ভন্ড রাজনীতির ছোবলে বাংলাদেশ।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৪ নভেম্বর, ২০১৪, ০৮:০৫:০৫ রাত
একজন প্রবীন বললেন,আমাদের রাজনীতির মাঠে এখন অনেক কিট পতংগ ঢুকেছে।সেকালের রাজনীতি নেই,রাজনীতিদবিদও নেই।তিনি সেকাল বলতে কি বুঝিয়েছেন আমার জানা নেই।তবে তাঁর বয়সের মাপাকঠিতে আমি ধরে নিলাম তিনি ষাটের দশকের রাজনীতির কথাই বলছিলেন।তখন কার রাজনীতিবিদরা লড়াই সংগ্রাম করেছিলেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে।আবার আমাদের এই প্রবীন রাজনীতিবিদরা লড়াই করেছিলেন পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে।রাজনীতির মাঠে সব সময়ই থাকে দু'ধরনের রাজনীতিবিদ।এক ধরনের রাজনীতিবিদরা মানুষের কল্যানে আন্দোলন সংগ্রাম করেন।এদের সংখ্যা কম।আর এক শ্রেনির রাজনীতিবিদ হলো মতলব বাজ ও সুবিধাবাদি গোষ্ঠী।আমাদের এ অন্চলের(বাংলাদেশ,পাকিস্তান ও ভারত) রাজনীতি বিশ্লেষন করলে সহজে এই সব ভন্ড রাজনীতিবিদদের মুখোশ দেখতে পাই।মাত্র একবার এমপি বা মন্ত্রী হয়ে গেলেই যুগ যুগ ধরে শাসন চলতে থাকে।ব্রিটিশ-ভারত থেকে শিক্ষা পাওয়া আগের সময়ের রাজনীতিবিদরাও বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্য ধারণ করে চলছিলেন বহু বছর ধরে। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ভারত ও পাকিস্তানের অধিকাংশ রাজনীতিবিদরাই রাজনৈতিক আদর্শের জায়গায় আপসহীন ছিলেন। জওহরলাল নেহেরু থেকে শুরু করে ভারতের অধিকাংশ রাজনীতিবিদই আদর্শগতভাবে একনিষ্ঠ রাজনীতিবিদ ছিলেন। একই ধারায় পাকিস্তান আর বাংলাদেশেও অনেক প্রথিতযশা রাজনীতিবিদের জন্ম হয়েছিল, যাদের পেশা, নেশা আর উদ্দেশ্য সবই ছিল রাজনীতিকে কেন্দ্র করে। ১৯৭১ এর আগে এ রকম ত্যাগী নেতাদের আমরা দেখতে পেয়েছি। মরহুম আব্দুল হামিদ খান ভাষানী,একে ফজলুল হক,হেসেন সহিদ সোহরাওয়ার্দী,শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ।সার্বক্ষণিক রাজনীতি করা মহান ত্যাগী লোকটিই দেশে রাজনীতির সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রক্ষমতাও ভোগ করতেন। কিন্তু সেই সুন্দর রাজনৈতিক ব্যবস্থাটি বাংলাদেশে বেশিদিন চলতে পারেনি।দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই এ সব কীট পতংগ মাথা ছাড়া দিয়ে উঠেছিল।এই সব কীট পতংগ ১৯৭১ পূর্ব সময়ে রাজনীতির মাঠে ছিল কিন্তু তখন তারা এ শক্তি সন্চয় করতে পারেনি। সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশ,অভাব অভিযোগে কাতর দেশের মানুষ,পুনর্গঠনে দেশ,অর্থের অভাব সব মিলে নতুন সরকারের জন্য ছিল এক কঠিন অবস্হা।সদ্য স্বাধীন দেশের এই শিশু রাজনীতিকে লালন করে পুষ্ট করার মত নেতৃত্ব দেশ পায়নি।তার বদলে পেয়েছে অপরাজনীতি,খুন খারাবি ও লুটপাট।দেশে প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক কুরুচি সম্পন্ন দলীয় নেতা , আমলা,অংগসংগঠক এবং তার সাথে অসৎ ব্যাবসায়ি শ্রেনি তৈরি হয়ে রাজনীতি ধ্বংস হলো।প্রথম বিদায় নিল রাজনীতির স্হপতি আর গ্রাস করে নিল স্বাধীনতার স্বপ্ন।যে রাজনীতি ছিল চর্চার বিষয়, সেই রাজনীতি হলো দখলের বিষয়। রাতারাতি ক্ষমতার জোরে কেউ কেউ হয়ে গেলো রাজনীতিবিদ। বদলে যেতে লাগলো রাজনীতির স্বাভাবিক চরিত্র। সামরিক বাহিনীর কাজ দেশকে দেশীয় ও বিদেশী কুচক্রীদের হাত থেকে মুক্ত রাখা কিন্তু তা হলো না বরং সেখানে ক্ষমতাবান হলো হঠাৎ দখল নেয়া সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা।স্বাধীনতার চেতনার ধজাধারিরা গত ৪৩ বছর ধরে যে চেতনার কথা বলে আসছে, সে চেতনা সম্পর্কে তাদের কোন ধারনা নেই।এই চেতনার কথা বলে তারা হয়েছে আজ নব্য কোটিপতি।রাজনীতি আক্রান্ত হয়েছ সাংসদ ও জংগিবাদের মিশ্রনে।এরা স্বার্থে একে অপরের ভাই।দিনে একে অন্যের বিরুদ্ধে কথা বলে আর রাতে বড় বড় হোটেল গুলোতে তাদের চরাচর লক্ষ্য করার যায়।আবার ধর্মের কিছু দল জুটি বেঁধেছে এই ধজাধারিদের সাথে।দিনে এরা মৌলবাদ ও ধর্মব্যাবসায়ি বলে গালি দেয় আবার ভোটের সময় এরা এক নৌকার যাত্রী।আর মিডিয়া গ্রুফ কাজ করছে এদের পক্ষে সার্বক্ষনিক।অবশ্য এদের কারসাজি সব জনতা বুঝতে না পারলেও এলিট একটা শ্রেনী যারা পড়াশুনা করে তারা অনায়াসে বুঝতে পারে।
বাংলাদেশের রাজনীতি অনেক বছর আগে থেকে পোকায় আক্রান্ত হলেও মানুষ পরিবর্তন চায়।কিন্তু পরিবর্তন করে কাকে আনবে ক্ষমতায়? গত ৪৩ বছরে কোন একটি সরকার প্রতিজ্গা করেনি আমরা একটি টার্ম অন্যায় করবো না।তারা যখনি এসেছে তাদের জুলুম নির্যাতন সাধারন মানুষকে সইতে হয়েছে।আবার অনেকে তৃতীয় শক্তির কথা বললেও সে রকম কোন সংঘবদ্ধ দল তৈরি হয় নি।এ দেশের মানুষ হলো হুজুগে মাতাল।কেউ ভাল কাজ করতে না পারলেও অরাজনৈতিক গোষ্ঠীকে ক্ষমতায় আনতে তাদের বাধে না। কিন্তু কেউই এ দেশকে উন্নয়নের দিকে ধাবিত করার স্বপ্ন দেখে না। বরং তারা দল গঠন করে দলছুট সুবিধাবাদী ও রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত লোককে নতুন দলে ঠাঁই করে দেন যেন নিজের যায়গা পাকা পোক্ত থাকে। ভয় দেখিয়ে, অর্থ দিয়ে কিংবা কৌশলে অনেক লোককেই রাজনীতির মাঠে সহযোগী করে নেন। এ কাজ গুলো জেনারেল জিয়াউর রহমান যেমন করেছেন তেমনি করেছেন হোছাইন মুহাম্মদ এরশাদ।বর্তমান আওয়ামিলীগে যে হচ্ছে না তা নয়।বিগত দিনগুলোতে আমরা দেখেছি দলের ত্যাগী নেতাদের করুন অবস্হা।এ গুলো সবই ক্ষমতার দ্বন্দ ও ভোগের রাজনীতি।দেশে রাজনৈতিক বিভক্ততা রাজনৈতিক কর্মী সৃষ্টি করলেও ত্যাগী ও সৎ নেতা সৃষ্টি করে না। সেন্ট্রাল লিডাররা যখন কোটি কোটি টাকার মালিক হন তখন ছোট ছোট নেতাকর্মীরা আর বসে থাকে না।তারাও ভোগ করার জন্য এগিয়ে আসে আর বড় বড় নেতারা তাদের আসন রক্ষার জন্য এদের ব্যাবহার করে।এ অবস্হা চলে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে।অর্থের জোরে লোকজন এমপি-মন্ত্রী যখন হওয়া শুরু করলো তখন রাজনীতিতে রাজনৈতিক নেতাকর্মীর অভাব দেখা দিতে শুরু করলো। আর সেই শূন্যস্থান সামরিক-বেসামরিক প্রাক্তন আমলা এবং ব্যবসায়ীরা পূরণ করতে থাকলো। গণতান্ত্রিক রাজনীতির জায়গা বলতে এখন আর কিছু নেই। মানুষের এখন ভোটাধিকার নেই। ভোটবিহীন গনতন্ত্রের দিকে এগুচ্ছে আজকের বাংলাদেশ।আর একটি নতুন সংযোজন হলো সংসদে এখন বহুল ধনবান সাংসদ যেখানে থাকার কথা ছিল জ্গানী গুনি এলিট আইনবিদ। অবশ্য এ ধারাটি সব শাসকদের সময়ে উজ্জিবিত হয়েছে। তাই এখানে সংসদে অবস্থান করেন অধিক হারে ধনবান ও ব্যবসায়ী, মন্ত্রিত্ব লাভ করেন ব্যবসায়ী। সংসদের আলোচনার ওপর একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন, বর্তমান যুগের সংসদ সদস্যরা কোন কোন বিষয়ের ওপর আলোচনা করতে ভালোবাসেন। প্রতিপক্ষকে বকাঝকা করতে এবং আর্থিক সুবিধা নিয়ে আলোচনা করতেই তাদের আগ্রহ বেশি। গবেষণাভিত্তিক কোনো আলোচনাতে দেখবেন তাদের অনেকেরই কোনো আগ্রহ নেই। এমন আলোচনায় হয় তারা ঘুমিয়ে থাকেন, নয়তো অনুপস্থিত থাকেন। ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদদের ধাক্কায় পেশাভিত্তিক রাজনীতিবিদরা অন্ধকার রাস্তায় হারিয়ে যায়। কেউ কেউ অবৈধ রাস্তায় অর্থ জোগাড় করে ধনবান হিসেবে রাজনীতিতে টিকে থাকতে চেষ্টা করছে। অন্যরা পথ হারিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। অপেক্ষা করছে যদি আবার আসে সেই রাজনীতি, যা থাকবে শুধুই রাজনীতিবিদদের হাতে।
বাংলাদেশের আজকের রাজনীতি তাই দাঁড়িয়ে আছে একটি ক্রান্তিলগ্নে।এমনটা আমরা সাধারন জনগন আশা করতে পারি না। সফল রাজনীতির চাকা আবার ঘুরে যাবে উল্টোদিকে। আবার আসবে তারা এই মাঠে, যারা শুধুই রাজনীতি করে। তবে প্রশ্ন হলো, সেই শুভ দিনটি কখন হবে? ৪৩ বছরে রাজনীতির এই নষ্ট ধারাটি পাকাপোক্ত করে বসে আছে।এদের শিকড় এত গভীরে যে উপড়ানো খুব কঠিন। বিপরীত ধারাটি ফিরিয়ে আনার কাজটি তো আরো কঠিন ও সময়সাপেক্ষ বিষয়।অপশাসন আসে অতি দ্রুত কিন্তু গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারা দ্রুত আনা যায় না। তার জন্য দরকার সময়, সঠিক নেতৃত্ব ও পদ্ধতি ,ত্যাগ ও সততা। এসব কিছু করার জন্য কিছু প্রকৃত রাজনীতি দরদি উত্তম নেতার দরকার। বাংলাদেশ এবং ভারত একদিন ব্রিটিশ শাসনের সময় থেকেই রাজনীতি শিখেছিল। শেখার মন্ত্রটি ছিল বেশ শক্ত। আজ তা বিপথে চলে গেলেও আশা করছি, আবার মূল ধারাটি আমাদের দেশে ফিরে আসবে।আমরা অপেক্ষা করছি সেই মূল ধারার রাজনীতির জন্য। হয়ত আমরা দেখে যেতে পারবো না।শুরুটা হয়ে গেলে লাগুক না সময়। আমাদের আবার প্রষ্তুত হতে হওয়া দরকার আর একটি যুদ্ধের জন্য সেটা হলো শোষন,পুনর্গঠন ও সৎ নেতা তৈরির জন্য যুদ্ধ।বাংগালি হারতে জানে না,বাংগালির উদ্দম আছে।আজ সারা দেশে যে উদ্দোক্তা শ্রেনি রয়েছে তারা অনেকাংশেই নবীন।তারাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।আসুন আমরা কবি নজরুল ইসলামের যৌবনের গানের এই পংক্তি গুলো দিয়ে নিজেদের দেশ গড়ায় উদ্বুদ্ধ করি," বহু যুবককে দেখেছি যাদের যৌবনের উর্দির নিছে বার্ধক্যের কন্কাল মূর্তি,আবার বহু বৃদ্ধকে দেখেছি যাদের বার্ধক্যের জীর্নাবরনের তলে মেঘলুপ্ত সূর্যের মত প্রদীপ্ত যৌবন।"
বিষয়: বিবিধ
১৫৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন