রমজানের ইবাদতে বর্তমান মুসলমানদের বিক্রিত ইবাদত বিশেষ করে তারাঈ নামাজ সম্পর্কে অনেকে রয়েছে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৯ জুলাই, ২০১৪, ০৪:৫১:১২ বিকাল
রমজান আসলে আমরা অনেক মুসলমানরা যেভাবে উঠেপড়ি ইবাদাতের ক্ষেত্রে তা অত্যন্ত ভাল উদ্যোগ।তবে তার চেয়ে বেশি উদ্যোগ দেখা যায় কেনা কাটার ক্ষেত্রে।রাসূল সা: এর সময় প্রতিযোগিতা ছিল কে কত রাত জেগে নামাজ ও কুরআন তালাওয়াত করতে পারে।এখন তা পরিবর্তিত হয়ে আধুনিক হয়েছে।মার্কেট কম্প্লেক্স এর অভাব নেই এখন।ভোগবাদিরা পৃথিবীর সব দেশেই এর পসরা সাজিয়েছে।মুসলিম দেশগুলোতে রমজান আসলে ইবাদাতের চেয়ে ব্যাবসাকে সফল করার জন্য বিভিন্ন হাতিয়ার হাতে নিয়ে থাকে।বাজারে দেয়া হয় সুলভ মুল্যের ছাড়।আর এক শ্রেনীর ক্রেতারা তার দিকে চেয়ে থাকে কখন কোন মার্কেটে ছাড় পাওয়া যায়।দরকার থাকুক বা না-ই থাকুক কেনাকাটা করতে হবে।তারা আবার ইফতার মাহফিল করে সংযমের কথাও বলে থাকেন।রাজনৈতিক পরিমন্ডলে বিশাল ইফতারের আয়োজন জাতিকে হতাশ করে।কোথা থেকে এ টাকার উদ্ভব হয় তা তারাই জানে।সেই ইফতার পার্টিগুলোতে দ্বীনের কথা থাকে না।রাজনৈতিক এজেন্ডার কথা বলা হয়ে থাকে,সাথে সাথে কেউ রোজার বরাত দিয়ে কিছু কথা বলে থাকেন।আবার যারা ইসলামের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চান সে সমস্ত দলগুলোও বসে নেই।খানকা ও পিরের দরবার গুলোতেও খুব জাকজমক ইফতারের আয়োজন হয়ে থাকে।এর মধ্যে আবার দেশের মসজিদগুলোও স্হানীয়দের দ্বারা যে যার মত করে ইফতার আয়োজন করে।সেখানেও থাকে দলীয় প্রভাব।যার পেশী শক্তি যেখানে মজবুত সেখানে তাদের প্রাধান্য থাকে।মোতোয়াল্লি সে সব দল থেকেই থাকে।তাদের কথায় ঈমাম ও মুয়াজ্জিনকে উঠতে বসতে হয়।এই চলমান অবস্হায় চলছে মাহে রমজানের ইবাদাত।যারা আলকুরআন ও ছহি হাদিসের অনুসরনে জীবন পরিচালনা করছেন তাদের সংখ্যা অতি অল্প।তাদের অনেকেই সামর্থকে সামনে রেখে প্রচার সম্প্রচার করছেন।কিন্তু যেখানে শির্ক ও বিদাআতিদের সংখ্যা বেশী সেখানে এদের প্রভাব থাকে না।তবে ইতিহাস বলে এই মানুষের সংখ্যাগুলো থাকে কম তবে কার্যাকারিতা অনেক।
রমজানে তারাঈ এর নামাজ একটি বিশেষ নামাজ হিসেবে খ্যাত যার জন্য রাসূল সা: তাক্কিদ করেছেন।এর হুকুম হচ্ছে সূন্নতে মোয়াক্কাদা।এটি এমন সূন্নত যার জন্য তাক্কিদ রয়েছে।রাসূল সা: এর সময়ে তারাঈ বলা হতো না,এর নামকরন করা হয়েছে অনেক পরে।রাসূল সা: এর সময়ে ক্কেয়ামে রমজান,ক্কেয়ামুল্লাইল,সালাতুল্লাইল এই তিনটিই পাওয়া যায়।আর একটি রয়েছে তাহাজ্জুদ নামে।যে কোন রাতের নামাজকে তাহাজ্জুদ বলা হয়।তারাঈ ও তাহাজ্জুদ সম্পর্কে উলামাদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।একদল বলেছেন তারাঈ ও তাহাজ্জুদ আলাদা নামাজ।আর একদল বলেছেন দুটি একই নামাজ শুধু নামের পার্থক্য।রাসূল সা: হাদিসে বলেছেন,তোমরা রাতের নামাজ দুই দুই করে পড়বে।সূরা ইসরার ৭৯ আয়াতে এই নামাজ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,"আর রাতের মধ্যে থেকে এর দ্বারা জাগরনে কাটাও।তোমার জন্য এ এক অতিরিক্ত;হতে পারে তোমার প্রভু তোমাকে উন্নত করবেন এবং সু-প্রশংসিত অবস্হায়।" তবে ছহি হচ্ছে তারাঈ ও তাহাজ্জুদ একই নামাজ।তাহাজ্জুদ মানে ঘুম ত্যাগ করা।তাহলে তারাঈ নামটি কেন আসলো? তারাঈ শব্দটির অর্থ হলো বিশ্রাম।এই নামাজে আরাম হলো কিভাবে?হাদিস থেকে আমরা দেখতে পাই রাসূল সা: নামাজে দন্ডায়মান থাকতে থাকতে পা ফুলে যেত।দীর্ঘ রাত ধরে নামাজ পড়তেন।দীর্ঘ নামাজ পড়ার কারনে চার রাকাত পর বিশ্রাম করতেন।ছহি বোখারিতে আয়শা রা: বলেন,রাসূল সা: রমজানে বা আগে পরে ১১ রাকাতের বেশী রাতের নামাজ পড়তেন না।" অর্থাৎ তিনি ১১ রাকাতই বড়তেন তবে এত দীর্ঘ ও এত সুন্দর নামাজ পড়তেন যা কল্পনা করা যায় না।রাসূল সা: আরো বলেছেন,'ফরযের পর সূন্নত নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদ হলো উত্তম নামাজ।এই নামাজ রাসূল সা: এর জন্য ফরয ছিল।তবে সাহাবাদের মধ্যে একটি দল এই নামাজে তাঁকে অনুসরন করতেন।রাসূল সা: পর পর তিন দিন সাহাবাদের নিয়ে এই নামাজ পড়েছিলেন।তিনদিন পর তিনি আর তার ঘর থেকে না বেরিয়ে তিনি ঘরেই পড়েছিলেন কারন আল্লাহ এই নামাজে এত খুশি হয়েছিলেন যে তিনি আশংকা করলেন যদি উম্মতের উপর ফরয করে দেয়া হয় তাহলে উম্মতের উপর কঠিন হয়ে পড়বে।আজ আমরা যদি বিষয়টি চিন্তা করি তাহলে দেখতে পাব ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় কারি মুসলমানের সংখ্যা হাজারে একজন আছে কিনা? ফরয নামাজ হলো ইবাদাতের মুল দিক।অনেকে ফরয নামাজকে গৌন করে সূন্নতের পাবন্দি বেশী করে থাকে।ওমরাহ পালন একটি নফল ইবাদাত।বহু সংখ্যক মানুষ আছে যারা ওমরাহ পালন করে এসে ফযরের নামাজ পড়ে না বা পড়লেও মসজিদে পড়ে না।আবার মদিনা যাওয়াকে মুখ্য করে নেয় সেখানে ফরয নামাজটি হোটেলে পড়ে।এই যে ইবাদাতের ক্ষেত্রে অজ্গতা তা মুসলিম সমাজকে ক্ষতবিক্ষত করছে যার পরিনতি অত্যন্ত ভয়াভহ।
রাসূল সা: এর ওফাতের পর আবু বকর রা: শাসন ক্ষমতায় আসলেন।সে সময় তারাঈর নামাজ যে যেখানে ইচ্ছা আদায় করতেন।ওমর রা: এর সময় তিনি এক মসজিদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন আর দেখলেন কিছু সংখ্যক লোক ছিন্ন বিচ্ছিন্নভাবে তারাঈর নামাজ পড়ছে।ওমর রা: ভাবলেন এখন তো ওহির দরজা বন্ধ হয়ে গেছে।তিনি তাদের সবাইকে এই বিচ্ছিন্নভাবে নামাজ না পড়ে এক ঈমামের পিছনে নামাজ পড়ার অনুমতি করে দিলেন।ইসলামি যুগে খলিফারাই মসজিদে ঈমামতি করতেন।ইসলামি সমাজে এটাই ছিল নিয়ম।ওমর রা: এর কাজকে অনেক বিদাআতি বিদাআত বলে আখ্যায়িত করেন ও তারা সে নিয়্যাতে পালন করে।তাদের বুঝা উচিত,ওমর রা: যা করেছিলেন তার ছিল ছিলা রাসূল সা: থেকে ছিল যা তিনি সাহাবাদের নিয়ে পড়িয়েছিলেন।তিনি তিন দিন এই নামাজ সাহাবাদের নিয়ে জামাতে পড়েছিলেন।তিনি নতুন কিছু সৃষ্টি করেননি।বিদাআত হলো শরিয়তে নতুন কিছু সৃষ্টি করা।তখনকার সময়ের সাহাবারা তার এই কাজে সমর্থন দিয়েছিলেন ও সন্তুষ্ট ছিলেন।এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার আর তা হলো নিয়্যাত।রাসূল সা: প্রতি রাতে ১১ রাকাত নামাজ পড়েছেন তেমনি রমজানেও ১১ রাকাতই পড়েছেন।তাবেঈ ও তাবেঈনদের সময়ে তারা ৪১ রাকাত পর্যন্ত কেউ কেউ পড়েছেন।নফল নামাজ যতবেশি পড়া যায় তাতে কোন অসুবিধা নেই।কিন্তু ভারত উপমহাদেশে এক ধরনের মাযহাব পন্হিরা মনে করে রাসূল সা: ২০ রাকাতই পড়েছেন এবং তারা এই নিয়্যাতে পড়ে।এটা তাদের সবচেয়ে বড় ভুল।রাসুল সা:বলেছেন,'যে রমজান মাসের ক্কেয়াম করবে আল্লাহর প্রতি ঈমান রেখে ও নেকির আশায় তাহলে তার অতীতের গুনাহ মাপ করে দেয়া হবে।'(বোখারি ও মুসলিম) ইবনে তাইমিয়া বলেছেন,তারাঈর নামাজ কেউ ২০ রাকাত পড়তে পারে।মালিকি মাযহাবের লোকেরা আফ্রিকায় ৩৬ রাকাত তারাঈ এর নামাজ পড়ে।সবচেয়ে উত্তম হলো রাসূল সা: এর নামাজকে অনুসরন করা।সাহাবারা রাসূল সা: এর সাথে এই নামাজ পড়তে গিয়ে মনে করতেন আজ বুঝি সেহরি খেতে পারবো না।এ থেকে বুঝা যায় রাসূল সা: কেমন নামাজ পড়তেন।আজকাল মুসলামানদের ঈমানের অবস্হা এমন হয়েছে যে,যে মসজিদে নামাজ দীর্ঘ হয় সে মসজিদে মুকতাদি কমতে থাকে।আবার যে মসজিদে অল্প সময়ে নামাজ হয় সে মসজিদে এত ভীড় হয় যে যায়গা পাওয়া মুশ্কিল হয়ে যায়।শুধু তা-ই নয় সেখানকার রাস্তা পর্যন্ত জাম বেধে যায়,আল্লাহ এই মুসলিমদের সঠিক হেদায়েত করুন।
গনতন্ত্রের আদলে দলগুলোকে নিয়ে আমরা যতটুকু ভাবি তার চেয়ে আমাদের ভাবতে হবে যে দলগুলো ইসলামের কথা বলে।যারা ইসলাম বুঝে না তাদের ইসলাম বুঝানো হলো ইসলামি দলগুলোর দায়িত্ব।কিন্তু আমরা সেখানে দেখতে পাই ইসলামি দলগুলোর অনেকে তাদেরই অনুকরন করছে।এই দ্বিমুখি তত্বের কারনে অনেক মুসলমান বিভ্রান্ত আসলে তারা কি চায়? অনেকের কাছে পরিষ্কার বিষয় হলো,এদের সবারই লক্ষ্য ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া।অন্যান্য দলগুলোর যেমন একটি কোষাগার রয়েছে দল চালানোর জন্য তেমনি ইসলামি দলগুলোরও রয়েছে 'বায়তুল মাল"।বায়তুল মাল শব্দটি ইসলামী তাহজীব এবং তমুদ্দুনের ভাষা। বিশ্বাসীরা মনে করেন, জমিনের সব ধন-সম্পত্তির মালিক প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। ফলে কোনো ধর্ম বিশ্বাসী মানুষ অঢেল ধন-সম্পত্তির অধিকারী হওয়ার পরও নিজেকে সেগুলোর মালিক মনে না করে হেফাজতকারী, তদারককারী কিংবা বড়জোর জিম্মাদার বলে মনে করে। ফলে তারা অহঙ্কার করে না। বরং কথায় কথায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। অন্যদিকে বায়তুল মাল বলতে বোঝায় রাষ্ট্রীয় কোষাগার। মূলত আল্লাহর রসুল (সা.) যখন মদিনা রাষ্ট্রের পত্তন ঘটালেন তখনই প্রথম এ শব্দটির সঙ্গে মুসলমানরা ব্যাপকভাবে পরিচিত হলো। পরবর্তীকালে খোলাফায়ে রাশেদিন, উমাইয়া খেলাফতের ৯০ বছর, আব্বাসীয় খেলাফতের প্রায় ৪০০ বছর রাষ্ট্রীয় কোষাগারের নাম ছিল বায়তুল মাল।
বায়তুল মালের প্রতিটি পয়সার জন্য আল্লাহর দরবারে শাসকবর্গকে কঠিন বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। কোনো ওজর, আপত্তি বা নয়ছয় দিয়ে সেদিনের সেই বিচার মোকাবিলা করা যাবে না। একজন শাসকের জীবনের কোনো গুনাহ বা অন্যায়ই বায়তুল মালের খেয়ানতের চেয়ে বড় হবে না। অর্থাৎ শাসকের সবচেয়ে বড় গুনাহ হবে সরকারি তহবিলের যথেচ্ছ ব্যবহার বা তছরুপ। আর এ কারণেই সব দীনদার রাজা-বাদশাহ তাদের জীবনের বিনিময়েও সরকারি অর্থের একটি পয়সাও নষ্ট হতে দিতেন না। একবার হজরত ওমর (রা.) বায়তুল মালের কিছু অর্থ নিয়ে মসজিদে নববীর সামনে গরিব-মিসকিনদের মধ্যে বিতরণ করছিলেন। স্তূপাকারে সাজানো ছিল স্বর্ণমুদ্রা বা দিনার এবং রৌপ্য মুদ্রা বা দিরহাম। খলিফার শিশুকন্যা কৌতূহলবশত সেখানে এলেন এবং একটি দিরহাম নিয়ে দিলেন দৌড়। খলিফা শিশুটিকে ধরার জন্য তৎক্ষণাৎ এমনভাবে ছুটলেন, তার শরীরের চাদর কাঁধ থেকে পড়ে গেল। কন্যাটি পিতার এই রুদ্রমূর্তি এবং ব্যতিব্যস্ততা দেখে দৌড়াতে দৌড়াতে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়লেন এবং দিরহামটি মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগলেন। হজরত ওমর (রা.) কন্যার মুখে আঙ্গুলি ঢুকিয়ে দিয়ে দিরহামটি বের করে এনে যথাস্থানে রাখলেন এবং বললেন, হে লোক সব! এই মালের ওপর ওমর এবং তার সন্তানদের ততটুকুই অধিকার রয়েছে যতটুকু রয়েছে এই রাজধানী বা দেশের সীমান্তের নিতান্ত দরিদ্র একজন মানুষের।
হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) একবার বায়তুল মাল ঝাড়ু দিলেন এবং পারিশ্রমিক হিসেবে একটি দিরহাম পেলেন। তিনি বায়তুল মাল থেকে বের হওয়ার পথে দেখলেন খলিফাতুল মুসলেমিন হজরত ওমর (রা.)-এর একজন বালকপুত্র সেখানে ঘোরাফেরা করছে। তিনি স্নেহ পরবশ হয়ে বালকটিকে কাছে ডেকে নিলেন এবং দিরহামটি দিয়ে দিলেন। হজরত ওমর (রা.) ছেলের হাতে দিরহাম দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, কোথায় পেলে? পুত্র বলল, আবু মুসা আমাকে দিয়েছেন। তারপর খলিফা আবু মুসা আশআরীকে (রা.) তলব করে আনলেন এবং বললেন হে মুসা! তুমি তোমার অর্জিত সম্পদটি ব্যয় করতে গিয়ে তোমার নিজের বিবেক, বুদ্ধি এবং মদিনার দরিদ্র মানুষজনের প্রতি জুলুম করেছ। এই দিরহামটি আমার শিশুপুত্রকে দান করার সময় তোমার কি একবারও মনে হয়নি, মদিনায় খলিফা ওমরের চেয়েও অসহায়, দরিদ্র এবং অভাবী লোকজন রয়েছে? এরপর তিনি দিরহামটি পুত্রের কাছ থেকে নিয়ে বায়তুল মালে জমা দিয়ে দিলেন এবং আবু মুসাকে পুনরায় বললেন, তোমার দরকার নেই বলেই দিরহামটি আমার ছেলেকে দান করেছ। আবার ওটি আমার দরকার নেই বলেই পুনরায় বায়তুল মালে ফেরত দিলাম এই আশায় যে, হয়তো আল্লাহর রসুল (সা.)-এর কোনো অধিকতর দরিদ্র উম্মতের অধিকতর প্রয়োজনে সেটি ব্যবহৃত হবে।
বঙ্গভবন, গণভবন, সরকারি দফতর ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহ প্রভৃতি স্থানে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে প্রতি বছরই সরকারি অর্থ ব্যয়ে বা ব্যাবসায়িদের তত্তাবধানে বিরাট বিরাট সব ইফতারির আয়োজন হয়। এতে খরচ হয় কোটি কোটি টাকা।এসব অনুষ্ঠান কেন এবং কী কারণে করা হয়। অভ্যাগতরা আলেম না কামেল না ফাজেল কিংবা জালেম তা কখনো আয়োজকরা ভেবে দেখেন না। অন্যদিকে ইফতার মাহফিলে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান দলবেঁধে সরকারি খরচে উদরপুর্তির আগে আল্লাহ-রসুল কোরান-হাদিসের কোনো ভেদ ব্যাখ্যা না শুনে তাদের নেতানেত্রী বা আমন্ত্রণকারী কর্তাদের বক্তব্য শুনতে থাকেন। এ সব ইফতার মাহফিলে নামাজির সংখ্যা হাতে গুনা।যে সব তথাকথিত আলেম সেখানে মেহমান হয়ে যান তারাও ঈমান ইসলামের কোন কথা বলেন না বা বলার সুযোগ তাদের থাকে না। এতে আয়োজনকারী এবং আগমনকারী উভয়কেই আল্লাহর দরবারে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। এভাবে ব্যক্তির পাপ বাড়তে বাড়তে সেই পাপের বোঝা এত বড় হয়ে যায় যে, পুরো জাতিকেই তার দায় মেটাতে হয়।
ইফতারি বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না বলে ইসলামী পণ্ডিতদের কিছু বক্তব্য উপস্থাপন করলেই সম্মানীত পাঠকরা বুঝতে পারবেন । হজরত হোজায়ফা (রা.) তার ভক্তদের উদ্দেশে বললেন,ফেতনার জায়গা থেকে দূরে থাক। তারা প্রশ্ন করলেন, হুজুর! ফেতনার জায়গাটি কি? তিনি বললেন, শাসকবর্গের দরজা। কারণ তোমরা সেখানে গিয়ে মিথ্যা কথার ফুলঝুরি দিয়ে তাদের সত্যবাদী বানিয়ে ফেল এবং তাদের মধ্যে যেসব গুণ আদৌ নেই, সেসব গুণ বর্ণনা করতে থাক। হজরত আবু যর (রা.) তার ভক্ত সালামাকে উপদেশ প্রদান প্রসঙ্গে বললেন, হে সালামা! বাদশাহদের দরজায় যেও না। যদি যাও, তবে তাদের কাছ থেকে তুমি যা পাবে, তার চেয়ে উত্তম এবং মূল্যবান বস্তু তারা তোমার চরিত্র, দীন এবং আখেরাতের সঞ্চয় থেকে নিয়ে নেবে।
হজরত সুফিয়ান সাওরী (রহ.) বলেন, দোযখে একটি উপত্যকা আছে, যাতে কেবল সেই ক্কারিদের স্থান হবে, যারা বাদশাহের কাছে যাতায়াত করে এবং ধর্মকর্ম রেখে তোষামোদিতে মত্ত থাকে। যারা নিয়মিত ইবাদত বন্দেগি করেন এবং আল্লাহকে সর্বশক্তিমান মানেন তারা যদি সকাল-বিকাল শাসকবর্গের দরবারে ধরনা দিতে থাকেন, তবে তারচেয়ে বড় মোনাফেকি আর কিইবা হতে পারে! কোনো ব্যক্তি যদি কোনো সমাবেশ বা মজলিশে হাজির হয়ে কোনো সম্প্রদায়ের সংখ্যা বৃদ্ধি করে বা সেখানকার ভিড় বাড়ায় তবে লোকটি ওই সম্প্রদায়ভুক্ত বলে গণ্য হবে। এর অর্থ জালেমদের দল বৃদ্ধি করলে তাকে জালেমই বলা হবে। হজরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) এক ব্যক্তিকে কর্মচারী নিয়োগ করার পর জানতে পারলেন, সে লোকটি এক সময় কুখ্যাত হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কর্মচারী ছিল। তিনি তৎক্ষণাৎ লোকটিকে বরখাস্ত করলেন। ক্ষতিগ্রস্ত লোকটি আরজ করল, হে আমিরুল মুমেনিন! আমি মাত্র অল্প কয়েক দিনের জন্য হাজ্জাজের কর্মচারী হয়েছিলাম। খলিফা উত্তর করলেন, তুমি যার অধীনে কর্মরত ছিলে তার সংসর্গে একদিন কিংবা কয়েক মুহূর্ত থাকাই অকল্যাণ ও অনর্থ সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট।
শাসকদের কাছে যাওয়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নাফরমানি বলে বিবেচিত হয় বিশেষত সেই শাসকের দরবারে, যিনি জোরপূর্বক ক্ষমতার মসনদ দখল করেছেন। তার কাছে যাওয়া জবরদখলকৃত ঘরে প্রবেশের মতোই হয়ে থাকে, আর জবরদখলকৃত ঘরে প্রবেশ করা নিঃসন্দেহে হারাম। রসুল করীম (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জালেমের জন্য দীর্ঘায়ুর দোয়া করে, সে চায়, আল্লাহর দুনিয়ায় আল্লাহর নাফরমানি অব্যাহত থাকুক। কাজেই কোনো অতিরঞ্জিত দোয়া এবং তার প্রশংসা করা জায়েজ নয়। রসুল (সা.) বলেন, পাপাচারীর প্রশংসা করা হলে আল্লাহতায়ালা ক্রুদ্ধ হন। এক হাদিসে আছে, যে ফাসেকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, সে ইসলামকে বিধ্বস্ত করতে সহায়তা করে। হজরত আবু সুফিয়ান সাওরীকে (রহ.) একজন প্রশ্ন করলেন, এক জালেম জনশূন্য জঙ্গলে মরতে থাকলে তাকে পানি পান করানো উচিত কিনা? তিনি বললেন, না; তাকে মরতে দেওয়া উচিত। যে ব্যক্তি জালেমকে ভালোবাসে, সে যদি জুলুমের কারণে ভালোবাসে তবে গোনাহগার হবে। আর যদি অন্য কোনো কারণে ভালোবাসে তবে সে ওয়াজিব তরক করার জন্য পাপী হবে। প্রতিটি মানুষের জন্য ওয়াজিব হলো জালেমের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করা।
আল্লাহর প্রিয় বান্দারা কীভাবে দুনিয়ার বড় বড় বাদশাদের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতেন এবং নির্ভয়ে সব কথা বলতেন তার একটি উদাহরণ দিয়ে আজকের লেখাটি শেষ করব। উমাইয়া শাসক হিশাম ইবনে আবদুল মালিক তখন মুসলিম জাহানের খলিফা। আজকের পুরো মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, সিন্ধু, সাইপ্রাস, স্পেন, মধ্য এশিয়ার কিয়দাংশ নিয়ে অর্ধ পৃথিবীর বাদশাহ তিনি। বাদশাহ হজ উপলক্ষে তখন মক্কায়। তিনি তার খাদেমদের ডেকে বললেন, সাহাবিদের কেউ থাকলে তাকে আমার সামনে নিয়ে আস। লোকেরা বলল, ইয়া আমিরুল মুমেনিন! তারা তো সবাই ইন্তেকাল করে গেছেন। তিনি বললেন, তবে কোনো নামকরা তাবেয়িকে আন। সে মতে, খলিফার লোকজন হজরত তাউস ইয়ামনী (রহ.)-কে ডেকে আনল। তিনি হিশামের সামনে গিয়ে জুতা জোড়া খুললেন এবং আমিরুল মুমেনিন বলে সালাম না করে বললেন, হে হিশাম, সালামুন আলাইকা। তিনি তার কুনিয়ত (রাষ্ট্রীয় খেতাব বা উপাধি)। সালামের পর হেশামের ঠিক সামনে আসন গ্রহণ করে জিজ্ঞাসা করলেন, হে হিশাম, কেমন আছেন?
হজরত তাউস ইয়ামেনী (রহ.)-এর আচরণ ছিল প্রচলিত দরবারি প্রথা বা রাষ্ট্রাচারের সম্পূর্ণ বিপরীত। খলিফা রাগে থর থর করে কাঁপতে লাগলেন। এমনকি হজরত তাউসকে হত্যা করতে চাইলেন। লোকজন তাকে স্মরণ করিয়ে দিল যে, তিনি আল্লাহ ও রসুলের হেরেমে আছেন এবং এখানে কোনোক্রমেই হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। এরপর খলিফা রাগত স্বরে বললেন, হে তাউস, তুমি এহেন কর্ম করলে কেন। তিনি বললেন, আমি কি করেছি? এতে হিশামের ক্রোধ আরও বেড়ে গেল। তিনি পুনরায় বললেন, তুমি আমার সামনে জুতা জোড়া খুলেছ। আমার হস্ত চুম্বন করনি, আমাকে আমিরুল মুমেনিন বলে সালাম করনি। আমার কুনিয়ত উল্লেখ করনি। আমার মুখের সামনে আমার অনুমতি ছাড়াই আসন গ্রহণ করেছ এবং জিজ্ঞাসা করেছ-হেশাম কেমন আছেন?
হজরত তাউস (রহ.) জওয়াবে বললেন, জুতা খোলার ব্যাপারটা হচ্ছে-আমি দৈনিক পাঁচবার রব্বুল ইযযাত আল্লাহ পাকের সামনে জুতা খুলি। তিনি আমার প্রতি ক্রুদ্ধও হন না এবং আমাকে শাস্তিও দেন না। হস্ত চুম্বন না করার কারণ-আমি হজরত আলী (রা.)-এর মুখ থেকে শুনেছি, পুরুষের জন্য কারও হস্ত চুম্বন করা জায়েজ নয়। তবে স্বামী কামবশত স্ত্রীর হস্ত আর পিতা স্নেহবশত সন্তানের হস্ত চুম্বন করতে পারে। আমি আমিরুল মুমেনিন বলে আপনাকে সালাম করিনি কারণ-সব মানুষ আপনার শাসন ক্ষমতা লাভে সন্তুষ্ট নয়; তাই আমি মিথ্যা বলাটা পছন্দ করিনি। কুনিয়ত উল্লেখ না করার হেতু হচ্ছে-স্বয়ং আল্লাহ তাঁর পয়গম্বরগণকে নাম ধরেই ডেকেছেন; কুনিয়ত সহকারে নয়। যেমন-ইয়া দাউদ, ইয়া মুসা, ইয়া ঈসা। অন্যদিকে আল্লাহ খারাপ মানুষ এবং তার শত্রুদের কুনিয়ত উল্লেখ করে বলেছেন, 'তাব্বাত ইয়াদা-আবী লাহাব' (আবু লাহাবের হস্তদ্বয় নিপাত যাক)। আর সামনে বসার ব্যাপারে যে অভিযোগ করেছেন, সে ব্যাপারে আমি হজরত আলী (রা.)-কে বলতে শুনেছি-জাহান্নামে পর্বত শৃঙ্গের মতো সাপ আর খচ্চরের অনুরূপ বিচ্ছু রয়েছে। এরা সেসব শাসককে দংশন করবে, যারা তাদের প্রজাদের প্রতি ইনসাফ করে না। এরপর হজরত তাউস (রহ.) সেখান থেকে দ্রুত প্রস্থান করলেন।
উপরোক্ত বিষয়গুলোর আলোকে বলা যায়, একজন মুসলিমকে হতে হবে খুব বিচক্ষন তার প্রতিটি ইবাদাতে,প্রতিটি কাজে,প্রতিটি সময়ে।সেটা রমজানে হউক বা রমজানের বাইরে হউক।মুসলমানদের জন্য আল্লাহ ইবাদাতের কিছু মৌসুম তৈরি করে রেখেছেন।যারা খুব দক্ষ তারা এই মৌসুমকে কাজে লাগাতে পারে।যারা সারা বছর ব্যাপি আল্লাহর ইবাদাত করে, ফরযের কোন ঘাটতি করে না তারা এ মাসে ফরযের যেমন ইত্তেবা করবে তেমনি আরো বেশী নফলকে বেগবর্ধিত করবে।কুরআনকে ছহি করবে ও তাপছির পড়বে ও আমল করবে।মানুষকে কুরআন শিক্ষা দিবে ও দ্বীনের বিষয় গুলো জানাবে।রাসূল সা: বলেছেন দ্বীন সহজ।কিন্তু উম্মত কুরআন ছহি হাদিসকে অনুশীলন না করার কারনে ভ্রান্ত পথ বেচে নিয়েছে মিথ্যা ও দুর্বল হাদিসকে কেন্দ্র করে।যে সমস্ত আলেম দ্বীনকে বিক্রয় করছে বা সামান্য সুবিধার জন্য হক্ক কথা বলা বন্ধ দিয়েছে তাদের জন্য আজাবে আলিমের ব্যাবস্হা রয়েছে। এ ব্যাপারে হক্কানি উলামারা যদি তাদের সম্প্রচার না বাড়ান বা তারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন তাহলে এ সব অদ্বীনদার রা সমাজে স্হায়ি আস্তানা করে নিবে।সুতরাং আমাদের উচিত যখনি আপনার আমার আপনজনেরা দ্বীন বিবর্জিত বিষয়গুলো অনুশীলন করে তা দলিল দিয়ে বলা।আর একটি বিষয় হলো শির্ক ও বিদাআত পন্থীদের সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলা কারন তাদের সাথে উঠা বসা একজন খাঁটি ঈমানদারের ঈমানের বিকৃতি ঘটাতে পারে।কারন বিদাআতিরা তাদের বিদাআতকে ইবাদাতই মনে করে। এটা উম্মতের উলামাদের সর্বসম্মত মতামত।
বিষয়: বিবিধ
১৪১২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 9368
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
তারাবির রাকায়াত নিয়ে আমাদের দেশে সত্যিই বাড়াবাড়ি করা হয়। আমার মনে হয় এর একটি সরল সমাধান যেটা মালেয়শিয়াতে অনুসরন করা হয় সেটাই যুক্তিযুক্ত। সেখানে মসজিদে বিশ রাকাত তারাবিই পড়ান হয় তবে বেশির ভাগ মানুষ ই মসজিদে আট রাকাত আদায় করে চলে যান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন