মায়ের আঁচলে সন্তানের ভালবাসা
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৮:৪৮:৩৪ রাত
প্রিয় পাঠক, আমি বলেছিলাম আমার ব্যাক্তিগত একটি চিঠি যার সারমর্ম নিয়ে আপনাদের ও সম্পিৃক্ত করব।অনেক বাবা মা সন্তানদের মানুষ করতে গিয়ে বিশেষ করে মা'রা বেশি বেকায়দায় পড়ে যান।ছেলেরা যখন বড় হয় তখন মায়ের আওতার বাইরে চলে যায়।আর একটি কারন হলো, যখন ওরা বার পেরিয়ে যায় তখন নুতন জীবনে পদার্পন করে।এ সময় বাবা কাছে না থাকলে মাকে ওরা তেমন কেয়ার করতে চায় না।যাই হোক হয়ত আমার কথাগুলো আপনাদের কাজে লাগতে পারে,আর যদি কাজে লাগে সেখানে আমার স্বা্র্থকতা।
শিতের সকাল।টেলিফোন করলাম সচরাচর যেমন করে থাকি।আমি জানি না অন্যরা কি আচরন করেন বা ক'বার টেলিফোন করেন।আমার একটা অভ্যাস সিডিউল মেনে চলা।প্রতি দু'বা তিন ঘন্টা পর পর আমি পরিবারের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করি যেন ওরা দুরত্ব ফিল না করে।আমার গ্রীহিনী (তামান্না যার একটু ছোট পরিচয় আছে, Achieve Corporation Private Ltd ( Real Estate company) এর একজন পরিচালক।বললেন আমি আর তোমার ছেলেকে নিয়ে পারছিনা।ঘরে বাইরে ক'টা কাজ সামলাবো।আমার কাছে একটা চাবি সবসময়ই রাখার চেষ্টা করি, সেটা হলো আল্লাহ নির্ভরতা।আমি মনে মনে আঁটলাম একটি চিঠি লিখবো। আল্লাহ পাক বলেছেন মনরোগের জন্য শেফা বা ঔষধ হলো কোরআন।আমি বললাম তোমাকে তো ভয় পেলে হবে না।ভালবাসা ও কঠোরতা দু'টো ই সামনে রেখে চলতে হবে। আসলে মানব শিশু জন্মের পর মায়ের উপর নির্ভর করেই পরিপূর্ন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে।এ জন্য প্রতিটি সন্তানের কাছে সবচেয়ে মুল্যবান সম্পদ তার "মা"।
পাঁচ চেলেমেয়ে একসাথে মানুষ করা সত্বি ই কঠিন কাজ।যদিও বড় মেয়ে বিয়ে হয়েছে।ছেলে কলেজে, বাকি তিনজন স্কুলে।মা'কে স্কুলে নেয়া আনা, বাজার করা,স্কুল কলেজে খোঁজ খবর নেয়া,স্কুল কলেজ থেকে ওরা সময় মত আসলো কিনা, বাবার প্রপার্টিগুলো মাঝে মাঝে দেখাশুনা করা, মেহমানদারি, মাঝে মাঝে কোম্পানীর দেনা পাওনার হিসাব নেয়া ,গৃহ পরিচারিকারা টেবিলে সময় মত খাবার দিল কিনা এরকম আরো অনেক। মা'দের এগুলো নিত্য কাজ।বাবা না থাকায় মাকে অনেক কাজ ই করতে হয়।স্বভাবত ই মা যখন এতগুলো কাজ করেন সন্তানের কাছে মায়ের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ার কথা।বিশেষ করে কন্যা সন্তানের কাছে মায়ের গুরুত্ব অনেক বেশি।মা-ই তাদের প্রথম বন্ধু।মায়ের কাছ থেকে ওরা জীবন ও বেড়ে উঠা সম্পর্কে ধারনা পায়।তাছাড়া মেয়েদের ব্যাক্তিগত অনেক ব্যাপার আছে মা-ই প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।কৈশোর পেরোনোর সময় প্রাকৃতিক নানান প্রতিকুলতায় অপ্রস্তুত কন্যা সন্তানকে মা সহজে পরিচালনা করেন।আর যৌবনের উম্মাদনা যখন তাড়িত করে তখন মা-ই হয়ে থাকেন
মনরোগের প্রতিষেধক একজন বিচক্ষন ডাক্তার।মেয়েরা কখন স্কুলে গেল , কখন ফিরবে , একটু দেরি হলেই খোঁজ নেয়া ইত্যাদি।এই বন্ধুই হলো প্রকৃত বন্ধু যা সব সন্তান বুঝতে পারে না।বিপদে আপদে, সুখে দু:খে, রোগ কাতরতায় মা-ই জাগরিত থাকেন।জীবনেতো এমন বন্ধুর ই বেশি প্রয়োজন।জীবনে চলার পথে অনেক বন্ধুই ঠুনকো অজুহাতে দূরে সরে যায় কিন্তু মা কি তাই করতে পারেন? মা ছায়া হয়ে সন্তানকে বুকে জড়িয়ে নেন,সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন,বাবার সাথে বসে সমাধান করেন।কঠিন অসুখের সময় মা যখন কপালে হাত রাখেন মনে হয় সব অবসাধ , অসুখ দুর হয়ে গেছে।প্রিয়জনের সাথে হতাশায় যখন মন ভে্ংগে যায় তখন মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে মায়ের আঁচলের নিছে।বাবা যখন বকুনি দেয় তখনো মা- ই আড়াল করে রাখে। এই যে এতগুলো কাজ মা করলেন তাকে অবহেলা কেন? সন্তান যখন অভিমানে আত্মগোপন করে মা কি খাওয়ার সময় একা খেতে পারেন?
সন্তান যখন মা বলে দৌড়ে আসে তখন মায়ের মন ভরে যায়। তবে যদি সন্তান হয় ছেলে ও দূরন্ত কেমন করে মা তাকে আগলে রাখবেন? বাবা মা দোষি হলেও কি দোষ দেয়া যায়? যদি কোন খুঁনসুটি বেঁধে যায় ই তাহলে বসে তো সমাধান করা যায়।দেখুনতো কতগুলো বৃদ্ধা আশ্রম গড়ে উঠেছে দেশে। যে বাবা মা এত কষ্ট করে লালন পালন করলেন আর সন্তান তাদের এভাবে দিবে?
সূরা লোকামান আয়াত ১৪ ও সূরা ইসরা'র ২৩/২৪ আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন কিভাবে মা বাবার সাথে আচরন করতে হবে।এমনকি সন্তান "আহ" শব্দটি ও করবে না।আর একটি হাদিসে পিতা মাতার হক সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে রাসূল সা: মা সম্পর্কে তিন বার ও পরে বাবার কথা একবার বলেছেন।আর মাদের এই মর্যাদা ধরে রাখতে হবে তাদের সুন্দর আচরনের মাধ্যমে।সম্রাট নেপলিওন বলেছিলেন আমাকে একজন মা দাও আমি শিক্ষিত জাতি জন্ম দিব।সন্তানদের সাথে উঠতে বসতে আচরন শিখাতে হবে।সন্তান যখন গর্ভে থাকে আমাদের মাদের খুব কমই শালিনতা থাকে।মা থেকেই প্রথম আচরন পেয়ে থাকে সন্তান। মা যা যা করবে তার প্রভাব শিশুর উপর পড়বে।এ সময় মাকে বেশি ধার্মিকতা করা জরুরি।শিশু যখন ভূমিষ্ট হবে তাকে তার পরিবেশ দিতে হবে।সময় মত খাওয়া, ঘুমানো,পরিষ্কার পরিছ্ছন্ন রাখা।রাসূল সা: বলেছেন সন্তান যখন সাত বছরে পা দিবে তাকে নামাজের তাগিদ দাও আর দশ বছর হলে মৃদু শাষ্তি দাও।এমন যেন না হয় বাবা মা নামাজ পড়েন না আথচ সন্তানকে বলেন মসজিদে যাও।এতে কোন ফল হবে না। সন্তান অনুকরন প্রিয়।বাবা মা যা করবে ওরাও তাই করে থাকে।তবে ব্যাতিক্রম তো আছেই সেটা আল্লাহর পক্ষ থেকে।আর অধিকা্ংশ বাবা মা মনিটর করেন না সন্তানদের।কোথায় গেল , এতক্ষন বাইরে কি করলো ইত্যাদি।পরিবারে মনিটরিং থাকলে ওরা সময় অপচয় করতে পারবে না।
সন্তান কোন অন্যায় করলে যুক্তি দিয়ে বুঝাতে হবে।ধরুন আপনার সখের কিছু ভে্ংগে ফেললো।সুন্দর বুঝি্য়ে বলুন কারনগুলো। একটা রেডিও ভে্ংগে ফেললো। তিরস্কার না করে বলুন, বাবা দেখত আবার জিনিসটি রিমেইক করা যায় কিনা? এতে সে একটা নুতন জিনিস আবিষ্কার করার পরিবেশ পাবে।শিশুদের প্রথম শিক্ষক হলো বাবা মা।বিশেষ করে মা।এ জন্য ৩/৪ বছর হলে মেধা তৈরি হয় ও রকম খেলনা দিন।বর্নমালাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিন আর বলুন এবার ঠিক ভাবে সাজাও।৫/৬ বছরের শিশুর মেধা খুব প্রখর। যা দেখে তাই মনে রাখতে পারে।শিশু বিশেষজ্ঞ এর মতে একটা আট বছরের শিশুর ১০০০ নারর্ভ স্ংযোগ থাকে এব্ং ১০ বছরে ৫০০ এ নেমে যায়।ইসলাম এ জন্য ঐ ধরনের শিশুদের আলাদা বেড দেয়ার কথা বলেছে। সমাজে বাস্তবে এমন কথাও এসেছে যে , ঘুম থেকে উঠে শিশু আপনজনদের কাছে বাবা মা'র গোপনীয় কথা বলে দিয়েছে।ইন্টারনেট , ফেইসবুক, মোবাইল কন্ট্রল করা জরুরি।মিলিয়ন টিন এজার এখন ক্ষতিগ্রস্ত হছ্ছে এর মাধ্যমে।
শিশুর মনবিকাশ বৃদ্ধি করার জন্য ওদের সাথে খেলা করা,মাঠে নিয়ে যাওয়া,দেশ বিদেশ সম্পর্কে মৌখিক সাধারন বিষয় গুলো আলোচনা করা, ভাল ও মন্দের বিভেদ শিখানো,তাদের আকর্ষনীয় বিষয় গুলো যা ভাল সেগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়া।আপনি যেহেতু মুসলিম,কোরআন হাদিস দিয়ে গড়ে তুলুন।বিকাল বা নাস্তার সময় নিউজ পেপারটি নিন ও হেড লাইন গুলো হাইলাইট করুন। এতে ওদের জ্ঞান আহরনের আগ্রহ জমবে।রাসূল সা: বলছেন , প্রতিটি শিশু জন্ম নেয় প্রকৃতি নিয়ে বাবা মা তাদের ইহুদি বা খৃষ্টানে পরিনত করে।কোন ডা্ক্তার যখন রুগী দেখে সাথে সাথে ঔষধ দেয় না। কিছু সময় পরিক্ষা নীরিক্ষা করেন।রোগ নির্নয় করে ঔষধ দেন।বাব মা কেও ডাক্তারের ভূমিকা নিতে হবে। অনেক মা সামলাতে না পেরে সন্তানের সামনে কেঁদে ফেলেন। এতে ওরা বেশি শাহস পাবে। আদর ও শাসন দু'টো ই কার্যকর করতে হবে ওদের সুস্হ বিকাশের জন্য।
বিষয়: বিবিধ
১৭৭৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন