রাজনীতির চমৎকারিত্ব ক্ষমতার হাত বদল ও পুঁজিপতির উত্থান ছাড়া আর কিছুই নয়।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৮ জুন, ২০১৪, ০১:৪৯:১২ দুপুর

আমাদের স্বাধীনতার সময় যুদ্ধে যেতে না পারলেও যুদ্ধ দেখেছি।আমাদের নিকটআত্মীয় স্বজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।গোলাবারুদ রাতে মাটির গর্তে কিভাবে রাখতো তাও দেখেছি।মুক্তিবাহিনীরা কিভাবে পান্জাবীদের তাড়া করেছে তা যেমন দেখেছি আবার শান্তি কমিটির লোকরা কিভাবে পাশের হিন্দুদের উপর পাশবিক অত্যাচার করেছে বেয়োনেটের খোঁচায় তাও নিজ চোখেই দেখেছি।হাজিগন্জের বাচ্চু রাজাকার ও তার দোসররা কিভাবে নীরিহ মানুষকে গুলি করে হত্মা করেছে,আবার এক কবরে বেলচোঁ মাদ্রাসার পাশে মুক্তিবাহনীরা রাজাকারদের কবরস্থ করেছিল তাও দেখেছি নিজ চোখে।স্কুলে যখন যাওয়া আসা শুরু করলাম তখন বড় ভাইরা আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন তাও প্রত্যক্ষ করতাম।প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা যে কোন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতেন না ও কোন সাহায্যের জন্য যেতেন না তাও দেখেছি।আবার যারা যুদ্ধ করেনি তাদেরই দেখেছি জমি জমা, দোকান পাঠ দখল করতে।বাংলাদেশে স্বাধীনতা প্রাপ্তির সবচেয়ে বড় অবদান হলো বাঙালি শাসক ও বাঙালি পুঁজিপতির উত্থান।এই শ্রেনীর আচরন ঔপনিবেশিক শাসকদের মতই।ইংরেজ শাসনের ১৯০ বছর তারা আমাদের কাছেই থাকতো কিন্তু সম্পদ চলে যেত বৃটেনে।আবার পাকিস্তান হলেও পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদ যেত পশ্চিম পাকিস্তানে।মুঘলদের সময়েও বিলাস ছিল মুঘল শাসকদের জন্যই।আবার ইংরেজদের সুবাদে জমিদারশ্রেনী জমির মালিক হলেও তাদের বিলাস যাপনের যায়গা ছিল কোলকাতায় ও তাদের সন্চয় তারা সেখানেই পাঠাত।যারা কৃষক ও প্রজা তারা চিরদিনই নিষ্পেষিত ছিল এখনও নিষ্পেষিত।আর আন্দোলন সংগ্রামে তারাই বিলাস জীবন যাপন কারিদের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে আসছে।রাজনীতির এই ধারাটা হলো হাতের বদল মাত্র।

ধীরে ধীরে বড় হয়ে এই আণ্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস জানতে শুরু করেছিলাম।পরে যখন পরিপক্ক জ্গান আহরন করলাম বুঝতে শিখলাম এখানে দু'শ্রেনীর আন্দোলন সংগ্রামের লোক বর্তমান।এক শ্রেনী শোষন করে আর এক শ্রেনী শোষিত হয়।রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততা না থাকলেও রাজনীতির জ্গান রাখার চেষ্টা করেছি।কলেজ জীবনে খুব ভাল করে উপলব্ধি করেছি রাজনীতির এই ছদ্ধাবরনের ব্যাপারগুলো।আজকাল দলে চেইন অব কমান্ড নেই বললেই চলে তবে একসময় কিছুটা ছিল।হাই কমান্ড থেকে অর্থ আসতো কর্মিদের কাছে।যখন যে সরকার থাকে সে সরকারের কর্মিরা সরব থাকে।হোষ্টেলে দেখতাম এক গ্রুফ আয়েসের সাথে চলতো।তাদের থাকা চলাফেরা খাওয়া দাওয়া সব রাজকীয় ভাবে চলতো।কাছের বন্ধুকে জিজ্গেস করতাম তুই কি করে এই ফেসিলিটি ভোগ করিস? সে বলতো সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দিলেই বুঝতে পারবি।আমি বুঝে নিয়েছি সে অনেক আগেই।এর পর দেখেছি অল্প কয়েক বছরে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তারা অনেকে বিশাল ব্যবসার মালিক হয়েছেন।অবশ্য সবাই এখানে রাইজ করতে পারেনা।যারা চতুর ও ধুরন্দর তারা রাতারাতি বড় হয়ে যায়।সেই বন্ধুদের দেখেছি পরবর্তিকালে ছেলেমেয়েদের বিদেশে স্হায়িভাবে বসবাস করাতে।কারন যখনই তাদের কাছে অল্প সময়ে অনেক টাকা এসে যায় তারা আর নিরাপদ মনে করে না দেশকে।কারন হলো কখন এই কালো টাকার হিসাব নিকাশ কষতে হয়।স্বাধীনতার পর কোটি পতিরা এই রাজনিতিকে কেন্দ্র করে তাদের পরিবারকে স্হায়িভাবে ইউরোপের ও এমেরিকার দেশগুলোতে স্হায়ি করে নিয়েছে আর নিজেরা চাকুরি ও রাজনীতি করছে এদেশে টাকা বানানোর জন্য।আর যখনই কোন রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা আসে তখন কিছুদিনের জন্য আরামের যায়গায় চলে যায় যেখানে সহধর্মিরা বিলাস নিয়ে অপেক্ষায় থাকে।আমি আমার বয়োজেষ্ঠ,সমকক্ষ ও জুনিয়রদের অনেককেই জানি,আপনিও আপনার চারদিকে খোঁজ নিয়ে দেখুন তা-ই দেখতে পাবেন। আর এখনতো পত্র পত্রিকায় ফলাও করে প্রচার হচ্ছে।সুইস ব্যান্ক বলে দিচ্ছে বাংলাদেশিদের বিশাল অংক সেখানে গচ্ছিত রাখা হয়েছে। তাদের আমার প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয় কেন এটাকাগুলো ওখানে পাঠানো হলো? এদেশে কি টাকাগুলো ইনভেস্ট হলে মানুষ উপকৃত হতো না? সরকার এবার বাজেটে কালো টাকা সাদা করবে না বলে এদের আরো বিদেশমুখী করে দিল না? অন্যায় তো অন্যায়ই।এর আগে কালো টাকা সাদা করেছে সরকার।তবে এবার এ পদক্ষেপ নেয়া হলো কেন? আর যারা নির্বোধের মত সুইস ব্যাংকে টাকা রাখলেন তাদের এই টাকার ভবিষ্যৎ কি? তিনি মরে গেলে তো তার বংশধররা টাকাটা পাবে না।এই টাকা ভোগ করবে সুইস ব্যান্ক।আসলে মানুষ যখন আপরাধি হয় তখন তার বিবেক হারিয়ে পেলে,তাদের অন্তর কিছুই দেখতে পায় না।আর এর পরিনতি যে আমরা দেখতে পাচ্ছি না তা নয়। কিছু পেতে গেলেতো কিছু দিতেই হবে।রাজনীতিতে যে হাঁক ডাক দেখছেন এ আসলে দেশের মানুষের জন্য নয়।তারা একই ছাদের নিছে পোষা বিড়াল।শীর্ষনেতাদের সাথে একে অন্যের সম্পর্ক আছে।ব্যাবধান শুধু এতটুকু রাজনৈতিক কৌশল।ভোগের ক্ষেত্রে তারাই অগ্রগামি, বিজিত হলে না হলেও। লাভ হলে তাদের আর লোকশান হলে দেশের।রাজনৈতিক অঙনে যারা মারা যায় তারা হাইকমান্ডের কেউ নয়।এই যে সুদূর অতীত থেকে এ পর্যন্ত প্রতিনিয়ত মানুষ মানুষের হাতে লান্চিত হচ্ছে,মারা যাচ্ছে, তারা হাই কমান্ডের কেউ নয়।শুধু তাদের প্রলোভন দেখানো হয়েছিল আর নগদ কিছু অর্থের বিনিময়ে তারা একে অন্যের উপর হত্মা নির্যাতন চলায়।রাজনৈতিক কর্মিরা সবাই নীরিহ ও নিষ্পেষিত।তারা স্বপ্ন দেখে আর তাদের স্বপ্ন দেখানো হয়।আসলে তারা বাস্তবে স্বাপ্নের কাছেও যেতে পারে না সামান্য কিছু ছাড়া।

বৃটেন,এমেরিকা,কানাডা,অষ্ট্রেলিয়া,সিঙাপুর,নিউজিল্যান্ড এ সমস্ত দেশগুলোতে আমাদের এলিটরা যে স্হায়ি বসবাস গড়ে তুলেছেন তার জন্য কোন সরকার কি কখনো কথা বলেছে? কখনো তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে? কিভাবে তারা এত টাকা অর্জন করলো? কিভাবে কোথা থেকে কোটি কোটি টাকা পাছার করছে? দেড় লাখ কানাডিয় ডলারে যে নাগরিকত্ব অনেকে নিয়েছেন তার টাকার উৎস কোথায়? এগুলোরতো খোঁজ নেয়ার দায়িত্ব সরকারের।আমাদের দেশের টাকা যদি দেশেই ইনভেষ্ট হতো তাহলে কি দেশের অর্থনীতি সবল হতো না? আমার এক বন্ধুর সাথে একসাথে পড়ালেখা করেছি।ছাত্রজীবনে দুই হাজার টাকা খরচ করার উপায় ছিলনা।চাকুরির ২৩ বছরের মাথায় এখন দেশ বিদেশে বাড়ির মালিক।এটা একটা উদাহরন দিলাম।হতে পারে তিনি চাকুরির পাশে ব্যবসা গড়েছেন কিন্তু দেখে তো মনে হয় মেশিনের মত টাকা চাপা হছ্ছে।আর নিজের অর্জিত টাকাই যদি হয় তাহলে বিদেশে বিনিয়োগ কেন? আসলে আমরা অর্থশালী হওয়ার আগেই আমাদের মনটা বিদেশে পড়ে থাকে।আর একটি প্রধান কারন হলো আমাদের রাজনীতিবিদ ও আমলাদের দেখে এখন সাধারন ব্যবসায়িরাও স্বপ্ন দেখে কিভাবে ফাঁড়ি জমানো যায়।

তা না হলে শেয়ার মার্কেট,হলমার্ক,ডেসটিনি ও সোনালি ব্যাংকের টাকা গেল কোথায়? যদি সরকারি বাধ্যবাধকতা ও আইনের শাসন থাকতো টাকা পাছারের ক্ষেত্রে, তাহলে কেউই অসৎ উপায় অবলম্বন করার সুযুগ পেত না।

গত কয়েক বছর আমাদের যে সম্ভাবনাময় পোষাকশিল্প ধ্বংসের দিকে ধাবিত হছ্ছে ও হাজার হাজার শ্রমিক জীবন দিল তার জন্য মালিক পক্ষ বা সরকারের কোন মাথা ব্যাথা ছিল না।কারন গরীবদের ভাগ্য ও সম্পদশালীদের উপর নির্ভরশীল বলে তারা মনে করে।সাভারে রানা প্লাজায় ১১৩৮ জন মারা গেল, অসংখ্য আহত ও পংগু হয়ে আছে যারা এবং যাদের এখনো ডিএনএ মিলেনি এমন লাশ যা মর্গে আছে বা যাদের এখনো খোঁজই মিলেনি,মাত্র ৫০ হাজার টাকার মত অনেকে পেয়েছেন আবার অনেকে পান নি।সরকার ও তৈরি পোষাক শিল্পের মালিকগন কি তাদের পুনর্বাসনে সক্রীয় হয়েছেন? আমরা দেখছি এখনো সেমিনারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। প্রবাসি শ্রমিকেরা তাদের যে কষ্টার্জিত রেমিটেন্স পাঠান ও ব্যাংকে রিজার্ভ বাড়ান এবং বছরের পর বছর পরিবার থেকে দূরে থেকে তাদের বিদেশে বলিদান করেন তাদের জন্য সরকারের কোন কিছু করার নেই। শাসকদের পিছনে ব্যায়ের যে অর্থ, তা যোগান দেন এই প্রান্তিক কৃষক ও কল কারখানার শ্রমিকগন। তাদের উন্নত জীবনের এমনকি নিত্যদিনের খরচ মিটানোর খরচ পর্যন্ত তারা আয় করতে বন্চিত হছ্ছে।তাদের অনেকের নেই মাথা গুঁজার ঠাঁই,শীতে নেই বস্ত্র,বর্ষায় টিপ টিপ পানি ও গ্রীষ্মে গরমের দাবদাহ সয়েই তারা বেঁচে আছে।আমাদের দেশে এ চিত্র সর্বত্র বিদ্যমান।আবাসিক এলাকায় যেখানে উচ্চবিলাশীরা বাস করে আরামে ও শীতাতাপনিয়ন্ত্রনে,তার পাশেই বস্তিতে বাস করে আর এক শ্রেনীর মানুষ।এই মানুষের যে ব্যবধান তার জন্য কি আমরা দায়ি নই? তারা তো আমাদের মত এত আয়েস চায় না,চায় শুধু জীবনের বেঁচে থাকার অবলম্বন।আমরা যদি আমাদের আরামকে কিছুটা সংকুচিত করি আর সরকার যদি পদক্ষেপ নেয় তাহলে তারা তো এই হীনতম জীবনের গ্লানি থেকে সরে আসতে পারে।এ মানবতা যদি আমাদের জাতীয়ভাবে না জাগে তাহলে আমাদের এই রাজনীতি প্রহসনের রাজনীতি,আমাদের ধর্মীয় এই অনুভূতি ব্যার্থ অনুভূতি।আমরা যদি হিংসা বিদ্ধেষ জীবনের অংশ হিসেবে বেচে নেই তাহলে আমাদের পরাজয় নির্ঘাত।আমাদের সমাজে যে অন্তর্ঘাত ও হানাহানি তা তৈরি হয়েছে তা সমাজ বিবর্তন ও পরিবর্তনের জন্য নয়,সে শুধু ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার বাসনা মাত্র।যারা বলে আমরা গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছি,যারা বলে আমরা ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছি,তা শুধু তাদের মুখের কথা,নিছক অন্তরের কথা নয়।কারন যদি প্রকৃত গনতন্ত্রের কথা বলা হয় সেখানে গনতান্ত্রিক মুল্যবোধ কোথায়? সেখানে তো হানাহানি বন্ধ হয়ে সমঝোতা হওয়ার কথা।আবার ইসলামের কল্যান চাইলে অনৈসলামিক চর্চা কেন? ইসলামের জাতীয়তাবাদ হলো ইসলাম।ইসলামে ব্যাক্তিজীবনের দ্বীন ও পরিবারে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা সর্বাগ্রে কাম্য।মানুষ তৈরি করার কাজটি করা দরকার সর্বাগ্রে।বাংলাদেশে ইসলামে যে রাজনৈতিক ইস্যুটি তৈরি হয়েছে এবং ইসলামের দলগুলো তাদের বিভক্ত করে মানবরচিত মতবাদের লেজুড়ে পরিনত হওয়ায় একটা বিরোধ তৈরি হয়েছে বর্তমান শাসক গোষ্ঠী ও জাতীয়তাবাদের শক্তির সাথে।এর পরিনতিই হলো সামাজিক অবিচ্ছিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম। পরিনতি হচ্ছে সাধারন মানুষের জান মালের ক্ষতি ও নৈতিক অবক্ষয়।আমাদের ভাবতে হবে এবং বিশেষভাবে ইসলামের শক্তিগুলোকে মানবকল্যানে একত্রিত হতে হবে।অহিংস আন্দোলন তথা মানুষের কল্যানে ইসলামের বারতা মানুষকে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমেই ইসলামের কল্যান আসা সম্ভব।রোজার মাস আসন্ন।আমরা এ মাসেই অংগীকার করতে পারি ইসলামের মৌলিক দিকগুলো জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করবো, আমাদের ব্যাক্তি জীবনের উর্বরতা বাড়াবো, আইনের শাসন মেনে চলবো,একে অন্যকে ভাই হিসেবে সমীহ করবো,অন্যের স্বার্থকে নিজের স্বার্থ হিসেবে দেখবো আর এগুলোর জন্য সরকারকে আগে আইনের শাসনের কাছে মাথা নত করতে হবে। আমাদের কথা ও কাজের মধ্যে যদি ব্যবধান থাকে তাহলে আমরাই সবচেয়ে বড় হিপক্রেট।এ অবস্হা থেকে যত তাড়াতাড়ি আমরা বেরিয়ে আসতে পারবো তত তাড়াতাড়ি আমরা কল্যানের দিকে এগিয়ে যাব।

বিষয়: বিবিধ

১০৯৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

239658
২৮ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৩
মাজহার১৩ লিখেছেন : ভালও লেখা কেউ পোড়ে না।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File