সচেতনতা ও নিয়মানুবর্তী জীবন অনেক রোগ নিয়ন্ত্রনের একমাএ উপায়।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৯:১৮:৩৪ রাত
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।সে জন্য তাদের কথা ও কাজগুলো হওয়া উচিত কল্যানমুখী।একটা নিয়ন্ত্রিত জীবনই দিতে পারে সুখ সমৃদ্ধি।ইসলামের যে মৌলিক ৫টি বিষয় রয়েছে তা যথাযথ পালন করলে একজন মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রিত না হয়ে পারে ন।৫ ওয়াক্ত নামাজের কথাই ধরুন, যিনি আল্লাহর হক্ক আদায় করে রুজু খুশুর সাথে নামাজ আদায় করেন আর এক ওয়াক্ত নামজের পর আর এক ওয়াক্তের জন্য ওপেক্ষা করেন তার সময়ের অভাব থাকে না ও তিনি কোন পাপে জড়াতে পারেন না।কারন কোরআন বলেছে নামাজ মানুষকে অশ্লিলতা থেকে দুরে রাখে।মালের শুদ্ধির জন্য যাকাত দেয়া ও বাইতুল্লার উদ্দেশে হজ্জ পালন।রোজার মাধ্যমে মানুষের রিপুগুলো দুর হয়ে যায়।তাহলে বুঝা গেল হারাম ও হালাল বেচে চলার কারনে মু'মীনের অন্তর পরিশুদ্ধ হতে থাকে।অন্তর
পরিশুদ্ধ হয়ে গেলে আর কোন খারাপ কাজ করা সম্ভব হয় না।অন্তর হয়ে যায় রোগমুক্ত।আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার পরিক্ষার জন্য রোগ ব্যাধি আসতেই পারে।যেমন আল্লাহ সূরা বাক্কারার ১৫৫ আয়াতে বলেন , আমরা নিশ্চই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয় ক্ষুধা দিয়ে ,মাল আসবাবের , লোকজন ও ফসলের ক্ষয় ক্ষতি দিয়ে।আর সুস্ংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের।মু'মীন যদি তার তাকদিরের উপর ও তৌহিদের দৃড় বিশ্বাস রাখে তাহলে মৃত্যু এসে গেলেও কোন অসুবিধে নেই। বর্ং মু'মীন সর্ব অবস্হায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে।বর্তমানে অনেক রোগ মানুষের উপর ভর করছে।উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস বা বহুমুএ অন্যতম।এ রোগগুলো শরীরে দেখা দিলে আমাদের নিয়ন্ত্রন করতে হবে ও সচেতনতা নিয়ে আসতে হবে।আর একটি বিষয় হলো আমাদের পড়াশুনা করে এ গুলোর গভীরতা সম্পর্কে জ্গান অর্জন করতে হবে।আল্লাহ পাক সূরা ইসরার ৮২ আয়াতে বলেন , এ কোরআন ঈমানদারদের জন্য হেদায়েত ও শিপা বা প্রতিষেধক ও রহমত আর অত্যাচারি লোকদের জন্য ক্ষয় ক্ষতি।আল্লাহর আইন মেনে চললে আমরা যা ইছ্ছে তাই করতে পারি না।অধিকা্ংশ রোগ আমরা হয়ত পুরোপুরি ভাল করতে পারবোনা তবে সঠিক জীবন যাপন করলে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হবে।ধরুন সময় মত খাবার খেতে হবে,ঔষধ সেবন করতে হবে,নিয়মিত বিশ্রাম নিতে হবে,শরির চর্চা করতে হবে,নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।যদি সময়গুলোকে আল্লাহর পথে নিয়ন্ত্রন না করা হয় তা হলে বিপর্যয় আসতে বাধ্য।আমাদের জানার আগ্রহ তৈরি করতে হবে।আমি যখন ডাক্তার দেখাতে যাই ঐ ব্যাপারে কিছু এনালাইসিস করে যাই যাতে ডাক্তারকে প্রশ্ন করতে পারি।কারন আপনার শরীরের খবর আপনিই রাখেন।
সুবহানাল্লাহ ,মানবদেহ পর্যালচনা করলে দেখা যায় এটা একটা যন্ত্রের মত।পৃথিবির যন্ত্রচালিত যানবাহনগুলো যেমন তৈল ছাড়া চলতে পারে না তেমনি মানুষ যন্ত্রের তৈল হলো গ্লুকোজ নামের একটি পদার্থ।আমাদের দেহের গ্লুকোজকে কাজে লাগাতে হলে ইনসূলিন নামের একটি পদার্থের প্রয়োজন হয়।ইনসূলিনের কাজ হলো রক্ত থেকে গ্লুকোজের কনাগুলিকে টেনে এনে দেহের কোষে দেয়া।এই ইনসূলিন প্রস্তুত হয় অগ্নাশয় থেকে।যখন অগ্নাশয় যথেষ্ট পরিমান ইনসূলিন প্রস্তুত করতে পারে না অথবা প্রস্তুত হওয়া ইনসূলিন দেহ ঠিকমত ব্যবহার করতে পারে না তখন রক্তে বাড়তে থকে গ্লুকোজ।আর এর ফলে দেহে প্রস্তুত হয় নানা অসামন্জস্য।এরই নাম ডায়াবেটিস বা বহুমূএ।ডায়াবেটিস নুতন কোন রোগ নয়।এর ইতিহাস অনেক দিনের।এই রোগটি খ্রীষ্টপূর্ব ১৫০০ সালে শনাক্ত করা হয় মিশরে।সে সময় এর নাম দেয়া হয় দ্রুতমূএশেষ।অনেকটা একই সময়ে ভারতও এই রোগটি সনাক্ত করে যার নাম দেয়া হয় মধূমেহ বা মধূমুএ।ডায়াবেটিস রোগীর মূ্ত্রে পিঁপড়া জমা হয় বলে এই নামকরন করা হয়।ডায়াবেটিস ২ প্রকার। টাইপ-১ ডায়াবেটিস: এই টাইপের ডায়াবেটিস শরিরে কোন ইনসূলিন প্রস্তূত করে না।যাদের এই টাইপের ডায়াবেটিস তাদের প্রতিদিন ইনসূলিন নিতে হয়। টাইপ ২ ডায়াবেটিস: এই টাইপে শরিরে যেভাবে ইনসুলিন ব্যাবহার করা উচিত সেভাবে করে না।অধিকা্ংশ ডায়াবেটিস রোগি এই টাইপের হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশনের এক পরিস্ংখানে দেখা যা্য় ২০৩০ সালের মধে্য্য ৫৫২ মিলিয়ন লোক অর্থাৎ ১০ জন প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের একজন এই রোগে আক্রান্ত হবে।যদি এ কথা সত্য পরিনত হয় তাহলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস এ ২০০ মিলিয়নের বেশি লোক এ রোগে আক্রান্ত হবে।এটি একটি ব্যায় বহুল ও জটিল চিকিৎসা।কেননা ডায়াবেটিস রোগি যে খাধ্য গ্রহন করছে তা থেকে প্রস্তুত হছ্ছে গ্লুকোজ। এটে করে রক্ত হয়ে যাছ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘন।এই ঘন রক্ত চিকন রক্তনালি দিয়ে চলাচল করতে বাধাগ্রস্ত হছ্ছে এব্ং আস্তে আস্তে বন্ধ করে দিছ্ছে রক্ত চলাচলের পথ।আর যে পথে রক্ত পৌঁছাবে না সে পথে কোন অ্কচিজেন ও পৌঁছবে না।ফলে অ্কচিজেনের অভাবে শরিরের ভিতরের কোষ বাঁচতে পারে না।তার মানে কতগুলো টিসু্র নির্ঘাত মৃত্যু।যদি এমন হতে থাকে তাহলে অ্ংগহানির দিকে যেতে থাকে এই শরীর যন্ত্র।অতিরিক্ত গ্লুকোজ মেশা ঘন রক্ত ছাঁকতে গিয়ে ধীরে ধীরে কিডনি বিকল হয়ে পড়ে।যার ফলে রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
তাহলে আমাদের জানা দরকার ডায়াবেটিস থাকলে ষ্ট্রোক বা পক্ষাঘাত বা হার্ট এটাকের আশ্ংকা বৃদ্ধি পায়।অনেক মহিলাদের গর্ভাবস্হায় ডায়াবেটিস হয়ে থাকে যে সব মহিলা এ রোগে ভোগেন তাদের গর্ভপাত অথবা শিশুর জন্মগত ত্রুটির সম্ভাবনা থাকে। ডায়াবেটিস হলে ভয়ের কোন কারন নেই।সাথে সাথে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিতে হবে।আপনার ঔষধ কি কাজ করে, কিভাবে খাবেন বা কোন পার্শপ্রতিক্রিয়া (side effect) আছে কিনা তা ডাক্তার বা ফার্মাসিষ্টের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।ডায়াবেটিস রোগির নির্দিষ্ট কোন খাবার তালিকা নেই।তবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে একটি খাদ্য তালিকা তৈরি করে নিতে পারেন।সপ্তাহে প্রতিদিন ৪৫ মিনিট শরির চর্চার অভ্যাস অত্যাবশ্যক।নিয়মিত শরিরচর্চা আপনার শরিরকে ইনসূলিন ভালভাবে ব্যাবহার সাহায্য করবে।আপনার ওজন নিয়নত্রনে আছে কিনা? আপনার উচ্চ রক্তচাপ সিস্টলিক ও ডায়াস্টলিক (১৩০/৮০) এর মাঝে আছে কিনা? আপনার পরিবারে এ রোগ আছে কিনা?আপনি কি মহিলা এব্ং গর্ভাবস্হায় এ রোগ হয়েছিল কিনা? আপনার শিশুর জন্মের সময় ওজন ৯ পা: বা তার বেশি ছিল কিনা? যদি এগুলোতে হাঁ সূচক সাইন পান তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।এই রোগের লক্ষন গুলো হলো বার বার টয়লেটে যেতে হয়,সব সময় ক্ষুধার ভাব ,তেষ্টা পাওয়া,চোখে অষ্পষ্ট দেখা, শরিরের কোন অ্ংশ কেটে গেলে সেরে উঠতে দেরি হোওয়া, ক্লান্তি বোধ করা ,হাত পায়ে শিহরন বা শুন্য হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
সচেনতার অনেকগুলো দিক আছে। নিয়মিত খাদ্য গ্রহন,নিয়মিত বিশ্রাম,নিয়মিত শরির চর্চা, ফাষ্টফুড ও কোমল পানীয় বর্জন,কোলেষ্টরেলযুক্ত খাবর বর্জন , প্রয়োজনীয় ক্যালরি গ্রহন। সরকারি উদ্যোগ যেমন- প্রচার মাধ্যম গুলোতে প্রচার , স্কুল কলেজে পাঠ্য পুস্তকে বিষয় সন্নিবেষিত করা,রাস্তাঘাটে হাটার জন্য প্রয়োজনীয় ফুটপাত রাখা, স্বাস্হবিষয়ক ক্লাব তৈরি করা,হাসপাতালে স্বাস্হবিষয়ক সেমিনারের ব্যবস্হা করা,ধর্মীয় আলেমগনের কোরআান ও হাদিসের আলোকে বক্তব্য উপস্হাপন করা ও ডাক্তারদের সপ্তাহে একদিন যার যার এলাকার রোগীদের ফ্রি ভিজিট এর ব্যাবস্হা করা।স্বাস্হবিষয়ক এক গবেষনায় বলা হয়েছে ৫টি বিষয় মেনে চললে ৮০ ভাগ ডায়াবেটিক নিয়নত্রন করা যায়।১: স্বাস্হকর খাবার- প্রচুর ফল ও শাক শব্জি তবে ডায়াবেটিক এর অনুকুলে শাক শব্জি ২: প্রতিদিন ৪৫ মিনিট শরির চর্চা কারা ৩: দেহে স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখা,৪:ধুমপান ও এ জাতিয় জিনিস বর্জন করা ৫: মদ পান ও এ জাতীয় সব জিনিস বর্জন করা।
স্বাস্হবিজ্গানিরা অনেক বড় বড় রোগের ঔষধ আবিষ্কার করেছেন।এক সময় যে রোগগুলো ভয়াভহ ও মানুষের মৃত্যু ডেকে আনত যেমন(কলেরা , ম্যালেরিয়া,গুটি বসন্ত,যক্ষা ) আজ অতি শহজে নিরাময় হয়ে যায়।কিন্তু প্রানান্তকর চেষ্টা করেও ডায়াবেটিসের প্রকৃত কারন এখনো নির্নয় করা সম্ভব হয় নি।চিকিৎসা বিজ্গানের উন্নতির সাথে সাথে আজ এ রোগকে মানুষ নিয়নত্রনে নিয়ে এসেছে।কেউ কেউ একে অন্যান্য সকল মারাত্মক রোগের জননী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।কাঠে ঘুন ধরলে যেমন এর স্হায়িত্ব নষ্ট হয়ে যায় তেমনি এ রোগ অনিয়নত্রিত থাকলে তাড়াতাড়ি শরির ভে্ংগে পড়ে।আমাদের হার্ট ,কিডনী,দাঁত,নার্ভ সিসটেম - এ গুরুত্বপুর্ন অ্ংগগুলো সম্পুর্ন বা আ্ংশিক ধ্ংশ হতে পারে অনিয়নত্রিত ডায়াবেটিস এর কারনে।অতএব এ রোগ নিয়নত্রনে সচেতনতার পাশাপাশি নিয়নত্রিত জীবন যাপন ই আমাদের কল্লান বয়ে আনতে পারে।মনে রাখবেন যে সব বাসায় ডায়াবেটিস রোগি আছে,ডায়াবেটিসের বিপরীত খাবার পরিবেশন না করাই ভাল।আপনি খেতে না দিলেও ডায়াবেটিস রোগিরা চুরি করে খেতে পছন্দ করে।
বিষয়: বিবিধ
২৮২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন