রজব পেরিয়ে সা'বান চলে যাচ্ছে,সামনে রমজান আসন্ন,আমরা মুসলিমরা কি প্রস্তুত এ মাসকে বরন করার জন্য?
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৮ জুন, ২০১৪, ০৪:৩৫:৩৪ বিকাল
প্রিয় মুসলিম ও ঈমানদার ভাই ও বোনেরা, আর মাত্র কিছুদিন পরই রোজা আসন্ন।একজন মুসলিম কখনো মুসলিম হতে পারে না যদি ইসলামের ৫টি মৌলিক বিষয় ( ঈমান,নামাজ ,রমজানের রোজা,যাকাত ও হজ্জ্ব) পালন না করে।আর সর্বপ্রথমে ঈমনের ৬ টি বিষয়( আল্লাহর প্রতি,ফেরেস্তাদের প্রতি,আসমানি কিতাবসমুহের প্রতি,রাসূলদের প্রতি,আখেরাতের প্রতি ও কপালের ভাল মন্দ আল্লাহর পক্ষ থেকে) অন্তকরন দিয়ে অনুধাবন করে ও তদনুযায়ি দৈনন্দিন কাজগুলো করে তারাই প্রকৃত মু'মিন।ইসলামের ৫টি মৌলিক বিষয়ের একটি হলো সাওম বা রোজা যা আরবি ১২টি মাসের নবম মাস।সা'বান মাসের পর যে মাসটি সেটিই রমজান যা সাহারুল্লাহ বা আল্লাহর মাস হিসাবে পরিচিত।এ মাসে একজন মুসলিমের করনীয় কি? কিভাবে পুরো রমজান মাসের হক্ক আদায় করা যায়? কিভাবে খালেস ইবাদাত করা যায়? রাসূল সা: রমজান আসার আগে কিভাবে এ মাসকে আমন্ত্রন জানাতেন? এসব বিষয়গুলো একজন মু'মিন মুসলমানের জানা আবশ্যক খালেস ইবাদাত করার জন্য।
আল্লাহ তায়ালার দেয়া অসংখ্য অগণিত নিয়ামতের মধ্যে সময় হল অমূল্য নিয়ামত। সময়ের সমকক্ষ, সমতুল্য, বিকল্প কিংবা শ্রেষ্ঠ কোন পার্থিব নেয়ামত নেই। কারণ,সময়কণিকার সমষ্টিই হল আমাদের জীবন ও হায়াত। আর এই হায়াতের উপর নির্ভর করেই মানুষ দুনিয়ার যেকোন নিয়ামত ভোগ করে থাকে। জীবন না-থাকলে জগতের কোন মূল্য নেই। মানুষের কোন নিয়ামতই ভোগ করার, কোন কাজ করার সুযোগ নেই, চাই তা ভালো হোক আর মন্দ। এ হায়াত আলাহ তায়ালার পক্ষ থেকে দেয়া অমূল্য পুঁজি; যা তিনি দান করেছেন আমরা যেন তা সৎপথে সৎকাজে বিনিয়োগ করে অনন্ত-অসীম শান্তিময় জীবন লাভ করতে পারি। এ জন্য হায়াতের এই মহাদৌলতকে আখিরাতের মহানেয়ামত ও সুখ-সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য বিনিয়োগ করা চাই। বস্তুত দুনিয়াতে এমন কোন জিনিস নেই, যার জন্য আমাদের এ অমূল্য জীবন বিনিয়োগ করা যেতে পারে। কেবল আখিরাত জীবনের অফুরন্ত সুখ-শান্তির ঠিকানা জান্নাতের জন্যই এ জীবন বিনিয়োগ হতে পারে; যেখানে জীবনের চাওয়া-পাওয়া, আশা-আকাক্সক্ষা পূর্ণ হবে এবং মহান আল্লাহ তায়ালার দিদার অর্জিত হবে। সেখানেই প্রত্যেকে তার কাক্সিক্ষত সবকিছুই অর্জন করবে, সেখানেই সে চিরকাল চিরঅমর জীবন লাভ করবে।
দুনিয়ার জীবনে যতবেশি নেক আমল করবে, যত অধিক নেকী উপার্জন করবে, আখিরাতে ততই তার মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি পাবে। ততই তার সুখসমৃদ্ধি স্ফীত হবে। এজন্য দুনিয়ার জীবনে অধিক নেকি উপার্জনের অধিক সময়ের প্রয়োজন। অধিক লাভের জন্য অধিক পুঁজির আয়োজন আবশ্যক। আর হায়াত হলো আমাদের নেকি কামাইয়ের অমূল্য পুঁজি। হায়াত যত দীর্ঘ হবে, ততই মুমিন ব্যক্তি বেশি পরিমাণে নেক আমল করার সুযোগ লাভ করবে। ঈমানদার ব্যক্তি যদি কোন অতিরিক্ত নফল আদায় করার সুযোগ লাভ নাও করে; বরং জরুরী ঈমান ও আবশ্যিক ফরয আমালগুলো আদায় করে এবং সেসঙ্গে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে; তাহলেও তার জন্য এই বেঁচে থাকা বড়ই লাভজনক ও সুখকর। এই জন্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক পরিমাণ নেক কাজের সুযোগ পাওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে হায়াত বৃদ্ধির দুআ করেছেন এবং মৃত্যু যাতে নেক কাজের প্রতিবন্ধক না হয়ে বরং মন্দ জিনিস থেকে বাঁচার উপায় হয়, তজ্জন্যে দুআ করেছেন এবং বলেছেন :“হে আল্লাহ! সব ধরনের নেক কাজের ক্ষেত্রে আমার হায়াতকে বৃদ্ধি করে দিন এবং মৃত্যুকে যাবতীয় অকল্যাণ থেকে রেহাই লাভের উপায় করে দিন।”
তবে সঙ্গে সঙ্গে তিনি এত দীর্ঘ হায়াত থেকে আল্লাহর আশ্রয় কামনা করেছেন, যা 'থুরথুরে বার্ধক্য’ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। যখন মানুষের সঠিক হুঁশ-জ্ঞান থাকে না, শারীরিক শক্তি-সামর্থ্য লোপ পেয়ে যায়, আত্মনির্ভরতার পরিবর্তে পরনির্ভর হয়ে পড়ে। মারাত্মক স্মৃতিবিভ্রাট দেখা দেয়। মানুষের জীবনের এ অংশ হল সর্বনিকৃষ্ট, কুরআন-সুন্নায় যাকে ‘আরযালুল উমর’ বলা হয়েছে। থুরথুরে বার্ধক্য থেকে বাঁচার জন্য আমলের আবশ্যকতা রয়েছে। বিশ্ববিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা জালালুদ্দীন মহল্লী (রহ.) স্বীয় তাফসীরগ্রন্থে হযরত ইকরামা (রা) হতে রেওয়ায়াত করেন, “যারা কুরআন মাজীদ পড়ে এবং তদানুযায়ী আমল করে, তারা এই নিকৃষ্ট থুরথুরে বার্ধক্যে উপনীত হওয়া থেকে রেহাই পাবে।” (তাফসীর জালালাইন, সূরা নাহল : ৭০নং আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)
রমযান পাওয়ার জন্য নবীজি সা: এর ব্যাকুলতা ও দু’আ লক্ষ্য করা যায়। আর এজন্যই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম রমযানের খায়ের ও বারাকাত হাসিলের উদ্দেশ্যে রমযান পর্যন্ত হায়াত বৃদ্ধির জন্য এবং রমযান লাভের জন্য দুআ করেছেন। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, যখন রজব মাসের চাঁদ উদিত হতো, তখন নবীজি (সা.) এদুআ পড়তেন : “হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাসে আমাদের হায়াতে বরকত দান করুন এবং রমযান পর্যন্ত আমাদেরকে পৌঁছিয়ে দিন।” অর্থাৎ, আয় আল্লাহ! আপনি যখন মেহেরবানী করে বছরের নয় মাস পার করে এনেছেন, বাকি দুই মাস- রজব-শাবানও পার করে আমাদেরকে রামাযান লাভের সুযোগ করে দিন। কাজেই আমাদের সকলের উচিৎ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুকরণে রজব ও শাবান মাসে এ দুআ করা।
রমযানের জন্য নবীজি (সা.)-এর মানসিক প্রস্তুতি এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায়, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’মাস পূর্ব থেকে রমযানের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। আলাহ তায়ালার কাছে রমযান পাওয়ার জন্য দরখাস্ত করেছেন। বস্তুত, এটি ছিল নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রমযানের জন্য মানসিক প্রস্তুতি। দু’আর আদলে তিনি উম্মতকে রমযানের জন্য পূর্ব থেকে মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করার সবক দিয়েছেন। কারণ, দু’আ সাধারণত কাম্য ও কাক্সিক্ষত বস্তুর হয়ে থাকে। আর যা কিছু কাক্সিক্ষত ও কাম্য, মানুষ তার জন্য অভ্যর্থনা জানানোর অপেক্ষায় থাকে। বস্তুত, দু’মাস পূর্বে দু’আর মাধ্যমে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে রমযানকে সাদরে বরণ করে নেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন রমযান অতীব কাম্য ও কাক্সিক্ষত মাস। তোমরা এ মাস লাভ করার জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে দু’আ করতে থাক।এখানে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দূরদর্শিতা এবং তাঁর সূক্ষ্ম হিকমাত ও প্রজ্ঞার প্রমাণ পাওয়া যায়। কারণ, রমযানের রোযা ও রাতের তারাবীহ দীর্ঘমেয়াদি কষ্টসাপেক্ষ আমল।
সাওম বা রোজার অর্থ হলো বেঁচে থাকা বা বিরত থাকা।সমস্ত হারাম ও নাযায়েয কাজ থেকে,পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ থেকে এবং হারাম চিন্তা চেতনা থেকে বিরত থাকাই রোজার প্রকৃত অর্থ বহন করে।সূরা বাক্কারার ১৮৩-১৮৭ আয়াত পর্যন্ত রোজার উপর বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে।আল্লাহতায়ালা এই উম্মতে মোহাম্মদিকে সম্বোধন করে বলেছেন,হে ঈমানদারগন তোমরা রমজানের রোজা পালন কর।এর উদ্দ্যেশ্য হছ্ছে আল্লাহ পাকের নির্দেশ পালন, খাঁটি নিয়াতে পানাহার ও স্ত্রী সহবাস হতে বিরত থাকা।এর উপকারিতা হলো মানবাত্মা পাপ ও কালিমা থেকে সম্পুর্নরুপে পরিষ্কার ও পবিত্র হয়ে যায়।এই রোজার হুকুম সব উম্মতের উপরই ছিল।সে জন্য যারাই এ মাসটি পায় তারা যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এ মাসের রোজা পালন করে।সহীহ বোখারি ও মুসলিমে রাসূল সা: বলেছেন,'হে যুবকবৃন্দ! তোমাদের মধ্যে যাদের বিয়ে করার সামর্থ রয়েছে তারা বিয়ে করবে আর যাদের ক্ষমতা নেই রোজা রাখবে।এটাই তার জন্য অন্ডকোষ কর্তিত হওয়া।'
এই পবিত্র মাসেই কুরআন নাজিল হয়েছে।মুসনাদে আহমাদে রাসূল সা: বলেন,'হযরত ইব্রাহিম আ: এর সহিফা রমজানের প্রথম রাতে,তাওরাত ৬ তারিখে,ইন্জিল ১৩ তারিখে এবং কুরআন ২৪ তারিখে অবতীর্ন হয়।কুরআনুল কারিম "বায়তুল ইজ্জাহ " থেকে দুনিয়ার আকাশে একবারে অবতীর্ন হয়েছিল।এর পর বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ধাপে ধাপে ২৩ বছরে কুরআন নাজিল হয় পৃথিবীর বুকে।এই কুরআনে মানবজাতির জন্য পথ প্রদর্শিত হয়েছে ও উজ্জল নিদর্শন রয়েছে।চিন্তাশীল ব্যাক্তিরাই এর মাধ্যমে সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হন।এই কুরআন সত্য ও মিথ্যা , হারাম ও হালালের মধ্যে প্রভেদ সৃষ্টিকারি।সুপথ ও কুপথ এবং ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য আনয়নকারি।সহীহ বোখারিতে বর্নীত হয়েছে,'যে ব্যাক্তি বিশ্বাস রেখে ও সৎ নিয়াতে রোজা রাখে তার পূর্বের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়।যে ব্যাক্তি সুস্হ ও সবল অবস্হায় বাড়িতে অবস্হান করবে,মুসাফির হবে না তাকে বাধ্যতামুলকভাবে রোজা রাখতে হবে।আল্লাহতায়ালা রুগ্ন ও মুসাফিরের জন্য রোজা ছেড়ে দেয়ার অনুমতি দিয়েছেন।অসুস্হতার জন্য যে ক'দিন রোজা রাখতে পারবেনা তা গননার হিসেবে পরে রেখে দিবে। রাসূল সা: এর সাথে সাহাবাগন কেউ কেউ সফরে রোজা রাখতেন আবার কেউ কেউ ছেড়ে দিতেন।এতে কেউ কাউকে দোযারোপ করতেন না।আল্লাহপাক মানুষকে করুনা করেছেন আর কারো উপর সামর্থের বেশী চাপিয়ে দেন নি।না রাখা রোজাগুলো একসাথে রাখা যায় আবার ভেংগে ভেংগে ও রাখা যায়। ইছ্ছা করে রোজা ভাংগা মারাত্মক অপরাধ।এর কোন মাপ নেই তওবা ব্যাতীত।কেবলমাত্র শরিয়তসম্মত ভাংগা রোজাগুলো ক্কাজা করা জরুরি।আল্লাহ দ্বীনকে সহজ করেছেন যাতে পালন করা সহজ হয়।মুসনাদে আহম্মাদে রাসূল সা: বলেন,'তোমরা সহজ কর ,কঠিন করোনা,সান্তনা দান কর,ঘৃনা করো না।'
আল্লাহপাক বান্দাহর অতি নিকটবর্তী।একজন মু'মিনকে বিশ্বাস স্হাপন করতে হবে, আল্লাহপাক আরশের উপর থেকে তার জ্গান ও ক্ষমতার দ্বারা বান্দাহর কাছাকাছি।সেজন্য বান্দাহ আল্লহকে যেভাবে ডাকুক না কেন আল্লাহ তার জবাব দেন ,দেখেন ও শুনেন।আল্লাহ বলেন তোমরা আমাকে ডাক আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।আল্লাহতায়ালা আরো বলেন আমার বান্দাহ আমার উপর যেরুপ বিশ্বাস রাখে আমিও তার সাথে ঐরুপই ব্যাবহার করি।হযরত আবু সাঈদ রা: থেকে বর্নিত রাসূল সা: বলেছেন,'যে বান্দাহ আল্লাহতায়ালার নিকট এরুপ প্রার্থনা করে যার মধ্যে পাপ নেই এবং আত্মিয়তার বন্ধনের ছিন্নতাও নেই তাহলে আল্লাহতায়ালা তাকে তিনটি জিনিসের মধ্যে যে কোন একটি দান করেন। হয়ত তার প্রার্থনা কবুল করে তার উদ্দ্যেশ্য পূরন করেন কিংবা তা জমা করে রেখে দেন এবং পরকালে দান করেন বা তারই কারনে কোন পার্থিব বিপদ কাটিয়ে দেন।সুতরাং কোন মু'মিন বান্দাহর এটা ভাবা উচিত নয় আমি এত ইবাদাত করছি বা দোয়া করছি যে আল্লাহ শুনছেন না।বান্দাহ আমির্তু ধৈর্য ও সবরের সাথে তার ইবাদাত করে যাবে,ভাল বা মন্দ যা-ই হোক সব অবস্হায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে।আমাদের একটু ভেবে দেখা উচিত আমাদের দৈনন্দিন জীবন কিভাবে ব্যায় করছি।সা'বান মাসেই আমাদের রমজানের প্রস্তুতি গ্রহন করা উচিত।প্রত্যেকে নিজের পারিপার্শিক অবস্হা বিবেচনা করে একটা পরিকল্পনা গ্রহন করবে যাতে রমজানের হক্ক আদায় করা যায়।আল্লাহর হক্কগুলো যথা যথ আদায় ও বান্দাহর হক্কগুলো আদায় করার মাধ্যমে ইবাদাত পূর্নতা পায়।অধিকাংশ মানুষ রমজানে কেনা কাটা নিয়ে ব্যাস্ত থাকে।খাবার অপচয় করে থাকে।ইফতারের আগে ইবাদাতের যে সময় তা ভোজের নামে রাস্তায় কাটায়।সে জন্য খাবার অপচয় না করে তা গরীবদের মধ্যে বিলানোর পরিকল্পনা নিতে পারে।যারা অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছে তারা সেগুলো পরিহার করে ইস্তেগফারের মাধ্যমে নিজেদের সংশোধন করতে পারে।কারন ইবাদাতের পূর্বশর্ত হলো পবিত্রতা।উপার্জন যদি পবিত্র না হয় ,বান্দাহ তা খেয়ে পরে ইবাদাত করলে কি করে কবুল হবে? আমরা আমাদের কাজগুলো পর্যালোচনা করলেই বুঝতে পারবো আমরা সঠিক পথে আছি না অন্যায় পথ অবলম্বন করছি।দুষিত রক্ত মাংস দিয়ে ইবাদাত কখনো কবুল হয় না কারন আল্লাহ পবিত্র আর তিনি চান বান্দাহ পবিত্রতার সাথে আল্লাহর পথে খরচ করুক।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে বর্তমান মুসলিমদের অবস্হা খুবই করুন ইবাদাতের ক্ষেত্রে।তাদের কাছে হারাম ও হালালের কোন সীমারেখা নেই, যে ইবাদাতগুলো করে তা-ও শির্ক ও বিদাআত মিশ্রিত।ফরয কাজগুলো ছেড়ে দিয়ে সূন্নাতের পাবন্দি করে।রোজার দিনে অনেকে ফরয নামাজ ছেড়ে দিয়ে ইফতার খাওয়ানো নিয়ে বেশ ব্যাস্ত থাকে।মনে রাখতে হবে ইফতার যে খাওয়ায় ও যে খায় তাদের কারোরই সওয়াবে কমতি হবে না।তবে ফরয ইবাদাত করার পরে।রোজ ক্কিয়ামতে প্রথম হিসাব হবে ফরয নামাজের।যার ফরয নামাজে কমতি থাকবে আল্লাহ তার সূন্নাত ও নফল নামাজের তলব করবেন।কিনতু ফরয বাদ দিয়ে সূন্নত ও নফল কাজ করার কোন অর্থ নেই।এই ইফতারকে কেন্দ্র করে মা বোনদের বেপর্দার সম্মুখীন হতে হয়।আমাদের সব কাজই সওয়াব অর্জনের জন্য।সেজন্য খেয়াল রাখতে হবে আমাদের কাজগুলো শরিয়ত মত হছ্ছে কিনা? এ মাস যেহেতু ইবাদাতের মাস সেহেতু ইবাদাতকে মুখ্য করেই দেখাই উচিত।ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইফতারের পরে ঈশা পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস বৈধ ছিল।যদি কেউ এর পূর্বে শূয়ে পড়তো তবে নিদ্রা আসলে পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ হারাম হয়ে যেত।এর ফলে সাহাবাগন কষ্ট অনুভব করছিলেন।অতপর আল্লাহ আয়াত নাজিল করে মাগরিব থেকে সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগের আদেশ দান করেন।রাসূল সা: বলেছেন, ইফতার তাড়াতাড়ি কর আর সেহরি বিলম্ব কর।হযরত আনাস রা: বলেন আমরা সেহরি খাওয়া মাত্রই নামাজে দাঁড়িয়ে যেতাম।এখানে একটা বিষয় জ্গাতব্য যে, যেহেতু আল্লাহতায়ালা রোজাদারের জন্য স্ত্রী সহবাস ও পানাহারের সময় সুবেহসাদিক পর্যন্ত নির্ধারন করেছেন কাজেই সকালে যে ব্যাক্তি অপবিত্র অবস্হায় উঠলো সে পবিত্র হয়ে নামাজ আদায় করে রোজা পুরা করে নিল।যদি গোসল করতে গিয়ে পানাহারের সময় শেষ হয়ে যায় তাহলে ওজু করে সেহরি পুরা করে গোসল করে নামাজ আদায় করে নিবে।উম্মে সালমা রা: থেকে বর্নিত,রাসূল সা: রাতে সহবাস করে সকালে অপবিত্র অবস্হায় উঠতেন অতপর গোসল করতেন ও রোজাদার থাকতেন।তিনি রোজা ছেড়েও দিতেন না ,ক্কাজাও করতেন না।
প্রত্যেক মু'মিনের কাজ হলো আর এক মু'মিনকে স্মরন করিয়ে দেয়া।রমজান কারো কাছে এলো আর যদি সে রমজান থেকে সওয়াব অর্জন করতে না পারে তাহলে তার মত হতভাগ্য আর কেউ নেই।রাসূল সা: একদিন মিম্বরে উঠছিলেন এমন সময় জিবরিল আমিন উপস্হিত হয়ে বললেন যে ব্যাক্তি রমজান পেল ও গুনাহ মাপ করে নিতে পারলোনা তার উপর অভিসম্পাত হোক।রাসূল সা: বললেন আমিন।এ থেকে প্রতিয়মান হয় রোজার গুরুত্ব কেমন।একটা সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা যদি নেয়া যায় তাহলে রোজার মাসে ইবাদাতের সময়ের অভাব হয় না।তাক্কওয়ার(আল্লাহভীতি) কোন শেষ নেই।তাক্কওয়া এক একজনের কাছে এক এক রকম।সৎ আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছতে হবে।ইবাদাতে যেন কোন শির্ক ও বিদাআত না থাকে তার প্রতি তীখ্ন খেয়াল রাখতে হবে।নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারলে আশা করা যায় সহজ সরল রাস্তা পাওয়া যেতে পারে:
১-খালেস ইবাদাত - যে কোন কাজ হতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ও একমাত্র নবী সা: এর অনুসরনে।
২-ঈমানের নবায়ন- ঈমান যেহেতু উঠানামা করে সেহেতু সব সময় ঈমানের নবায়ন করে ইবাদাত করতে হবে।
৩-ইসলামের ৫টি স্তম্ভ ( ঈমান,নামাজ ,যাকাত ,রোজা ও হজ্জ) অধ্যয়ন ও তদনুযায়ি আমল করা।
৪-রমজানের শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে ইবাদাত করা-হালাল কে হালাল ও হারামকে হারাম জেনে গ্রহন ও বর্জন করা,শির্ক ও বিদাআত কে জানা ও ইবাদাতে আছে কিনা তা পরখ করে দেখা,সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নির্দেশ দেয়া,কুরআন ও হাদিসের নিয়মিত চর্চা করা,অতীত ভুলভ্রান্তির জন্য তওবা করা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকা,ফরয ইবাদাতের সাথে সূন্নত ও নফল নামাজের পাবন্দি করা,তাহাজ্জুদের অভ্যাস গড়ে তোলা,যাদের ওমরার সামর্থ আছে ওমরাহ করা,ফিতরা যথাসময়ে আদায় করা,সম্ভব হলে এত্বেকাফ করা, রমজানের শেষ দশ দিনে বিজোড় রাত্রিগুলোতে ক্কদরের ইবাদাতে মশগুল থাকা, তাড়াতাড়ি ইফতার করা ও দেরিতে সেহরি করা,ইফতারের ঠিক পূর্বের সময় ইবাদাতে মগ্ন থাকা,যারা ব্যাবসায়ি তারা হালাল ব্যবসার চর্চা করা,যারা চাকুরিজীবি তারা মালিকের যেন কোন খেয়ানত না করেন সেদিকে দৃষ্টি নিবেন।
৫-রোজা ভংগের কারন গুলো জানা- (ক)-স্বামি স্ত্রী মিলন ও পানাহার রোজা ভংগের মুল কারন।যদি ইছ্ছাকৃত এ কজাগুলো হয় তাহলে রোজা ভংগ হবে।এর কাফ্ফারা বা পেনালটি হলো তওবা ও পরপর ৬০টি রোজা রাখা একটি রোজার জন্য অথাবা ৬০ জন মিসকিনকে খাওয়ানো।শরিয়ত সম্মত রোজা ভংগ হলে একটির পরিবর্তে পরে একটি রোজা রাখবে।দু'জনের সম্মতিতে রোজা ভংগ হলে দু'জনকেই কাফ্ফারা দিতে হবে।আর দুই জনের যে জবরদস্তি করে রোজা ভংগ করেছে তাকেই কাফ্ফারা দিতে হবে অন্যকে নয়।(খ)-ইছ্ছাকৃত বির্যপাত ঘটানো-হস্ত মৈথিন,চুম্বন বা আলিংগন।রোজা অবস্হায় স্ত্রীকে চুম্বন দেয়া যায়েয তবে যাদের কন্ট্রোল করার ক্ষমতা থাকবে না তাদের না করাই উত্তম।আয়শা রা: বর্ননা করেছেন রাসূল সা: রোজা অবস্হায় চুম্বন দিতেন তবে তিনি সংযত থাকতেন।যারা যৌন সংক্রান্ত ব্যাপারে দুর্বল তারা এ কাজ করবে না।তাছাড়া যৌন চিন্তা করা বা অশ্লীল ছবি দেখা বা বির্যপাত ঘটানো ইত্যাদি।অনেকের উত্তেজনার কারনে মজি বের হয় এ কারনে রোজা ভংগ হবে না।(গ)-পানাহারের অর্থ বহন করে এমন ইনজেকশন যা পানাহারের কাজ করে।রোগী অসুস্হ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রোজা ভাংবে।কোন কোন উলামাগন বলেছেন সব রকম সন্দেহের উর্দ্ধে থেকে উত্তম তাক্কওয়ার মাধ্যমে রোজা রাখা।(ঘ)-ইছ্ছাকৃত ভোমি করলে রোজা ভাংবে আর অনিছ্ছাকৃত হলে রোজা ভাংবে না।অনিছ্ছাকৃত স্বপ্নদোষ হলেও রোজা ভাংবে না। (ঙ)-রোজা অবস্হায় সিংগা দিলে রোজা ভাংবে না কারন নবী সা: রোজা অবস্হায় সিংগা দিয়েছিলেন।তবে জরুরি না হলে রাতে দিলেই ভাল।(চ)-মহিলাদের মাসিক হলে ও বাচ্চা হলে রোজা ভংগ হয়।অনেক মহিলা হায়েয নেফাস শেষ হওয়ার পরও দীর্ঘ অপেক্ষা করেন।যদি দেখেন নির্দিষ্ট দিনের পূর্বেই রক্তস্রাব বন্ধ হয়েছে তখন পরিস্কার পরিছ্ছন্ন হয়ে নামাজ রোজা পালনে ব্রত হবেন।(ছ)-মাজারে যাওয়া ,শির্ক ও বিদাআত করার মাধ্যমে আমল নষ্ট হয়ে যায়।আর যারা কুফরি করে তারা মুর্তাদ হয়ে যায়।(জ)-যাদের শ্বাস কষ্ট হয় তাদের স্প্রে ব্যাবহার যায়েয।গুল ব্যাবহার করা হারাম।
এ ছাড়াও অনেক ফাহেসা কাজ কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে।রোজা অবস্হায় সব রকম খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকা ও খারাপ চিন্তা থেকে দূরে থাকা,মহিলাদের দিকে দৃষ্টি না দেয়া,পরনিন্দা ও গীবত না করা,রোজাদারকে কটুক্তি করা ইত্যাদি কাজ কর্ম থেকে রোজাদারদের বিরত থাকতে হবে।গুনাহের কাজের মধ্যে এখন মুসলিম সমাজে একশ্রেনীর মানুষ রয়েছে যারা গান বাদ্যের মাধ্যমে বা সিনেমা নাট্যকলার মাধ্যমে নিজেদের প্রগতিশীল বলে দাবি করেন আবার তারা ধর্মীয় কাজও করেন।অনেককে তাহজ্জুদও যাপন করতে শুনি।তাদের উদ্দেশ্যে এ বিষয়টি খোলাসা করতে চাই যে এগুলো সব হারাম কাজ।ইসলামে ভাল মন্দ একসাথে করা যায় না।হারামকে হারাম আর হালালকে হালাল বলে জানতে হবে আর এটা ইবাদাতের শর্ত।ইসলামের দৃষ্টিতে গান-বাদ্য হারাম । কেননা গান-বাদ্য মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত রাখে এবং পাপাচার কাজে প্রেরণা যোগায়। মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘এক শ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্যেশ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং তাকে (কুরআন) নিয়ে ঠাট্রা বিদ্রুপ করে তাদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি’।
(সুরা -লুকমান-০৬)।উক্ত আয়াতে অবান্তর কথা দ্বারা এমন কাজ বুঝানো হয়েছে যা মানুষকে আল্লাহর যিকির থেকে বিরত রাখে। অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামগণের মতানুযায়ী একথার দ্বারা বিশেষভাবে ‘গান’ বুঝানো হয়েছে ।আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন ‘তোমরা ক্রীড়া কৌতুক (গানবাজনা) করছ’-(সুরা নাজম, আয়াত ৬১)। এ আয়াতে ‘সামিদ’ শব্দের অর্থ হল গানবাজনা করা । হযরত ইবনে আব্বাস রা. আয়াতের শেষাংশে ‘সামিদ’ শব্দের ব্যাখ্যা গানবাজনা বলেছেন । আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তুই সত্যচ্যুত করে তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস স্বীয় আওয়ায দ্বারা, স্বীয় অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে তাদের আক্রমণ কর, তাদের অর্থ সম্পদ ও সন্তান সন্ততিতে শরীক হয়ে যা এবং প্রতিশ্রুতি দে। ছলনা ছাড়া শয়তান তাদের কোনো প্রতিশ্রুতি দেয় না’(সুরা বনি ইসরাঈল-৬৪. এ আয়াতের ‘ছাওত’ শব্দের অর্থ আওয়াজ । শয়তানের আওয়াজ কি এসম্পর্কে ইবনে আব্বাস রা. বলেন, গান বাদ্য, যন্ত্র, রং-তামাশার আওয়াজই শয়তানের আওয়াজ। এর মাধ্যমে সে মানুষকে সত্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় ।হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, হযরত রাসুল সা. ইরশাদ করেন,‘গানবাদ্য শ্রবণ করা কবীরা গুণাহ এবং গানের অনুষ্ঠানে বসা ফাসিকী আর এর দ্বারা আন্দন্দানুভব করা কুফরী ।(আবু দাউদ ৬৭৪ )।ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত রাসুল সাঃ বলেন, ‘আমার উম্মতের মাঝে এমন কিছু লোক হবে যারা ব্যাভিচার, রেশম,মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে’ । (ছহি বুখারী )
অনেকে মনে করেন কত পাপ করেছি আল্লাহ কি আমাদের মাপ করবেন? তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আল্লাহ চান এই সব বান্দাহদের যারা গুনাহ করেছে আর তা বুঝতে পেরে তওবা করার মত তওবা করার জন্য তার দরবারে ছুটে এসেছে।পাহাড় পরিমান গুনাহ থাকলেও গুনাহ ছেড়ে দিয়ে আল্লাহ ও রাসূল সা: আনুগত্য করতে থাকলে আল্লাহ নিশ্চয়ই মাপ করবেন।আর এই রমজান মাসই সে সব বান্দাহ এর জন্য উৎকৃষ্ট সময়।মানুষকে কোরআন শিখানো,শরিয়তের বিধিবিধান শিখানো,ভাল কাজের আদেশ ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখার মত কাজগুলো এ রমজান মাসে অনুশীলন করা যায়।আপনার আমার কাজ হলো মানুষের কাছে প্রকৃত দীন পৌঁছে দেয়া এর বেশী নয়।আর তা ভালবাসার মাধ্যমে।কাউকে হেয় করা বা কটাক্ষ করে নয়।সুন্দর আচরনের মাধ্যমে আপনি ছহি যতটুকু জানেন তা প্রচার করুন।ইসলামে কোন বিভক্তি নেই যদিও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইসলামকে বিভক্ত করে মানুষ দ্বীন প্রচার করছে। পুরো মানব জাতি এক উম্মত।ইসলামের বিভক্তি যারা এনেছে তাদের সবাইকে এক হয়ে কুরআন ও সূন্নাহকে আঁকড়ে ধরাই ইসলামের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে হবে।আসুন আমরা সবাই মিলে এই মাহে রমজানের তাৎপর্য অনুধাবন করি ও নিজের আমল আখলাখকে সুন্দর করার চেষ্টা করি।আল্লাহ আমাদের রোজার মাসকে যথাযথ ইবাদাতের মাধ্যমে পালন করার তাওফিক দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
২১৩৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই চিন্তা চেতনাটা যেন আমার এবং আমাদের মধ্যে তৈরি হয়। আগত রমজানের প্রতিটি মূহুর্ত সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন