হে তরুন/তরুনী কেমন নেতৃত্তে তোমাদের বেড়ে উঠা উচিত?

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১০ নভেম্বর, ২০১৪, ১২:২৪:১১ দুপুর

আজকাল নেতা(Leadership) শব্দটিকে সহজে ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।নেতার কথা শুনলে অনেকের ঘেন্না ধরে।আসলে নেতা কি এমন জিনিস? কাউকে যদি সত্যিকারের নেতা হতে হয় তাহলে সে মানবে নিজেকে,নিজের বিবেক ও বিচার বুদ্ধিকে ও নিজের ভীতরের আসল মনুষ্যত্বকে।নেতা কোন বিশেষ মানুষ নয়,নেতা হলো অনেক মানুষের সমষ্টি।যে মানুষের মধ্যে অনেক মানুষ আসে সে হলো নেতা।আমরা অনেকে নেতা বলতে বুঝি যে জীবনে সফল।আবার অনেকে মনে করে সাফল্য খুব বড় জিনিস।সাফল্য একটি নিম্ন শ্রেনীর জিনিস কারন এটি একটি বৈষয়িক ব্যাপার।এটি একটি বস্তুগত বিষয় ও একটি দক্ষতা।আমরা সমাজে দেখি একজন অনৈতিক লোকও সফল।একজন চোর ডাকাতও অনেক ক্ষেত্রে সফল।আসলে মানুষের জীবনে স্বার্থকতার প্রয়োজন রয়েছে।আমি আমার পরিবেশ থেকে যা নিয়ে জন্মেছি তার সাথে ভাল কিছু করা, তাকে পরিপূর্ন করা ও সমাপ্ত করা।স্বার্থক জনম মাগো জন্মেছি এই দেশে।আমাদের সবার স্বপ্ন হওয়া উচিত স্বার্থক হওয়া সাফল্য নয়।নেতৃত্তের বড় শক্তি হলো কার্যকর বিরোধীতা করা।যে বোরোধীতা হবে কল্যানের পক্ষে।আজকের যে চীন পূর্ব এশিয়ায় বিরাট শক্তিতে রুপান্তরিত হয়েছে তার মুলে ছিল মাওসেতুং।আমাদের অনেকের মধ্যে হীনমন্যতা কাজ করে জ্গান সংগ্রহের ক্ষেত্রে।মুসলিমদের একটি চরিত্রকে জীবনের সব ক্ষেত্রে মান্য করা বাধ্যতামুলক আর তা হলো নবী মোহাম্মদ সা:কে জীবনাদর্শ হিসেবে নেয়া।কিন্তু অন্য ধর্ম ও বর্নের ভাল মানুষদের ভাল কাজ ও কথা নিতে কোন অসুবিধা থাকার কথা নয়। অনেকে আছে মানবতার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন এবং অনেক ভাল কাজ করছেন সেখান থেকে জ্গান সংগ্রহ করা যায়।মাওসেতুং তার সভাষদে যখন কোন প্রস্তাব তুলতেন তিনি জিজ্গেস করতেন আপনারা কি এই প্রস্তাবে রাজি আছেন? সবাই বলতো হাঁ।কিন্তু একজন বেঁটে ও ছোট মানুষ একটি হাত তুলতো বিরোধিতায়।মাওসেতুং বলতেন দেং এখনো তুমি আমার বিরুদ্ধে? সেই দেং-ই পরবর্তীকালে চিনকে নেতৃত্ত দিয়েছিল।সেই মানুষই নেতৃত্ত দিতে পারে যে বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে।

হযরত মোহাম্মদ সা: যখন দীন প্রচার শুরু করলেন তখন কাবার চত্তরে ৩৬০টি ইলাহ ছিল যাকে মক্কার লোকেরা পূজা করতো।তিনি কি কোন একজন ইলাহাকে মেনে নিয়েছিলেন?তিনি একজনকেও মানেননি।পরবর্তীতে তিনিই এই মক্কাকে জয় করেছিলেন।যা অগ্রহনযোগ্য,যা অসন্তোষজনক,যা ভুল ও মিথ্যা তার বিরুদ্ধে সত্যিকরের নেতারা বিরোধিতা করেন।গৌতম বুদ্ধ যখন আসেন তখন হিন্দুদের মধ্যে জাতিভেদ প্রথা ভয়ংকর রুপ ধারন করেছিল।তিনি সেই জাতিভেদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন।গ্যালিলিও,কোপার্নিকাশ কি সে সময়ে চার্চের অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন না? রবীন্দ্রনাথ কি মাইকেলের মত কবিতা লিখেছিলেন? নজরুল ইসলাম কি রবীন্দ্রনাথের মত কবিতা লিখেছিলেন? জীবনানন্দদাশ কি নজরুল বা রবীন্দ্রনাথের মত কবিতা লিখেছিলেন? আসল নেতা কখনো আর একজনের মত নয়।নেতা হলো একা ও আলাদা।আরব্য উপন্যাসে একটি বিখ্যাত গল্প আছে।এক জেলে সমুদ্রে জাল দিয়ে মাছ ধরতো।সব সময় জালে মাছ উঠে।একদিন হঠাৎ জালে একটি কলসি উঠলো এবং কলশির মুখ ছিল ঢাকা।সে কলশির মুখটি খুললো ও সাথে সাথে ভীতর থেকে এক দৈত্য বের হলো যার পা মাটিতে ও মাথা আকাশে।সে বললো স্বর্গ মর্ত পাতালে আমার মত আর শক্তিশালী কেউ নেই।কথা হলো যদি তার এতই শক্তি থাকে তাহলে ১০০০ বছর এই কলশির ভীতর কেন?সে বললো হযরত সোলাইমান একটি যাদু দিয়ে আমার কলশির মুখ বন্ধ করে দিয়েছিল।আমাদের প্রতিটি মানুষের মধ্যে ঐ রকম শক্তিশালি অন্ত-হীন ক্ষমতা সম্পন্ন ,অমিত শক্তি সম্পন্ন একটি দৈত্য রয়েছে।কিন্তু সে কোথায় আছে? সে আছে আমাদের মস্তিষ্ক নামক এই কলশিতে আটকানো।অন্ধকারের মধ্যে বন্ধ হয়ে আছে।আমাদের ভয় ,আমাদের দ্বিধা দ্বন্দ,আমাদের লোভ লালসা,আমাদের সংকোচ,আমাদের বুদ্ধি বিচার বিবেচনা,আমার টাকা না থাকলে আমি বাঁচবো ত,আমি সবকিছু পাব ত-এই সব দিয়ে আটকানো। কোটি কোটি মানুষ এ অবস্হায় অচেতন হয়ে আছে।কিন্তু কোন কারনে যদি এ ঢাকনাটা খুলে যায় তাহলে তার ভীতর থেকে শক্তিশালী বিষয় বেরিয়ে আসবে।দু'টি কারনে এটা হতে পারে।একটি হচ্ছে-যে কোন দু:খ - বিষাধ থেকে ভাল কিছু বের হয়ে আসে।ডক্টর মুহাম্মদ ইব্রাহীমকে কে না চিনে ডায়াবেটিক হাসপাতালের কারনে।তিনি জীবনের প্রথমে ফরিদপুর হাসপাতালে চাকুরি করতেন।তার সামনে একটি নয় বছরের বাচ্ছা ডায়বেটিসে মারা গেল।তিনি একজন ডাক্তার হিসেবে কিছুই করতে পারলেন না।ছেলেটি মারা যাওয়ার পর তার চোখ দিয়ে ঝর ঝর করে পানি প্রবাহিত হয়ে পড়লো।তিনি তখন ভাবলেন ও প্রতিজ্গা করলেন যদি আমি বেঁচে থাকি আমি আমার জীবনটা দিয়ে দিব যাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ বেঁচে যাবে।সেদিন তিনি নেতা হলেন।এর আগে ছিলেন লক্ষ লক্ষ ডাক্তারের মত।নেতা হতে হলে বেদনা থাকতে হবে , পরের দু:খ কষ্টে ব্যাথিত হতে হবে।নেতা হতে হলে জীবন কর্দমাক্ত হবে না।জীবনে লোভ লালসার উর্ধে থেকে জাতির সেবা করতে হবে।আমরা দানবীর হাজি মোহাম্মদ মহসিনের কথা জানি।তার কাছে তখনকার সময়ে মাত্র দেড় লাখ টাকা ছিল,তিনি তা দান করে দিলেন।সে দেড় লাখ এখন দেড়শ কোটি টাকার সমান হতে পারে।আমরা তাকে কেন স্মরন করি কারন তিনি তার লোভ লালসাকে বিসর্জন দিয়ে মানুষের কল্যানে কাজ করেছেন।তেমনি মির্জাপুরে আরপি সাহা - মেডিকেল কলেজ,ভারতেশ্বরি হোমস,হাসপাতাল,স্কুল কলেজ করে তার অর্জিত সম্পদ মানুষের কল্যানে লাগিয়ে গেছেন।এই জন্য মানুষ তাকে মনে রাখে।পৃথিবীতে কোটি কোটি টাকার মালিক এসেছে তাদের কি মানুষ মনে রেখেছে? প্রকৃত নেতা যে মানুষের কল্যানে কাজ করেছে মানুষ তাকেই স্মরন করে।নেতা কেউ সেদিনই হবে যেদিন মানুষকে দিতে শিখবে।নেতা যতদিন নিবে সে হবে একজন লোভী ,ঠক ও কাপুরুষ।সে নেতা একা আক্রান্ত ও পরিত্যাক্ত।

হাদিস বলেছে মানুষের জীবন একটি পথিকের জীবন।তেমনি একটি জীবন বেচে নিতে হবে মানুষকে।যদি নেতা স্বার্থপরতার উর্ধে উঠে আসতে পারে সে হলো স্বার্থক নেতা।কারো পকেটে যদি একটি টাকাও না থাকে তাহলে সে নিশ্চিন্তে রাস্তার ধারে ফুটপাতে বা গাছের তলায় ঘুমাতে পারে।যদি পকেটে ৫০০টি টাকা আসে তখন আর সেখানে ঘুমাতে পারে না।তখন অন্তত একটি বেড়ার ঘর হলেও সে খোঁজ করে।যখন লাখ টাকার মালিক হয় তখন সে দালানে যাওয়ার চিন্তা করে।যখন কোটি কোটি টাকা হয় তখন সে দুর্গ বানিয়ে স্পেশাল সিকিউরিটির চিন্তা করে।যত ঐশ্বর্য বাড়বে তত সিকিউরিটি বাড়বে ও নিরাপত্তা ধংস হয়ে যাবে।ততই আমরা আক্রান্ত ও রক্তাক্ত হব।আমাদের জীবনের সমস্ত সুখ শান্তি টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।তাইতো তো দেখছি আমরা সমাজে।যত বড় নেতা তত বড় সিকিউরিটি।মৃত্যু ভয় তাকে তাড়িয়ে বেড়ায় কারন সে ভন্ড ও ঠক।সে মানুষের টাকা কুক্ষিগত করে নিজের সিকিউরিটি করেছে।তার মনের শান্তি নেই,নিদ্রা নেই।রাস্তায় অনায়াসে চলতে পারছে না।তার চারধারে সিকিউরিটি কি জানি কখন জীবনটা চলে যায়।অথচ একজন সাধারন নেতা দিব্যি হেঁটে বেড়াচ্ছে।কোন ভয় নেই তার।এ জীবনে যত কম থাকবে আখেরাতেও হিসাব নিকাশটাও সহজ হবে।নেতার মধ্যে যদি অসাধারন আদিম শক্তি না থাকে তাহলে নেতা হওয়া সম্ভব নয়।পাওয়া না পাওয়ার বাইরে যে চলে যেতে পারবে সেই হলো আসল নেতা।ক্রিকেট খেলার সময় যে ব্যাট হাতে নিয়ে দাঁড়ায় তার চার পাশে ১১ জন দাঁড়িয়ে থাকে বিভিন্ন যায়গায় কারন তারা জানে সে ব্যাটস ম্যান কোন দিকে বল মারবে।কিন্তু সে দক্ষ ব্যাটস ম্যান ১১ দিকে মারবে না তার লক্ষ্য হলো ১২ বা ১৩ দিককে অতিক্রম করা ও রান করা।বিংশ শতাব্দির সফল ক্রিকেটার জেরাল্ড সোবার্সের ডকুমেন্টারি দেখলে বুঝা যায় কি অসম্ভব বাউন্ডারি পিটিয়েছেন।এ রকমই হলো নেতা।নেতা অসাধারন অন্য কারো মত নয়।আমাদের তরুনদের হতে হবে এ রকম অসাধারন নেতা।রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন,পাগল দশের বাইরে থাকিয়া যায় আর প্রতিভা(মহৎ পাগল) দশের অধিকারকে একাদশের কোঠায় উত্তীর্ন করে।' শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষন দেখলে অনুমান করা যায় তার মধ্যে নেতার আসল বৈশিষ্ট ফুটে উঠে।আবুল কাশেম ফজলুল হকও ছিলেন ব্যাঘ্রের মত নেতা যা অসাধারন।কোন বেদনা থেকে যখন একজন মানুষ জেগে উঠে তখন সে নেতা আর নিজের স্বার্থে যখন জাগে তখন সে একজন সাধারন মানুষ।মানুষকে ভালবাসা,সমস্ত সৃষ্টিকে ভালবাসা,নিজের অহমিকাকে,লোভলালসাকে পদতলে রাখতে পারলেই প্রকৃত নেতা গড়ে উঠা সম্ভব।আজকের বাংলাদেশের তরুন নেতা নেত্রীদের মধ্যে যে ধস নেমে আসছে তার পরিবর্তন আসা জরুরি।কাউকে না কাউকে শুরু করতে হবে।আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম বহিশক্রুর বিরুদ্ধে এবং সে যুদ্ধ ছিল ক্ষনস্হায়ী।আজকে আমাদের শুরু হয়েছে সত্যিকারের ও দীর্ঘস্হায়ী যুদ্ধ। এ যুদ্ধ আমাদের নিজের বিরুদ্ধে,নিজের অক্ষমতার বিরুদ্ধে,নিজের পাপ ও পচনের বিরুদ্ধে,নিজের হিংসা ও বিদ্বেষের বিরুদ্ধে।এ জাতিকে বাঁচাতে হলে তরুনদের ন্যায় নিষ্ঠার সাথে সঠিক নেতৃত্তে এগিয়ে আসতে হবে আমাদের আগামী স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য।আর দেরি নয় তোমরা জেগে উঠ মেধার তীখ্নতা নিয়ে, পুরনো জরাগ্রস্ত নেতৃত্বকে উৎখাত করে নবজীবনে উদ্ভাষিত কর এই আমাদের কামনা।

বিষয়: বিবিধ

১৬৪২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

282939
১০ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:২১
কর্ণেল কুতাইবা লিখেছেন : ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File