আমরা মুসলমানরা আর কতকাল 'কাপুরুষ' ও 'ভন্ডামির' বেড়াজালে আবদ্ধ থাকবো?

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১১ নভেম্বর, ২০১৪, ০৪:৫০:২৯ বিকাল

বর্তমান বিশ্বে একমাত্র মুসলমানরা নাজুক একটি সময় পার করছে। সমগ্র বিশ্বে মুসলমানরা আজ ভয়ানক এক সঙ্কটের জালে আটকে পড়েছে। কোথাও তাদের আশ্রয় নেওয়ার জায়গা নেই। সবক’টি মুসলিম রাষ্ট্রের উপর একের পর এক বিপদের ঘনঘটা বিস্তার লাভ করেছে। সমগ্র বিশ্বে মুসলমানরাই বেশি অপদস্ততা ও অসহায়ত্বের শিকার।মুসলমান শাসকদের ঘাড়ে এখন ইহুদি খৃষ্টানদের বন্দুক আর তারা রেমোট কন্ট্রোল এর মাধ্যমেই এখন নিয়ন্ত্রন করে থাকে।ভাঁড় মুসলিম শাসকরা এখন জি হুজুর করেই তাদের মসনদ ঠিক রাখতে ব্যাস্ত।প্রজারা মরলো কি বাঁচলো তাদের দেখার দরকার নেই।সেকারনে তারা দলগতভাবে তাদের তাবেদার তৈরি করে মসনদকে পাকাপোক্ত করে রাখে। মুসলমিরা আজ নিজ ঘরে পরবাসি।তাদের নিজেদের কোন নিরাপত্তা নেই অপরদিকে কাফের-মুশরিকরা সারা বিশ্বে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মুসলমানদের ওপর বিভিন্নভাবে ক্ষমতা ও আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে। অথচ কোরআনে কারীমের বিভিন্ন জায়গায় মু'মিনের সাহায্য-সহযোগিতা ও বিজয়ের সুস্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে। যেমন সূরা রুমের ৪৭নং আয়াতে রয়েছে, ‘মুমিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব।’ সূরা হজের ৩৮ নং আয়াতে আছে, ‘আল্লাহ মুমিনদের রক্ষা করেন।’ সূরা আনফালের ১৯নং আয়াতে আছে, ‘আল্লাহ মুমিনদের সঙ্গে আছেন।’ সূরা নিসার ১৪১নং আয়াতে আছে, ‘আল্লাহ কখনোই মুমিনদের বিরুদ্ধে কাফিরদের জন্য কোন পথ রাখবেন না।’ সূরা মুনাফিকুনের ৮নং আয়াতে আছে, ‘শক্তি তো আল্লাহর আর তার রাসূল ও মুমিনদের।’ এসব আয়াত দ্বারা একথা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহতায়ালা মুমিনদের গায়েবিভাবে সাহায্য করবেন। আমরা দেখি, বর্তমান বিশ্বে মুসলমানরা সবচেয়ে বেশি অপদস্ততা লাঞ্ছনার শিকার। মুসলমানদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে কাফের, মুশরিক ও নাস্তিকরা একে একে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো দখল করেছে। তাদের নগ্ন আগ্রাসনের শিকার হয়েছে। আফগানিস্তান আর ইরাক হারিয়েছে তেল সম্পদের মূল্যবান ভান্ডার। এসব দেশের শিক্ষা সংস্কৃতি জিম্মি হয়ে আছে ইহুদি-খ্রিস্টানদের হাতে। ইহুদি-খ্রিস্টানদের ইসলাম বিদ্বেষ এতটা চরমে পৌঁছেছে যে, তারা মহানবী (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে, চলচ্চিত্র নির্মাণ করে রাসূল (সা.)-এর পবিত্র চরিত্রকে কালিমালিপ্ত করার ধৃষ্টতাও দেখাচ্ছে। প্রতিনিয়ত কোন না কোন জনপদ, কোন না কোন মজলুম মুসনলমানের রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে। আজ ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বর হামলা চলছে। এ অত্যাচার আগেও হয়েছে বার বার। অর্ধ শতাব্দীকাল ধরে ইসরাইলের হিংস্র অভিযানের সব ভয়াবহতা সইতে হচ্ছে নিরীহ শিশু, নারী ও সাধারণ মানুষকে। তারা জানেন না, কার কাছে গেলে এর প্রতিকার পাবেন। দেশে দেশে জনগণ এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ জানালেও এতে কর্ণপাত করার যেন কেউ নেই! গাজা উপত্যকায় প্রতিঘণ্টায় গড়ে একজন করে মানুষ ইসরাইলি হামলায় প্রাণ হারালেও শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো নিশ্চুপ। ইসরাইলে হামলায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ২০০৮-০৯ সালে গাজায় ইসরাইলে সামরিক হামলায় ২২দিনে এক হাজার ১০০ ফিলিস্তিন নিহত হয়। ১৯৮৮ সালে ইসরাইল লেবাননে হামলা চালিয়ে ১৭ হাজার মানুষকে হত্যা করে, যাদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু। তারা ওই সময় ব্যবহার করে নিষিদ্ধ সাদা ফসফরাস। এর আগে লেবাননের কানায় জাতিসংঘ শরণার্থী শিবিরে হামলা চালায় ইসরাইল। ওই হামলায় তিন হাজারের বেশি বাড়িঘর ধ্বংস হয়। ২০০৬ সালে লেবাননের কানায় জাতিসংঘ শিবিরে হামলা চালিয়ে ৮০০ আশ্রিতের মধ্যে ১০৬ জনকে হত্যা করা হয়। ২০০২ সালে ফিলিস্তিনের জেনিন ও নাবলুসের শরণার্থী শিবিরে হামলা চালায় ইসরাইল। ঐ হামলায় ৩ হাজারের বেশি বাড়িঘর ধ্বংস হয়। ২০০৬ সালে লেবাননের হিযবুল্লাহর সাথে যুদ্ধে ইসরাইলের হাতে নিহত হয় কয়েক হাজার মানুষ। যার এক তৃতীয়াংশ নারী ও শিশু। এসব মজলুম মানুষের আহাজারি শোনার কেউ নেই। শুধু মুসলমান হওয়ার অপরাধে এই নিরাপরাধ, নিরস্ত্র মুসলমানরা নির্মম-নির্যাতন-নিপীড়ন ও গণহত্যার শিকার হয়েছে। কেন মুসলমানরা মজলুম হচ্ছে? তাহলে কি তারা মুমিন নয়? তারা কি কোরআনে কারীমের কৃত ওয়াদার অন্তর্ভুক্ত নয়? আমরা যদি কোরআনে কারীম গভীরভাবে অধ্যয়ন করি তাহলে এ প্রশ্নের উত্তর সহজভাবে পেয়ে যাব। কোরআনে কারীমে আল্লাহতায়ালা প্রকৃত মু'মিনদের গুণ-বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন সূরা আনফালের ২নং আয়াতে আছে, ‘মুমিন তো তারাই যাদের অন্তর কম্পিত হয় যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয়, আর যাদের সামনে আয়াত পাঠ করা হয় তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা স্বীয় প্রতিপালকের ওপর ভরসা করে। যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে আমি যা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে, তারাই হলো প্রকৃত ঈমানদার।’ সূরা মুমিনের ১নং আযাতে আছে, ‘মুমিনগণ কামিয়াবী হয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাজে বিনম্র।’ সূরা তওবার ৭১নং আয়াতে আছে, ‘ঈমানদার নরনারী একে অপরের বন্ধু, তারা শত কাজের আদেশ করে অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে, নামাজ কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে, তাদের ওপর আল্লাহ কৃপা করবেন।’ সূরা হুজরাতের ১০নং আয়াতে আছে, মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই, অতএব তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। সূরা হুজরাতের ১৫নং আয়াতে আছে, ‘তারাই ঈমানদার যারা আল্লাহর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং তাদের জীবন সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারাই সত্যনিষ্ঠ।’ সূরা নূরের ৫১নং আয়াতে আছে, ঈমানদারদের উক্তি তো এই যে, ‘যখন তাদের মাঝে ফয়সালা করে দেয়ার জন্য আল্লাহ তার রাসূলের দিকে আহ্বান করা হয়, তখন তারা বলে আমরা শুনেছি এবং আদেশ মেনে নিয়েছি, আর তারাই সফলকাম।’

এই আয়াতগুলো সামনে রেখে যদি আমরা চিন্তা করি এবং কোটি কোটি মুসলমানের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখতে পাই, প্রকৃত মুমিনের গুণ-বৈশিষ্ট্য কোরআনে কারীমে উল্লেখ করা হয়েছে, তার কিঞ্চিত পরিমাণ আমাদের মাঝে নেই।আমাদের ঈমান নেই, আমরা নামাজ পড়ি নামাজে আমাদের মনোযোগ নেই। অন্তরে আল্লাহর জিকির নেই। আমাদের সমাজে অন্যায় অসৎ কাজ হচ্ছে তার প্রতিবাদ করছি না। সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ একেবারে ছেড়ে দিয়েছি।আমরা আমাদের আয় রোজগারে হালাল অর্জন করিনা।আমাদের সন্তান বোল ফুটলে পাঠিয়ে দেই ইহুদি খৃষ্টানদের কোলে।তারা লালিত হয় এক ভ্রষ্ঠ মুসলিম রুপে। আমরা কাফের মুশরিকদের দেশে নিজের সম্পদ পাছার করে সেখানে প্রাসাদ তৈরি করে বিলাস করছি।আমরা আমাদের কথায় কোন অংগীকার রাখছি না।আমার ভাই এর সম্পদ আমরা লুন্ঠন করছি।আমরা বেশভূষায় মুসলমান।তছবিহ হাতে হাজি,নামাজে পাবন্দি আবার তার সাথে ব্যাভিচার ও ভন্ডামি।আমরা ভন্ড ও মুসলমান নামের কলংক। সুতরাং, আমরা কোরআনের পরিভাষায় মুমিন কিনা সেটা এখন বড় প্রশ্ন। ঈমান অর্থ হয় কালিমা পাঠ করা এবং শরিয়তের বিধান মেনে চলা, তাহলে আমরা সবাই মুমিন। কিন্তু মুমিন অর্থ যদি হয় কোরআনে বর্ণিত বিশেষ গুণাবলী ও বৈশিষ্টসূহ অর্জন করা তাহলে সে অর্থে আমরা কতটুকু ঈমানদের হতে পেরেছি সেটাই এখন চিন্তার বিষয়। তার পরও আমরা মুসলমান।আমরা অপরাধ করলেও আমাদের রব আমাদের ভুলেন না।তিনি চান আমরা তার কাছে তওবা করি।ফিরে আসি ফিরে আসার মত।আমরা সারা পৃথিবীর মুসলমান গর্জে উঠলে কাফের মুশরিকরা পেশাব পায়খানা করে দৌড়াতে থাকবে।মুসলিম জাতি কোন ভীত জাতি নয়।এ জাতির এক গৌরবজ্জল ইতিহাস রয়েছে।মুসলমান এখন নাম ধারন করে বেঁচে আছে।নামে আব্দুল্লাহ,আব্দুর রহিম,আব্দুল খালেক,আব্দুর রাজ্জাক আর কাজে বিপরীত।মুসলমানকে প্রতিদিন মসজিদে কমই দেখা যায় না।শুক্রবারে সব মোল্লা সেজে আজানের আগে মসজিদে হাজির হয়।এসব মুসলিম সম্পর্কে কবি ইকবাল বলেছিলেন,'হায় মুসলমান!কাটিং সাটিং এ তোমরা খ্র্রিষ্টান,চলন বলনে তোমরা হিন্দু আর তোমাদের দেখে শর্মায় ইহুদি।"

মুসলমানরা ইহুদি-খ্র্রিস্টানদের হাতে মার খাচ্ছে কেন? ইহুদি খ্রিস্টানরা বিজয়ী, আর মুসলমানরা পরাজিত কেন? এ প্রশ্নের উত্তর আরো সহজ। ইহুদি খ্রিস্টানরা সৃষ্টির বিষয়ে আল্লাহ তায়ালার অনুসৃত রীতিনীতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছে এবং সে অনুযায়ী কাজ করছে।সেজন্য প্রচন্ড ঠান্ডার দেশে তারা প্রাচুর্যের অধিকারি। অপরদিকে মুসলমানরা সম্পূর্ণ ভুলে গেছে তাদের ঐতিহ্য। ইহুদি-খ্রিস্টানরা পুরো জাতি বিজয়ের জন্য ঘাম ঝরাচ্ছে।খ্রিস্টান মিশনারিরা মিলিয়ন ডলার খরচ করছে মানুষকে ধর্মান্তরিত করার জন্য। আর মুসলমানরা অলস ঘুমে বিভোর আর নিজের ভাইয়ের সম্পদ লুন্ঠনে ব্যাস্ত। ইহুদি-খ্রিস্টানরা শিক্ষা-দীক্ষায় নিয়োজিত আর মুসলমানরা মুর্খতার গ্লানি বহন করে বেড়াচ্ছে। ইহুদি-খ্রিস্টানরা আগামীকালের প্রস্তুতি গ্রহণ করে রেখেছে সেখানে মুসলমানরা আজকের করণীয় সম্পর্কে উদাসীন।মুসলমানরা দুনিয়ার সামান্য স্বার্থে চাটুকারিতায় ব্যাস্ত থাকে।এই অধম বোকারা মনে করে কেউ বুঝে না।আসলে এরা বড় মূর্খ যারা মুল্য দেয় পরে। জয়-পরাজয় ও উন্নতি অধোগতি ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান কারো প্রতি অবিচার করে না। কোনো জাতির পক্ষপাতিত্বও করে না। এটা ইসলামেরই শিক্ষা। কিন্তু মুসলমানরা কেন জানি এই শিক্ষা গ্রহণ করতে বা বুঝতে নারাজ। ওহুদের যুদ্ধের একটি ভুল চিন্তার খেসারত দিতে হয়েছে সত্তরজন বীর মুজাহিদের জীবনদানের মাধ্যমে। স্বয়ং রাসূল (সা.) নেতৃত্বে তারা যুদ্ধ করেছিল। এর দ্বারা বুঝা যায়, পরাজয়ের পথ অবলম্বন করলে মুসলমান হলেও পরাজয় হবে। আর বিজয়ের পথে হাঁটলে ইহুদি-খ্রিস্টান হলেও বিজয় লাভ করতে পারে। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা মুসলমানরা যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করবে তত তাড়াতাড়ি মুসলমানদের বিজয় আসবে। ওহুদের যুদ্ধে মুসলমানরা পরাজয়ের পক্ষাবলম্বন করেছে বলে তাদের পরাজয় হয়েছে। আল-কোরআন বলছে, ‘এটা তাদের হাতের কামাই’। আল-কোরআনে বলা হয়েছে, ‘কি ব্যাপার, তোমাদের ওপর যখন একটি বিপদ আসল তখন তোমরা বললে কোথা থেকে এলো? অথচ তোমরা দ্বিগুণ বিপদে পড়েছিলে। অতএব বলে দাও, এ বিপদ এসেছে তোমাদের পক্ষ থেকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান।’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত নং ১৬৫) মুসলমানদের সরলতাকে পুঁজি করে ইহুদি-খ্রিস্টান চক্র মুসলমানদের বিরুদ্ধে সর্বগ্রাসী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সুতরাং উদাস-সরলতা নয়, পূর্ণ সর্তক থাকতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

১১৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File