একটি মৃত্যু স্মরন করে দেয় আর একটি মৃত্যুকে - স্মরনকারি আছে কি?
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৮:০৩:৫৯ রাত
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
মহান আল্লহাপাকের সমস্ত প্রশংসা যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন এই দুনিয়ায় একটি নির্দিষ্ট সময় বসবাসের জন্য আবার মৃত্যুও নির্ধারিত করেছেন।এই নির্ধারিত সময়ের এক মিনিট আগেও কেউ মৃত্যুবরন করবে না এবং এর পরেও না।আর তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন আমাদের পরীক্ষা করার জন্য, আমাদের মধ্যে কে অগ্রগামি আগামি কালের জন্য।আল্লাহ পাক সূরা আল মুলকের ২ আয়াতে বলেন,'যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন তোমাদের যাচাই করতে যে কে তোমাদের মধ্যে কাজ কর্মে শ্রেষ্ঠ।'আল্লাহ পাক নবী সা:কে বলেছেন,হে নবী আপনি মৃত্যুবরন করবেন এবং তারাও মৃত্যুবরন করবে।এই পৃথিবীতে কেউ বেঁচে থাকবে না তাহলে এই পৃথিবীকে নিয়ে মানুষের এত ব্যাস্ততা কেন? আল্লাহ পাক সূরা আল ইমরানের ১৮৫ আয়াতে বলেন,' প্রত্যেক স্বত্তাকে মৃত্যুর আস্বাদন করতে হবে আর নিশ্চই কেয়ামতের দিন তোমাদের প্রাপ্য পুরপুরি আদায় করা হবে।যাকে আগুন থেকে বহু দূরে রাখা হবে ও স্বর্গোদ্যানে প্রবিষ্ট করা হবে,নি:সন্দেহে সে সফলকাম।আর এই দুনিয়া ধোকার সম্বল ছাড়া কিছুই নয়।' আলকুরআনে মৃত্যু সম্পর্কে অসংখ্য আয়াত রয়েছে যেমন-(২:৪৮,১১৩,১২৩,২৮১ ৩:৯,৩০,১৮৫ ৪:৮৭,১৪১ ১০:২৮,২৯,৩০,৯৩ ১৪:৪৪,৪৭,৪৮,৫১ ১৬:১১১ ১৭:১৩,১৪ ১৯:৩৭,৩৮,৩৯,৪০ ১৯:৮৫,৮৬,৮৭ ,৯৪,৯৫ ২০:১০২-১০৯,১১১,১১২ ২১:৪৭,১০৪ ২২:১,২,১৭,৫৫,৫৬,৬৯ ২৩:১৬ ২৪:২৪,২৫ ২৫:২২-৩০ ২৭:৮৭-৯০ ৩০:১২-১৬,৫৬ ৩১:৩৩ ৩২:৫,২৯ ৩৬:৫১-৫৪ ৩৯:৩১,৬০,৬১,৬৭-৭৫ ৪০:১৫-১৮ ৪২:৪৭ ৪৪:৪০-৪২,৪৫:২৬ ৫০:২০-২৩,৩০-৩৫,৪১-৪৪ ৫৭:১২,১৩ ৬৮:৪২,৪৩ ৬৯:১৩-১৮ ৭০:৮-১০ ৭৫:৭-১৫ ৭৮:১৭-২০,৩৮-৪০ ৭৯:৩৪-৪১,৪২-৪৬ ৮০:৩৩-৪২ ৮২:১৭-১৯ ৮৯:২১-৩০ ৯৯:১-৮ ১০০:৯-১১ ১০১:১-১১ ইত্যাদি আয়াত সমূহ।মৃত্যুর উপর এতগুলো আয়াতের সমারোহ ও আমরা যারা প্রতিনিয়ত এই আলকুরআন পড়ছি বা অধ্যয়ন করছি,তাদের কখনো মনে হয় কি আমরা এ পৃথিবীতে থাকবো না? আমাদের জীবনের সাথে কি আমরা প্রহসন করছিনা? তাহলে কেন আমরা অন্যকে ঠকাচ্ছি? কাউকে হত্যা করছি,কারো জমি দখল করছি,কারো গীবত করছি,কারো সম্পর্কে ছোগলখুরি করছি,মালিকের খেয়ানত করছি,জেনা ব্যাভিচারে লিপ্ত হচ্ছি,শির্ক ও বিদাআত করছি,কারো উপর অত্যাচার করছি,কাউকে গালি দিচ্ছি ও অপমান করছি,স্বামী স্ত্রীর ও স্ত্রী স্বামীর অসংখ্য খেয়ানত করছে,বাবা মা'র অবাধ্য হচ্ছে সন্তান,সন্তান প্রতিপালনে ও তাদের হক আদায়ে বাবা মা'র অজ্গতা ইত্যাদি--- ইত্যাদি।
আসলে আমাদের বিশ্বাসে রয়েছে চরম দুর্বলতা।আমাদের বিশ্বাস বাহ্যিক যা আমরা মুখে স্বীকার করি কিন্তু তা হলকুমের নিছে প্রবেশ করে না।যদি আমাদের ভীতিময় অন্তর থাকতো তাহলে প্রতি মূহুর্তে আমাদের চেতনায় জাগ্রত হতো একটি মৃত্যুর বিভিষিকাময় আভাষ যা অন্তরে পৌঁছে যাবে।সূরা কা'ফের ১৯ আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন এভাবে,'আর মৃত্যুকালীন মূর্ছা সত্যি সত্যি আসবে,এইটিই তো তাই যা থেকে তোমরা অব্যাহতি চাও।'এই মওতের কথা যখন মানুষের মনে পড়ে তখন পৃথিবীর সব স্বাধ শেষ হয়ে যায়।যখন আমাদের আশে পাশে কোন মানুষের মৃত্যু হয় তখন তিন দিন বা তারও কিছু বেশি সময় আমরা ভীত হয়ে যাই কিন্তু আবার আমরা ফিরে যাই আমাদের অতীতে।নবী সা: এই মওত সম্পর্কে বলেছেন,তোমরা বেশী বেশী স্মরন কর পৃথিবীর সমস্ত রকম স্বাধ ধংসকারি বিষয়কে আর তা হচ্ছে মওত।' যখন মালাকুল মওত এসে যায় তখন সুসজ্জিত প্রাসাদ,সুন্দরি স্ত্রী,ফুটফুটে ছেলে মেয়ে কোন কিছুর কি মনে পড়ে? না, তখন মৃত ব্যাক্তি নিজেকে নিয়েই ব্যাস্ত।যে সত্রী সন্তানের জন্য কঠোর পরিশ্রম,সুদ -ঘুষ খাওয়া,অন্যকে ঠকিয়ে নিজের পকেট ভারি করা,অন্যের ঘুম হারাম করা,হারাম হালাল বেচে না চলা ইত্যাদি কর্মের ফিরিস্তি তাকে ভীত করে তুলবে আর সময় চাইবে বেচে থাকার কিন্তু তখন আর সময় পাওয়া যাবে না।মৃত্যুর এই সময়ে তার চার পাশের সবকিছুই তিক্ত হয়ে যায়।আর প্রতিটি সৃষ্টিকে মৃত্যুর দরজা দিয়ে ঢুকতে হবে। মৃত্যু এমন একটি পানপাত্র যা প্রত্যেক ব্যাক্তিকে পান করতে হবে।এ থেকে কেউ রেহাই পাবে না আর ফিরে যেতে হবে আল্লাহর কাছে।কবর হলো আখেরাতের প্রথম দরজা এবং এই দরজার স্মরনাপন্য হতে হবে সব শ্রেনীর মানুষকে।একমাত্র মু'মিন ছাড়া এই মৃত্যুর কথা কেউ স্মরন করে না।যদিও শ্রেনী বিশেষে সবাই বলে আমরা সবাই মরে যাব কিন্তু তার জন্য কি করনীয় তা তারা করে না।আল্লাহ পাক শুধু মৃত্যুর কথা বলেই ছেড়ে দেন নি।তিনি বলেছেন তোমাদের দুনিয়ার জীবনে যা করেছ তার পুরোপুরি পাওনা পরিশোধ করে দিবেন।মৃত্যুর পর পাওনা কি? যারা দুনিয়ার জীবনে আল্লাহকে মেনে চলেছে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত রুপি চির শান্তি আর যারা মনে চলে নি তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম রুপি চির অশান্তি। যাদের আগুন থেকে বাঁচিয়ে জান্নাতে প্রবিষ্ট করা হবে সেটাই হলো তাদের বিজয়।এই বিজয় অর্জন করার জন্য দুনিয়ার পরতে পরতে হালালকে হালাল ও হারামকে হারাম বলে জানতে হবে।প্রতিটি মানুষই দুনিয়ায় মেহনত করে।একজন ভাল মানুষ তাকে প্রতি মুহূর্তে মেহনত করতে হয়।ঈমান আনার পর ৫ ওয়াক্ত নামাজ কায়েম করতে হয়,রাত জাগরিত থেকে নফল নামাজ আদায় করতে হয়,দিনে রোজা রাখতে হয়,যাকাতের পুরোপুরি হিসাব করে পরিশোধ করতে হয়,হজ ফরয হলে তা তড়িঘড়ি করে আদায় করতে হয়,তাকে সার্বক্ষিনিক দা-ঈর কাজ করতে হয়,আত্মীয় - প্রতিবেশী,ফকির মিসকিনদের বিপদ আপদে দৌড়ে যেতে হয়।এই কাজ গুলো করতে গেলে তাকে প্রানান্ত পরিশ্রম করতে হয়।একজন দা-ঈর কাজ করতে গেলে তাকে জীবন ও দিয়ে দিতে হতে পারে।এই কঠিন মেহনত করতে করতে তার কাছে যখন মালাকুল মওত এসে যায় তখন ফেরেস্তারা তাকে বন্ধুত্বের ডানা দিয়ে তুলে নিয়ে যায় ও তার কবর হয়ে যায় শান্তির যায়গা।আর যদি সে ব্যাক্তির মেহনত হয়ে থাকে দুনিয়ার জন্য ও লিপ্ত থাকে আল্লাহর বিরোধী কাজ ও ফাহেসা কাজে তখন আজাবের ফেরেস্তা নেমে আসে আর তার কবর হয়ে যায় অশান্তির।সুতরাং কবর থেকে বারযখ জীবন ও তার পর পুনরুথ্থান ও হিসাব নিকাশের পর একজন মানুষের ভাগ্য নির্নীত হয় জান্নাত বা জাহান্নামে।এই দুনিয়ার জীবনই হলো আখেরাতের কর্মক্ষেত্র।একজন মু'মিনের প্রতিটি সময়ই তার জন্য মুল্যবান।মহাকালের সাথে দুনিয়ার এই সামান্য সময় অতি ক্ষুদ্র।দু'জন মানুষ অতি গরম ও আদ্রতায় কাজ করছে।একজন তার রবের আদেশ পালনে নামাজ আদায় করলো আর একজন করলো না।এ দু'জন মানুষ কি সমান? একজনের চক্ষু আছে আর একজনের নাই।এ দু'জন মানুষ কি সমান? কখনো সমান নয়।বহু মানুষ রয়েছে ৬০বা৮০ বছর পেরিয়ে গেছে মরে যেতে হবে স্মরনে আসছে না।আবার অনেকে বছরের পর বছর মক্কার আশে পাশে থাকছে হজটা করছে না।আবার অনেকে বলে হজ করলেতো আর হজ ধরে রাখতে পারবো না একটু দেরি করেই করি।এ রকম গাফেল মানুষ রয়েছে যাদের মৃত্যুর কোন ভাবনা নেই।
মওত এমন একটি বিষয় যে বিষয়ের অকাট্য ফায়সালা রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে।আল্লাহ পাকের স্বত্তা ছাড়া প্রত্যেক বস্তু ধংসশীল এবং বিচার ফায়সালার মালিক একমাত্র আল্লাহ।এই মওতের সময় নির্ধারিত হয়ে আছে যা সৃষ্টির কেউ জানে না।তবে প্রতিটি মানুষই জানে যে একদিন তাকে এ পানপাত্র থেকে পান করতে হবে।তাহলে কেন এ থেকে গাফেল হয়ে যায়? কারন হলো এই দুনিয়ার প্রাচুর্য ও সৌন্দর্য যা নগদ পাওয়া যায়।আখেরাতের ব্যাপারটি শুধু বিশ্বাসের।একজন মু'মিন মনে প্রানে বিশ্বাস করে তাকে আল্লাহর সাথে মোলাকাত করতে হবে।এই ভয় ও জবাবদীহি তাকে ভাল কাজ করতে সাহায্য করে।যারা অন্যায় ও অবিচারের সাথে জড়িত তাদের পরকালের কোন ভয় নেই আর নগদ কিছু তারা দেখতে পায় না সে কারনে তার মুল্যাবান সময়গুলোকে অবহেলা করতে থাকে।আর মুসলমানদের মধ্যে এই মানুষগুলো সবচেয়ে বেশী যারা তাদের সময় জ্গান ও কমিটমেন্ট রাখে না। কমিউনিটিতে কোন সভা বা সামাজিক দাওয়াত হলে দেখা যায় এর প্রভাব।স্বল্প সংখ্যক মানুষ আসে সময় মত আর অন্যরা জাগরিত হয় রাত আর ঐ সমস্ত মানুষের ৯৯ ভাগ মানুষ ফযরের নামাজে অংশ গ্রহন করে না।ভাল মানুষদের উচিত এ সব দাওয়াত বর্জন করা আর সেখানে গেলে এই অসংলগ্ন কাজের ব্যাপারে কথাগুলো পৌঁছে দিতে হবে।আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোন কাজ হয় না সেভাবে আল্লাহ কোন খারাপ বা কুফুরি কাজের আদেশ করেন না।আমাদের দেশের মানুষের আক্কিদায় এ ব্যাপারে ভ্রান্তি রয়েছে। তারা বলে আল্লাহর হুকুমে কোন গাছের পাতাও নড়ে না।এ সমস্ত কথা আক্কিদা বিরোধী কথা।সুতরাং আমাদের সঠিক আক্কিদা থাকতে হবে যে আল্লাহ ভাল কাজের আদেশ করেন আর খারাপ কাজের আদেশ করে না।কিন্তু আমরা যখন আমাদের বিবেকের দ্বারা তাড়িত হই তখন আল্লাহ আমাদের সেদিকে যাওয়ার ক্ষমতা দেন।এই দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ আমাদের স্বাধীন করে দিয়েছেন ও আখেরাতে আমাদের বিচারের ব্যাবস্হা রেখেছেন। সেজন্য আমরা ভাল করলেও তিনি ইচ্ছা করবেন আবার খারাপ করলেও তিনি ইচ্ছা করবেন। কোন ব্যাক্তির মওত হতে পারে না আল্লাহর অনুমতি ছাড়া এবং আল্লাহ লিখে রেখেছেন ও সময় নির্ধারন করেছেন।এই জন্য মানুষের জন্য তার সময়ের হিসাবটি অতি জরুরি।কারন কোন সময় মালাকুল মওত এসে যায় তার কোন নিশ্চয়তা নেই।মানুষের যেমন সময় নির্ধারিত হয়েছে তেমনি প্রত্যেক জাতিরও আল্লাহ সময় নির্ধারন করেছেন।পৃথিবীতে আদ, সামুদ,তুব্বার অধিবাসি,পারস্য,রোমান,মোগল সম্প্রদায় এরকম বহু জাতি এসেছিল তাদেরও নির্দিষ্ট একটি সময় ছিল এবং তারাও পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে গিয়েছে।সোভিয়েত ইউনিয়নে কমিউনিষ্টরা ৭০ বছরের মধ্যে ধংস হয়েছে।কোন জালেমও সমাজে চিরদিন জালেম থাকবে না তার একটি নির্দিষ্ট সময় আসবে ধংসের।কখন কার মওত হবে,কোন জাতি কবে ধংস হবে তার জ্গান একমাত্র আল্লাহর কাছে।গায়েবের চাবি একমাত্র আল্লাহর হাতে,কোন ব্যাক্তি জানে না কোথায় বা কোন সময়ে তার মওত হবে।মওত যখন কারো কাছে ঘনিয়ে আসে তখন বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন অবস্হার সৃষ্টি হয়।একে দু'ভাগে ভাগ করা যায়।ঈমানদার ও সৎকর্মশীল যারা আশা করা যায় তাদের ভাল মৃত্যু হবে।আর যারা কাফের,মুশরিক,মোনাপেক ,পাছেক,কবরপূজারি,কাবিরাগুনাহকারি,ফরয ওয়াজিব তরককারি তাদের গজবের দৃশ্য তারা অবলোকন করবে।এ সম্পর্কে নবী সা: এর ছহি হাদিসে অনেক কথা রয়েছে।বোখারি মুসলিমের একটি হাদিসে মা আয়শা রা: বর্ননা করেন, নবী সা: বলেন,যে ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎকে ভালবাসে, আল্লাহ ও তার সাথে সাক্ষাতের কামনা করেন আর যে ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎকে অপছন্দ করে আল্লাহ ও তার সাথে সাক্ষাৎকে ঘৃনা করেন।' আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা নেককার বান্দাহ হবে তাদের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে নেককার ফেরেস্তাদের আগমন হবে এবং তারা তাদের অভয় দান করবে যে তোমাদের কোন ভয় নেই বরং তোমাদের জন্য সুসংবাদ।এই সুসংবাদ যখন তারা শুনতে পায় তখন তাদের মৃত্যুর আগ্রহ বেড়ে যায়।এই সময় আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আগ্রহ বেড়ে যায় একজন মু'মিন বান্দাহর।পক্ষান্তরে একজন পাপি যে তওবা করেনি এবং তার কাছে মওতের ফেরেস্তা নেমে আসে তখন তাকে আজাবের সুসংবাদ দেয়া হয় ও বলে হে খবিস আত্মা বেরিয়ে আস।এই রকম শাসানিমুলক কথা যখন শুনবে তখন পালাতে শুরু করবে।এই মূহুর্ত সম্পর্কে নবী সা: বলছেন,বান্দাহর তওবা অতক্ষন পর্যন্ত কবুল হবে যতক্ষন সে মালাকুল মওতকে না দেখে থাকবে।যখনি মালাকুল মওতকে দেখে নিবে তার তওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে।আল্লাহও চান না এই সময় খবিস বান্দাহর তওবা কবুল করেন।সে কারনে আমরা দেখতে পাই,ফেরাউনের যখন শেষ সময় ঘনিয়ে আসলো আর সে ঈমান আনার চেষ্টা করলো তখন জিবরিল আমিন আল্লাহর আদেশে তার মুখে কাদা মাটি পুরে দিয়েছিল।একজন মানুষ জীবনের ৬০/৭০ বছর সময় পেল কিন্তু তওবা করার তার সময় হলো না কি করে সম্ভব এই নাফরমানের শেষ সময়ে ঈমান নিয়ে মরবে।প্রত্যকে মুমুর্ষু ব্যাক্তিই দুনিয়ায় ফিরে যাওয়ার আর্জি করবে কিন্তু ফিরিয়ে দেয়া হবে না। ঈমানের প্রথম শর্তই হলো গায়েবকে বিশ্বাস করা।অনেক মানুষ আছে মওতের আকাংখ্যা করে এ যায়েয নয়।এই রোগটি পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের বেশী। সামান্য কিছু এদিক সেদিক হলেই বলে আমার মরন আসে না কেন? রাসূল সা: একদিন তাঁর চাচা আব্বাছ রা;কে অসুস্থতার সময় দেখতে গেলেন।তখন আব্বাছ রা: মৃত্যু কামনা করছিলেন।রাসূল সা: বললেন,হে চাচা আপনি মৃত্যু কামনা করবেন না।আপনি যদি হায়াত পেয়ে যান তাহলে আপনি ভাল কাজ করবেন আর তা আপনার জন্য কল্যান বয়ে আনবে। সেজন্য যখন কেউ অসুস্হ হয় বেশী বেশী আল্লাহ কে স্মরন করা ও আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করাই সমীচিন।রাসূল সা: বলেছেন,তোমাদের কেউ যেন মওতের আকাংখ্যা না করে যে , আল্লাহ যদি মরে যেতাম।' এ আকাংখ্যাটি মানুষের জাগে রোগব্যাধির ক্ষেত্রে,বাব মা'র সাথে মনোমালিন্য হলে,স্বামি স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ হলে বা দায় দেনা থাকলে।আবার কেউ কেউ আছে বুড়ো কেউ বিছানাগত থাকলে বলে আল্লাহ তাকে নিয়ে যায় না কেন।এগুলো নি:সন্দেহে মুর্খ লোকদের কাজ।তবে আল্লাহর কাছে এই দোয়া করা যাবে,"আল্লাহ তুমি আমাকে জীবিত রাখ যতদিন আমার বেঁচে থাকা কল্যানকর হয়,আর আমাকে মৃত্যু দান কর যখন আমার জন্য মরে যাওয়াই ভাল হবে।' কাফের,মুশরিক ,মোনাপেক ও কবিরা গুনাহ কারিদের ব্যাপারে আল্লাহ সূরা সেজদায় বলেন,হে নবী! আপনি মানুষকে জানিয়ে দিন তোমাদের মরনের ফেরেস্তা মৃত্যু দিয়ে থাকেন।' ফেরেস্তাদের আল্লাহ যেভাবে আদেশ করেন সেভাবেই তারা কাজ করে থাকেন।সূরা আনয়ামের ৯৩ আয়াতে আর একটি মৃত্যুর দৃশ্যের কথা বর্ননা করেছেন,'আর তুমি যদি দেখতে পেতে যখন অন্যায়কারিরা মৃত্যু যন্ত্রনায় থাকবে আর ফেরেস্তারা তাদের হাত বাড়াবে," বের কর তোমাদের আত্মা" আর তোমাদের দেয়া হবে লান্চনা দায়ক শাস্তি যেহেতু তোমরা আল্লাহর বিরুদ্ধে বলে চলছিলে সীমা ছাড়িয়ে আর তোমরা তার আয়াত সমূহে অহংকার পোষন করতে।" আজকে মুসলিম সমাজে এমন মানুষ রয়েছে যারা আল্লাহর আয়াত সমুহকে নিজেদের মত ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করে নিজেদের ফায়দা হাসিল করছে।বিদাআতিরা বলে নবী সা: নুরের তৈরি আর আল্লাহ বলেন, হে নবী বলুন "আমি তোমাদের মতই মানুষ তবে পার্থক্য হলো আমার নিকট ওহি আসে।" আরো বলে নবী সা: জীবিত।এই সমস্ত আক্কিদা বিরোধীদের জন্য রেয়েছে আযাব।
কবর আযাব সম্পর্কে বারা ইবনে আযেব রা: একটি হাদিস বর্ননা করেন।রাসূল সা: বলেন,'মু'মিন বান্দাহ যখন আখেরাত মুখি হয় ও পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়,আকাশ থেকে অসংখ্য ফেরেস্তা নেমে আসে অত্যন্ত ফর্সা ও সাদা চেহারা নিয়ে মনে হয় যে সূর্যের মত।আর তারা সাথে করে জান্নাত থেকে রেশমের কাফন ও আতর সুগন্ধি নিয়ে আসে।তার পর মালাকুল মওত আসে ও তার মাথার কাছে বসে যায় ও বলে হে পবিত্র আত্মা আল্লাহর মাগফেরাতের দিকে বেরিয়ে আস।আর আত্মা সহজে বেরিয়ে আসে ও মালাকুল মওত সাথে সাথে অন্য ফেরেস্তাদের হাতে দিয়ে দেন ও তারা জান্নাতের কাপনে নিয়ে নেয় ও তা হলে সুগন্ধি বের হতে থাকে।রহমতের ফেরেস্তারা দ্রুত এই আত্মা নিয়ে আল্লাহর কাছে ছুটে যায়।প্রথম আকাশে যখন নিয়ে যায় তখন ফেরেস্তারা বলে এত সুগন্ধি কেন? তোমরা কি জান না অমুকের ছেলে আমুক তার ইন্তেকাল হয়েছে।স্বাগতম জানিয়ে আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং ইল্লিনে নেয়া হয়। আর কাফের বান্দাহ যখন পৃথিবি থেকে বিদায় নেয় অসংখ্য ফেরেস্তা আসে ও তাদের চেহারা বিকট আর তারা হাতে করে চট নিয়ে আসে।মালাকুল মওত তার মাথার কাছে এসে বসে ও বলে হে খবিস আত্মা আল্লাহর গজব ও অসন্তুষ্টির দিকে বেরিয়ে আস।আর আত্মা এদিক ওদিক ছুটা ছুটি করতে থাকে।মালাকুল মওত বের করে আযাবের ফেরেস্তাদের দিয়ে দেয়।তারা আকাশের দিকে নিয়ে যায় ও গন্ধ ছড়াতে থাকে।আকাশের ফেরেস্তা বলে এর জন্য দরজা খোলা হবে না।ফেরেস্তারা আকাশের দরজায় বিরক্ত হয়ে আছাড় দিয়ে ফেলে দেয় ও আত্মা সিজ্জিনে চলে যায়।এর সপক্ষে আল কুরআনে বলা হয়েছে তাদের জন্য দরজা খোলা হবে না ও তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।সূচের ছিদ্র দিয়ে যেমন উটের প্রবেশ কঠিন তেমনি পাপিদের জান্নাতে প্রবেশ করা কঠিন।জাহান্নামে যাওয়ার মুল কারন হলো নামাজ কায়েম না করা আর অধিকাংশ মুসলমান এখন বেনামাজি।নবী সা: বলেছেন,রোজ কেয়ামতে বেনামাজি উঠবে কারুন ,ফেরাউন,হামানের সাথে।'
আমরা যারা মুসলমান ঘরে জন্ম নিয়েছি তাদের জন্য এই দীন কায়েম করা সহজ।যার যতটুকু হালাল নেয়ামত রয়েছে তা দিয়ে জীবনকে আখেরাতের দিকে নিয়ে যাওয়া কর্তব্য।প্রতিটি সময়ে হালাল হারাম বেচে চলা।দুনিয়ার ব্যাপারে একজন পথিকের অবস্হান নেয়া।যততুকু হালাল রোজগার দরকার ও হালালভাবে অর্জিত যা আছে তা দিয়ে নিজেকে চালানো।বেশি বেশি পাওয়ার জন্য দুনিয়ার দিকে ঢুবে থাকা একটি অপরাধের কাজ।সততার জীবন অবলম্বন করে যদি আল্লাহ তাওফিক দেন তাহলে মানবজাতি উপকৃত হতে পারে এবং সেটা দোষনীয় নয়।তবে অধিকাংশ অভিজাত ও ধনবান ব্যাক্তিগনের জন্য আখেরাত যে কঠিন এর প্রমান রয়েছে আলকুরআন ও হাদিসে।কারন একজন গরীব যদি সঠিক ঈমান নিয়ে নামাজ ও রোজা কায়েম করে তাহলে তার জন্য জান্নাত পাওয়া সহজ।হজ ও যাকাতের পুরো বিষয়টিতে তারা ১০০% লাভবান হবে।আর একজন ধনীলোক তার জীবনের সময়গুলো ব্যায় হয় বিভিন্ন ধান্দাবাজিতে।তার আয় ব্যায়ের মধ্যে থাকে অসামন্জতা।তাকে হিসেবে দিতে হবে অনেক।সেজন্য একজন গরীব ধনী ব্যাক্তির ৫০০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে।আল্লাহ আমাদের তথা মুসলিম জাতিকে সঠিক জ্গান আহরন করার তাওফিক দান করুন।আমাদের আখেরাতের কথা স্মরন করার তাওফিক দিন।শির্ক ও বিদাআত থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দিন।মুসলিমদের প্রত্যেক কে প্রকৃত সূন্নাহর অনুসরনে আমল করার তাওফিক দিন।ইসলামের প্রচার প্রসার করার জন্য যে ধরনের দা-ঈ হওয়া আবশ্যক তার মর্যাদা বাড়িয়ে দিন।
বিষয়: বিবিধ
১৯৫১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন