শেষ বিচার দিনের হিসাব নিকাশ।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৭:১৯:৪৩ সন্ধ্যা

আমরা জীবনের ক্ষেত্রে অনেক হিসাব নিকাশ করে থাকি।প্রতি দিনের, প্রতি মাসের আয়ব্যায়ের হিসাব করি কিন্তু আমাদের ভাবনার মাঝে শেষ বিচার দিনের (Day of judgment or Day of recompense) হিসাব নিকাশের কথা মনে হয় না।কারো মৃত্যু এলে বা কখনো বড় বিপদে পড়লে কিছুটা স্মরন করে আবার ভুলে যাই।কেন ভুলে যাই এ দিনটিকে? কারন আমরা পৃথিবীর মোহে পড়ে সেই রবকে ভুলে যাই যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন,এই আসমান জমিন সৃষ্টি করেছেন আরো সৃষ্টি করেছেন তার ভিতরে যা আছে।সূরা ইয়াছিনের ৩০ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'হায় আফসুস বান্দাদের জন্য! তাদের কাছে এমন কোন রাসূল আসেনি যাদের সাথে তারা ঠাট্টা বিদ্রুপ করেনি।' আবার সূর ইনফিতারের ৬ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'ওহে মানব! কিসে তোমাকে ভুলিয়ে রেখেছে তোমার মহামহিম রব সম্পর্কে? আজকের পৃথিবীর মুসলমানদের ইসলামের দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে কি মনে হয়? প্রতিটি ঘর,সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলামরুপি যে শিল্প তার কোন চর্চা নেই।মানুষ আজ ছুটে চলছে দুনিয়ার সম্পদ আহরনের জন্য।সকালে ছুটছে আর সন্ধা হয়ে যাচ্ছে ছুটছে আর ছুটছে সামান্য কিছু জীবনের সম্বল আহরনের জন্য।এই সম্বল আহরন করতে গিয়ে ঠকছে এবং ঠকাচ্ছে একে অন্যকে।রাষ্ট্র নায়ক থেকে শুরু করে সমাজপতি পর্যন্ত কেউ অন্যায় থেকে বিরত থাকছে না।হত্মা,গুম,পাশবিক অত্যাচার,রাহাজানি,অবিচার, খুনখারাবি ও যতপ্রকার অশ্লিলতা আছে তা এখন মুসলমানদের সমাজে ঘটে যাচ্ছে।এগুলোর বিরোধিতা করার মত কিছু মানুষ আছে যারা তাদের ক্ষমতানুযায়ি কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু তা অপ্রতুল।মানুষকে অতি সম্মানীয় করে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন কিন্তু সেই মানুষ অতি হিংস্র হতে হিংস্রতর হচ্ছে যা বন্য প্রানীদের ও হারিয়ে ফেলছে।এর কারন হলো আল্লাহর আইনকে পরোয়া না করা।আল্লাহর বিধিনিষেধকে অমান্য করে চলা।আল্লাহর বিচার তথা বিচারের দিনকে অবজ্গা করা। এ সমস্ত ভন্ড,অশ্লিল লোকদের সম্পর্কে সূরা বাক্কারার ১৩৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' এরা ঐ সব লোক যারা গত হয়ে গেছে।তাদের জন্য আছে যা তারা অর্জন করেছিল আর তোমাদের জন্য যা তোমরা অর্জন করছো।আর তোমাদের জবাবদীহি করতে হবে না যা ওরা অর্জন করেছিল।' আল্লাহই একমাত্র রব তিনি এই বিশ্বের নাড়ি নক্ষত্র সম্বন্ধে জানেন।তিনি অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যতের মালিক।তাই তিনি সূরা বাক্কারার ১৮৪ আয়াতে বলেন,'আল্লাহরই যা কিছু আছে ভূমন্ডলে ও আকাশমন্ডলিতে।তোমাদের অন্তরে যা আছে তোমরা প্রকাশ কর বা লুকিয়ে রাখ,আল্লাহ তার জন্য হিসাব নিকাশ নিবেন।তিনি যাকে ইচ্ছা করেন পরিত্রান করবেন আবার যাকে ইচ্ছা করবেন তাকে শাস্তি দিবেন।' কাফের মুশরিক বা মুসলমান রুপী কাফের মুশরিকরা এ কথাগুলো বুঝতে অক্ষম কারন তারা এর বর্তমান ফলাফল দেখছে না।তারা চায় আল্লাহর কথা যদি সত্য হয় তাহলে তা ফলে না কেন? কিন্তু মাঝে মাঝে পৃথিবীতে কোথাও না কোথাও আল্লাহ জালেমদের দেখিয়ে দেন যেখানে পুরো লোকালয় খুঁজে গতকালের সেই বাসযোগ্য মানুষগুলোকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।' আ'দ,সামুদ,লুত,তুব্বা ও আইকার বাসিন্দাদের কথা আল্লাহ কুরআনে বিষদ বর্ননা করে দেখিয়ে দিয়েছেন যারা এই জীবনে অন্যায় করবে তাদের পরিনতি কি? আর শেষ বিচারের দিনে তো রয়েছে তাদের জন্য বিরাট আযাব।

ঈমানদারদের চেষ্টা কখনো বিফলে যায় না।তারা মনে করে এই পৃথিবীর জীবন একটি পথিকের জীবন।তারা আল্লাহর বিধিবিধান রাসূল সা; এর আনীত পন্হায় যথাযথ অনুসরন করে চলে। সূরা আল'ইমরানের ১৯৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'নি:সন্দেহে গ্রন্হপ্রাপ্তদের মধ্যে যারা ঈমান আনে আল্লাহতে আর তোমাদের মধ্যে যা অবতীর্ন হয়েছে,আল্লাহর কাছে বিনীত,তারা আল্লাহর কালাম সমূহকে স্বল্পমুল্যে বিক্রি করে না তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার।নি:সন্দেহে আল্লাহ হিসাব নিকাশে তৎপর।' মানুষ নিজেদের কি ভাবে? একটি সামাজিক মর্যাদা,একটু সামান্য টাকা কড়ি হলে মানুষ তার অস্তিত্বকে ভুলে যায়।সে তার দীর্ঘ অতীতকে স্মরন করে না।যার একটা সময় ছিল কোন অস্তিত্ব ছিলনা।নিজের পায়াখানা - পেশাব নিজে খেয়ে ফেলতো কেউ না দেখলে।এই রকম একটি মানুষ যৌবনে পদার্পন করেই সেই মহান রবকে অশ্বিকার করে বসে।যাকে পাঠানো হলো সৃষ্টির সেরা করে সে নাকি করে বিরোধিতা।কিন্তু ক্ষমতা ও প্রভাব কার হাতে সে দেখতে পায় যখন মৃত্যু এসে যায়।আল্লাহ সূরা আন'আমের ৬২ আয়াতে বলেন,'অতএব তাদের আনা হয় তাদের প্রকৃত মনিব আল্লাহর কাছে।কতৃত্ব কি তারই নয়? আর তিনি হিসাব নিকাশের জন্য সদা তৎপর।' মানুষের মধ্যে একটি শ্রেনী তারা অন্ধ ও বধির।তারা মনে করে তারা যা করছে তাদের পর্যবেক্ষন করার কেউ নেই।তাদের জন্য মানুষের মধ্যে যেমন রয়েছে সত্যের সাক্ষি তেমননি রয়েছে দুই কাঁধে দুই জন ফেরেস্তা(সম্মানিত লেখক)।সূরা ক্কাফের ১৭ আয়াতে আল্লাহ এদের সম্পর্কে বলেন,' স্মরন রেখ-দুইজন গ্রহনকারি গ্রহন করে চলছে ডানে ও বাঁয়ে।' আল্লাহ যখন মানুষকে শক্ত হাতে ধরেন তার কোন ক্ষমতা নেই তা থেকে বের হয়ে যাওয়া। সূরা রা'দের ৪১ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'আল্লাহ রায় দান করেন,তাঁর রায় প্রতিহত হওয়ার মত নয় আর তিনি হিসাব নিকাশে তৎপর।' যারা সমাজে অশ্লীল ও আন্যায় অত্যাচার করে চলছে তাদের সম্পর্কে আগুনের ব্যাবস্হা রাখা হয়েছে।তারা জিজ্গাসা করে কবে সেই বিচারের দিন? এদের জন্যই আগুনের ব্যাবস্হা রাখা হয়েছে। সূরা আয'যারিয়াতের ১৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'তোমাদের অত্যাচার তোমরা আস্বাদন কর।,এইটিই সেই যেটি তোমরা ত্বরান্বিত করতে ছেয়েছিলে।' এসব জাতিকে সতর্ক করার জন্য অনেক নবী রাসূলের আগমন ঘটেছিল,তাদের অনেককে তারা হত্যা করেছিল,অত্যাচার করেছিল,দ্বীনের বাহকদের আজ পর্যন্ত অত্যাচার ও হত্যা করে চলছে।আল্লাহর সাথে উপাস্য করে চলছে ও বিদাআত করছে এক শ্রেনীর মুসলমান নামের উদ্ভট মানুষ।আল্লাহর রাসূল সা;কে এদের সতর্ক করেছেন আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে যা সূরা আয'যারিয়াতের ৫১ আয়াতে,'আল্লাহর সাথে কোন উপাস্য দাঁড় করো না।নি:সন্দেহে আমি তোমাদের নিকটি তাঁর কাছে থেকে একজন সতর্ককারি।' যা কিছু ঘটে যায় পৃথিবীতে সবই আল্লাহর ইচ্ছাতে হয়।যা কিছু ভাল আল্লাহ হুকুম করেন।আল্লাহ ইচ্ছা করলে সব জাতিকে এক করে দিতে পারতেন।সবাইকে ভাল করে দিতে পারতেন।আল্লাহ জান্নাতিদের জান্নাতে ও জাহান্নামিদের জাহান্নামে দিতে পারতেন।কারন জান্নাতিদের জান্নাতে দিলে তারা কিছুই বলতো না।কিন্তু জাহান্নামিদের জাহান্নামে দিলে তারা বলতো আল্লাহ আমরা পৃথিবীতে ভাল কাজ করতাম।সেজন্য আল্লাহ দুনিয়ার জীবনে একটি হায়াতে জিন্দিগী দান করেছেন যাতে বান্দাদের পরীক্ষা করতে পারেন।সূরা আল নাহালের ৯৩ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'আল্লাহ যদি ইচ্ছা করতেন তোমাদের এক জাতিভুক্ত করে দিতেন।তিনি পথহারা হতে দেন যাকে ইচ্ছা করেন ,আবার যাকে ইচ্ছা সৎ পথে পরিচালিত করেন।তোমাদের জিজ্গাসা করা হবে যা তোমরা করে চলছো।' যারা রোজ ক্কেয়ামতের দিবসের হিসাব নিকাশ সম্বন্ধে গাফেল তাদের ব্যাপারে আল্লাহ সূরা ইসরার ১৩/১৪ আয়াতে বলেন,'আর প্রত্যেকটা মানুষ-আমরা তার পাখি তার গলায় বেঁধে দিয়েছি।আর ক্কেয়ামতের দিন আমরা বের করে দিব একটি খাতা যা সে দেখতে পাবে সম্পূর্ন খোলা।পড় তোমার গ্রন্হ - আজকের দিনে তোমার আত্মাই তোমার হিসাব নিকাশে যথেষ্ট।'

আজকে যারা পৃথিবীতে ন্যায়বিচার করতে পারছেন না তারা ঠকে যাবেন আখেরাতের সেই দিন।প্রতিটি মানুষকে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে।নিজের বিচার করেছে কিনা? পরিবারের উপর তার বিচার সঠিক ছিল কিনা? তার সম্পদ-সন্তান ও পার্থিব মালামালের বিচার ভিত্তিক বন্টন হয়েছে কিনা? তার আত্মীয়,প্রতিবেশি ও অধিনস্তদের উপর বিচারের মানদন্ড ঠিক ছিল কিনা? সেজন্য আল্লাহ সূরা আল আম্বিয়ার ৪৭ আয়াতে বলেন,'ক্কেয়ামতের দিন আমরা ন্যায় বিচারের মানদন্ড স্হাপন করবো, কারো প্রতি একটুও অন্যায় করা হবে না আর যদি সেটা সরষে বিজের মতও হয় আমরা নিয়ে আসবো আর হিসাব গ্রহনকারি হিসেবে আমরা যথেষ্ট।' যারা সমাজে গীবত ও অপবাদের মত কাজ করে তাদের জন্য কঠোর শাস্তি রয়েছে আর তাদের অংগ প্রত্যংগ তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিবে।আল্লাহ সূরা নূরের ২৩/২৪ আয়াতে বলেন,' যারা সতি সাধ্বী,বিশ্বাসীনি,নীরিহ নারিদের উপর অপবাদ দেয় তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।সেই দিন তাদের জিহ্বা,তাদের হাত ,তাদের পা তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে তারা যা করে চলছিল।' আমাদের সবাইকে আল্লাহ সমবেত করবেন।কেউ কারো বোঝা বইবে না।প্রত্যেকে নিজের বোঝা বইবে।কারো অপরাধের জন্য কেউ দায়বদ্ধ হবে না।আল্লাহ অন্যের আপরাধের জন্য কাউকে জিজ্গেস করবে না।সূরা সা'বার ২৬ আয়াতে আল্লাহ তাঁর রাসূল সা:কে বলেন,তুমি বল-আমাদের প্রভু আমাদের সবাইকে সমবেত করবেন।তার পর তিনি আমাদের মধ্যে মিমাংসা করবেন ন্যায়ের সাথে।আর তিনিই শ্রেষ্ঠ বিচারক ও পরম জ্গানী।'

আলকুরআনে অসংখ্য আয়াত রয়েছে বিচারদিন সম্পর্কে।আমরা এড়িয়ে যাচ্ছি দুনিয়ার সামান্য কিছুর জন্য।এগুলো ধোকা ছাড়া কিছুই নয়।বিশ্বাসীদের জন্য এই দুনিয়ার জীবনটি একটি কাঁটাযুক্ত যায়াগা।সেটা হতে পারে ঘরে বাইরে সব যায়গায়।বিপদ আসতে পারে যে কোন সময়।যিনি ঈমানদার তিনি মেনে নিবেন হৃদয় দিয়ে ও আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবেন।আবার সুখের সময়ও একই অবস্হা বিরাজ করবে।নিজে ভাল করবে ও অন্যকে ভাল কাজ করার তাগিদ দিবে।নিজে অন্যায় থেকে বিরত থাকবে এবং অন্যকে সাধ্যমত এগুলো থেকে বিরত রাখার জন্য চেষ্টা তদবির করবে।সমাজ ভাল হওয়ার জন্য মানুষ নামের 'টুল;কে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা: এর পথে আসতে হবে।এটাই একমাত্র মুলমন্ত্র যাকে অনুশীলন করতে হবে প্রতিটি পদক্ষেপে।আমরা যদি মনে করি আমার ছোট বা বড় সব কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদীহি করতে হবে তাহলে সকল অন্যায় বন্ধ হওয়া সম্ভব।আইনের শাসন ও বিচারব্যাবস্হার সরলিকরন করলেও যদি আল্লাহর ভয় মানুষের অন্তরে না থাকে তাহলে পাপ মুক্ত হওয়া যাবে না।আসুন আমরা প্রত্যেকে যার যার যায়গা থেকে মানুষকে ভালবাসি,দেশকে ভালবাসি ও নিজের দায়িত্ববোধকে জাগ্রত করি।আমরা যদি দলদাসত্বে ও অজ্গতার মাঝেই চলতে থাকি, যাদের অপরাধ উপড়ানোর মত সাহস নেই তাহলে কখনো সম্ভব হবে না সমাজকে মুক্ত করা।আমরা কিছুসংখ্যক কথা বলতে জানি কিন্তু সক্রিয় ও সৎ হতে জানি না। এই সামান্য কিছু অনুসরনীয় যদি থাকে আর ব্যাপক অংশ তেজষ্ক্রিয়তা ছড়িয়ে দেয়ার পক্ষাবলম্বন করে তাহলে সমাজ বিবর্তনের কোন অপার সম্ভাবনা নেই। কি করে সম্ভব সামান্য 'ক' জন নিয়ে বিশাল জীবনে পদার্পন করবো আমরা? আমাদের ভাবনার সময় এসেছে কিভাবে আমরা নিজেদের দক্ষতার স্ফুরন ঘটাবো ও আমাদের জীবনকে একটি বিশেষ রুপে রুপায়িত করবো,আমাদের জ্গান ও প্রজ্গা দিয়ে সততার সাথে মানুষকে পরিশীলিত করে গড়ে তুলবো যাতে করে শেষ বিচারের দিনে আমাদের আমলনামা ডান হাতে আসে ও আমরা বেঁচে যাই লেলিহান অগ্নিশিখার জালানো পোড়ানো থেকে।

বিষয়: বিবিধ

১৬০৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

291518
০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৪
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File