিদরা কখনো ভাবেন না।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৪:২৯:২৩ বিকাল
রাজনীতি হলো রাজার নীতি।যদি প্রশ্ন করা হয় কার জন্য এই রাজনীতি? তাহলে বলতেই হবে মানুষের জন্য।যিনি রাজনীতিবিদ হবেন তিনি কেমন হবেন? তাহলে বলতে হবে তিনি হবেন উঁচু মানের হৃদয়বান ও দরদী ব্যাক্তি,প্রাজ্গ ও বিজ্গ,নির্লোভ চরিত্রের অধিকারি,জেল জুলুমকে আলিংগন কারি ও নিপীড়িত ও অবহেলিত মানুষের মুক্তির অগ্রদূত।আজ পন্চাশের কোঠায় এসে মনে হলো এর খুব সামান্যই বাস্তবে দেখতে পেয়েছি।অনেকে সমাজতন্ত্রী বা কমিউনিস্ট চেতনায় সারাজীবন নিজেদের নি:স্ব করেছে কিন্তু মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পারেনি।আমাদের রাজনীতিতে যে বড় গেপ সেটা হলো ক্ষমতার রাজনীতি।কে কিভাবে ক্ষমতায় আসবে ও ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করবে।ক্ষমতায় এসে লুটতরাজ করবে।একটি পরিবারে যদি বাবা স্বৈরাচার,অনৈতিক ও রুচি সর্বস্বহীন হয় তাহলে সে ঘরের সন্তানকে যত ভাল ভাবে মানুষ করা হওক না কেন সে তার পরিবেশ নিয়েই বড় হবে।প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীপরিষদ হলো দেশের মানুষের ভোটে নির্বাচিত নেতৃত্ব যদিও আজ তাও ক্ষয়িষ্নু হতে চলছে। তাদের কাজ হলো মানুষের কল্যানে কাজ করা।তাদের কথা বার্তা,আচার আচরন হবে পরিশীলিত।মানুষ তাদের কাছ থেকে পাবে দেশ গড়ার নির্দেশনা।তাদের কথা ও কাজ থেকে মানুষ শিখবে ও নিজেদের পরিশীলিত করবে।কিন্তু আমাদের রাজনীতির ভাষা দীর্ঘদিন থেকে পরিবেশিত হয়ে আসছে নোংরা,অশ্লীল ও অরাজনৈতিক ভাষায়।এর কারন অনেক দীর্ঘ। কুঁড়ি থেকে যারা রাজনীতিতে আসেন তারা পড়ালেখা করে আসে না।আর তাদের জন্য নেই কোন রাজনীতি শিখার প্রতিষ্ঠান।যারা দেশের নেতৃত্ব দিবে তারা যদি অশিক্ষিত হয়,যদি মিডিয়ায় অকথ্য ও নোংরা ভাষায় কথা বলে,ষ্টেজে উঠে গান গায়,স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে ষ্টেজে ঘুমিয়ে পড়ে বা ধূম পান করে তাহলে তাদের উত্তরশুরিরা কি শিখবে? এমপি ও মন্ত্রী যদি রাষ্ট্রীয় সম্পদ কুক্ষিগত করে তাহলে তাদের অধস্তনরাতো পুকুর চুরি করবে।সমাজের অবহেলিত এমন অনেক তারা স্বচক্ষে দেখে তাদের পূর্বসূরিরা কিভাবে নেতা হয়েছেন,সে পথ ধরে তারাও বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে।সমাজে কালো টাকার মালিক বা তার বংশধর,অথবা ছাত্রজীবন থেকে অনৈতিকতায় গড়ে উঠা ছাত্রনেতা হয় এমপি বা মন্ত্রী।অবশ্য সবাই নন তবে কিছু যারা আছে তারা তো ক্লেদাক্ত করছেন সমাজকে। তারা দৈনন্দিন মাঠ পরিচালনা করার জন্য গদবাঁধা কিছু কথা মুখস্ত করে নেয় যাতে বিরোধীদের ঘায়েল করতে পারে।ঠিক বিরোধপ্রবনরাও এই একই চিরত্রের রুপকার।যখনি কোন মিছিল মিটিং হয় তারা মানুষের কথা না বলে অন্যের অপরাধের ফিরিস্তি বর্ননা করতে থাকে।এই কারনে কি তাদের পিছনে জনগন ট্যাক্ক্সের টাকা ব্যায় করে?
আজ সমাজে দুর্নীতি বাজের সংখ্যা বেড়েই চলছে।সম্পদের হিসাব নেয়া হচ্ছে না।এ বছর যে এক কোটি টাকার মালিক আগামি বছর সে দশ কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে।এই বাড়তি টাকার উৎস কি? খবর নিতে পারছে না কারন তারা সবাই একে অপরের মাসতুত ভাই।কার খবর কে নিবে।অবৈধ টাকা অর্জন করে পার্টিতে চাঁদা দিচ্ছে।ছেলের হাতে কলা দিলে যেমন বুড়ো খুশি হয় তেমনি ছোট নেতা বড় নেতাকে প্রয়োজনে দয়া দাক্ষিন্ন দেখালে সেটা কি ভুলতে পারে? আবার বড় নেতার কাছে ছোট ভাই যদি কিছু চাইতে যায় না দেয় কেমন করে।কারন তাকে দিয়েতো নিজের এমপিগীরি বাঁচিয়ে রেখেছে।সরকারি কোষাগারে কোটি টাকা সাহায্য দিলেই তো কালো টাকা সাদা হয়ে যায়।না হয় টকশো'তে মিথ্যার বেসাতি দিয়ে নেত্রীকে খুশি করে দিলেন আর বাগিয়ে নিলেন মন্ত্রিত্ব।
এই খিস্তিখেউর হলো এখন আমাদের রাজনীতির ভাষা ও সংস্কৃতি।কাউকে না কাউকে অভিভাবকের দায়িত্ব নিতে হবে।সরল রেখায় কাউকে না কাউকে আগে এগিয়ে আসতে হবে।তা নাহলে কিভাবে আমরা জাতি হিসেবে পরিশীলিত হব।প্রধান মন্ত্রী বলেছিলেন সম্পদের হিসাব নেয়া হবে আমরা খুশি হয়েছিলাম কিন্তু হলো না।তিনি বলেছেন বিএনপি আমলে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আগেই ছাত্রদের হাতে দিয়ে দেয়া হতো।তিনি আমেরিকাকেও পাত্তা দেন না।আমেরিকা ছাড়াও দেশ চলতে পারে।আমেরিকা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে।৫ই জানুয়ারির নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করেছে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখে এ কথাগুলো মানায় কিনা আমরা জানিনা।কেউ খারাপ কাজ করলে আমাকেও খারাপ করতে হবে? তিনি কি জানেন না বিদেশ মন্ত্রনালয়ের মুল কথা হলো " কারো সাথে শক্রুতা নয়,সবার সাথে বন্ধুত্ব"(Friendship to all no enmity with others)।আমাদের মনে যতই দু:খ থাকুক আমরা বন্ধুত্বের মাধ্যমে জয় করবো।পুরনো কাসুন্দি ঘটলে গন্ধই বের হয়।এর আগে দলের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনাকে কাজের বুয়ার সাথে তুলনা করেছেন।তিনি যে অর্থেই বলুন না কেন? আমাদের দেশের কাজের বুয়াদের যেমন অসম্মান করেছেন তেমনি অসম্মান করেছেন এমন একটি পদকে। তিনি তো একটি পরিশীলিত পরিবার থেকে এসেছেন,তার মুখ থেকে এমন কথা উচ্চারন হওয়া একটি পার্টি তথা নেতা কর্মিদের অশুভ নেতৃত্বের পরিচায়ক।তোফায়েল আহম্মদ সাহেবও বলেছেন সম্পাদকদের দুর্নিতির হিসাব নেয়া হবে।সংবাদ পত্র থাকলে সম্পাদক থাকবে আর স্বচ্ছ সাংবাদিকতার কাজ হলো দুর্নীতিবাজদের ধরিয়ে দেয়া।তার কথায় কিসের ইংগিত বহন করে? আমার তো মনে হয় তিনি স্বাধীন সাংবাদিকতা চান না।বরং তিনি সাংবাদিকদের দিক নির্দেশনা দিতে পারতেন যে আপনারা সত্য কথা তুলে ধরুন।যারা মিথ্যা সাংবাদিকতা পরিবেশন করবে তাদের বিরুদ্ধে তিনি যেতে পারতেন বা হুঁশিয়ার করতে পারতেন।দলীয় ভিত্তিতে সবকিছু বিবেচনা হলে অন্যরাও একই কাজ করবে।আমাদের রাজনীতি একই সূতোয় বাঁধা বলে উৎরোচ্ছে না।আমরা যা বলি করি অন্যটা।আমাদের সংসদকে আমরা এখন জনপ্রতিধিত্বশীল সংসদ বলতে পারিনা।'৩৭ সাল থেকে যারা আমাদের এ অন্চলে রাজনীতিকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তারা সবাই ছিলেন উচ্চশিক্ষিত ও বিত্তবান পরিবারের সন্তান।শেরে বাংলা ,স্যার নাজিমুদ্দিন,হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দি,নুরুল আমিন ,আবুল হোসেন সরকার প্রমুখ।এরা কেউই ব্যাবসায়ি বা চাঁদাবাজ রাজনীতিবিদ ছিলেন না।তাদের পেশা ছিল ওকালতি বা জমিদারি।তখন সংসদে ছিল বিপুল সংখ্যক আইন প্রনয়নকারি।এখন রাজনীতিকদের পেশা হলো রাজনীতি যার মাধ্যমে তাদের জীবন মান নিরুপিত হয়।বংশ পরম্পরায় বেঁচে যাওয়ার হাতিয়ার টাকা উপার্জনের মুলচাবিকাঠি হলো এমপি বা মন্ত্রী হওয়া।তাদের অনেকে এখন পরিচয় বহন করেন সাবেক এমপি বা মন্ত্রী বা সচিব।বিশেষ করে জেনারেল আয়ুবা খানের আমল থেকেই রাজনীতিতে ঠিকাদারদের উত্থান।ব্যাবসায়িরা এখন ব্যাবহার করেন রাজনীতিবিদদের আর তার পরিবর্তে তারা অর্জন করেন তাদের দৈনন্দিন খরচ।রাজনীতি এখন ব্যাবসায়িদের নিয়ন্ত্রনে।দেশে ব্যান্ক ,বীমা,জাহাজের মালিক,হাসপাতাল,হাউজিং সহ অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিক এখন রাজনীতিবিদরা।প্রকৃত নেতা যে মানুষের কল্যানে কাজ করে।মানুষ তাকেই চিরদিন স্মরন করে।নেতা দিতে শিখে সে কখনো নেয় না।নেতা কেউ সেদিনই হবে যেদিন মানুষকে দিতে শিখবে।নেতা যতদিন নিবে সে হবে একজন লোভী ,ঠক ও কাপুরুষ।সে নেতা একা আক্রান্ত ও পরিত্যাক্ত।
মাওলা ভাসানির মত রাজনীতিবিদ আমাদের মাঠে বড় দরকার।রাজনীতি কি কৌশলের ব্যাপার যা আমদের প্রায় সব রাজনীতিবিদরা বলে থাকেন? কৌশল কি মানুষকে ঠকানো না বিরোধপ্রবনদের আটকানো।সত্য আর রাজনীতি এক বিষয় নয়।রাজনীতি হলো জনগন যে কথা বলতে চায় তা শুনতে হবে ও বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করতে হবে।আপনি কি ও কেমন? সেটা মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ন নয়।জনগন রাজনীতিবিদকে কিভাবে দেখতে চায় তা গুরুত্বপূর্ন।ব্যাক্তিগত জীবনে একজন রাজনীতিবিদ হয়ত একজন চোর বা বদমাশ কিন্তু জনগন তাকে মনে করে দরবেশ ও কামেল।এটাই রাজনীতির সাফল্য।রাজনীতিবিদরা যদি সফল রাজনীতিবিদ হতে চান-কুঁড়ি থেকে রাজনীতির চর্চা করুন,সুস্হ রাজনীতির আবহ তৈরি করুন, জনগনের পাশে এসে দাঁড়ান,জনগনের জন্য কাজ করুন,দেশকে গড়ার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করুন সর্বোপরি সমস্ত অন্যায় ও পংকিলতাকে মুক্ত করার অংগীকার নিন।
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন