যাদের হাতে শাস্তি দানের ক্ষমতা তারা অপরাধি হলে অপরাধ বাড়বে বৈ কমবে না।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৬ জুন, ২০১৪, ০২:৫৬:৫৫ দুপুর
আমাদের সংবিধানে - নাগরিক ও সরকারি কর্মচারিদের কর্তব্য যা ২১(১ ও ২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে - সংবিধান ও আইন মান্য করা,শৃংখলা রক্ষা করা,নাগরিক দায়িত্ব পালন করা এবং জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য।সকল সময়ে জন গনের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যাক্তির কর্তব্য।
১৬ কোটি মানুষের 'ক' জন মানুষ আমাদের সংবিধানের পাঠক আমার জানা নেই।একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে দেশে বসবাস করার জন্য তার অধিকারের বিষয় গুলো জানার ও বুঝার যে প্রয়োজন রয়েছে তা অনস্বীকার্য। খেতে খামারে কাজ করা বা কম শিক্ষিত মানুষের কথা বাদই দিলাম।যারা শিক্ষিত জন গোষ্ঠি তাদের বিশাল অংশকে আমি জিজ্গেস করছি, এই যে প্রতিনিয়ত দেশ নিয়ে ভাবছেন,রাজনীতি , অর্থনীতি ও সমাজনীতি নিয়ে আলোচনা করছেন এর কতভাগ এই সংবিধান নিয়ে নাড়াছাড়া করেন? আমি পরীক্ষা মুলক উচ্চশিক্ষিত অনেককে জিজ্গেস করে হতাশ হয়েছি।তারা একটা স্বাধীন দেশে বাস করছে তার সংবিধান সম্পর্কে জানে না ,কিছু জিজ্গেস করলে বলতে পারে না। শুধু তাই নয় যিনি একটি স্বাধীন দেশের জন্য এ সংবিধানটি রচনা করলেন সেই বিজ্গ মানুষটি সম্পর্কেও অনেকে জানেনা।এর কারন হিসেবে বলা যায়,আমরা এমন একটি জাতি যে একে অন্যকে তাদের কৃতকর্মের জন্য সম্মান দিতে জানি না। একজনের একটি ভাল কথাও যদি কেউ অন্যকে বলে তার জন্য ও কল্যান রয়েছে তা আমরা অনেকে জানি না। ড. কামাল হোসেন স্বাধীনতার সময়ে ছিল একটি কিংবদন্তি নাম।যার ছিল অনেক ভূমিকা এদেশের জন্য।তার মত অনেকে পরবর্তিকালে পৃথক হয়ে গেলেন কেন? এ প্রশ্ন জন মনে উদিত হয় না।আমাদের অনেকের অনেক মত থাকতে পারে,অপছন্দ থাকতে পারে কিন্তু আমরা যদি যার যার কাজের মুল্যায়ন করতে শিখি , সম্মান করতে শিখি তাহলেই আমরা জাতি হিসেবে বড় হতে পারবো।এই একটি যায়গায় আমরা হেরে গেলাম বলে অপরাধ আমাদের তাড়া করে বেড়ায়,আপরাধিদের হাতে আমাদের অনেককে জীবন দিতে হয়।ড. কামাল হোসেন মানবাধিকার প্রশ্নে এমনভাবে এ দেশে বহু মামলা লড়েছেন বিনা পারিশ্রমিকে। এ দেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, আমলা, সুপ্রিম কোর্টের চাকরি হারানো বিচারপতি, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী থেকে শুরু করে বস্তিবাসী, বিনা বিচারে আটক অসহায় মানুষ, সুবিধাবঞ্চিত নারী-শিশুসহ বহু মানুষ নির্যাতন, হয়রানি এবং শোষণ থেকে মুক্তি পেয়েছে তাঁর নিজের বা তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগঠনগুলোর মাধ্যমে। সন্ত্রাস, মিথ্যাচার, দুর্নীতি, চাটুকারিতা, অশ্লীলতা আর একচ্ছত্রবাদের যে রাজনীতি চলছে দেশে তার সাথে তিনি সম্পৃক্ত হতে পারেননি বলে হয়ত জয়ী হতে পারেন নি।কামাল হোসেন বাংলাদেশের অসুস্থ রাজনৈতিক ধারাকে অগ্রাহ্য করেছেন, কিন্তু এই ধারার বিরুদ্ধে যুদ্ধের কোনো কার্যকর কর্মকৌশল বাস্তবায়িত করতে পারেননি। তাঁর রাজনীতি হেরে গেছে আপাতত কিন্তু তিনি নিজে কখনো হারেননি। বাংলাদেশের যেকোনো সুস্থ ধারার রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন আর উদ্যোগে তিনি তাই নির্দ্বিধায় অগ্রগণ্য একজন মানুষ হিসেবে স্বীকৃত ও সম্মানিত হয়েছেন। বাংলাদেশের সংবিধান ও বহু গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন এবং মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী মামলায় প্রধান ভূমিকা তিনি পালন করেছেন। তাঁর হাতে গড়ে উঠেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্লাস্ট, টিআইবি, বিলিয়া, সেইলসসহ বাংলাদেশের খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠানগুলো।ড. কামালের ঈর্ষণীয় বহু অর্জন রয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ল অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট, আইএলও ও ইন্টারন্যাশনল বার অ্যাসোসিয়েশনের বিভিন্ন কমিটির চেয়ারম্যান, বিশ্ববিখ্যাত কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের (অক্সফোর্ড, আমস্টারডাম, ডান্ডিসহ) ফেলো, জাতিসংঘের স্পেশাল রেপোর্টিয়ারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আরবিট্রেশনের কাউন্সেল ও গবেষণা জার্নালের অন্যতম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং করছেন। জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ এবং সারা বিশ্বে বিভিন্ন সংস্থার পরামর্শকের কাজ করেছেন, চীন, থাইল্যান্ড, ফিজি, আরব আমিরাত, কাতার, মোজাম্বিকসহ নানা দেশের জন্য খসড়া আইন প্রণয়ন করে দিয়েছেন। কামাল হোসেনের কথা শোনার জন্য পৃথিবীর নামী বিশ্ববিদ্যালয়, থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সরকার বহু টাকা খরচ করে তাঁকে অতিথি করে নিয়ে গেছেন।দেশের জন্য এ ধরনের সব ব্যাক্তি নিশ্চই সম্মানের পাত্র এবং দেশের জন্য সম্পদও বটে।কিন্তু যারা গুনি জনের দোষ খুঁজে বেড়ায় তাদের তুলনা করা উচিত তারা সমকক্ষ কিনা?
যাই হোক সংবিধান সম্পর্কে কথা বলেতে গিয়ে একজন বিজ্গজনের কথা বলতে বাধ্য হলাম যা অনেকে আজ বলতে বা স্বীকার করেন না।ইতিহাস তার আপন গতিতেই চলে।সুগন্ধি আপনিই বের হয়। একজন খাঁটি মুসলিম হলে তাকে তার ধর্মীয় কিতাব আল কুরআন যেটা তার সংবিধান সেটা জানতে হয়।যার নিয়ম কানুন (আলকুরআন) দ্বারা তার দৈনন্দিন জীবনের কর্মকান্ড পরিচালিত হবে।কোন মুসলোম ছাত্রদের জিজ্গেস করলে একটা ছুরাও ঠিক করে পড়তে পারে না বুঝা তো দূরের কথা।একটা সংবিধান হলো একটি মানুষের চলার সাথি।জীবনের প্রতিচ্ছবি যাকে সাথে নিয়ে প্রতি মুহূর্তে চলবে।এটা একটা গাইড বুক।দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমরা এ ব্যাপারে নিরক্ষর।অথচ আমরা না জেনে না বুঝে কথার ফুলঝুরি এঁকে চলছি।যাই হোক, উপরের অনুচ্ছেদে সংবিধান ও আইন মান্য করা,শৃংখলা রক্ষা করা,নাগরিক দায়িত্ব পালন করা এবং জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য।সকল সময়ে জন গনের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যাক্তির কর্তব্য।এ কথাগুলো আমরা কি সবাই মেনে চলছি?
গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার,জনগন,সরকারের অধিনস্ত সব বিভাগ সহ সকলে এই সংবিধানের আনুগত্য করবে এটাই স্বাভাবিক।পথ দেখাবে কে? নিশ্চই জনগনের দ্বারা নির্বাচিত সরকার। শাসন ক্ষমতা সরকারের হাতে।সরকার বৈধ আইনজারি করবে আর সকলে মেনে চলবে।আইন শৃংখলা বাহিনী ও বিচার বিভাগ যার যার যায়গায় কাজ করে যাবে ও আইনের শাসন জারির মাধ্যমে তা সমাজের সর্বস্তরে প্রতিফলিত হবে।এই অবস্হায় কোন আপরাধ জন্মাবেনা।যদি কোন আপরাধ সংগঠিত হয় তা আইনের আওতায় চলে আসবে ও আইন অনুযায়ি বিচার সম্পাদিত হবে।আমরা যদি নীরপেক্ষ ও সচেতন ভাবে একটু দেশ নিয়ে মুক্ত চিন্তা করি দেখবো আসলে আমদের সমস্যা কোথায়? বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আইনের শাসন বাস্তবায়িত হয় নি।যে দেশে আপরাধকে আপরাধ হিসেবে দেখা হয় না, অপরাধির কোন শাস্তি নেই সে দেশে অপরাধ কমার স্বপ্ন আমরা কিভাবে দেখি?
প্রতিদিনের সংবাদপত্রে অপরাধের ঘটনা এবং অপরাধ জগতের কাহিনী একটা বড় অংশ এবং কোনো কোনো দিন সব থেকে বড় অংশ অধিকার করে থাকে। অবস্থা এখন এমন, যেখানে রক্ষককেই দেখা যাচ্ছে ভক্ষকের ভূমিকায়। দেশে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং অপরাধ দমন যাদের সরকারি দায়িত্ব, তারাই এখন বর্ধিত হারে নিজেরাই বড় বড় অপরাধের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে। অপহরণ, হত্যা, ধর্ষণ কোনো কিছুই আর তাদের অপরাধের সীমার বাইরে নেই। এ পরিস্থিতি যে কত ভয়াবহ এটা কাউকে বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই। সাধারণভাবে দেশে অপরাধ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রক্ষকদের এই ভক্ষকের ভূমিকা চারদিকে, দেশজুড়ে জনগণের জীবনে পরিণত হয়েছে এক নিত্য আতংকের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খাদ্যের ক্ষেত্রে আগে একটা বিপজ্জনক ব্যাপার ছিল ভেজাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে কোনো কোনো খাদ্যে সামান্য ভেজাল দেয়া হতো। দুধে মেশানো হতো পানি।আমরা ছোটবেলাও দেখেছি দুধ বিক্রেতারা দুধে পানি মিশাতো। এসব ভেজাল খাদ্যের বিশুদ্ধতা নষ্ট করলেও স্বাস্থ্যের জন্য তেমন ক্ষতিকর ছিল না। কারণ খাদ্যের সঙ্গে খাদ্য মিশিয়ে তখন ভেজাল দেয়া হতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীরা খাদ্যে ভেজাল দেয়ার ব্যাপার বেশি করে চালু করে। তেল, ঘি থেকে নিয়ে অন্য কিছু খাদ্যে তারা এমন সব জিনিস ভেজাল দিতে শুরু করে যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। কিন্তু যেসব জিনিস তারা ভেজাল হিসেবে ব্যবহার করত, সেগুলো ক্ষতিকর হলেও মানুষের জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল না। মাড়োয়ারিদের থেকে শিক্ষা নিয়ে বাঙালি ব্যবসায়ীরাও যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর খাদ্যে ভেজাল দেয়া শুরু করে। কিন্তু যেসব খাদ্যে এভাবে ভেজাল দেয়া হতো তার সংখ্যা ছিল কম এবং তাদের দেয়া ভেজালের তেমন বিষক্রিয়া ছিল না। এই পরিস্থিতি ১৯৭১ সালের আগে এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কিছুদিন পর্যন্ত বজায় ছিল।
উনিশশ আশির দশক থেকে ব্যবসায়ী বুর্জোয়াদের ক্ষমতার কব্জি আরও শক্ত হতে থাকার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে খাদ্যে ভেজাল বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্যে এমন সব জিনিস ভেজাল দেয়া হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকর। ১৯৯০-এর দশকে এসে খাদ্যে শুধু ভেজাল নয়, এমন সব রাসায়নিক পদার্থ দেয়া শুরু হল যা সাধারণভাবে স্বাস্থ্যের পক্ষে, এমনকি জীবনের পক্ষে হুমকিস্বরূপ। মাছ থেকে শুরু করে ফলমূলের স্বাভাবিক পচন রোধ করার জন্য এবং ফলমূল কাঁচা অবস্থা থেকে তাড়াতাড়ি পাকিয়ে তোলার জন্য কার্বাইড, ফরমালিন ইত্যাদি রাসায়নিক পদার্থ এগুলোতে প্রয়োগ করা হতে থাকল। এ প্রক্রিয়া রোধ করার কোনো চেষ্টা সরকারের পক্ষ থেকে না থাকায় এর বিরুদ্ধে সংবাদপত্রে কিছু লেখালেখি এবং বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিবাদ-বিবৃতি সত্ত্বেও এটা কমে আসার পরিবর্তে এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শুধু মাছ, চাল, ডাল, আটা, তেল, ফলমূলই নয়, কোনো ধরনের শাকসবজি পর্যন্ত এর আওতার বাইরে নেই। টমেটো, বেগুন, পটল, করোলা, আলু, পেঁয়াজ, সব রকমের শাকের ওপর এখন রাসায়নিক বিষ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এখন আম, লিচু, জাম, কাঁঠালের মৌসুম। এ মৌসুমে খুব ব্যাপকভাবে কলাসহ এসব ফলে এমনভাবে রাসায়নিক পদার্থ দেয়া হচ্ছে যে কোনো কিছু আর খাদ্য হিসেবে নিরাপদ নয়- এমন তথ্য বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা, এমনকি সরকারি মহল থেকেও দেয়া হচ্ছে। জনজীবনের ওপর ব্যবসায়ীদের এই আক্রমণ এক অদৃষ্টপূর্ব ব্যাপার। এ ধরনের কোনো কিছু এত ব্যাপকভাবে অন্য কোনো দেশে কখনও হয়েছে বা এখন হচ্ছে বলে জানা নেই। পার্শ্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গে আম, লিচু ইত্যাদিতে কার্বাইড প্রয়োগ করার প্রচলন অনেক দিন থেকে থাকলেও সব রকম ফলমূল, মাছ, শাকসবজির ওপর এত ব্যাপকভাবে রাসায়নিক বিষ প্রয়োগের কোনো রিপোর্ট সেখানে পাওয়া যায় না।
দীর্ঘদিন থেকে এ অবস্থা চলে এলেও বাংলাদেশের জনজীবনের ওপর ব্যবসায়ীদের এই আক্রমণের বিরুদ্ধে সরকারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। প্রথমদিকে কিছু মিষ্টির দোকানে হামলা চালিয়ে দোকানদারকে সামান্য জরিমানা করা হতো একটা লোকদেখানো ব্যাপার হিসেবে। কিন্তু তাতে কোনোই কাজ হতো না। পরের দিকে তরিতরকারির বাজারে খুচরা বিক্রেতাদের দোকানে সরকারি লোকজন পরীক্ষা চালিয়ে মাছ, তরিতরকারি নষ্ট করলেও কোনো কাজ হয়নি। বড় বাজারগুলোতে ফরমালিন পরীক্ষার ব্যবস্থা করে সেগুলোকে বিষমুক্ত ঘোষণা করলেও অল্পদিনের মধ্যেই সেই পরীক্ষার এমন অবস্থা হয় যে ফরমালিন, কার্বাইড ইত্যাদি দেয়া সব রকম খাদ্যই দোকানে আবার বিক্রি হতে থাকে। এখন আম, লিচু ইত্যাদি ফলের মৌসুমে শুরু হয়েছে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে ট্রাক থামিয়ে ফরমালিনযুক্ত ফল ট্রাকের তলায় ফেলে নষ্ট করা। এতেও ঢাকার বাজারে ফরমালিনযুক্ত আম, লিচু, জাম, কলা ইত্যাদি বিক্রি সমানে চলছে। কারণ ট্রাকে করে ব্যবসায়ীরা অনেকে এসব ফলমূল ঢাকায় না এনে অন্যভাবে নিয়ে আসছে।
এ তো গেল ঢাকাবাসীকে রক্ষার জন্য সরকারি প্রশাসনের এক তথাকথিত প্রচেষ্টা। কিন্তু এই বিষযুক্ত ফলমূল শুধু চট্টগ্রামের মতো শহরেই নয়, সারা দেশের বিভিন্ন শহরে ও গ্রামাঞ্চলে বিক্রি হচ্ছে। যে পদ্ধতিতে বিষযুক্ত খাদ্যের বিরুদ্ধে এই অভিযান শুরু হয়েছে, সেটার যে কোনো প্রকৃত কার্যকারিতা নেই তা বোঝার অসুবিধা কারও নেই। এখানে মূল কথা হল, যেখানে এসব ফলমূল, শাকসবজি ইত্যাদি চাষ হচ্ছে এবং বড় কারবারিরা যেখানে অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করে, সেখানে সরকারের কোনো খবরদারি নেই। এ অবস্থায় কিছু জায়গায় এসব বিষযুক্ত খাদ্য আটক করে নষ্ট করলে তাতে কোনো ফল নেই। এ কারণে সরকারের লোকদেখানো চেষ্টা সত্ত্বেও ঢাকাসহ দেশের সব বাজারে এখন বিষাক্ত ফলমূল, শাকসবজি, মাছ, তেল, চাল, ডাল বিক্রি হচ্ছে। মানুষকে বাঁচার জন্য এসব বিষাক্ত খাদ্য বাধ্য হয়েই খেতে হচ্ছে। এভাবে বিষাক্ত খাদ্য খেয়ে সারা দেশের মানুষ নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। গরিবদের অবস্থা এর ফলে বড় আকারে বিপর্যস্ত হচ্ছে।
খাদ্যে অনেক রকম রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ফরমালিন ছাড়া অন্য কোনো এ ধরনের পদার্থ পরীক্ষা ও চিহ্নিত করার মতো কোনো ব্যবস্থা সরকারের নেই (ডেইলি স্টার, ১৩.০৬.২০১৪। এ অবস্থায় ফলমূল ইত্যাদিতে ফরমালিন ছাড়া অন্য ধরনের রাসায়নিক পদার্থ মেশানো থাকলে সেটা সরকারি পরীক্ষা পার হয়ে ঢাকা শহরে ঢুকছে। দেশের অন্যসব জায়গায়ও এগুলোর বিক্রি অবাধে হচ্ছে। এর থেকে বোঝা যায়, জনজীবনের ওপর, জনগণের স্বাস্থ্যের ওপর এই ব্যাপক ও মারাত্বক হুমকি সত্ত্বেও এর বিরুদ্ধে সরকারের কোনো প্রকৃত পদক্ষেপ নেই। এর মূল কারণ, যারা এসব ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তারা কোনো না কোনোভাবে সরকার ও ক্ষমতাসীন চক্রের সঙ্গেও যুক্ত। ব্যবসায়ী শাসিত বাংলাদেশে ভক্ষক ও রক্ষকের একাত্মতা যে দেশের জনগণকে কত বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে নিক্ষেপ করেছে, এটা অন্য অনেক কিছুর মতো সরকারের এই সচেতন ব্যর্থতার দ্বারা ভালোভাবেই প্রমাণিত হচ্ছে।বিষযুক্ত খাদ্য বিনষ্ট করলেই বাজারে যে বিষাক্ত খাদ্য বিক্রি বন্ধ করা যায় না, এটা এক প্রমাণিত সত্য। এর কারণ, বিষাক্ত খাদ্যের কোনো কোনো চালান নষ্ট করলে ব্যবসায়ীদের কিছু ক্ষতি হলেও তা সামান্য। এই সামান্য ক্ষতি সত্ত্বেও তাদের দ্বারা এ ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ায় অসুবিধা হয় না। কারণ তাদের এই সর্বনাশের জন্য দীর্ঘদিন জেলে আটক রাখা এবং খুব বড় অংকের জরিমানার কোনো ব্যবস্থা নেই, যার মাধ্যমে তাদের কোনো প্রকৃত শাস্তির ব্যবস্থা হতে পারে। এটা শুধু খাদ্যের ক্ষেত্রেই নয়, সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়। বাংলাদেশে কোনো অপরাধের জন্যই অপরাধীর কোনো শাস্তি নেই। এর মূল কারণ, যাদের হাতে শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা, তাদের একটা শক্তিশালী অংশই এসব অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। এটা যদি না হতো তাহলে ঢাকার পার্শ্ববর্তী চারটি নদী ক্রিমিনালদের দখলমুক্ত করা সরকারের পক্ষে কোনো কঠিন ব্যাপার ছিল না। সরকার অন্য ক্ষেত্রের মতো এক্ষেত্রেও লোকদেখানোর জন্য মাঝে মাঝে দখলদারদের নির্মিত বেআইনি স্থাপনা ভেঙে নষ্ট করে। কিন্তু যারা এ কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয় না, তারা গ্রেফতার হয়ে জেলে যায় না। তাদের কোনো জরিমানা হয় না। কাজেই স্থাপনাগুলো ভাঙার পর একই ক্রিমিনালরা আবার আগের জায়গাতেই নতুন স্থাপনা নির্মাণ করে!
এসব নিয়ে অনেক আলোচনা ও রিপোর্ট দেখা যায়। কিন্তু বাংলাদেশ যেহেতু বুর্জোয়াদের দ্বারা শাসিত হচ্ছে, কাজেই তাদের চুরি, দুর্নীতি, ঘুষখোরি, নদী দখল, ফলমূলসহ সব ধরনের খাদ্যে বিষ প্রয়োগ- কোনো কিছুর বিরুদ্ধেই সরকারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। অন্য বিষয় বাদ দিয়ে শুধু পরিস্থিতির এ দিকটির দিকে তাকালেই বোঝা যায় এই চোর, দুর্নীতিবাজ, লুণ্ঠনজীবী শাসক শ্রেণী ও এদের সরকার জনস্বার্থ থেকে কতখানি বিচ্ছিন্ন এবং এদের হাতে দেশের ক্ষমতা যতদিন ন্যস্ত থাকবে, ততদিন বিদ্যমান অবস্থা থেকে মুক্তির কোনো পথ জনগণের সামনে খোলা নেই।
বিষয়: বিবিধ
১১৪৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন