চিন্তার স্বাধীনতা বলতে বোঝায় একজনের চিন্তা অন্যের কাছে পৌঁছে দেয়া, কোন ভীতি সন্চার করা নয়।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১২ নভেম্বর, ২০১৪, ০৮:৪৪:৩৭ রাত

একটি প্রচলিত সাধারন কথা আছে যে চিন্তার জগৎটা হলো মুক্ত।এর বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কারো ক্ষমতা নেই।সমাজে এমন কোন মানুষ নেই যে সে চিন্তা করে না।চিন্তার জগতে ভিন্নতা আছে তবে সবাই চিন্তা করে।আমাদের চারপাশে বিভিন্ন পেশাজীবি, শ্রমিক-কর্মচারি,চাকুরিজীবি,ছাত্র-শিক্ষক, নেতা-নেত্রী, জ্গানী-গুনী ও শাসক শ্রেনী সহ বভিন্ন চিন্তাশীল মানুষ রয়েছে।সবাই যার যার যায়গা থেকে বেঁচে থাকার জন্য চিন্তা ভাবনা ও সংগ্রাম করে।কারো উদ্দেশ্য নিজে বাঁচা ও অন্যকে বাঁচানো,কারো উদ্দেশ্য শুধু নিজে বেঁচে থাকা আবার কারো উদ্দেশ্য অন্যদের নি:শেষ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা।ব্যাক্তি বিশেষের এই চিন্তার স্বাধীনতা যার যার নিজস্ব ব্যাপার।ভাল এবং মন্দের ভিত্তিতে এই চিন্তার প্রসার ঘটে।প্রতিটি মানুষকেই আল্লাহ পাক ভাল ও মন্দের জ্গান দান করেছেন।আর দিয়েছেন দুনিয়ার জীবনে স্বাধীনতা।ইচ্ছা করলে ভালর দিকে তার চিন্তার প্রসার ঘটাতে পারে আবার ইচ্ছা করলে মন্দের দিকেও যেতে পারে।তবে আল্লাহ মানুষকে এই কাজ করার ক্ষমতা দান করেছেন।কারন একজন মানুষের জন্য এই দুনিয়ার জীবনটি পরীক্ষা আখেরাতের বিচারের জন্য।আল্লাহ পাক সূরা মুলকের ২ আয়াতে বলেন,'আমি মওত ও হায়াত সৃষ্টি করেছি দেখার জন্য, কে কাজে কর্মে শ্রেষ্ঠ।'কিন্তু খুব কম মানুষ পৃথিবীতে এই লিবার্টিকে সঠিক পথে ব্যায় করে থাকে।সৃ্ষ্টিকর্তার আদেশের উপেক্ষা করে নিজেকে একজন ইলাহ হিসেবেই দেখে বেশীর ভাগ মানুষ। এটা একটা মানবীয় প্রবনতা যা সচরাচর দেখা যায়।একটু গভীরভাবে দেখলেই আমাদের চারপাশে এর প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়।প্রতিটি মানুষের মধ্যে এ প্রবনতা আছে কম বেশী।কারো কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পায় আবার কারো মাঝে সুপ্ত থাকে।মুক্ত চিন্তার মানুষ পাওয়া একেবারে মুশকিল।যিনি নিজেকে খুবই ধার্মিক ও সমাজ সচেতন মনে করেন তার কাজের মধ্যেও তার চার পাশের মানুষ এ রোগ দেখতে পায়।মোটকথা মনের অজান্তে এ রোগ কোন কোন কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।এজন্য রাসূল সা: শির্কের কথা বলতে গিয়ে এমন এক শির্কের উদাহরন দিয়েছেন যা, কালো পাথরে একটি কালো পিঁপড়ার মত।যাকে সচরাচর দেখা যায় না।আমরা সবাই সচেতন যে আমরা শির্ক করছি না কিন্তু আমাদের কাজে কর্মে এই কালো পিঁপড়ার মত শির্ক থাকতে পারে এবং আমরা দেখতে পাই আমাদের অনেক সহকর্মীর কাজে কর্মে শির্করুপি এই কালো পিপড়া আছে যদিও তারা দেখতে পায় না।ইসলামে 'দাওয়া' বলতে যে বিষয়টি রয়েছে তা হলো দীন প্রচার করা অর্থাৎ শরিয়তের ছহি বিধিবিধান যার যতটুকু জানা আছে, একে অন্যের কাছে প্রচার করা।এটি একটি ভাল চিন্তা যা আমরা অন্যের কাছে পৌঁছে দিয়ে থাকি।সমাজে যত বেশী সৎ চিন্তাশীল তৈরি হবে ততই সমাজের কল্যান হতে থাকবে।আর যত বেশী অসৎ চিন্তার বিকাশ ঘটবে সমাজ তলানীর দিকে যাবে।

আমাদের আজকের সমাজ ব্যাবস্হায় আমরা কি দেখতে পাই? সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষের চিন্তাকে রোগাক্রান্ত করেছে।আমরা যদি পরিসংখ্যান নেই প্রতিটি পরিবারে দেখতে পাব প্রায় পরিবার প্রধানের জীবন অস্বচ্ছ।জীবন শুরু হচ্ছে অনৈতিকতায়।উপার্জনে রয়েছে বৈধতার সাথে অবৈধতা।অবৈধ উপার্জনে রক্ত মাংশ তৈরি।তার পর একটি দাম্পত্য জীবন।উত্তরশূরীদের আবির্ভাব হতে থাকলো এই অবৈধ রক্ত মাংশ থেকে।সুচিন্তার উদ্ভভ হতে পারে কি অবৈধতা থেকে? ঘুষখোর বা অবৈধ কারবারি বা উপার্জনকারি যদি তার সন্তানকে বলে, যাও অমুক সংগঠনে গিয়ে ভাল কাজ কর।সে কি ভাল হবে? সে কি দেখতে পায় না তার পিতা বেনামাজি বা ঘুষখোর? অথবা সন্তান বড় হয়ে দেখলো বাবার অঢেল সম্পদ। পরিবারের ইতিহাস টেনে দেখলো দাদা ছিল নিতান্ত গরীব আর বাবা চাকুরি জীবনের ৩০ বছরে মালিক হলেন ১০০ কোটি টাকার।সন্তানের মনে দানা বাধলো আমার বাবাতো একজন বড় ডাকাত।ছেলে হয়তো ভাববে যার পাপে তাকে খাবে।আর বাবার অনুগত হলে তো বাবাকেই অনুসরন করবে। আল্লাহর বিধানের কোন নড়ছড় হয় না।এদের জন্য পৃথিবীতে শাস্তি রয়েছে যা এসে থাকে হায়াতে জিন্দিগীতে বিভিন্ন সময়ে ভয়ানক রোগ বা কোন বড় দুর্ঘটনার আকারে আর আখেরাতের শাস্তি তো জাহান্নামের লেলিহান আগুন।পরিবার ,সমাজ ও রাষ্ট্রে এদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়।কোন কোন সন্তান অনৈতিক পিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে,সমাজের কিছু মানুষ সমাজপতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে,রাষ্ট্র বলয়ে সৎ নেতা নেত্রী ও বুদ্ধিজীবিরা প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। এই প্রতিবাদ করতে গিয়ে বেশীর ভাগ সময়ে চরম নিষ্ঠুরতার শিকার হতে হয়।সমকালীন রাষ্ট্রশক্তি ক্ষমতা কুক্ষিগত করে বিরোধীদের আওয়াজকে সব সময় জব্দ করে রাখতে চায়।এক সময় ল্যাটিন আমেরিকার কলম্বিয়ার সরকার প্রতিবাদ ও সরকারবিরোধীদের বিভিন্ন বাহিনী দিয়ে চরম নিষ্ঠুরতার সাথে দমন করছিল। এ কর্মকাণ্ডের নাম দিয়েছিল ‘ডার্টি-ওয়ার’ নোংরা যুদ্ধ। আসলে এগুলো ছিল রাষ্ট্রীয় গুম-খুন-অপহরণ। সে দেশের এক সংস্থা এর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ১৯৮৯ সালের প্রথম দিকে। এ সংস্থাটির নাম ‘কমিশন অব জাস্টিস অ্যান্ড পিস’ এবং এর প্রধান ছিলেন ফাদার জিরাল্ডো। রিপোর্টে বলা হয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে তিন হাজার প্রতিবাদী-আন্দোলনকারীকে হত্যা করা হয়। সমাজ শোধনের নামে ২৭৩ জনকে হত্যা করা হয়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রতিদিন আটজনকে হত্যা করা হচ্ছিল। ওয়াশিংটন অফিস অব ল্যাটিন আমেরিকা (ওলা) জানায়, নিহত ব্যক্তিরা ছিলেন মূলত তৃণমূল সংগঠক, ক্ষুদ্র চাষি, শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা, মেয়র নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী, মানবাধিকার কর্মী, সাধারণ প্রতিবাদী। প্রখ্যাত লেখক নোয়াম চমস্কি সম্প্রতি লিখেছেন, ‘এই রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীকে খুনের প্রশিক্ষণ দেয় ইসরাইল। আর সমর্থন দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও জার্মানিসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ।’ চমস্কি আরো লিখেছেন, কলম্বিয়ার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর এই (হত্যাকাণ্ডের) কাজে খুশি হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কম দামে অস্ত্র সরবরাহ করে। ড. চমস্কি উল্লেখ করেন, যখন কলম্বিয়ার এই হত্যাকাণ্ডগুলো প্রতিদিন ১১ জনে পৌঁছল তখন লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ এগুলোকে জাতীয় করণীয় (সিকিউরিটি ডকট্রিন) হিসেবে নেয়। যেমন কলম্বিয়ান ডকট্রিন, ব্রাজিলিয়ান ডকট্রিন ইত্যাদি। কলম্বিয়ার ‘ডার্টি ওয়ার’ সারা লাতিন আমেরিকা, এশিয়া ও আফ্রিকায় বিভিন্ন বর্ণে ও আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এর উদ্দেশ্য কোনো বৈদেশিক শত্রুকে ঠেকানো নয়, অভ্যন্তরীণ প্রতিবাদী ও প্রতিপক্ষকে নির্মূল করা। যেমন- ১৯৮৮ সালে কলম্বিয়া ‘অভ্যন্তরীণ শত্রু (প্রতিবাদী ও আন্দোলনকারী) পরিপূর্ণ নির্মূলের যুদ্ধ’ (টোটাল ওয়ার এগেইনস্ট দি ইন্টারনাল এনিমি) শুরু করে। সরকার ‘রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিরোধিতা’কে (ম্যাক্সিমাম ক্রিমিনালাইজেশন অব দ্য পলিটিক্যাল অ্যান্ড সোস্যাল অপোজিশন) অনুমতি দেয়। তখন একটি ‘ইউরোপিয়ান ল্যাটিন আমেরিকান ইনকোয়ারি’তে (যা ব্রাসেলস রিপোর্ট বলে পরিচিত) বলা হয়, এটা একটা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের সুদৃঢ়করণ (দ্য কনসলিডেশন অব দ্য স্টেট টেরর ইন কলম্বিয়া)।

ড. চমস্কি মন্তব্য করেছেন, এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সাধারণত সামাজিক শান্তি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালুর অজুহাতে করা হয়। সেই সাথে এক ভীতির সংস্কৃতি চালু করে বশ্যতার রাজনীতি কায়েম করা হয়। এ কর্মকাণ্ডে নীরবতা সৃষ্টি করে ভীতির রাজ্যের প্রসারতা ঘটানোর চেষ্টা হয়। এর ফল ভোগ করে এক ক্ষুদ্র ক্ষমতাবান অভিজাত শ্রেণী। যেমন- কলম্বিয়ার উচ্চ শ্রেণীর তিন শতাংশ মানুষ সে দেশের ৭০ শতাংশ চাষের জমির মালিক এবং ক্ষমতাসীন। যদিও গরিবতায় ও দুর্দশায় নীত ৯৭ শতাংশ মানুষ। কলম্বিয়া লাতিন আমেরিকার এক ঐশ্বর্যশালী দেশ।লাতিন আমেরিকার এই ভীতির সংস্কৃতি এখন বিশ্বায়িত। এর ওপর সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. ব্যারি গ্লাসনার ‘কালচার অব ফিয়ার’ বইতে চমৎকারভাবে আধুনিক বিশ্বের এই ভীতির রাজনীতির বিশদ আলোচনা করেছেন। গ্লাসনারের মতে, ‘প্রতি চারজন মার্কিনির মধ্যে তিনজনই গত বিশ বছরের আগের চেয়ে বেশি ভীত।’ কেন এমনটি হচ্ছে? তিনি প্রশ্ন করেছেন। গ্লাসনার তার বইতে মূলত মার্কিন অবস্থানে পশ্চাৎভূমি হিসেবে ব্যবহার করলেও, তিনি সারা বিশ্বের ওপর গবেষণা চালিয়েছেন।তার গবেষণার মূল ফলাফল হলো- এই সর্বব্যাপী ভয়ের সংস্কৃতির প্রধান উদগাতা হলো ক্ষমতাবানেরা এবং যখন এরা ক্ষমতাসীন থাকে তখন এর ব্যবহার করে অবিরত নানা অবয়বে। তাদের নেতৃত্বে থাকেন রাজনীতিবিদেরা। আর ফেরিওয়ালা সহায়তাকারী হলো বিভিন্ন সংগঠন। এদের মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে সংবাদমাধ্যম, বিশেষ করে টেলিভিশন। এই আতঙ্কের ফেরিওয়ালারা (পেডলারস অব ফিয়ার) মানুষের মাঝে অযৌক্তিক আতঙ্ক সৃষ্টি করে, যাতে সাধারণ মানুষ ভীত হয়ে বিভিন্ন খরচ এবং কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। গ্লাসনারের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, এই ফেরিওয়ালারা ক্ষুদ্র অভিজাতদের ক্ষমতা নিশ্চিত করার সাথে সাথে নিজেদের জন্য মুনাফার দুয়ার খোলে এবং ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার চেষ্টা করে। তিনি বলেছেন, এই কর্মকাণ্ডগুলো ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদেরা সরকারের সব সরঞ্জাম ও ব্যবস্থাগুলো এমনভাবে ব্যবহার করে, যাতে জনগণ এক ভীতির রাজ্যে ডুবে থাকে এবং লাভবান হতে থাকে সমাজের ক্ষুদ্র উচ্চ কোটি মানুষেরা। মানুষ কি এখন ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক অবস্থার মধ্যে বাস করছে? গ্লাসনারের মতে, অবস্থা বিপজ্জনক হওয়ার চেয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে এমন উপলব্ধি সৃষ্টি করার চেষ্টা নিরবচ্ছিন্ন যে অবস্থা ভয়াবহ। তাদের নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কথা শুনলে এবং তাদের প্রতি অনুগত থাকলে এ বিপদ উত্তরণ সহজ হবে। তারা বিষয়গুলো এমন ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তোলে যেন জনগণ ভয় পেয়ে তাদের বক্তব্য সত্যি মনে করে। এ ছবি যেন বাংলাদেশেরও।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন মন্তব্য করেছিলেন, ‘ভয়ে মানুষের প্রতিক্রিয়া হয়, ভালোবাসায় নয়। এটা রোববারের স্কুলে কখনো পড়ানো হয় না’ (People react to fear, not love. They don’t teach that in sunday school)। তার কথার প্রমাণ মিলল নয়-এগারোর ঘটনার পর। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে এ ঘটনাটি একটি স্থায়ী হাতিয়ার হয়ে গেল। নিরাপত্তা, প্রয়োজন, জনগণকে রক্ষা করার কথা বলে রাজনীতিবিদেরা সব অগ্রহণীয় অনৈতিক কর্মকাণ্ড সহজেই সম্পন্ন করতে থাকল। এটা রাজনীতি ও রাষ্ট্রক্ষমতার সাধারণ হাতিয়ার হয়ে গেল।অস্ট্রেলিয়ান টিভি এবিসির জনাথন গ্রিন গত ১৪ আগস্ট ২০১৪ এক রিপোর্টে দেখিয়েছেন কেমন করে রাজনীতিবিদেরা জনগণকে ভয় দেখান। ‘মার্কিন মন্ত্রী রামসফিল্ড জনগণকে সতর্ক করছেন। কখন হবে, কিভাবে হবে জানি না; তবে কিছু একটা ভয়ঙ্কর হবে।’ তেমনিভাবে মন্ত্রী রবিন উইলিয়ামস বলেছেন, ‘সন্ত্রাসী আক্রমণ যেকোনো সময় হতে পারে।’অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী টমি অ্যাবটের সাম্প্রতিক ইমিগ্রেশন ও মুসলিমবিরোধী কর্মকাণ্ডের মূলেও এই ভীতির রাজনীতি। ‘অস্ট্রেলিয়ান’ পত্রিকার টনি কেলি লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এখন ভীতির রাজনীতিতে প্রচুর সময় এবং বুদ্ধি ব্যয় করছেন, যেন ইসলাম ফোবিয়া, আইএস ইত্যাদির ভয়ে জনগণ তার অনুগত থাকে।’

তবে ভীতির সংস্কৃতি ও বশ্যতার রাজনীতির উপস্থিতির ইতিহাস বহু পুরনো। হয়তো বা মানবেতিহাসের শুরু থেকেই। তবে এ কালের প্রধান প্রবক্তা নাৎসি নেতা হিটলার। তার এক সহকর্মী হারমান গোরিং বলেছেন, ‘জনগণকে শুধু ভয় দেখিয়ে নানা কর্মকাণ্ডে যেমন যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলা সহজ। নতুবা তারা এর প্রতিরোধ বা প্রতিবাদ করবে।’ তাকে অনুসরণ করেছে সব ক্ষমতাবান। যেমন- মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রেজেজিনেস্কি বলেছেন, ‘ওয়ার অন টেরর (সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ) শব্দগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল ভীতি সঞ্চার করার জন্য।’ কারণ তখন জনগণের কাছে বেশি কৈফিয়ত দেয়ার প্রয়োজন পড়ত না। (The term War on Terror War was intended to generate culture of fear deliberately because it obscures reason, intensifies emotions and makes easier for demagogic politician to mobilize the public on behalf of the policy they want to pursue).

সম্ভবত সবচেয়ে ঋজু মন্তব্য করেছেন ফ্রাঙ্ক ফুরেডি তার সাম্প্রতিক ‘স্পাইকড’ ম্যাগাজিনে। তিনি লিখেছেন, ‘একবিংশ শতাব্দীর মনমানসিকতাতে ভয় প্রধান ভূমিকা পালন করছে’ (Fear plays a key role in twenty-first century consciousness)। ফুরেডি দেখিয়েছেন, বর্তমান সময়ে ভীতির সংস্কারকে নানা কোষ্ঠে আবদ্ধ করে নতুন নাম যেমন- ঝুঁকি, যুদ্ধের ভয়, লজ্জা, শাস্তির উৎকণ্ঠা বলে বর্ণনা করা হলেও এর প্রভাব ও প্রকাশ এক। এখন একে বিশ্বায়িত করা হয়েছে প্রযুক্তির কল্যাণে।ফুরেডি লিখেছেন, ক্ষমতাবানদের উদ্দেশ্যলাভের জন্য ভীতির সংস্কৃতির চেয়ে আর কোনো সহজ উপায় নেই। এখন এটা জনমনের প্রধান চিন্তার বাহন। আর রাজনীতি হয়েছে এই শেষ নিয়তির প্রতিযোগিতা।ভীতির রাজনীতি বা সংস্কৃতির কি শেষ হবে? ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট পত্রিকার সম্পাদক রবার্ট গোলান-ভিলেলা লিখেছেন, এর শেষ নেই। কারণ, এমন রাজনীতিতে সবার সুবিধা। আমলারা আর্থিক সহায়তা পায় নানা ভীতি উৎপাদনকারী কর্মকাণ্ডে, রাজনীতিবিদ ও তাদের পৃষ্ঠপোষকেরা দৌলতবান হন। বিশেষত ‘ভবিষ্যতের বিপদ ও সন্ত্রাসের’ কথায় জনগণ তাদের অনেক অধিকার ছেড়ে দেয়।সবচেয়ে লাভবান হয় এক শ্রেণীর সংবাদমাধ্যম, বিশেষ করে তাদের মালিকেরা। এ জন্যই দেখা যায়, এরা এ ধরনের ভীতির রাজনীতির সহায়ক বিষয়গুলো ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রচার করে। কেউ তার প্রতিবাদ করলে তখন এ সংবাদমাধ্যমগুলো একযোগে তার বিরুদ্ধে প্রচার চালায় এমনভাবে যেন ক্ষমতাসীনেরা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়। এরা দেশ ও সমাজের ঐতিহাসিক অন্যায়ের বিচারের নামে এক অশান্তি-দমন-পীড়নের অবস্থাকে সমর্থন দেয়।এ সবই মুনাফার জন্য।

ঔপন্যাসিক এবং লেখক জন ভি কোফাস উল্লেখ করেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল ফেরিওয়ালাদের ‘ভয় ও উদ্বেগ’ বক্তব্য থেকে আর শেষ হয়েছিল স্নায়ুযুদ্ধ বা কোল্ড ওয়ার এবং অভিজাত যুদ্ধের প্রবক্তাদের বিশাল সম্পদ আহরণের মধ্য দিয়ে।কোফাসের একটি মন্তব্য উল্লেখযোগ্য। “এটা আশ্চর্যের বিষয় এখন সাধারণ মানুষ, মধ্যবিত্ত শ্রেণী ও শ্রমিকেরা এই ‘কোল্ড ওয়ার, ওয়ার অন টেররে’ ব্যবহৃত সব ফন্দিফিকির সহ্য করছে, এমনকি সমর্থন দিচ্ছে। অথচ এগুলো স্পষ্টভাবে তাদের স্বার্থের বিরোধী এবং ক্ষুদ্র শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থ উদ্ধার করে মাত্র।”এর কারণ মগজধোলাই হয়েছে ব্যাপক এবং এ থেকে উদ্ধার পাওয়া শক্ত।এসব লেখক একটি বিষয়ে বারবার অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন যে, অনুন্নত ও তৃতীয় বিশ্বে এই ভীতির সংস্কার ও রাজনীতির ব্যবহার অমার্জিত ও নিষ্ঠুর। উন্নত বিশ্বের স্লোগানগুলো সন্ত্রাস, মৌলবাদ, স্বাধীনতাবিরোধী। এরা বিভিন্নভাবে প্রকাশ্যে নিরপরাধ বিরোধী বা প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। যেহেতু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সমর্থন বা প্ররোচনায় এ কাজগুলো এরা করে থাকে, তাই কিছু দায়সারা বক্তব্য দিয়ে বিশ্বমোড়লেরা এ দিকে চোখ বুজে থাকে।বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক লেখক জ্যাঁ পল সার্ত্রে বলেছেন, ‘যেহেতু অভিজাত শ্রেণী সব সময়ই সমাজের একাংশ থাকবে, তাই কখনো সমতা ও সামাজিক বিচারপূর্ণ কোনো অবাস্তব সমাজ তথা ইউরোপিয়ান সোসাইটি গড়া যাবে না। তাই ভীতির সংস্কৃতি ও বশ্যতার রাজনীতিরও শেষ নেই।তবে আমাদের সবার চিন্তার প্রসার ঘটাতে হবে যাতে করে মানুষ সুস্হ সংস্কৃতি ও মুল্যবোধে বেড়ে উঠে।

বিষয়: বিবিধ

১১২৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

283668
১২ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২১
আহত বাংলা লিখেছেন : ভালো লাগলো

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File