আল্লাহর সৃষ্ট মানব মানবী যা- সন্তান-সন্ততি ও ধন সম্পদ হিসেবে আসে আর তা দুনিয়ার সৌন্দর্য বাড়ায় মাত্র।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০২:৪৮:১৯ দুপুর
এ পৃথিবীতে মানুষ আল্লাহ পাকের এক বিশেষ দান যাকে সৃষ্টির সেরা করে সৃষ্টি করেছেন।প্রতিটি মানুষের উচিত "তাওহিদ" সম্পর্কে জানার আগে নিজেকে জানা,নিজের অবয়বকে দেখা, নিজের অস্তিত্ত সম্পর্কে পর্যালোচনা করা।আজকের বিজ্গান যা বলছে আলকুরআন ১৪০০ বছর পূর্বে এর বিস্তারিত বর্ননা দিয়েছে সূরা মু'মিনুনের ১২-১৬ আয়াতে এভাবে,' وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن سُلَالَةٍ مِّن طِينٍ
ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِي قَرَارٍ مَّكِينٍ
ثُمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَحْمًا ثُمَّ أَنشَأْنَاهُ خَلْقًا آخَرَ فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ
“আমরা নিশ্চই মানুষকে সৃষ্টি করেছি কাদার নির্যাস থেকে।তারপর আমরা তাকে বানাই শুক্রকীট এক নিরাপদ অবস্হান স্হলে।তারপর শুক্রকীটকে বানাই রক্তপিন্ড,তারপর রক্তপিন্ডকে বানাই একটি মাংসের তাল,তারপর মাংসের তালে সৃষ্টি করি হাড়গোড়,তারপর হাড়গোড়কে ঢেকে দেই মাংসপেশি দিয়ে,তারপর তাকে সৃষ্টি করি এক অন্য সৃষ্টিতে।সেজন্য আল্লাহরই অপার মহিমা,কত শ্রেষ্ঠ এই শ্রষ্টা।তারপর নি:সন্দেহে তোমরা মৃত্যুবরন করবে।তারপর তোমাদের কেয়ামতের দিন পুনরুত্থিত করা হবে ”। ঠিক একইভাবে আলমুমিনুনের ৬৭-৬৮ আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন,'هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ يُخْرِجُكُمْ طِفْلًا ثُمَّ لِتَبْلُغُوا أَشُدَّكُمْ ثُمَّ لِتَكُونُوا شُيُوخًا وَمِنكُم مَّن يُتَوَفَّى مِن قَبْلُ وَلِتَبْلُغُوا أَجَلًا مُّسَمًّى وَلَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
“তিনিই সেজন যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে।তারপর শুক্রকীট থেকে,তারপর রক্তপিন্ড থেকে,তারপর তিনি তোমাদের বের করে আনেন শিশুরুপে,তারপর তোমরা যেন বাড়তে পার তোমাদের পূর্নযৌবনে,তারপর তোমরা যেন বৃদ্ধ হতে পার,তোমাদর মধ্যে কাউকে মরতে দেয়া হয় আগেই,কাজেই তোমরা যেন নির্ধারিত সময় সীমায় পৌঁছাতে পার আর যেন তোমরা বুঝতে পার।তিনিই সেইজন যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান।সুতরাং তিনি যখন কোন ব্যাপারে বিধান করেন তখন শুধুমাত্র তিনি সে সম্বন্ধে বলেন,"হও" আর তা হয়ে যায় ”।তাফছির ইবনে কাছির অনুসারে মানব জাতির সৃষ্টি হয়েছে “تُرَابٍ” বা মাটি থেকে।সেহেতু আদম (আ)ই প্রথম মানব যাকে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি থেকে।আধুনিক বিজ্গান আজ যা বলছে আলকুরআন বলেছে ১৪০০ বছর আগে।যখন এই আয়াতগুলো নাজিল হয়েছিল তখন মানুষের জ্গান ছিল সীমাবদ্ধ মানব শিশুর প্রসব সম্পর্কে।আল্লাহ পাক আমাদের এই সৃষ্টির দিকে লক্ষ্য করার জন্য বার বার বিভিন্ন সূরাতে আমন্ত্রন জানিয়েছেন। তোমাদের রবের শক্তি সামর্থ দেখ।তোমাদের জন্ম সৃষ্টির দিকে লক্ষ্য কর,তোমরাই বড় না আমি।আমরা যদি 'নুতফা' শব্দটি যা বার বার করে এসেছে,এর অর্থ অনুধাবন করি তাহলে দেখবো এর অর্থ হলো 'এক ফোটা পানি' যা সবেগে নির্গত হয়। কিন্তু মানুষের একটি অংশ যাদের নিজের প্রতি কোন চিন্তা নেই।এক ফোটা পানি থেকে, মানুষ যার সৃষ্টি সে নিজেকে মহান মনে করে।সে কথাই আল্লাহ পাক সূরা আল নাহলের ৪ আয়াতে বলেন এভাবে,'তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন শুক্রকীট থেকে,অথচ দেখো!সে একজন প্রকাশ্য বিতন্ডাকারি।' শুধু তাই নয় আল্লাহপাক মানুষের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে বলছেন সূরা ইয়াছিনের ৭৭/৭৮ আয়াতে,'আচ্ছা মানুষ কি দেখে না যে আমরা তাকে নিশ্চই এক শুক্রকীট থেকে সৃষ্টি করেছি? তার পর কি আশ্চর্য! সে একজন প্রকাশ্য বিতর্ককারি হয়ে যায়।' আর সে আমাদের সদৃশ্য বানায়,আর ভুলে যায় তার নিজের সৃষ্টির কথা।সে বলে-হাড়গোড়ের মধ্যে কে প্রান দিবে যখন তা গলে-পচে যাবে?
আজ মানুষের মধ্যে বিশাল একটি অংশ সামান্য বিত্তবৈভবের মালিক হলে,পদস্হ কর্মকর্তা হলে ধরাকে সরা জ্গান করে।অথচ এরা পায়খানার কীট থেকে হীনতম।একটি পায়খানার কীটও আল্লাহর পূজা-অর্চনা করে।মানুষ হয়ে যে আল্লাহকে সেজদা করেনা সে সৃষ্টির নিকৃষ্ট সৃষ্টি।আল্লাহর সাথে প্রতিদ্বন্দিতাকারী এই মানুষ নামক সৃষ্টি সম্পর্কে আল্লাহ পাক তাঁর রাসূল (সাকে সূরা বাক্কারার ২০৪ আয়াতে বলেন,'মানুষের মধ্যে এমনও আছে যার দুনিয়াদারির কথাবার্তা তোমাকে তাজ্জব করে দেয় আর সে আল্লাহকে সাক্ষী মানে তার অন্তরে যা আছে সে সম্বন্ধে,অথচ সেই হচ্ছে প্রতিদ্বন্দীদের মধ্যে মারাত্মক।'
কেন মানুষ আল্লাহর সম্পর্কে প্রতিদ্বন্দিতা করে বা আল্লাহর সাথে শির্ক করে? মানুষের একটি ধর্ম হলো নিজেকে বড় করে দেখা।এটা প্রতিটি মানুষের একটি মজ্জাগত রোগ একমাত্র খাঁটি ঈমানদার ছাড়া।আল্লাহর সাথে যারা বাকবিতন্ডা করে তারা ধর্ম নিয়েই করে।আল্লাহ যে পথে তাদের চালিত করতে চান তারা সে পথ থেকে দূরে সরে গিয়ে নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরন করে এবং নিজেকে মনে করে আমি সঠিক কাজটিই করছি।সে যুক্তি দেখায় বিভিন্নভাবে।আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং পথ নির্দেশ দিয়েছেন হয় সে কৃতজ্গ হবে নায় সে অকৃতজ্গ হবে। তিনি জানেন এই পৃথিবীতে তার কি প্রয়োজন।তিনি দ্বীনের পূর্নতা দিয়েছেন আর সেই সাথে তার রাসূল পাঠিয়েছেন মানব জাতিকে শিক্ষা দেয়ার জন্য।মানবজাতির জন্য কোন কিছুই বাকি রাখেননি।মানুষের কাজ হলো সে আলোক বর্তিকা দেখে দেখে চলা।কোন নতুন সৃষ্টি নয় বরং মুল বিষয়গুলো(আল কুরআন ও ছহি সূন্নাহ) মেনে চলা ও তার সাথে মানব জাতিকে হেদায়েতের জন্য যার যার পারিপার্শিক অবস্হানুযায়ি সাধ্যমত চেষ্টা করা। কিন্তু মানুষ যখন অবিশ্বাসের খাতায় নাম লিখে ফেলে তখন আর আল্লাহর সাথে তার খাছ বান্দাহ হিসেবে তার সম্পর্ক থাকে না।কুফরের মধ্যে অকৃতজ্গ বান্দাহ তার দুনিয়ার জীবন পার করে দেয় কিন্তু আল্লাহ তাকে প্রকৃতির দয়া থেকে বন্চিত করেন না।বান্দারা সামান্য কিছুতেই একে অন্যকে বন্চিত করতে কুন্ঠাবোধ করেনা ।সেজন্য আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ ও শ্রেষ্ঠ বিচারক।কুফরের কারনে মানুষ আল্লাহকে অস্বীকার করে।সেজন্য কাফের ও মুশরিকদের জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করেছেন।ফেরাউন,হামান,আবুজেহেল,আবুলাহাব, ওৎবা ,শাইবা এরা ছিল কুফরের অন্তর্ভুক্ত এবং তারা নিজেদের বড় মনে করতো।সূরা কাহফের ৩৪-৩৭ আয়াতে দু'জনের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে একজন অহংকার করেছিল তার বাগান নিয়ে এভাবে,'আর ফলটি ছিল তার।তাই সে তার সংগীকে বললো,আমি ধনসম্পদে তোমার চাইতে প্রাচুর্যময় এবং জনবলেও শক্তিশালী।সে তার বাগানে ঢুকলো অথচ সে তার নিজের প্রতি অন্যায় করেছিল।সে বললো,আমি মনে করিনা যে এসব কখনো নি:শেষ হয়ে যাবে।আর আমি মনে করিনা যে ঘড়িঘন্টা বলবৎ হবে।আর যদিবা আমার প্রভুর কাছে আমাকে ফিরিয়ে নেয়া হয় তবে আমি তো নিশ্চয়ই এর চেয়ে ভাল প্রত্যাবর্তনস্হল পাব।' তার সংগী তাকে বললো যখন সে তার সাথে বাক্যালাপ করছিল-তুমি কি তাঁকে অবিশ্বাস কর যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে,তারপর শুক্রকীট থেকে,তারপর তিনি তোমাকে পূর্নাংগ করেছেন একজন মানুষে।'
এসব আয়াতে আল্লাহ আমাদের স্মরন করিয়ে দেন যেন আমরা দুনিয়ার এই সোভা ষৌন্দর্যের ট্রেপে পড়ে না যাই।যদিও আমাদের অনেকের সম্পদ রয়েছে,উন্নত জীবন রয়েছে,প্রভাবশালী ও মেধাবী সন্তান রয়েছে।এসব আমাদের জন্য পরীক্ষা।আজকের পৃথিবীতে মানুষের মধ্যে অসম্ভব প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়েছে এই পার্থিব সম্পদ এবং সন্তানের উন্নয়ন কল্পে।সেজন্য দেখা যায় মানুষ অনৈতিকতার আশ্রয়ে নিজের দেশের সম্পদ পাছার করে বিদেশে।নিজের সন্তানদের আলকুরআন ও সূন্নাহের তালিম না দিয়ে প্রতিযোগিতা করছে কাফের মুশরিকদের দেশে পাঠানোর জন্য।বর্বর কিছু পিতা-মাতা আছে যারা বাচ্চাদের মুখে একটু ইংরেজি শুনলেই খুশিতে আটখানা হয়ে যায়।এদের কিছু সংখ্যক বলে ছেলে মেয়েদের কুরআন শিখিয়ে মৌলবাদ বানাব নাকি? আল্লাহর আযাব এদের জন্য দুনিয়াতে আর আখেরাতে রয়েছে আযাবে আলিম যারা আল্লাহর সাথে প্রতিদ্বন্দিতা করে।
মহান আল্লাহ পাকের বিশেষ অনুগ্রহ সন্তান-সন্ততি। কবির ভাষায় ‘কোনো রূপলোকে ছিলি রূপকথা তুই- রূপ ধরে এলি এই মমতার ভূঁই...’ (শিশু জাদুকর : কাজী নজরুল ইসলাম)। নারী জনমের পূর্ণতা ও পারিবারিক পরিমণ্ডলে মায়া-মমতার কোমল পরশ নিয়ে একটি শিশু জানান দেয় তার আগমনীবার্তা। নবজাতকের প্রত্যাশায় পারিবারিক আবহে দোলা দিয়ে যায় অপেক্ষার প্রহর- সবার মনে থাকে একটি সুস্থ-সুন্দর শিশুর আকাংখ্যা। নবজাতকের মাধ্যমেই মানব বংশ এগিয়ে যায় যুগ-যুগান্তরের পথচলায় শতাব্দী থেকে সহস্রাব্দে। মহান আল্লাহ পাকের বিশেষ অনুগ্রহ সন্তানাদির জন্ম প্রক্রিয়া থেমে গেলে তো মানুষ ও মানবতা বিলুপ্তির অন্ধকারে হারিয়ে যেত। তাই মহান আল্লাহ্ ‘মানব শিশুর’ জন্মরহস্য সম্পর্কে ধারণা দানের জন্য পবিত্র কোরআনের সূরা আলাক্ক এর ০২ আয়াতে জানিয়ে দেন, ‘তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্তপিণ্ড থেকে’ ।সাধারণত প্রত্যেক নবদম্পতির স্বপ্ন, পরিকল্পনা আবর্তীত হয় তাদের বংশের দীপ জ্বালানোর জন্য। পরম করুণাময়ের দরবারে তারা মোনাজাত করে যা রয়েছে সূরা ফুরকান এর ৭৪ আয়াতে এভাবে - ‘হে আমাদের প্রতিপালক তুমি আমাদের এমন পরিজন (স্ত্রী-সন্তান) দান কর- যারা আমাদের চক্ষুর শীতলতা দানকারী হবে এবং আমাদের মুত্তাকিদের নেতা বানাও’। শুধু কি তাই, সন্তান-সন্ততি হল পিতা-মাতার জন্য জাগতিক সৌন্দর্য ও সাফল্যের বাহন। ওদের মাধ্যমেই পিতা-মাতা নিজেদের জীবনের অপ্রাপ্তি, অপূর্ণতার অবসান ঘটিয়ে সাফল্যের নতুন ভুবন রচনা করেন। কারণ, স্বামী-স্ত্রীর প্রেমপূর্ণ উচ্ছ্বাস ও ভালোবাসার স্মারক স্তম্ভ হল মানব শিশুর প্রিয়মুখ ও পবিত্র আগমন। মহান আল্লাহ্ সূরা কাহাফ এর ৪৬ আয়াতে বলেন, ‘ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য ও সুখ-শান্তির বাহন ও উপাদান’।
সন্তান উৎপাদন, প্রতিপালনের মাধ্যমে প্রজন্ম-প্রজন্মান্তরে বংশধারা বিকশিত হয়। পারিবারিক নিরাপত্তা ও মমত্ববোধে একটি শিশু বেড়ে ওঠে আপন মহিমায়। নিজেকে মেলে ধরে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে, কেউ বা নিজেকে নিয়ে যায় অনন্যতার শিখরশীর্ষে। তখন তারাই হয়ে ওঠে পরিবার-সমাজের গণ্ডি পেরিয়ে দেশ-দেশান্তর বা বিশ্বের গর্বের ধন। মানব শিশুর জন্ম তাই কখনওই অবহেলার নয়।
সন্তান প্রত্যাশীজনেরাও ‘পুত্র’ বা ‘কন্যা’র জন্য হয়ে যান দ্বিধাবিভক্ত। কেউ কেউ প্রত্যাশায় থেকে থেকে পরিবারের আকৃতি বাড়ান কিন্তু তবু হয় না প্রত্যাশিত প্রকৃতির পরিবর্তন। অথচ কন্যা বা পুত্র সন্তান জন্মদানে মানুষের কিছুই করার থাকে না। পুত্র বা কন্যাশিশু হয়ে থাকে মহান আল্লাহর ইচ্ছায়। তাই তিনি জানিয়ে দিচ্ছেন সূরা শুরার ৪৯/৫০ আয়াতে এভাবে-'আল্লাহরই হচ্ছে মহাকাশমন্ডলি ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব।তিনি যা চান তা-ই সৃষ্টি করেন।তিনি যাকে চান কন্যা সন্তান দান করেন আর যাকে ইচ্ছা করেন পুত্র সন্তান দান করেন।অথবা তিনি তাদের জোড়ে দেন পুত্রসন্তান ও কন্যা সন্তান।আবার যাকে চান তিনি বন্ধা বানিয়ে দেন।নি:সন্দেহে তিনি সর্বজ্গ ও সর্বশক্তিমান।'
পবিত্র কোরআনে সূরা আততিনের ৪ আয়াতে মহান আল্লাহ্ বলেছেন, ‘আমি মানুষকে সুন্দর অবয়ব দিয়ে সৃষ্টি করেছি’। তাই বলা যায়, সৃষ্টিগতভাবেই প্রত্যেক মানুষ মহান আল্লাহ পাকের সুন্দরতম ও শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তারপরও মানবিক স্থূল দৃষ্টিভঙ্গিতে আমরা মানুষের অবয়ব, বর্ণ, আকৃতি নিয়ে নানা মন্তব্য করি। কিন্তু এতে তো মানুষের কোনো কিছু করার নেই, সবই হয় মহান আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় এবং তিনি সূরা আল ইমরানের ৫ আয়াতে বলেন, ‘সেই মহিমান্বিত সত্তা, যিনি তোমাদের মাতৃগর্ভে গড়ে তোলেন যেমন খুশি তেমন করে’।
অভাব-দারিদ্র্যের চির অভ্যস্ত সংসারে নবজাতকের হাসি-কান্না অনেক সময় হয় অপ্রত্যাশিত। কিন্তু এ কথাও সত্য এবং আমাদের ঈমানের অংশ ‘রিজিকের মালিক মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন। তাই ভয়ের কী আছে? মহান আল্লাহ পাক সূরা ইসরার ৩১ আয়াতে বলেন, ‘তোমরা দারিদ্র্যের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা কর না। আমিই তাদের রিজিক দেব এবং তোমাদেরও। নিশ্চয়ই তাদের হত্যা করা মহা অন্যায়’। সুতরাং যার জন্ম হওয়ার সে জন্মাবেই, এতেও রয়েছে মহান আল্লাহ পাকের পরীক্ষা। কারণ, সম্পদশালী হলেই সন্তানের অধিকারী হওয়া যায় না বরং এর জন্য প্রয়োজন সার্বক্ষণিক সাধনা ও সংগ্রাম। এ জন্যই মহান আল্লাহ পাকের সতর্কবাণী সূরা আনফালের ২৮ আয়াতে এভাবে ,‘জেনে রেখ, ধন-সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য এক মহাপরীক্ষা’।সন্তান-সন্ততি মহান আল্লাহ পাকের বিশেষ অনুগ্রহ। চাইলেই সবাই তা পায় না, আবার না চাইতেই অনেকে লাভ করেন মহান আল্লাহর এই অনুগ্রহ। তাই প্রত্যেক সন্তানের পিতা-মাতার কর্তব্য হল সন্তানকে দেশ ও দশের প্রয়োজনের উপযোগী করে গড়ে তোলা। সন্তান-সন্ততি যেন পরিবার ও সমাজের জন্য দায় বা বোঝা না হয় সে জন্য সচেষ্ট থাকা পিতা-মাতার কর্তব্য। এটা একটি শিশুর জন্মগত অধিকার। এ জন্যই প্রিয়নবী (স.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের সম্মান কর এবং তাদের ভালো স্বভাব-চরিত্র শিক্ষা দাও’ (ইবনু মাজাহ)। প্রিয়নবী (স.) আরও বলেন, ‘কোনো পিতা-মাতা সন্তানকে উত্তম আদব-কায়দা ও স্বভাব-চরিত্র শিক্ষাদান অপেক্ষা ভালো কোনো দান দিতে পারে না’ (তিরমিযি)।
বস্তুত একটি সংসারের পূর্ণতা নির্ভর করে সন্তানাদি লাভ ও প্রতিপালনের মাধ্যমে। প্রীতিপ্রেমের পুণ্যময় বাঁধনে তখনই ওই সংসারে বিরাজ করে স্বর্গীয় সুখ। এ জন্যই মহান আল্লাহ্ দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন সূরা ইব্রাহীমের ৪০ আয়াতে এভাবে, ‘হে প্রভু, তুমি আমাকে ও আমার সন্তানদের নামাজ প্রতিষ্ঠাকারী বানাও। প্রভু আমার, তুমি আমার দোয়া কবুল কর’।মহান আল্লাহ পাক বিশ্বের সব অনাগত শিশুর সৌরভে সুরভিত করুন তাদের পিতা-মাতাকে এবং সুসন্তানের গর্বে সবাইকে করুন গর্বিত ও আনন্দিত। আমিন----
বিষয়: বিবিধ
১৫৮৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন