'তাওফিক' সম্পর্কে মুসলিমের ধারনা কি এবং কিভাবে এ বিষয়টি হাসিল করা যায়?
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৪ জুলাই, ২০১৪, ০৪:৪৯:৪৫ বিকাল
আমরা মুসলমানরা কথায় কথায় 'তাওফিক' শব্দটির উচ্চারন করি।আল্লাহ 'তাওফিক'দিলে কাজটি করবো বা 'তাওফিক' হলে সেখানে যাব ইত্যাদি।কেন আল্লাহর-ই কাছে তাওফিক চাওয়া হয় আবার কাজে কর্মে আল্লাহরই আদেশের বিপরীত কাজ করা হয় এ নিয়ে ধর্ম-কর্ম কারিরা অনেক সময়ই ভাবি না।আল্লাহই আমাদের সৃষ্টি করেছেন আর সবচেয়ে বেশী তাওফিক দিয়েছেন রাসূল সা:কে।মানব জাতি বিশেষ করে মুসলিম জনগোষ্ঠি যাদের হিসেব -নিকেশ নেয়া হবে কড়ায় গন্ডায় তারা আল্লাহর আইনকে ভুলতে বসেছে।তারা তাদের ইচ্ছার বশবর্তি হয়ে কাজ করছে।নিজেই আইন প্রনয়ন করছে।আবার কেউ কেউ প্রকৃতির কথা বলছেন।তারা এই প্রকৃতি বলতে কি বুঝাতে চান তা পরিষ্কার নয়।তারা কি তাদের চোখ দিয়ে দেখে না এই চন্দ্র সূর্য কিভাবে আপন গতিতে চলছে? তারা কি নিজের অবয়ব দেখে ভাবে না কিভাবে তাকে সৃষ্টি করা হলো? তারা কি নিজের চোখে দেখে নি তার শিশু পুত্র বা কন্যা কিভাবে ভূমিষ্ট হয়ে এই পৃথিবীতে আগমন হলো? যদি কোন বিধান কর্তা না থাকে তাহলে এই প্রকৃতিই বা আসলো কিভাবে? আমরা মুসলমানরা বুঝে হোক বা না বুঝে হোক আল্লাহ আছে স্বীকার করি।আলকুরআনে অসংখ্য আয়াত রয়েছে যেমন- সূরা ইউনূছ-৩, সূরা আল মুলক ১৬/১৭,সূরা ত্বা-হা ৪/৫,সূরা আল ফুরক্কান ২,সূরা আস সিজদাহ ৪ এভাবে আরো অনেক যার স্বীকৃতি আল্লাহ আরশের উপর অধিষ্ঠিত অর্থাৎ সবচেয়ে উর্ধে।আর আমরা যখন আল্লাহু আকবর বলি এর অর্থ বুঝায় সমস্ত সৃষ্টি থেকে তিনি মহান ও বড়ত্বের অধিকারি।তিনি সমস্ত রুহ সৃষ্টি করে জিজ্গেস করেছিলেন আমি কি তোমাদের রব? সমস্ত সৃষ্টি জবাব দিয়েছিল হাঁ তুমিই আমাদের রব। তিনি বলেছেন পৃথিবীর কোন দৃষ্টিশক্তি আমাকে দেখবে না ( লা তুদরিকুহুল আবছার)। সেজন্য প্রকৃত ঈমানদারদের কাছে আল্লাহর অস্তিত্ব পরিষ্কার এবং তারা আল্লাহকে নিয়ে ভাবে আল্লাহর-ই মত।আল্লাহর যে বিধান দিয়েছেন তার কাছে মাথা নত করে চলে।আল্লাহর মনোনীত রাসূল সা:কে তাদের প্রতিটি কাজে অনুসরন করে চলে।কোন প্রবৃত্তির অনুসরন করে চলে না।চলার পথে কোন বাধা তৈরি হলে আল্লাহ ও তার রাসূলের আদর্শের কাছে ফিরে যায়।
তাওফিক শব্দটি আরবি শব্দ হলেও আমাদের বাংলা ভাষার সাথে জড়িয়ে আছে।এর অর্থ হলো কোন কাজের শক্তি বা সামর্থ।আল্লাহর তাওফিকের কারনে আমরা কামিয়াবি হয়ে থাকি।আল্লাহ তাওফিক না দিলে কারো পক্ষেই কামিয়াবি হওয়া সম্ভব নয়।ধরুন যদি আমরা শিক্ষক জাতিকে উদাহরন হিসেবে নেই দেখবো বহু শিক্ষক রয়েছেন যাদের জন্য ছাত্ররা পাগল,যাদের সম্মান করে ও সমীহ করে। আবার কেউ কেউ ছাত্রদের দ্বারা লান্চিত ও হচ্ছেন। এই তাওফিক আল্লাহই দান করেছেন।কেউ সম্মান অর্জন করছেন আবার কেউ লান্চিত হচ্ছেন।এর সাথে কর্মের সম্পর্ক রয়েছে।সমস্ত নবী রাসূল তাদের কাজ কর্মে সব সময় আল্লাহর তাওফিক ও তাওয়াক্কুল করেছেন।সূরা হুদের ৮৮ আয়াতে হযরত সোয়াইব (আ) তাওফিক কামনা করেছেন এভাবে,"আমি শুধু চাই সংস্কার করতে যতটা আমি সাধ্যমত পারি।আর আমার কার্যসাধন আল্লাহর সাহায্য ছাড়া নয়।আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং তারই উপর ফিরি।" তিনি তার জাতিকে এভাবেই বলেছিলেন।সমাজে যারা বিশৃংখলা চায় তারা সংস্কার চায় না।আর নবী রাসূল ও তার অনুসারিরা সংস্কারের জন্যই কাজ করেছেন এবং ক্কেয়ামত পর্যন্ত এই সংস্কার চলবে।প্রশ্ন হলো সংস্কার কিভাবে হবে? সংস্কারকদের কাজ হলো আল্লাহর পথে ও রাসূলের আদর্শ মেনে কাজ করা।রাসূল সা: এর পরে সাহাবারা পূর্নমাত্রায় তাঁকে অনুসরন করেছিলেন। কোন মন গড়া সংস্কার নয় যে আমি মনে করেছি এভাবে করলেই ভাল বা আমার নেতা এভাবে বলেছেন।শরিয়তের বিধান যা রাসূল কতৃক প্রনীত হয়েছে তার সংশোধনের এখতিয়ার কারো নেই।যদি নতুন কিছু নিয়ে আসা হয় সেটাই বিদাআত।রাসূল সা: এমন কিছু উম্মাহের জন্য বাকি রাখেন নি যা তাদের করতে হবে।তাওফিক এমনিতে আসে না তার জন্য কাজ করতে হয়।একজন মানুষের পার্থিব জীবন বসে বসে সুন্দর হয়ে উঠে না।তাকে দিন রাত প্রানান্ত পরিশ্রম করতে হয়,চেষ্টা সাধনা করতে হয়।যে কোন ফলাফল কাজ না করে অর্জন করা যায় না।যেমন আজকাল মানুষ যা করে থাকে।যে নামাজের সময় মসজিদে জামাতে নামাজ পড়লোনা,ভাল কাজ না করে খারাপ কাজ করলো,শির্ক-বিদাআত করলো আর আল্লাহর তাওফিক কামনা করলো।কি করে সম্ভব আল্লাহর তাওফিক হবে? যার কাছে তাওফিক কামনা করা হয় তার আদর্শের মত না হলে তিনি সেই শক্তি বা সাহস যোগাবেন কেমন করে?রাসূল সা: যেমন তাওফিক কামনা করেছেন তেমনি ওহুদেও অবতীর্ন হয়েছেন।যেখানে যেভাবে দ্বীনের মেহনত করার দরকার সেভাবে করেছেন।আল্লাহর বিধানকে কার্যকর করার জন্য নিজে কোন পরিবর্তন পরিবর্ধন করেন নি বরং কোন সমস্যা আসলে বিধান বর্তমান না থাকলে আকাশের দিকে তাঁকে তাকিয়ে থাকতে হয়েছে।বর্তমান মুসলিম জাতির অধপতন এই কারনে যে তারা আলকুরআন ও ছহি হাদিস বর্তমান থাকতেও অনুসরন করছে মিথ্যা ও জাল হাদিসের এবং নিজেদের মন গড়া মতবাদের উপর।ভারত উপমহাদেশে শির্ক বিদাত আসতোনা যদি ছুপিবাদের আবির্ভাব না হতো।এই ছুপিবাদ জাতিকে কাফেরের গোলাম বানিয়েছে।খানকা ও পিরতন্ত্রের আখড়া ধর্মকে যেমন কলুষিত করেছে তেমনি সাধারন মানুষকে ইসলামের মুলশ্রোত থেকে সরিয়ে শির্ক ও বিদাআতি ইবাদতে মশগুল করেছে।
জাতির মধ্যে যারা ইসলামের সংস্কার করতে যায় তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে ইসলামের সাথে নিজেদের তৈরি করা মতবাদ যুক্ত করে ইসলামের খাদেমে পরিনত হয়েছে।ইব্রাহিম আ; নিজেই একটি উম্মত ছিলেন।শির্কের বিরুদ্ধে একাই যুদ্ধ ঘোষনা করেছিলেন।সূরা মারিয়ামের ৪১-৪৯ আয়াত পর্যন্ত তার পিতার সাথে মিথ্যা উপাস্যের ব্যাপারে বাকবিতন্ডা করেছিলেন এবং একমাত্র আল্লাহর জন্য ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন পিতার আবাস।আজকে আমরা যারা ধর্ম কর্ম করছি ব্যাক্তিগতভাবে বা দলীয় ভিত্তিতে তাদের কাছে নবী ইব্রাহিম আ; এর আদর্শ কতটুকু বর্তমান? লোকালয়ে শির্ক ও বিদাআতে ভরপুর তার বিরুদ্ধে কোন কথা নেই।সমকালীন শক্তি ও শির্ক-বিদাআতিদের সাথে হাত মিলিয়ে আল্লাহর তাওফিক কামনা কস্মিনকালেও গ্রহনযোগ্য নয় এবং এটা ইসলামের পথও নয়।রাসূল সা: যখন ৩১৩ জন সাহাবিদের নিয়ে বদরে জিহাদে অবতীর্ন হন তখন কি তিনি শুধু জনবলের উপর নির্ভর করেছিলেন? তার ঈমানি শক্তি ও আল্লাহর উপর তায়াক্কুল ও তাওফিক কামনাই প্রাধান্য পেয়েছিল।তিনি দোয়া করেছিলেন এই বলে,"আল্লাহ তুমি যদি এই ক্ষুদ্র দলটিকে ধংস করে দাও তাহলে পৃথিবীতে আর এবাদতের লোক খুজে পাওয়া যাবে না।" দোয়ায় অবতীর্ন হয়ে তাঁর শরীর থেকে চাদর পড়ে যাচ্ছিল আর আবুবকর রা:বার বার চাদর উঠিয়ে দিচ্ছিলেন এবং বলেছিলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ যথেষ্ঠ হয়েছে আল্লাহ কখনো মুসলিমদের কাফেরের পদানত করবেন না।আল্লাহ বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় দিয়েছিলেন।আমাদের ব্যাক্তিজীবন পরিশুদ্ধ নয়।এবাদতে শির্ক ও বিদাআত পরিপূর্ন।আমাদের কথা বার্তায় কাজে কর্মে শির্কের গন্ধ বিদ্যমান।আমাদের আস্হা তৈরি হয়ে আছে পার্থিব জিনিসের উপর।আমাদের বসবাস কাফের মুশরিকদের মাঝে।মুসলিম দেশে তাদের ভাল অবস্হান ছেড়ে কাফেরদের সাথে বসবাসের বর্তমান হিড়িক দেখে কি মনে হয় না আমরা মুসলমানিত্বে বিশ্বাসি কিনা? সূরা নিসার ৯৭ আয়াতটি নাজিল হয়েছিল ঐ সমস্ত মুসলিমদের জন্য যারা জেনেছিল রাসূল সা: এর নেতৃত্বে একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।।মদিনায় মুসলিম ষ্টেট হওয়ার পরেও যারা কাফের মুশরিকদের সাথে বসবাস করছিল তাদের কারো মৃত্যুর সময় আসলে উপরোক্ত আয়াতে বলা হয়েছিল,"নি:সন্দেহে ফেরেস্তারা যাদের মৃত্যু আনয়ন করে যারা ছিল নিজেদের প্রতি অন্যায়কারি,তারা(ফেরেস্তারা) বলবে,তোমরা কি অবস্হায় পড়ে রেয়েছিলে? তারা(বসবাসকারিরা) বলবে,আমরা দুনিয়াতে দুর্বল ছিলাম। তারা(ফেরেস্তারা) বলবে,আল্লাহর পৃথিবি কি প্রশস্ত ছিল না যার ফলে তোমরা সেখানে হিজরত করতে পারতে? কাজেই এরা- এদের বাসস্হান জাহান্নাম আর মন্দ সেই আশ্রয়স্হাল।" শুধু কি তাই? আজকের এই মুসলিম মিলিয়ন মিলিয়ন খরচ করে ইহুদি খৃষ্টানদের দেশে ছুটি কাটাচ্ছে ব্যাবিচার করার জন্য। বছরের ছুটি কোন ব্যাভিচারের দেশে কাটাবে তা আগে থেকেই নির্দিষ্ট করে রাখে।মুসলিম এলাকাগুলোতে যুদ্ধাহত মানুষ না খেয়ে দিনাতিপাত করছে সেদিকে তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই।তারা আবার ইসলামের কাজগুলো ইচ্ছামত করছে। সোবহানাল্লাহ,আলহামদুলিল্লাহ,বীইজনিল্লাহ , রাব্বিল ক্কাবা এ সমস্ত তাছবিহ গুলো সদা মুখে আওড়ায়।অথচ তাদের তাওফিক হয় না মক্কা বা মদিনা এসে থাকার।কারন তাদের প্রকৃতি বিকৃত হয়ে গেছে।ইসলামের কথা বলছে কিন্তু ইসলামের কাজ করছে না? তারা যদি জানতো তাদের জীবনের হিসেব দিতে হবে, কখনো এ কাজে টাকা খরচ করতে পারতোনা। তিরমিযি শরীফে রাসূল সা: বলেন,' ক্কেয়ামতের দিন কোন মানুষ এক পদক্ষেপ ও সামনে এগুতে পারবে না ৫টি প্রশ্নের উত্তর দেয়া ছাড়া।তার জীবনের হিসাব,যৌবনের হিসাব,কি উপায়ে মাল অর্জন ও কিভাবে সে মাল ব্যায় এবং দ্বীনের ইলম যততুকু অর্জন করেছে তা প্রচার করেছে কিনা। গতকাল ১৩ই জুলাই ডক্টর কামাল হোসেনকে এক ইফতার অনুষ্ঠানে বলতে দেখলাম কাফেরদের চেয়ে মুনাফেকরা খারাফ।তিনি তার মত বলেছেন কথাটি সত্য।আলকুরআন বলেছে মুনাফেকদের অবস্হান জাহান্নামের নিচুস্তরে সংকীর্ন যায়গায়।মানুষ আজ দুনিয়ামুখী হওয়ার কারনে তাওফিক হয় না।দুনিয়ার আগে হতে হবে দ্বীনের তাওফিক ও হেদায়েতের তাওফিক।ঈমান ও নেক আমলের তাওফিক। জান্নাত হাসিল ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির তাওফিক।দুনিয়া ও আখেরাতে মুক্তির জন্য আমাদের এই রমজান মাসে তাওফিক কামনার জন্য নিম্নের বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়া জরুরি:-
১-প্রতিটি কাজ আল্লাহর নামে-বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা:- আমরা মুসলমানরা যে ভুল করি তা হলো আমাদের সব কাজ আল্লাহর নামে করতে ভুলে যাই।সেই আদম আ; থেকে যে ভুল হয়ে আসছে তা আমাদের জীবন থেকে সরাতে পারছিনা।আদম আ; একটাই ভুল করেছিলেন আর তার জন্য দীর্ঘ সেজদায় পড়ে থেকেছিলেন।আবার ইবলিশ শয়তান আল্লাহর বিরোধীতা করে একটাই ভুল করেছিল।কিন্তু আমরা মুসলমানরা ২৪ ঘন্টায় কত ভুল করছি তার হিসাব করছি কি? আমাদের কাজে এই বিসমিল্লাহ না বলার কারনে শয়তান আমাদের সাহচর্যে থাকে সে জন্য আমাদের তাওফিক হয় না।রাসূল সা: বলেন,প্রত্যেক ভাল কাজ যদি আল্লাহর নাম দিয়ে শুরু করা না হয় তাহলে সেটা লেজকাটা হয়।" রাসূল সা: যখন কোন বাহনে চড়তেন তিনি বিসমিল্লাহ , আলহামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবর বলতেন।
২-তাওহিদ প্রতিষ্ঠা-জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ পাকের একত্ব প্রতিষ্ঠা করা।আল্লাহ পাকের জাত ও গুনাবলীর ক্ষেত্রে যেন তাওফিক থাকে।আমরা অতি সাধারনভাবে যে নামগুলো একে অপরকে ডেকে শির্ক করি তার কোন খেয়াল নেই যার সাথে আল্লাহর নামের সম্পর্ক রয়েছে।যেমন-আব্দুর রহমান না ডেকে বলি রহিম ভাই, আব্দুল খালেক না বলে ডাকি খালেক ভাই ইত্যাদি। এভাবে সিংহভাগ মানুষ সে মানুষটিকে রহমান বা খালেক বানিয়ে আল্লাহর সমকক্ষ করে দেয়।এই অনৈসলামিক কথাগুলো তথা বড় ও ছোট শির্ক জড়িয়ে আছে আমাদের এবাদতে।কেউ কেউ বলে আমার এ ছেলেটি বা মেয়েটি লক্ষী।লক্ষী দেবি হলো হিন্দুদের রিজিকদাতা।আমাদের কথা কাজে এই বিচরনশীল ভাষার আদান প্রদানে ও আমাদের তীখ্ন দৃষ্টি রাখতে হবে যেন শির্ক না থাকে। শির্কের গুনাহ থাকলে কোন আমল আর সৎ আমল থাকে না।সূরা আল ফোরক্কানের ২৩ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'তারা কাজকর্মের যা করছে আমরা তা বিবেচনা করবো,তার পর তাকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকনা বানিয়ে দিব।" সুতরাং অসংখ্য এবাদত করেও কোন ফল হবে না যদি তা শির্ক যুক্ত হয়।শির্ক ও বিদাআত মুক্ত অল্প এবাদতও মানুষকে কামিয়াবি করবে ইনশাআল্লাহ এবং এর পক্ষে অনেক হাদিস রয়েছে।আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ শপথ করে আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে।আর আনেকে আল্লাহর নামে শপথ করলে বিশ্বাসও করে না।যদি বলা হয় আমার ছেলের কসম বা আমার চোখের কসম তাহলে ভাবে এটাই ঠিক কারন তার জীবনের উপর ক্ষতি আসতে পারে।মানুষের এই যে চিন্তার বিকৃতি তা শির্কে পৌঁছে দেয়।এইভাবে মানুষ আজ নির্ভরশীল হয়ে আছে চাকুরি,ব্যাবসায় ও যার যার প্রফেশনের উপর।বিদেশে অবস্হানরত কেউ কেউ বলে দেশে বাড়ি ও ব্যাবসায় প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক ব্যালেন্স করে রেখেছি কোন চিন্তা নেই এগুলো দিয়ে চলা যাবে।তাহলে মানুষের নির্ভরতা জন্ম নিল আল্লাহকে ছেড়ে দিয়ে পার্থিব জিনিসের উপর।আবার অফিস আদালতে শুনা যায় আমার মালিকের সাথে বা ম্যানেজারের সাথে ভাল সম্পর্ক আছে চাকুরির কিছু হবে না।এই আস্হাগুলো জীবনকে শির্কে পৌঁছে দিল অথচ সে মানুষটি ইসলামের সব কাজগুলোই করলো না বুঝে শুনে।আখেরাতে কি ভাগ্যবরন করতে হবে আল্লাহই ভাল জানেন।আল্লাহ সূরা নুরের ৫৫ আয়াতে বলেন,'তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে ও সৎ কাজ করেছে আল্লাহ তাদের ওয়াদা করেছেন,তিনি নিশ্চই তাদের পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করেছিলেন তাদের যারা ছিল এদের পূর্ববর্তি,আর অবশ্যই তিনি তাদের জন্য সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের ধর্ম যা তিনি তাদের জন্য মনোনীত করেছেন,আর নিশ্চয় তাদের ভয় ভীতির পরে তাদের জন্য বদলে আনবেন নিরাপত্তা।তারা আমাদেরই এবাদত করবে,আমার সংগে অন্য কারো শরীক করবে না।" এই আয়াতে তো আল্লাহ ঈমানদারদের কাজের কথাই বলছেন এবং অনেকগুলো নেয়ামতের কথা বলছেন কিন্তু শর্ত দিয়ে দিলেন শেষ লাইনে একমাত্র তার এবাদত করতে হবে ও কোন শির্ক করা চলবেনা।
৩-ইখলাস বা নিষ্ঠার সাথে ইবাদত করা:-অনেক সময় তৌহিদের প্রতি শব্দ হিসেবে ইখলাস কে ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।ইখলাছের আর একটি দিক হলো মানুষের প্রত্যেকটি কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধান। এর জন্য দরকার দ্বীনি ইলম।এখানে বুঝার ব্যাপার হলো ইলমটা শিখা হচ্ছে কোন নিয়্যাতে।কারন আল্লাহ মানুষেকে ফলাফল দান করবেন তার নিয়াতের ভিত্তিতে।আজকের যুগে বেশীরভাগ মানুষ সন্তনদের পড়ালেখা শিখায় পার্থিব সুবিধার জন্য।কে কোন দেশে পড়লে বা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে দুনিয়ায় লাভবান হতে পারবে।দ্বীন শিখার জন্য জীবনের প্রথমে সে রকম ব্যাবস্হা নেয়া হয় না।অনেক কে বলতে শুনেছি আলেম বানিয়ে জীবনটাই নষ্ট হয়ে যাবে।আবার অনেকে বলে ছেলে মেয়েকে কোরান মুখস্ত করিয়ে পার্থিব জীবনের ডিগ্রিটা নেয়া সম্ভব হবে না।তাদের জন্য একটি বিষয় খোলাসা করতে চাই,আপনি যে ধর্মের নাম বিক্রি করে চলছেন সে ধর্মের আদি পুরুষ যাদের আমলের উচ্চতা রাসূল সা: ওহুদের সাথে তুলনা করেছেন তারাতো এই আল কুরআনেরই আলেম ছিলেন।ছহি বোখারিতে হারিচা ইবনে ওয়াহাব আল খুযায়ি রা: থেকে বর্নীত রাসূল সা: বলেন,আমি কি তোমাদের জান্নাতের পরিচয় জানিয়ে দিব না? তারা অখ্যাত,দুর্বল,কোমল ও বিনয়ী স্বভাবের লোক।আর আমি কি জাহান্নামিদের পরিচয় জানাবোনা? তারা বদমেজাজি,কঠোর,নিষ্ঠুর স্বভাবের,দাম্ভিক ও অহংকারি।সুতরাং একজন মানুষের দায়িত্ব সহজ সরল জীবন যাপন করা ও মানুষের জন্য যতটা সম্ভব কল্যান করা।সূরা দাহরের ৯ আয়াতে আল্লাহ দানশীলদেরে সম্পর্কে বলেন,'আমরা তোমাদের খেতে দিচ্ছি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য,তোমাদের থেকে আমরা কোন প্রতিদান চাই না,কৃতজ্গতাও নয়।" আজকের সমাজে আমরা কেউ কারো একটু কল্যান করলে অনেক কিছু করেছি বলে জাহির করি বা এর বিনিময় চেয়ে থাকি।এ কজাগুলো অজ্গতা।আল্লাহ আমাদের দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন মানুষের কল্যান করার জন্যই।আবার যাদের কল্যান করা হয় তারা আবার কল্যানকারির ক্ষতি করতে কুন্ঠিত হয় না।সুতরাং দুপক্ষকেই কথা কাজে সংযত থাকতে হবে।
৪-ছহি জিকির করা :-আলকুরআন পাঠ হলো উত্তম জিকির। ফরয জিকির হলো ৫ ওয়াক্ত নামাজ কায়েম করা।সকাল বিকাল জিকিরের কথা বলা হয়েছে।সূরা ক্কাফের ৩৯/৪০ আয়াতের আল্লাহ রাসূল সা:কে বলেন,'অতএব ওরা যা বলে তা স্বত্বেও তুমি অধ্যবসায় চালিয়ে যাও এবং তোমার প্রভুর প্রশংসায় জপতপ কর সূর্যদয়ের পূর্বে ও অস্ত যাওয়ার আগে।আর রাতের বেলায়ও জপতপ কর আর সিজদাগুলোর পরে।" মু'মিন প্রতিটি সময়ই জিকিরের মাধ্যমে অন্তরকে তাজা রাখে ও শয়তানের আশ্রয় থেকে দূরে থাকে।এর জন্য বিদাআতি জিকিরের প্রয়োজন নেই।সপ্তাহে একবার বা মাসে,কিছুসংখ্যক লোক একসাথে বসে বিভিন্ন শব্দ উচ্চারন করে ইত্যাদি।আমাদের প্রতিটি কাজই জিকির।ঘরে ঢুকতে ও বের হতে,টয়লেটে ঢুকতে বের হতে,ঘুমাতে যেতে ও ঘুম থেকে উঠতে,মসজিদে ঢুকতে ও বের হতে,কিছু খেতে দোয়া পড়া,সুখের সময় ও বিপদে পড়লে এরকম আরো অনেক।বিদাআতি জিকির জাহান্নামের দিকে তাড়িত করবে।আল্লাহকে ভয় করে তার দেয়া বিধান মতই জিকির করতে হবে।সূরা আনফালের ২৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'ওহে যারা ঈমান এনেছ !তোমরা যদি আল্লাহকে ভয়ভক্তি কর তবে তিনি তোমাদের দিবেন ফুরকান আর তোমাদের থেকে তোমাদের মন্দ ঘুচিয়ে দিবেন আর তোমাদের পরিত্রান করবেন।"
৫-জামাতে নামাজ আদায়:-দ্বীন দুনিয়ার তাওফিক গুরুত্বপূর্ন বিষয় হলো জামাতে নামাজ আদায় করা।রাসূল সা: বলেন,নেকড়ে বাঘ সে বকরিটি খায় যে পাল ছাড়া থাকে।"যে ব্যাক্তি জামাতে নামাজ পড়ে না শয়তান তাকে আছর করে ও গোম্রাহ করে।রাসূল বলেন,'যে ব্যাক্তি ফযরের নামাজ পড়বে সে আল্লাহর হেফাযতে থাকবে।বাস্তবেও যে ব্যাক্তি ফযরের নামাজ পড়ে সারাদিন আর কোন নামাজ ছুটতে পারে না।এই রমজান মাসে প্রতিটি মসজিদে কানায় কানায় পূর্ন হয়ে যায় কিন্তু রোজা শেষে ঈদের দিনই সেই মসজিদগুলো ২/৩ কাতার পুরো হয় না।এই সব মুসলিমদের জন্য আল্লাহ রোজার বরকত রাখেন না।যারা সারা বছর ইবাদত করে আর রোজার মাসে তা আরো বেশী করে পূর্ন করে তারাই সফলতা অর্জন করে।আর মুসলিম বিশ্বে ইহুদি খৃষ্টনের পথ ধরে ঈদের দিন গুলোতে যে ব্যাবিচার হয় তার জন্য সরকারের তো কোন করনীয় নেই এবং পরিবারের ও মনে হয় কোন দায়িত্ব নেই।প্রতিটি পরিবারে সন্তানদের যদি দ্বীনি পরিমন্ডলে লালন পালন না হয় তাহলে কি করে সম্ভব সমাজ পরিবর্তন করা।আল্লাহ এসব ফাসেক মুসলিমদের বুঝার তাওফিক দিন।
৬-আত্মীয়তার সুসম্পর্ক রাখা:-আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখার চেষ্টা করা প্রত্যকের কর্তব্য।যদিও বর্তমান দুনিয়ায় মানুষ দুনিয়ার কারনে স্বার্থপর হয়ে উঠেছে।নিজের পরিবারেও সম্পর্কের অনেক ঘাটতি রয়েছে দ্বীন না থাকার কারনে।রাসূল সা: থেকে আনাস ইবনে মালিক রা: বর্ননা করেন,'যে ব্যাক্তি পছন্দ করে তার রিজিক প্রশস্ত ও আয়ু বৃদ্ধি হউক সে যেন আত্মীয়তার বন্ধন সমুন্নত রাখে।' ছহি বোখারিতে রাসূল সা: বলেন,'দ্বীন হলো নসিহত।'আমাদের প্রত্যকের প্রতি হিতাকাংখী হতে হবে।কোন কারনে গীবত ,চোগলখুরি ,খুন খারাবির ও অন্যায় কর্মের চিন্তা ও যেন আসে সে খেয়াল রাখতে হবে।আল্লাহ দুনিয়াতে কাউকে কারো উপর মর্যাদা দিয়ে,সম্পদ দিয়ে দুই পক্ষকেই পরীক্ষা করছেন।এই পরীক্ষায় উত্তীর্ন হওয়ার জন্য আখেরাতের চিন্তাকে প্রাধান্য দিতে হবে।সূরা আল ইমরানের ১৮৫ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'প্রত্যকে প্রানীকে মৃত্যুর স্বাধ আস্বাধন করতে হবে।নিশ্চয় ক্কেয়ামতের দিন তোমাদের প্রাপ্য তোমাদের আদায় করা হবে।যাকে আগুন থেকে বহু দূরে রাখা হবে ও জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে,নি:সন্দেহে সে হলো সফলকাম।আর এই দুনিয়ার জীবন ধোকার সম্বল ছাড়া কিছুই নয়।'
৭-নিজেকে সংশোধন করা ও অন্যের সংশোধনে এগিয়ে যাওয়া:- ইসলামে একজন মানুষের করনীয় হলো নিজের জীবনকে শরিয়তের ইতিবাচক দিক গ্রহন করে ও নেতিবাচক দিক বর্জন করে সংশোধন করা।সাথে সাথে নিজের পরিবার,আত্মীয়, প্রতিবেশি ,বন্ধুবান্ধব ও অধিনস্তদের দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছানো।এমন যেন না হয় নিজে কোন কাজ করলো না অন্যকে বলা হলো।এমনও যেন না হয় শরিয়তের কোন জিনিস জানা নেই তা অন্যকে বলা বা ফতোয়া দেয়া।আমাদের সমাজে এ ধরনের লোকের কোন অভাব নেই।শরিয়তের কোন প্রশ্ন আসলে যিনি শরিয়তের ব্যাপারগুলোর উপর দক্ষ তার কাছে পাঠানো উত্তম।সাহাবারা এ কাজই করতেন।ঈমাম মালেক (র) এর সময় অনেক বড় বড় মুহাদ্দেছিন ছিলেন কিন্তু কোন সমস্যা আসলে ঈমাম মালেকের কাছেই পাঠানো হতো অর্থাৎ অন্য কেউ ফতোয়া দিতে পারতো না।এটা হলো দ্বীনের এহতেরাম।
৮-সব সময় আল্লাহকে ভয় করা:-প্রতিটি কাজে আল্লাহর ভয় অন্তরে জাগ্রত করা।আল্লাহকে হাজির নাজির রেখে কাজ করলে কোন মানুষ অন্যায় করতে পারে না।ক্কেয়ামতে হিসাব নিকাশের ভয় থাকলে একজন মানুষ খাঁটি মানুষে পরিনতে হতে পারে।সূরা আল ইমরানের ১০২ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'ওহে যারা ঈমান এনেছ!আল্লাহকে ভয় শ্রদ্ধা কর যেমন তাকে ভয় শ্রদ্ধা করা উচিত আর তোমরা মৃতু বরন করো না আত্মসমর্পিত হওয়া ছাড়া।' কোন মানুষ যদি আল্লাহকে ভয় করে তাহলে কোন অন্যায় করতে পারে না।
৯-কবিরা ও ছগিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা-কমপক্ষে সত্তরের ও অধিক কবিরা গুনাহ রয়েছে।সূরা নিসার ৩১ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'যদি তোমরা বিরত থাক বড়গুলো থেকে যা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে তবে তোমাদের থেকে আমরা তোমাদের দোষক্রুটি মুছে দিব আর তোমাদের প্রবেশ করাবো গৌরবময় প্রবেশদ্বারে।' রাসূল সা: বলেছেন,'হে আয়শা ছোট ছোট গুনাহ থেকে বেঁচে থাক কারন ছোট গুনাহ বড় গুনাহে পরিনত হয়।" পিতামাতার অবাধ্য হওয়া,মানুষ হত্মা,ঘুষ সুদ খাওয়া,ব্যাভিচার করা,জুলুম অত্যাচার করা,এতিমের মাল খাওয়া ইত্যাদি----।
১০-রাসূল সা:কে আদর্শ হিসেবে স্হাপন করা:- জীবনের সর্বক্ষেত্রে রাসূল সা:কে আদর্শ হিসেবে মেনে চললে এবং শির্ক বিদাআতকে বেচে চললে একজন মানুষ সঠিক সরল পথে চলার পথ পাবে। সূরা হাশরের ৭ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'রাসূল তোমাদের যা কিছু দেন তা গ্রহন কর আর যা কিছু নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকা।' এ ব্যাপারে ছহি হাদিসের তালাশ করা প্রত্যেক মু'মিনের অবশ্য কর্তব্য।বাজারে যে সমস্ত বই পুস্তক রয়েছে তা হক্কানি আলেমদের সাথে পরামর্শ করে পড়া এবং বিশেষ করে ছহি বোখারি ও মুসলিম এখন বাংলায় অনুবাদ হয়েছে তা অনুসন্ধান করে পড়ার মাধ্যমে সৎ আমল করা যায়।
১১-শির্ক ও বিদাআত থেকে বেঁচে থাকা:- সৎ আমল করার জন্য ইবাদতে শির্ক ও বিদাআত আছে কিনা তা জানতে হবে।শির্ক হলো বড় জুলম।আমাদের কথা ও কাজে অনেক শির্ক রয়েছে আমরা তা জানি না।রাসূল সা: উম্মতের জন্য বড় শির্কের জন্য ভীত ছিলেন না বরং বলেছেন এমন শির্কের কথা যা কালো পাথরে কালো পিঁপড়ার মত।একটি কালো পাথরে যেমন একটি ছোট কালো পিঁপড়া দেখা যায় না তেমনি আমাদের কাজেও এমনি ছোট শির্ক রয়েছে যা দেখা যায় না অথচ সেটা আমাদের আমল নষ্টকারি বিষয়। কোন কোন কাজ করলে আল্লাহর সমকক্ষে পরিনত হয় তা জানা আবশ্যক।আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পন করার মাধ্যমে একজন খাঁটি বান্দাহ হওয়া যায়।ইবাদতের পূর্বশর্ত হলো আল্লাহকে চিনা।কেউ যদি আল্লাহকে চিনতে ব্যার্থ হয় তাহলে তার সারা জীবনের ইবাদত ব্যার্থ হতে বাধ্য।
১২-মানুষের উপর জুলুম অত্যাচার বন্ধ করা:-মানুষের উপর যেন কোন অত্যাচার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।আমরা নিজের অজান্তে অনেক অন্যায় একে অন্যের উপর করে থাকি যার হসেব নিকেশ করা জরুরি।ছহি বোখারিতে রাসূল সা:বলেন,'মজলুমের দোয়া থেকে বেঁচে থাক।মজলুমের দোয়া ও আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা থাকে না।" ছহি বোখারি ও মুসলিমে রাসূল সা: বলেন,'সত্যিকার মুসলিম সে , যে ব্যাক্তি তার হাত ও জবানের অনিষ্ট থেকে মুক্ত থাকে।' যে কোন পাপ করাই হলো নিজের উপর জুলম।আমাদের সমাজে অহরহ একটি কাজ দেখা যায় যে পিতামাতা সন্তানদের পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব থেকে একে অন্যকে বিভক্ত করে রাখেন।অর্থাৎ ছেলেকে বেশি ভালবাসেন ও মেয়েকে নয়।আবার মেয়ে যদি যোগ্য হয় ও ছেলে যদি অযোগ্য হয় তাহলে মেয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েন।এগুলো ঐসমস্ত পিতামাতার অজ্গতা।রাসূল সা: বলেছেন যার দুটি বা তিনটি মেয়ে রয়েছে যদি সৎভাবে লালন পালন ও দ্বীনি ইলম দিয়ে বিয়ে দেয় তাহলে ক্কেয়ামতের দিন রাসূল সা: এর সাথেই অবস্হান হবে।' যথা সম্ভব মানুষের উপকার করা।কেউ যদি মনে করে আমি কারো উপকার করতে না পারি কিন্তু ক্ষতি করবো না তাহলে সমাজে কোন অস্হিরতা থাকতে পারে না।
১৩-আল্লাহর কাছে দোয়া করা:-রাসুল সা: বলেন,'দোয়া হলো ইবাদাতের সার।'দোয়ার মাধ্যমে ইবাদাত কবুল হয়।ঈমাম গাজ্জালি (র) দোয়ার ব্যাপারে দশটি আদবের কথা উল্লেখ করেছেন,উত্তম দিন সমূহ যেমন-আরাফার দিন,জুমার দিন,রমজান মাসের যে কোন দিন ইত্যাদি,উত্তম সময় সমুহে দোয়া-যেমন আজান ও ইক্কামতের মধ্যবর্তি সময় দোয়া বিফলে যায় না। শুক্রবার আছরের পরে মাগরিব পর্যন্ত সময়।এ ছাড়া এ ধরনের যত গুরুত্ব পুর্ন সময় আছে সে সময়গুলোতে দোয়া।কিবলা মুখি হয়ে দোয়া করা,অনুচ্চ স্বরে দোয়া করা।দোয়াতে অন্তমিল বাক্য ব্যাবহার না করা।অত্যন্ত অনুনয় বিনয় করে দোয়া করা।দোয়াকে আবশ্যকীয় মনে করে দোয়া করা এবং বিশ্বাস রেখে দোয়া করা।দোয়ার বাক্য সমূহ বার বার উচ্চারন করা।আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে দোয়া করা।পূর্বের গুনাহের উপর অনুতপ্ত হয়ে দোয়া করা ও তওবা করা এবং জুলুমকে পরিত্যাগ করে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্হাপন করা।
বিষয়: বিবিধ
৪৫১১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন