আপনার চারপাশে প্রতিদিন মৃত্যুর খবরে জানাযায় শরিক হউন, এতে আপনার মৃত্যুর স্মরন হবে আর দুনিয়ার চাকচিক্য অপসারিত হবে।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৩:২৫:৩৫ দুপুর
আল্লাহ পাক এই আসমান জমিন সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে আর এর পর তিনি আরশে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।সৃষ্টি করেছেন তার অসংখ্য সৃষ্ট বস্তু যা আমাদের চারপার্শে দৃষ্যমান।আবার আমাদের দৃষ্টির বাইরেও রয়েছে অসংখ্য সৃষ্টি যা আল্লাহ পাক ভাল জানেন।যত সৃষ্টিই থাকুক না কেন,তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সবার সেরা করে আর দিয়েছেন তাদের দুনিয়ার জীবনে স্বাধীনতা।ভাল ও মন্দের জ্গান দিয়েছেন এরপর যা তারা পছন্দ করে সেদিকে তিনি তাদের ধাবিত করেন।তিনি ভাল কাজের হুকুম দেন এবং বান্দা যদি খারাপ কাজের দিকে যায় তিনি ইচ্ছা করেন তবে তিনি খারাপ কাজের হুকুম দেন না।তিনি তাদের সামনে আখেরাতের একটি দিন রেখেছেন বিচারের জন্য যা ঈমানের একটি বিষয়।যা কিছুই ঘটে যায় এই আসমান ও জমিনে তা আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়।সূরা আল-মুলকের ২ আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন,'তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন তোমাদের যাচাই করতে যে, কে তোমাদের মধ্যে কাজ কর্মে শ্রেষ্ঠ।' যেহেতু এ পৃথিবী ক্ষনস্হায়ী সেজন্য মানুষের কাজ হলো ভাল করে যাওয়া কিন্তু শয়তান মানুষকে এই ক্ষনস্হায়ী জীবনের চাকচিক্য দেখিয়ে আখেরাতকে ভুলিয়ে দেয়।আমাদের কি আশ্চর্য মনে হয় না যে আমরা আমাদের চোখের সামনেই দেখছি মাত্র ২০/৩০ বছরের মাথায় আমাদের পুর্বসূরিদের অনেকেই চলে গেছেন।প্রতিদিনই খবর আসছে কেউ না কেউ চলে যাচ্ছে।আমরা যানাযায় অংশগ্রহন করছি।কিছু সময়ের জন্য আমরা হতাশ হই আবার ভুলে যাই এই মওতের কথা।তাদের অঢেল সম্পদ রেখে চলে গেলেন আর সাথে নিয়ে গেলেন সামান্য টাকার তিন টুকরো কাপড়।যে স্ত্রী সন্তানের জন্য প্রতিদিন সৎ বা অসৎ উপায় অবলম্বন করে দেশে বিদেশে প্রাসাদ গড়লেন,স্বামীর বাড়ি ফিরতে সামান্য দেরিতে স্ত্রীর বৎর্সনা,ঘরে ফিরে সন্তানের গন্ডদেশে চুমু,আনন্দঘন পরিবেশ, তার পর একটি মৃত্যুতে ব্যাক্তিকে দূর করে দিল। কিছুক্ষন আগেও যে ছিল সবার সাথি, তাকেই তারা আর ঘরে রাখতে চায় না এক মুহূর্ত।তারা তাকে দেখে ভয়ে ভীত।তারা বলে রেখে আস বাড়ির বাইরে খাটে একাকি।কি নির্মম দৃশ্য? আল্লাহ পাক সূরা আল-ইমরানের ১৮৫ আয়াতে বলছেন,'প্রত্যেক স্বত্তাকে মৃত্যু আস্বাদন করতে হবে।আর কিয়ামতের দিন তোমাদের পাওনা পুরপুরি পরিশোধ করা হবে।যাকে আগুন থেকে বহু দূরে রাখা হবে ও জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, নি:সন্দেহে সে হলো সফলকাম।আর দুনিয়ার এই জীবন ধোকার সম্বল ছাড়া কিছুই নয়।' রাবিয়া ইবনে ক্কাব রাসূল সা: এর একজন সাহাবি যিনি দিন রাত রাসূল সা: এর সাথেই লেগে থাকতেন।দিন শেষ হয়ে রাত হলো এবং ঈশার নামাজ পড়ে রাসূল সা: ঘরে চলে গেলেন।এটা ছিল রাসূল সা: এর নিত্যদিনের অভ্যাস।কিছু সময় ঘুমিয়ে তিনি দীর্ঘ রাত নামাজ পড়তেন।রাবিয়া ছিলেন আসহাবে সুফ্যাদের একজন যাদের বলা হতো 'ইসলামের মেহমান'।তিনি ভাবলেন রাতে আর ফিরবেন না।তিনি রাসূল সা: এর দরজার কাছে পানি নিয়ে বসে পড়লেন।রাতে নিদ্রার ভাব আসলো।রাসূল সা: স্বভাবমত বের হয়ে দেখলেন রাবিয়াকে।তিনি খুশি হয়ে গেলেন ও বললেন,রাবিয়া চাও আমার কাছে।যা চাও তাই দিব।রাসূলের সাহাবারা জানতেন রাসূল সা: আল্লাহর কাছে দোয়া করলে এবং কিছু চাইলে আল্লাহ দোয়া কবুল করেন।কিন্তু রাবিয়া বললেন,হে আল্লাহর রাসূল (সা আমাকে একটু সময় দিন।এর পর আবার রাসূল সা: জিজ্গেস করলেন।এবার রাবিয়া উত্তর করলো,হে আল্লাহর রাসূল সা: আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন আমি যেন আপনার সাথে জান্নাতে থাকতে পারি।রাসূল সা: বললেন,হে রাবিয়া কে তোমাকে একথা শিখিয়েছে। রাবিয়া বললেন হে আল্লাহর রাসূল কেউ আমাকে শিখায়নি।আমি ভেবেছি এ পৃথীবির যা কিছু ধবংসশীল এবং আমিও ধবংস হয়ে যাব সে ক্ষেত্রে এটাই আমার জন্য শ্রেয়।রাসূল সা: বললেন,রাবিয়া নামাজের মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরন কর আর আমার সাহচর্যে থাক।রাসূল সা: সামান্য খেজুরের চাটাইয়ে শুয়ে এমনকি উৎকৃষ্ট যবও খেয়ে যেতে পারেন নি জীবনে।
রাসূল সা: এর আগমন হয়েছিল মানব জীবনের জন্য সব কল্যান নিয়ে আসা আর সব অকল্যান থেকে দূরে রাখার জন্য।একজন মানুষের যেমন দুনিয়াতে পরিচর্যা প্রয়োজন তেমনি দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার সময়ও তার সাথে ভাল ব্যাবহার করা আবশ্যক।মৃত ব্যাক্তিকে ভালভাবে গোসল করানো,কাপন পরানো,আতর গোলাপ মাখিয়ে সম্মানের সাথে তার স্হানে পৌঁছানোর আগে যানাযার নামাজ পড়িয়ে দোয়া করে তাকে সমাহিত করা অন্যদের দায়িত্ব।যে যেখানেই মারা যাবে তাকে অতি দ্রুত সেখানে সমাহিত করাই হলো তার হক্ক।মৃত ব্যাক্তিকে সমাহিত করেই সব শেষ হয়ে যায় না।আমরা যেমন দুনিয়ায় যারা বেঁচে আছে তাদের দেখতে যাই তেমনি মৃত ব্যাক্তির মাগফেরাতের জন্য মাঝে মাঝে কবর যেয়ারত করতে যাই।কবর যেয়ারতের উদ্দেশ্য হলো নিজের মৃত্যুকে স্মরন করা আর কবরবাসিদের জন্য দোয়া করা। এ কাজ যে একটি জরুরি বিষয় অধিকাংশ মানুষই জানে না।এর কারন হলো,যিনি চলে গেলেন হয়ত তিনি ইসলামি জীবন থেকে দূরে ছিলেন।ইসলামি জীবন বিধান সম্পর্কে কোন অনুশিলন ছিল না।যারা তার উত্তরশুরি তারা যদি একই পথের পথিক হয়ে থাকে তাহলে তাদের জীবনও ঐ পথে ধাবিত হয়।সেজন্য মৃত মানুষকে কিভাবে সম্মান করতে হবে,কি করলে তার মাগফেরাত হবে সেগুলো জানা প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আজকের মুসলমানদের অধিকাংশ যেভাবে মৃত ব্যাক্তির সৎকার করে তা মৃতব্যাক্তির জন্য অকল্যানই বয়ে আনে।মৃতব্যাক্তির মৃত্যুর সাথে সাথে কাজ হলো তাকে যত দ্রুত সম্ভব কবরে পোঁছে দেয়া।একদেশে মৃত্যু হলো আর কারো জন্য তাকে কবরে পাঠানো থেকে বিলম্বিত করা হলো ভীষন গুনাহের কাজ।যিনি মারা গেলেন তিনি যদি অছিয়ত করে গিয়ে থাকেন এবং জীবিতরা সেভাবে না করে তাহলে তার দায় তিনি বহন করবেন না,অন্যরা বহন করবে।একজন মানুষের জন্য কিছু করনীয় রয়েছে মৃত্যুর আগে ও পরে।আল্লাহ পাক মানুষের জীবনকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন।একটি হলো ইহলৌকিক আর একটি হলো পারলৌকিক অর্থাৎ দুনিয়ার জীবন ও আখেরাতের জীবন।একটি শিশু মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ট হয়ে কবরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত যে সময় সেটা হলো দুনিয়ার জীবন।আর কবরে প্রবেশ করলে,বারযাখ,হাশরের দিন,জান্নাত ও জাহান্নামের ফায়সালা সম্বলিত সময় হলো আখেরাতের জীবন।এই দুনিয়ার জীবন হলো আখেরাতের জন্য একটি পরীক্ষার যায়গা।যে দুনিয়ায় ভাল কাজ করে যাবে মৃত্যুর পরেই তারা জান্নাতি জীবন শুরু হয়ে যাবে আর যে খারাপ কাজ করে যাবে সে দোযখের জীবন দেখতে পাবে।মাত্র তিনটি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।তোমার রব কে? তোমার দীন কি? তোমার রাসূল কে? যে এই তিনটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবে তাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দেয়া হবে ও জান্নাদের দ্বার উম্মুক্ত করে দেয়া হবে। আর যে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না তার জন্য জাহান্নামের আযাব শুরু হয়ে যাবে এই কবর থেকে।এইজন্য হাদিছে এসেছে এই কবর হলো প্রথম মন্জিল।এখানে যে পার হয়ে যাবে বাকি সব ইনশাআল্লাহ পার হবে।সেই জন্য এই কবরের প্রষ্তুতির জন্য আমাদের সজাগ থাকতে হবে।
সূরা আম্বিয়ার ৩৫ আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন,প্রত্যকে স্বাত্বাকে মৃত্যুর স্বাধ গ্রহন করতে হবে।আমরা তোমাদের পরীক্ষা করি মন্দ ও ভাল দিয়ে যাচাই করে।আর আমাদের কাছেই তোমাদের ফিরিয়ে আনে হবে।' আমাদের দুনিয়ার জীবন আখেরাতের তুলনায় সামান্য সময়।এই সময়ের জন্য আমরা ২৪ ঘন্টা খাটা খাটনি করি।ঈমানের মত ঈমান নিয়ে আসিনা, নামাজ পড়ার সময় নেই,যাকাত দেই না,রোজা রাখি না,হজ করিনা অথচ মৃত্যু হয়ে গেলে দুনিয়ার কোন জনিসই আর কাজে আসবে না।দুনিয়ার শেষ আছে কিন্তু আখেরাতের শেষ নেই।ওমর রা: একদিন এসে দেখলেন রাসূল সা: চাটাইয়ের উপর শুয়েছিলেন এবং তাঁর পিঠে চাটাইয়ের দাগ পড়েছিল। ওমর রা: বলেলেন,হে রাসুল সা: আপনার জন্য আমি একটি তোষকের ব্যাবস্হা করে দেই। রাসূল সা: বলেন,আমার এই দুনিয়া নিয়ে ব্যাস্ত হওয়ার কি আছে,আমি তো দুনিয়ার মধ্যে একজন ভ্রমনকারির মত যে একটি গাছের নিছে বিশ্রাম নিচ্ছে কিছুক্ষন।তার পর সে তার গন্তব্যস্হানে পৌঁছবে।' এই হলো দুনিয়ার জীবন।আজকে মুসলমানরা দেশে দেশে ,ঘরে ঘরে দুনিয়ার আবাস গড়ার জন্য প্রতিযোগিতা করছে।কেউ কাউকে দেখলে বলে না তোমার ঈমান আছে কিনা? তুমি নামাজ পড় কিনা? তুমি হারামা হালাল বেচে চল কিনা? বরং জিজ্গেস করে তুমি কয়টা বাড়ির মালিক? কত টাকা ব্যাংক ব্যালেন্স আছে? মেয়ে ছেলে বিয়ে দিতে দেখে কার কত ঐশ্বর্য আছে।ছেলে মেয়ের চরিত্র ঠিক আছে কিনা তার দরকার নেই।অথচ বিশ্ব নবী বললেন এ জীবন এক পথিকের অবস্হান।হে পাঠকগন! যদি সাড়ে তিনহাতের এই কবরটিকে আমরা সৌন্দর্যমন্ডিত করতে পারি তাহলে দুনিয়ার যে প্রাচুর্যের কথা আমরা ভাবছি তাহলে এই দুনিয়ার পন্চাশ গুন পাবে যে ব্যাক্তি সব শেষে জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি পাবে।শরিয়তের ব্যাপারগুলো কোরআন ও সূন্নাহের আলোকে জেনে নিলে আমাদের এই দুনিয়ার জীবন যেমন সুন্দর হবে তেমনি হবে আখেরাতের জীবন।একজন মানুষের শেষকৃত্য সম্পর্কে দেখা যায় অনেকে না জানার কারনে অনেক ভুল করে।সে ভুলগুলো যেমন নিজের জানা দরকার তেমনি জানানো দরকার অন্যদের।আল্লাহর রাসুল সা: এর সামান্য মাথা ব্যাথা হলেও তিনি মৃত্যুর কথা স্মরন করতেন।মা আয়শা রা: একদিন বলছেন আমার মাথায় চরম ব্যাথা।রাসূল সা: জানাজার নামাজ পড়িয়ে এসেছিলেন।তিনি মজা করে বলছিলেন আমারও মাথা ব্যাথা।আল্লাহর রাসুল সা: বললেন তুমি যদি মরে যাও তোমাকে আমি গোসল দিব, এবং কাপন পরিয়ে দিব। আমার হাতে দাফন করে দিব।আয়শা রা: বললেন আমি যদি মারা যাই তাহলে আপনি আর একটি বিয়ে করতে পারবেন।স্বামী স্ত্রী মহব্বতে মশকারা ও মজা করারও শরিয়তের অংশ।আর বর্তমানে বেহায়ারা নিজের স্ত্রীর সাথে ঠাট্টা মশকারা না করে তা করে অন্যের স্ত্রীর সাথে।যে ব্যাক্তি অসুস্হ হয়ে পড়বে তার জন্য কি করনীয় তা আমাদের জানা দরকার।
প্রথম কাজ হলো-যে ব্যাক্তি অসুস্হ হয়ে পড়বে তাকে ধৈর্যধারন করতে হবে ও আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে যে আল্লাহ নিশ্চই আমাকে ক্ষমা করবেন।রাসূল সা: বলছেন,মু'মিনের বিষয়টা বড় আশ্চর্য।মু'মিনের পুরো কাজের মধ্যে কল্যান রয়েছে।মু'মিন ছাড়া অন্যের কাজের মধ্যে কল্যান ও অকল্যান থাকে।যদি কোন ভাল মু'মিনের ভাগ্যে জুটে সে আল্লাহর শুকরিয়া করে,আর যদি কোন আমংগল হয় তবে সে ধৈর্যধারন করে।এর মধ্যেও তার কল্যান রয়েছে।' আমাদের মধ্যে যা হয় তাহলো কোন অকল্যান হলে আমরা চিৎকার করতে থাকি,আল্লাহকে আপবাদ দেয়া শুরু করে দেই আবার কল্যান হলে বলি এটা আমাদের কর্মের ফল অর্থাৎ তখনো আল্লাহকে ভুলে যাই।দ্বিতীয় কাজটি হলো-আল্লাহকে ভয় ও আশায় স্মরন করতে হবে।হযরত আনাস রা: থেকে বর্নীত একজন যুবকের মৃত্যুর সময় উপস্হিত হলে রাসূল সা: সেখানে গেলেন।রাসুল সা: সে যুবককে জিজ্গেস করলেন তোমার কেমন লাগছে? সে বললো হে আল্লাহর রাসূল,আল্লাহর কসম,আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদি তিনি আমাকে ক্ষমা করবেন কিন্তু আমি আমার পাপের কথার ভয় করছি।রাসুল সা: বললেন,কোন মুমুর্ষু ব্যাক্তির যদি এই দুটি গুন(ভয় ও আশা) একত্রিত হয় তাহলে আল্লাহ পাক তার আশা পূরন করবেন।'অসুখ হলে মানুষের পাপ মুক্তি ঘটে।এমন কথা বলা উচিত নয় যা আমাদের সমাজে ঘটে থাকে,কেউ বলে আল্লাহ আমাকে নিয়ে যা,কেউ বলে বছরের পর বছর বিছানায় পড়ে আছে আল্লাহ কেন তাকে নিয়ে যায় না।হাদিসে এসেছে আল্লাহ পাক যার কল্যান চায় তাকে এই দুনিয়ায় অসুখ দিয়ে পাপ মোচন করে নিয়ে যান।তবে বান্দাহ তার অবস্হান বুঝতে পারবে ও যদি সে সময় মার্জনা চেয়ে নিতে পারে আল্লাহ পাক নিশ্চয়ই মাপ করবেন।আল্লাহর ক্ষমতা অতি মহান তিনি তার বান্দাকে যেভাবে চান সেভাবে পরিশুদ্ধ করতে পারেন।যদি এমন অসুখ হয় যা সহ্যের বাইরে চলে যায়, এই মুহুর্তে মৃত্যু কামনা করা যাবে না।এই মুহূর্তটা একটা চরম মুহূর্ত।অনেকে ঈমান না থাকলে এ সময় বিভ্রান্ত হয়।আত্মহত্যা করে,নিজের উপর ছুরি বসিয়ে দেয় ইত্যাদি।আব্বাছ রা: অসুস্হ এবং রাসূল সা: সেখানে গিয়ে উপস্হিত হলেন।তিনি দেখলেন আব্বাছ রা: মৃত্যুকে কামনা করছেন।রাসূল সা: তাঁর চাচা আববাছ রা:কে বললেন,হে চাচা মৃত্যুকে কামনা করবেন না।যদি আপনি ভাল ব্যাক্তি হয়ে থাকেন তাহলে আরো বেঁচে থাকলে ভাল কাজ করতে পারবেন।এটা আপনার জন্য মংগল।আর যদি আপনি খারাপ কিছু করে থাকেন তাহলে আপনি খারাপের জন্য সাজা পাচ্ছেন এটাও কল্যানকর। মৃত্যু কামনা করবেন না।' ছহি বোখারিতে বর্নীত হয়েছে,যদি কারো মৃত্যু কামনা করতে হয় তাহলে দোয়ার মাধমে করতে হবে,"আল্লাহ যদি আমার বেঁচে থাকাটা কল্যান হয় তাহলে আমাকে বাঁচিয়ে রাখ।আর যদি মৃত্যু আমার জন্য কল্যান হয় তাহলে আমাকে মৃত্যু দাও।'কারো যদি দায় দেনা থাকে সেটা আদায় করতে হবে।যদি সম্ভব না হয় তাহলে উত্তরসূরিদের অছিয়ত করতে হবে।রাসুল সা: বলেছেন,যদি কোন ব্যাক্তি কোন ভাইয়ের প্রতি অন্যায় করে থাকে সেটা যেন আদায় করে দেয় কিয়ামত আসার আগে অর্থাৎ মৃত্যুর আগে।'কিয়ামতের দিন কোন টাকা পয়সার লেনদেন হবে না।সেদিন আমলের বিনিময় হবে।আর যদি ভাল কাজ না থাকে তাহলে পাওনাদারের পাপ ঐ ব্যাক্তির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হবে।আল্লাহর হক্কের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে যেমন ইস্তেগফারের মাধ্যম মাপ চাইতে হবে তেমনি বান্দার হক্কের ব্যাপারে বান্দার কাছে মাপ চাইতে হবে,আল্লাহ কখনো বান্দার ব্যাপারে মাপ করবেন না কারন আল্লাহ শ্রেষ্ঠ বিচারক।মুসলিম শরিফে এক হাদিসে রাসুল সা: বলেছেন,তোমরা জান হতভাগা কে? সাহাবারা বললেন যার কোন টাকা কড়ি ও ধনদৌলত নেই। রাসূল সা: বললেন,আমার উম্মতের প্রকৃত হতভাগ্য হলো ঐ ব্যাক্তি যে কিয়ামতের দিন নামাজ ,রোজা ,যাকাতের মত অনেক নেকি নিয়ে হাজির হবে কিন্তু তার সাথে একজন এসে বলবে আমাকে মেরেছে,অন্যজন এসে বলবে আমার মাল খেয়েছে,কেউ বলবে আমাকে অন্যায়ভাবে হত্বা করেছিল।সবাইকে তার কৃত নেকি দিতে থাকবে এবং পাওনাদার যদি শেষ না হয় ও নেকি শেষ হয়ে যায় তখন ওদের পাপ তার ঘড়ে চড়িয়ে দেয়া হবে আর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।' অধিকাংশ মানুষ দুনিয়া ছেড়ে চলে যায় অছিয়ত ছাড়া ও তাদের মালের হিসাব নিকাশ ছাড়া।কত মানুষ আছে ধার নিয়ে দেয় না ও পাওনাদারের সাথে দেখা পর্যন্ত করেনা।আবার কেউ দেনার দায় মিটাতে না পেরে পাওনাদারকে হত্বা করে বা নিজেও আত্মহত্মা করে।মু'মিনের কাজ হলো প্রতিনিয়ত সে কাগজে কলমে হিসেব রাখবে।দায় দেনা থাকলে সাক্ষী থাকবে ও পরিবার পরিজনকে জানিয়ে রাখবে কারন কখন কার শেষ ঘন্টাধ্বনি বাজবে কেউ জানে না।কেউ তার সম্পদের জন্য যদি অছিয়ত করে তাহলে যেন তিনভাগের একভাগের বেশী না হয়। আর এই অছিয়তে দুই জন সাক্ষী থাকবে এবং কোন জুলুম যেন না করা হয়।সবচেয়ে ভাল হয় অছিয়তে যেন পূর্নাংগ বিবরন থাকে কারন হলো এখন বেশির ভাগ বিদাআতি কাজ হয়।সেজন্য লিখা উচিত কোরআন ও সূন্নাহ মোতাবেক যেন আমার সম্পদ বন্টন হয় ও শরিয়ত মোতাবেক আমার দাফন কার্য সম্পাদন হয়। সা'দ ইবনে ওয়াক্কাছ রা: বললেন বিদায় হজে আমি রাসূল সা: এর সাথে ছিলাম।এমন অসুখ হলো যে আমি ভাবলাম আর বাঁচবো না।রাসূল সা: আমাকে দেখতে আসলেন।সা'দ ইবনে ওয়াক্কাছ রা: বললেন,হে আল্লাহর রাসূল সা: আমার অনেক সম্পদ।আমার এক মেয়ে ছাড়া আর কেউ নেই।আমি কি তিন ভাগের দুই ভাগ অছিয়ত করতে পারি? আল্লাহর রাসুল সা: বলেলেন না।তাহলে অর্ধেক দান করে দেই।আল্লাহর রাসুল সা: বলেলেন না।তাহলে তিনভাগের একভাগ দান করে দেই।আল্লাহর রাসুল সা: বলেলেন হাঁ তবে এটাও বেশী।হে সা'দ জেনে রাখ উত্তম হলো তোমার উত্তরাধিদের সক্ষম করে রেখে যাবে যাতে তারা অন্যের কাছে হাত না পাতে।' পাঠকগন! আজ এমন সব বাবা মা রয়েছেন যাদের দীনের কোন জ্গান নেই।ছেলেময়েদের সম্পদ বন্টনের ক্ষেত্রেও বিচার করেন না।অনেক পরিবারে মেয়ে ভাল পড়াশুনা করলে তার পিছনে খরচ করে আবার ছেলেটা দুর্বল হলে তাকে হেয় চোখে দেখে।আবার কেউ কেউ ছেলের প্রতি উজাড় করে দেয় মেয়েকে হেয় করে দেখে।জাহেলিয়াতে মানুষের ইসলামের জ্গান ছিল না কিন্তু বর্তমান দুনিয়ায় শিক্ষা দীক্ষা গ্রহন করে আর এক নব্য জাহেলিয়াত তৈরি হয়েছে।আশ্চর্য হলো এদের মধ্যে কোরআন ও হাদিস পড়া লোকরাই বেশি।এমন এমন কাজ তারা করে যারা বিধর্মীদেরও হারিয়ে ফেলে।
হযরত আবু মুসা আশয়ারি রা: মৃতুয়র সময় অছিয়ত করছেন,যখন তোমরা আমাকে জানাযায় নিয়ে যাবে তাড়াতাড়ি করে নিয়ে যাবে।আমার কবরে এমন কিছু দিবে না যা মাটি ও আমার মধ্যে আড় হয়ে যায়,আমার কবরে তোমরা কোন ঘরবাড়ি বানাবে না।আমি আল্লাহকে সাক্ষি রাখছি যারা অবৈধ অন্যায় কাজ করে তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।' সবাই জিজ্গেস করলেন আপনি এসব আল্লাহর রাসুল সা: থেকে শুনেছেন।তিনি বললেন হাঁ আমি শুনেছি।' মৃত্যুর পূর্বেই আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে।মালাকুল মওত যখন এসে যায় তখন তওবার দরজা বন্ধ হয়ে যায়।সেজন্য নিজেকে ধিক্কার দিয়ে পাপের কাজের জন্য তওবা করতে হবে,কৃতপাপগুলো না করার অংগিকার করতে হবে আল্লাহর সাথে ও নেক আমলের দিকে যেতে হবে।অসুস্হ ব্যাক্তির যদি মৃত্যুর গড়গড়া চলে আসে এ সময় পাশে থাকা ব্যাক্তিদের করনীয় কিছু কাজ রয়েছে।প্রথম কাজ হলো তাকে সাহাদাতের তালকিন দেয়া।রাসূল সা: বলেছেন যার শেষ কথা হবে," আল্লাহ ছাড়া সত্যি কোন মাবুদ নেই' সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।এখানে অনেকে বিভ্রান্ত হয় বা বুঝতে ভুল করে।কোন ব্যাক্তির পাপ থাকলে সে পাপের সাজা পেয়ে একদিন না একদিন জান্নাতে প্রবেশ করবে।এটাই ঈমান নিয়ে মৃত্যু বরন করার অর্থ।তার জন্য দোয়া করতে হবে ও ভাল দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করতে হবে।অনেকে খারাপ কথা বলেন ও দোষ ক্রুটি নিয়ে কথা বলেন,এগুলো করা উচিত নয়। রাসুল সা: বলেছেন,তোমরা ঐ সময় যা বল ভাল বলার চেষ্টা কর কারন তোমরা যা বল তার সাথে ফেরেস্তারা আমিন বলে নেয়।' অসুস্হ বা মৃত ব্যাক্তির পাশে আমাদের দেশের লোকজন ভাড়া হুজুর নিয়ে আসে ও কুরআন পাঠ করা,কেবলা মুখি করা বা কবরের পাশে তিনদিন কুরআন খতম করা এগুলোর ব্যাপারে কোন দলিল নেই।সূরা ইয়াছিন পড়ার ব্যাপারে যে হাদিসটি এসেছে এটা অনেক দুর্বল এবং উলামারা বলেছেন এ হাদিস গ্রহনযোগ্য নয়।অসুস্হ ব্যাক্তি যদি কাফের হয় তাকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া কারন এ সময় যদি সে ইসলাম কবুল করে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।একটি ইহুদির ছেলে আল্লাহর রাসূল সা: এর খেদমত করতো।এ থেকে বুঝা যায় কোন অমুসলিম দিয়ে খেদমত নেয়া যায়।সে অসুস্হ হলে আল্লাহর রাসুল সা: তাকে দেখতে গেলেন ও তার মাথার কাছে বসলেন এবং বললেন হে বৎস ইসলাম গ্রহন কর।ছেলেটির বাবা ও ওখানে বসা ছিল ও সে অনুমতি ছেয়েছে। সেই বালকটি ইসলাম গ্রহন করলো।আল্লাহর রাসূল সা: বলতে বলতে বের হলেন,' সেই আল্লাহর সমস্ত প্রশংসা যিনি এ শিশুটিকে জাহান্নাম থেকে রেহাই দিলেন।' যখন সে মারা গেল রাসূল সা: বললেন,তোমাদের সাথী মুসলমান হয়ে মারা গেছে তোমরা তার জানাযার নামাজ পড়। আল্লাহর রাসুল সা: তার চাচা আবুতালিব মারা যাওয়ার সময়ও তাকে ঈমানের তালকিন দিয়েছিলেন কিন্তু সে গ্রহন করেনি।কিন্তু রাসূল সা:কে মক্কার জীবনে সহযোগিতা করার কারনে জাহান্নামের সবচেয়ে হাল্কা যে আজাবটি হবে তা-ই তাকে দেয়া হবে আর সেটি হলো দুটি লোহার সেন্ডেল পরিয়ে দেয়া হবে যার কারনে তার মাথার মগজ টগবগ করে ফুটতে থাকবে।যদি রাসূলের চাচার এই অবস্হা হয় তাহলে আজকের মুসলমান নামের মোনাপেক,শির্ক,বিদাআতি ও জাহেলদের কি অবস্হা হবে তা ভাবার ব্যাপার রয়েছে।
মারা যাওয়ার পর কিছু কাজ আছে তা পরিবার ও ঘনিষ্ঠদের করতে হবে।প্রথম কাজ হলো মৃত ব্যাক্তির চোখ দুটি বন্ধ করে দেয়া ও দোয়া করা।হযরত উম্মে সালামা রা: বলছেন,আবু সালামা যখন মারা গেলেন তখন রাসূল সা: সেখানে গেলেন।তার চোখ দুটি খোলা ছিল এবং রাসূল সা: তা বন্ধ করে দিলেন এবং বললেন যখন আত্মা বের হয়ে চলে যায় তখন চোখ দুটি দেখে থাকে আত্মার দিকে।' এ জন্য মৃত ব্যাক্তির চোখ খোলা থাকলে বন্ধ করে দিতে হবে ও দোয়া করতে হবে।এর পর একটি কাপড় দিয়ে মৃত ব্যাক্তিকে ঢেকে দিতে হবে।মা আয়শা রা: বলছেন,আল্লাহর রাসূল সা: মারা যাওয়ার পর খেবরা দিয়ে আল্লাহর রাসূল সা:কে ঢেকে দেয়া হয়েছিল।' মনে রাখতে হবে কেউ যদি হজ মা ওমরাহ করতে গিয়ে মারা যায় তার মাথা ঢাকা চলবে না ও কোন প্রকার সুগন্ধি ব্যাবহার করা যাবে না।এর পর তাকে কবরে পৌঁছানোর জন্য তাড়াতাড়ি করতে হবে।যে ব্যাক্তি যেখানে মারা যাবে তাকে সেখানে কবর দিতে হবে।ওহুদের যুদ্ধে যে সমস্ত শহিদরা শহিদ হয়েছিলেন তাদের অনেককে আত্মীয় স্বজন মদিনায় নিয়ে এসেছিলেন।রাসূল সা: বললেন,তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাও ও সেখানেই রাসূল সা; দাফন করেছিলেন।তবে এমন যায়গায় যদি কেউ মারা যায় যেখানে কবরস্হান নেই,গোসলের যায়গা নেই,জানাযা পড়ার কেউ নেই সেক্ষেত্রে অন্যত্র নেয়া যায়েয আছে।এই অবস্হায় যদি তার দায় দেনা থাকে তা আগে পরিশোধ করতে হবে।আমাদের মনে রাখতে হবে যদি কোন ব্যাক্তি আল্লাহর রাস্তায় শহিদও হয় এবং দায় রেখে মারা যায় তাহলে এই দায় তাকে পরিশোধ করতে হবে।মৃত ব্যাক্তির মুখের ঢাকনা খুলে কপালে চুমু দেয়া যায়েয রয়েছে।রাসূল সা:এর ইন্তেকালের পর আবুবকর রা: এভাবে চুমু দিয়েছিলেন।সাধারন মৃতের জন্য তিনদিন শোক করা যাবে এবং কোন স্ত্রীর যদি স্বামি বিয়োগ হয় তাহলে ৪ মাস ১০ দিন তার শোক হবে তবে কোন চিৎকার করা যাবে না।শুধু চোখের পানি ফেলা যাবে।হযরত যাবের ইবনে আব্দুল্লাহ বলছেন,আমার বাবা যখন শহিদ হয়েছিলেন তখন আমার বাবার চেহারার কাপড় খুলে আমি কাঁদতে ছিলাম,সবাই আমাকে নিষেধ করছিল কিন্তু আল্লাহর রাসূল সা: আমাকে নিষেধ করেন নি।আমার ফুফুও কাঁদতে শুরু করলো তখন রাসূল সা: বললেন তোমরা কাঁদ বা না কাঁদ,তোমরা কাপড় উঠানোর আগ পর্যন্ত ফেরেস্তারা তাদের ডানা দিয়ে তাকে ঢেকে রেখেছিল।রাসূল সা: এর ছেলে ইব্রাহিম যখন মারা গেলেন তখন তার বয়স ছিল ১৭ মাস।আনাস রা: বলছেন রাসূল সা: এর চোখ থেকে পানি পড়তেছিল।আব্দুর রহমান বিন আউফ বললেন,হে আল্লাহর রাসূল সা: আপনিও কাঁদছেন? রাসূল সা: বললেন হে আব্দুর রহমান এ হলো দয়া,আমার অন্তর ব্যাথিত কিন্তু আল্লাহর জন্য খুশি।' মৃত ব্যাক্তির যারা বেঁচে থাকবে তাদের ধৈর্যধারন করতে হবে ও আল্লাহর ফায়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকতে হবে।আল্লাহ পাক সূরা বাক্কারার ১৫৩-১৫৭ পর্যন্ত মু'মিনদের বিপদ আপদ আসলে সবর করা এবং বলে আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমাদের আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে-এর উপর তারা স্হির থাকে এবং তাদের জন্যই রয়েছে পুরস্কার।রাসূল সা: বলেছেন কোন বাবা মা'র যদি তিনটি শিশু মারা যায় তাদের ও তাদের বাবা মা'দের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন আল্লাহর রহমতে।' মৃত্যুর খবর শুনার সাথে সাথে এই দোয়াটি পড়া," ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন।" অর্থাৎ আমি আল্লাহর জন্য এবং আমাকে আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে।আমাদের দেশে অনেকে মনে করে যে মহিলার স্বামী মারা যাবে সে কোন সাজগোজ করবে না,সাদা কাপড় পরে থাকবে।ভাল কাপড় চোপড় পরা যায়েয আছে কিন্তু শালিনতা ও পর্দা বজায় থাকতে হবে।মনে রাখতে কোন মহিলার স্বামি যদি মারা যায় এবং অন্য যায়গায় সে বিয়ে না করে তাহলে স্বামী জান্নাতি হলে স্বামি স্ত্রী দুই জন একই সাথে জান্নাতে থাকবে।যদি অন্য স্বামী গ্রহন করে তাহলে আগের স্বামীর সাথে আর থাকতে পারবে না যদি জান্নাতি হয়।পরের স্বামী জান্নাতি হলে তার সাথে থাকবে আর যদি সে স্বামী জান্নাতি না হয় তাহলে জান্নাতে অন্য স্বামীর সাথে বিবাহ হবে।কিছু কাজ হারাম আছে যা আত্মীয় স্বজনকে মেনে চলতে হবে।বিলাপ করে কাঁদা হারাম।রাসূল সা: বলেছেন আমার উম্মত চারটি কাজ করবে।বংশ নিয়ে গর্ব করবে,নিজেকে নিচু মনে করবে,জোতিষীর কাছে গিয়ে ভাগ্য নির্নয় করা,বিলাপ করে কাঁদা। আজকাল যেমন ভাড়াটিয়া হুজুর পাওয়া যায় জাহেলিয়াত যুগেও ভাড়াটিয়া মহিলা পাওয়া যেত যারা কেউ মারা গেলে এসে বিলাপ করতো।আমাদের দেশে অহরহ মহিলারা কেউ মারা গেলে এই রকম বিলাপ করে।রাসুল সা: বলেছেন এই রকম বিলাপ কারিরা যদি তওবা না করে মারা যায় তাহলে কিয়ামতের দিন আলকাতরার কাপড় পরিয়ে দেয়া হবে।' আর একটি কাজ মহিলারা করে তাহলো গাল চাপড়ানো ও কাপড়চোপড় ছিঁড়ে ফেলে।কেউ কেউ মাথা নেড়া করে ফেলে যা হিন্দুরা করে থাকে।আবার কেউ আগে দাঁড়ি রাখে না কিন্তু পরিবারের কেউ মারা গেলে হঠাৎ দাঁড়ি রেখে দেয় ও কিছুদিন গেলে আগের অবস্হায় ফিরে আসে। আবার অনেকে আছে বিশেষ ব্যাক্তি হলে মাইকিং করে খবর দেয় এগুলো যায়েয নয়।তবে সাধারন ভাবে লোকমুখে খবর দেয়া যায়েয।রাসূল সা: নাজ্জাসির মৃতু্যর পর সাহাবাদের মৌখিক খবর জানিয়েছিলেন।আবার খবর দিতে গিয়ে দিনের পর দিন দেরি করাও যায়েয নয়। এগুলো সব হারাম কাজ ও এ থেকে রেহাই পাওয়ার একমাত্র পথ হলো,মৃত ব্যাক্তি জীবদ্দশায় তার জীবনে ইসলামি জীবন বিধান প্রতিষ্ঠিত করা,পরিবারকে সেভাবে লালন করা,সে যে সমাজে বাস করে তাদের পরিশীলিত করার চেষ্টা করা সর্বোপরি অছিয়ত করে যাওয়া যাতে তার মৃত্যুর পর কেউ এ সমস্ত শির্ক ও বিদাআতি কাজ না করে।এর পরে যদি কেউ করে তাহলে তারা এর দায় বহন করবে।
একজন মানুষ যখন মারা যায় তার মধ্যে কিছু ভাল আলামত লক্ষ্য করা যায়।হাদিসে আছে শেষ যার ভাল তার সব ভাল।কেউ যদি তার শেষ সময়ে কালিমা পড়ে মরে যায় বুঝতে হবে তার মৃতু্্য ভাল।কেউ যদি মারা যায় ও তার কপালে ঘাম আসে তাহলে বুঝতে হবে তার ভাল মৃতু্্য হয়েছে।রাসূল সা: বলেছেন মু'মিন ব্যাক্তির মৃত্যু তার কপালে ঘাম দিয়ে হয়।রাসুল সা; বলেছেন কোন মুসলিম ব্যাক্তি যদি জুমআর দিনে বা রাত্রিতে যদি মারা যায় তাহলে আল্লাহ পাক তাকে কবরের ফিতনা থেকে মাপ করবেন।যদি কেউ আল্লাহর তৌহিদকে উঁচু করার জন্য যুদ্ধের ময়দানে মারা যায় তাহলে এই মৃতু্্য ও ভাল বলে গন্য হবে।রাসূল সা: বলেছেন,শহিদের ৬টি গুন রয়েছে আল্লাহর নিকট।প্রথম জমিনে রক্ত পড়ার সাথে সাথে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন ও মৃত্যুর সময় সে তার জান্নাতের স্হান দেখে মারা যাবে।কবরের আযাব থেকে তাকে রেহাই দেয়া হবে।কিয়ামতের দিনের যে বিভিষিকাময় অবস্হা হবে তখন সে কোন ভয় পাবে না।ঈমানের অলংকার তাকে পরিয়ে দেয়া হবে।হুরদের সাথে তার বিয়ে দেয়া হবে।তার পরিবারের ৭০ জনের সুফারিশ আল্লাহ কবুল করবেন।হাদিসে এসেছে শহিদদের রুহকে জান্নাতে একরকম সবুজ পাখির মধ্যে দিয়ে দেয়া হবে এবং জান্নাতে ফল খেয়ে বেড়াবে।এই অর্থে তারা জীবিত যা কুরআনে বিভিন্ন স্হানে বলা হয়েছে শহিদেদের তোমরা মৃত বলো না বরং তারা জীবিত।আল্লাহর পথে জিহাদ করতে করতে যারা মারা যায় যাকে আমরা গাজি বলি সেই মৃত্যুও ভাল বলে গন্য হবে।রাসূল সা; বলেছেন,তোমরা শহিদ কাকে ভাব? সাহবারা উত্তর দিল যে আল্লাহর দীনকে উঁচু করতে মারা যায় সে শহিদ।রাসূল সা: বললেন তাহলেতো শহিদ কম হয়ে গেল।সাহাবারা বললো তাহলে কারা শহিদ।রাসূল সা: বললেন,যে আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যু বরন করে সে শহিদ।যে ব্যাক্তি মহামারি রোগে মারা যায় সেও শহিদ।যে ব্যাক্তি পেটের পিড়ায় মারা যায় সেও শহিদ।আর যে ব্যাক্তি ডুবে মরে যায় সেও শহিদ।এভাবে যারা সাপে কেটে ,গাড়ি চাপা পড়ে,লন্চডুবি হয়ে,ছাদ পড়ে,দেয়াল ভেংগে মারা যায় ইনশাআল্লাহ শহিদ রাস্তা আল্লাহ দান করবেন তবে মুসলিম হতে হবে।কোন মহিলা যদি বাচ্চা প্রসবের সময় মারা যায় সেও শহিদ।যদি কেউ পুড়ে মারা যায় সেও শহিদ।কেউ যদি যক্ষারোগে মারা যায় সেও শহিদ।এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে কেউ যদি সাধারন অবস্হায় ভাল মানুষ কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে এ রোগ এসেছে ও মারা যায় তাহলে শহিদ বলে গন্য হবে। কিন্তু যদি রোগটি কারো সৃষ্টি হয় যেমন-বিড়ি সিগারেট,ড্রাগস,মদ্যপান,রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ন মৃতয়ু যাকে দলীয় ভাবে শহিদ বলে, প্রমোদ ভ্রমন করতে গিয়ে পানিতে ডুবে মরা বা এরকম জীবন হানি ঘটান সেগুলো শহিদের অন্তর্ভুক্ত নয়।ডাকাতের হাতে নিজের সম্পদ রক্ষার্থে মৃত্যুও শহিদি মৃত্যু।কেউ যদি তার ধর্মের দাওয়াত দিতে গিয়ে
মৃত্যু বরন করে সেটি শাহাদাতের মৃত্যু।নিজের আত্মরক্ষার জন্য মৃত্যু ও সাহাদাতের মৃত্যু। রাসূল সা; বলেছেন,যে তার দীন রক্ষার্থে মারা যাবে সে শহিদ। মুসলিম দেশের পাহারা দেয়ার জন্য বহিশক্রুর আক্রমনে যদি কেউ মারা যায় সেই মৃত্যুকেও ভাল মৃত্যু বলে বলা যায়। রাসূল সা: বলেছেন একদিন একরাত্র আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেয়া একমাস রোজা ও একমাস রাত্রির নামাজ পড়ার চেয়ে উত্তম।যদি কেউ ভাল কাজ করা অবস্হায় মারা যায় তাহলে এই মৃত্যুটি ভাল বলে গন্য হবে।কোন ব্যাক্তির মৃত্যুর পর ভাল বলাটাই উত্তম।আল্লাহর রাসূল সা: বসেছিলেন সাহাবাদের নিয়ে একটি জানাযা গেল এবং সবাই বললো লোকটা ভাল।রাসূল সা: বললেন তিনবার অজাবাত।আর একটি জানাযা গেল সাহাবারা বললেন লোকটি ভাল নয়।রাসূল সা: তিনবার বললেন অজাবাত।ওমর রা: বললেন হে আল্লাহর রাসূল সা: বুঝলাম না ঘটনাটা কি।রাসূল সা: বললেন যে ব্যাক্তি সম্পর্কে তোমরা ভাল বলেছ সে ব্যাক্তির জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে।আর যে ব্যাক্তি সম্পর্কে তোমরা মন্দ বলেছে ঐ ব্যাক্তির উপর জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গিয়েছে।রাসূল সা: সাহাবাদের লক্ষ্য করে বলেছেন, ফেরস্তারা আসমানের সাক্ষি আর তোমরা জমিনের সাক্ষি।
মৃত ব্যাক্তির গোসল দিতে হবে।গোসলের মধ্যে বেশ কিছু জিনিস লক্ষ্যনীয়।যিনি পানি ঢালবেন বিজোড় পানি ঢালবেন।গোসলের সময় পানিতে বরই পাতা দেয়া যদি তা না পাওয়া যায় সাবান মোটকথা এরকম শরিয়ত সম্মত জিনিস দিয়ে ময়লা পরিষ্কার হয় তা দিয়ে গোসল দেয়া ।শেষবার পানিতে আতর দিয়ে গোসল দিতে হবে।মহিলা যদি হয় মাথায় ও যদি বেনি গাথা থাকে তাহলে বেনি খুলে দিয়ে ভাল করে ধৌত করে চিরুনি দিয়ে আছড়িয়ে তিনটি বেনি করে পিছন দিয়ে দিতে হবে।গোসলের ওজুর যায়গা দিয়ে শুরু করতে হবে।প্রত্যেকটি কাজই আগে ডান দিক থেকে করে বামে যেতে হবে।পুরুষদের গোসল পুরুষরা দিবে এবং মহিলার গোসল মহিলারা দিবে।তবে কিছু আলাদা মাসলা মাসায়েল রয়েছে।গোসলের সময় একটা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।হাতের মধ্যে একটি পরিষ্কার কাপড়ের নেকড়া নিয়ে ঢাকা কাপড়ের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে পরিষ্কার করে ধোবে।মনে রাখতে হবে মৃত ব্যাক্তি যেন বস্ত্রহীন না হয়।মোহরেম অবস্হায় মারা গেলে আতর-গোলাপ জল লাগানো যাবে না।স্বামি স্ত্রী একে অপরকে গোসল দিতে পারবে।রাসূল সা: এর ইন্তেকালের পরে বেশ কয়েকজন মিলে গোসল দিয়েছিলেন।আয়শা রা: পরবর্তিতে বলেছিলেন যে ঘটনা ঘটেছে যদি আগে আমরা জানতাম পরে যা জেনেছি তাহলে রাসূল সা:কে তাঁর স্ত্রীরা ছাড়া কেউ গোসল দিত না।যায়েয না হলে মা আয়শা রা; গোসল দেয়ার ইচ্ছা পোষন করতেন না।মা আয়শা রা: একদিন বলছেন আমার মাথায় চরম ব্যাথা।রাসূল সা: জানাজার নামাজ পড়িয়ে এসেছিলেন।তিনি মজা করে বলছিলেন আমারও মাথা ব্যাথা।আল্লাহর রাসুল সা: বললেন তুমি যদি মরে যাও তোমাকে নিজ হাতে গোসল দিব, এবং কাপন পরিয়ে দিব এর পর তোমার জানাযার নামাজও পড়বো এবং আমি তোমাকে দাফনও করে দিব।স্ত্রীকে গোসল দেয়া যায়েয না হলে রাসূল সা: কি এমন কথা বলতে পারতেন।ফাতেমা রা: যখন মারা গেলেন তখন আলি রা: নিজ হাতে তাকে গোসল দিয়েছিলেন।যারা ওয়ালি তারাই গোসল দিবে এবং এটাই উত্তম।কেউ যদি গোসলের জন্য কাউকে অছিয়ত করে যায় তিনিই গোসল দিবেন।কিন্তু যদি কেউ কোন অজ্গ বা বিদাআতি বা শরিয়তের বিধি বিধান জানে না এমন কাউকে অছিয়ত করে যায় তাহলে তা মানা যাবে না।যে সূন্নতের তরিকা জানে আর সে যদি ওয়ালি হয় সেটাই উত্তম।তা নাহলে শরিয়তের হুকুম আহকাম জানে এমন কেউ এ দায়িত্ব পালন করবে।গোসল করানোর মধ্যে অনেক সওয়াব রয়েছে।মৃত ব্যাক্তির যদি কোন ক্রুটি দেখতে পায় তা যেন অন্যের কাছে প্রকাশ না করা হয়।রাসূল সা: বলেছেন,কোন মুসলিম যদি মুসলিমের গোসল দেয় ও মন্দ কিছু দেখে ও গোপন রাখে আল্লাহ পাক তাকে চল্লিশ বার ক্ষমা করবেন।গোসলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করতে হবে।যে ব্যাক্তি গোসল দিবে সেই ব্যাক্তির গোসল করা মোস্তাহাব।রাসূল সা: বলেছেন,যে ব্যাক্তি মৃত ব্যাক্তির গোসল দিবে সে যেন গোসল করে আর যে ব্যাক্তি খাট ধরে নিয়ে যাবে সে যেন ওজু করে।' যে ব্যাক্তি যুদ্ধ ক্ষেত্রে শহিদ হয়েছে তাকে গোসল দেয়ার দরকার নেই।যে অবস্হায় শহিদ হয়েছে সে অবস্হায় রক্তমাখা কাপড় দিয়ে তাকে সমাহিত করতে হবে।রাসূল সা;বলেছেন,তাদের এই রক্ত নিয়ে যখন কিয়ামতের দিন উঠবে তখন এই রক্ত থেকে মিশক-আম্বরের খুশবু বের হবে।গোসলের পর মৃত ব্যাক্তিকে কাপন পরাতে হবে।কাপন পরানো ওয়াজিব।কাপন বেশি দামেরও হবে না আবার কম দামেরও হবে না।কাপনের কাপড় কিনতে হবে তার ছেড়ে যাওয়া সম্পদের টাকা থেকে।আর যদি সে ব্যাক্তির ক্ষমতা না থাকে তাহলে অন্যরা ব্যাবস্হা করবে।খেয়াল রাখতে হবে যেন কাপনে পুরো শরীর ঢেকে যায়।রাসূল সা;একদিন খুতবা অবস্হায় জানতে পারলেন একজন মানুষকে রাত্রীবেলা কবরস্হ করা হয়েছে কিন্তু তার কাপন ভাল করে পরানো হয় নি।রাসূল সা: বললেন রাত্রিবেলা এভাবে কাপন পরানো চলবেনা।কেউ যখন তোমাদের ভাইকে কাপন পরাবে বড় কাপড় দিয়ে কাপন পরাবে যেন শরীর ঢেকে যায়।যদি এমন হয় যে মৃতের সংখ্যা বেশি ও কাপনের কাপড় কম তখন হাঁটু থেকে মাথার দিক পর্যন্ত ঢেকে দিতে হবে ও পায়ের দিকে ঘাস বা খড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।শহিদ ব্যাক্তি হলে তার কাপড় খোলার দরকার নেই,ঐ রক্তমাখা কাপড় দিয়েই তাকে সমাহিত করতে হবে।অন্য সাধারন ব্যাক্তি হলে কাপড় খুলে নিতে হবে। রাসূল সা: ওহুদে বলেছেন,তাদের কাপড় যেভাবে আছে সেভাবে কবর দাও তাদের কাপড় খুলে নিও না।' পুরুষ বা নারি হোক কাপনের কাপড় হবে তিনটি।আমাদের দেশে মহিলাদের ৫টি কাপড় ও পুরুষদের ৩টি দেয়া হয়,এর জন্য ছহি কোন দলিল নেই।রাসূল সা; এর ইন্তেকালের পর তিনটি কাপড় দিয়েই সমাহিত করা হয়েছিল।মোহরেম ব্যাক্তির অবস্হা হলো সে দুটি সাদা কাপড় পরে হজ বা ওমরাহতে বের হয়েছে সে কাপড়েই সমাহিত করতে হবে তবে মাথা ঢাকা হবে না।যারা হজ ও ওমরাহতে যান তাদের এই তাত্তিক বিষয়টি জানা থাকলে হজের মাঠে বা ওমরাহ করতে গিয়ে অনেকে যে দুনিয়াবি কথা বা কাজ করেন তা করতেন না।সাদা এই দুটি কাপড় পরার অর্থ হলো নিজেকে দুনিয়া থেকে ছিন্ন করে কবরের দিকে নিয়ে যাওয়া।কাপন পরা হয়ে গেলে তিনটি বাঁধন,মাথার দিকে একটি,মাঝে একটি ও পায়ের দিকে একটি দিতে হবে।এর পর কাপনের উপর বাখুর(সুগন্ধি) তিনবার লাগিয়ে দেয়া।কাপনের কাপড়ের ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে যেন বেশী দাম দিয়ে কেনা না হয়।অনেকে মনে করতে পারে যে গ্রুফ অব ইন্ডাষ্ট্রির মালিক বা দেশের কোন বড় শাসক মারা গেলে কাপড়টা ভাল হতে হবে এমন যেন না হয় কারন আল্লাহর সামনে প্রতিটি মানুষ সমান এবং তাকওয়ার মাধ্যমে মর্যাদা নিরুপিত হয়।যারা আগে থেকে কাপনের কাপড় কিনে রাখে বা অনেকে বিদেশ থেকে নিয়ে যায় এ নি:সন্দেহে বিদাআত।যারা উদ্দেশ্য মুলক ভাবে মক্কা বা মদিনা থেকে কাপড় কিনে বা যমযমের পানি দিয়ে ধৌত করে রাখে যে এই কাপড় পরানো হলে কবর আযাব কম হবে,এগুলো আক্কিদার পরিপন্থি কাজ।এখান থেকে শিক্ষনীয় হলো অপচয় করা যাবে না।জীবনের সর্বক্ষেত্রে অপচয় বন্ধ করে মানুষের কল্যান করাই হলো মানুষের মৌলিক কাজ।ছহি হাদিসে তিনটি কাপড় ও দুর্বল হাদিসে ৫টি কাপড়ের কথা বলা হয়েছে এবং আল্লামা ইবনে হাজার বা অন্যান্যরা ৫টি কাপড়ের যে হাদিসটির বর্ননা কারিদের মধ্যে একজন আপরিচিত বর্ননাকারি থাকায় দুর্বল হাদিস বলে সাব্যস্হ করেছেন।কাপনের কাজ শেষ হয়ে গেলে মৃত ব্যাক্তিকে খাটে করে কবরের দিকে নিয়ে যেতে হবে।একজন মুসলিমের জন্য আর একজন মুসলিমের হকের মধ্যে একটি হক হলো তার জানাযায় যাওয়া ও তাকে সমাহিত করা।এ কাজটি দু'ভাবে হতে পারে।কারো কবর পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব না হলে জানাযা দিয়ে ফিরে যেতে পারে।আর যাদের পক্ষে কবর পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব তারা সেখানে যাবে।যারা দু'টি কাজই করবে তারা দুই কিরাত( এক কিরাত ওহুদ পাহাড় সমপরিমান) নেকি পাবে।রাসূল সা: দুটো-ই করেছেন সেজন্য উম্মতের জন্য যায়েয আছে দুটো করা বা একটা করা।জানাযার নামাজ হলো ফরযে কেফায়া। সমাজের কিছুসংখ্যক মানুষ হাজির হলে অন্যদের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে কিন্তু কেউ আদায় না করলে সবাই গুনাহগার হবে। না বালক/না বালিকা বা শহিদ হলে জানাযার নামাজ পড়া ফরযে কেফায়া নয় কিন্তু নামাজ পড়া যায়েয।রাসূল সা: এর ছেলে ইব্রাহিম যখন মারা গেলেন তিনি জানাযার নামাজ পড়েন নি।শহিদদের ব্যাপারে ও তিনি সবার যানাজার নামাজ পড়েন নি একমাত্র হামজা রা: ছাড়া। কোন যেনা কার/কারিনীর রজম হওয়ার পর জানাযা পড়া যায়েয আছে।রাসূল সা: এর সময় একজন যেনাকরি মহিলা পেটে সন্তান থাকা অবস্হায় এসে বললো হে রাসূল সা: আমাকে পবিত্র করুন।তিনি তার ওয়ালিকে ডেকে বললেন তার বাচ্চা বড় হলে তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে।এর পর সে মহিলা আসলো ও রাসূল সা: সাহবাদের বললেন তাকে রজম করে দাও ও সহাবারা তাই করলেন।তার পর রাসূল সা: ঐ মহিলার জানাযার নামাজ পড়তে দাঁড়ালেন।ওমর রা: পিছন থেকে রাসূল সা:কে টেনে ধরলেন ও বললেন আপনি একজন ব্যাভিচারি মহিলার নামাজ পড়াবেন? রাসূল সা: বললেন,ওমর এই মহিলার তওবা আল্লাহর কাছে এতই গ্রহনীয় হয়েছে যে,এই তওবাকে যদি ভাগ করে দেয়া যেতো মদিনার ৭০টি বাড়িতে তাদের জন্য যথেষ্ঠ হয়ে যেত।' সেভাবে কেসাসের পরেও জানাযা পড়া যায়েয আছে। কোন পাছেক,আত্মহত্যাকারি যদি মারা যায় তাহলে মুল ঈমাম নামাজ পড়াবে না,সাধারন মানুষ দিয়ে নামাজ পড়াতে হবে।রিনখেলাপি ব্যাক্তির রিন পরিষোধ না হলেও মুল ঈমাম নামাজ পড়াবেনা।যদি এমন হয় কোন ব্যাক্তির জানাযা ছাড়া দাপন হয়ে গেছে বা অল্প মানুষ দিয়ে জানাযা হয়েছে বা মুল ঈমামকে জানানো হয়নি তখন তিনি ও বাকি যারা আছে তারা গিয়ে আবার জানাযার পড়তে পারবে।রাসূল সা: এর মসজিদের ঝাড়ু দিত এমন একজন মহিলা মারা গেলে রাতে রাসূল সা:কে না জানিয়ে কবর দেয়া হয়েছিল।রাসূল সা: যখন জানলেন তখন তিনি গিয়ে জানাযার নামাজ পড়েছিলেন।যদি কেউ মারা যায় ও জানাযার না হয়ে থাকে তাহলে গায়েবি জানাযা পড়া যায়েয।এখানে তিনটি মত রয়েছে।একটি মত সাধারন অবস্হায় যে কেউ মারা গেলে জানাযার নামাজ যায়েয ,আর একটি মত হলো যায়েয নাই- এটা রাসূল সা: এর জন্য খাস,আর একটি মত হলো যদি মারা যায় ও জানাযার নামাজ হয় নি তাহলে জানাযার পড়তে হবে কারন এটা ফরযে কেফায়া। আবিসিনিয়ার বাদশা নাজ্জাসি ইসলাম গ্রহন করে তিনি গোপন রেখেছিলেন।তিনি যখন মারা গেলেন রাসূল সা: ওহির মাধ্যমে জানতে পারলেন তখন তিনি সাহাবাদের বললেন তোমাদের ভাই নাজ্জাসি মারা গিয়েছে ও তিনি তাদের নিয়ে জানাযার নামাজ পড়েছিলেন। এর পর আর কোন গায়েবি নামাজ পড়া হয় নি একমাত্র নাজ্জাসি ছাড়া কারন সেখানে তার জানাযা পড়া হয় নি।গায়েবি নামাজের হুকুম হলো যদি জানাযা না হয়ে থাকে তাহলে গায়েবি নামাজ পড়তে হবে আর জানাযা হলে পড়তে হবে না।কেউ কেউ বলেছেন এমন ব্যাক্তি যিনি ইসলামের অনেক খেদমত করেছেন এমন বড় আলেম ওলামা তাহলে এ ধরনের ব্যাক্তির গায়েবি জানাযা পড়া যায়েয আছে।তবে কোন পাছেক বাদশা বা নেতাদের জন্য যায়েয নাই। কোন কাফের মুশরেকের জানাযার নামাজ পড়া যাবে না।রাসূল সা: তাঁর মার দোয়া করার জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন,আল্লাহ পাক অনুমতি দেন নি কিন্তু কবর যেয়ারতের অনুমতি চেয়েছিলেন ও আল্লাহ অনুমতি দিয়েছিলেন।রাসূল সা: তাঁর মা'র কবর যেয়ারতের জন্য গিয়েছিলেন কিন্তু দোয়া করতে পারেন নি কারন তাঁর বাবা মা কুফরি অবস্হায় মারা গেছেন যারা জান্নাত বাসি হবেন না এবং তাদের জন্য দোয়াও করা চলবেনা। যারা বলে যে রাসূল সা: এর নবুওত পাওয়ার পর তাদের জিন্দা করে ঈমান এনে মারা গেছে এটা একটি গাঁজাখুরি গল্প এবং এর কোন দলিল নেই।ছহি দলিল হলো তারা কুফরি অবস্হায় মারা গিয়েছিল।জানাযার নামাজে তিনটি লাইন হবে এবং কমপক্ষে তিনজন হতে হবে। রাসূল সা: আবুতালহার নামাজে জানাযায় যখন দাঁড়ালেন তখন তিনি সামনে,আবুতালহার ছেলেকে তাঁর পিছনে এবং তার পরে উম্মে সোলাইমকে(আবু তালহার স্ত্রী) এই তিনটি লাইন করেছিলেন।এইজন্য বুঝা গেল কমপক্ষে তিনজন যদি হয় তাহলে জানাযার নামাজ হয়ে যাবে।রাসুল সা: বলেছেন,কোন মুসলিম যদি মারা যায় ও ১০০ জন ব্যাক্তি যদি তার জানাযায় হাজির হয় তাহলে তাদের সুপারিশ গ্রহন করবেন।যত বেশি মানুষ হয় ততই মৃত ব্যাক্তির জন্য কল্যান তবে তবে নেক বান্দাহ হতে হবে যাদের সুপারিশ আল্লাহ কবুল করবেন কিন্তু পাছেক,শির্ক-বিদাআতকারি,ব্যাভিচারি,সুদ ঘুষখোর এরকম লোকের সংখ্যা হাজার হাজার হলেও লাভ নেই।জানাযার নামাজ পড়ার অনেকে নিয়ম জানেন না।মৃত ব্যাক্তিকে কেবলা মুখি করে রাখা হবে।মহিলা হলে মধ্যখানে কোমর বরাবর ও পুরুষ হলে মাথার দিকে ঈমাম দাঁড়াবেন।চার তাকবিরে জানাযার নামাজ পড়তে হবে।কোন ইবাদতে নিয়ত পড়ার প্রয়োজন নেই।নিয়ত হবে অন্তরে।প্রথম তাকবির দেয়ার পর সূরা ফাতেহা ও একটি সূরা মিলাতে হবে।দ্বিতীয় তাকবিরের পর দুরুদে ইব্রাহিম পাঠ করতে হবে,তৃতীয় তাবিরের পর মৃত ব্যাক্তির জন্য ছহি হাদিসে এসেছে এমন দোয়া পড়তে হবে।চতুর্থ তাকবির দেয়ার পরে সালাম ফিরাতে হবে,দুই দিকে বা একদিকে দুটোর-ই নিয়ম হাদিসে আছে এবং রাসূল সা: করেছেন। প্রত্যেক তাকবিরের পর হাত উঠাতে হবে কিনা এর কোন প্রমান নেই তবে কোন কোন সাহাবি তাকবিরে হাত উঠিয়েছিলেন।যেহেতু সাহাবারা উঠিয়েছেন উঠানো যেতে পারে কারন তারাও আমাদের আদর্শ আর না উঠালেও কোন সমস্যা নেই এর জন্য কোন বাকবিতন্ডার প্রয়োজন নেই।প্রথম তাকবিরে হাত উঠাতে হবে ও হাত বুকের উপর বাঁধতে হবে। মৃত ব্যাক্তিকে খাটে করে নিয়ে যাওয়ার সময় অনেকে নিষিদ্ধ অনেক কাজ করে থাকে।এর মধ্যে পিছনে নারি পুরুষ চীৎকার করে কাঁদা,কাউকে চিৎকার করে বলতে শুনেছি তোমরা দেখ জান্নাতি চেহারা,কেউ আগরবাতি সাথে সাথে জালিয়ে নিয়ে যায় এগুলো করা যাবে না।রাসূল সা: বলেছেন,যখন জানাযাকে নিয়ে যাবে তখন কোন রকম চিৎকার করা যাবে না।অনেকে জানাযার আগে উচ্চস্বরে কুরআন বা দোয়া পড়ে এগুলো রাসূল সা: থেকে কোন প্রমান নেই।রাসূল সা: বলেছেন জানাযার সময় চিৎকার বা উচ্চস্বরে কোন কিছু বলা যায়েয নয়।মুসলিম ও অমুসলিম দেশে ঢাক ঢোল বাজিয়ে করুন স্বরে মৃত ব্যাক্তিকে নিয়ে যাওয়া বা সম্মানের নামে যে তোপদ্ধনি দেয়া হয় বা শহিদ মিনারে নিয়ে রাখা হয় এগুলো সব বিদাআত।মৃত ব্যাক্তিকে খাটে করে নিয়ে যাওয়ার শিক্ষা হলো নিজের মৃতু্কে স্মরন করা ও দ্রুত নিয়ে যাওয়া।কবরস্হ হয়ে গেলে একাকি দোয়া করতে হবে।কিন্তু শির্ক ও বিদাআতি কাজ যেমন- কবর পাকা করা, অনেকে মিলে দিনের পর দিন কুরআন খতম দেয়া,মোমবাতি জালানো,তিন দিন বা চল্লিশ দিনে খাওয়ানো ও এর জন্য মাইকিং করে জানানো,কবরের পাশে বসে সম্মিলিত ভাবে দোয়া পড়া এসব না যায়েয কাজ।আল্লাহ পাক আমাদের কুরআন ও ছহি হাদিস অনুশীলন করে মৃত্যুকে বেশী বেশী স্মরন করার তাওফিক দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
৫৫০৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন