বাংলাদেশের মহান রাজনীতিবিদরা ভারতের ভাবি প্রধানমন্ত্রী " নরেন্দ্র মোদির" কাছ থেকে দীক্ষা নিন।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২১ মে, ২০১৪, ০৩:০৮:২৪ দুপুর

রাজনীতির মোড়কে বাংলাদেশ-ভারতে যে জমিদারী প্রথা চালু হয়েছে তার অব্যাহতি চায় দেশের মানুষ।ভারতের রাজনীতিতে ও এর পরিবর্তন এসেছে। কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত কোথাও কোথাও সৃষ্টি হচ্ছে ক্ষুদ্র রাজতন্ত্র। নেতার ছেলে-মেয়ে নেতা; জনপ্রতিনিধির ছেলে জনপ্রতিনিধি। সাধারণ মানুষের যেন সেদিকে হাত বাড়াতে মানা। কোনো নেতা মারা গেলে সঙ্গে সঙ্গে তার বিধবা স্ত্রী, পুত্র-কন্যাকে উপনির্বাচনে দাঁড় করে তার স্থান পূরণ করা হয়। দলের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব ওই পরিবারের নিয়ন্ত্রণে থেকে যায়। কেন্দ্র, শেকড় সর্বত্র এ অবস্থা হওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মেধাবী নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না। ভারতের প্রদেশগুলোতে এ রেওয়াজ আরো প্রকট হওয়ায় সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। উচু তলা আর নিচু তলার ব্যবধান প্রকট আকার ধারণ করেছে। গণতন্ত্রের নামে পরিবারতন্ত্রের এই পুরনো রেওয়াজ ভেঙে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। মৃত ব্যক্তির ইমেজকে পুঁজি করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার পুরনো ধারণাও ভেঙে দিয়েছেন। ঘানতি (তেলি) পরিবারে জন্ম নেয়া এবং তৃণমূল থেকে ধাপে ধাপে উঠে আসা মোদি নিজেকেই ‘উন্নয়নের আইডল’ হিসেবে তুলে ধরে নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্বাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। বিজেপির কট্টর সমালোচকেরাও স্বীকার করেন এক সময়ের চা বিক্রেতা মোদি রাজনীতিকে পারিবারিকীকরণ আর মৃত মানুষের ইমেজ বিক্রির পুরনো ধারায় ধাক্কা দিয়েছেন।

২০০২ সালে গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে এক হাজার মুসলমানকে (নারী ও শিশুসহ) হত্যার অভিযোগে সারাবিশ্বে ‘গুজরাটের কসাই’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। অযোধ্যায় বাবরী মসজিদের স্থানে রাম মন্দির নির্মাণের গোঁ ধরায় ভারতীয়দের কাছেই বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে নিন্দিত হয়েছেন। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত মোদি নির্বাচনী প্রচারণায়ও বিজয়ী হতে ভারতের তথাকথিত অভিবাসী মুসলমানদের বাংলাদেশে তাড়িয়ে দেয়ার হুংকার দিয়েছেন। তারপরও ভারতের হিন্দু-মুসলমান ভোটাররা কট্টর হিন্দুত্ববাদী দলের নেতা নরেন্দ্র মোদির ডাকে সাড়া দিয়ে বিজেপিকে বিজয়ী করেছে। অনেকে কংগ্রেসের পারিবারিক রাজনীতির দেউলিয়াপনা, বাংলাদেশ ইস্যুতে দিল্লীর সাউথ ব্লকের অন্যায্য আচরণে নেগেটিভ ভোটও দিয়েছেন। মূলত মোদি ঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে গেছে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ (শুধু সংখ্যালঘু মুসলিম ভোট পেতে কংগ্রেস ধর্মনিরপেক্ষতার জার্সি গায়ে জড়িয়েছে। কট্টর হিন্দু মৌলবাদের কখনোই বিরোধিতা করেনি দলটি) দল হিসেবে পরিচিত কংগ্রেস। মোদির নেতৃত্বে এবং তাকে ব্র্যান্ডিং করে নির্বাচন করেছে বিজেপি। আর কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, আরজেডি, বহুজন সমাজ পার্টি, ওয়াইএসআরসিসি, তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি, তেলেগু দেশম পার্টি, টিডিপি, সমাজবাদী পার্টি ও বামপন্থীরা মিলে নির্বাচনী প্রচারণায় ‘মোদি ঠেকাও’ স্লোগান তুলেছিল। এতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের ১৬তম লোকসভা নির্বাচন হয়ে পড়ে কার্যত মোদি বনাম সমগ্র দল। তারপরও ঠেকানো যায়নি মোদির বিজয়। কলঙ্কিত ইমেজের বিতর্কিত নরেন্দ্র মোদির এই অভাবনীয় সাফল্যের নেপথ্যের রহস্য কী? কী যাদুমন্ত্রে তিনি ভারতীয়দের বশীকরণ করেছেন? এর ভিতরের রহস্য কী? রহস্য কিছুই নয়; নিজের প্রতি প্রবল আস্থাশীলতা, নেতৃত্ব মোড়লিপনা আর রাজনৈতিক দৃঢ়তাই তাকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে গেছে। বিতর্কিত ইমেজের পরও অবিচল নেতৃত্ব, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত, নিজ ধর্মের প্রতি অবিচল আস্থা, আত্মবিশ্বাসী, নিজেকে দুর্নীতি মুক্ত রাখতে পারা, গুজরাটের প্রাদেশিক সরকারের প্রশাসনকে দলীয়করণ মুক্ত রাখা, সাদামাটা জীবন-যাপনের পাশাপাশি পরিবার, আত্মীয়-স্বজনদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখা এবং অনৈতিক সুবিধা না দেয়া, সর্বোপরি নিখাদ দেশপ্রেম তাকে এ অবস্থায় এনেছে। একদা গুজরাটের কসাই নরেন্দ্র মোদি দলের জাঁদরেল নেতা লালকৃষ্ণ আদবানী, রাজনাথ সিং, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলি, নিতিন গডকড়ীকে পিছনে ফেলে সাড়ে ৮১ কোটি ভোটারের দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। যাদের কাছে তিনি রাজনীতি শিখেছেন তারাই এখন তাকে নেতা মেনে গর্ববোধ করেন; সংবাদ সম্মেলনে তার পাশে বসতে পারলে ধন্য হন। চা বিক্রেতা থেকে হিন্দু মহাসভা, আরএসএস হয়ে বিজেপির রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া মোদির নেতৃত্বর দৃঢ়তা, নির্লোভ মানসিকতা আর দেশপ্রেম দেখে আমাদের নেতানেত্রীদের শেখার আছে অনেক কিছু। মোদি পরিবার আর বাংলাদেশের যে কোনো একজন এমপি বা উপজেলা চেয়ারম্যানের পরিবারের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের চর্চার অবস্থা কোন পর্যায়ে গেছে।

গণতন্ত্রের নামে সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন আমাদের নেতানেত্রীরা। স্বাধীনতার ৪৩ বছরে যারাই ক্ষমতায় গেছেন তারাই রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে অঙ্গ সংগঠনে পরিণত করেছেন এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাড়ির চাকর-বাকর বানিয়ে ফেলেছেন। যার করুণ পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে দেশের মানুষকে। আর ভারতের কংগ্রেসের উত্তরাধিকার আর সুবিধাবাদিতা রাজনীতির জবাব ভারতের জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে দিলেও বাংলাদেশের জনগণ কেন সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সে ‘কেনোর’ উত্তর কান পাতলেই শোনা যায়।যতদূর জানা যায়, কিশোর বয়সেই নরেন্দ্র মোদি হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘে যোগ দেয়ার পর বাড়ি ছাড়েন। ১৮ বছর বয়সে ১৫ বছর বয়সী যশোদাবেনকে বিয়ে করেন। স্ত্রী যশোদাবেন শিক্ষকতা করে সংসার চালিয়েছেন। অবসরপ্রাপ্ত এই স্কুল শিক্ষিকা গুজরাটের তিনবার নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী হওয়ার পরও সাদাসিধে জীবন-যাপন করেছেন। নির্বাচনের সময় নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণের চেয়ে তিনি ধর্মীয় উপাসনালয়ে স্বামীর বিজয় চেয়ে প্রার্থনার পথ বেছে নেন। মোদির মা হীরাবেন সাদাসিধে জীবন-যাপন করেন। ভাই প্রহ্লাদ জুতা-টায়ারের দোকান করেন। গুজরাটের তিন বারের মুখ্যমন্ত্রীর ভাই জুতা-টায়ারের দোকান করবেন বাংলাদেশে এটা ভাবা যায়? বাংলাদেশে একবার কেউ এমপি বা মন্ত্রী হলে তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজনদের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। অন্যকিছু করতে না পারলেও কন্ট্রাক্টরী করে পকেট ভারী করেন। নেতানেত্রীরা দেশ সেবার নামে করেন পরিবার সেবা, জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনের বদলে করেন নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন। দলের ক্ষেত্রে অবস্থা আরো ভয়াবহ। কোনো এমপি নিহত হলে দলীয় নমিনেশন পেয়ে যান হয় তার স্ত্রী অথবা ছেলেমেয়ে। নিদেন পক্ষে সেটা সম্ভব না হলে নিহত নেতার ভাইকে দলীয় নমিনেশন দেয়া হয়। দলের অন্য যোগ্য নেতাদের কথা চিন্তাও করা হয় না বড় দলগুলোতে। একজন এমপি বা মন্ত্রী হলে পরিবারের সবার ভাগ্য খুলে যায়। রাজনীতি পুঁজিবিহীন ব্যবসা। রাতারাতি হয়ে যান তারা কোটিপতি। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদ ২/৪ বছরে একশ’-দেড়শ’গুণ বৃদ্ধি পেলে বড়াই করে প্রচার করেন ‘ক্ষমতায় থাকলে সম্পদ বাড়তেই পারে’ ছ' কোটি কেন ছ'শ কোটি করতে পারতান। পরিবারের একজন এমপি-মন্ত্রী হলেই খুলে যায় ভাগ্যের চাকা। বাড়তেই থাকে সম্পদ আর জীবন-যাপনে আসে বাহারী পরিবর্তন। নেতৃত্বও পারিবারিক সম্পত্তির মতো ভাগ-বাটোয়ারা হয়। রাজনীতির নামে স্বামী-স্ত্রী দু’জনই এমপি বা একজন এমপি, একজন মন্ত্রী, দুই ভাই এমপি, শালা, চাচাতো-মামাতো ভাই এমপি-মন্ত্রী এবং উপজেলা চেয়ারম্যান তারাই হন। দলের অন্য নেতাদের সেদিকে তাকাতেই দেয়া হয় না। অথচ মোদি পরিবারের দিকে তাকিয়ে দেখুন?

গুজরাটের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়েও ভাইকে জুতার দোকান থেকে তুলে এনে এমপি-মন্ত্রী করেননি।

মোদির নামে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে বিজেপি ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। ভোটারদের মন জয় করতে কঠোর হিন্দুত্ববাদী ভাষণও দিয়েছেন। নির্বাচনের পর প্রথম বক্তৃতায় মোদি বলেছেন, এ বিজয় ব্যক্তি বা দলের নয়; এ বিজয় ভারতবর্ষের মানুষের। অথচ বাংলাদেশে কোনো দল নির্বাচনে বিজয়ী হলে প্রচার করা হয় ‘আমিই সেরা’। মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মোদি শিল্পপতিদের দিয়ে গুজরাটে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠা করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। ভারতের আর দশটা প্রদেশের থেকে অর্থনৈতিকভাবে গুজরাটকে এগিয়ে নিয়েছেন। নির্বাচনের সময় ভোটারদের ভোলাতে কংগ্রেস প্রচার করছেন নরেন্দ্র মোদি কর্পোরেট হাউজগুলোর স্বার্থ দেখেন। তিনি ওপরতলার মানুষের নেতা। তারাই অর্থ ব্যয় করে মোদিকে বিজয়ী করেছে। গণতান্ত্রিক দেশে বুর্জোয়া সমাজ ব্যবস্থায় শিল্পপতিদের স্বার্থ দেখা অন্যায় কিছু নয়। যে শিল্পপতি বিদেশে টাকা পাচারের বদলে দেশে শিল্প স্থাপন করে নিজে লাভ করেন এবং বেকারদের কর্মসংস্থান করে থাকেন তাদের স্বার্থ দেখা নৈতিক দায়িত্ব সরকারের। বাংলাদেশের কিছু ব্যবসায়ী, রাজনীতিক দুর্নীতি করে ও শিল্পপতি বৈধ, অবৈধ পথে অর্থ উপার্জন করে বিদেশে টাকা পাচার করে। তাদের সঙ্গে গুজরাটের শিল্পপতিদের তুলনা করা কি যুক্তিসঙ্গত?

বাংলাদেশ ও ভারতীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে রাজনীতিকরা ক্ষমতায় গেলে তাদের নিজের পরিবার আর নিজের লোকজনকে সবার আগে দেখেন। কংগ্রেস সেটা করেছে বাংলাদেশের দলগুলোতেও তাই হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদি সেই প্রথা ভেঙেছেন। তার পরিবারের সদস্যদের ব্যবসা ও জীবন-যাপনের চিত্র এবং মায়ের যে ছবি মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে সেটা দেখলেই সহজেই বোঝা যায় কত সাদামাটা জীবন-যাপন করেন। দেশ সেবার নামে তিনি পরিবার আত্মীয়-স্বজনদের হাতে ‘আলাউদ্দিনের চেরাগ’ তুলে দেননি। মা-ভাইকে প্রাসাদে নেননি এবং তাদের ভোগবিলাসে প্রাসাদ বানিয়ে দেননি। তার মানে কি অর্থ-সম্পদ থাকার পরও মোদি বাংলাদেশের বনখেকো ওসমান গনির মতো জন্মদাতা মাকে অবজ্ঞা করেছেন? ভাইকে ফেলে দিয়ে শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে কোটিপতি বানিয়েছেন? মোটেও না। নির্বাচনে বিজয়ের খবর শোনার পর মায়ের কাছে ছুটে গিয়ে দোয়া নেয়ার ঘটনাই বলে দেয় মোদি মাকে কত ভালবাসেন শ্রদ্ধা করেন। নিজ ধর্মের প্রতি অনুরক্ত থাকায় তিনি বিজয়ের পর মন্দিরে গিয়ে পূজাও করেছেন। তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি (প্রকৃত অর্থে পশুপাখি ধর্মনিরপেক্ষ হলেও মানুষ কখনো ধর্ম নিরপেক্ষ হতে পারে না। মানুষ কোনো না কোনো ধর্মের অনুসারী) মোদিকে হিন্দু মৌলবাদী বলে গালি দেন। যার যে ধর্মই হোক ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা কি অপরাধ? মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলে মুসলমানদের কচুকাটা করবে বলে নির্বাচনের সময় কংগ্রেসসহ অন্যান্যরা জিকির তুলেছিল। অথচ বিজেপি বিজয়ী হলে অভিবাসী মুসলমানদের ফেরত পাঠানো হবে ঘোষণা দেয়ার পরও হিন্দু-মুসলমান মিলে ভোট দিয়েছে মোদিকে। কংগ্রেসের অর্থনৈতিক শোষণ, দুর্নীতি, প্রতিবেশী দেশের জনগণের ভোটের অধিকারের সঙ্গে আনাড়িপনা আচরণ তাদের ডুবিয়েছে। এ প্রসঙ্গে আহমেদাবাদ শহরের জুতা-টায়ারের দোকানদার মোদির ভাই প্রহ্লাদ মোদি বিবিসির এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, তাঁকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। নরেন্দ্র ভাই যখন ছোট ছিলেন, তখন তিনি গুজরাটে মুসলিমদের সঙ্গে এক সাথে খেলতেন। তার বিরুদ্ধে কংগ্রেস অপপ্রচার করছে। প্রশ্ন হলো কংগ্রেসের শাসনামলে ভারতের মুসলমান ও সীমান্তের মানুষ কি ভাল আছে?

ব্যবসায়ী আর এলিট শ্রেণীর সঙ্গে মোদির দহরম-মহরম হলেও নিজেকে চা বিক্রেতা বলে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করেন না। বরং নিম্নবর্নে জন্ম নেয়ার কথা তিনি অবলিলায় বলে দেন। তিন দফায় মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পরও প্রশাসনকে ‘কব্জাবন্দী’ করেননি। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীকে খেয়ালখুশি মতো ব্যবহার করেননি। অথচ বাংলাদেশের অবস্থা? স্বাধীনতার পর থেকে প্রশাসনকে দলীয়করণ এমনভাবে করা হয়েছে যে এখন যারা ক্ষমতায় যায় তাদের বাইরের মতের কেউ স্বাভাবিকভাবে চাকরি-বাকরি করতে পারেন না। যোগ্যতা নয়, প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের প্রমোশন হয় দলীয় পরিচয়ে। প্রশাসনকে ইচ্ছামত ব্যবহার করা এবং যোগ্যতার বদলে আত্মীয়তা, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে প্রমোশন, পদায়নের কারণে গতিহীন হয়ে পড়েছে প্রশাসন ব্যবস্থা। যার কারণে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় মেডিকেলে পড়ে ডাক্তার হওয়া ডাক্তাররা মানুষের চিকিৎসা না করার হুমকি দেয়ার ধৃষ্টতা দেখায়। সরকারি দল ও মন্ত্রী এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়তি সুবিধা, প্রমোশন, পদায়ন এবং যোগ্যতার চেয়ে অধিক দায়িত্ব দেয়ায় এবং সুবিধামতো ব্যবহার করায় প্রশাসনের প্রতি মানুষ বিশ্বাস হারাচ্ছে। তার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ একজন মন্ত্রীর জামাতাকে র‌্যাবের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসানোর পর তার বিরুদ্ধে সিরিয়াল কিলার হয়ে ওঠার অভিযোগ, ভাড়াটে হিসেবে গুম-খুনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা রোজগার এবং নারায়ণগঞ্জের লোমহর্ষক সেভেন মার্ডারের সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে যাওয়া। ২০০৪ সালে গঠনের পর র‌্যাবের অনেক সাফল্য থাকলেও এখন সর্বত্র ওই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়ার দাবি উঠেছে। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী অপরাধী যেই হোক তার শাস্তি হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা দেয়ার পরও প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার হচ্ছে না।সমাজে বছরের পর বছর গুম খুন হচ্ছে কোন কিছুরই সুরাহা হচ্ছে না।আসামিরা চিহ্নিত হলেও পালিয়ে যাচ্ছে রাতারাতি। তাহলে জনমনে প্রশ্ন থেকেই যায় এদেশে আইন শৃংখলা বাহিনি থেকেই বা লাভ কি? প্রধান মন্ত্রী একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী।তিনি যদি আইনের শাসন বাস্তবায়ন করার জন্য বদ্ধপরিকর হন এবং সত্যিই নির্দেশ দেন সমাজ থেকে এই অস্হিরতা অল্প সময়ে দূর হতে পারে।পুলিশ ও র‍্যাব জানে কোন এলাকায় কারা ক্রিমিনাল ও মাস্তান।যদি তাদের ধরা হতো ও বিচারের আওতায় আনা হতো তাহলে আপরাধ কমে যেত। আমরা যারা পুলিশ ও র‍্যাব সহ অন্যান্য আইন শৃংখলা বাহিনীকে ঢালাওভাবে দোষারোপ করি তা কি ঠিক? তারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে পার্লামেন্ট মেম্বারদের দ্বারা।কোন আপরাধি ধরা হলে দলীয় ভিত্তিতে তাদের ছড়িয়ে নেয়া হয়।আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দলীয় কাজ করছে এই সমস্ত মাস্তানদের হাত করে। যে বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো আমাদের মিডিয়া জাতির নিকট তুলে ধরছে তার বিচার হচ্ছে না।যে দেশে আইনের শাসন নেই সে দেশে অপরাধি ধরা পড়লেও কোন লাভ নেই।আর শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রিকেই ভাল হলে চলবে না,পুরো কেবিনেট যদি সৎ ও নিষ্ঠাবান না হন তাহলে জাতি কখনো আশার আলো দেখবে না। মোদি কে গুজরাটের কসাই বলা হলেও জাতির সামনে তার যোগ্যতার মাপকাঠি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তার কাজের দ্বারা। আমরা ধন্যবাদ জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে তবে বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হলে তিনি অভিনন্দন পাবেন।

ভারতের নির্বাচনের পর নরেন্দ্র বিজেপি বিজয়ী হওয়ায় হৈচৈ শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন, নরেন্দ্র মোদি আরএসএসের সদস্য। গোড়া হিন্দু হিসেবে তারা মুসলমানদের ওপর জুলুম নির্যাতন করবে। কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকায় বাংলাদেশ আর ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বের যে সম্পর্ক ছিল তাতে চিড় ধরবে। পানি চুক্তি হবে না, সীমান্তে হত্যাকান্ড বাড়বে ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রশ্ন হলো কংগ্রেসের ক্ষমতায় থাকার সময় মুসলমানদের ওপর আক্রমণ হয়নি? নির্যাতিত হয়নি সংখ্যালঘুরা? নির্বাচন চলার সময়ও আসামে দুই দিন তিন দফায় মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ এবং বাড়িতে অগ্নিসংযোগে ২২ জন মুসলমান প্রাণ হারিয়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণের বিরুদ্ধে কংগ্রেস কি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে? সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও তিস্তা চুক্তি কী কংগ্রেস করেছে? কংগ্রেস শুধু নিয়েছে বাংলাদেশকে ৫ বছরে কি দিয়েছে? ’৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের তিন দফায় চুক্তি হয়েছে। এসব চুক্তি করেছে অকংগ্রেস সরকার। মোরারজি দেশাই, দেবগৌড়া ও আই কে গুজরালের শাসনামলে দু’দেশের মধ্যে এসব চুক্তি হয়েছে। মোদির যারা সমালোচনা করছেন তারা কী চিন্তা করে দেখেছেন তার মতো শেকড় থেকে শিখরে উঠে আসা নেতা বাংলাদেশ আর ভারতে কতজন রয়েছেন? যিনি ক্ষমতায় থাকার পরও পরিবারের সদস্যদের কোনো সুযোগ সুবিধা দেন না। বাংলাদেশে কি এমন নেতা খুঁজে পাওয়া যাবে? গুজরাটের এক রেল স্টেশনে চা বিক্রেতা দামোদারদাস মুলচাঁদ মোদির ছেলে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় গিয়ে পরিবারকে দূরে রেখে জনগণের সেবা করার যে নজির রেখেছেন সে ধরনের নজির কি আমাদের নেতানেত্রীরা দেখাতে পারবেন? নাকি সোনিয়া গান্ধির কংগ্রেসের মতো দলকে পরিবারিকীকরণ আর আত্মীয়-স্বজনকরণের মধ্যে সীমাবন্ধ রাখবেন? নির্বাচনে পরাজয়ের ব্যর্থতার দায় নিয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, পদত্যাগের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার পদত্যাগ করেছেন। সোনিয়া-রাহুলও পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশে এমন নজির রয়েছে? কোরিয়ায় ফেরি দুর্ঘটনায় লোক মারা যাওয়ায় ব্যর্থতার দায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন। অথচ বাংলাদেশে নৌ দুর্ঘটনায় মানুষ মারা গেলে মন্ত্রী বলেন, আমি কি লঞ্চ চালিয়েছি?

আমাদের প্রত্যাশা থাকবে " সবার সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে শক্রুতা নয়"। ভারতের সরকার পরিবর্তনের সাথে তাদের বৈদেশিক সম্পর্কের পরিবর্তন হবে বলে আমাদের দেশে যারা নেচে বেড়াচ্ছেন তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন।নির্বাচনী প্রচারকালেই বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে কড়া অবস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ভারতের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার গঠনের আগেই বিষয়গুলো নিয়ে নড়াচড়া শুরু করেছেন তিনি। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নতুন দপ্তর চালুর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করার একটি তালিকা রয়েছে হবু এই প্রধানমন্ত্রীর। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন সংশোধনসহ এই তালিকার ওপরের দিকেই রয়েছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ইস্যুটি। ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে’ এ দপ্তর চালু করতে চান মোদি। আমাদের নেতাদের এখন থেকে শিক্ষা নিতে হবে নিজেদের সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব দেয়ার।এটা যে রাতারাতি করতে পারবেন তা নয়। আপনাদের শুরু করতে হবে শেষ হতে মোদির মতই দীর্ঘ সময় লাগবে।অনৈতিকতা ও রাতরাতি যদি বড় হওয়ার স্বপ্ন থাকে তাহলে কস্মিনকালেও জাতিকে ভাল কিছু উপহার দেয়া যাবেনা।বছরের পর বছর জাতীয় স্বার্থবিরোধী কাজ করা হবে আর টক শোতে কথার ফুল ঝুড়ি ফোটাতে ও নিত্যদিনে মিডিয়ার সামনে মিথ্যাচার করার মধ্যে যদি নেতারা ব্যাস্ত থাকেন তাহলে আরো ৪৩ বছরেও একই অবস্হাই বিরাজ করবে- এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।

বিষয়: বিবিধ

১৭২৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

224161
২১ মে ২০১৪ দুপুর ০৩:১৮
ভিশু লিখেছেন : ক্ষমতা কুক্ষিগতকারী আওয়ামী লীগের কাছে ভারতের সবকিছু ভালো লাগ্লেও ক্ষমতার পালাবদল ভালো লাগেনা কেন?! এরা আসলে সুযোগসন্ধানী, একাট্টা লোভী, মানুষ শোষণকারী, চেতনার ব্যবসায়ী, আদর্শহীন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File