সেই মনমাতানো হেমন্ত আজ আর নেই।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৭ নভেম্বর, ২০১৪, ০৭:১৯:১৭ সন্ধ্যা
হেমন্তের শেষে এখন প্রান্তিক কৃষকের গোলা ভরে না ,শুন্যতায় হাহাকার করে হৃদয়।বছরে আমাদের ছ'টি ঋতু।একটির পর আর একটি আসে বিভিন্ন রংঙে।এক কালের গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ ও গোয়াল ভরা গরু আর নেই।নেই এখন কৃষকের হাতে সে জমা জমিও।গাঁয়ে গাঁয়ে ছড়িয়ে পড়া নবান্নের ঘ্রান নেই,পাখির ঠোঁটে উদাস করা প্রান নেই,মৃদু হাওয়া দোল দেয়া পাকা ধানের শীষ তেমন নেই,রাখাল রাজার সুরেলা বাঁশির শব্দ নেই,শিশির ঝরা সকালে ঘাস নেই,খেজুরের রসের জন্য গাছির আয়োজন নেই, চাষির মুখে ফোটা সেই সুখের হাসি নেই।হেমন্ত এলে কৃষকের আমেজ থাকতো আলাদা।যে সকল এলাকা বিশাল মাঠ জুড়ে ছিল ধান চাষ, অন্য এলাকা থেকে হেমন্তে দলে দলে চলে আসতো দিন মজুর।গানের সুরে সুরে তারা ধান কাটতো আর জুটি বেঁধে লাইন ধরে চলতো চাষীদের আংগিনায়।সে দৃষ্য দেখে মনে হতো সত্যিই আমাদের দেশ ছিল এক সোনার বাংলা।কালের পরিক্রমায় সে ধানের জমি কমে যেতে থাকলো আর দখল করে নিল নগরায়নে।চাষিরা হালের বলদ বিক্রি করে নগরের দিকে ধাবমান হতে থাকলো।উজানের পানি নেই বলে নদীগুলো মরে এখন প্রায় বিলীন যে নদীগুলো এক সময় ছিল প্রানচন্চল।হেমন্তের শেষে পানি শুকালেও খালগুলো চলমান থাকতো।পানির চলাৎ চলাৎ শব্দে বুক ভরে যেত।মাঝিরা মনের সুখে গান গেয়ে পালতোলা নৌকা চালাত।প্রকৃতির এই নিস্তব্ধতা আমাদের নিয়ে যায় সেই হারানো দিনগুলোতে।প্রকৃতি এখন বৈরি হয়ে উঠেছে।গ্রামীন কৃষকের হাহাকার আর শুন্যতার যায়গা দখল করেছে নব্য বাটপারের দল।
আমি বাংলার সব ঋতুকেই কমবেশি ভালোবাসি।তবে বর্ষা ও হেমন্ত কালকে বেশ আলিংগন করে নেই।বর্ষায় যখন অঝোর ধারায় আকাশ ভেঙে নেমে আসে বৃষ্টির পানি অবিরত, তার সাথে ঘন অন্ধকার,তখন কখনো বৃষ্টিতে ভেজা বা কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা অথবা প্রিয়জনের রান্না খিচুরি ও তার সাথে গরুর গোস্ত ভূনা।তখন মন যে কেমন উদ্বেলিত হয়ে উঠে সাথে আমার ছোট মা'দের কল কাকলিতে যা বুঝিয়ে বলার নয়। তবে হেমন্তের শেষে ও শীতের শুরুতে যদিও শরীরে কাপড় জড়ানোর অবস্হান তৈরি হয় এবং ধীরে ধীরে গ্রাম বাংলার কৃষ: মানুষের দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যায় সব আনন্দ।অতি শীতে অধিকাংশ মানুষ যাদের ঘর নেই,কেউ বা ভাংগা টিনের চালায় ,কেউ বা ফুটপাতে টিপ টিপ কুয়াশায় বসে প্রভাতের প্রতীক্ষায় থাকে একটু রোদের ছোঁয়া পাওয়ার আশায়, তখন আমাদের মত মানুষেরা শুধু তাদের ভৎসনাই করি।ঠিক এ অবস্হায় আমরা দেখি তারা ক্ষেপে আছে আমাদের দিকে যারা অট্টালিকায় বাস করি। আগে যারা সমীহ করে চলতো তারা এখন কটু কথা বলতে দ্বিধা করে না কারন তাদের চলার আর কোন অবস্হান নেই।এভাবেই আমরা অবলীলায় নানারকম কথার স্টম্ফুলিঙ্গ ছুটতে দেখি আমাদের চারধারে। সে রকমই একটি অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে আমাদের দেশে গত কয়েক বছর ধরে। আমাদের রাজনীতিতে দীর্ঘ শাসিত যে দুই দল, তার মধ্যে বিরোধীপ্রবররা বলছেন, কানে ধরে ক্ষমতাসীনদের তারা আসন থেকে নামিয়ে দেবেন। ক্ষমতায় যারা, তারাও বলছেন, নামান তো দেখি? রাজনীতির যে হাওয়া বইছে সেখানে শিশুরাও বলে, হে শিশু রাজনীতিবিদরা! আমাদের থেকে তোমরা কথা শিখে নাও।ইদানিং বড় নেতা আর পাতি নেতাদের অবস্হান এক যায়গায় এসে পড়েছে মনে হছ্ছে, তাদের যা শিখিয়ে দিছ্ছে তা-ই বলছে। আমাদের এমনই দুর্ভাগ্য যে, একটি সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যখন দেশটি স্বাধীন হলো, তারপর থেকে রাজনৈতিকভাবে কখনোই স্বস্তি পাইনি আমরা। হত্যা, প্রাসাদ চক্রান্ত, উর্দিধারীদের দৌরাত্ম্য আমাদের প্রাণকে ওষ্ঠাগত করে তুলছে। অথচ এর সঙ্গে আমাদের সাধারণ মানুষের কোনোই সম্পর্ক নেই। আমরা প্রতিনিয়ত একে ধরছি, ওকে মারছি! আমরা ভেবেছিলাম যে, নব্বইয়ের দশকের শুরুতে রাজনীতির পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হয়তো আস্তে আস্তে গণতন্ত্রের চর্চার মাধ্যমে আমরা একটি সহনশীল, গণতান্ত্রিক এবং জনমুখী রাজনৈতিক ব্যবস্থা কায়েম করতে পারব। কিন্তু তা হয়ে উঠে নি।যারা ছিল গনতন্ত্রের শক্রু , যারা ছিল স্বাধীনতার শক্রু তাদের সংগে নিয়েই এ দু'দল জনজীবন বিপর্যস্ত করছে। দীর্ঘদিন ধরে স্বৈরাচারী সরকারের অধীনে থাকলে ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদদের মধ্যেও এক ধরনের অসহিষ্ণুতা বাসা বাঁধে। এটাই স্বাভাবিক ছিল যে, এই দেশের দুই বৃহৎ দল নিজ নিজ রাজনৈতিক এজেন্ডা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে একটি সুস্থ গণসম্পৃক্ত রাজনীতি ধারার সৃষ্টি করবে। কিন্তু আমাদের জীবদ্দশায় আমরা এই সুস্থির অবস্থাটি দেখে যেতে পারব বলে বোধ হচ্ছে না।এখনতো জনগনের আর ভোটের দরকার নেই। আর জনগন এ দু'দল ছাড়াই বা যাবে কোথায়? তৃতীয় শক্তি আসার মত সম্ভাবনাও দেখা যাছ্ছে না যে মানুষ অবলম্বন করবে।আদর্শিক দল দরকার এদেশের উন্নতির জন্য আর সেটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললে চলে। যে আদর্শের জন্য ৩০ লাখ বাঙালি আত্মাহুতি দিয়েছিল ১৯৭১-এ, সে আদর্শ কেউ স্হাপন করতে পারেনি। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে প্রথমেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যে সরকার মুজিবনগরে অধিষ্ঠিত ছিল তার প্রতি সমর্থন, মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় যে অমোঘ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র রচনা করা হয়েছিল তার প্রতি আনুগত্য, শেখ মুজিবুর রহমানের স্বীকৃতি এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের বর্জন-এসব মৌল বিষয়ে দ্বিধাহীনভাবে সমর্থন জানাতে হবে।কিন্তু এ দু'দলে তাদের স্বার্থপরতার কারনে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ও গনতন্ত্রের বিরোধীদের পালাবদল হতে দেখা যায়।বাংলাদেশের গণতন্ত্র, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উন্নতি হবে তা কি করে আমরা আশা করতে পারি?
আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। কিন্তু একজন দেশের হিতাকাংখী হিসেবে, একজন সাধারন লেখক হিসেবে, আমৃত্যু দেশের কল্যানের পক্ষে কথা বলে যাব এবং দেশ বিরোধী সে যে দলেরই হোক না কেন তাদেরকে সজ্ঞানে কখনোই সমর্থন করব না।আমাদের দেশে অনেক গ্জানী গুনী সারা দেশে ছড়িয়ে আছে।সেখানে হতে পারে নবীন ও প্রবীনের সমাবেশ যারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আমি বিশ্বাস করি না যে একমাত্র কোনো একটি বিশেষ বয়সের জনগোষ্ঠী দেশকে অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যেতে পারে। বিশ্বের সর্বত্র আমরা তরুণ-প্রবীণের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে একটি সমাজ এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেখি। আমি আরও বিশ্বাস করি যে, যেসব তরুণ এখনও কোনো দলীয় রাজনীতিতে উদ্যোগী না হয়ে তাদের মেধা, মনন এবং সদিচ্ছার দ্বারা দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করে যাচ্ছে অথবা কাজ করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, সেসব তরুণকেই আমাদের প্রয়োজন। তবে তরুণ-প্রবীণ সমন্বয়টি ভুললে চলবে না।সরকার বদল হওয়া একটি স্বাভাবিক ব্যাপার।যে কোন দল ৫ বছরের জন্য ক্ষমতায় আসবে।তাদের হতে হবে নৈতিক ভাবে বলিয়ান।যারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য আসবেন।বিরোধী দল তাদের গঠনমুলক সমালোচনা করবে এবং সেটা হবে সংসদে।আবার সরকারিদলকেও সহানুভূতিশীল হয়ে তাদের কথা শুনতে হবে।বিরোধীদলকে যেন রাজপথে না আসতে হয় সে চেষ্টা করবে সরকারি দল।আমরা এ দু'দলের মধ্যে সে সহানুভূতির যায়গাটা গত ৪৩ বছরে দেখতি পাছ্ছি ন। যারা আজ নানাবিধ অব্যবস্থার অজুহাতে সরকার বদলের আন্দোলনে নেমেছেন, তারা বাংলাদেশের জন্মের পর থেকে বেশিরভাগ সময় ক্ষমতায় ছিলেন। প্রতিবারই ক্ষমতায় এসেছেন ওই অব্যবস্থার অভিযোগ তোলে। কিন্তু কোনোবারই ক্ষমতায় এসে কোনো একটি বিষয়ে কখনও কি তারা উন্নতি করতে পেরেছেন? আবার যারা বর্তমানে ক্ষমতায় আছেন তারাও কি সবকিছু ভাল করছেন বরং বিরোধীদলে গেলে একই সংস্কৃতির জন্ম দেন।আমরা দেখেছি সব বিষয়ে কেবল অবনতিই হয়েছে।
তাই হেমন্তের শেষে শীতের প্রারম্ভে আমাদের প্রান্তিক কৃষক ও সর্বহারারা তাদের শুন্যতার হাহাকার নিয়ে ধেয়ে আসার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের নীতি ও আদর্শবিরোধী এই চক্রকে ধরার জন্য। তবে তাদের মনে রাখা উচিত যে, তাদের ক্ষেপানোর চেয়ে যদি তাদের কর্মসংস্হানের ব্যবস্হা করা যায় সেটাই শ্রেয় কারন তারা সব সময় অল্পেই তুষ্ট।।আমরা হেমন্তকে যেন সব সময় আলিংগন করতে পারি সে চেষ্টা করা উচিৎ কারন তখন চারদিক সোনার ফসলে ভরে উঠবে। বাংলার মানুষ তখন নবান্নের এই ফসল ঘরে তোলার জন্য হয়ে থাকবে উন্মুখ। কোনো রাজনীতিবিদের কোনো অপপ্রচারে কান দেওয়ার প্রবৃত্তি তাদের থাকবে না। একই সঙ্গে আমি আজকের ক্ষমতাসীনদের প্রতি আবেদন জানাতে চাই যে, আপনাদের বিরুদ্ধে আনীত সঙ্গত এবং অসঙ্গত সব অপপ্রচারকে আমলে নিয়ে সততার সাথে সঠিক অর্জনগুলোকে সাধারণ মানুষের গোচরীভূত করার চেষ্টা করা শুরু করুন।মানুষের কল্যান হলে নিশ্চই মানুষ বুঝতে পারবে।আমরা সে রকম বেশি কিছু দেখি না বরং অতীত নিয়ে সবাই ব্যাস্ত।যারা অতীত নিয়ে ব্যাস্ত থাকে তার কারন হলো তারা তাদের বর্তমানকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারেনি।অতীতের দুজন নেতাকে সামনে নিয়ে আসা মানে হলো তাদের ইমেজ কাজে লাগানো।কলন্কিত বর্তমান কখনো অতীতের ভাল দিয়া মোছা যায় না।বরং অতীতের ভাল জিনিসকে সামনে নিয়ে এসে ও অতীতের ভুলটা শোধরিয়ে নিয়ে ভবিষ্যৎকে গড়তে হবে। সঠিক নির্বাচনের জন্য পথ তৈরি করতে হবে।জনগনকে শ্রদ্ধা সম্মান করতে হবে।তা নাহলে বর্ষার কালোমেঘ রুপী ও হেমন্তের এই হাহাকারকারি জনগনকে দমাতে পারবেন বলে মনে হয় না। জীবন ক্ষনস্হায়ী যে যা-ই করুক না কেন হিসেব দিতে হবে। সুতরাং আসুন আমরা সবাই সেই মনমাতানো হেমন্তকে হৃদয়ে ধারন করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার অংগীকার করি ও জনগনের উন্নয়নে একযোগে কাজ করি।
বিষয়: বিবিধ
৯৪৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন