লতিফ সিদ্দিকীর হজ নিয়ে মন্তব্য মুর্তাদ হওয়ার সামিল।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১২:৪৩:১৭ দুপুর
গতকাল( 29 Sep, 2014) রোববার বিকেলে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি হোটেলে নিউইয়র্ক টাঙ্গাইল সমিতির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী হজ, তাবলিগ জামাত, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও সাংবাদিকদের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছেন।পবিত্র হজ প্রসন্গে মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন,আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। তবে তার চেয়েও হজ ও তাবলিগ জামাতের বেশি বিরোধী। এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার (জনশক্তি) নষ্ট হয়। হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গিয়েছে। এদের কোনো কাম নাই। এদের কোনো প্রডাকশন নাই। শুধু রিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে। গড়ে যদি বাংলাদেশ থেকে এক লাখ লোক হজে যায়; প্রত্যেকের পাঁচ লাখ টাকা করে ৫০০ কোটি টাকা খরচ হয়। তাবলিগ জামাত প্রতিবছর ২০ লাখ লোকের জমায়েত করে। নিজেদের তো কোনো কাজ নেই। সারা দেশের গাড়িঘোড়া তারা বন্ধ করে দেয়।’ মাহনবী হযরত মোহাম্মদ সা: সম্পর্কে বিরুপ ও অসত্য মন্তব্য করেন তিনি।মন্ত্রী হজের শুরু প্রসন্গে বলেন,আব্দুল্লাহর পুত্র মোহাম্মদ খুব বুদ্ধিমান ছিল।সে চিন্তা করলো এ জাজিরাতুল আরবের লোকেরা কিভাবে চলবে তারা তো ছিল ডাকাত।তখন একটা ব্যাবস্হা করলো যে আমার অনুসারিরা প্রতিবছর একবার একসাথে মিলিত হবে।এর মধ্য দিয়ে একটা আয় ইনকামের ব্যাবস্হা হবে।
হজ ইসলামের একটি মৌলিক উপাদান যার প্রতি কোন মুসলিম কটাক্ষ বা সমালোচনা বা কোন বিরুপ মন্তব্য করলে আর সে মুসলিম থাকে না।মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী একজন মুসলিম কিনা বাংলাদেশের মুসলমানদের ভেবে দেখতে হবে ও ইসলাম প্রিয় মানুষদের তাকে অবজ্গা করতে হবে।আল্লাহ ও রাসূল সা: কে নিয়ে যারা এ রকম মন্তব্য করে তারা নি:সন্দেহে তাগুত এবং আবদুল লতিফ সিদ্দিকী একজন তাগুতের পিতা যদি তিনি এ কথাগুলো বলে থাকেন।এরা আবুজেহেল,আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই আল সলুল,সালমান রুশদি ও তসলিমা নাসরিনের মত ইসলাম বিরোধীদের দোসর।ইসলামকে আল্লাহই রক্ষা করবেন তবে আমাদের মুসলমানদের এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।যারা ইসলামের বোরোধিতা করে তাদের প্রতি মুসলিম উম্মাহের দায়িত্ব হলো ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানো।মুসলমিদের এ সমস্ত কথা ও কজের জন্য তাদের ঘৃনা করতে হবে আর মুসলিম উম্মাহকে প্রতিবাদ জানাতে হবে।কোন সংঘর্ষের মধ্যে জড়ানো ইসলামের অনুসারিদের কর্তব্য নয়।আমরা মুসলমানরা কোন সন্ত্রাস ও সংঘর্ষে বিশ্বাসী নয়।আল্লাহ আমাদের দুনিয়ায় আল্লাহর আদেশ নিষেধ মান্য করা ও রাসূল সা; এর পথ অনুসরন করতে বলেছেন।আখেরাতে আল্লাহ এদের দেখে নিবেন তবে পুরো মুসলিম উম্মাহকে একসাথে এ সব মুর্তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।আমাদের বুঝতে হবে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী কোন মুসলিমের ঘরে জন্ম গ্রহন করলেও তিনি ইসলামকে লালন করেন নি যা তার কথা ও কাজে বুঝা যায়।তার আর এক ভাই রয়েছেন বংগবীর 'কাদের সিদ্দিকী' যার কথায় কাজে ইসলামের অনুসরন আমরা লক্ষ্য করি।তিনি যখন কোন আর্টিকেল লিখেন,লিখার প্রথমেই আল্লাহর নামে শুরু করেন এবং তার কথায় কাজে আল্লাহ ও রাসূল সা: এর স্তুতি শুনা যায়।সুতরাং তার পরিবারেই এর প্রমান রয়েছে।রাসূল সা:কে আল্লাহ নবী মনোনীত করেছিলেন আর তারা নিজের আপন চাচা কাফের ছিলেন।ইসলামের এই সেনসিটিভ ব্যাপার গুলোকে আমাদের ধৈর্যের সাথে মোকাবিলা করতে হবে।যিনি অপরাধ করবেন তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে যুক্তি প্রমানের মাধ্যমে কিন্তু অভিযুক্ত ছাড়া কোন নীরিহ মানুষের ক্ষতি করা ইসলাম সমর্থন করে না।ধরুন কোন বিধর্মী যদি কোন মুসলিম এলাকায় বোমা ব্লাস্ট করে মানুষ মেরে ফেলে সেক্ষেত্রে সেখানকার মুসলমানদের আইনের আশ্রয় নিতে হবে।অভিযুক্তদের সনাক্ত করার জন্য প্রশানসকে সহযুগিতা করতে হবে।কিন্তু যদি মুসলমানরা পাল্টা আর একটি বোমা সেই বিধর্মীদের উপর ব্লাস্ট করে নীরিহ মানুষদের হত্মা করে সেটাকে ইসলাম সমর্থন করে না।কারন মুসলমানদের আল্লাহ ও তার রাসূল সা: ও আখেরাতের বিচারের উপর নির্ভরশীল হতে হবে।
লাতিফ সিদ্দিকীকে সাহসী বললেন তসলিমা নাসরিন 29 Sep, 2014 তারিখে। আলোচিত-সমালোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন তার ফেসবুক ওয়ালে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে লতিফ সিদ্দিকীকে ব্রাভো বলেছেন।নির্বাসিত এই লেখিকা মন্ত্রী সম্পর্কে আরো লিখেন, এতদিনে বাংলাদেশের কোনো মন্ত্রীর মুখে সত্যভাষণ শুনলাম।আরো মন্ত্রী যেন শেখেন সত্য কথা বলা। এতকাল তো মন্ত্রিকুলের মুখে মিথ্যেই শুনেছি, মিথ্যে প্রতিশ্রুতি শুনেছি, ধর্মের মিথ্যে স্তুতি শুনেছি। এবার সত্য কিছু কথা শুনে প্রাণ জুড়োলো ।ব্রাভো লতিফ সিদ্দিকী!
এই সমস্ত মুর্তাদ ইসলাম বিরোধি অথচ ৯০% মুসলমানদের নেতৃত্ব দিচ্ছে।বাংলাদেশের মুসলমানদের সততা ,নিষ্ঠা ঈমান ও ইসলামিক কার্যক্রম নিয়ে যারা খেলায় মেতে উঠেছে তাদের আল্লাহর উপর সপর্দ করার সাথে সাথে প্রতিটি ধর্মপ্রান মুসলমান এদের বর্জন করে তার প্রতিবাদ জানাতে হবে।আমাদের ইসলামকে নিয়ে ভাবতে হবে আলকুরআন ও সূন্নাহের আলোকে।আমাদের এ সব জবাব দিতে দৃড়তার সাথে বিভক্ত হয়ে নয় এক ইসালামি উম্মাহের অনুসরনে।আমাদের বুঝতে হবে ইসলামের শক্রুরা মুসলমানদের ভিতর থেকে এ সব মুর্তাদদের তৈরি করছে যাদের দ্বারা ইসলামিক ভূখন্ডকে খন্ড বিখন্ড করা যায়।সূরা হুজরাতের ৬ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' ওহে যারা ঈমান এনেছ! যদি কোন সত্যত্যাগী কোন খবর নিয়ে তোমাদের কাছে আসে তখন তোমরা যাচাই করে দেখবে,পাছে তোমরা অজান্তে কোন লোকদলকে আঘাত কর বস আর পরক্ষনে তোমরা দু:খ কর তোমরা যা করেছ তা জন্য।' আজকের মুসলমানদের মধ্যে ইসলামের সঠিক দাওয়াত দিতে আমরা ব্যার্থ হচ্ছি।আমাদের দাওয়াতের কাজকে বেগবর্ধিত করতে হবে।বিশেষ করে ইসলামের মুল বুনিয়াদ ঈমান,নামাজ ,যাকাত,রোজা ও হজকে মানুষের মন মগজে ঢুকিয়ে দেয়ার কাজ করতে হবে।আমাদের শিক্ষা ও কারিকুলাম থেকে ইসলামকে বিসর্জন দেয়া হচ্ছে।আমাদের উলামাদের কাজ দেশের প্রতিটি কোনে মানুষদের ইসলামের মৌলিক শিক্ষা গুলো দেয়ার কাজ হাতে নেয়া।যারা হজ সম্পর্কে কটাক্ষ করছেন যেনে নিন এ হজ কার জন্য ও কেন করতে হবে।
হজ্জ আরবি শব্দ অর্থ হলো উদ্দেশ্য করা।শরিয়তের পরিভাষায় হজ্জ বলা হয় বায়তুল্লাহর উদ্দেশ্যে বিশেষ সময়ে বিশেষ কিছু কাজের জন্য উপস্হিত হওয়া।এই উদ্দেশ্যের সাথে মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধা, ক্কাবায় তাওয়াফ,সাফা মারওয়ায় সাঈ,মিনায় অবস্হান,আরাফাতে অবস্হান,মুজদালিফায় অবস্হান।মহান আল্লাহ সূরা বাক্কারার ১৯৭ আয়াতে বলেন,হজ হয় কয়েকটি সুবিখ্যাত মাসে,কাজেই যে কেউ এই সময় হজ করার সংকল্প করে তার জন্য এ সবের মধ্যে স্ত্রী গমন বা দুষ্টামি থাকবেনা বা হজের মধ্যে তর্কাতর্কি চলবেনা।আর ভাল যা কিছু তোমরা কর আল্লাহ তা জানেন।আর পাথেয় সংগ্রহ কর,নি:সন্দেহে শ্রেষ্ঠ পাথেয় হচ্ছে ধর্মপরায়নতা।অতএব আমাকে ভয়শ্রদ্ধা কর হে! জ্গানীরা।'হজের মাসেই হজের নিয়্যাত করতে হবে।শাওয়াল ,জিলক্কাদ ও জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ এই দুই মাস ১০ দিনের মধ্যেই হজের নিয়্যাত করতে হবে।এর আগে বা পরে করলে হজ কবুল হবে না।"লাব্বাইক হজ্জান " বলে নিয়্যাত করতে হবে।আর ওমরাহ যে কোন সময় করা যেতে পারে।আমাদের দেশে মাযহাবকেন্দ্রিক কিতাবে সূন্নত বিরোধী কথা লিখা আছে।বছরে কয়েকদিন নাকি ওমরাহ করা যাবে না।এ ব্যাপারে তাদের কোন দলিল নেই।অনেক হাজি সাহেবানরা দেশীয় এই সব বই পুস্তক খরিদ করেন।আমি অনুরোধ করবো যারা হজ্জে আসবেন তারা সূরা বাক্কারার ১৮৯ - ২০৩ এবং সূরা হজ্জ ও তার সাথে ছহি বোখারি হজের চাপ্টার পড়ে নিবেন।হজ ইসলামের ৫ম রোকন।রাসূল সা: বলেছেন ইসলামের খুঁটি হলো ৫টি।সাক্ষ্যপ্রদান করা আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মাবুদ নেই এবং হযরত মোহাম্মদ সা: আল্লাহর রাসূল।নামাজ কায়েম করা,যাকাত আদায় করা,রমজানের রোজা রাখা ও বায়তুল্লাহর হজ করা।এখানে মুসলিম ভাই বোনদের একটি কথা স্পষ্ট করে স্মরন রাখা দরকার যে আল্লাহ ও রাসূল সা: এর সাক্ষ্য দেয়ার পর স্বর্ত হলো দিনে রাতে ৫ ওয়াক্ত নামাজ কায়েম করা।যে নামাজ কায়েম করলো না সে কুফরের মধ্যে অবস্হান করলো এবং তার ভাল কোন কাজ আর হিসাবে আসবে না।অনেকে নামাজ কায়েম করে না কিন্তু যাকাত দেয় ,রোজা রাখে ও হজ করে সেই ভাইদের বলছি আখেরাতে কোন লাভ হবে না।রোজ ক্কেয়ামতে প্রথম হিসাব হবে নামাজের।যদি নামাজে উত্তীর্ন হয় তবে বাকি সব সৎ আমল এর সাথে যোগ হবে।আল্লাহ কারো সৎ কর্মকে নষ্ট করেন না বেনামাজিদের সৎ কর্মের ফল আল্লাহ দুনিয়াতে দিয়ে দিবেন।সেজন্য দেখবেন বেনামাজি ,কাফের মুশরিক তারা অনেক ঐশ্বর্যের মালিক,তারা দুনিয়াতে জনকল্যানমুলক কিছু ভাল কাজও করে এগুলো তাদের এ দুনিয়ার প্রতিদান।কিন্তু কোন ঈমানদারকে ভাবলে চলবে না যে তারা আল্লাহর খাটি বান্দাহ।আল্লাহ পাক শ্রেষ্ঠ বিচারক তিনি তার কোন বান্দাহকে ঠকান না।কিন্তু আখেরাতে তারা তাদের বদ আমলের কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সূরা আল ইমরানের ৯৬/৯৭ আয়াতে আল্লাহ বলেন,নি:সন্দেহে মানবজাতির জন্য প্রথম যে উপাসনালয় স্হাপন করা হয়েছিল তা হলো বাক্কাতে-অশেষ কল্যানময় আর সব মানব গোষ্ঠীর জন্য পথপ্রদর্শক।এতে আছে স্পষ্ট নিদর্শনাবলী-মাক্কামে ইব্রাহিম আর যে কেউ এখানে প্রবেশ করবে সে হচ্ছে নিরাপদ।আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এই গৃহে হজ করা মানব গোষ্ঠীর জন্য আবশ্যক যারই সেখানকার পাথেয় অর্জনের ক্ষমতা আছে।আর যে অবিশ্বাস পোষন করে তাহলে নি:সন্দেহে আল্লাহ সমস্ত সৃষ্ট জগতের থেকে স্বয়ংসম্পুর্ন।' ছাবিল সম্পর্কে ইবনে মাজায় একটি হাদিস রয়েছে আর তা হলো,রাস্তার খরচ এবং সওয়ারি।' আজকালকার জীবনে যে যেখানে আছে সেখান থেকে বায়তুল্লাহ এসে হজ্জের কাজ সমাপ্ত করে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত যেটুকু খরচ হয় সে সম্বল থাকলে সেই ব্যাক্তিকে হজ্জ করতে হবে।আর এর সাথে আর একটি জিনিস হলো পরিবারের ভরন পোষন দিয়ে যেতে হবে।হজ্জের গুরুত্ব দিতে গিয়ে ওমর রা: তিনি তার খেলাফতকালে ঘোষনা করলেন,আমার ইচ্ছা হচ্ছে বিভিন্ন শহর ও গ্রামে আমার কিছু প্রতিনিধি ছেড়ে দিতে চাই এবং তারা গিয়ে পর্যবেক্ষন করে দেখবে কার হজ্জ করার শক্তি রয়েছে অথচ তারা হজ্জ করেনি।কারন এদের উপর আমি জিজিয়া (টেক্ক্স) লাগিয়ে দিতে চাই।যারা হজ্জের সামর্থ থেকেও হজ্জ করলো না তারা মুসলিম নয়,মুসলিম নয়।' আলী রা: বলেন যে ব্যাক্তির শক্তি সামর্থ রয়েছে অথচ হজ্জ করলো না তাহলে সে ইহুদি হয়ে মরুক বা খৃষ্টান হয়ে মরুক।সৌদি আরবে এসে এমন অসংখ্য লোক রয়েছে যাদের উপর হজ্জ ফরয হয়েছে অথচ তারা হজ্জ করেনি এমনকি ১০/২০ বছর হয়েছে তাও করেনি।দুর্ভাগ্য তাদের আল্লাহই ভাল জানেন কি পরিনতি ভোগ করবে আখেরাতে।আবার বাংলাভাষাভাষি অনেককে হজ্জের কথা জিজ্গেস করলে বলে ওমরাহ হজ্জ করেছি।হজ্জ ও ওমরাহ দুটি আলাদা ইবাদত।হজ্জ ফরয হওয়ার পর তারাতাড়ি করতে হবে।আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ রা: থেকে একটি হাদিস বর্নিত হয়েছে নবী করিম সা বলেছেন,তোমরা হজ্জের জন্য তাড়াতাড়ি কর।কারন তোমাদের কেউ জানে না যে আগামিতে তার কি হবে।' এই আগামি বলতে মানুষের মৃত্যু হয়ে যেতে পারে,আর্থিক ক্ষমতা না থাকতে পারে,অসুস্হ হতে পারে ইত্যাদি।মুসলিম শরিফের হাদিসে নবী সা: বলেন,হে মানব সকল! মহান আল্লাহ তোমাদের উপর হজ্জ ফরয করেছেন সুতরাং হজ্জ কর।'নবী সা: দশম হিজরিতে হজ্জ করেছেন।যে বছর হজ্জ ফরয হয় সে বছর মুশরিকরা সমবেত হয়েছিল মক্কার আনাছে কানাছে।আল্লাহ পাক ছাইছিলেন যে রাসূল সা: যখন হজ্জ করবেন তখন কোন মুশরিক থাকবে না বায়তুল্লাহর আশে পাশে।সূরা তওবায় আল্লাহ আয়াত নাজিল করলেন।যার সাথে শির্ক আছে সে নাপাক।সুতরাং এসব নাপাকি অন্তর হজ্জের মাঠে থাকবেনা।যাদের অন্তরে নাপাকি আছে তাদের ছেয়ে বাহ্যিক নাপাকি অনেক ভাল।কারন যার কাপড়ে নাপাকি লেগে থাকে আর ইবাদত করে সে দুর্ভাগা কিন্তু সে কাফের নয়।কিন্তু যে ব্যাক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যকে সেজদা করলো,অন্যকে ফরিয়াদ করলো,অন্যের কাছে দোয়া করলো,অন্যের জন্য খাশি মোরগ জবাই করলো,আল্লাহ ছাড়া অন্যকে বললো ইয়া গাউছুল আজম মদদ,হে গরিব নেওয়াজ আমাকে সন্তান দান কর সে ব্যাক্তি বড় মুশরেক।আল্লাহ এদের জন্য জান্নাত হারাম করেছেন।নবী সা: আবু বকর রা:কে হজ্জের নেতৃত্ব দিলেন এবং আরবদের নিয়ম ছিল যে কোন ঘোষনা যদি কোন দায়িত্বশীলের নিকট থেকে হয় তাহলে তার কোন নিকট আত্মীয়কে এই ঘোষনা পড়ার জন্য যেতে হবে।নবী সা: সূরা তওবার আয়াতগুলো ঘোষনা করে শুনিয়ে দেয়ার জন্য বাছাই করলেন আলি ইবনে আবুতালিবকে আর সূরা তওবার আয়াত গুলো দিয়ে বললেন হজ্জের মৌসুমে মক্কায় ,মিনায়,আরাফাতে,মুজদালিফায়,যেখানে যেখানে জনসমাবেশ সেখানে গিয়ে শুনিয়ে দিবে মুশরিক থেকে আল্লাহ ও তার রাসূল সম্পর্ক ছেদের ঘোষনা করেছেন।এই বছরের পর কোন মুশরিক যেন বায়তুল্লাহ হারামে প্রবেশ না করে।আর কোন ব্যাক্তি যেন উলংগ হয়ে বায়তুল্লাহ তওয়াফ না করে। আগের দিনে এসব মুশরিকরা উলংগ হয়ে তওয়াফ করতো।আর এসব উলংগ পির রয়েছে ভারত বাংলাদেশে। নবম হিজরিতে এ ঘোষনা দিলেন ও দশম হিজরিতে নবী সা: হজ্জ করেন।হজ্জ জীবনে একবার ফরয।বাকি জীবনে হজ্জ করলে তা নফল হিসেবে পরিগনিত হবে আর ফরয হজ্জ না করলে জিজ্গাসিত হবে।
নবী সা: বলেছেন,এক ওমরাহ থেকে আর এক ওমরাহের মাঝে যে ছোট গুনাহগুলো হবে তা আল্লাহ মাপ করে দিবেন কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হতে হবে।এখানে হাজি সাহেবদের জন্য একটি বিষয় জরুরি তা হলো এদিক সেদিক বেশি না তাকানো।কারন অনেক মা বোন আছেন যারা তাদের চেহারা খুলে রাখেন,বেপর্দায় থাকেন এবং তাদের শরিয়ত ও পর্দা সম্পর্কে তেমন ধারনা নেই সম্ভব হলে তাদের শরিয়তের ব্যাপারগুলো জানিয়ে দেয়া উচিত।ইহরামের অবস্হায় সব ঢেকে রাখা জরুরি যাতে অন্যের দৃষ্টি আকর্ষন না হয়।অনেক হাজি সাহেব অজ্গতার কারনে হুদুদে বসে ঝগড়া বিবাদ বা পাহেশা কথা ও বলেন যা গুনাহের কাজ।বড় গুনাহগুলো ও মাপ হবে তবে তওবা করতে হবে।আর মকবুল(আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য) হজ্জের প্রতিদান হলো জান্নাত।একজন মু'মিনের প্রত্যকেটি সৎ আমল করার অর্থ হলো জান্নাত লাভের আকাংখ্যা।হজ্জ করার পরে একজন হাজ্জি বুঝতে পারবেন তার পরিবর্তন হয়েছে কিনা।আগে যে পাপের সাথে জড়িত ছিলেন সেগুলো জীবন থেকে আপসারিত হচ্ছে কিনা।না আগের অবস্হানেই আছে।এই ব্যারোমিটারে হাজি সাহেবকে প্রতিনিয়ত পরিমাপ করতে হবে।অনেক হাজি সাহেবদের এখনো দেখছি ৫ ওয়াক্ত নামাজের ইত্তেবা করেন না অথচ হজ্জ করেছেন ৫/৬ বার।রাত টায় যদি নিজের কাজের দরকার হয় জাগতে পারে কিন্তু ফযরের নামাজের সময় জাগতে পারে না।আবার অনেকে ঘরেই নামাজ পড়েন,গীবত করেন,পরের জমির সীমানা অতিক্রম করেন,অফিসে ঘুষ দুর্নীতিতে জড়িত থাকেন।ওমরাহ করে এ্যায়ারপোর্টে লাউন্জে বসে আছেন আর সিগারেট ফুকছেন বা টিকেট কাউন্টারে গিয়ে লাইন ভংগ করছেন।এ কথাগুলো স্মরন করিয়ে দেয়ার অর্থ হলো-এত কষ্ট করে হজ্জ বা ওমরাহ করতে এসে তা থেকে কোন কল্যান নিতে তারা সমর্থ হলো না।এ রকম হজ্জ বা ওমরাহ করে কোন লাভ নেই।আর কেউ যদি হজ্জ বা ওমরাহ করে এসে একেবারে জীবনকে পরিবর্তন করে ফেললো অর্থাৎ আগে যে ফাসেকি কাজগুলো করতো তা ছেড়ে দিল।হজ্জের নেয়ামত গুলোর কথা মানুষকে প্রচার করলো,হারাম হালাল বেচে চললো তাহলে বুঝতে হবে তার পরিবর্তন হয়েছে।রাসূল সা: বলেছেন,যে ব্যাক্তি হজ্জে গিয়ে কোন যৌন সম্পর্কীয় গুনাহ করলোনা ,কোন ফাসেকি করলোনা,ঝগড়া করলোনা সেই ব্যাক্তি তার গুনাহ থেকে এমনভাবে মুক্ত হয়ে আসলো যেদিন তার মা তাকে ভূমিষ্ট করেছে।' হজ্জের কিছু আদব রয়েছে।পরিবার পরিজনকে কিছু অছিয়ত করা। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো,হারাম হালালের ব্যপারগুলো,সামাজিক বৈধ মেলামেশা ও সর্বোপরি আল্লাহ ভীরুতার আছিয়ত।যদি কারো কিছু দেয়ার থাকে বা কোন দায় দেনা থাকে তাহলে পরিশোধ করে দেয়া বা ফিরে না আসলে নিজের সম্পদ থেকে তার ব্যাবস্হা করা।আর যে কাজ গুলো সমাধান হয় নি তা লিখে যাওয়া।কার কাছে কত পাওনা বা দেনা ইত্যাদি সাক্ষীর মাধ্যমে জানিয়ে রাখা।হালাল টাকা পয়সা নিয়ে হজ্জে যেতে হবে।কোন অবস্হায় যেন জীবনের মধ্যে হারাম পয়সা না আসে কারন হারাম খেয়ে পরে কোন ইবাদত করলে তা আল্লাহ কবুল করবেন না।প্রবাসী যুবক এমনকি বয়স্ক অনেকে যারা হজ্জে যায় তাদের হজ্জের মাঠে দেখে মনে হয় ৫/৬দিনে পাগলের মত হয়ে যায়।এখানে ওখানে ঘুরতে থাকে,দলবেঁধে বসে কথা বলতে থাকে,টেলিফোন করতে থাকে,আরাফাতে পাহাড়ে ঘুরতে থাকে বা দুপুরে যে সময় দোয়া কবুল হওয়ার সময় ঘুমের ঘোরে থাকে।কারন হলো হজ্জের আগের দিন গুলো তাদের ছিল মেসে আড্ডা।টিভি ,ভিডিওতে অশ্লিল ছবি দেখা,তাস খেলা,থাইলেন্ডি জুয়া খেলা ইত্যাদি।শরিয়তের বিধি বিধান জানা নেই সেজন্য ওখানে গিয়ে আর মন বসে না।আর হজ্জ থেকে এসেই আগের অবস্হানে জীবনকে চালিত করে।এরাই তাদের জীবন বিপন্ন।
হজের প্রকার : হজ তিন প্রকার, যথা—
এক. হজে ইফরাদ : অর্থাত্ হজের সফর শুরু করার সময় মিকাত থেকে যদি শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বাঁধে এবং হজের সঙ্গে ওমরাহ আদায় না করে, তাহলে এ প্রকার হজকে ‘হজে ইফরাদ’ বলা হয়। এ প্রকার হজ পালনকারীকে ‘মুফরিদ’ বলে।
দুই. হজে কিরান : যদি একইসঙ্গে হজ এবং ওমরাহর নিয়ত করে উভয়টিই পালন করে এবং হজ ও ওমরাহর জন্য একই ইহরাম বাঁধে, তাহলে এ ধরনের হজকে ‘হজে কিরান’ বলা হয়। এ প্রকার হজ পালনকারীকে ‘কারিন’ বলে।
তিন. হজে তামাত্তু : অর্থাত্ হজের সঙ্গে ওমরাহকে এভাবে মেলানো যে ‘মিকাত’ থেকে শুধু ওমরাহর ইহরাম বাঁধা। এই ইহরামে মক্কায় পৌঁছে ওমরাহ পালনের পর ইহরাম ভেঙে ৮ জিলহজ সেখান থেকেই হজের ইহরাম বেঁধে হজ পালন করাকে ‘হজে তামাত্তু’ বলে। এ প্রকারের হজ পালনকারীকে ‘মুতামাত্তি’ বলে।হজ্জে তামাত্তু হলো উত্তম হজ্জ কারন জাহেলি যুগে তারা তামাত্তু হজ্জ করতো না কারন তারা মনে করতো হজ্জের মৌসুমে যাব আবার হালাল হয়ে সত্রীসম্ভোগ করবো এগুলো হলো নোংরা কাজ।আজো অনেক লোক শরিয়ত সম্পর্কে না জানার কারনে এরকম প্রশ্ন করে থাকে।হজ্জ শেষ হয়ে গেছে তার পরও বলে এখন কি আমি সত্রীর সাথে থাকতে পারবো।জাহেলি যুগে এ অবস্হাকে তারা চরম অন্যায় কাজ মনে করতো।কিন্তু উলন্গ হয়ে তাওয়াফ করাকে অন্যায় মনে করতো না।
৫টি মিক্কাত রয়েছে।পূর্বদিক থেকে যারা আসবে তারা ইয়ালামলাম থেকে ইহরাম বাঁধবে।আমাদের ভারত পাকিস্তানের লোকরা পূর্বদিক থেকে আসে সেজন্য ইয়ালামলাম থেকে ইহরাম বাঁধবে। এখনতো সব হাজি সাহেবরা বিমনেই আসেন সেজন্য বিমান থেকেই আগে ইহরামের ঘোষনা দিয়ে দিবে।যারা তামাত্তুর নিয়াতে এসেছে তারা প্রথমে ওমরাহ করে হালাল হয়ে যাবে । ওমরার কাজ তিনটি।ইহরাম বাঁধা,বায়তুল্লাহর তওয়াফ করা এবং মাথা মুন্ডানো বা পুরো মাথার চুল ছাঁটা।
ইহরাম বাঁধার নিয়ম : হজ ও ওমরাহর আমলগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম আমল হলো ইহরাম বাঁধা। ইহরাম বাঁধার নিয়ম হলো—হজ অথবা ওমরাহর নিয়তে সেলাইকৃত কাপড় খুলে সেলাইবিহীন দুটি চাদর পরিধান করে ‘তালবিয়া’ পাঠ করা। শরিয়তের পরিভাষায় একেই ‘ইহরাম’ বলা হয়। ইহরাম বাঁধার উত্তম পদ্ধতি হলো যখন ইহরাম বাঁধার ইচ্ছা করবেন, তখন প্রথমে গোসল অথবা অজু করবে, নখ কাটবে, বগল ও নাভির নিচের চুল পরিষ্কার করবেন এবং মাথা ও দাড়ি চিরুনি করে সব বিষয়ে পরিচ্ছন্নতা অর্জন করবেন। ইহরামের জন্য দুটি নতুন অথবা ধোলাই করা পরিষ্কার চাদর হওয়া সুন্নত। একটি চাদর দিয়ে লুঙ্গি বানাবেন; অন্যটি দিয়ে চাদর বানাবেন।
মাসনুন তালবিয়ার উচ্চারণ : লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক লাব্বাইকা লাশারিকালাকা লাব্বাইক ইন্নাল হামদা ওয়াননিয়ামাতা লাকা ওয়াল মূলক লাশারিকালাক।
ওমরাহ আদায়ের পদ্ধতি : মক্কা মোকাররমায় আসার পর ওমরাহ আদায় করতে হবে। সুতরাং মসজিদে হারামে প্রবেশ করার পর তাহিয়াতুল মসজিদের দু’রাকয়াত নফল নামাজ পড়বেন না। কারণ এ মসজিদের ‘তাহিয়াহ’ হলো তাওয়াফ। যদি কোনো কারণে তাওয়াফ করা সম্ভব না হয় এবং নামাজের মাকরুহ সময়ও না হয়, তাহলে তাওয়াফের পরিবর্তে তাহিয়াতুল মসজিদের দু’রাকয়াত নফল নামাজ পড়ে নেবেন।
তাওয়াফ : অতঃপর তাওয়াফ করার উদ্দেশ্যে হাজরে আসওয়াতের দিকে এগুতে হবে এবং সেখানে পৌঁছে ইহরামের পরিহিত চাদরকে ডান বগলের নিচ দিয়ে বের করে চাদরের উভয় পাশকে সামনে-পিছে করে বাম কাঁধে ছেড়ে দেবেন এবং ডান কাঁধ খোলা রাখবেন। শরিয়তের পরিভাষায় এ কাজকে ‘ইজতিবা’ বলে। অতঃপর তাওয়াফের নিয়ত করবেন এবং হাজরে আসওয়াদের সামনে এসে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে হাতের তালুদ্বয়কে হাজরে আসওয়াদের দিকে করে দোয়া পাঠ করতে হবে।হাজরে আসওয়াদে চুমু দিতে পারলে চুমু দিবেন আর দূরে হলে তা করবেন না কারন যারা দূরে থেকে চুমু দেয় তা বিদাআত।তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন হাজরে আসওয়াতে খুশবু লাগানো না হয়। আর ইসতিলাম করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন অন্যের বা নিজের কোনো কষ্ট না হয়। ইসতিলাম করতে গিয়ে যদি নিজের বা অন্যের কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয়, তাহলে ইসতিলাম করবে না; বরং ইসতিলামের ইশারা করবে। অর্থাত্ উভয় হাতকে এভাবে উঠাবে যে, উভয় হাতের পিঠ স্বীয় চেহারার দিকে থাকবে এবং উভয় হাতের তালু হাজরে আসওয়াদের দিকে এমনভাবে রাখবে যেন মনে হয় যে, উভয় হাত হাজরে আসওয়াদের ওপরই রাখা হয়েছে। অতঃপর তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে ডানদিকে ফিরে তাওয়াফ শুরু করবে। তাওয়াফকালীন ছোট ছোট পায়ে বীরের মতো হেলে-দুলে দ্রুত হাঁটবে। তবে দৌড়াদৌড়ি-লাফালাফি থেকে বিরত থাকবে। এ ধরনের হাঁটাকে ‘রমল’ বলে। এই তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে হাত ওঠানো ছাড়া মনের চাহিদামত যে কোনো দোয়া বা জিকির পাঠ করা সুন্নত। উল্লেখ্য, তাওয়াফের মধ্যে নির্দিষ্ট কোনো দোয়া পাঠ করা আবশ্যক নয়। বরং মনের চাহিদামত যে কোনো দোয়া বা জিকির পাঠ করলেই হবে।
বায়তুল্লাহর তৃতীয় কিনারাকে ‘রুকনে ইয়ামানি’ বলে। রুকনে ইয়ামানির ওপর উভয় হাত রেখে অতিক্রম করে যাবেন। অতঃপর হাজরে আসওয়াদের সামনে এসে হাজরে আসওয়াতকে চুমু খাবেন অথবা ইশারা করবেন। এভাবে তাওয়াফের একটি চক্কর সম্পন্ন করবে। এরপর ‘রমলে’র সঙ্গে আরও দু’চক্কর সম্পন্ন করার পর পরবর্তী চারটি চক্করে স্বাভাবিক গতিতে তাওয়াফ করবে এবং প্রতি চক্করের পর হাজরে আসওয়াতকে চুম্বন করবেন অথবা চুম্বন করার ইশারা করবেন। যখন তাওয়াফ শেষ হয়ে যাবে, তখন ‘ইজতিবা’ অর্থাত্ তাওয়াফের জন্য পরিহিত চাদরের আদল পরিবর্তন করে আগের ন্যায় চাদরকে উভয় পাশে রেখে দেবে।
মুলতাজিম : তাওয়াফের সাত চক্কর সম্পন্ন করে মুলতাজিমে আসবেন (হাজরে আসওয়াদ ও খানায়ে কাবার দরজার মধ্যবর্তী দেয়ালকে মুলতাজিম বলে) মুলতাজিমে আসার পর মুলতাজিম স্পর্শ করে দোয়া করবেন।
তাওয়াফের ওয়াজিব নামাজ : মুলতাজিমে দোয়া শেষ করে মাকামে ইবরাহিমে এসে এভাবে দাঁড়াবে যেন নিজের দাঁড়ানোর অবস্থান ও খানায়ে কাবার মধ্যবর্তী স্থানে মাকামে ইবরাহিম এসে যায়। অতঃপর যদি নামাজের মাকরুহ ওয়াক্ত না হয়, তাহলে তাওয়াফের দু’রাকয়াত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। আর মাকরুহ ওয়াক্ত হলে তা অতিবাহিত হওয়ার পর আদায় করে নেবেন। যদি নামাজিদের স্থান সঙ্কুলান না হয়, তাহলে হারাম শরিফের যেখানেই স্থান পাওয়া যায়, সেখানেই ওই নামাজ আদায় করে নেবেন। অতঃপর জমজম কূপের কাছে গিয়ে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে তিন শ্বাসে পেট ভরে জমজমের পানি পান করবে এবং বেশি বেশি দোয়া পাঠ করবেন।
সায়ী করার পদ্ধতি : জমজমের পানি পান করার পর সায়ির উদ্দেশ্যে সাফা পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হবেন। সাফা পাহাড়ে আরোহণ করার পর কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে হাত না উঠিয়ে সায়ী করার নিয়ত করবে। অতঃপর দোয়া করার জন্য উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে বেশি করে দোয়া করবে। সাফা থেকে নেমে ধীরে-সুস্থে মারওয়া পাহাড়ের দিকে রওনা করবেন এবং জিকির ও দোয়াতে মশগুল থাকবেন। সবুজ পিলার পর্যন্ত পৌঁছার পর মধ্যম পর্যায়ের দৌড় শুরু করবেন এবং শেষ দূরত্বে যাওয়ার পর দৌড় বন্ধ করবেন। অতঃপর মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছে বায়তুল্লাহর দিকে মুখ করে সামান্য ডানদিকে সরে গিয়ে এমন জায়গায় দাঁড়াবেন যাতে অন্যের আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা না হয় এবং দোয়া পড়তে থাকবেন। এভাবে সায়ীর এক চক্কর সম্পন্ন হওয়ার পর একইভাবে আরও ছয় চক্কর সম্পন্ন করবে। মারওয়া থেকে সাফা পর্যন্ত গিয়ে দু’চক্কর সম্পন্ন হয়ে যাবে এবং সাফা থেকে মারওয়া পর্যন্ত তিন চক্কর সম্পন্ন হয়ে যাবে। সর্বশেষ সপ্তম চক্কর মারওয়া পাহাড়ে গিয়ে শেষ হবে। সায়ী শেষ হওয়ার পর যদি মাকরুহ ওয়াক্ত না হয়, তাহলে ‘মাতাফের’ কিনারায় অথবা হাজরে আসওয়াদের সামনে বা মসজিদে হারামের যেখানেই সম্ভব হয়, সেখানেই দু’রাকয়াত নফল নামাজ পড়ে নেবেন। সায়ী-পরবর্তী এই দু’রাকয়াত নফল নামাজ পড়া মুস্তাহাব।
মাথার চুল মুণ্ডানো বা ছাঁটা : সায়ী সম্পন্ন হওয়ার পর নিজে বা অন্যকে দিয়ে মাথার চুল মুণ্ডাবেন অথবা মাসজিদের অনতিদূরে চুল কাটার দোকানে গিয়ে চুল কাটাবেন বা মাথা মুন্ডাবে। চুল যদি লম্বা হয়, তাহলে চুল ছোট করে ছেঁটে ফেলবে। তবে মাথা মুণ্ডানোই উত্তম। মাথার চুল মুণ্ডানো বা কাটার পর ইহরাম ছেড়ে হালাল হয়ে যাবেন। এভাবে ওমরাহ পালন সম্পন্ন হবে।
৮ তারিখে হজ্জের উদ্দেশ্যে যে যেখানে থাকবে সেখান থেকে ইহরাম বাঁধবে।কেউ মক্কা থাকলে হোটেল থেকে,কেউ মিনা থাকলে সেখান থেকে গোসল করে ইহরামের কাপড় পরে ইহরাম বাঁধবে ও নিয়্যাত করবে "লাব্বাইকা হাজ্জান' বলে আর ওমরার নিয়্যাত "লাব্বাইকা ওমরাতান" বলে।তার পর তালবিয়া " লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক লাব্বাইকা লাশারিকালাকা লাব্বাইক ইন্নাল হামদা ওয়াননিয়ামাতা লাকা ওয়াল মূলক লাশারিকালাক।" পড়তে থাকতে হবে।যারা হজ্জে কিরান করবে তারা মিকাত থেকে হজ্জ ও ওমরার নিয়্যাত করবে এভাবে " লাব্বাইকা ওমরাতান ওয়া হাজ্জান" মিকাতে গোসল,সুগন্ধি লাগানো মোস্তাহাব।তবে খেয়াল রাখতে হবে সুগন্ধি যেন কাপড়ে না লাগে।মা আয়শা রা: রাসূল সা:কে গোসল করার পর সুগন্ধি লাগিয়ে দিয়েছেন।আর নিয়্যাত করতে হবে সওয়ারিতে যখন ছাড়ে এ সময়।নবী সা: যখন যুলহুলাইফায় সওয়ারিতে ছাপলেন এবং চলতে শুরু করলো তখন তিনি নিয়্যাত করেছিলেন।এটিই হলো উত্তম কারন ছহি হাদিসে এসেছে।কিরানকে কিরান কেন বলা হয় কারন হলো ওমরাহ ও হজ্জকে একসাথে মিশিয়ে দেয়া হয় এজন্য।তামাত্তিকে তামাত্তু বলা হয় এইজন্য হজ্জের আগে ওমরাহ করে হালাল হয়ে যা এর আগে নিষিদ্ধ ছিল সেগুলো ভোগ করার হয় এজন্য। ইফরাদ আর কিরানে পার্থক্য হলো কিরানে হজ্জ ও ওমরার একসাথে নিয়্যাত করা হয় আর ইফরাদে শুধু হজ্জের নিয়্যাত করা হয়।আর একটি পার্থক্য হলো ইফরাদে কোরবানি ওয়াজিব নয় কিন্তু কিরানে কোরবানি করতে হবে।কুরবানি ওয়াজিব কেন কারন হজ্জের মৌসুমে ওমরাহ ও হজ্জ করা হয় এজন্য।এখানে মনে রাখতে হবে কিরান ও ইফরাদে একটি সাঈ যথেষ্ঠ যা অনেকে জানে না।মিকাত থেকে নিয়্যাত করে এসে বায়তুল্লাহর তওয়াফ করতে হবে।সাফা মারোয়ার সাঈ এসময় করে নিলে এই সাঈ-ই যথেষ্ঠ পরে আর করতে হবে না।আর যদি এ সময় সাঈ না করা হয় তাহলে তোয়াফে ইফাদার পরে সাঈ করতে হবে।কিরানে ও ইফরাদে একটি সাঈ-ই যথেষ্ঠ অনেকেই জানে না ও ভুলটি করে থাকে।অনেকে ভাবে আমি একসাথে ওমরাহ ও হজ্জ একসাথে করলাম সেজন্য আমাকে দুটি সাঈ করতে হবে।তামাত্তুতে ওমরাহ ও হজ্জ আলাদা বলে দুটো সাঈ আলদা করতে হয়।ওমরাহ এর সাথে একটি আর হজ্জের তওয়াফে ইফাদার পর একটি।আর একটি বিষয় হলো যে কোন মসজিদে সূন্নত হলো মসজিদের ঢুকে 'তাহিয়্যাতুল মসজিদ' দুই রাকাত নামাজ পড়তে হয় কিন্তু বায়তুল্লায় ঢুকে সূন্নত হলো তওয়াফ করা এবং এর পরে মাকামে ইব্রাহিমে দুই রাকাত নামাজ পড়া।যারা দূর থেকে আসবে তাদের জন্য তামাত্তু উত্তম।কারন অনেকে একমাস পূর্বেই আসেন সেজন্য প্রথমে ওমরাহের নিয়্যাতে আসলে ওমরাহ করে হালাল হয়ে যাবে।এতে দীর্ঘ সময় তাদের কষ্ট করতে হয় না।কিন্তু কিরান ইফরাদ কারিকে ইহরামের অবস্হায় থেকে যেতে হবে।৮তারিখে সবার জন্যই সমান নিয়ম কিন্তু তামাত্তুকারিকে নতুন করে গোসল ও কাপড় পরে যেখানে থাকবে সেখান থেকে হজ্জের নিয়্যাত করে মিনায় চলে যেতে হবে।আর কিরান ও ইফরাদ কারিতো নিয়্যাতের অবস্হায়ই আছে তারাও মিনায় চলে যাবে।হজ্জের মুল কাজ এখন শুরু হলো।৮ তারিখ জোহর ,আছর ,মাগরিব , ইশা ও ফযর এই ৫ ওয়াক্ত নামাজ মিনাতে পড়তে হবে এবং সেখানে রাত্রীযাপন করতে হবে।চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজকে কচর করে দু'রাকাত পড়তে হবে।
দ্বীতিয় দিন ৯ ই জিলহজ্জ।মিনায় ফযর পড়ে সূর্য উদিত হলে আরাফার দিকে রওয়ানা করতে হবে। ফজরের নামাজ মিনায় আদায় করে তাকবিরে তাশরিক এবং তালবিয়া পাঠ করে আরাফার দিকে ধীরে-সুস্থে যাত্রা শুরু করবে। রাসূল সা: বলেছেন,হজ্জ হলো আরাফা।জোহরের আগে আগে পৌঁছে যেতে হবে। রাস্তায় জিকির, ইস্তিগফার, দুরুদ শরিফ ও দোয়া পাঠ করবে এবং অধিক পরিমাণে তালবিয়া পাঠ করবে। আরাফার ময়দানে (উকুফে আরাফাহ) অবস্থানের সময় হলো ‘যাওয়াল’ অর্থাত্ সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত। এজন্য যাওয়ালের পর থেকেই অবস্থান শুরু করবে। বিনয় ও নম্রতার সঙ্গে উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করবে।এখানে জোহর ও আছরের নামাজ আলাদাভাবে এক আজান ও দুই তাকবিরে পড়ে নিয়ে ঘুরা ফিরা না করে গুনাহ মাপের জন্য রোনাজারির মাধ্যমে তওবা ইস্তিগফার করবে এবং নিজের সব গোনাহ মাফের জন্য অন্তর থেকে দোয়া করবে।বাংলাদেশ থেকে মাযহাবপন্থি কিছু লোক আছে তারা বলে মক্কায় এসে ১৫ থাকার পর মুকিম হয়ে গেছে সেজন্য চার রাকাতই পড়বে।রাসূল সা: এর সময় ১২৪,০০০ সাহাবি হজ্জ করেছেন তারা কসর করলেন আর এরা রাসূল সা: এর নাফরমানি করছে।এরা স্পষ্ট বিদায়াতি। এভাবে সূর্য অস্ত যাওয়ার আগ পর্যন্ত খুশুখুজুর সঙ্গে জিকির ও দোয়ার মধ্যে মশগুল থাকবে।নবী সা: বলেছেন আল্লাহ পাক এই দিনে আরাফাবাসিদের অতি নিকটে এবং ফেরস্তাদের মাঝে গৌরব প্রকাশ করেন, দেখ আমার বান্দাদের কি একাকার হয়ে আমার ইবাদতে মশগুল হয়ে আছে তোমরা সাক্ষি থাক আমি তাদের মাপ করে দিলাম।এই সময়টা ঘুরা ফেরা না করে দোয়ায় কাজে লাগাতে হবে।আজকালকার মুসলমানদের কিছু মনে হয় ওখানে পিকনিক করতে যাচ্ছে।কেউ খাবার খুজছে,কেউ আড্ডা দিচ্ছে,কেউ জাবাল পাহাড়ে যাচ্ছে,কেউ বা দিল এক ঘুম যাতে সন্ধা হয়ে গেল।এখানে সন্ধা পর্যন্ত ইবাদতে মশগুল থাকতে হবে।জীবনের সমস্ত গুনাহের জন্য তওবা করতে হবে।আরবি দোয়া মুখস্ত থাকলে ও বুঝলে ভাল সেভাবে দোয়া করতে হবে।তানাহলে নিজের ভাষায় অনুনয় বিনয় করে কৃত গুনাহের জন্য মাপ চাইতে হবে।অনেকে বলে দোয়া করতে গিয়ে চোখে পানি আসে না।কোন জিনিস যদি না বুঝে করা হয় তা তেমন কল্যানকর হয় না।নিজের ভাষায় বুঝে দোয়া করলে নিশ্চয়ই আচর হবে ও অন্তর কাঁদবে।মাগরেবের সময় হয়ে গেলে মুজদালিফার দিকে বেরিয়ে যেতে হবে।
আরাফার ময়দানে সূর্য অস্ত যাওয়ার পর সেখানে অথবা রাস্তায় মাগরিব ও ইশার নামাজ না পড়ে মুজদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও ইশার নামাজ একসঙ্গে আদায় করবে।
পথে অধিক পরিমাণে দুরুদ শরিফ, আল্লাহর জিকির ও তালবিয়া পাঠ করতে থাকবে। মুজদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও ইশা দু’ওয়াক্তের নামাজ ইশার ওয়াক্তে একইসঙ্গে আদায় করবে। উভয় নামাজের জন্য এক আজান এবং এক ইকামত বলবে। নামাজ থেকে ফারেগ হওয়ার পর রাত্রি যাপন করাই এখানকার ইবাদত।কেউ যদি ঝিকির আজকার করতে চায় করতে পারে। জামারার পাথর অনেকে মুজদালিফা থেকে সংগ্রহ করে থাকে।এ রকম না করে মিনার পথ থেকে সংগ্রহ করাই উত্তম। যখন সুবহে সাদিক হয়ে যাবে, তখন অন্ধকারের মধ্যেই ফজরের সুন্নত নামাজ পড়ে ফজরের ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করবে। সুবহে সাদিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুজদালিফায় অবস্থান শুরু হয়ে যায়। মুজদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। উকুফে মুজদালিফার সময় হলো সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত। অতএব ফজরের নামাজ আদায়ের পর থেকে জিকির ও দোয়ায় মশগুল থাকবে।রাসূল সা: এখানে বেশি বেশি দোয়া করেছেন। সূর্যোদয়ের পূর্বক্ষণে মুজদালিফা থেকে মিনায় যাত্রা শুরু করবে।তবে মহিলা শিশু এবং দুর্বল থাকলে এর আগে বের হওয়া যাবে এবং নবী সা: অনুমতি দিয়েছিলেন। দেরি করে মিনার দিকে যাত্রা করা সুন্নতের খেলাফ।মুজদালিফা থেকে মিনায় ফেরার পথে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় মন-প্রাণ দিয়ে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ ও একাগ্র হবে। এভাবে পথ চলে মিনায় পৌঁছবে।
হজের তৃতীয় দিন ১০ জিলহজ এবং এ দিনে চারটি কাজ। মিনায় পৌঁছার পর সর্বপ্রথম ‘জামরায়ে আকাবায়’ কঙ্কর নিক্ষেপ করবে। কঙ্কর নিক্ষেপের পদ্ধতি হলো—ডান হাতের বৃদ্ধ ও শাহাদাত আঙুল দিয়ে একটি কঙ্কর ধরে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করবে। এখানে আর কোন বিদাআতি কাজ করা যাবে না।অনেকে শয়তানকে গালি দেয়,জুতো-লাঠি নিক্ষেপ করে এসব করা যাবে না।
কোরবানি : জামরাতুল আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপের পর কোরবানি করবে।তবে এখন আগেই বেংকে কোরবানির টাকা জমা দিলে এ কাজটি আদায় হয়ে যায়। জিলহজের ১০ তারিখেই কোরবানি করা উত্তম; তবে ১০ থেকে ১২ জিলহজের সূর্যাস্ত পর্যন্ত রাত বা দিনের যে কোনো সময় কোরবানি করা যাবে।
হলক ও কসর (মাথা মুণ্ডানো ও চুল কাটা) : কোরবানি থেকে ফারেগ হওয়ার পর পুরুষ হাজীরা তাদের মাথা মুণ্ডাবে কিংবা মাথার চুল ছোট করে ছেঁটে ফেলবে। মাথা মুণ্ডানোকে ‘হলক’ এবং চুল ছোট করে কাটাকে ‘কসর’ বলে।রমি, কোরবানি এবং মাথার চুল মুণ্ডানো বা ছাঁটার পর তাওয়াফে জিয়ারত করবে। তাওয়াফে জিয়ারতের পর সায়ী করবে; অর্থাত্ সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে সাতবার দৌড়াবে।হলক বা কসর করার পর ইহরামের পূর্ববর্তী কানুনগুলো পালন শেষ হয়ে যাবে, অর্থাত্ প্রাথমিক হালাল হয়ে যাবে। তবে ‘তাওয়াফে জিয়ারত’ করা পর্যন্ত স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা হালাল হবে না।
স্মরণ রাখতে হবে যে, তাওয়াফে জিয়ারত হজের রুকন বা ফরজ। কোনো অবস্থাতেই তাওয়াফে জিয়ারত ছাড়া যাবে না এবং তাওয়াফে জিয়ারতের পরিবর্তে এর বদলা করাও যাবে না; বরং শেষ জীবন পর্যন্ত তাওয়াফে জিয়ারত ফরজ হিসেবেই থেকে যাবে। যতক্ষণ পর্যন্ত তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা হারাম থেকে যাবে।
সুতরাং যে কোনো অবস্থায় তাওয়াফে জিয়ারত সম্পন্ন করেই দেশে ফিরতে হবে। এ ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। কোনো অবস্থাতেই যেন তাওয়াফে জিয়ারত ছুটে না যায়।
হজের চতুর্থ দিন ১১ জিলহজ : ১১ জিলহজ জাওয়ালের পর তিন জামরাতেই সাতটি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করবে। অর্থাত্ প্রথমে জামরায়ে উলাতে সাতটি কঙ্কর, অতঃপর জামরায়ে উস্তায় সাতটি কঙ্কর এবং সর্বশেষ জামরায়ে আকাবায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করবে।
হজের পঞ্চম দিন ১২ জিলহজ : ১২ জিলহজের দিন বিশেষ কাজ হলো জাওয়ালের পর তিন জামরাতে ১১ তারিখের ন্যায় সাতটি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করা। এদিন রমি করার পর ইচ্ছা হলে মিনায় থাকবে বা মক্কায় ফিরেও আসতে পারবে। যদি মক্কায় ফিরে আসার ইচ্ছা করে, তাহলে সূর্য অস্ত যাওয়ার আগেই মিনার সীমানা থেকে বের হয়ে যাবে।আর যদি বিলম্ব হয়ে যায় তাহলে ১৩ তারিখে আগের ন্যায় ২১ টি পাথর মারতে হবে।নবী সা: ১৩ তারিখ পর্যন্ত থেকেছেন এবং উত্তম হজ্জ করেছেন। এভাবেই পবিত্র হজ সম্পন্ন হবে।
মিনা থেকে ফেরার পর যতদিন মক্কায় অবস্থান করবে, ততদিনের এই অবস্থানকে গনিমত ও মূল্যবান মনে করতে হবে এবং যতটুকু সম্ভব তাওয়াফ, নামাজ, রোজা, দান-খয়রাত এবং জিকির ও তিলাওয়াতে নিজেকে মশগুল রাখবে। এছাড়া অন্যান্য নেক কাজ ও আমল বেশি বেশি করে পালন করতে থাকবে।
হজ থেকে প্রত্যাবর্তন এবং তাওয়াফে বিদা : হজ সম্পন্ন হওয়ার পর যখন মক্কা থেকে নিজ দেশে ফেরার ইচ্ছা করবেন, তখন বিদায়ী তাওয়াফ করতে হবে এবং এটা ওয়াজিব। এভাবেই ইসলামের একটি অন্যতম রুকন পবিত্র হজের দীর্ঘ সফর ও আমলের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটবে। অধিকাংশ হাজ্জি সাহেবানরা দেশে গিয়ে আবার আগের অবস্হায় জীবন যাপন করেন।বিদায় হজ্জের ১২ টি পয়েন্ট বুঝার চেষ্টা করেন না।দেশে গিয়ে মানুষকে হজ্জের এই নিয়ামত সম্পর্কে জানানো তাদের দায়িত্ব।মুসলিমরা যদি এই বারটি পয়েন্টকে জীবন সংগি করতো তাহলে দুনিয়া সুন্দর হয়ে যেতো।আল্লাহ আমাদের এ বিষয়গুলো বুঝার তাওফিক দান করুন ও মহান হজ্জকে কবুল করুন।আমিন-
হাজি সাহেবদের কিছু ভুলভ্রান্তি যা হজকে নষ্ট করে অথচ হাজি সাহেবগন অনুধাবন করতে পারেন না।
যে ব্যক্তির এই পরিমাণ ধন-সম্পদ আছে যে, সে হজের সফর (পথখরচ) বহন করতে সক্ষম এবং তার অনুপস্থিতিকালীন তার পরিবারবর্গের প্রয়োজন মেটানোর মতো খরচও রেখে যেতে সক্ষম, এমন ব্যক্তির ওপর হজ করা ফরজ। অথবা এমন ব্যক্তি যে হজের মৌসুমে অর্থাৎ শাওয়াল মাস শুরু হওয়া থেকে সৌদি আরবে অবস্থানরত ছিল বা জিলহজ মাস পর্যস্ত সৌদি আরবে অবস্থান করতে থাকে এবং তার ওপর যদি কোনো বিধিনিষেধ, ওজর ও অসুবিধা না থাকে, তাহলে তারও হজ পালন করা ফরজ।সূরা বাক্কারার ১৯৭ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'হজ হয় কয়েকটি সুবিখ্যাত মাসে,কাজেই যে কেউ এই সময় হজ করার সংকল্প করে তার জন্য এ সবের মধ্যে স্ত্রী গমন বা দুষ্টামি থাকবেনা বা হজের মধ্যে তর্কাতর্কি চলবেনা।আর ভাল যা কিছু তোমরা কর আল্লাহ তা জানেন।আর পাথেয় সংগ্রহ কর,নি:সন্দেহে শ্রেষ্ঠ পাথেয় হচ্ছে ধর্মপরায়নতা।অতএব আমাকে ভয়শ্রদ্ধা কর হে! জ্গানীরা।'হজের মাসেই হজের নিয়্যাত করতে হবে।শাওয়াল ,জিলক্কাদ ও জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ এই দুই মাস ১০ দিনের মধ্যেই হজের নিয়্যাত করতে হবে।এর আগে বা পরে করলে হজ কবুল হবে না।হজ প্রত্যকে মু'মিন মুসলমানের জন্য জীবনে একবার ফরয যার নেসাব পরিমান অর্থ থাকে।নবী সা: জীবনের শেষে একবারই হজ্জ করেছেন এবং হজের বিধিবিধান সাহাবাদের শিখিয়েছেন এবং উম্মতের জন্য ক্কেয়ামত পর্যন্ত জারি রেখে গেছেন।তিনি সাহাবাদের বলেছেন,আমার কাছ থেকে হজের বিধিবিধান শিখে নাও।সুতরাং প্রত্যেক মুসলিম নরনারি যারা হজে যাবেন,যাদের উপর হজ ফরয হয়েছে,হজে যাওয়ার আগে হজ সম্পর্কে বিস্তারিত জ্গান হাছিল করা ফরয।হজে যা করনীয় এবং বর্জনীয় তাও জানা ফরয।আমাদের দোয়া করতে হবে যারা হজ করেছেন তাদের যেন মকবুল হাজি হিসেবে কবুল করেন আর যারা এখনো যেতে পারেন নি আল্লাহ যেন তার ঘরে যাওয়ার তাওফিক দান করেন।হজের অনেকগুলো দিক রয়েছে তার মধ্যে একটি দিক হলো হজের ভুলক্রুটি যা না জানলে একজন হাজি হজ করবেন ঠিক কিন্তু কোন ফল পাবেন না বা নেকির দিক থেকে কম হয়ে যাবে।হজে গিয়ে যেমন ভুলমুক্ত হয়ে হজ করতে হবে তেমনি ভুলক্রুটিকেও চিহ্নিত করতে হবে যাতে করে ছহি হজ করা যায়।হজের যদি রোকন ছুটে যায় হজ হবে না তেমনি যদি ওয়াজিব ছুটে যায় তাহলে হজ অসম্পুর্ন হবে এবং তার জন্য দম(পশু জবাই) দিতে হবে।হজে সূন্নত ছুটে গেলে নেকি কমতে থাকে।হজে হাজি গেলেন কিন্তু হারাম মুক্ত হলেন না তাহলে সে হজ মকবুল হবে না।হজের ভুলক্রুটি ব্যাপক তবে দুটি বিষয় যা অনেক হাজি সাহেবগন করে থাকেন তা পরিষ্কার জানা থাকতে হবে।একরকম ভুল হলো-বিদাআতি কাজ আর্থাৎ হজের মাঠে বিদাআতের অনুসরনে হজের কাজ সম্পন্ন করা।বিদাআত হলো গোম্রাহি আর পরিনাম হলো জাহান্নাম। হজের আর এক ধরনের ভুল হলো-তা বিদাআত নয় কিন্তু সেগুলো গুনাহের কাজ।হজের যে নিয়ম কানুন রয়েছে তার বিপরীত কাজ।মুসলিমদের ভুল হয় দুই কারনে।বিদাআত ঐ ধরনের ভুল যেগুলোকে মানুষ ভুল মনে করে করেনা,নেকি মনে করে করে।তারা হজে গিয়ে এ কাজগুলো জেনে শুনে করছে ও নেকি মনে করে করছে।এগুলোর অনেক উদাহরন রয়েছে, যেমন-ক্বাবা ঘরের যেখানে সেখানে চুমু দেয়া।তারা একে নেকি মনে করেই করে কিন্তু চিন্তা করে না রাসূল সা: কোথায় চুমু দিয়েছেন।এটা গুনাহের কাজ ও হজের ভুলক্রুটি ও বিদাআত।কারন হাজি সাহেব একে নেকি মনে করে করছে।জামারাতে গিয়ে কন্কর মারতে হবে,তা না করে জুতো সেন্ডেল বা লাঠি মারা।জাহেল হাজির মাথায় বিদাআতি আক্কিদা ঢুকে আছে যে শয়তানকে মারছে আর ছোট কন্কর মেরে লাভ কি? এগুলোকে তারা ধর্ম মনে করে নেকির উদ্দেশ্যে করছে কিন্তু হজের ভুলক্রুটি। আর একধরনের ভুল আছে যা নেকির কাজ মনে করে করে না কিন্তু অজ্গতার কারনে করছে বা অন্ধ অনুকরনে করছে,সামনে যারা আছে তাদের দেখে দেখে করছে।ধরুন একজন মূর্খ লোক হজে গিয়েছে সামনে দেখলো কতেক হাজি লম্বা দাঁড়ি,লেবাছ এবং মনে করলো আমি তো বেশি কিছু জানিনা।নিশ্চই হুজুর বা কোন বুজুর্গ মানুষ।তার এটা জানার প্রয়োজন নেই এই হুজুরের মধ্যে ইলম আছে বা নেই অমনি সে যা করলো তা-ই অনুসরন করলো।আজকাল মুসলিম সমাজে এই রীতি তৈরি হয়েছে যে, মাদ্রাসায় যারা পড়ে তাদেরই দাঁড়ি রাখতে হবে বা তাদের কাছেই ইলম রয়েছে, অন্য কারো দরকার নেই।অথচ দীন পালন করা ও ইলম অর্জন করা প্রত্যেকের জন ফরয।লোকজনকে দেখলো আরাফার মাঠ থেকে মাগরিবের আগেই বের হয়ে পড়লো আর মূর্খ লোকরাও তাদের পিছু ছুটলো।এটা নেকি মনে করে করলো না,অজ্গতার কারনে অন্যের অনুসরন করলো। এ রকম অনেক ভুল রয়েছে যা জানা অবশ্য প্রয়োজন।নবী সা: আমাদের জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে উত্তম আদর্শ।সূরা আহযাবের ২১ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' তোমাদের জন্য নিশ্চই আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম দৃষ্টান্ত তার জন্য যে আল্লাহকে ও আখেরাতের দিনকে কামনা করে আর আল্লাহকে বেশি করে স্মরন করে।' একজন মু'মিন মুসলিম সব সময় আশা পোষন করে আখেরাতে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের।পক্ষান্তরে কাফের মুশরিক ,পির ও কবরপূজারিরা আশা করে তাদের তাদের পিরদের কবর ও অন্যান্য উপাস্যদের কাছে।যারা মু'মিন তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর জান্নাত আর কাফের মুশরিক,কবরপূজারি ও বিদাআতিদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম। সুতরাং হজের বিধিবিধান নিতে হবে একমাত্র নবী সা: থেকে।রাসূল সা: যা করেছেন তা করতে হবে আর যা ছেড়েছেন তা বাদ দিতে হবে।নবী সা: বিশেষ করে ১১/১২ তারিখ রাত মিনায় যাপন করেছেন আর কোন হাজি যদি রাত মক্কায় কাটিয়ে আসে তাহলে ঘাটতি করা হলো।ঘাটতি করা যেমন গুনাহের কাজ তেমনি বাড়তি করাও গুনাহের কাজ।বাড়তি করলে বিদাআতি কাজ হয় আর ঘাটতি করলে গুনাহ ও ফাসেকি কাজ হয়। এই দুই রকমের ভুল থেকে বাঁচার জন্য হাজি সাহেবদের সতর্ক থাকতে হবে।সূরা আল-ইমরানের ৩১ আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন,'তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস তবে তোমরা আমার (নবী সা এর অনুসরন কর।তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন আর তোমাদের গুনাহ মাপ করবেন।' সামনে বাড়া যেমন হারাম তেমনি অনেক পিছনে থাকাও ও হারাম।নবী সা: ঈমামের অনুসরন করতে বলেছেন কিন্তু অনেক মুসলমানকে দেখা যায় রুকু সেজদা করতে অনেক বিলম্ব করে।ঈমাম দেখা গেল সেজদা থেকে উঠে গেল আর অনুসরনকারি দীর্ঘ পরে সেজদা থেকে উঠলো বা ঈমাম সালাম ফিরালো অনুসরনকারি দীর্ঘ পরে সালাম ফিরালো।এগুলো পিছনে থাকা।তাই ঈমামের যেমন সামনে বাড়া যাবে না তেমনি অতি পিছনেও থাকা যাবেনা।
হাজি সাহেবরা প্রথম যে ভুল করেন তা হলো- যখন বাড়ি থেকে বিদায় হন তখন আত্মীয়স্বজন তাক্কবির দিতে দিতে বাস ষ্টেশন এমনকি এ্যায়ারপোর্ট পর্যন্ত বিদায় জানান।আবার অনেকে পুরো এলাকা জুড়ে খবর করে আসার আগে খাওয়ার ব্যাবস্হা করেন যেন হাজি সাহেবকে সবাই চিনতে পারে।এই ত্বরিকা হলো বিদাআতি ত্বরিকা কারন উদ্দেশ্য হলো হজের উদ্দেশ্যে নেকি অর্জন করা।আবার ফিরে যাওয়ার সময়ও একই অবস্হা।বিভিন্ন দেশে আবার জিকির আজকারেরও ব্যাবস্হা রয়েছে।মহিলারা অনেকে যখন হজে বের হয় তখন মাহরাম ছাড়া বের হয়।মহিলাদের জন্য এটা অতিরিক্ত।স্বামি বা এমন ব্যাক্তি যার সাথে স্হায়ীভাবে বিবাহ হারাম।এখন যা করা হয় তা হলো একটা সাময়িক সম্পর্ক করে দেয়,ধর্ম ভাই বা বাপ বা বেটা বলে যাতে করে সফর করতে পারে,যা ইসলামে হারাম।অনেকে এরকম ধর্ম বেটি করে পরে বিয়েও করে ফেলেছে।সুতরাং এগুলো শয়তানি কাজ।অন্তরের বিদাআত,কথার বিদাআত,আমলের বিদাআত,আক্কিদার বিদাআত দেখতে পাওয়া যায়।আর একটি আছে বাচনিক বিদাআত।হজ , ওমরা ,নামাজ ইত্যাদি ক্ষেত্রে নিয়াত উচ্চারন করা।এগুলো সবই বিদাআত।নিয়্যাত হচ্ছে অন্তরের কাজ।হাজি গন যখম মিকাতে আসার আগে গোছল করলো,কাপড় পরলো,সুগন্ধি লাগালো তারপর "লাব্বাইক ওমরাতান ওয়া হাজ্জান" শুধু ওমরাহ হলে লাব্বাইক ওমরাতান বললো তখন নিয়াত হয়ে গেল। এটা নিয়াত পড়া নয়।এখানে অনেক বিদাআতি মোল্লারা মানুষকে ধোকা দেয়।নবী সা: লাব্বাইক শিখিয়েছেন 'নাওয়াইতু' শিখান নি।তালবিয়া পড়ার ক্ষেত্রেও যখন দলবেধে উচ্চ স্বরে পড়ে তখন অনেকে পড়ে আর যখন একা থাকে তখন আর পড়ে না।আবার অনেক মূর্খতো আছে যাদের তালবিয়া মুখস্ত নাই অথচ হজে এসেছে।মাসনুন তালবিয়ার উচ্চারন হলো : লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক লাব্বাইকা লাশারিকালাকা লাব্বাইক ইন্নাল হামদা ওয়াননিয়ামাতা লাকা ওয়াল মূলক লাশারিকালাকা।এইজন্য সম্মিলিত দোয়া বিদাআত,সম্মিলিত জিকির বিদাআত,সম্মিলিত মোনাজাত বিদাআত।রবের কাছে গোপনে দোয়া করা ,নিজের আরজি পেশ করাটাই উত্তম। হজরে আসোয়াদ এর কাছে গিয়ে অনেকে রফে ইয়াদাইনের মত হাত তোলে,অনেকে দূর থেকে হাতে চুম্বন দেয়।এগুলো বিদাআত বরং যদি কাছে গিয়ে চুম্বন দেয়া যায় চুম্বন দিতে হবে কাউকে কষ্ট দিয়ে নয়।যদি মুখ দিয়ে চুম্বন দেয়া না যায় তাহলে হাত লাগিয়ে চুম্বন দিতে হবে।আর তাও যদি না হয় তাহলে হাত উঠিয়ে বিসমিল্লাহে আল্লাহু আকবর ও পরে আল্লাহ হু আকবর বলবে কিন্তু চুম্বন দিবে না।আমাদের দেশে যে বইগুলো লিখেছে তাতে লিখা আছে হাত উঠিয়ে চুম্বন দিবে।হাদিছে এর কোন প্রমান নেই।হজের বই হলেই কিনা যাবে না,তা দলিল সম্মত হতে হবে আর এজন্য হাজিদের হক্কানি আলেমদের স্মরনাপন্য হওয়া উচিত।সৌদি আরবে বিভিন্ন যায়গায় মন্ত্রনায়গুলো থেকে কাউন্টার দিয়ে ফ্রি যে বই দেয়া হয় সেগুলো কোরআন ও হাদিছ সম্বলিত।হজরে আসোয়াদে চুম্বন দেয়ার জন্য ভীড় করা একটি গুনাহের কাজ।এটা হলো সূন্নত আর মানুষকে কষ্ট দেয়া হারাম।এই সূন্নতের বিকল্প হলো ইশারা করে চলে যাওয়া।কাবা ঘরের সাত চক্কর দেয়ার জন্য বিদাআতি বইগুলোতে যে প্রতি চক্করের জন্য দোয়া লিখা হয়েছে তা স্পষ্ট বিদাআত এবং কোন হাদিসে এর প্রমান নেই।কাবার দরজার পাশে এসে অনেকে একটি দোয়া পড়ে তা বিদাআত।আর দল বেধে পুরুষের সাথে মহিলারা যে উচ্চ স্বরে দোয়া পড়ে তাও বিদাআত এবং হারাম কাজ।কাবা শরীফে চারটি কর্নার আছে যাকে আরবীতে রোকন বলা হয়।দুটি কর্নার সপ্ষ্ট দেখা যায় আর দুটি হাতিমের দেয়াল দিয়ে ঘেরা।এই রোকন গুলোর নাম অনেকেই জানে না।হজরে আসোয়াদে আসার আগে যে কর্নারটি রয়েছে তা হলো রোকনে ইয়ামেনি এবং তা স্পর্শ করা সূন্নত।আর এর পরের কর্নারটিতে রয়েছে হজরে আসোয়াদ।এর বিপরীত দিকে যে কর্নারগুলো রয়েছে সেই রোকন গুলোর একটির নাম হলো রোকনে 'শামি' ও রোকনে 'ইরাক'। ইরাক ও শাম দেশের নাম করনে এই দুটোর নাম করন করা হয়েছে।রোকনে ইরাকির এখানে এসে বিদাআতিরা দাঁড়িয়ে বিভিন্ন দোয়া পড়ে।কাবা ঘরের ছাদের উপর থেকে পানি পড়ে এমন একটি নালা রয়েছে যা মদিনার দিকে, এখানে আসলে বিদাআতিরা দোয়া পড়ে।এগুলো তাদের তৈরি করা দোয়া।হারাম শরিফে দোয়াতো করতে হবে যা কোরআন হাদিসের মাসনুন দোয়া কিন্তু তারা তাদের আলেমদের বানানো দোয়া পড়ে এজন্যই এগুলো বিদাআত।আর এই বইগুলো ভারতীয় উপমহাদেশে তৈরি হয়েছে। অন্যান্য দেশেও এরকম আরবী বই পাওয়া যায় এসব বিদাআতি বই।রোকনে ইয়ামেনিতে চুম্বন দেয়া আর একটি বিদাআত।অনেকে কাবার যেখানে সেখানে চুম্বন দিচ্ছে,যেখানে সেখানে মাথা ঠুকছে এগুলো বিদাআত।মাকামে ইব্রাহিমে গিয়ে সওয়াবের উদ্দেশ্যে চুম্বন দেয়া,হাত লাগিয়ে মুখে শরিরে মোছা এসবই বিদাআত।আর একটি বিদাআত করে কাবা শরিফের দরজার সামনে যাকে মুলাতাজিম বলা হয়।এখানে কাবা শরীফকে জড়িয়ে ধরে দোয়া করার হাদিস রয়েছে।কিন্তু আরো তাবারুক হাছিল করার জন্য দরজার উপরের ভাগকে ছোঁয়ার চেষ্টা করে আর মনে করে এখান থেকে আরো বেশি সওয়াব হাছিল করা যায় এগুলো বিদাআত।এ ছাড়াও আরো অনেক বিদাআত মানুষ করে থাকে।এখন তো ডিজিটাল হজ ও ওমরাহ করে অনেকে।হজরে আসোয়াদের পাশে দাঁড়িয়ে দেশে টেলিফোন করে আমি এখন হজরে আসওয়াদের কাছে তোমাদের জন্য দোয়া করছি ইত্যাদি--।ওজুর শর্ত হচ্ছে নামাজ পড়তে ওজু করতে হবে।আর বায়তুল্লাহ তওয়াফ করলে ওজু থাকতে হবে।কিন্তু অনেকে মনে করে সাফা-মারোয়া সাঈর জন্য ওজু থাকতে হবে।সবসময় ওজু অবস্হায় থাকলে ভাল কিন্তু যদি সাফা-মারোয়ায় ওজু ভেংগে যায় তাহলে সাঈ রেখে ওজু করার জন্য যাওয়ার দরকার নেই।তবে যদি নামাজের সময় হয় তাহলে ওজু করতে হবে তাছাড়া সাঈ শেষ করে নিতে হবে।কেউ কেউ এই অতিরিক্ত কাজ করে সেজন্য এটা বিদাআত।মা আয়শা রা: বর্ননা করেছেন,নবী সা: বলেছেন,কেউ যদি এমন কোন আমল করে যা আমার ত্বরিকায় নয় তা প্রত্যাখ্যাত।'
আরাফায় গিয়ে অনেকে মনে করে জাবালে রহমতে যেতে হবে।রহমতের পাহাড়-এই নাম দেয়া হয়েছে বিদাআতিদের পক্ষ থেকে।রাসূল সা: ওখানে সওয়ারি রেখেছিলেন কিন্তু বলেননি এটা রহমতের পাহাড় এবং এও বলেননি তোমরা অধিক সওয়াবের জন্য এখানে আসবে।যারা সেখানে উঠার জন্য কষ্ট করে তা সওয়াবের কাজ নয়।এমনকি মহিলারা সেখানে উঠে না নামতে পেরে পায়খানা পেশাব পর্যন্ত করেছে।এগুলো তারা করছে ফযিলত মনে করে।অনেকে নিজের তাঁবুর যায়গা ছেড়ে খুঁজতে থাকে এ পাহাড়।অথচ তাদের কাজ ছিল সেখানে সুস্হভাবে বসে যিকির আযকার করা,আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরন করা,নিজের কৃত গুনাহ মাপের জন্য আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করা।আরাফার জন্য বিশেষ দোয়ার বই দেখতে পাওয়া যায় যা তারা অনুসরন করে।নবী সা: আরাফার জন্য একটি শ্রেষ্ঠ ও উত্তম দোয়া হাদিসে বর্ননা করেছেন,'লা ইলাহা ইল্লল্লাহু ওয়াহদা লাশারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আ'লা কুল্লিসাইয়িন ক্কাদির।' এই দোয়া আল্লাহ পাকের গুনবাচক দোয়া এবং এ দোয়া বেশি বেশি পড়তে হবে।তার সাথে হাজি সাহেবের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যানের জন্য মাসনুন দোয়া রয়েছে,সেগুলো আরবীতে না পারলে নিজের ভাষায় পড়ে সন্ধা হওয়ার আগ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে চোখের পানি পেলে দোয়া করতে হবে।হতে পারে হাজি সাহেব আর আসতে পারবেন না বা দেশেও ফিরে যেতে পারবেন না।কিন্তু বিশেষভাবে কোন দোয়া তৈরি করা বিদাআতি ধারনা।আরাফার দিন যদি জুমআর দিন পড়ে বিশেষ করে ভারত উপমহাদেশের লোকেরা বলে 'আক্কবরি হজ্জ' আর তারা খুব খুশি হয়।তাদের জিজ্গেস করলে বলে আমাদের সৌভাগ্য আমরা হজে আক্কবরি পেয়েছি।এর ফযিলত জিজ্গেস করলে বলে এই দিনে ৭২ হজের নেকি পাবে আর এই ব্যাপারে মিথ্যা হাদিছ রয়েছে।এই বিদাআতটি হলো আক্কিদার বিদাআত।যেই আমলে বিদাআত আছে সেই আমলই বর্বাদ।যে আমলে শির্ক আছে তা অতীতের সব আমল ধবংস করে দিবে।আরাফায় আর একটি ভুল হলো সূর্য ডুবার আগে বের হওয়া।কিন্তু জাহেল হাজিদের জানা নেই যে সূর্য ডুবা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে এবং এটি একটি ওয়াজিব।যারা আগে বেরিয়ে গেল তাদের দম(পশু জবাই) দিতে হবে তা না হলে হজ আসম্পুর্ন থাকবে।মুজদালিফায় মাশ'আরে হারামে বিদাআতি দোয়া পাঠ করা।এখানে অনেক হাজিরা এসে মাগরিব ঈশা না পড়ে পাথর কুড়াতে থাকে।রাসূল সা:মুজদালিফা থেকে পাথর কুড়িয়েছেন এর কোন প্রমান নেই।নবী সা: পাথর রাতে নেননি।তিনি নিয়েছেন সকাল বেলায় যা ইবনে মাজাহ ও নাসাঈতে রয়েছে।ইবনে আব্বাছ রা: বলেছেন কুরবানির দিন সকালবেলা নবী সা: আমাকে বললেন,আমার জন্য কয়েকটি কন্কর কুড়িয়ে নিয়ে আস।আর নবী সা: তখন চলা অবস্হায় ছিলেন।তাহলে বুঝা গেল মুজদালিফা থেকে পাথর কুড়ানো এবং রাতে কুড়ানো দু'টো-ই ভুল কাজ।বিদাআতিরা আর একটি কাজ করে তা হলো মুজদালিফায় রাত জাগে।নবী সা: এর সূন্নত হলো তিনি মুজদালিফায় এসে মাগরিব ঈশা পড়লেন জামাত করে।খাওয়া দাওয়া দরকার থাকলে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়া।ফযর পড়ে মাশয়ারিল হারামের কাছে বেশি বেশি দোয়া করা সূন্নত।আর একটি বিদাআত তারা করে তা হলো পাথর কুড়িয়ে ধৌত করে।জামারাতগুলোকে শয়তান মনে করে।এটি আক্কিদার বিদাআত।আর শয়তানকে যখন মারে তখন চোরের উপর যেভাবে চড়াও হয় সেভাবে তারা পাথর মারে। আসে পাশে কেউ আছে কিনা সে লক্ষ্য তাদের থাকে না।নবী সা: বলেছেন তোমরা বাড়াবাড়ি করো না।তোমাদের পূর্বের জাতিরা ধর্মের ক্ষেত্রে বাড়া বাড়ি করার জন্যই ধংস হয়েছে।' নবী সা: বার বার তাকিদ করেছেন তোমরা ছোট ছোট পাথর দিয়ে মার,বড় পাথর দিয়ে মেরো না যাতে অন্যের দাঁত ভেংগে যায়,কারো চোখ কানা হয়ে যায়।বুট বা চানার মত ছোট পাথর নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।অনেক হাজি কুরবানির ব্যাপারেও সন্দিহান।তারা ব্যাংকে টাকা দিয়েও দীর্ঘ দেরি করে পাথর মারতে যায়।আবার অনেকে মিনার বাইরেও জবাই করে।হাদি আনার উদ্দেশ্যই হলো মিনাতে জবাই করা।অন্য কোথাও জবাই করলে কুরবানি হবে না।কারন ইব্রাহিম আ: মিনায় কুরবানি করেছেন।মাথা মুন্ডানোর সময় ক্কিবালমুখি হতে হবে এমন বিদাআত রয়েছে আক্কিদায় আর তাদের বিশেষ দোয়া ও পড়তে দেখা যায়।হাজি ছাড়াও যারা মক্কা বা মদিনা যায় তারা বলে মক্কা মদিনায় ছুতরা'র দরকার নেই।এই বিদাআতি ফতুয়া আমাদের লোকেরা তো বলে, অনেক আরব বিদাআতিরাও বলে থাকে।এখানেও ছুতরা দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে যদি ছুতরা দেয়া সম্ভব হয়।নামাজ পড়ার সময় কোন পিলারের অবস্হানে নামাজ পড়া।আর যারা হাটাচলাফেরা করবে তারা দেখে চলবে।যেখানে কেউ নামাজ পড়বে তার সামনে দিয়ে না গিয়ে একটু ঘুরে যাবে।খুব জরুরি হলে যেতে পারে।যেমন পায়খানা পেশাবের বেগ বা অন্য কোন জরুরি হাজত থাকলে।সাধারন অবস্হায় ছুতরা লাগানো ফরয।এগুলো তারাই করে যাদের দীনের ছহি মাসলা-মাসায়েল জানে না।আমাদের দেশে অনেক জাহেল আছে যারা পায়ে পায়ে বা কাঁধে কাঁধে লাগিয়ে নামাজ পড়া পছন্দ করে না যার ফলে শয়তানকে সাথে নিয়ে নামাজ পড়ে।অথচ ছহি বোখারিতে আনাস রা: বর্ননা করেন, রাসূল সা: সাহাবাদের কদমের সাথে কদম , কাঁধের সাথে কাঁধ লাগাতে বলতেন।নবী সা: আরো বলেছেন,ছিদ্র বন্ধ কর ,শয়তাদের জন্য খালি যায়গা ছেড়ে রেখ না।' আর একটি আকিদা বিদাআত হাজি সাহেবরা করে মদিনা সফরের সময় যে, নবী সা: এর কবরের কাছে যাচ্ছি।এই নিয়াত করা বিদাআত।তাদের যা করা উচিত তা হলো আমি নবী সা: এর মসজিদে নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে যাচ্ছি। সেখানে এক রাকাতে সওয়াব এক হাজার রাকাতের।পন্চাশ হাজারের ব্যাপারে যে হাদিছ রয়েছে তা ছহি নয়।যারা এই হাদিসটি বর্ননা করে তারা ছহি ও জয়িফের ব্যাবধান বুঝে না।মক্কা হারামে ১ লাখ রাকাতের সওয়াব এবং বায়তুল মুক্কদেছে ৫শ রাকাতের সওয়াব যা ছহি হাদিসে বর্নিত হয়েছে।মদিনায় যারা নবী সা: এর মসজিদে পৌঁছে যাবে প্রথমে তাহিয়্যাতুল মসজিদ দু'রাকাত নামাজ পড়বে এবং পরে নবী সা:কে ও তার সাহাবিদের সালম পৌঁছিয়ে বেরিয়ে যাবে।যে কাজটি বিদাআতিরা করে তা হলো জান্নাতের টুকরো বলে নবী সা: এর পাশে সবুজ কার্পেটের যে যায়গাটি আছে তাতে দু'রাকাত নামাজ পড়া দোষনীয় নয় বরং সওয়াবের কাজ।কিন্তু তারা নামাজ পড়েই কবরের পাশে বসার জন্য চেষ্টা করে এবং অনেকে দীর্ঘ সময় বসে থাকে এই উদ্দেশ্যে যে ওখানে দোয়া করলে নবী সা: শুনবেন বা নবী সা: এর কাছ থেকে ফায়দা পাবে।আসহাবে সুফফাদের ঐ যায়গাটিতেও এই লোকদের দেখতে পাওয়া যায় মুযাবিরের মত বসে ধ্যান করে।শুনেছি বিভিন্ন দেশ থেকে এরা আসে যারা কবর পূজারি বিশেষ করে এরাই দীর্ঘ সময় কবর ঘেঁষে বসে থাকে। অনেকে যারা হজে আসে তাদের কাছে নবী সা:কে সালাম পৌঁছাবোর কথা বলে।আবার অনেকে চিঠি লিখে পাঠায় যা পত্র বাহকরা ওখানে পড়ে।এগুলো বড় শির্ক যাতে ইসলাম থেকে বেরিয়ে যায়।আর একটি বিদাআত আছে যা আমাদের দেশের সাইখুল হাদিসরা করে থাকে।তাদের ছাত্ররা মদিনায় পড়াশুনা করে আর তাদের বলে আমার সালামটি রাসূল সা: এর কবরে পৌঁছে দিবে।কারো মাধ্যমে এই যে সালাম পৌঁছানো তা হলো বিদাআত।সূন্নত হলো নবী সা: এর কাছে সালাম পৌঁছানোর জন্য আল্লাহ পাক তার অসংখ্য ফেরস্তা নিযুক্ত করে রেখেছেন।নাসাঈতে হাদিছ বর্নিত হয়েছে যে,নিশ্চয় আল্লাহ পাকের অনেক ভ্রমনকারি ফেরেস্তা রয়েছে আমার উম্মতের সালামগুলো তারা পৌঁছে দেন।' তাহলে ফেরেস্তা রেখে মানুষের মাধ্যমে সালাম পৌঁছানোর কারন কি? কারন হলো অজ্গতা ও দীন সম্পর্কে না জানা।আমাদের দেশে যে হামদ ও নাত হয় তার বেশীর ভাগ বিদাআত।এক ধরনের বিদাআতি হুজুররা কোরআন ও ছহি হাদিস অনুশীলন না করার করানে এই মূর্খতা তাদের পেয়ে বসেছে এবং উম্মতকে বিদাআতি বানাচ্ছে।ছোটবেলায় আমরা অনেকে শুনেছি হুজুররা গানের সুরে বলে,'আমার সালাম পৌঁছে দিও নবী পাকের রওজায়।' এগুলো বিদাআতি হুজুরদের বানানো কথা।
নবী সা: এর সাহাবারা কত দূরে থেকেছেন কেউ কারো কাছে এরকম সালাম পৌঁছানোর কাজ করেননি।অনেকে মদিনা প্রবেশের জন্য গোসল করে থাকে যা বিদাআত।চটি বইগুলোতে মদিনা ঢুকার সময় খাছ দোয়া এগুলোও বিদাআত।নবী সা: এর মসজিদে এসে নামাজ না পড়ার আগেই যেয়ারত করা একটি বিদাআত।অনেকে দোয়ার সময় কবরকে সামনে করে দোয়া করে যা বিদাআত বরং শির্কেরও আশংকা রয়েছে।সালাম করার পরে দোয়া করতে হবে ক্কিবলামুখি হয়ে।যে কোন কবর জিয়ারতেই ক্কিবলামুখি হয়ে দোয়া করতে হয় এবং যা কিছু চাওয়ার আল্লাহর কাছে চাইতে হয়।কবরের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্য হলো- কবর বাসির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং নিজের মৃত্যুকে স্মরন করা।কবরবাসির কাছে কিছু চাওয়া শির্ক কারন যে কবরে শুয়ে আছে সে নিজেও জানে না তাকে কখন কবর থেকে উঠানো হবে।সবচেয়ে ভাল মদিনায় গিয়ে মসজিদে দু'রাকাত নামাজ পড়ে রাসূল সা: ও তার সাহাবাদের সালাম দিয়ে মসজিদের অন্য যায়গায় গিয়ে নামাজ পড়া ও দোয়া করা। কোন ব্যাক্তির ওসিলা করে দোয়া করা বিদাআত।ওসিলা করতে হবে আমলের ও ঈমানের।কেউ ইচ্ছা করলে জীবিত ব্যাক্তির কাছে বলতে পারে দোয়া করার জন্য।সূরা কাহফে আল্লাহ তিনজনের কথা বর্ননা করেছেন, যখন তারা গুহায় ডুকেছিল একটি পাথর এসে পড়লো গুহা মুখে।তারা তাদের সৎ আমলের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলো আর আল্লাহ পাক ধীরে ধীরে পাথর সরিয়ে দিলেন।তারা মাধ্যম বানিয়েছিল নিজ আমলকে।আমরা গুনাহ মাপের জন্য বা কোন হাযতের জন্য নামাজ পড়ে দোয়া করতে পারি।ঈমাম বোখারি ছোট অবস্হায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।তার মাতা অনেক চেষ্টা করেও সারাতে পারলেন না।এর পর তিনি রাতে নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করতেন।একদিন তাকে স্বপ্নে দেখানো হলো তার ছেলের চোখ ভাল হয়ে গিয়েছে।সকালে উঠে দেখলেন সত্যিই তার ছেলে দেখতে পায়।সাথে সাথে তিনি শুকরানার দু'রাকাত নামাজ পড়লেন।আজকে আমরা আল্লাহর কাছে সেজদা না দিয়ে পিরের কাছে দৌড়ে যাই।এ জেহালত মুসলিম উম্মায় এখন কানায় কানায় পরিপূর্ন।আল্লাহ পাক সূরা আল-ইমরানের ১৬ আয়াতে বলেন,'আমাদের প্রভু! আমরা ঈমান এনেছি অতএব আমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দাও।'শির্কের চোরা রাস্তা হলো কাউকে ওসিলা বানানো।কবর ,মাজার ও পির পূজা এভাবে শুরু হয়েছে।বিদাআতি আক্কিদা হলো রাসূল সা: এর কবরের কাছে এসে দোয়া কবুল হয়।এই জন্যই রিয়াজুল জান্নাতের কাছে ভীড় করে থাকে অনেক মানুষ।দোয়া যে কোন যায়গা থেকেই কবুল হবে যদি কোন বাধা না থাকে।যদি ইবাদতে শির্ক , বিদাআত,হারাম খাওয়া না থাকে ,হারাম লেবাছ না থাকে,দোআতে যদি সীমালংঘন না থাকে তাহলে ইনশাআল্লাহ দোআ কবুল হবে।আমাদের দোআ কবুল না হওয়ার কারন আমরা খুঁজলেই পেয়ে যাব।প্রতিটি ঘরেই এখন হারাম জীবন যাপন চলছে।টেলিভিশন,মোবাইল,ইন্টারনেট,ফেসবুক,টুইটার , ভিডিও ভিসিপিতে যেভাবে ঘরে অশ্লীলতা চলছে আর আমরা নামাজ পড়ে বলছি কেন দোয়া কবুল হচ্ছে না? আমরা আমাদের উত্তর একটু খুঁজেলেই পেয়ে যাব।তবে দোআর ব্যাপারে বিরক্ত হলে চলবেনা।নিজের গুনাহগুলোকে বন্ধ করে নেক আমলের দিকে যেতে হবে আর আল্লাহর কাছে চাইতে হবে।নেক আমলের মাধ্যমে গুনাহ ধংস হয়ে যায়।কবর পাকা করার বিদাআত যদি না হতো তাহলে কখনো সেখানে সেজদা হতো না।আজকে গ্রামে গন্জে প্রতিটি বাড়ির কবরস্হানে অজ্গলোকগুলোর কাছে যখনই টাকা আসে তখন তারা কবর পাকা করে।মসজিদের পাশে এ সব কবরস্হানে যারা কবর পাকা করে হক্কানি আলেমদের কাজ প্রতিরোধ গড়ে তোলা।ছুপিরা কবরের কাছে বসে মুরাক্কাবা করে অর্থাৎ চোখ বন্ধ করে ধ্যান করে।এগুলো বিদাআতি ত্বরিকা।কবরের পাশে বসে কুরআন পাঠ করা,ঝিকির করা ,ফুল দেয়া এসব বিদাআতি কাজ। বিদাআতিদের আর একটি লক্ষন হলো মদিনায় গেলে যতদিনই থাকুক প্রত্যেক নামাজের পর যেয়ারত করা।মদিনায় ৮দিন থাকলে যতবার ইচ্ছা ততবার যিয়ারত করা।আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর যখন বাইরে থেকে আসতেন একবার নবী সা: এর কবরে সালাম দিতেন ,'আস্সালামু আলাইকা ইয়া রাসূলুল্লাহ ,আস্সালামুআলাইকা ইয়া খালিফাতা রাসূলিল্লাহ,আস্সালামুআলাইকা ইয়া আবাতা।' তার বাবার কবরের কাছে এসে বলতেন হে আব্বা আপনার উপর সালাম হউক।হাজি সাহেবদের মদিনার আর একটি বিদাআত ৪০ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেই হবে।এটি একটি জয়িফ হাদিস যা রাসূল সা: থেকে প্রমানিত নয়।মদিনার হেফাযতের জন্য সাহাবারা বদর করেছেন , ওহুদ করেছেন,খন্দক করেছেন কিন্তু আমি বা আপনি এগুলো ইসলামের প্রয়োজনে করতে সমর্থ কিনা? আমরা তো ৫ ওয়াক্ত নামাজই ঠিকমত আদায় করিনা।ক'জন আছি যে প্রতিনিয়ত তাহাজ্জুদ গুজার করি।আমাদের যদি বলা হয় ১/২ লাখ টাকা বেতন থেকে ৫ হাজার টাকা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করুন এইরকম ঈমান আমাদের আছে কিনা? আর মক্কা বা মদিনায় চুম্বন দিয়ে অনেক মহব্বত করতে চায়।এগুলো হলো মোনাপেকি আচরন।এই সব মিষ্টি সূন্নত পালন হলো মিষ্টি বিদাআত।
আরো কিছু নতুন কাজ থেকে হাজি সাহেবদের বিরত থাকা উচিত যা অনেকে করে থাকে।ইহরাম অবস্হায় ভ্রমনে যখন বের হলেন হাজি সাহেবগন দুনিয়ার গল্প করতে থাকেন।অনেকে কনফারেন্স কলও করেন।আপনি আল্লাহর মেহমান হয়ে বের হয়েছেন।ইহরামের কাপড় পরার অর্থ হলো আপনার দৈনন্দিন পোষাক,সমস্ত নাপাকি, পাহেশা কাজ ও চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে এক আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছার চেষ্টা করছেন।অনেকে কাফেলায় বের হয়ে পুরুষ মহিলা মিলে খোশ গল্পও করেন।মক্কা এসে ওমরার পর ওমরা করতে থাকেন।রাসূল সা: এই রাস্তা কি খুলেছিলেন উম্মতের জন? তিনি জীবনে চার বার ওমরা ও একবার হজ্জ করেছেন এবং প্রতিটি ওমরাহই করেছেন জ্বিলক্কদ মাসে এবং এক ভ্রমনে একবারই ওমরাহ করেছেন।সুতরাং হাজি সাহেগনের কাজ রাসূল সা: কে অনুসরন করা।তামাত্তু হজ্জ হলে মিকাত থেকে ওমরার নিয়াত করে হক্ক আদায়ের সাথে ওমরাহ করে হালাল হয়ে যাবেন এবং ৮ তারিকে আবার হজের নিয়াত করে মিনার উদ্দেশ্যে হজে বের হবেন।আর কিরানের হাজিরা হজ ও ওমরার নিয়াত একসাথে করে হজ পালন করবেন এবং ইফরাদের হাজিরা শুধু হজের নিয়াত করে হজ করবেন।রাসূল সা: এর আদর্শ মেনে হজ করলেই কল্যান।বাকি সময় হাজি সাহেবগন তাওয়াফ ,নামাজ ও তাছবিহ তাহলিলে ব্যাস্ত থাকবেন।স্বাস্হকে হজের দিন গুলোর জন্য ঠিক রাখবেন যেন সুন্দরভাবে হজব্রত পালন করতে পারেন।ইদানিং অনেকে হজে এসে সৌদি আরব ঘুরতে থাকে আত্মীয়দের সাথে।বিভিন্ন সমুদ্রতীর গুলোতে বনভোজনের নামে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও যোগ দেন যেখানে ইসলামিক কাজ কর্মের কোন বালাই নেই।হাজি সাহেব গনের ভাবতে হবে, আমরা এত কষ্ট করে আল্লাহর মেহমান হয়ে এসেছি,সম্ভবমত মক্কা মদিনায় থেকে নিজের জীবনের গুনাহ মাপের জন্য ইবাদতে মশগুল থেকে তাক্কোয়া অবলম্বন করে সময় পার করাই আমাদের জন্য শ্রেয়।মক্কা ও মদিনায় যে সব কল্যান রয়েছে তা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত পাথেয় হিসেবে নেয়ার বাসনা তৈরি করা।হাজি সাহেবদের আর একটি বিশেষ বিষয় যা তারা নিতে ব্যার্থ হন তা হলো রাসূল সা: এর বিদায় হজের ভাষন।সর্বকালের সর্বশ্রেষঠ ভাষন যা হাজি সাহেবদের জীবন সংগী হিসেবে নিয়ে মানুষের কাছে প্রচার করার কথা।২% হাজি সাহেবগন দেশে গিয়ে এ বিষয়গুলোর প্রচার সম্প্রচার করেন কিনা সন্দেহ আছে।সারা পৃথিবীতে আজ ১৬০ কোটি মুসলমান আজ নির্যাতিত।কাফের মুশরিকরা যেভাবে তারা একত্রিত হয়ে মুসলিম অন্চলগুলোতে আজ ঝাঁপিয়ে পড়ছে ও রক্তাক্ত করছে,মুসলিমরা আজ তার বিপরীত মুখি অবস্হানে দ্বিধাবিভক্ত ও অন্তর্কলহে লিপ্ত।মুসলিম দেশগুলোতে আজ শির্ক ও বিদাআত পরিপূর্ন। এই হজের মাঠে সাদা একটি পোষাকে মুসলিমকে স্মরন করিয়ে দেয় আমরা একটি উম্মাহ কিন্তু বর্তমানমুসলমানরা ঈমানের দিক থেকে খুবই দুর্বল।মুখে তারা তালবিয়া পড়ছে কিন্তু তাদের হলকুমের নিছে তা নামছে না।তেমনি কোরাআন ও হাদিছ পড়ছে কিন্তু হলকুমের নিছে নামছে না।মুসলিম বিশ্বের নেতারা আজ যদি একত্রিত হয়ে হুন্কার দেয় যে আমরা মুসলমানরা একটিই জাতি তাহলে কোন শক্তিই তাদের দমাতে সক্ষম নয়।কিন্তু সমস্যা হলো সেখানে মুসলমান আজ সম্পদ ও আরাম আয়েশের কাছে মাথা নত করে দিয়েছে যার কারনে ইসলাম তাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আর ইহুদি- খৃষ্ঠান ও মুনাফেকরা তাদের তাবেদার সম্প্রদায়কে মুসলমানের ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে দূর থেকে নিয়ন্ত্রন করছে।এখন তাদের মুসলমানের কাছে আসার দরকার নেই।মুসলমানদের ভিতর মুনাপেকরাই তাদের শায়েস্তা করার জন্য যথেষ্ট।আল্লাহ সমস্ত মুসলিমদের বুঝার তাওফিক দিন।যাদের হজের জন্য কবুল করবেন তাদের বাকি জীবন রাসূল সা; এর সুন্নাহ মোতাবেক চলার তাওফিক দিন। আমিন-
বিষয়: বিবিধ
২৯১২ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
======================
এটা আবার কোন কুলাঙ্গার? কোন লতিফের বাচ্চারে?
বিদেশ এসে, হজ্বের নামে, তাবলীগের নামে, এসব কথা বলেরে !
বুকের ভিতর আঘাত দিলি, মুসলমানের বাচ্চা তুই !
হজ্বে যাবি না আবার নিউয়র্ক যাবি, বড্ড বড় পাঁজি তুই !
হজ্বে যাই, টাকা ঢালি বিনিময়ে কি পাই জানিস?!
ভাতৃত্ববোধ ত্যাগ ভালোবাসা! দুরে চলে যায় শয়তান ইবলিশ!
মাদ্রাসা মসজিদ বা রাজস্বখাতে টাকা দিলে তুই কি খুশি??আল্লাহ তায়ালা তার চেয়ে বেশি খুশি হয়! দেশের জন্য জীবন কুরবানী তাও তো ঐ হজ্বই শিখায়!!
তুই হজ্বে যাবি ক্যান, কৃপন রে তুই, হজ্বটা করে এসেই দেখ! জান্নাতী ফুল ফুটবে মনে, উঠবে হেসে বুঝবি তখন মনের আবেগ
মন্তব্য করতে লগইন করুন