বাবার স্মৃতির ক'টি কথা আমার কর্মে প্রেরনা যোগায়।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১১:৪০:৫৩ রাত
আমি ছিলাম বাবা মা'র ছয় সন্তানের ৫ নাম্বার।বাবা ছিলেন শিক্ষক।সেকালে শিক্ষকদের সম্মান ছিল আকাশচুম্বি।যারা শিক্ষক হতেন তারা শুধু মেধাবি ছিলেন না,ছিলেন ধার্মিক ও নীতিবান।যখন আমি ছোট ছিলাম মা আমাদের সবার জন্য রান্না করতেন ও সাথে আমার কোন কোন বোন সাহায্য করতেন।মা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করতেন।প্রত্যুষে ঘুম থেকে উঠে বোনদের নিয়ে নামাজ আদায় করতেন।বাবা উঠতেন আজানের আগেই।বাড়ীতে অন্যান্য চাচারা থাকতেন অন্য ঘরে।বাবা ঘুম থেকে উঠেই উঠোনে দাঁড়িয়ে ডাকতেন "আল্লাহর বান্দাহরা নামাজের জন্য উঠ"। কারো সাধ্য ছিলনা এর পর ঘুমিয়ে থাকে।আমরা পুরুষরা মসজিদে যেতাম।নামাজ পড়ে কুরআন তেলাওয়াত হতো।আর ঘরে ঘরে মেয়েরা কুরআন পড়তো। কুরআন পড়া শেষ হলে মা নাস্তা খেতে দিতেন।অন্যান্য সময়ের চেয়ে শীতে পিঠা পুলি বা খেজুরের শিরনি হতো।কখনো গরম ভাতের সাথে সদ্য জাল পেড়ে উঠানো ছোট মাছের ঝোল ও শাক ভাজি।এর পর যার যার কাজে চলে যেত।মা সারাদিন বাড়ির কাজে ব্যাস্ত থাকতেন আবার দুপুরের রান্না করতেন।আমরা স্কুল থেকে এসে খেতাম।বিকেলে খেলাধূলা করে গোধূলিলগ্নে আসতাম।মাগরিবের নামাজ পড়ে পড়তে বসতাম আর মা রান্না করে আমাদের ডাকতেন।সারাদিন পরিশ্রমের পর রাতে রান্না কখনো এদিক সেদিক হয়ে যেতো।একদিন এমন হলো যে মাছের ঝোলে লবন এমন হলো যে মুখে দেয়া যাচ্ছে না।আমরা বাবাকে কিছুটা ভয় পেতাম।আমার বোনেরা খাবার মুখে দিয়ে কোন রকমে সেবার গিলে চুপচাপ বসে রইলো।কিন্তু বাবা গোগ্রাসে গিলছেন ও কারো প্রতি ভ্রুক্ষেপ করছেন না।আমাদের কোন কিছু জিজ্গেস না করে মাকে বললেন আজ মাছ বেশ স্বাধ হয়েছে আমি খেয়ে নিলাম।ওদের শাকের সাথে ডিম ভেজে দাও।মা তা-ই করলেন।খাওয়া শেষ করে প্রতিদিনের মত আমাদের দিনের কাজের হিসেব নিতেন।বিশেষ করে আমাকে নিয়ে ২০মিনিট বসতেন।
আমাকে বললেন বাবা আজকের কি কি কাজ করেছ? আমি বলতে থাকতাম একনাগাদে।বাবা টেকনিকেল কিছু প্রশ্ন করতেন আর বলতেন পড়বে একবার লিখবে দু'বার আর লাইন বাই লাইন পড়বে।আমি এ কথাগুলো মেনে চলেছি জীবনে।পড়াশুনায় ভাল করতে পেরেছি।আর যেটি আমাকে বেশি উপকার করেছে তা হলো আমাকে লিখাতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
আমি প্রায়ই বাবার সাথে ঘুমাতাম।বাবা ঘুমের দোয়া বলতেন অন্য দিনের মত।আমি সেদিন বাবাকে চুপচাপ বললাম আচ্ছা বাবা সত্যি করে বলুন,আজকে মাছ কি খুব ভাল হয়েছে যা আপনি আমাদের না দিয়ে সব খেয়ে ফেলেছেন।বাবা বললেন তুমি বল কেন আমাকে জিজ্গেস করলে? আমি বললাম এত লবন হয়েছে যে আমরা কেউ মুখে দিতে পারিনি।বাবা বললেন তোমাদের মা খুবই ব্যাস্ত মানুষ।যদি আমি বলি মাছে লবন হয়েছে তাহলে তিনি কষ্ট পেতেন।কাউকে কখনো কষ্ট দিতে নেই বরং খারাপ হলেও বলতে হয় ভাল।মানুষের মধ্যে নিষ্ঠুরতা থাকতে নেই।ভুল হলে ক্ষমা করতে হয় এটাই মানব ধর্ম। এ কথাটি আমার ছেলে মেয়েকে স্মরন করে দিয়েছি অনেকবার ডাইনিং টেবিলে যখন দেখেছি আমার সন্তানরা ভাল কোন খাবার দেখেও নাক সিটকিয়েছে।
একালে যেমন ঘটা করে অনেকে জন্মদিন পালন করে সেকালে এগুলো ছিলনা।তবে কেউ কেউ আধুনিকতার ছোঁয়ায় ছোট খাট অনুষ্ঠান করতো।আমার মা বলতেন বাবা ইসলামে এগুলো নেই।তবে জ্ন্মদিনের সময় এলে সেদিন মা ভাল রান্না করতেন ও বাড়িতে বা আশে পাশে সবাইকে ডেকে খেতে দিতেন।এ জীবনে আমি যা শিখেছি সেটা হচ্ছে, আমাদের একে অপরের ভুলগুলোকে মেনে নিতে হবে এবং সম্পর্কগুলোকে উপভোগ করতে হবে। জীবন খুবই ছোট; প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে দিনের কাজগুলোর পর্যালোচনা করে অনুতপ্ত বোধ করার মধ্যে শান্তি নীহিত আছে। যে মানুষগুলো আমাকে যথার্থ মূল্যায়ন করে তাদের ভালোবাসতে শিখেছি আবার যারা সমালোচনা করে বা মূল্যায়ন করে না তাদের প্রতিও সহানুভূতিশীল হতে ও ভালবাসতে চেষ্টা করি। তবে মানুষ হিসেবে তো ভুল হয়ে যায় আবার ফিরে আসারও চেষ্টা করি। আজ বাবা মা বেঁচে নেই কিন্তু তাদের ছোট ছোট কথাগুলো আমাকে কাজে প্রেরনা যোগায়,শক্তি যোগায় ও আমাকে দীর্ঘ সময় কলাম লিখতে আগ্রহী করে তোলে।
বিষয়: বিবিধ
১১৪৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ভাল লাগল ধন্যবাদ ।
খুব সুন্দর লিখা।মাশাআল্লাহ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন