রাসূল সা: এর বিদায় হজের ভাষন বা মর্মবানি।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৩:০৬:৩৯ দুপুর

শুক্রবার ৯ই জিলহজ্জ ১০ হিজরি সনে আরাফার ময়দানে দুপুরের পর হযরত মোহাম্মদ সা: লক্ষাধিক সাহাবার সমাবেশে এই ঐতিহাসিক ভাষন দেন।সমস্ত প্রশংসার পর তিনি বলেন,হে মানুষ! তোমরা আমার কথা শুন,এর পর আমি তোমাদের সাথে এই স্হানে একত্রিত হতে পারবো কিনা জানি না।হে মানুষ!আল্লাহ বলেন,হে মানবজাতি! আমি তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারি থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের সমাজ ও গোত্রে ভাগ করে দিয়েছি যেন তোমরা পরস্পরের পরিচয় জানতে পার।অতএব শুনে রাখ,মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই,আরবের উপর কোন অনারবের,অনারবের উপর কোন আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, তেমনি সাদার উপর কালোর এবং কালোর উপর সাদার কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই।তোমাদের মধ্যে সেই ব্যাক্তি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি সম্মান ও মর্যাদার অধিকারি যে আল্লাহকে ভালবাসে।

হে মানুষ! শুনে রাখ,অন্ধকার যুগের সকল বিষয় ও প্রথা আজ থেকে বিলুপ্ত হলো।জাহেলি যুগের রক্তের দাবিও রহিত করা হলো।হে মানুষ! শুনে রাখ,অপরাধির দায়িত্ব কেবল অপরাধির উপরই বর্তায়।পিতা তার পুত্রের জন্য,পুত্র তার পিতার আপরাধের জন্য দায়ি নয়। হে মানুষ! তোমাদের রক্ত,তোমাদের সম্মান , তোমাদের সম্পদ পরস্পরের জন্য চিরস্হায়ি ভাবে হারাম অর্থাৎ পবিত্র ও নিরাপদ করা হলো যেমন আজকের এই দিন,আজকের এই মাস,আজকের এই শহর সকলের জন্য পবিত্র ও নিরাপদ।হে মানুষ! তোমরা ঈর্ষা ও হিংসা বিদ্ধেষ থেকে দূরে থাকবে।ঈর্ষা ও হিংসা মানুষের সকল গুনকে ধ্বংস করে।হে মানুষ! নারিদের সম্পর্কে আমি তোমাদের সতর্ক করে দিচ্ছি।তাদের সাথে নিষ্ঠুর আছরন করবে না।তাদের উপর যেমন তোমাদের অধিকার রয়েছে তেমনি তোমাদের উপর তাদের ও অধিকার রয়েছে।সুতরাং তাদের কল্যানের দিকে সব সময় খেয়াল রেখ।হে মানুষ! অধিনস্তদের সম্পর্কে সতর্ক হও।তোমরা নিজেরা যা খাবে তাদেরও তা খাওয়াবে।তোমরা নিজেরা যা পরবে তাদেরও তা পরতে দিবে।শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগে তাদের মজুরি পরিশোধ করবে।

হে মানুষ! বিশ্বাসী সেই ব্যাক্তি যার হাত ও মুখ থেকে অন্যের সম্মান ও প্রান নিরাপদ।সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে অন্যের জন্যও তা পাছন্দ করে।হে মানুষ! বিশ্বাসিরা পরস্পরের ভাই।সাবধান! তোমরা একজন আর একজনকে হত্মা করার মত কুফরি কাজে লিপ্ত হবে না।হে মানুষ! শুনে রাখ,আজ হতে বংশগত শ্রেষ্ঠত্ব ও কৌলিন্য প্রথা বিলুপ্ত করা হলো।কুলিন বা শ্রেষ্ঠ সেই, যে বিশ্বাসী ও মানুষের উপকার করে।হে মানুষ! মানুষের দাবি দাওয়া ও রিন অবশ্যই ফেরত দিতে হবে।বিশ্বস্ততার সাথে প্রত্যেকের আমানত রক্ষা করতে হবে।কারো সম্পদ সে যদি স্বেচ্ছায় না দেয় তবে তা কারো জন্য হালাল নয়।তোমরা কেউ দুর্বলের উপর অবিচার করো না।হে মানুষ! জ্গান অর্জন প্রত্যেক নরনারির জন্য ফরয কারন জ্গান প্রত্যেককে সঠিক পথ দেখায়।হে মানুষ!তোমরা তোমাদের প্রভুর ইবাদত করবে,নামাজ কায়েম করবে,যাকাত আদায় করবে ,রোজা রাখবে ও হজ করবে আর সংঘবদ্ধভাবে নেতাকে অনুসরন করবে তাহলে তোমরা জান্নাতে দাখিল হতে পারবে।হে মানুষ! শুনে রাখ একজন কুশ্রি কদাকার ব্যাক্তিও যদি তোমাদের নেতা মননীত হয় যতদিন পর্যন্ত সে আল্লাহর কিতাব অনুসারে তোমাদের পরিচালিত করবে ততদিন পর্যন্ত তার আনুগত্য করা তোমাদের অবশ্য কর্তব্য।হে মানুষ! শুনে রাখ,আমার পর আর কোন নবী আসবে না।হে মানুষ! আমি তোমাদের কাছে দু'টি আলোক বর্তিকা রেখে যাচ্ছি,যতদিন তোমরা এই দু'টো জিনিস অনুসরন করবে ততদিন তোমরা সত্য পথে থাকবে।একটি হলো আল্লাহর কিতাব দ্বীতিয়টি হলো আমার জীবন দৃষ্টান্ত।হে মানুষ! তোমরা কখনো ধর্ম নিয়ে বাড়া বাড়ি করো না কেননা অতীতে বহু জাতি ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কারনে ধ্বংস হয়ে গেছে।হে মানুষ! প্রত্যেকেকে শেষ বিচারের দিনে সকল কাজের হিসেব দিতে হবে।অতএব সাবধান হও।হে মানুষ! তোমরা যারা এখানে হাজির আছ আমার এ বানিকে সবার কাছে পৌঁছে দিও।এর পর তিনি জনতার উদ্দেশ্যে জিজ্গেস করলেন,হে মানুষ! আমি কি তোমাদের কাছে আল্লাহর বানি পৌঁছে দিয়েছি? সকলে সমস্বরে জবাব দিল 'হাঁ'।এর পর নবী সা: বললেন,হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষি থাক আমি আমার সকল দায়িত্ব পালন করেছি।

রাসূল সা: এর উম্মত হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব তার এই শেষ বানি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া।আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দান করুন।আমিন--

বিষয়: বিবিধ

১২৮৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

267925
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:০১
ইসলামী দুনিয়া লিখেছেন : আল্লাহু আকবার চালিয়ে যান।
268012
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০১:০০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ ভালো লাগলো
এই ভাষন টির বিস্তারিত অালোচনা প্রয়োজন।
268268
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:১৫
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : জি ভাই - আমাদের সকলের এই দায়িত্ব। আমরা সবাই তা পালন করলে সমাজের এই চিত্র হত না। আপনাকে ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File