একটি দেশকে ধ্বংস করতে হলে আগে ধ্বংস করতে হয় মানুষের মনুষ্যত্বকে ও শিক্ষা ব্যাবস্হাকে।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০১:৫০:১৪ দুপুর
এ জগতের সৃষ্টিবৈচিত্র লক্ষ্য করলে দেখা যায় এর সৃষ্টির পিছনে একটি বিরাট শক্তি রয়েছে।কেউ এই শক্তিকে বলে স্রষ্টা ,কেউ খোদা,ঈশ্বর,কেউ রব বা আল্লাহ এভাবে আরো অনেক--।আর প্রধানতম সৃষ্টি হলো মানুষ যাকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে প্রতিনিধিত্বকারি( Abassador) হিসেবে।একজন রাষ্ট্রদূতের কাজ হলো তার সরকারকে প্রতিনিধিত্ব করা।সেখানে সে কিছু আইনকানুনের মধ্যে নিজেকে বেঁধে কাজ করে।নিজের মর্জিমত কোন আইন প্রনয়ন করার তার এখতিয়ার নেই।সরকারের একটি গাইডলাইন থাকে তার মধ্য দিয়েই তাকে দায়িত্ব পালন করতে হয়।যদি এর বিপরীত কর্ম করে তাহলে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয় বা যদি সরকারের বিরোধিতা করে তখন তাকে শাস্তির ব্যাবস্হা করে।মানুষ এমনই একটি সৃষ্টি যাকে মেনে চলতে হয় সেই সৃষ্টিকর্তার আইন।যদি না মানে তখনি দেখা দেয় বিশৃংখলা।এই পৃথিবীতে যা সৃষ্টি করা হয়েছে সবই দোষমুক্ত।প্রত্যেকে তার রবের পূজা অর্চনা করে চলে এমনকি গাছপালা,পাহাড় উপত্যকা,সাগর মহাসাগর ও যাবতীয় কিট পতংগ।কিন্তু তাদের ইবাদত সম্পর্কে আমাদের ধারনা নেই,আল্লাহই ভাল জানেন।আলকুরআনে বিভিন্ন যায়গায় বলা হয়েছে,আসমান ও জমিনে যা আছে সবই আল্লাহর ইবাদত করে।মানুষকে সৃষ্টি করে আল্লাহ পাক তার অধিনস্ত করে দিয়েছে সব সৃষ্টিকে।এজন্য মানুষ হলো 'আশারাফুল মাখলুকাত" বা সৃষ্টির সেরা। শ্রেষ্ঠ এই সৃষ্টির কাজ হলো-সব ভাল কাজ করা।কোন লোকালয় বা ভূখন্ডে যদি মানুষ বাস না করে সেখানে কোন ঝামেলা নেই।আমরা দেখতে পাই বিশাল বনবাদাড় সেখানে রয়েছে হরেক রকমের গাছপালা,পশুপাখি এমনকি বন্য জন্তুও।কিন্তু কেউ কারো ক্ষতি করছে না।কিন্তু যখনি সেখানে মানুষের বসতি গড়ে উঠে সেখানে শুরু হয়ে যায় অরাজকতা।কে কতটুকু যায়গা দখল করবে,গাছগুলো কার আগে কে কেটে সাবাড় করবে।এ অবস্হায় বন্য পশুরাও এই মানুষ নামের পশুগুলোকে দেখে পালায়।মানুষ এবং পশুর মধ্যে পার্থিক্য হলো জ্গান ও বিবেক।একটি পশু তার জ্গান না থাকলেও তাকে যেভাবে তার মনিব চালিত করে সে সেভাবেই চলে।কিন্তু মানুষকে বিবেক বুদ্ধি দেয়ার পরও সে মানুষটি যখন পশুর মত কাজ করে তখন পশু আর মানুষে কোন পার্থক্য থাকে না।একটি পশু শাবক জন্ম নেয়ার পরই সে দাঁড়িয়ে যায়,ছুটাছুটি করতে থাকে।কিন্তু মানুষের বেলায় সেটা হয় না।সে লালিত পালিত হয় পিতামাতার দ্বারা শৈশব,কৈশর ও যৌবনে পদার্পন করা পর্যন্ত।তাকে শিখাতে হয়,শিখতে হয়।সেজন্যই আল্লাহ পাক সূরা আলাক্কের প্রথম আয়াতে বলেছেন,পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন।' শিক্ষা সভ্যতার বিকাশ ঘটায়।মানুষ শিক্ষিত হয় পড়ার মাধ্যমে।যদি কোন জাতিকে উন্নতির চরমশিখায় নিয়ে যেতে হয় তাহলে করনীয় কি?
এক কথায় জাতিকে শিক্ষিত করতে হবে।আবার কোন জাতিকে যদি ধ্বংস করতে হয় তাহলে তার নৈতিকতা ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে হবে আগে।রক্তপাত করে হয়ত কিছু মানুষকে ধ্বংস করা সম্ভব কিন্তু কোন জাতির শিক্ষক ও শিক্ষা ব্যাবস্হার মধ্যে যদি বিজাতীয় বিজ ধীরে ধীরে ঢুকিয়ে দেয়া যায় তাহলে অতিদ্রুত জাতিকে ধ্বংস করা সম্ভব।একটি দেশের মানুষ কিভাবে বেড়ে উঠবে, কিভাবে বেচে থাকবে, এবং কীভাবে তাদের বিশ্বাস বিকশিত করবে তার জন্য একটি সুদূরপ্রসারি চিন্তাভাবনা থাকে।কোন সৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য মানুষের মনজগতকে যেমন নিয়ন্ত্রন করতে হয় ভাল সংস্কৃতি দ্বারা তেমনি অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য ঐ মনোজগতকেই নিয়ন্ত্রন করতে হয় অপসংস্কৃতি দ্বারা। এই দু'টি বিপরীত ধর্মী ছাঁছ যখন মানুষের মনজগতে ঢেলে দেয়া যায় তখনি হয় জাতির উত্থান পতন।এর উপরিকাঠামো হলো রাষ্ট্র।রাষ্ট্র কখনো নিয়ন্ত্রন করতে পারে না যদি মানুষ নিয়ন্ত্রিত হয়।সেজন্য জাতির জন্য স্বশিক্ষার গুরুত্ব অপরিসিম।মানুষকে শিক্ষিত করার দায় আমাদের সবার।ব্যাক্তি ,সমাজ ও রাষ্ট্রের দায় রয়েছে আলাদা আলাদা ভাবে।রাষ্ট্র শক্তি সর্বকালেই কল্যানকামি রাষ্ট্র ছিলনা।নিজেদের কায়েমি স্বার্থ লাভের জন্য জাতির একটি অংসকে তারা নিজের মত করে গড়ে তোলার চেষ্টা করে ও নিয়ন্ত্রন করে।আর পরের কাজটি হলো মনজগতের গতিপথ নিয়ন্ত্রন করা।এই কাজটি যখন করে ফেলে তখনি একটি জাতি ভংগুর ও ধ্বংস হতে থাকে।
মানসম্মত শিক্ষা পদ্ধতি জ্গানের বিকাশ ঘটায়।মানুষের চেতনার মানকে উন্নত করে।সৃষ্টিশীল চিন্তাধারাকে ত্বরান্বিত করে। মানুষকে উদ্ভাবক হিসেবে তৈরি করতে সাহায্য করে।একটি দেশ অনেকগুলো বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত।যদি মানসম্মত উদ্ভাবক সংখ্যা না বাড়ে তাহলে সমাজ বা দেশের উন্নতি হবে কেমন করে?বৈজ্গানিক ব্যাবস্হার সাথে কুরআন হাদিসের অনুশীলন হলে মান সম্মত উদ্ভাবক তৈরি হবে।যিনি বৈজ্গানিক হবেন তিনি কুরআন হাদিসের পান্ডিত্ব অর্জন করবেন।যিনি অর্থনীতিবিদ হবেন তিনি ইসলামি অর্থনীতিতেও পন্ডিত হবেন।স্পেনে মুসলমানদের আটশত বছরের রাজত্বে মুসলমানরা এ রকম যোগ্যতার অধিকারি ছিল।আজকে যদি আমরা দার্শনিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখি তাহলে দেখতে পাবো মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যিনি সৃষ্টি করেছেন সেই স্রষ্টা আল্লাহকে ভুলে যাওয়া।আল কুরআনের সূরা ইনশিক্কাকের ৬ আয়াতে আল্লাহ বলেন,"হে মানুষ! কিসে তোমাকে তোমার মহিমান্নিত রব সম্পর্কে উদাসীন করলো? অধিকাংশ মানুষ এখন আস্তিক, নাস্তিক,সেকুলার আবার মুসলমানদের মধ্যে সন্দেহবাদি হিসেবে সমাজে বাস করছে।স্রষ্টাকে ভুলে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে শিক্ষা ব্যবস্হার উপর।শিক্ষা ব্যবস্হা এখন দাঁড়িয়ে আছে সেকুলারিজমের উপর।বর্তমান বিজ্গান শিক্ষায় রয়েছে সেকুলারিজমের ছাপ।এক সময়ে মুসলিম বিজ্গানীরা যখন বিজ্গানের বিস্তার ঘটালো তখন বিগ্গানের প্রত্যেক বই " বিসমিল্লাহের রাহমানের রাহিম" দিয়ে শুরু করতেন।তারা স্রষ্টায় বিশ্বাসী ছিলেন গভীরভাবে।কিন্তু আজ কেন মুসলিম বিগ্গানীরা তাদের বই শুরু করতে "বিসমিল্লাহের রাহমানের রাহিম" লিখতে লজ্জাবোধ করেন তা মুসলিমদের ভাবিয়ে তুলছে।আমরা ছোট বেলায় ও দেখেছি মুসলিম নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অলংকৃত করতো।অনেকে এখন প্রকৃতির কথা বলে চালিয়ে যান।তারা এই প্রকৃতি কথাটি বলে কি বুঝাতে চান তা স্পষ্ট নয়।তারা একবারও ভেবে দেখে না এ সব প্রকৃতির আইন আছে কিভাবে। আইন প্রনেতা ছাড়া কি কোন আইন হয়?
বিশ্বমানের সাহিত্য চর্চা মানুষের মনকে আলোকিত ও বিকশিত করে।ভাল সাহিত্য না পড়লে সৃষ্টিশীল চিন্তা বা উদ্ভাবনী ক্ষমতা বাড়ে না।মানবিক মুল্যবোধ ও নৈতিকতা বর্ধিত হয় গভীর জ্গানের কারনে।আর মানবিক মুল্যবোধ না বাড়লে কল্যানকর চিন্তাও আসবেনা।আত্মকেন্দ্রিক প্রবনতাই কেবল বাড়তে থাকবে।প্রশ্ন আসতে পারে আমাদের দেশে কি শিল্পি ,সাহিত্যিক , বৈজ্গানিক তৈরি হছ্ছে না? হাঁ হছ্ছে আর তা শুধুমাত্র পাশ্চাত্ব শিক্ষা নির্ভর যেখানে নৈতিক মান সম্পন্ন ব্যাক্তিত্ব খুবই কম।শিক্ষা ব্যবস্হার ত্রুটির কারনে মানুষের মুল্যবোধ কমে যায়।রাস্তায় একজন অসুস্হ মানুষকে পড়ে থাকতে দেখেও সহযোগিতার হাত প্রসারিত হয় না।নেতিবাচক শিক্ষা মানুষের মেরুদন্ডকে নড়বড় করে তোলে।বড় বড় ডিগ্রি হলেই সেটাকে শিক্ষা বলা যাবে না।শিক্ষার সাথে থাকতে হবে সংস্কৃতি ,রুচিবোধ ও মানবতাবোধ। তবেই সে শিক্ষা হয়ে উঠবে প্রকৃত শিক্ষা।শিক্ষার আলো সমাজ ও দেশের মঙল ঘটায় ও কল্যানসাধিত করে। বিজ্গানিরা নিজের কল্যানের কথা ভেবে কোন কিছু আবিষ্কার করে না।কোন সৃষ্টিশীল মানুষ নিজের জন্য কোন কিছু সৃষ্টি করেন না।বরং তা হয়ে থাকে গোটা মানবজাতির জন্য।শিক্ষা হবে নিজের জন্য ও মানবজাতির কল্যানের জন্য।শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ শিক্ষা হলো সংকীর্ন শিক্ষা।
যে দেশের মিডিয়া মানুষের মনজগতকে ক্লেদাক্ত করে সে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রন করা জরুরি।কারন মিডিয়ার যারা দর্শক শ্রোতা তারা বেশীরভাগই অলস, অশিক্ষিত,নোংরা তথ্যজ্ঞান সম্পন্ন , উদাসীন এবং সুচিন্তিত নয়।এরা কৌশলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিয়ন্ত্রণ করে, আর এর জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সর্বাগ্রে। সেজন্য দেখা যয় তারা শিক্ষার পরিবর্তে জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন রকম অনৈতিকতায়।যখনি তারা শিক্ষার স্পিরিট থেকে দুর্বল হয়ে যায় তখনি দেখা দেয় প্রশাসনিক দুর্বলতা।আর এরাই হয়ে উঠে বুদ্ধিজীবি ও আমলা।তারা নিজেদের মত ইতিহাস সংস্কার করে,চেতনা তৈরি করে আর জাতি ধাবিত হতে থাকে ধ্বংসের অতল গহ্বরে।
যে ভাবে একটা চক্র প্রাথমিক থেকে শুরু করে জেএসসি এসএসসি, এইচ এস সি, চাকরি, বিসিএস সব ধরণের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাস করা শুরু করেছে, এক শ্রেণির শিক্ষক নিজেদের চাকরি বাচানো আর প্রতিষ্ঠানের পাশের হার, জিপিএ ফাইভ এর হার বেশী দেখানোর জন্য ছাত্র ছাত্রীদের নকল সরবরাহ থেকে শুরু করে উত্তর বলে দেয়া, খাতায় নম্বর বেশী দেয়া ইত্যাদি অপকর্ম করা শুরু করেছে, এক শ্রেণির অভিভাবক ফাস হওয়া প্রশ্ন না পেলে জীবন বৃথা মনে করেন, পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর পরই ছাত্র ছাত্রীরা যেভাবে দেখাদেখি করে, কথা বলে, অন্যজনেরটা শুনে লেখা শুরু করে দেয়, একটা নকল করা, ফাস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের মধ্যে নৈতিকতা, মূল্যবোধ, দেশপ্রেম কত নিচু মানে যাচ্ছে তার দিকে নজর দেয়ার দায়িত্ব কি আমার আপনার নয়?
একটা সময় ছিল যখন প্রজন্মের রোল মডেল ছিল তাদের নীতিবান ও নানা গুনের শিক্ষক, গুরু, পন্ডিত, আচার্য্য। এখন মিডিয়া তরুণ প্রজন্মের কাছে নতুন রোল মডেল হাজির করেছে, ইয়াবাখোর, সীসাখোর, র্যাম্প মডেল, হলিউড বলিউড এর নায়ক নায়িকা, এরা এখন রোল মডেল। তরুণ প্রজন্ম তাদের অনুসরণ করছে এদেশের নাটক, সিনেমায়, উপন্যাস, বিজ্ঞাপন, রাস্তা ঘাটে সব জায়গায় শুধু একটাই বিষয়, প্রেম ভালবাসা।এদের ধ্যাণ জ্ঞান শুধুই প্রেম। প্রেম না করতে পারলে বখাটেপনা করে, বা ইভটিজিং করে, আর না হয় ছ্যাকা খেয়ে বা বিচ্ছেদ হলে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। প্রেমের সম্পর্ক বাবা মা মেনে না নিলে এরা আত্মহত্যা করে, না হয় ঘরছাড়া হয়, আর তাই অনেক সময় বাবা মা বাধ্য হয় অল্প বয়সেই বিয়ে দিতে। একটা অনৈতিক, মূল্যবোধহীন পরিবেশের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা প্রজন্ম শিক্ষিত হলেও তাই তারা নিজ দেশকেই ধবংসের দিকে ঠেলে নিয়ে যায়। আমাদের তাই শিক্ষার হার বাড়লেও দক্ষ জনশক্তি গড়ে ওঠেনা, মানুষের আইন মানার প্রবণতা বাড়েনা, দেশে অপরাধ কমেনা।অথচ শিক্ষার সাথে এগুলোর ইনভার্স রিলেশন। সুশিক্ষা বাড়লে এসব নেতিবাচক জিনিষ কমার কথা। কিন্তু তা কি হচ্ছে?
বিষয়: বিবিধ
২৪৫২ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শিক্ষা আমাদের অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন