ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও ইহুদিবাদ সম্পর্কে আজকের মুসলিম অন্ধকারে অবস্হান করছে।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৩ জুলাই, ২০১৪, ০১:৪৮:৩৬ দুপুর

এক-:

ফিলিস্তিনের ইতিহাস ও আজকের গাজা উপত্যকার দিকে তাকালে যে কোনো মানুষ বর্তমান বিশ্বের ভণ্ডামিপূর্ণ, বর্বর, অসভ্য ও অসহায় রূপটি দেখতে পাবেন নি:সন্দেহে। গাজার নারী ও শিশুদের অসহায় আর্তনাদ যেন বিশ্ব মানবতার মৃত্যু যন্ত্রণার চিৎকার ধ্বনি। নির্বিচারে ইসরাইলি গোলাবর্ষণ চলছে গাজা এলাকা জুড়ে।নারী, পুরুষ, শিশুদের বিধ্বস্ত লাশের সারি পড়ে আছে পুরো এলাকাজুড়ে। তবুও বিশ্ব শক্তিগুলো নির্বিকার। ইসরাইলের প্রতি দায়সারা যুদ্ধবিরতির আহ্বান ছাড়া অসহায় মানুষদের বাঁচানোর কোনো চেষ্টাই তারা করছে না। মুসলিম বিশ্বের ক্ষমতাধররা কেন নীরব অথবা খুব নরম সুরে নিন্দা জানাচ্ছে, এবং এ নিন্দা জানানোর ভাষা কেনই বা অস্পষ্ট তা জানা নেই কোটি কোটি মুসলিমের। কারণ ওরা কষ্ট পেলে ইহুদি নিয়ন্ত্রিত বিশ্ব মিডিয়া এবং রাষ্ট্র শক্তিগুলো মুসলিম বিশ্বের রাজা-বাদশাহ ও তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর ক্ষমতার মসনদ নড়বড়ে করে ফেলতে পারে। গাজার রক্তাক্ততা দিন দিন বেড়েই চলছে।ইসরাইলি নৃশংসতায় ক্রমেই বাড়ছে নিহতের সংখ্যা। নিরপরাধ নারী-শিশুর লাশের পাহাড় উঠছে। সঙ্গে সঙ্গে বেদখল হয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর। স্থল আক্রমণের পাশাপাশি থেমে থেমেই চলছে ইসরাইলের বিমান হামলা।গত ৮ জুলাই শুরু হওয়া ইসরাইলের ‘অপারেশন প্রটেকটিভ এজ’ এ এখন পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা সাড়ে তিনশ’ ছাড়িয়ে গেছে। আহত হয়েছে কয়েক হাজার। আহতদের আর্তচিৎকারে ভারি গাজার আকাশ। মুমূর্ষুদের গুদাম হয়ে উঠেছে গাজার আল শিফা হাসপাতাল।বিশ্বব্যাপী তীব্র নিন্দা আর কূটনৈতিক তৎপরতার পরও গাজায় হামলা বন্ধের কোনো লক্ষণ নেই, বরং হামলা আরও বিস্তৃত করেছে ইসরাইল। গত রোববার গাজায় নতুন করে সেনা পাঠিয়েছে দেশটি। এদিন গাজার পূর্বাঞ্চলীয় শহর শেজাইয়াতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। এতে শিশুসহ ৪০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় শতাধিক লোক। এ নিয়ে গত ১৩ দিনে ৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত ও ২৫ হাজার আহত হন। একের পর এক গোলা ও ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে শেজাইয়ার বহুতল ভবনগুলো মিশে যায় মাটির সঙ্গে। মনোরম শহর মুহূর্তেই পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। চারদিকে শুরু হয় আহাজারি আর আর্তনাদ। জীবন বাঁচাতে এলাকা ছাড়েন হাজার হাজার বাসিন্দা। আল-জাজিরা, বিবিসি ও এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এসব তথ্য দিয়েছে।গত শনিবার গভীর রাত থেকে গাজার পূর্বাঞ্চলীয় শেজাইয়া শহরে কামান ও ট্যাংকের গোলাবর্ষণ শুরু করে ইসরাইলি সেনারা। হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা খলিল আল হাইয়ার বাড়ি লক্ষ্য করে ইসরাইলি বিমান হামলায় হাইয়ার ছেলে, ছেলের স্ত্রী ও তাদের দুই শিশুসন্তান নিহত হয়েছেন। এছাড়া একজন ফিলিস্তিনি ফটোসাংবাদিক ও একজন স্বাস্থ্যকর্মীও ওই হামলায় নিহত হন। হামলা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় রেডিও স্টেশন থেকে লোকজনকে ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে অনুরোধ করা হয়। স্থানীয় অধিবাসী আহমেদ রাবিয়া বলেন, শহরের কাছে ইসরাইলের ট্যাংক পৌঁছানোর পর মধ্যরাত থেকে প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ শুরু হয়। ওই অঞ্চলে অ্যাম্বুলেন্স এবং চিকিৎসক দলের যাতায়াত বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। রাস্তায় অনেক হতাহত পড়ে আছেন কিন্তু তাদের সাহায্য করা বা উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। শতাধিক আহত ফিলিস্তিনিকে গাজার কেন্দ্রীয় হাসপাতাল আশ-শেফায় ভর্তি করা হয়েছে বলে জানায় দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে দেখা গেছে, শেজাইয়া শহরের বড় বড় ভবনগুলো ভেঙে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। লোকজন আতংকিত হয়ে ছোটাছুটি করছেন। কোথাও পড়ে আছে মৃতদেহ, কোথাও চলছে স্বজনদের আহাজারি। কোথাও দেখা গেছে উদ্ধারকর্মীদের তৎপরতা। গাজার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, লড়াই শুরু হওয়ার পর এদিনই সবচেয়ে বেশি গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। ভোর রাতে ইসরাইলি নৌবাহিনীর জাহাজগুলো থেকে নিক্ষিপ্ত গোলার বিস্ফোরণে ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটি ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে ওঠে। শেজাইয়ার পার্শ্ববর্তী শহর রাফায়ও হামলা হয়েছে।অসহায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটেন। গাজার আল-জাজিরার প্রতিনিধি স্টেফনি ডেকার জানান, ‘আমরা যখন ব্যুরোতে ফিরছিলাম তখন দেখেছি শত শত ফিলিস্তিনি তাদের সন্তানদের কোলে নিয়ে হেঁটে এলাকা ছাড়ছেন।’ তাদের কেউ আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ জাতিসংঘের স্কুলগুলোতে উঠতে বাধ্য হচ্ছেন। দুই সপ্তাহ আগে ইসরাইলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই এসব স্কুলকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। তবে জাতিসংঘের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা। জাতিসংঘের শরণার্থী শিবিরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই অঞ্চলে ওষুধ, পানি, বিদ্যুৎ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

বর্তমান হত্যাযজ্ঞ শুরু হয় ১২ জুন পশ্চিমতীরে বসতি স্থাপনকারী তিন কিশোরের অপহরণ ও হত্যার মধ্য দিয়ে। দুষ্কৃতকারীদের এ নিন্দনীয় অপরাধের দায় গাজার নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে বহন করতে হচ্ছে। ইসরাইল এ ঘটনার জন্য ফিলিস্তিনের হামাসকে দায়ী করে প্রথমেই তল্লাশির নামে শ’খানেক বাড়িঘর ধ্বংস করে এবং কয়েকশ’ ফিলিস্তিনিকে আটক করে। পরে ফিলিস্তিনি আরেক কিশোরকে অপহরণ করে পুড়িয়ে হত্যা করে। কিন্তু হামাস কিংবা ফিলিস্তিনি অন্য কোনো গ্র“প ইহুদি বসতি স্থাপনকারী তিন কিশোরের হত্যার দায়িত্ব স্বীকার করেনি কিংবা ইসরাইলও এর পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। তাই গায়ের জোরে কোনো অপরাধকে অন্যের গায়ে ট্যাগ করে তাদের নিশ্চিহ্ন করার কৌশলকে অপকৌশল ছাড়া অন্য কিছু বলা যায় না। ইসরাইলি হামলায় যখন নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীসহ নিরপরাধ মানুষ নির্বিচারে বর্বর হত্যাযজ্ঞের শিকার হচ্ছে, তখন হামাস মিসাইল ছুড়ে ব্যর্থ প্রতিরোধের চেষ্টা করে। এতে ইসরাইল নতুন প্রচারণা শুরু করে, হামাসকে শক্তিহীন না করা পর্যন্ত তাদের আক্রমণ স্তিমিত হবে না।নিরপেক্ষ ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বিশ্লেষকদের ধারণা, এসবই ইসরাইলের অজুহাত। তারা আসলে ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করতে চায় যাতে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন নির্বিঘ্ন হয়। একই সঙ্গে বিগত দিনে নতুন তৈরি অস্ত্রগুলোর ধ্বংস ক্ষমতা বিশ্বের সামনে তুলে ধরে অস্ত্র বিক্রি বৃদ্ধির মাধ্যমে ইসরাইলি অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে চায়। এর পক্ষে বিশ্লেষকদের যুক্তি হচ্ছে, নির্দিষ্ট বিরতিতে ইসরাইল বিভিন্ন অজুহাত খাড়া করে ফিলিস্তিনের গাজা ও পশ্চিমতীরে হামলা করছে। চলমান অপারেশন ‘প্রটেক্টিভ এজ’, ২০১২ সালে ‘অপারেশন পিলার অব ডিফেন্স’, ২০০৮-০৯ সালে ‘অপারেশন কাস্ট লিড’, তারও আগে ২০০৬ সালে লেবাননের হিজবুল্লাহদের বিরুদ্ধে যুদ্ধসহ নিকট অতীতের ইসরাইলি কর্মকাণ্ড এ ধারণাকেই সমর্থন করে। প্রতি দুই বছরে নতুন আবিষ্কৃত অস্ত্রগুলোর ধ্বংস ক্ষমতা পরীক্ষা ও প্রদর্শন করে অস্ত্র বিক্রি বৃদ্ধির পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে নতুন নতুন এলাকায় অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনের মাধ্যমে এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করছে তারা।বিশ্ব নেতাদের নীরবতার সুযোগে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল যুগের পর যুগ ধরে তাদের এ বর্বর কৌশল প্রয়োগ করে যাচ্ছে অসহায় ফিলিস্তিনিদের ওপর। মধ্যপ্রাচ্যের জটিল রাজনীতির প্যাঁচে ইসরাইলের জন্য এ মুহূর্তে কাজটি বিগত দিনের চেয়ে সহজ হয়ে গেছে বলেই মনে হয়। ২০১২ সালের ইসরাইলি বর্বরতাকে আলোচনার মাধ্যমে থামাতে সক্ষম হয়েছিল প্রতিবেশী মিসরের মুরসি সরকার। সময়ের পরিবর্তনে জেলে বন্দি মুরসি আজ বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে অসহায় ফিলিস্তিনি ও গাজাবাসীর পক্ষে গান গাচ্ছেন। কিন্তু যারা মুক্ত তারা ব্যস্ত গদি রক্ষায়। এর অর্থ কি ফিলিস্তিন ধ্বংস হয়ে যাবে? না ইতিহাস তা বলে না। ইতিহাসের শিক্ষা হচ্ছে বর্বর জালিমরাই ধ্বংস হয়, মজলুমদের বিজয় হয় সময়ের ব্যবধানে। সম্ভবত এটি উপলব্ধি করেই সাবেক ইরানি প্রেসিডেন্ট আহমেদনিজাদ বলেছিলেন, পৃথিবীর মানচিত্র থেকে ইসরাইলের মুছে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।থিওডোর হার্জেলের স্বপ্ন ও ১৮৯৭ সালের জায়নবাদী ইহুদিদের সম্মেলনের দাবি এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেলফোরের স্বীকৃতি (বেলফোর ঘোষণা) এবং তুর্কি খেলাফতের পতনের পথ ধরে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এগিয়ে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এডলফ হিটলারের ব্যাপক ইহুদি নিধনযজ্ঞের ফলে বিশ্ব নেতাদের কাছে পৃথক ইহুদি রাষ্ট্রের যৌক্তিকতা ভিত্তি পায়। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ তার ১৮১ নম্বর প্রস্তাব পাসের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের ৫৫ ভাগ ভূমির ওপর ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠা পায় ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল। জন্মের পর থেকেই ফিলিস্তিনের মুসলমানরা তাদের জবরদস্তিমূলক উচ্ছেদের মাধ্যমে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আসছে। কারণ ইহুদিদের দুর্দশার জন্য মুসলমানরা দায়ী ছিল না। অথচ তাদের এজন্য খেসারত দিতে হচ্ছে। এর প্রতিবাদে ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)। জাতিসংঘ ফিলিস্তিনে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের প্রস্তাব পাস করলেও শুধু ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় ইহুদিদের জন্য। আরবদের ফিলিস্তিন আজও স্বাধীন হয়নি। উল্টো ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর থেকে ইসরাইল ফিলিস্তিনের ভূমি দখল শুরু করে।

পরাশক্তিগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আস্কারা এবং মুসলিম বিশ্বের অনৈক্যের সুযোগে বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বর্বর ও অমানবিক নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে ফিলিস্তিনে যুগের পর যুগ। হিংস্র জানোয়ারের সামনে কালো মানুষদের ছেড়ে দিয়ে গ্যালারিতে বসে তাদের আর্ত-চিৎকারে যেভাবে একসময় শ্বেতাঙ্গরা উল্লাস করত, ঠিক সেভাবে ইসরাইলের উঁচু পাহাড়ে বসে গাজায় বিমান হামলায় মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর মানুষের দুর্দশা দেখে আনন্দ-উল্লাস করছে জায়নবাদীরা, যা একজন ডেনিশ সাংবাদিকের টুইটারে প্রচারিত হয়েছে। তারা উল্লাস করবেই। কারণ তাদের মানসিকতায় মানবীয় কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। তাদের পার্লামেন্টের সদস্য আলিয়াত শাকিদের ফেসবুক স্ট্যাটাসে নিষ্ঠুরভাবে ফুটে উঠেছে এ চিত্র। ফিলিস্তিনের সব মানুষকে তিনি শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। শুধু মানুষ নয়, সব স্থাপনাও তার দৃষ্টিতে শত্র“ সম্পত্তি। এমনকি ফিলিস্তিনি নারীদের তিনি সর্প জন্মদানকারী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এ দৃষ্টিভঙ্গি ইসরাইলের অপরাধী চরিত্র বিশ্ববাসীর কাছে পরিষ্কারভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।

হিটলারের সময়ের জার্মানির ইহুদিদের দুর্দশা এবং আজকের ফিলিস্তিনি মুসলমানদের দুর্দশার মিল দেখে আশ্চর্য হই। হিটলার কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে ইহুদিদের জড়ো করে গ্যাস চেম্বারে নিয়ে হত্যা করত। আর বর্তমানে গাজা নামক উন্মুক্ত জেলে ফিলিস্তিনিরা এক অর্থে বন্দি। বিমান হামলার মাধ্যমে ধীরে ধীরে তাদের হত্যা করা হচ্ছে। ছোট্ট বালিকা আনা ফ্রাংকের ডায়রিতে জার্মানির ওই সময়ের যে করুণ চিত্র ফুটে উঠেছিল, তা গাজার অসহায় শিশুদের ভয়ার্ত চেহারায় আবার ফিরে এসেছে। হিটলার ও বর্তমান ইসরাইলের রাজনীতিকরা একই রকম ঘৃণ্য নর্দমার কীট। তফাৎ হচ্ছে হিটলার বিশ্বের সব বিবেকবান মানুষের ঘৃণার পাত্রে পরিণত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরাশক্তিগুলোর ঘৃণাও কুড়িয়েছিলেন। আর বর্তমান ইসরাইল বিবেকমান মানুষের ঘৃণা কুড়ালেও পরাশক্তিগুলোর আশীর্বাদে টিকে আছে। তাই ফিলিস্তিন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে আর অক্ষত আছে ইসরাইল। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ফিলিস্তিনের প্রতিটি শিশুর রক্তাক্ত ছিন্নভিন্ন দেহ বর্তমান বিশ্ব বিবেকের প্রতিচ্ছবি।তবে পরাশক্তিগুলো ঘুমিয়ে থাকলেও সাধারণ মানুষ ঘুমিয়ে নেই। ইসরাইলকে যার যার অবস্থান থেকে সবাই বয়কট ও ঘৃণা করছে। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং ইসরাইলের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন। ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ ইসরাইলের নিষ্ঠুরতার নিন্দা জানাচ্ছে। এমনকি যে মার্কিন ইহুদিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি নিষ্ঠুরতাকে সমর্থন করার অভিযোগ রয়েছে, তাদেরও কেউ কেউ ইসরাইলকে নিন্দা জানাতে শুরু করেছে। এভাবে ইহুদিবাদী ইসরাইল সময়ের ব্যবধানে একঘরে হয়ে পড়বে। তখন হয়তো তারা সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে বাধ্য হবে।

দুই:-

প্রশ্ন হলো মুসলিম জাতির কি জানা আছে ইহুদিদের সাথে তাদের অতীত সম্পর্ক কি? আসুন আমরা আলকুরআন ও হাদিসের আলোকে সামান্য জানার চেষ্টা করি।ইহুদিরা যে মানবতার শত্রু তা আল্লাহ আলকুরআনে তুলে ধরেছেন।মুসলিম জাতিকে আবারো সতর্ক করার উদ্দেশ্যে জানানো আবশ্যক মনে করছি যেন তাদের খারাপ দিকগুলো মুসলিমের ভীতর ঢুকে না পড়ে।মুসলিম জাতি যেন কোন অবস্হায় তাদের অনুকরন না করে।নবী সা: এদের ব্যাপারে সতর্ক ও ভবিষ্যৎবানি করেছেন।ক্কেয়ামত পর্যন্ত মুসলিমদের একটি দল যারা তাদের কাজে কর্মে আলকুরআন ও সূন্নাহের অনুসরন করে চলবে তারাই শ্রেষ্ঠ মুসলিম হিসেবে পরিগণিত হবে।এজন্য আল্লাহ পাক সূরা ফাতেহায় দু'টি জাতি (ইহুদি ও খৃষ্টান) থেকে বেঁচে থাকার জন্য দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন যা আমরা প্রতিটি মুসলিম নামাজে কমপক্ষে ৩২ বার বা এরও বেশি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে থাকি।আমরা সহজ সরল পথের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি।এই সরল পথ হলো নবী-রাসূল,চরম সত্যবাদি,শহিদ ও সৎ আমলকারিদের পথ।ইসলামে এই চার পথ ছাড়া পুরষ্কারের আর ৫ম কোন পথ নেই।যাদের উপর আল্লাহর লা'নত হয়েছে তারা হলো ইহুদি ও পথ ভ্রষ্ট খৃষ্টান এই দুই জাতি।এই ইহুদি জাতির উপর আল্লাহর লা'নত হয়েছে কারন তারা জেনে শুনে আপরাধে লিপ্ত হয়েছে।তারা নবী সা:কে চিনতো যেমন চিনতো তাদের সন্তানদের।তাওরাতে তারা স্পষ্ট জানতো শেষ নবী আসবে এবং যখন কুরাইশ বংশে শেষ নবীর আগমন হলো তারা কুফরি করলো ও হিংসার বশবর্তী হয়ে গেল।মোটকথা আল্লাহ মুসলিমদের এই পথ থেকে দূরে থাকার জন্য সতর্ক করেছেন এবং আমাদের মু'মিনদের রাস্তায় চলতে বলেছেন।মুসলমানদের জন্য রাসূল সা: বিজয়ের সুখবর তার হাদিছে রেখেছেন।ছহি মুসলিমে রাসূল সা: বলেন,' ক্কেয়ামতের আগে ইহুদিদের সাথে লড়াই হবে এবং প্রত্যেকটি বস্তু তোমাদের সাহায্য করবে এমনকি পাথর ও গাছ তাদের দেখিয়ে দিবে যারা তাদের ভিতর লুকিয়ে আছে তাদের হত্যা করার জন্য।' সুতরাং ভীত হলে চলবে না মুসলিমদের সঠিক পথে চলতে হবে।আজকের মুসলিম উম্মাহের অধিকাংশ এখন তাদের চলাফেরা,ভেষভূষা,সংস্কৃতি সভ্যতা,লেখাপড়া,পারিবারিক,সামাজিক ও রাষ্ট্রনীতিতে তাদের অনুসরন করছে।এইজন্যই মুসলিম জাতিকে সাময়িক আযাবে রুপান্তরিত করছে অনেক ক্ষেত্রে।আল্লাহ সূরা বাক্কারার ১২০ আয়াতে নবী সা:কে ইহুদিদের ব্যাপারে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন,' ইহুদিরা কখনো তোমাদের উপর সন্তুষ্ট হবে না,খৃষ্টানরাও নয় যতক্ষন না তুমি তাদের ধর্মমত অনুসরন না কর।তাদের বল-নিশ্চই আল্লাহর যা হেদায়েত তা-ই হেদায়েত।আর তুমি যদি তাদের ইচ্ছার অনুসরন কর তোমার কাছে জ্গানের যা এসেছে তার পরে,তাহলে আল্লাহর কাছ থেকে তুমি পাবে না কোন বন্ধু না কোন সাহায্যকারি।' আল্লাহ পাক এই আয়াতের মাধ্যমে নবী সা: এর মাধ্যমে ক্কেয়ামত পর্যন্ত সমস্ত মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছেন এই দু'টি জাতি সম্পর্কে।তার পরও মুসলিমরা কেন তাদের বন্ধু হিসেবে নিয়েছে? বসবাসের ক্ষেত্রে মুসলিম দেশ ছেড়ে তাদের মধ্যে বসবাস করছে,তাদের জাতীয়তার টিকেট ক্রয় করে তাদের দলকে ভারি করছে।ইহুদি জাতি এক জগন্য আপরাধি জাতি যারা নবী মুসা আ: এর সাথে বেয়াদুবি করেছিল সে সময় যখন তাদের ধর্মে কোন বিকৃতি ছিল না।তাদের নিকট তখন "মান্না ও সালওয়া( পাখি ও হালুয়া জাতীয়) নামক খাবার আসমান থেকে নাজিল হতো।কিছুদিন খাওয়ার তারা মুসা আ;কে বললো আমরা রোজ রোজ একই খাবারে সন্তুষ্ট থাকবো না তুমি তোমার রবের নিকট বলো ভিন্ন ধরনের খাবার দেয়ার জন্য যা সূরা বাক্কারার ৬১ আয়াতে আল্লাহ বর্ননা করলেন,'আর স্মরন কর! তোমরা বলেছিলে-'হে মুসা! আমরা একই খাবারে সন্তুষ্ট থাকতে পারছিনা তাই তোমার প্রভুর কাছে প্রার্থনা কর যাতে তিনি আমাদের জন্য উৎপন্ন করেন মাটি যা উৎপাদন করে-যেমন তার শবজি ও তার শস্য ও তার মষূর ও পেঁয়াজ' তিনি বলেলেন,'তোমরা কি বদল করে নিতে চাও যা নিকৃষ্ট তার সংগে যা উৎকৃষ্ট? নেমে যাও কোন মিশরে, তাহলে তোমরা যা চাও তা-ই পাবে।আর ওরা নিজেদের উপর লান্চনা ও দূর্দশা ঘটালো।আর তারা আল্লাহর রোষ টেনে আনলো তাই হলো কারন তারা আল্লাহর আয়াতকে অবিশ্বাস করেছিল আর নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করতে যাচ্ছিল।তাই হলো কেননা তারা অবাধ্য হয়েছিল ও সীমালংঘন করেছিল।" এই রকম খারাপ চরিত্র এখন এক শ্রেনীর মুসলিমেরও তৈরি হয়েছে।অনেক ভাল খাবার তাদের সামনে থাকলেও তারা সন্তুষ্ট থাকে না।কোথাও ভোজ হলে বলে এ খাবার তো গরু ছাগলেও খায় না বা মেহমান হয়ে খেয়ে বের হলেই খাবারের মান ভাল না বা এ খাবার পরিবেশনের জন্য দাওয়াত দেয়া ঠিক হয়েছে কিনা এরকম মন্তব্য করে।আবার এ রমজান মাসে কৃচ্ছতার যায়গায় ভুরি ভুরি খাবার ইফতারের নামে গার্ভেজে ফেলা হয় অথচ তারই পাশের দেশে মানুষ অভুক্ত হয়ে দিনাতিপাত করছে।আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া এখন মুসলিম জাতি করছে না ।তাদের চরিত্র এখন ইহুদিদের ও ছড়িয়ে যাচ্ছে।জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যে তাদের আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা দরকার তা তারা ভুলে গেছে সে জন্য ইহুদি ও খৃষ্টানের দ্বারা সৃষ্ট লান্চনা তাদের উপর নিপতিত হচ্ছে।মুসলিম জাতিকে আল্লাহ শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন কিন্তু তারা তাদের আচরনে ঐ সব নিষিদ্ধ জাতিদের কাছা কাছি চলে গেছে।ইহুদিরা বলতো আমরা শুনবো মানবো না। আজকে এক শ্রেনীর মুসলিমতো ইসলামের কথাই শুনতে চায় না।৫ ওয়াক্ত নামাজ কায়েম করেনা আবার তারা নিজেদের মুসলিম হিসেবে আখ্যায়িত করছে।তারা এ ও জানে না যে কোন বেনামাজি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।এরাই খাতনা করা ও গরুর গোস্ত খাওয়া মুসলমান।এরা সৃষ্টির নিকৃষ্ট যারা আল্লাহকে সেজদা করে না।

হিটলার ৬ লাখ ইহুদিকে হত্যা করে কিছু অবশিষ্ট রেখে বলেছিল যাতে করে তারা জানতে পারে কেন তাদের হত্যা করা হয়েছে।এরা ছিল এক বদবখত জাতি যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল এবং আজও করছে।মদিনায় তিনটি ইহুদি গোত্র ছিল যারা দিনের প্রভাতের মত খতমে নবুওত দেখতে পেয়েছিল তাওরাতে তার পরও তারা অস্বীকার করেছিল।যারা নবীদের হত্যা করেছিল আজ তাদের দ্বারা মানুষ হত্যা হবে এটা কি খুব কঠিন ব্যাপার? নবী সা: কে খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে হত্যা প্রচেষ্টা করেছিল এই ইহুদিরাই।খায়বারের এক ইহুদি মহিলা বিষমাখা গোস্ত দিয়েছিল নবী সা:কে।তখন আল্লাহপাক তাঁকে হেফাযত করেছিলেন ইসলামের দাওয়াতের জন্য যা তার উপর অর্পিত হয়েছিল।তাঁর জীবনের শেষ সময়ে ইন্তেকালের পূর্ব মুহূর্তে তিনি বলেছিলেন এই বিষক্রিয়ার কথা যা তার অন্তরকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করেছিল।বনুনাজির ইহুদিরা ও একজন ইহুদিকে প্রষ্তুত করেছিল তার জীবন নাশের জন্য।রাসূল সা: গিয়েছিলেন তাদের এলাকায় একটি বিচার ফায়সালায় এবং তিনি বসেছিলেন একটা দেয়ালের পাশে।একটি পাথর প্রস্তুত রেখেছিল তাঁকে হত্যা করার জন্য।সাথে সাথে আল্লাহ ওহি নাজিল করে রাসূল সা:কে জানিয়ে দিলেন ও তিনি কিছু না বলেই উঠে দ্রুত চলে গেলেন।আবু বকর ও ওমর রা: ও বসে থাকলেন না কারন রাসূল সা; চলে গেছেন বলে তারা নবী সা:কে অনুসরন করলেন।এই ভাবে আল্লাহ তাদের কবল থেকে রাসূল সা:কে বাঁচিয়েছিলেন।এই হিংসার কারন হলো তারা চেয়েছিল শেষ নবী তাদের জাতি থেকেই আসবে।ইসলামে এই জন্য জাতীয়তাবাদকে হারাম করে দেয়া হয়েছে।হোক সে গোত্রের ভিত্তিতে,ভাষার ভিত্তিতে ও দেশের ভিত্তিতে।ইসলামের জাতীয়তা হলো ইসলাম।পৃথিবীর যে দেশেই মুসলিম থাকুক তারা একে আপরের ভাই।তাদের এই বিদ্বেষের জন্য আল্লাহ সূরা বাক্কারার ৯০ আয়াতে বলেন,'গর্হিত তা যা দিয়ে তারা নিজেদের আত্মা বিনিময় করেছে যে জন্য আল্লাহ যা অবতারন করেছেন তা তারা অবিশ্বাস করে বিদ্বেষের বশে-যে আল্লাহ তার কৃপাবশত: উহা অবতীর্ন করবেন তার দাশদের প্রতি যাকে ইচ্ছা করবেন তার প্রতি।তাই তারা রোষের পর রোষ টেনে আনলো।আর অবিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে লানচনাদায়ক শাস্তি।'আল্লাহ মু'মিনদের জন্য সূরা আলইমরানের ১০০-১১২ আয়াতে বিক্ষিপ্তভাবে বর্ননা করেছেন তাদের কিভাবে মুসলিম হতে হবে আর কি পরিনতি রয়েছে এই ইহুদি জাতির জন্য।" ইহুদিরা যেখানেই থাকুক না কেন তাদের জন্য আল্লাহর অভিসম্পাত রয়েছে।বর্তমান পশ্চিমা জগৎ,ইহুদিরা সীমালংঘন করা স্বত্বেও তাদের সাহায্য করছে।ফিলিস্তিনের মুসলিম যাদের ৬৭ বছর ধরে হত্যা করছে,তাদের বাড়ি ঘর ধ্বংস করছে এবং বলছে এরাই সন্ত্রাসী।গত দুদিন আগেও তাদের পার্লামেন্টের একজন নারি নেত্রী বলেছে ফিলিস্তিনে মা'দের হত্বা কর যেন তারা সন্ত্রাসী জন্ম না দিতে পারে।এ পরিস্থিতিতে মুসলিম জাতি যদি একত্রিত না হয়, তাদের ঈমান ও আলকুরআন ও সূন্নাহের দিকে ফিরে না আসে কখনো তাদের মুকাবিলা করা সম্ভব নয়।আর যদি গোটা মুসলিম বিশ্ব একসাথে তাদের হুন্কার দেয় এই ইহুদি খৃষ্টান এক মুহূর্তে ভেসে যাবে।আল্লাহ আলকুরআনে বলেছেন নিশ্চয়ই আমার সেনা বাহিনী বিজয় লাভ করবে।কিন্তু মুসলিমকে হতে হবে সত্যিকার তৌহিদবাদি ,নামাজি ও ঈমান লালনকারি মুসলিম।নবী সা: এর ত্বরিকা ছেড়ে দিয়ে মানব রচিত বিধান,কবরপূজা ও ছহি সূন্নাহ ছেড়ে দিয়ে বিদাআ ও ফিরকার আশ্রয়ে মুসলিম জাতি বিজিত হতে পারে না।মুসলিমকে আল্লাহর রসি আঁকড়ে ধরে পূর্ন মুসলিম হতে হবে।আর ইহুদিদের মানুষের রসি যেদিন ছিন্ন হবে সেদিন মুসলিম বিজয় লাভ করবে কিন্তু মুসলিমদের ধৈর্য ও সবরের সাথে এগুতে হবে।বর্তমান মুসলিমের বৃহৎ অংশ আলকুরআন পড়ে, না বুঝে শুধু সওয়াব লাভের আশায়।আলকুরআন পড়লে সওয়াব হবে ঠিক কিন্তু শুধু এজন্য তো তা নাজিল হয় নি।আলকুরআনের সাথে মুসলিমের জীবনের যে অংগাংগি মিল থাকা দরকার তা এখন নেই।আল্লাহপাক এই নবীর উম্মত এত নাফরমানি করা স্বত্বেও তাদের খাওয়াচ্ছেন, পরাচ্ছেন।আল্লাহপাক মানবজাতির ইতিহাসে একটি জাতিকে শূকর ও বানর বানিয়েছেন সে জাতি হলো এই ইহুদি জাতি এবং তা করেছেন তাদের অপরাধ ও সীমালংঘনের কারনে।আল্লাহ সূরা মা'য়েদার ৭৮/৭৯ আয়াতে এদের এই সীমালংঘনের কথা বলেছেন।দাউদ আ; ও মরিয়াম পুত্র ঈসা আ; এসেছিলেন তাদের হেদায়েতের জন্য।দাউদ আ; এর জামানায় মাছ মারার ঘটনা ঘটলো।তাদেরকে বলা হলো শনিবারের উপর সীমালংঘন করোনা।শনিবার দিন দাউদ আ;অত্যন্ত সুন্দর ও সুললিত ভাষায় খুতবা দিতেন।যেহেতু তার কন্ঠস্বর ছিল সুললিত ও চমৎকার সেহেতু সেদিন মাছ উঠে আসতো খুতবা শুনার জন্য আর তিনি সুন্দর ও চমৎকার যবুর পাঠ করতেন।শনিবার ছাড়া অন্যদিন মাছ পাওয়া যেতো না।এ অসৎ জাতি ছিল মাছ খাওয়ার পাগল।আমাদের উপমহাদেশে বিদাআতিরা যে 'হিল্লা' বিয়ে করে তারাও "হিল্লা" করলো এভাবে যে,ঠিক আছে শনিবারে মাছ মারবো না তবে বাঁধ দিয়ে মাছ আটকিয়ে রাখবো ও রবিবারে মাছ ধরবো।আল্লাহপাক তখনি তাদের বানর বানিয়ে দিলেন।দাউদ আ;এর জবানের দ্বারাই তাদের উপর এই লা'নত দেয়া হয়েছিল।তারা কোন অন্যায় কাজ দেখলেও বাধা দিত না।আজ মুসলিম জাতিতে একই অবস্হা তৈরি হয়েছে।যে যার মত ইসলামের কাজ করছে কিন্তু খারাপ কাজ গুলোর জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে অল্প সংখ্যক মুসলিম।চরিত্রের দিক থেকে এই মুসলিমরা তাদের অনুসারি।আজকের সমাজে মুসলিমদের বিরাট একটি অংশ ইহুদি খৃষ্টানদের সাথে মিশে আছে।পিতা মাতা যে কোন উপায়েই ইহুদি খৃষ্টান এলাকায় বিশেষ করে ইউরোপে ছেলেমেয়েদের পাঠিয়ে দিচ্ছে।তারা তাদের পিতামাতাকে ডলার ,ইউরো পাঠাচ্ছে আর পিতামাতা দেশে আরাম আয়েশ করছে।আবার কেউ কেউ অহংকারও করছে তাদের ছেলে মেয়ে ওখানে প্রতিষ্ঠিত বলে।আল্লাহ লা'নত করেছেন এই সমস্ত ইহুদি -খৃষ্টানদের অনুসারিদের জন্যও।আল্লাহ ইহুদিদের মু;মিনদের কট্টর শক্রু হিসেবে উল্লেখ করেছেন।অথচ আপষেই এখন তাদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে যে মুসলিমদের মধ্যে তারা ছেলে বা মেয়ে পাত্রী খুঁজে পাচ্ছে না।

ইহুদিরা বলতো ওজাইর আ;আল্লাহর পুত্র, আবার খৃষ্টানরা বলতো ঈসা আল্লাহর পুত্র।এই কুফরি কথার তারাই প্রচলন করেছিল। মুসলমানরাও পিছিয়ে নাই।তাদের মধ্যে এক শ্রেনী রয়েছে তারা বলে নবী সা: নুরুল্লাহ।এ কথা আক্কিদা বিরোধী ও ইসলাম নষ্টকারি বিষয়।এরা সবাই আল্লাহর বান্দাহ।আল্লাহ সূরা ইখলাসে বলেন,তিনি এক ও একক,তিনি কারো মুখাপেক্ষি নন,তিনি জন্ম দেন না এবং তাকে কেউ জন্ম দেন নি এবং তার সমকক্ষ কেউ নেই।' আল্লহপাক মুসলিম জাতিকে সান্তনা দিয়েছেন তাদের ঈমানের সাথে ধৈর্যশীল হয়ে থাকার জন্য।জান মালের ক্ষেত্রে তাদের পরীক্ষা করা হবে আর শুনতে হবে তাদের অনেক হৃদয় বিদারক কথা অমুসলিমদের কাছ থেকে।মুসলিমদের তাদের মত হলে চলবে না যারা মুসা আ;কে কষ্ট দিয়েছিল যখন তিনি ৪০ দিনের জন্য তাদের থেকে দূরে গিয়েছিলেন ও এর মধ্যেই তারা বাছুরের পূজা শুরু করে দিয়েছিল।আজকের হিন্দুরা যে গরুর পূজা করে তা আজ থেকে ৪৫০০ বছর পূর্বে ফিলিস্তিন বা ইরাক থেকে আর্যরা নিয়ে এসেছিল।এগুলো ছিল তাদের বদস্বভাব।ইহুদিরা চুক্তি ভংগ করে যা একটি মহাপাপ এবং এটিও আজকের মুসলিমদের জীবনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।তারা মরিয়ম আ; এর মত সতি নারিকেও ব্যাভিচারের আপবাদ দিতে কুন্ঠিত হয়নি।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই অসৎ খৃষ্টান জাতি তাদের ধর্মের উপর ঐ অপবাদকে মেনে নিয়ে তাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এ থেকে বুঝা যায় তারা তাদের ভাই।তাদেরই একটি দল আজ মুসলিম নামে মুসলিমের ভিতর ঢুকে মুসলিম জাতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে ইসলামের বিভিন্ন কর্মকান্ডে বাধা দিচ্ছে ও শির্ক ও বিদাআত জাতীয় কাজ করছে।আমাদের মুসলিম হিসেবে বেঁচে থাকতে হলে আলকুরআন ও ছহি হাদিছের গভীরে যেতে হবে এবং ইহুদি খৃষ্টানদের সাহচর্য বর্জন করে পৃথিবীর মুসলিম দেশগুলোকে এক শক্তিতে রুপান্তরিত করতে পারলেই তাদের উপর বিজয়ের নিশ্চয়তা রয়েছে যা আল্লাহ মু'মিনদের আলকুরআনে বার বার নির্দেশ দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।

বিষয়: বিবিধ

১৮৫২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

247463
২৩ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০২:১৫
হতভাগা লিখেছেন : সুন্দর পোস্ট দিয়েছেন ।

ইহুদীদের বার বার নাফরমানীর জন্য আল্লাহ তায়ালা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের উপর তুর পাহাড় তুলে ধরেছিলেন ।

ইহুদীরা অভিশপ্ত আর নাসারারা (খৃষ্টানরা) পথভ্রষ্ট

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File