জাল ও জয়ীফ হাদিস কিভাবে মানুষের আমলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে?
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২০ জুলাই, ২০১৪, ০১:৩৮:৫৭ দুপুর
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাত পবিত্র কুরআনুল করিমের হেফাযতের জিম্মা যেমন নিয়েছেন তেমনি হাদিসকে সংরক্ষিত করার জন্য ও জমিনে বহু মুহাদ্দেছিনের জন্ম দিয়েছেন যারা জাল জয়ীফ ও মিথ্যা হাদিসের কিতাব দ্বারা যুগ যুগ ধরে তাদের শানিত লেখনীর মাধ্যমে জাতিকে সতর্ক করেছেন।এই মর্মে আল্লাহ পাক আলকুরআনে বলেছেন,'নিশ্চই আমি উপদেশ নাজিল করেছি এবং তার অবশ্যই সুরক্ষা করবো।' আলকুরাআনের হেফাযত গত সাড়ে চৌদ্দশ বছর ধরে আল্লাহ অক্ষত রেখেছেন উলামায়ে হক্কদের মাধ্যমে এবং সাহাবায়েকরামদের পরে বড় বড় মুহাদ্দেছিন জাল,জয়ীফ ও মিথ্যা এবং তার সাথে ছহি হাদিসের ভাগ করে মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন যেন মানুষ সঠিক আমল করতে পারে।যদি আল্লাহ তাদের মাধ্যমে এই মেহনত না করাতেন তাহলে মানুষ জানতে পারতো না কোনটা ঠিক বা কোনটা ভুল।কোনটা আসল শরিয়ত ও কোনটা বানোয়াট।যেমন তাওরাত ,ইন্জিল পড়ে কেউ বলতে পারবে না কোনটা আসল বা কোনটা নকল।এই কিতাবগুলোতে নবীদের শিষ্যরা পরবর্তীকালে তাদের মনগড়া কথা ঢুকিয়ে দিয়েছিল।সেজন্য বুঝা যায় না কোন কথাগুলো মুসা আ; বলেছেন বা কোন কথাগুলো ঈসা আ;বলেছিলেন।আমাদের আল্লাহপাকের উপর শুকরিয়া আদায় করতে হবে এই কারনে যে,শেষ নবীর উপর আলকুরআন নাজিল করে রোজ ক্কেয়ামত পর্যন্ত তিনি এর হেফাযত করেছেন।জাল ও জয়ীফ হাদিসের সংখ্যা অনেক।বিশেষ করে দুর্বল হাদিসের সংখ্যা এত বেশী যে তা লিখে শেষ করা যাবে না।তবে যারা প্রকৃত ঈমানদার তারা ঈমান লালন ও ধর্ম কর্ম করার ক্ষেত্রে ছহি হাদিসের তালাশ অবশ্যই করে থাকেন।মুহাদ্দেছিন গনের সর্বসম্মত মত যে আসমানের নিছে ও জমিনের উপর ছহি বোখারি ও ছহি মুসলিম এই দুটো কিতাব প্রসিদ্ধ।একজন সাধারন দ্বীনদারের জন্য এর বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করিনা।কারন আমাদের মত একজন সাধারন মানুষের জ্গানের পরিসীমা অনেক কম,সেক্ষেত্রে আলকুরআনের সাথে এ দুটো হাদিসের কিতাব অনুসরন করলে ইনশাআল্লাহ ইবাদত ছহি হবে বলে মনে করি।তবে এর সাথে যদি জাল ও দুর্বল হাদিসগুলোর ধারনা নেয়া যায় তাহলে ইবাদতকে আরো সুন্দর যেমন করা যায় তেমনি মানুষকে সতর্কও করা যায়।ছহি মুসলিমে রাসূল সা: বলেন,'যে ব্যাক্তি যেনে শুনে আমার সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করবে তাহলে সে যেন তার স্হান জাহান্নামে করে নিক।' জাল হাদিস যেমন তৈরি করা হারাম তেমনি অন্যরা যারা বয়ান করবে সেটাও হারাম।আমাদের ভারত উপমহাদেশে আজকের প্রেক্ষাপটে অধিকাংশ ক্ষেত্রে জাল হাদিসের ছড়াছড়ি যা দিয়ে মানুষ আমল করছে।এর জন্য প্রথমত দায়ী যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষকে দ্বীনের দিকে ডাকছে।যারা দ্বীনের দাওয়াতের কাজ করবে তাদের মহান দায়িত্ব হলো জেনে শুনে সঠিক দ্বীন প্রচার করা।ছহি নিয়্যাত ও ছহি হাদিস জানার পরেও যদি কোন ভুল হয়ে যায় তাহলে আল্লাহ ছোট খাট ভূলের জন্য নিশ্চই ক্ষমা করবেন।কিন্তু যারা হাদিস বয়ানের ক্ষেত্রে ছহি কিতাবের অনুসরন করলোনা,নিজের বিবেককে প্রশ্ন করলো না, আর সামনে যা পেল তা দিয়ে বয়ান করলো তাদের জন্য আল্লাহর লানত রয়েছে।কোন মিথ্যা রচনা করাই হলো কাবিরা গুনাহ কিন্তু কেউ যদি আল্লাহ বা তার রাসূল সা: সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে তাহলে কতবড় কাবিরা গুনাহ হতে পারে তা আমরা ভেবে দেখেছি কি?
কোন মানুষ যদি মিথ্যা কথা বলে আর যদি ধরে পেলতে পারে তাহলে মানুষ তা প্রত্যাক্ষান করবে কিন্তু কেউ যদি রাসূল সা; এর বরাত দিয়ে কিছু বর্ননা করে সেটার নাম হাদিস এবং মানুষ অবশ্যই তা দ্বীনের কারনে অনুসরন করতে বাধ্য।দুনিয়ার কোন মানুষের কথা দলিল নয় কিন্তু রাসূল সা: এর কথা বলা মাত্রই সেটা দলিল হবে।রাসূল সা:কে আল্লাহপাক পাঠিয়েছেন মানবজাতির হেদায়েতের জন্য।সেজন্য তিনি কোন ভুলের মধ্যে থাকতে পারেন না।তার প্রতিটি কথা ও কাজ ওহি এবং তাদিয়ে উম্মত তার দৈনন্দিন জীবনের কাজ কর্ম করবে।জাল হাদিস সম্পর্কে যদি মানুষের জ্গান না থাকে তাহলে এবাদতে ক্রুটির কারনে কাজ করা স্বত্বেও জাহান্নামে দাখিল হতে হবে।হাদিস বিশারদগনের মতে জাল হাদিস কাকে বলে?ঈমাম ইবনুস সালাহ (র) প্রথম দিকে যখন হাদিসের কায়দা কানুন প্রনীত হয়েছিল তিনি ঐ সময়ের মুহাদ্দিস তার কিতাব উলুমুল হাদিসে জাল হাদিসের সংগা দিয়েছেন যা তৈরি করে নেয়া বা গড়ে নেয়া হয়েছে।নবী সা: এর দৈহিক গঠন সম্পর্কে অনেক জাল কথা প্রচলিত আছে।যেমন- নবী সা: এর ছায়া পড়তোনা বা তাঁর পেশাব পায়খানা কখনো দেখা যেত না-নবী সা: নুরের তৈরি-এগুলো সব জাল কথা।এই সব বিদাআতি মোল্লাদের জাল কথা।এমনকি নবী সা: এর আখলাখ চরিত্র সম্পর্কেও অনেক অতিরন্জিত কথা আমরা শুনে আসছি যার সাথে ছহি হাদিসের কোন সম্পর্ক নেই।আমরা শুনেছি নবী সা: গুড় মিষ্টি খেতেন এবং একটি লোক একটা বাচ্চা নিয়ে আসলো এবং তিনি তাকে বললেন এক সপ্তাহ পরে আস। এটা সত্য তিনি মিষ্টি ,লাউ,শষা পছন্দ করতেন।কিন্তু নবী সা: এর মিষ্টির আশক্তি ছিল এমন কথা বলে তাঁর মান হানি যে সমস্ত মোল্লারা করছে তাদের ভেবে দেখা উচিত গুড় নামক মিষ্টি তখন ছিল কিনা? আর কেমন নবীই তিনি ছিলেন যে লোকটিকে বলতে হলো এক সপ্তাহে পরে এসো এর মধ্যে আমি মিষ্টি খাওয়া কমিয়ে দিব।নবী সা: এর যদি খারাপ অভ্যাস থাকে আর তা ছাড়তে যদি তার এক সপ্তাহ লাগে তাহলে উম্মতের কি অবস্হা? এই বিদাআতি মোল্লারা এরকম হাদিস বয়ান করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।আলকুরআন তাঁর চরিত্র সম্পর্কে সূরা কলমের ৪ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,'নি:সন্দেহে তুমি সুমহান চরিত্রে উন্নত।' আল্লাহ যাকে দিয়ে এই দুনিয়ায় নেতৃত্ব দিবেন তার ক্রটি থাকবে কি করে তা সম্ভব? মানুষের উচিত বিদাআতিদের এ সমস্ত জলসায় এ কথাগুলোর প্রতিবাদ করা ও এ সমস্ত মোল্লাদের সংস্কার বা আইনানুগ ব্যাবস্হা নেয়া কারন তারা উম্মাহকে আসল দ্বীন থেকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।নবী সা: সীরাত সম্পর্কে , জন্মবৃত্তান্ত সম্পর্কে অনেক জাল কথা রয়েছে যা বিদাআতিদের বই পুস্তকে লিখা আছে।বিশেষ করে কবর পূজারিরা এই সব বয়ান গুলো করে থাকে।তারা নবী সা: কথার ক্ষেত্রে,কর্মের ক্ষেত্রে,আখলাক ,ছিরাত,ছুরাত,চরিত্র এইসব ক্ষেত্রে যুগে যগে অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এ সব জাল রচনা করা হয়েছে।বিদাআতিরা তাদের বিদাআতকে সমর্থিত করার জন্য এবং ইসলাম বিদ্বেষীরা ইসলামের ক্ষতি করার জন্য এ সমস্ত জাল কথা রচনা করেছে।হাদিস যারা গড়েছে তারা, তা দুভাবে গড়েছে।এক-কথাগুলো নিজের পক্ষ থেকে চালু করেছে যেমন-মা আয়শা থেকে বা আবু বকর থেকে,ওমর থেকে,ওসমান থেকে,আলি থেকে , আবু হোরায়রা থেকে ইত্যাদি।তারা বিষয়বস্তুটি নিজের থেকে বানিয়ে অন্যের নামে চালিয়ে দিয়েছে।কখনো কখনো নিজে বানায়নি, আগের যুগের জ্গানী গুনিদের কথা যাতে উপদেশ রয়েছে সেগুলো রাসূল সা: এর নামে চালিয়ে দিয়েছে।আর একটি কথা প্রচলিত আছে যা আরব জাহেলিয়াতে হয়ত ব্যাবহৃত হতো-জ্গান অর্জনের জন্য সূদুর চীন দেশে যাও।এটা একটা জাল হাদিস আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে।মোটকথা হাদিস গড়া হারাম।বিদাআত এসেছে সৎ উদ্দেশ্য থেকে।কেউ যদি মনে করে এখনতো বানিজ্যিক জগৎ মানুষ কোরআন ও হাদিসের দিক থেকে অনেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে যদি বলা যায় একটি আমল করলে ৪৯ কোটি সওয়াব হবে।যদি গুনাহ করেই থাকে তাহলে কত কোটিই হবে,এই ৪৯ কোটি থেকে গিয়ে আরো কিছু্ হাতে থাকবে।ঈমাম নববি (র) ছহি মুসলিমের ভাষ্যকার।তিনি ছিলেন ৬ষ্ঠ শতাব্দির ঈমাম।তিনি বলেছেন, সমস্ত উলামা একমত যে কোন মানুষের উপর মিথ্যা কথা বলা হারাম।তাহলে সাধারন মানুষের উপর মিথ্যা কথা বলার উপর যদি ইজমা(মতৈক্য) থাকে তাহলে যার কথা ওহি এবং যার কথা শরিয়ত তার ব্যাপারে মিথ্যা বলা কত বড় আপরাধ।আল্লাহ আলকুরআনে সূরা নাজমের ৩ আয়াতে বলেন,'নবী সা: প্রবৃত্তি থেকে কথা বলেন না ' এখন অনেকে মনে করতে পারেন এই মিথ্যা হাদিস যারা বর্ননা করলো তাদের তওবা কবুল হবে কিনা? আল্লাহ সূরা ফুরক্কানের ৭০ আয়াতে বলেন,'সে ব্যাতীত যে তওবা করে এবং ঈমান আনে ও পূর্ন পবিত্র ক্রিয়াকর্ম করে।সুতরাং তারাই-আল্লাহ তাদের মন্দ কাজকে সৎ কাজ দিয়ে বদলিয়ে দিবেন।আর আল্লাহ সতত পরিত্রানকারী ও আফুরন্ত ফলদাতা।' তওবার অর্থ হলো সৎ আমলের দ্বারা জীবনকে পরিবর্তন করতে হবে।যারা পাপ করতে থাকে আর তওবাও করতে থাকে তাদের জন্য তওবা নয়।আল্লাহ এত মহান যে বান্দাহ যদি শির্কও করে আর ফিরার মত ফিরে আসে তিনি বান্দাহকে মাপ করে দেয়ার জন্য প্রষ্তুত।ঈমাম আহমেদ বলেছেন যে ব্যাক্তি জাল হাদিস বর্ননা করেছে সে যদি তওবাও করে তার হাদিস নেয়া যাবে না কারন এখানে একটা সন্দেহের ব্যাপার রয়েছে।ধর্ম পালন করতে হবে সন্দেহের উর্ধে থেকে।নবী সা:বলেছেন,সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ হলো ধর্মের নামে নতুন নতুন কাজ করা,প্রত্যেক নতুন নতুন কাজ হলো বিদাআত এবং প্রত্যকে বিদাআত হলো গোম্রাহী এবং বিদাআত নিক্ষেপিত হবে জাহান্নামে।'
নবী সা: এর হাদিসে জাল আসার কারন জানা আমাদের জন্য জরুরি।নবী সা: এর সাহাবিরা সত্যবাদি ছিলেন।আল্লাহ তাদের ব্যাপারে স্বীকৃতি দিয়েছেন তিনি তাদের ব্যাপারে খুশি তারাও আল্লাহর উপর খুশি।সাহাবাদের পর এই ফিতনা শুরু হয়েছিল তবে তাবেঈ ও তাবেঈনদের সময়ে এই মিথ্যাচার কম ছিল।সাহাবিদের জামানায় যে দুটি বাতিল ফিরকা- শিয়া রাফেজি ও খারেজি জন্মেছিল এই জাল কথা তারাও গড়েছিল।ঐ যুগে সন্ত্রাসিদের ঈমাম ছিল খারেজিরা।নবী সা: তাদের ব্যাপারে বলেছিলেন, আমি যদি তাদের পেয়ে যাই,তোমাদের পরে তারা আসবে তাদেরকে ঢালাওভাবে আমি হত্মা করবো।এই সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে কঠোর কথা নবী সা: উচ্চারন করেছিলেন।আলকুরআন ও হাদিসের আলোকে যে সন্ত্রাস সেটা অবশ্যই বড় আপরাধ।ইসলাম পালন করলে,লম্বা দাঁড়ি রাখলে,টাকনুর উপর কাপড় পরিধান করলে,লম্বা জামা পরলে সন্ত্রাস এগুলো ইহুদি ও খৃষ্টনাদের বানানো কথা মুসলিমদের বিরুদ্ধে।নীরিহ মুসলিম বা অমুসলিম হোক তাদের হত্মা বা ধন সম্পদ নষ্ট করা এগুলো সন্ত্রাসী কাজ।তবে অধিকারের প্রশ্নে কেউ যদি প্রতিরোধ করে সেটা সন্ত্রাসীকাজের অন্তর্ভুক্ত নয়।উলামাগন হাদিস গড়ার অনেক কারন ব্যাখ্যা করেছেন।প্রথম কারনটি হলো রাজনৈতিক মতবিরোধ।রাজনীতিতে যে দলীয় করন এর লক্ষ্য হলো তারা প্রত্যেকে তাদের নীতি ও আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।আর এর লক্ষ্য হলো মানব রচিত মতবাদের মাধ্যমে সরকারে পৌঁছা বা ক্ষমতা গ্রহন।এই ফাটল প্রথম ধরেছিল ওসমান রা: এর মৃত্যুর পর।এর পর ধীরে এর প্রভাব বাড়তে থাকে এবং বর্তমান সময়ে এই বিরোধ আরো প্রকট আকার ধারন করেছে।একে অন্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও অপপ্রচারের মাধ্যমে সমাজকে কলুষিত করছে।হোসাইন রা:এর সাহাদতের পর এই রাজনৈতিক প্রভাব বেশ পরিলক্ষিত হয়েছিল।উমায়্যা গোত্রের খেলাফতের সুনামে তাদের সাপোর্টে যারা ছিল তারা জাল হাদিস গড়তে শুরু করলো।যারা হোসাইন রা: এর অন্ধ ভক্ত তারাও শির্ক কুফুরির সমর্থনে হাদিস গড়া শুরু করলো।বিশেষ করে আব্বাছিয় খেলাফতকালে যে যুগ ছিল, সে যুগ ছিল হাদিস সংকলনের যুগ। তখন আব্বাছিয়দের সাথে উমায়্যাদের যুদ্ধ হলো তারা চিরুনি অভিযানের মত উমায়্যাদের নাবালক শিশুকেও হত্মা করেছিল এই কারনে যে তারা যেন ক্ষমতা চিনিয়ে নিতে না পারে।এই রাজনৈতিক লড়াই যে আজই আমরা দেখতে পাচ্ছি তা নতুন নয় অনেক পুরনো।এর জন্য ভাল মন্দের পার্থক্য নেই শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকলেই হলো।আজকে যে গনতান্ত্রিক পদ্মতির কথা বলা হচ্ছে কিন্তু কোথায় সে গনতন্ত্র? গনতন্ত্রে যে বিশ্বাসের যায়গা বা বিরোধীদের প্রতি সহনশীলতা তা বর্তমান নেই। জাল হাদিস গড়ার আর একটি কারন হলো ধর্মীয় বিভেদ।আক্কিদার বিভেদ,মাসলামাসায়েলের বিভেদ।প্রথম থেকে তৃতীয় শতাব্দি এই সময়ে বেশি জাল হাদিস গড়েছিল।নিজের স্বার্থে ও নিজের ঈমামের স্বার্থে জাল হাদিস গুলো অনেকে গড়েছিল।আর বিরোধী আর একজন ঈমামের কুৎসায় জাল হাদিস গড়েছে।এর একটি নজির হয়েছে মামুন বিন আহমেদ দাজ্জাল কুফার কোন মসজিদের খতিব ছিল।সে ছিল ঈমাম আবু হানিফা (র) এর নাযায়েয অন্ধ ভক্ত।এর একটি জাল হাদিস রাসূল সা: এর নামে বর্ননা করেছে,আমার উম্মতে একটি লোক পয়দা হবে যার নাম আবুহানিফা।সে হবে আমার উম্মতের প্রদীপ।' মামুন বিন আহমেদ একজন মিথ্যাবাদি, ঈমাম শাফেয়ির ব্যাপারে আর একটি হাদিস,' আমার উম্মতে একজন লোক পয়দা হবে যার নাম হবে মোহাম্মদ ইবনে ইদ্রিছ আশ-শাপি।সে ইবলিছের চাইতে বেশি আমার উম্মতের ক্ষতি করবে। তার আর একটি জাল হাদিস ,কেউ যদি ঈমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়ে তাহলে তার মুখে আগুন দেয়া হবে।আমাদের সমাজের অধিকাংশ বক্তা হলো মূর্খ যাদের পড়াশুনা নেই।আবার কিছু আছে মাযহাবের অন্ধ ভক্ত তারা এই জাল হাদিস বেশি প্রচার করে।আবু সলদ নামে একজন একটি বই লিখেছিল সেখানে ঈমাম আবু হানিফা সম্পর্কে তার প্রশংসা করতে গিয়ে লিখেছে,ঈমাম আবু হানিফা যখন ক্কাবা ঘরে ছিলেন তখন সেখান থেকে একটি গায়েবি আওয়াজ আসলো এবং বললো,হে ঈমাম আবু হানিফা!আল্লাহ তোমাকে মাপ করে দেওয়ার ঘোষনা দিলেন আর তোমার যত অনুসারি হবে তাদের মাপ করে দেয়া হবে।এভাবে যে যার ভক্ত অতিরন্জিত করে হাদিস রচনা করেছে।রাজনৈতিক ও মাযহাবি কোন্দলের কারনেই জাল হাদিস রচিত হয়েছে।আর একটি কারন হলো ইসলামের শক্রুতার জন্য জাল হাদিস রচিত হয়েছে।সে যুগে বিধর্মিরা দেখলো যে ইসলাম খুব প্রসার করে যাচ্ছে একে ঠেকানো যাবে না।মুসলিমদের মাঝে ধর্মের লেবাস পরিয়ে কিছু লোককে ঢুকিয়ে দিতে হবে এবং নতুন নতুন ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্ম দিয়ে যারা ইসলামের জন্য প্রানান্তকর পরিশ্রম করছে তাদের সেখান থেকে বের করে দিতে পারে।কিস্সা কাহিনীর মাধ্যমে ওয়াজ করেন এমন মৌলানারা জাল হাদিস বর্ননা করেন।তারা মনে করে ছহি হাদিস বর্ননা করলেতো লোকজন এত শুনবে না।তারা তাদের কথার মধ্যে ঝাল-রস লাগিয়ে জাল হাদিস বর্ননা করতো।আমাদের সমাজে যে ইসলামি টানা ওয়াজের জলছা গুলো হয় সেখানে সাদ্দাদের কিচ্ছা বর্ননা করে থাকে।এই সাদ্দাদের বেহেস্ত বলে কোন বেহেস্তর কথা আলকুরআন বা হাদিসে আছে কি? অথচ ওয়ায়েজিনরা মানুষকে কাঁদিয়ে ফেলেন।কখনো মানুষকে উৎসাহিত করার জন্য,কখনো মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য এই রকম জাল হাদিস গড়া শুরু করেছিল এক শ্রেনীর লোকেরা।এক ওয়ায়েজিন তাশ খেলা সম্পর্কে ওয়াজ করলেন যে ব্যাক্তি তাশ খেলবে ও তাশটি হাত থেকে মাটিতে ফেলবে সে যেন মায়ের লজ্জাস্হানে হাত দিল।এই ধরনের বক্তাগুলো কমবখত বক্তারাই বলে থাকে।
মাইছারা বিন আবদে রাব্বি নামক একজন জাল হাদিস বর্ননা করেছে।তিনি আলকোরআনের প্রতিটি সূরার ফযিলতে হাদিস বর্ননা করেছিল।আমাদের দেশে অনেক বই পুস্তকে বা আলকুরআনের প্রথমে বিদাআতিদের বর্নীত সূরার ফযিলত দেখা যায়।যেমন সূরা ওয়াক্কিয়া যদি কেউ রাতে নিয়মিত পাঠ করে তাহলে গরীব থাকবে না।আর এই আমলকারিরা ভারত ,পাকিস্তান , বাংলাদেশ ও নেপালে।এত যদি ফযিলতই থাকে তাহলে এ সমস্ত দেশে এত গরীব কেন? সৌদি আরবে একটি লোকও এই আমল করেনা তাহলে তারা ধনবান কেন? আল্লাহ কি পারতেন না এদের শাস্তি দিতে যে তোমরা এই সূরা গুলোর আমল করছ না তাহলে তোমাদের খেতেই দিব না।মাইছারা বিন আবদে রাব্বিকে জিজ্গেস করা হলো এতগুলো ফযিলত তুমি পেলে কোথায়? সে উত্তরে বললো আজকালকার জামানায় লোকজনকে দেখছি কুরআন বিমুখ হয়ে গিয়েছে।তারা কোরআন শিখতে চায় না,তালাওয়াত করতে চায় না , মুখস্ত করতে চায় না এককথায় দুনিয়ায় মেতে উঠেছে।তখনকার যুগে যদি এরকম অবস্হা হয়ে থাকে তাহলে আজকের যুগকে আমরা কি বলবো? এখনতো অধিকাংশ মুসলমানের কোরআনের সাথে সম্পর্কই নেই।মোবাইল কানে লাগিয়ে আছে সর্বক্ষন, ফেসবুকে বসে আছে, সময় কোথায় কোরান পাঠ করার? সে নিজেই স্বীকার করছে লোকজনদের যখন দেখলাম তারা কোরান পড়ে না তখন আমি এই জাল হাদিস গুলো গড়ে দিলাম এই উদ্দেশ্যে যেন মানুষকে কোরানের দিকে উৎসাহিত করি।জাল হাদিস গড়াই আপরাধ সে যত ভাল উদ্দেশ্যই থাকুক।কারন ছহি মুসলিমে রাসূল সা: বলেছেন,'যে আমার নামে মিথ্যা রচনা করে,সে তার স্হান জাহান্নামে করে নিল।'উম্মতের বিদাআতিরা ধন সম্পদ অর্জনের উদ্দেশ্যে এই জাল হাদিসের আবির্ভাব ঘটিয়েছিল।এরা এমন এক শ্রেনী ছিল সবকালেই খলিফাদের বা সমকালীন শক্তির নেতাদের কাছে তাদের পক্ষে এরকম জাল হাদিস বর্ননা করে ফায়দা লুটতো।জাতীয়তার ভিত্তিতেও জাল হাদিস গড়া হয়েছিল।রং বর্নে জাতীয়তা,গোত্রের ভিত্তিতে জাতীয়তা,ভাষার ভিত্তিতে জাতীয়তা ও দেশ ভিত্তিক জাতীয়তা।এই জাতীয়তাকে ইসলামে হারাম করে দেয়া হয়েছে।এমনকি উলামারা জাতীয়তাকে কুফরি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।সৌদি আরবের প্রথিতযশা আলেম মরহুম শাইখ বিন বাজ (র) জাতীয়তাকে কুফরি বলেছেন কারন এটা কাফেরদের সাথে মিত্রতা তৈরি করে ও মুসলিম থেকে দূরে সরায়।আল্লাহ আলকুরআনে বলেছেন মু'মিনরা পরস্পর ভাই।এই হিসেবে একজন মুসলিম পৃথিবীর যে প্রান্তেরই হোক না কেন ভাই হিসেবে আখ্যায়িত হওয়ার কথা।কিন্তু বিশ্বের বর্তমান পরিস্হিতিতে কি তা প্রমান হয়? মুসলিম দেশগুলোতে যে বিপর্যয় ও হত্মা সংঘঠিত হচ্ছে তা মুসলিমরাই করছে ইহুদী খৃষ্টানদের অনুসরনের ফলে।কোন মানুষ যদি বলে আমি প্রথম বাংলাদেশি বা পাকিস্তানি বা ইন্ডিয়ান বা এমেরিকান এবং এর পর মুসলিম তাহলে সে কুফরি করলো।প্রথম তাকে মুসলিম হতে হবে এবং পরে যে কোন দেশের নাগরিক।আমরা বর্নে বর্নে লড়াই দেখেছি আমেরিকা ও দক্ষিন আফ্রিকায় দীর্ঘকাল।সাদা এবং কালোর যে লড়াই এটাকে বলে বর্নের লড়াই।ইসলামে এগুলো হারাম করে দিয়েছে।আমরা গোত্রীয় জাতীয়তাতে এখনো দেখি যে এক বংশ আর এক বংশে বিয়ে দিবে না।চৌধুরি, মন্ডলের পরিবারে মিশবে না।সৈয়দ বংশ পাটোয়ারির সাথে সম্পর্ক করবে না।তাঁতির পরিবারে একটি উচ্চশিক্ষিত গড়ে উঠলেও তা অন্য উঁচু বংশে জড়াতে পারবে না।ইসলামে এগুলোকে হারাম করে সূরা হুজরাতের ১৩ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'ওহে মানবজাতি!নি:সন্দেহে আমরা তোমাদের সৃষ্টি করেছি পুরুষ ও নারি থেকে আর আমরা তোমাদের বানিয়েছি নানা গোত্র ও জাতিতে যেন তোমরা চিনতে পার।নিশ্চই আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে সেইজন সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে ধর্মভীরু।' আজকে মুসলিমদের এই জাতীয়তা ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে যে জন্য উলামারা একে কুফরি বলেছেন কারন এর মাধ্যমে আল্লাহর শত্রু কাফেরকে বন্ধু বানিয়ে দেয় এবং আল্লাহর বন্ধু মুসলিমদের দূরে সরিয়ে দেয়।
জাল হাদিস গড়ার আর একটি বড় উদ্দেশ্য হলো শাসকদের নৈকট্য লাভ। আব্বাছিয় সময়ের কথা একদিন বাদশাহ মাহদি কবুতর নিয়ে খেলছিল এটা দেখে গিয়াস বিন ইব্রাহিম একটি হাদিস গড়ে দিল এই বলে,নবী সা: বলেছেন, প্রতিযোগিতা কোন নেকির কাজ নয় তবে তীর ধনুকের প্রতিযোগিতা অথবা উটদৌড় প্রতিযোগিতা অথবা ঘোড় দোড় প্রতিযোগিতা এগুলো হচ্ছে নেকির কাজ।এর সাথে সে বাড়িয়ে বললো কেউ যদি পাখির প্রতিযোগিতা করে তাতেও সওয়াব আছে।বাদশাহ মাহদি ব্যাপারটি বুঝতে পারলো।তখনকার বাদশাহরা বিলাসি হলেও দ্বীন সম্পর্কে জ্গান রাখতো।তিনি তখন তাকে একটি চাঁদির থলে দিয়ে দিল।যখন সেই মিথ্যুক উঠে গেল তখন বাদশাহ মাহদি বললো, তোমার গর্দানটা হলো মিথ্যুকের গর্দান।আজও দুনিয়ার নেতারা হক্কানি আলেমদের ভয় করে কারন তারা জানে এদের পয়সা দিয়ে ক্রয় করা যাবে না।বাদশা মাহদি এর পর সবগুলো কবুতরকে জবাই করে দিল কারন তিনি বুঝতে পারলেন যে যদি এই কবুতরগুলো নিয়ে না খেলতেন তাহলে ঐ মিথ্যুক জাল হাদিস গড়তে পারতো না।আজকের পৃথিবীতেও এই দু'ধরনের রাজনৈতিক দল ময়দানে রয়েছে তাদের একশ্রেনী দুনিয়ার নামে রাজনীতি করছে আর এক দল ধর্মের নামে রাজনীতি করছে।যারা দুনিয়ার নামে রাজনীতি করছে তারা ধর্মের আপব্যাখ্যা করছে না কিন্তু যারা ধর্মের নামে রাজনীতি করছে তারা ধর্মের অপব্যাখ্যা করছে।এ ক্ষেত্রে বেশি ক্ষতি করছে যারা ধর্মের নামে রাজনীতি করছে।সূরা আর গনতন্ত্র এক হয় কি করে? গনতন্ত্রে পরামর্শ ভাল খারাপ মিলে সবারই নিতে হবে।এখানে নেতা যদি জেনাকার হয় তাহলে সে একজন নেতা।একজন খুনি হলেও সে নেতা।তাদের বাদ দিয়ে কোন কাজ করা যাবে না। সূরা হলো পরামর্শ করা।ইসলামে এই পরামর্শ নিতে হয় জ্গানী ও বিচক্ষনদের থেকে।ইসলামি দলগুলো একে তো বিভক্ত তার উপর যার যার মত করে তাদের মধ্য থেকে নেতা নির্বাচন করে গনতন্ত্রের মধ্যে সামিল হয়ে যে নির্বাচন করছে তা একধরনের অপব্যাখ্যা।এজন্য অনেকসময় দুনিয়ার ভোগবিলাসি শাসক বিদাআতি মোল্লাদের চেয়ে ভাল কারন তারা বিলাস করলেও ধর্মের মধ্যে ফাটল ধরায় না। ব্যাক্তি,গোষ্ঠি বা জাতির উপর আক্রোশে ও জাল হাদিস গড়া হতে পারে।যে যুগ ছিল হাদিস সংকলনের যুগ সেই যুগে ব্যাক্তি স্বার্থকে শক্তিশালী বা প্রতিশোধ নেয়ার জন্য এই রকম জাল হাদিস গড়া হয়েছে।হাদিস বিশারদরা এ রকম একটি উদাহরন দিয়েছেন যে,সাদ বিন তুরাইফ বলে একজন লোক ছিল।পেশাগত ভাবে সে ছিল মুচি বা চামার।একদিন এই মুচির ছেলে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি এলো, যে মক্তবে পড়াশুনা করতো।ছেলেকে জিজ্গাসা করলো তুমি কেন কান্না করছো? সে বললো আমাকে ওস্তাদ মেরেছে।তার পিতা ঐ মুচি বলছে আল্লাহর কসম আজ আমি তাকে(ছেলের ওস্তাদ) লান্চিত করে ছাড়বো।তারপর একটি হাদিস গড়ে দিল এই বলে 'তোমাদের নাবালক ছেলেদের শিক্ষকরা তোমাদের সমাজের সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ।' খ্যাতির উদ্দেশ্যেও জাল হাদিস গড়া হয়।এ ক্ষেত্রে আশ্চর্যজনক কথার মাধ্যমে হাদিস গড়া হয়ে থাকে।আজকাল কোরআন হাদিসে নেই এমন সব নতুন কথা আসছে যা ফতোয়া হিসেবে ব্যাবহার হচ্ছে।ফতোয়ার ব্যাপারে উলামাদের প্রথমযুগের আ-ইম্যাদের অভিব্যাক্তি কি ছিল তার দিকে দৃষ্টি দয়ে উচিত।আজকাল গ্রাম অন্চলে যারা ইসলামের নামে ফতোয়া দিয়ে বিচার করছে তাদের কোরআন হাদিসের উপর একদিকে তেমন জ্গান নেই, আর নেই মোহাদ্দেছিনদের জীবন কর্মের উপর পড়াশুনা।এ জন্য ঘটনার আবির্ভাব হলে হক্কানি উলামাদের সহযোগিতা নিয়ে বিচার বিশ্লেষন করে সামনে এগুনো শ্রেয় যাতে করে নির্ভুল বিচার করা যায়।সত্যের সন্ধানের জন্য আলকুরআন,রাসূল সা: এর ছহি হাদিস,সাহাবি,তাবেঈ ও তাবেঈনদের সময়ের প্রেক্ষাপট কেমন ছিল, কেমন করে তারা সমাজিক জীবন পরিচালনা করেছিলেন তার বিচার বিশ্লেষন করতে হবে।এখানে মানুষকে আর একটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে যে,মধ্যযুগে যে শির্ক বিদাআত ও ছুপিবাদ শুরু হয়েছে তা আজ পর্যন্ত ইবাদত হিসেবে চালু আছে।যদিও হক্কানি আলেমগন এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে যে পংকিলতার গোড়াপত্তন হয়েছে এবং যা অজ্গ মানুষগুলো ধর্ম হিসেবে পালন করছে তা পর্দা ফেলে দিয়েছে খাঁটি ধর্মের সামনে।
এই জাল অবস্হান থেকে জাতিকে বাঁচানোর জন্য আইয়্যামেকরামগন অনেক মেহনত করেছেন ও পদক্ষেপ নিয়েছেন।প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ছহি হাদিস সংকলন করেছেন।আল্লাহ পাক আলকুরআনের হেফাযত করেছেন।রাসূল সা: হাদিসের মধ্যে ভেজাল ঢুকানোর চেষ্টা করেছে একধরনের বিদাআতিরা দুনিয়ার কারনে কিন্তু সেগুলোর হেফাযতের জন্য ও আল্লাহ পাক বড় বড় মুহাদ্দেছিনদের সৃষ্টি করেছেন।বিশেষ বিশেষ কিতাব লিখে ছহি হাদিসগুলোকে সংকলন করেছেন।এর মধ্যে ঈমাম বোখারির ছহি বোখারি , ঈমাম মুসলিমের ছহি মুসলিম।এ ছাড়া মোয়াত্তা মালিকের হাদিসও যা বোখারি মুসলিমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।ধর্ম পালন করার ক্ষেত্রে কোন কথা শুনলে সূত্র জানা অত্যাবশ্যক।কারন সঠিক সূত্র যদি না হয় তাহলে গোম্রাহ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।শির্ক আর বিদাআতের খাদেমরা এইভাবেই গোম্রাহ হয়েছে তাদের পিরদের দ্বারা।ঈমাম মোহাম্মদ বিন শিরীনের নামে হাজার হাজার স্বপ্নের তা-বির আমাদের দেশে প্রচলিত আছে হতে পারে তিনি এর ৫ ভাগও বলেন নি।তিনি একজন হাদিসের পন্ডিত ছিলেন।তিনি বলছেন,সাহাবাগন একে আপরকে সূত্র সম্পর্কে জিজ্গেস করতেন না কিন্তু যখন ফিতনা(বিপর্যয়) দেখা দিল তখন তারা বললেন এখন তোমাদের লোকদের নাম বর্ননা কর অর্থাৎ কার কাছ থেকে হাদিস শুনেছ।এভাবে মিথ্যাবাদিদের সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছিল। এই ফিতনা শুরু হয়েছিল আলি রা: ও মোয়াবিয়া রা; এর সময়ে যখন সিফ্ফিনের যুদ্ধ শুরু হয়েছিল।সে যুগ থেকে তাবেঈনরা সতর্কতার সাথে হাদিস সংকলনে নিবদ্ধ হয়েছিলেন যার কারনে আমরা ছহি হাদিসের অনেক গ্রন্হ পেয়েছি।কিন্তু উম্মতের অসচেতনতার কারনে তারা বিভেদ ও বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে ও ভুল পথ অনেকে বেচে নিয়েছে।আমাদের হক্কানি উলামাদের আরো বেশী গবেষনার দরকার ইসলামের অতীত সংস্কৃতির আলোকে।সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আমাদের মাদ্রাসাগুলোতে পর্যাপ্ত ছহি কিতাব নেই আর ছাত্ররা এখন পড়ায় আগ্রহী নয়।বাংলায় পড়ে এখন ছাত্ররা ফাজিল ও কামিল পাস করে তাহলে কিভাবে সম্ভব তারা আরবির মত একটি ধনবান ভাষার কাছে পৌঁছবে।সেজন্য আমাদের দেশে উলামায়ে হক্ক তৈরি হচ্ছে না।তবে যত বেশী ছাত্রকে মক্কা মদিনায় উচ্চ শিক্ষার জন্য পাঠানো যায় ততই আমাদের ভবিষ্যতের জন্য কল্যান।অন্তত তাদের মধ্যে যদি একটা শ্রেনী এমন গড়ে উঠে যারা গভীর পড়াশুনা করে দেশে ফিরে যায় তাহলে আমাদের মাদ্রাসাগুলো একটা দিক নির্দেশনা পেতে পারে।তানাহলে বিদাআতি আলেমে সয়লাভ হয়ে দেশের ইসলামিক সংস্কৃতি তথা আমাদের ইসলামের সঠিক অনুশীলনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে।
বিষয়: বিবিধ
৩৭২৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যইফ ও জাল হাদীস বর্জনের মূলনীতি (বই)
মন্তব্য করতে লগইন করুন