ইসলামের প্রেক্ষিতে সন্ত্রাস ও জিহাদ - প্রতিটি মুসলমানের আলকুরআন ও হাদিসের আলোকে জানা আবশ্যক।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০১:১৮:১০ দুপুর

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

সমগ্র বিশ্বে অসংখ্য জাতি গোষ্ঠী রয়েছে।রয়েছে অসংখ্য মত ও দ্বিধাবিভক্তি।সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকে শয়তানি প্ররোচনায় ভাল মানুষও নিক্ষেপিত হয়েছে আস্তাকুঁড়ে।শৃংখলিত সমাজ বিশৃংখল আবার বিশৃংখল সমাজ ও দাঁড়াতে চেষ্টা করেছে।সভ্যতার শিখরে মানুষ উঠেতে চেষ্টা করলেও সেখানে জীবনের মুল চরিত্রের উপাদানগুলো বর্তমান না থাকায় হোঁছট খেয়ে পড়ে যেতে হয়েছে বহু জাতিকে।তারপরও মানুষের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।জ্গানীরা সর্বযুগে মানুষকে সুপথে আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।আবার নির্বোধরা সমাজকে অস্হির করার কলাকৌশল তৈরি করে পংকিলতা বৃদ্ধিতে পিছিয়ে থাকছে না।সেজন্য প্রতিটি সমাজে এই দুই শ্রেনীর বিপরীত মুখি মানুষের অবস্হান দেখা যায়।একশ্রেনী কল্যানের জন্য তাদের জীবন বিলিয়ে দিচ্ছে আর এক শ্রেনী অকল্যানের জন্য তাদের সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা করে চলছে।আখেরে কেউ লাভবান হবে জান্নাত প্রাপ্তির মাধ্যমে আবার কেউ জাহান্নামে নিক্ষেপিত হবে তাদের পাপের কারনে।

আজ পৃথিবীতে পাঁচ ভাগের একভাগ মুসলমান অর্থাৎ ২০% মুসলিম ছড়িয়ে আছে।কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো,ইসলাম এমন একটি ধর্ম যার সম্পর্কে রয়েছে মানুষের ভ্রান্ত ধারনা,ভ্রান্ত মতামত যা দিয়ে থাকে একধরনের ভ্রান্ত ইসলামের বা অন্যধর্মের অনুসারিরা।তার পরও এর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।আমরা যদি পরিসংখ্যান নেই তাহলে দেখবো যে পরিমান অন্য ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয় তার এক ভাগ পরিমান মুসলিমও অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হয় কিনা সন্দেহ আছে।এই সব ভ্রান্ত ধারনা জন্ম নিয়েছে বিশেষ করে ২০০১ সালের ১১ ই সেপ্টেম্বর থেকে।বর্তমানে মুসলিম অধ্যুষিত অন্চলগুলো বিশেষ করে মুসলিমদের প্রথম স্হানে রেখেছে সন্ত্রাস ও জিহাদের নামে কলংকিত করে। তাদের মধ্যে ১% এর এই সন্ত্রাস ও জিহাদ সম্পর্কে ধারনা আছে কিনা আমার জানা নেই।আর আমরা মুসলমানরা যারা ধর্ম প্রচার করি বা নাই করি তাদেরও বড় একটি অংশ আলকুরআন ও হাদিসে এই জিহাদের ব্যাখ্যা কি বা কোন পরিস্হিতিতে কখন জিহাদ করতে হবে তা না জেনেই আমাদের মতামত প্রকাশ করি বা মতমত দেই।যখন কোন অমুসলিম তার সামনে কোন মুসলমানকে দেখে তখনি তার মাথায় একটি চিন্তা আসে এই মানুষটি কি প্রকৃত মুসলমান না জংগি বা সন্ত্রাসি? আর একটি শব্দ মুসলমানকে কেন্দ্র করে অমুসলিমরা বা মুসলমানের দেশেও এক ধরনের মুসলমানরা বলে তাহোল "মৌলবাদি"। মৌলবাদি হলো এমন এক ব্যাক্তি যিনি বিশেষ কোন বিষয়ের মৌলিকত্বকে কঠোরভাবে মেনে চলেন।উদাহরন স্বরুপ-যদি কোন ডাক্তারকে ভাল ডাক্তার হতে হয় তবে তাকে অবশ্যই চকিৎসাশাস্ত্রের মৌলিকত্ব সম্পর্কে ভালভাবে জানতে হবে।আর যদি সে মৌলবাদি না হয় তাহলে ভাল ডাক্তার হতে পারবে না।যিনি একজন বিজ্গানী হতে চান তিনি বিজ্গানের মৌলিক বিষয়ে পান্ডিত্ব অর্জন না করলে তিনি ভাল বিজ্গানী হতে পারবেন না।তেমনি একজন গনিত বা পদার্থবিদ হতে হলে তাকে একজন মৌলবাদি হতে হবে।সকল মৌলবাদিদের একভাবে বিচার করা যাবে না কারন কেউ ভাল আবার কেউ আছেন মন্দ।সেজন্য মৌলবাদের উপর ভিত্তি করে বিচারের মানদন্ড নিরুপন করতে হবে কে ভাল আর কে মন্দ।একজন ব্যাক্তি প্রকৃতপক্ষে যে একজন ডাকাত যার পেশা হচ্ছে চুরি ডাকাতি করা।সে ব্যাক্তি সমাজের জন্য এক অভিশাপ।সে কখনো ভাল মানুষ হতে পারে না।অন্যদিকে যদি আপনি একজন প্রকৃত ডাক্তারকে জানেন যার কাজ হচ্ছে মানুষের জীবন রক্ষা করা।তাহলে সে সমাজের জন্য একজন উপকারি ও ভাল মানুষ।এই জন্য আমাদের মৌলবাদি কথাটা শুনলে বিবেচনায় রাখতে এদের মধ্যে আছে ভাল ও খারাপ মানুষ। একজন মুলমানকে যদি কেউ মৌলবাদি বলে তাহলে তারতো রেগে যাওয়ার দরকার নেই।কারন একজন মুসলমান তার ধর্মের মুল সব বিষয় মেনে চলে আল্লাহর ইবাদত করে।ইসলামে এমন একটি মৌলিকত্বও নেই যা কখনো মানবতাবিরোধী হতে পারে।এই পৃথিবীতে একটি মানুষও পাওয়া যাবে না যে প্রমান করতে পারবে ইসলামের মৌলকত্ব মানবতাবিরোধী।এমন কিছু মানুষ আছে যারা মনে করে ইসলামের শিক্ষা,কুরআন ও হাদিসের শিক্ষা মানবতা বিরোধী।আমরা যদি এর প্রাসংগিক ব্যাখ্যা করতে পারি মানুষের কাছে তাহলে একটি লোকও পাব না যে বলবে ইসলামের মৌলিকত্বে মানবতা বিরোধী কিছু আছে।এই কারনে আমরা মুসলমানরা গর্ব করে বলতে পারি যে আমরা সবাই মৌলবাদি মুসলমান।এভাবে অন্যান্য ধর্ম যারা পালন করে তাদেরও সেই ধর্মের ভাল মানুষ হতে হলে তাদের ধর্মে মৌলবাদি হতে হবে।তা না হলে তারা তাদের ধর্মে পরিপূর্ন ধর্ম পালন কারি নয়।

মৌলবাদ শব্দটি প্রথম আবিস্কারের পর একদল আমেরিকান খৃষ্টানের পরিচয়ের জন্য ব্যাবহৃত হতো যাদের বলা হতো প্রটোষ্টান খৃষ্টান আর এটা ছিল বিংশ শতাব্দির শুরুর দিকে কারন তারা গীর্জার প্রতি আপত্তি জানায়।পূর্বে খৃষ্টান গীর্জায় বিশ্বাস ছিল যে,বাইবেলের আদেশ আল্লাহ প্রদত্ত কিন্ত প্রটোষ্টান খৃষ্টানরা প্রতিবাদ করে এবং বলে যে শুধু বাইবেলের আদেশই নয়,আদেশ, শব্দ, বর্ন সবই আল্লাহ প্রদত্ত।যদি কোন মৌলবাদি প্রমান করতে পারে যে বাইবেলের শব্দগুলো আল্লাহ প্রদত্ত সেই মৌলবাদিদের পদক্ষেপ সফল পদক্ষেপ।আর যদি কেই প্রমান করতে পারে বাইবেলের শব্দগুলো আল্লাহ প্রদত্ত নয় সেটা ভাল পদক্ষেপ নয়।আমরা অক্ক্সফোর্ড অভিধানটির দিকে তাকালে দেখতে পাই যে,মৌলবাদি হচ্ছে এমন একজন ব্যাক্তি যিনি যে কোন ধর্মের সত্যতা নিয়ে কঠোর ভাবে সাধনা করে থাকেন।আবার এর নতুন সংস্করনে মৌলবাদির ব্যাখ্যা হলো সেই মৌলবাদি ব্যাক্তি ধর্মের সত্যতা নিয়ে কঠোর ভাবে সাধনা করে থাকেন বিশেষ করে ইসলাম।যে মুহূর্তে আমরা মৌলবাদি শব্দটি শুনি ঠিক তখনি একজন মুসলমানের কথা চিন্তা করি আর বলি এই মুসলমানই সন্ত্রাসী।আমাদের মনে করতে কি অসুবিধা হয় যে আমরা মুসলমানরা এক একজন সন্ত্রাসী? অনেক মুসলমান একথা শুনে হতবিহ্বল ও অবাক হতে পারে যাদের সাথে আলকুরআনের সম্পর্ক নেই। এ কি মেনে নেয়া যায় যে প্রত্যেক মুসলমান সন্ত্রাসি? আমাদের সন্ত্রাস ,জিহাদ নামক এই শব্দগুলো সম্পর্কে গভীর ভাবে জানা উচিত।মুসলমানরা আজকাল সওয়াবের জন্য কুরআন পড়ে।প্রতিটি আয়াত ও শব্দের ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করে না।কেউ বা শুনে শুনে মুসলমান,কেউ কোন দলে ভিড়ে মুসলমান,কেউ বা বাপ দাদার আনীত ইসলামে দীক্ষিত মুসলমান।সন্ত্রাস শব্দটির অর্থ হলো যে অন্যায় ভাবে সমাজে মানুষকে ভয় দেখায়।একজন র্যা ব বা পুলিশ কি হতে পারে না ডাকাতের জন্য একজন সন্ত্রাসী? এই ধারনার ভিত্তিতে একজন ডাকাতের কাছে একজন মৌলবাদি মুসলমান সন্ত্রাসী কারন একজন ডাকাত একজন মৌলবাদি মুসলমানকে দেখে ভয় পায়,একজন ধর্ষক একজন মৌলবাদি মুসলমানকে দেখে ভয় পায়,একজন ঘুষখোর ও সুদখোর একজন মৌলবাদি মুসলমানকে দেখে ভয় পায় এই ভাবে প্রতিটি অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে একজন মৌলবাদি মুসলমানকে সন্ত্রাসী হওয়া উচিত।আমাদের সমাজ দেখলে কি তাই মনে হয়? মুসলামনদের অনেকের যে চরিত্র থাকা দরকার ছিল তা বর্তমান নেই।কোথায় না হচ্ছে অসামাজিক কাজ।ঘরে,বাইরে,অফিস আদালতে,বিপনীতে,রাস্তাঘাটে,পার্কে,রিসর্টে এমন কোন যায়গা নেই যেখানে অসামাজিক কাজ নেই।তাহলে যে মুসলমানকে দেখে আসল সন্ত্রাসিদের পালানোর কথা তারা কোন না কোনভাবে আজ সন্ত্রাসী আর এর ভার বহন করতে হচ্ছে সমাজের ভাল মুসলমানদের।বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে একজন ব্যাক্তিকে দুটি বিভিন্ন ধরনের কর্মকান্ডে অংশগ্রহন করতে হয়।উদাহরন স্বরুপ বলা যায় ৬৭ বছর পূর্বে যখন আমরা বৃটিশদের দ্বারা শাসিত ছিলাম,যখন তারা এই ভারত উপমহাদেশকে শাসন করতো তখন কিছু মানুষ আমাদের স্বাধীনতার জন্য লড়েছিল।এই কতিপয় মানুষগুলো বৃটিশ সরকারের কাছে সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত ছিল।কিন্তু ঐ সকল ব্যাক্তিই আবার এই উপমহাদেশের মানুষের কাছে ছিল একজন দেশপ্রেমিক এবং মুক্তি যোদ্ধা হিসেবে।একই ব্যাক্তি এবং তাদের একই কর্মকান্ড কিন্তু পরিচয় হচ্ছে দুটি।একদলের কাছে তাদের পরিচয় হলো সন্ত্রাসী আর আর একদলের কাছে তারা দেশপ্রেমিক।সুতরাং কোন ব্যাক্তিকে কোন লেভেলে ফেলতে হলে খুঁজে বের করতে হবে সে ব্যাক্তিকে ঐ লেভেলে ফেলার কারন কি?যদি আমরা একমত হই বৃটিশ সরকারের সাথে যে, বৃটিশদের ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করা উচিত তাহলে ঐ ব্যাক্তিদের সন্ত্রাসী কেউ বলতেই পারে।কিন্তু আমরা যদি ভারতউপমহাদেশের মানুষের সাথে একমত পোষন করি যে, বৃটিশরা ভারতে এসেছিল শুধু ব্যাবসা বানিজ্য করতে,শাসন করতে নয় তাহলে ঐ ব্যাক্তিদের আমরা বলবো মুক্তি যোদ্ধা বা দেশপ্রেমিক।এখান থেকে প্রতীয়মান হয় একই ব্যাক্তি একই কর্মকান্ড আর লেভেল হলো দুটি। এরকম আরো উদাহরন দেয়া যায় যেমন - নেলসন মেন্ডেলা যিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন নতুন স্বাধীন দক্ষিন আফ্রিকার।এর আগে যে সরকার ছিল তারা ছিল শ্বেতাংগ এবং নেলসন মেন্ডেলাকে আখ্যায়িত করেছিল একজন সন্ত্রাসী হিসেবে।আর আফ্রিকানদের কাছে ঐ নেসলসন মেন্ডেলা ই একজন বীর হিসেবে পরিচিত।একই ব্যাক্তিকে শ্বেতাংগরা বললো সন্ত্রাসী আর কৃষ্নাংগরা বললো বীর।একই ব্যাক্তি একই কর্মকান্ড আর পরিচয় হলো দুটি।সূরা হুজরাতের ১৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,ওহে মানবজাতি! নি:সন্দেহে আমরা তোমাদের সৃষ্টি করেছি পুরুষ ও নারি থেকে।আর আমরা তোমাদের বানিয়েছি নানান জাতি ও গোত্র যেন তোমরা চিনতে পার।নিশ্চই আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে সম্মানিত সেইজন যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ধর্মভীরু।' আল্লাহ মানুষের বিচার করেন আল্লাহকে ভয় করার উপর ভিত্তি করে।আমরা যদি কুরআনের এই আয়াতের সাথে একমত হই এবং রাসূল সা: বিদায় হজে বলেছেন,অনারবরা আরবদের উপর শ্রেষ্ঠ নয় আবার আরবরাও অনারবদের উপর শ্রেষ্ঠ নয়।সেভাবে শ্বেতাংগদের উপর কৃষ্নাংগরা শ্রেষ্ঠ নয় আবার কৃষ্নাংগদের উওরও শ্বেতাংগরা শ্রেষ্ঠ নয় একমাত্র নৈতিক মুল্যবোধ ছাড়া।আমরা যদি এখানে আলকুরানের আয়াতকে অনুসরন করি তাহলে দেখবো নেসলসন মেন্ডেলা তার অধিকারের জন্য লড়েছেন। কোন ব্যাক্তি যদি আর এক ব্যাক্তিকে আর এক স্তরে ভাগ করতে চায় তবে তাকে অবশ্যই এর যথাযথ কারন দেখাতে হবে।

ইসলামে আলোচিত ভুল ধারনাগুলোর মধ্যে আর একটি আলোচিত বিষয় হলো জিহাদ।জিহাদের অর্থ সম্বন্ধে শুধুমাত্র অমুসলমানদের মাঝে নয় এমনকি মুসলমানদের মাঝেও ভুল বুঝাবুঝি রয়েছে।বেশিরভাগ মানুষই মুসলমান হোক বা অমুসলমান হোক তারা মনে করে যে,কোন মুসলমান যে কোন যুদ্ধ করে বা যে কোন কারনেই করে না কেন,সেটা ব্যাক্তিগত ব্যাপারে হতে পারে,দেশের জন্য হতে পারে,ভাষাগত কারনে হতে পারে,বংশগত কারনে হতে পারে, দলীয় কারনে হতে পারে মোটকথা যে কোন কারনে যুদ্ধ করলেই তা হলো জিহাদ।এই জিহাদ শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ 'যাহদা'থেকে।এর অর্থ হলো চেষ্টা করা,সাধনা করা,সংগ্রাম করা,পরিশ্রম করা, যার মানে হলো উদ্যমী হওয়া।ইসলামিক অভিধানে জিহাদ শব্দটি কারো অসৎ প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করা।সমাজের জন্য চেষ্টা করা ও উন্নতি করা।এর অর্থ যুদ্ধক্ষেত্রে অন্যায় আত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা।উদাহরন স্বরুপ যদি কোন ছাত্র চেষ্টা করে পরীক্ষায় উত্তীর্ন হওয়ার জন্য তাহলে তাকে আরবি শব্দনুযায়ী বলতে হবে সে জিহাদ করছে বা চেষ্টা করছে।যদি কোন চাকুরিজীবি চেষ্টা করে তার মনিবকে খুশি করার জন্য-সেটা ভাল বা মন্দ কাজ দিয়েই করুক সেটাই হলো জিহাদ বা চেষ্টা।কোন রাজনীতিবিদ যদি কঠোরভাবে চেষ্টা করে ভোট পাওয়ার জন্য সেটা ভাল ভাবেই হোক আর খারাপ ভাবেই হোক সেটাই তার জন্য জিহাদ।জিহাদ সম্পর্কে আরও একটি ভুল ধারনা মানুষদের মধ্যে আছে, যে কোন মানুষই ভাবে, কেবলমাত্র মুসলমানরাই জিহাদ করে থাকে।আল্লাহ পাক আল কুরআনে বলেছেন অমুসলিমরাও জিহাদ করে।সূরা লোকমানের ১৪ ও ১৫ আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন,আমি মানবজাতিকে তার পিতামাতার সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছি,তার মাতা তাকে গর্ভধারন করেছিল কষ্টের পর কষ্ট করে।' কিন্তু যদি তারা চেষ্টা করে যেন তুমি তাদের সাথে অংশী দাঁড় করাও যে সম্বন্ধে তোমার কাছে কোন জ্গান নেই তাহলে তাদের উভয়ের আজ্গা পালন করোনা।' একই কথা উল্লেখ করা হয়েছে সূরা আনকাবুতের ৮নং আয়াতে যেন পিতামাতা যদি ছাপ প্রয়োগ করে ,চেষ্টা বা জিহাদ করে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করার জন্য তাহলে তাদের প্রত্যাক্ষান করবে কিন্তু তাদের প্রতি পার্থিব সব ব্যাপারে সহানুভূতিশীল থাকতে হবে।সূরা আন নিসার ৭৬ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে,যারা ঈমান এনেছে তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর পথে আর যারা অবিশ্বাস পোষন করে তারা তাগুতের পথে যুদ্ধ করে।'অতএব শয়তানের বন্ধুদের সাথে যুদ্ধ কর।' তাহলে আমরা বুঝলাম জিহাদ একটি আরবি শব্দ যার অর্থ হলো চেষ্টা সাধনা করা। বিশ্বাসীরা যদি উপযুক্ত কারনে আল্লহর পথে সংগ্রাম করে তাকে বলা হয় আল্লাহর পথে জিহাদ।আর খারাপ লোকেরা তারা সংগ্রাম করে শয়তানের পথে আর তাদের জিহাদ হলো শয়তানের পথে।জিহাদ ভালর জন্য আবার জীহাদ হয় খারাপের জন্য।আরও একটি ভুল ধারনা মানুষ করে,জিহাদের অর্থ হলো পবিত্র যুদ্ধ।আলকুরআনে পবিত্র যুদ্ধ বলতে কোন শব্দ নেই এমনকি একটি ছহি হাদিসেও রাসূল সা: বলেন নি।আরবি অনুবাদ করলে 'হলি ওয়ার' শব্দটির অর্থ হলো পবিত্র যুদ্ধ।এই শব্দটি কোথায়ও উল্লেখ নেই আলকুরআন ও হাদিসে।প্রথম এই শব্দটি ব্যাবহার করেছিল ওরিয়েন্টালিষ্টরা যারা ইসলামের উপর বই লিখতে শুরু করেছিল।দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেক মুসলমান পন্ডিতও এর অনুবাদ করেন পবিত্র যুদ্ধ বলে।যদি ইসলামের কোন পন্ডিত কেউ একজন ভুল করে ইসলামের কোন কিছুর ব্যাখ্যা দেয় তাহলে কি মেনে নিতে হবে? আজকের ইসলামের অনুসারিদের একটি বিরাট অংশ বিভ্রান্ত হয়েছে তাদের দলের ও দলের মুরুব্বিদের দ্বারা।তারা মুল আলকুরআন ও হাদিসকে ছেড়ে দিয়ে অনুসরন করে তাদের নেতা ও মুরুব্বিদের কথা ও কাজকে,যাদের অনেকের নেই ইসলামি আক্কিদা এবং তারা অনুসরন করে শয়তানের দেখানো পথকে।ইসলামের মৌলিক জ্গানহীন তাদের কেউ এটা করেছিল এইজন্য যে 'হলি ওয়ার' হলো একটি কাছাকাছি শব্দ এবং তা একটি ভুল তথ্য মুসলমানদের জন্য।সুতরাং অন্ধভাবে কোন কিছু কোন মুসলমান মেনে নিতে পারে না।যে শব্দটির উল্লেখ আছে আলকুরআনে তা হলো 'যুদ্ধ' যার আরবি হলো 'ক্কিতাল' এবং অর্থ হলো হত্যা করা।যুদ্ধ দু'প্রকার-ভালর জন্য যুদ্ধ ও খারাপের জন্য যুদ্ধ।তাহলে জিহাদ কোন পবিত্র যুদ্ধ নয়।কিতাল ফি সাবীল্লাহ হলো আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা,কিতাল ফি শায়াতিন হলো শয়তানের পথে যুদ্ধ করা।জিহাদ এই শব্দটি আলকুরআনে এসেছে অনেক সূরায় ও নির্ভরযোগ্য অনেক হাদিসে বিক্ষিপ্তভাবে।

আমরা যখন আলকুরআন পাঠ করি দেখবো সূরা হজের ৭৮ আয়াতে বলা হয়েছে,আল্লাহর পথে জিহাদ করো যেভাবে তার পথে জিহাদ করা কর্তব্য।' সূরা তওবার ২০ নং আয়াতে বলা হয়েছে,'যারা ঈমান এনেছে ও হিযরত করেছে আর আল্লাহর পথে তাদের ধন দৌলত ও তাদের জানপ্রান দিয়ে সংগ্রাম করেছে তারা আল্লাহর কাছে মর্যাদায় উন্নততর।' একই কথা বলেছেন রাসূল সা: ছহি বোখারির চতুর্থ খন্ডে ৪৬ নং হাদিসে,'একজন মুজাহিদ চেষ্টা করে আল্লাহর পথে আর আল্লাহ নিজেই জানেন কে প্রানপন চেষ্টা করে আল্লাহর পথে।' সূরা আনকাবুতের ৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,যে কেউ জিহাদ করে,সে তাহলে সংগ্রাম করে তার নিজেরই জন্য।' কোন মানুষ চেষ্টা সাধনা করে একমাত্র তার জন্য।আল্লাহ স্বয়ংসম্পুর্ন তিনি মানুষের মুখাপেক্ষি নন বরং সমস্ত সৃষ্টি তাঁর মুখাপেক্ষি।সূরা তওবার ২৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,যদি তোমাদের পিতারা,তোমাদের পুত্ররা,তোমাদের ভাইয়েরা,তোমাদের পরিবাররা,তোমাদের আত্মীয় স্বজন,তোমাদের মাল আসবাব পত্র যা তোমরা অর্জন করেছ,আর ব্যাবসা বানিজ্য যার অচলাবস্হা তোমরা আশংকা কর,আর বাড়িঘর যা তোমরা ভালবাস-তোমাদের কাছে আল্লাহ ,তার রাসূলের ও তার পথে সংগ্রামের চেয়ে অধিকতর প্রিয় হয় তবে অপেক্ষা কর যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিয়ে আসেন তাঁর আদেশ এবং আল্লাহ পাছেক লোকদের পথ দেখান না।' ছহি বোখারির চতুর্থ খন্ডের ২৭৮৪ তে রাসূল সা: বলেছেন,'হযরত আয়শা রা: জিজ্গেস করলেন,আমাদের কি জিহাদে যাওয়া উচিত নয়? রাসূল সা: বললেন তোমাদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ একটি নির্ভুল হজ।' ছহি বোখারির ৫৭৯২ নং হাদিসে রাসূল সা: উল্লেখ করা হয়েছে,একজন লোক রাসূল সা: এর কাছে আসলো ও বললো আমার কি জিহাদে যাওয়া উচিত? রাসূল সা: জিজ্গেস করলেন তোমার কি বাবা মা আছেন? লোকটি বললো আছে।রাসূল সা: বললেন,তোমার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ হলো তোমার বাবা মা'র সেবা করা।' সুনান নিসাইতে হাদিস নং ৪২০৯ এ এক লোক রাসূল সা: কে জিজ্গেস করলো,কোন জিহাদটি সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ।তিনি বললেন,সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ হলো,সব সময় সত্য কথা বলতে হবে অত্যাচারি শাসকের বিরুদ্ধে।' এই হাদিস গুলোতে দেখা যায় সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ ক্ষেত্র বিশেষে পার্থক্য হয়েছে।ছহি ইবনে হাব্বানের ৪৬৮৬ তে রাসূল সা: বলেছেন,' একজন মুজাহিদ যে চেষ্টা করে নিজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে একমাত্র আল্লাহর কারনে,আর একজন মুহাজির যে দেশ ত্যাগ করে মন্দ থেকে ভালর দিকে।' এই জিহাদকে বিভিন্ন প্রসংগে ও পরিস্হিতির উপর নির্ভর করে ব্যাবহার করা হয়েছে।জিহাদ সম্পর্কে ধারনা পাওয়ার জন্য আলকুরআন ও ছহি হাদিস পড়তে হবে যার সাথে মানুষের সম্পর্ক নেই।শুধু ভাষা ভাষা জ্গান দিয়ে জিহাদকে বুঝা যাবে না।সূরা বক্কারার ২০৮ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন,ওহে যারা ঈমান এনেছ! সম্পুর্ন রুপে আত্মসমর্পন কর।আর শয়তানের পদচিহৃ অনুসরন করো না।নি:সন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শক্রু।' আলকুরআনে অনেক যায়গায় আল্লাহ বলেছেন শয়তানকে অনুসরন করো না।কিন্তু এখানে বলেছেন শয়তানের দেখানো পথ অনুসরন করোনা।শয়তান আর শয়তানের দেখানো পথের কোন পার্থক্য আছে কি? কারো যদি সামান্যতম ঈমান থাকে ও যদি কোন যুবক কোন যুবতিকে বলে আস রাতে আমরা একসাথে থাকি তাহলে বলবে না এটা কোনক্রমেই সম্ভব নয় কারন এটা গুনাহের কাজ। কিন্তু একই ব্যাক্তি যার বিশ্বাস আছে ও কোন যুবতীর ফোন আসে তাহলে সে বলবে কোন ক্ষতি নেই যুবতীর সাথে কথা বললে তাই সে বার বার কথা বলতে থাকলো।কিছুদিন পর সেই মেয়েটি বললো চলো আমরা একসাথে পার্কে ঘুরে আসি বা রেস্টুরেন্টে লান্চ করে আসি এবং তাই করলো।এর কিছুদিন পর তারা রাত কাটাতে পারে একটি হোটেলে।এটাকেই বলে শয়তানের পথ।শয়তান সরাসরি কোন খারাপ কাজ করতে বলবেনা,ধীরে ধীরে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করবে ।যার মধ্যে সঠিক ঈমান রয়েছে এবং শয়তান আসলেই সে বুঝতে পারবে এবং তখনি তাকে প্রত্যাখ্যান করবে।আর যদি মনে করে শুধু একটি মেয়ের সাথে কথা বললে কি সমস্যা? শুধু একটু ঘুরলে কি সমস্যা? শুধু একটি লান্চ করা কি সমস্যা? শুধু একটি রাত হোটেলে কাটানোতে সমস্যা কি? এভাবে শয়তান মানুষকে খারাপের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।তাই আল্লাহ আলকুরআনে পথ নির্দেশ দিয়েছেন,ওহে মুমিন গন ইসলাম গ্রহন কর অন্তর দিয়ে এবং শয়তানের পথ অনুসরন করোনা কারন সে একটি ঘোষিত শক্রু।একটি সর্বশ্রেষ্ঠ সংগ্রাম হলো সত্যের বানি তাদের কাছে পৌঁছানো যারা জানে না।একটি জিহাদ হলো ইসলামের দাওয়াত সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছে দেয়া।সূরা আলইমরানের ১১০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,ওহে মুসলমনারা তোমরা সমগ্র মানবজাতির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।তোমরা ন্যায়ের পথে নির্দেশ দাও ও অন্যায় থেকে নিষেধ কর ও আল্লাহতে বিশ্বাস কর।' মুসলমানের কাজই হলো সে নিজে ভাল কাজ করবে এবং অন্যকে সে ভাল কাজটি করার জন্য প্ররোচিত করবে।আর খারাপ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখবে।সূরা ইসরার ৮১ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,'সত্য এসে গেছে আর মিথ্যা অন্তর্ধান হয়েছে।নি:সন্দেহে মিথ্যাতো সদা অন্তর্ধানশীল।' প্রত্যেক মানুষের কাজ সত্যটা পৌঁছে দেয়া তাদের কাছে যারা এটা সম্পর্কে কিছুই জানে না।এই শর্তটি পূরন না করা হলে কিভাবে জান্নাতে প্রবেশ সম্ভব?

আলকুরআনে ছোট্ট একটি সূরা যার নাম হলো সূরা আল আসর সেখানে আল্লাহ কিছু শর্তের কথা বলেছেন,'ভাব বিকেল বেলার কথা।নি:সন্দেহে মানুষ লোকশানে পড়েছে।তারা ব্যাতীত যারা ঈমান এনেছে ও সৎ কাজ করেছে,পরস্পরকে সত্য অবলম্বনের জন্য মন্ত্রনা দিয়েছে এবং পরস্পরকে অধ্যবসায় অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে।' শুধু মাত্র বিশ্বাস কাউকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারে না।বিশ্বাসের সাথে সাথে মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দিতে হবে ও আসৎ কাজে বাধা দিতে হবে ক্ষমতানুসারে,মানুষকে ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের পরামর্শ দিতে হবে।আজকে আমরা আমাদের মেধা দিয়ে বিচার করলে দেখতে পাই আন্তর্জাতিক মিডিয়া, হোক সেটা টিভি ছেনেল,হোক সেটা নিউজ প্রিন্ট ,হোক সেটা কোন মেগাযিন এসব কিছুতে ইসলামকে নিয়ে নিন্দার ঝড় তুলছে।ইন্টারনেটে ইউটিউবেও ইসলাম সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।যে সমস্ত হক্কানি আলেম শির্ক ও বিদাআতের বিরুদ্ধে কথা বলছেন তাদের উল্টো সমালোচনা করা হচ্ছে।যে কোন দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ ধর্মপ্রান ব্যাক্তিরা অন্য কোন ধর্মের বিরুদ্ধে নয়।যারা সন্ত্রাসী তারা ছোট্ট একটি গোষ্ঠী।তারা নিজেদের সুবিধার জন্য ইসলামের নিন্দা করে।বিশেষ করে যারা ক্ষমতায় যেতে চায় তাদের মধ্যে এ প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়।এরাই এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে লালন পালন করে।এই হাতে গোনা ক'টা লোকই মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রন করে থাকে।একবার টাইম মেগাযিনে একটা আর্টিকেল এসেছিল এপ্রিল মাসের ১৬ তারিখ ১৯৭৯ সালে।তাতে লেখা ছিল ৬০ হাজারেরও বেশী লেখা হয়েছে ইসলামের বিপক্ষে মাত্র দেড়শ বছরের মধ্যে।হিসাব করলে দেখা যায় প্রতিদিন ইসলামের বিরুদ্ধে লিখা হয়েছে একটির বেশী বই।মিডিয়া আর রানীতিবিদরা এই সমস্যার জন্য বিশেষভাবে দায়ি।কারন সন্ত্রসের যতগুলো ঘটনা ঘটে তা কোন না কোন ভাবে রাজনীতিকে কেন্দ্র করে আর মিডিয়ার মালিক এই রাজনীতিবিদরা বা তাদের অতি কাছের লোকজন।যাদের আমরা সমাজের এলিট ও বিজ্গজন বলে দাবি করি তারা সবাই বিভক্ত।তারা কেউ সরকারের সাথে আবার কেউ বিরোধী দলে।এখানে যে ভাল মানুষগুলো রয়েছেন তাদের সংখ্যা খুবই নগন্য।কেন বিশেষ ভাবে মুসলমানদের টার্গেট করছে মিডিয়া।যদি কোন মুসলিম মহিলা হিজাব পরে তাহলে দোষী হয় আবার যারা গীর্যার মহিলা তাদের পুরো শরীর ঢাকা থাকে শুধু মুখ আর হাতের কব্জি খোলা থাকে।এখানে পার্থক্য কোথায়? যদি কোন মুসলমান দাঁড়ি রাখেন তার মানে হলো সে সন্ত্রাসী।কিন্তু শিখরা বা হিন্দুদের ঠাকুররা যখন দাঁড়ি রাখে তখন কোন সমস্যা নেই।মুসলমানরা যখন ওয়েষ্টে যায় ও তাদের দাঁড়ি বা মাথায় টুপি দেখে তখন তাদের অনেক রকম চেক করা হয় কারন মুখে দাঁড়ি আছে আর মাথায় টুপি আছে।এই দাঁড়ি বা টুপি কি কোন ক্ষতি করতে পারে? কেউ যদি কোন অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তাকে এরেষ্ট করতে পারে,কাউকে সন্দেহ হলে প্রশ্ন করতে পারে কিন্তু এই দাঁড়ি বা টুপি ওয়ালা মানুষ দেখলে ভীত কেন? এই দাঁড়ি বা টুপি একটা মাছিরও ক্ষতি করতে পারে না।আমরা যদি বেশীর ভাগ দার্মিক লোক বা উপাসনালয়ের প্রধানদের দেখি তাদের প্রত্যেকের দাঁড়ি আছে।যিশু খৃষ্ট বা ঈসা আ: যিনি ইসলাম ধর্মেরও নবী আবার অনেক খৃষ্টানরাও মনে করে তিনিই তাদের সৃষ্টি কর্তা-তারও দাঁড়ি ছিল।যত সাধু সন্যাসি দেখা যায় তাদেরও দাঁড়ি আছে কিন্তু তাদের সন্ত্রাসী মনে করা হয় না কিন্তু কোন মুসলমান দেখলেই তাকে সন্দেহ করা হয়।আসলে বাস্তবে তেমন কোন সমস্যা নেই,এটা হলো মিডিয়ার এক ধরনের প্রতারনা।আমাদের মুসলমানদের বড় সমস্যা হলো মিডিয়ার এই প্রতারনা আমরা মানুষকে পৌঁছে দিতে পারছিনা।মুসলমানদের নিজেদের তেমন কোন মিডিয়া নেই।একদিকে তারা বিভক্ত অন্যদিকে তারা ব্যাক্তিগতভাবে বুর্জোয়াদের অনুসারি।নিজেরা নিজেদের দেশের সম্পদ পাছার করে কাফের মুশরিকদের দেশে আবাস করে পরোক্ষভাবে তাদের সাহায্য করছে।ছুটির সময়ে এলে ছুটি ভোগ করছে তাদের দেশে। নিজেদের অর্জিত টাকা খরচ করছে তাদের দেশে যার ফলে তারা ফুলে ফেঁফে উঠছে।৬৭ বছর ধরে ফিলিস্তিনকে ইসরাইল রক্তাক্ত করছে তাতে মুসলমানদের কোন ক্ষতি নেই।অথচ মুসলমানরা ইসরাইলিদের কোন ক্ষতি করেনি।ঘটনাটা ছিল এমন যে একজন মেহমান আসলো ফিলিস্তিনির ঘরে।তাকে থাকতে দেয়া হলো,ভালভাবে আপ্যায়ন করা হলো আর কিছুদিন পরই সে মেহমান ঘরের মানুষদের বের করে দিয়ে বললো এরা সন্ত্রাসী।আর এভাবেই ফিলিস্তিনিরা হারাতে থাকলো তাদের আবাস। আলকুরআনের একটি বিখ্যাত আয়াত যেখানে সমালোচকরা বলছে যদি কোন অমুসলিমকে দেখ তাকে মেরে ফেল।ইন্ডিয়ার একজন বিখ্যাত সমালোচক যার নাম অরুন সূরি তিনি একটি বই লিখেছেন,A world of Fatwa'.তিনি সূরা আত তওবার ৫ নং আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন,যদি কোন কাফেরের সাথে দেখা হয়(হিন্দু) তাকে মেরে ফেল।তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখ।' যদি সাধারন নীরিহ কোন হিন্দু এ তথ্যটি পড়ে তখনি তার মুসলিম সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া হবে ও সে ইসলামের বিরুদ্ধে চলে যাবে।সমস্যা হলো পৃথিববিতে কিছু হাতে গোনা লোক তাদের নিজেদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য মুসলমানদের বিরুদ্ধে এসব প্রচারনা চালায়।যিনি জ্গানী ও ইসলামের একজন বিশেষজ্গ ও যিনি সুরা তওবার প্রথম থেকে আয়াতগুলো পড়বেন শানে নজুল সহ তিনি বুঝতে পারবেন।কারন হলো সূরা তওবার ৬নং আয়াতটি হলো চাবিকাঠি সামনের ৫টি আয়াতের।প্রথম দিকে একটি শান্তি চুক্তির কথা বলা হয়েছে মুসলমান আর মক্কার মুশরিকদের মধ্যে।এই শান্তি চুক্তিটি ইচ্ছা করে ভেংগেছিল মক্কার মুশরিকরা।আর তখনি আল্লাহ পাক ৫নং আয়াতে বলেন যে,(যুদ্ধের ময়দানে) যখনি তোমার শক্রুকে দেখতে পাবে,তাকে মেরে ফেল।প্রসংগ্য ছাড়া উদ্ধৃতি যদি কেউ দেয় তাহলে তা হবে হাস্যস্কর।প্রায় ৪৭ বছর আগে আমেরিকা ও ভিয়েতনামের যখন যুদ্ধ চলছিল তখন যদি আমেরিকার জেনারেলরা বা প্রেসিডেন্ট যুদ্ধের ময়দানে আমেরিকান সৈন্যদের বলে,আমার সৈন্যরা তোমরা ভয় পেয় না যেখানে ভিয়েতনামিদের দেখবে মেরে ফেল।একথাটি যদি বলা হয় তাহলে সেটা হবে সাহস দেয়ার জন্য।এখন যদি কেউ উদ্ধৃতি দেয় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বলেছে কোন ভিয়েতনামিদের দেখলে মেরে ফেল তা হাস্যস্কর নয় কি? সবকিছুর পিছনে একটি কারন থাকতে হবে।আল্লাহ যদি বিশ্বাসীদের আলকুরআনে বলেন শক্ররা যদি তোমাদের মারতে আসে তোমরা ভয় পেয়ো না তাহলে সেখানে সমস্যা কোথায়? আর এর পর ৬নং আয়াতে বলছেন অবিশ্বাসিরা যদি নিরাপত্তা চায় তাহলে তোমরা তাদের নিরাপদ স্হানে নিয়ে যাও যেন তারা আল্লাহর বানি জানতে পারে।আজকের দিনে কোন শাসক বা আর্মি জেনারেল কি বলবে তোমরা তাদের নিরাপদ স্হানে নিয়ে যাও? কুরআনের শানে নজুল না পড়লে আসল অর্থ বুঝা যাবে না।অনেক সময় আয়াত থেকে প্রকৃত অর্থ বুঝা যায় না।যারা দা-ঈ হতে চান তাদের নিজের ধর্ম ছাড়াও অন্য ধর্মের সম্পর্কে বেশ পড়াশুনা করতে হয়।যিনি ইসলামের দাওয়াতের কাজ করবেন তার পক্ষে কি করে সম্ভব ভাসা ভাসা জ্গান দিয়ে আর একজনকে বুঝাবেন।ধরুন কেউ আপনার কাছে সাহায্য চাইলো।আপনার পকেটে যদি টাকা না থাকে তাহলে আপনি দিবেন কি করে?আজ মুসলমানদের পকেটে স্বর্ন মুদ্রার পরিবর্তে লোহার মুদ্রা বিরাজমান যাদিয়ে দ্রব্য সামগ্রী ক্রয় করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর সব ধর্ম গ্রন্হে কোন না কোন যায়গায় যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে।বাইবেলে হত্যার কথা বলা হয়েছে,হিন্দু ধর্ম মহাভারতে যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে।সব ধর্মগ্রন্হে কম বেশি যুদ্ধের বর্ননা রয়েছে।সূরা নিসার ১৩৫ আয়াতে বলা হয়েছে,ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা ন্যায় বিচারে দৃড় প্রতিষ্ঠাতা হও,আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাক্ষ্যদাতা হও,যদিও তা তোমাদের নিজেদের বিরুদ্ধে যায় অথবা পিতা মাতার,নিকটআত্মীয়ের সে ধ্বনী হোক বা গরীব কেননা আল্লাহ তাদের উভয়ের অতি নিকটবর্তী।'

ধর্মকে জানতে হলে ধর্মগ্রন্হকে ভালভাবে অধ্যয়ন করতে হবে।সূরা আল মায়েদার ৩২ আয়াতে বলা হয়েছে,' যে কেউ হত্মা করে একজন মানুষকে আরেকজন ব্যাতিত সে যেন সবাইকে হত্যা করে।আর যে কেউ তাকে বাঁচিয়ে রাখে সে যেন তাহলে সমস্ত লোকজনকে বাঁচালো।'আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার নামই হলো ক্কিতাল।আলকুরআন ও হাদিসে বলা হয়েছে যখন আর কোন উপায় থাকে না তখন যুদ্ধ করতে হয় তবে বেশ কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে।সূরা বাক্কারার ১৯০ নং আয়াতে বলেছেন,'আল্লাহর পথে তোমরা যুদ্ধ কর তাদের বিরুদ্ধে যারা অন্যায় ভাবে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে আর সীমালংঘন করো না।নি:সন্দেহে আল্লাহ সীমালংঘনকারিদের ভালবাসেন না।' সূরা বাক্কারার ১৯৪ আয়াতে বলা হয়েছে,'যে কেউ তোমাদের উপর আক্রমন চালায় তোমরাও তবে তাদের উপর আঘাত হানবে সেভাবে যেমনটা তারা তোমাদের উপর আঘাত হেনেছে।' যুদ্ধে মহিলা ও শিশুদের ক্ষতি করা যাবে না,বাড়ির ভিতর বয়স্ক লোকদের ক্ষতি করা যাবে না,কোন উপাসনালয়ের ক্ষতি করা যাবে না,কোন গাছ পালা-দোকানপাট পোড়ানো যাবে না,শস্যক্ষেত পোড়ানো যাবে না,পশুপাখি হতত্মা করা যাবে না, এমন আরো অনেক নিয়মকানুন রয়েছে।রামকৃষ্ন রাও একজন লেখক যিনি একটি বই লিখেছেন হযরত মোহাম্মদ সা: এর জীবনের উপর।তিনি লিখেছেন আমাদের নবীর জীবদ্দশায় যতগুলো যুদ্ধ হয়েছে সেই সময়ে মোট ২২ বছরে এবং তিনি নিজের থেকে একটি হিসাব বের করেছেন ১০১৮ জন মানুষ মারা গিয়েছে ঐ যুদ্ধগুলোতে।এবার তুলনা করুন পৃথিবীর অন্যান্য যুদ্ধ গুলোর সাথে কি পরিমান মানুষ মারা গিয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মারা গিয়েছিল দুই কোটি মানুষ।এক কোটি সৈন্য ও এক কোটি সাধারন মানুষ।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তিন কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল ও সাড়ে তিন কোটি আহত হয়েছিল।আমরা যদি পিছনে ভাল করে তাকাই তাহলে আলকুরআনের আয়াতগুলোর অর্থ ও তাৎপর্য খুব ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারবো।একটা সাধারন অভিযোগ আছে ইসলামের বিরুদ্ধে যে ইসলামের প্রসার ঘটেছে তরবারির মাধ্যমে।ইসলাম শব্দটি এসেছে সালাম থেকে যার অর্থ শান্তি।শ্রষ্টার কাছে নিজের ইচ্ছাকে সমর্পন করে দেয়া।যখন কেউ নিজের ইচ্ছাকে মহান শ্রষ্টার কাছে সমর্পন করে শান্তির জন্য তখন তাকে বলে মুসলমান।ইসলাম প্রথাগতভাবে যুদ্ধের বিপক্ষে কথা বলে।কিন্তু কোন উপায় না থাকলে শক্তি প্রয়োগ করা যাবে।কিছু মানুষ আছে যারা শান্তি চায় না তাদেরকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য শেষ উপায় হিসেবে ইসলাম শক্তির প্রয়োগ ও যুদ্ধের অনুমতি দেয়।আমরা মুসলমানরা স্পেনে ৮০০ বছর রাজত্ব করেছি।আমরা সেখানে তরবারি দিয়ে কাউকে ইসলাম গ্রহনে বাধ্য করিনি।পরবর্তিতে ক্রসেডরা এসে যখন মুসলমানদের সরিয়ে দিল এই সময় একজন মুসলমানও আজান দিতে পারতো না।আমরা গত সাড়ে চৌদ্দশ বছর আরব বিশ্বে রাজত্ব করছি।কিছু সময় ফ্রেন্স ও কিছু সময় বৃটিশ শাসন করেছে।এই সময় বাদ দিলে পুরো সাড়ে চৌদ্দশ বছর মুসলমানরা আরব বিশ্বে রাজত্ব করছে।আর এখন এই আরব বিশ্বে প্রায় দেড়কোটিরও বেশী কপটিক খৃষ্টান আর এরা হলো বংশ পরম্পরায় খৃষ্টান এবংতারা সাক্ষ্য দিচ্ছে যে ইসলামের প্রসার তরবারি দিয়ে হয় নি।মুসলমানরা ইন্ডিয়া শাসন করেছে প্রায় এক হাজার বছর।যদি তারা চাইতো প্রত্যকে ইন্ডিয়ানকে তরবারির মুখে ইসলাম গ্রহনে বাধ্য করতো।আজকে এক হাজার বছর পরেও ইন্ডিয়ার শতকরা ৮০জন মুসলমান নয়।ভারত উপমহাদেশের এই সব মুসলমান আজো সাক্ষ্য দিবে ইসলাম তরবারির মুখে প্রসার লাভ করেনি।কোন মুসলমান আর্মি জেনারেল মালেশিয়া জয় করতে গিয়েছিল? মালেশিয়াতে শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশী মানুষ মুসলমান। কোন আর্মি জেনারেল ইন্দোনেশিয়া গিয়েছিল তরবারি নিয়ে? ইন্দোনেশিয়ায় মুসলমানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী।কোন মুসলমান আর্মি আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে গিয়েছিল? থমাস কারলাইন একজন বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইউরোপের এবং তিনি বলেছেন একটি তরবারি থাকতে হবে আর সেটা হলো বুদ্ধির তরবারি।সূরা নাহালের ১২৫ আয়াতেও একই কথা বলা হয়েছে আর তা হলো,'তোমার প্রভুর রাস্তায় আহ্বান করো জ্গান ও সুষ্ঠ উপদেশের দ্বারা আর তাদের সাথে পর্যালোচনা কর এমনভাবে যা শ্রেষ্ঠ।'আজকের যুগে আমেরিকায়,বৃটেনে সবচেয়ে জনপ্রিয় ধর্ম হলো ইসলাম।আমরা প্রশ্ন করতে পারি কোন মুসলমানরা ইউরোপিয়ানদের ইসলাম ধর্ম গ্রহন করতে বাধ্য করেছে? ইসলাম যদি মহিলাদের উপর অত্যাচার করে তাহলে অমুসলিম মহিলারা ইসলাম গ্রহন করছে কেন? আর যারা মুসলমান হচ্ছে তাদের তিন ভাগের দুই ভাগই হলো মহিলা।কারন হলো ইসলামে সমস্যার সমাধান আছে আর তা হলো স্হায়ী সমাধান।আমেরিকার একটি পরিসংখ্যান কোম্পানি ওয়াশিংটনে তারা বলেছে ১১ই সেপ্টেম্বরের মাত্র দুই মাস পরে ২০হাজার লোক ইসলাম গ্রহন করেছে।সালমান রুশদি আমাদের নবী সা; এর বিরুদ্ধে লিখলো সেটা খারাপ কিন্তু মানুষ জানতে চাইলো কিসের বিরুদ্ধে লিখলো আর তারা আলকুরআন পড়লো আর অনেকে মুসলিম হয়ে গেল।আমাদের মুসলমানদের ব্যাবহার করতে হবে বুদ্ধির তরবারি যা মানুষের মন জয় করে।আল্লাহ পাক প্রতিজ্গা করেছেন আলকুরআনে তিনবার বিভিন্ন যায়গায় বলেছেন,সূরা তওবার ৩৩ আয়াতে,সূরা আস সফ এর ৯ নং আয়াতে,সূরা ফাথহের ২৮ নং আয়াতে কথাগুলো একই রকমভাবে বলা হয়েছে,তিনি সেইজন যিনি তার রাসূলকে পাঠিয়েছেন পথনির্দেশ ও সত্য ধর্মের সাথে যেন তিনি তাকে প্রাধান্য দিতে পারেন ধর্মের-তাদের সব কটির উপর যদিও মুশরিক,কাফের ও মুনাফিকরা অনিচ্ছুক।' ইসলাম ধর্ম হলো অন্য সব ধর্মের উপরে।ইসলামের বোমা সবচেয়ে শক্তিশালি আর তা সৃষ্টি হয়েছিল ১৪০০ বছর পূর্বে হযরত মোহাম্মদ সা: এর মাধ্যমে আর সেটি হলো শান্তির বোমা যা বয়ে চলছে আজ পর্যন্ত আর প্রচারিত হচ্ছে ইসলামের সঠিক ধারক ও বাহকদের মাধ্যমে।

বিষয়: বিবিধ

২৯৫২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

262606
০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:২৮
চোথাবাজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
262836
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০২:৫৫
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : ভাল লেগেছে, কিন্তু এমন একটি লেখায় পাঠক সংখ্যা এত কমে দেখ হতাশ হলাম।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File