বোরখার অন্তরালে - মহুয়ার বর্নাঢ্য জীবন।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২০ মে, ২০১৪, ০৯:৪৭:৩৯ রাত
চার বোন একভাই ও বাবা মা নিয়ে মহুয়ার পরিবার।মহুয়া পরিবারে সবার ছোট।বাবা মা দু'জনই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।বড় দু' বোন ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে একজন প্রভাষক ও একজন বিসিএস আডমিন এ জয়েন করেছে।এক বোন ইংরেজি সাহিত্যে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী।আর একমাত্র ভাইটি পলিটিকেল সাইন্সে শেষ বর্ষ অতিক্রম করছে।মহুয়া সবেমাত্র মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে।বাবা মা আধুনিক জীবনের ধাঁছের মানুষ।ধর্ম কর্মে তেমন না হলেও সামাজিকভাবে উদার মানুষদের অন্যতম।মহুয়া পড়ালেখা করেছে দেশের নামকরা স্কুলে।ছোট বেলা থেকেই টেলেন্টেড।বই নিয়ে পড়ে থাকার মত মেয়ে।তবে একটি বিশেষত্ব, তার পথে পরিবারের কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।বাবা মা তার স্বাধীনতায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় নি কারন সে সব সময় ভাল রেজাল্ট করে আসছে।ছোট বেলা থেকে তার এক বান্ধবির সাথে তার সখ্যতা হয়ে যায়।তার বান্ধবি নাছিমা তার মত ভাল রেজাল্ট না করলেও সে ছিল চরিত্র মাধুর্যে উন্নত আর তার সাথে সে বোরখা পরে আসতো।একদিন মহুয়া তার বান্ধবিকে জিজ্গেস করলো আচ্ছা বলতো, তোমার বোরখা পরে কষ্ট হয় না? নাছিমা নি:সন্কোচে উত্তর দিল বা রে! এতে কষ্ট হবে কেন? আমারা তো মুসলিম ঘরে জন্মেছি।এটাই আমাদের আদর্শ।মেয়েরা পর্দার অন্তরালে থাকলে কেউ দেখতে পায় না।কোন বখাটে উপদ্রব করতে পারে না।দেখনা, একটি নামিদামি মিষ্টির দোকানে ভাল মিষ্টি যদি ঢেকে না রাখা হয় আর সেখানে মাছি ও পোকা মাকড় ভন ভন করতে থাকে, সে দোকান থেকে কেউ মিষ্টি কিনবে? মহুয়া বললো,বেশ উদাহরন দিলে তো? সত্যিই তো ঠিক কথা বলছো।এই যে আমাদের ক্যাম্পাসে অনেক কে পোশাক পরেও মনে হচ্ছে উলংগ।আর ঘুরে বেড়াচ্ছে বন্ধুদের সাথে।আমি অনেক সময় দেখে লজ্জা পাই।মহুয়া বললো আচ্ছা নাছিমা, তুমি তো ইসলামি পরিবারে বেড়ে উঠেছ এটা তোমার জন্য অনেক সহজ।আমি এ ব্যাপারে কি করতে পারি? নাছিমা বললো শোন মহুয়া, আমি যখন বড় হতে থাকলাম,আমার আম্মু আমাকে বললো, মা তুমি এখন বড় হচ্ছ আল্লাহকে ভয় করতে শিখবে,আল্লাহ ও রাসূলের উপর সঠিক ঈমান নিয়ে আসবে। পর্দা করতে শিখবে।আমি মাকে জিজ্গেস করলাম, মা পর্দা কি?মা বললেন,আসল পর্দা হলো নিজের মনকে আল্লাহর বিধি নিষেধের কাছে সমর্পন করা আর তার সাথে শালীন পোষাক ও বোরখা পরা যাতে তোমার রুপ সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়ে না পড়ে।তুমি যখন পর্দায় থাকবে তোমা থেকে সুঘ্রান বেরোবে।তোমাকে দেখে অন্যরা অনুপ্রানিত হবে।মহুয়া কথাগুলো শুনে অনুপ্রানিত হলো ও ছুটির পর নিত্যদিনের মত বাসায় চলে গেল।
বিকেলে যখন মা ও বড়বোনরা সহ চা চক্রে বসলো, মহুয়া বললো মা, আমরাতো মুসলিম তাই না? মা বললেন অবশ্যই, কিন্তু মহুয়া এ প্রশ্ন কেন? মহুয়া বললো একজন মুসলিম হলে তো আমাদের ঈমান এনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে যা আমরা নিয়মিত পড়ি না।পর্দা করতে হবে আল্লাহর বিধি নিষেধ মেনে।মহুয়ার কথা না থামতেই বড় বোন বললো,একটু বড় হয়েই মুসলিম হওয়া শিখেছ? আমরা বাবা মাকে মেনে চলছি না? মা অধ্যাপিকা ও তিনি কারনটা বুঝতে পারলেন এবং সে কারনে মহুয়াকে সাপোর্ট করলেন।মা বললেন আচ্ছা মহুয়া, তুমি এখন কি করতে চাও? মহুয়া বললো, মা আমাকে একটি বোরখা কিনে দাও।এখন থেকে আমি বোরখা পরে স্কুলে যাব তাছাড়া আমি বড় হয়েছি না? এদিকে বড় বোনরা রেগে উঠে চলে গেল।মা রাতে বাবার সাথে পরামর্শ করলেন।বাবা বললেন তাতে কি হয়েছে কিনে দাও না।আর সেতো আমাদের অনুগত ও পড়াশুনায় ভাল।তোমরা ওর বিরোধিতা করলে সে মানুষিক দিক থেকে ভেংগে পড়বে।এতে করে পড়াশুনায় ব্যাঘাত ঘটবে। মা সপ্তাহের শেষে মার্কেটে গিয়ে একটি বোরখা কিনে আনলেন। সপ্তাহের প্রথম দিন বোরখা পরে স্কুলে ঢুকতেই বন্ধুরা তাকে চিনে ফেলে টিটকারি করতে লাগলো যেভাবে নাছিমাকে অন্যরা টিটকারি করতো।কিন্তু মহুয়া এগুলো কর্নপাত না করে তার অধ্যয়নে আরো মনোনিবেশ করলো।প্রতিটি পরীক্ষায় আরো ভাল রেজাল্ট করতে থাকলো।এসএসসি ও এইসএসসি তে অত্যন্ত ভাল রেজাল্ট করলো।মহুয়া এবার মাকে বললো,মা তুমি বোরখা পরা শুরু কর না।মা,বললেন আমাকে সভা সেমিনারে যেতে হয় তাছাড়া তোমার বাবার অনুমতির ও তো দরকার আছে।মহুয়া বললো আমি বাবাকে বিষয়টি বলবো যদি তোমার আপত্তি না থাকে।এর মধ্যে মহুয়া নিজের জমানো টাকা থেকে এবার নিজেই মার্কেটে তার বান্ধবির সাথে গিয়ে মা ও তিন বোনের জন্য চারটি বোরখা কিনে নিয়ে আসলো।মাকে আয়নার কাছে ডেকে নিয়ে বললো, মা পরতো দেখি বোরখাটি।একে তো ছোট মেয়ে তার উপর অনুনয় বিনয় করে ধরেছে। মা পরলেন ও মহুয়া বললো , মা তোমাকে চমৎকার মানাচ্ছে।এদিকে মহুয়া বাবাকে ডেকে নিয়ে আসলো।বাবা দেখে বললেন,বেশ সুন্দর! তবে এবার তোমার জীবন সংকীর্ন করে ফেললে।মা বললো বা রে! বোরখা পরলে বুঝি জীবন সংকীর্ন হয়? শুন, বোরখা পরতে আমার মন চাইতো কিন্তু তুমি কি মনে কর সে জন্য আমি বলিনি।এতদিন আমি মানুষকে ভয় করেছিলাম এবার আমার মেয়ের কাছ থেকে শিখলাম আমাদের আল্লাহকে ভয় করা উচিত।
এবার মা তিন বোনকে ডাকলেন।এক বোন ছাড়া বাকি দু'জন পরতে নারাজ হলো।বড় দু'বোন বললো এতকালের একটা সুন্দর জীবন মহুয়ার কথায় আমরা মেনে নিতে পারছিনা।কারন হলো ওরা জড়িয়ে পড়েছে ওদের পছন্দের ছেলের সাথে যারা ইসলামের এই রীতি নীতি পছন্দ করে না।যদিও ওরা বাবার সাথে এ নিয়ে কথা বলে না তবে মাকে জানিয়ে দিল তোমরা আমাদের দূর করে দিচ্ছ।মা বললেন দেখ- আমি তোমাদের মা।মহুয়া যেদিন বোরখা পরা শুরু করলো তার পর থেকে আমি পর্দার উপর পড়াশুনা করেছি।কুরআনের আয়াতগুলো পড়েছি।আমরা মুসলমান হলে তো আমাদের নবীজি ও তাঁর স্ত্রীদের আদর্শই মেনে নিতে হবে।পর্দার অনুসরনই করতে হবে। শুন আমার প্রিয়রা-সূরা নুরের ২১ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা সয়তানের পদান্ক অনুসরন করো না।আর যে কেউ সয়তানের পদান্ক অনুসরন করে,সে তো তবে অশ্লীলতা ও মন্দ কাজের নির্দেশ দেয়।' শুধু তা-ই নয় এই সূরার ২৭-৩১ আয়াতে আল্লাহ আরো বলেছেন,' ওহে যারা ঈমান এনেছ! নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্য গৃহে প্রবেশ করোনা যতক্ষন না তোমরা অনুমতি নিয়েছ ও তাদের বাসিন্দাদের সালাম করেছ।কিন্তু যদি তোমরা সেখানে কাউকে না পাও তবে তাতে প্রবেশ করোনা যতক্ষন না তোমাদের অনুমতি দেয়া না হয়।আর যদি তোমাদের বলা হয় ফিরে যাও তবে তোমরা ফিরে যাবে-এটাই তোমাদের জন্য উত্তম।তোমাদের প্রতি অপরাধ হবে না যদি এমন ঘরে তোমরা প্রবেশ কর যেখানে কোন বাসিন্দা থাকে না।মুমিন পুরুষদের বল তারা তাদের দৃষ্টি অবনত করুক এবং তাদের আংগিক কর্তব্যাবলির হেফাযত করুক, মুমিন নারিদের ও বল যেন তারা তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে ও তাদের আংগিক কর্তব্যাবলির হেফাযত করুক আর তাদের অংগশোভা যেন প্রদর্শন না করে।' মায়ের কথাগুলো শুনে এবার অন্য মেয়েরা লুটিয়ে পড়লো ও বললো মা,আমরা অনেক ভুল করেছি।আমাদের ইসলামের কাছে ফিরে যেতে হবে।বড় বোনরা সবাই বোরখা পরা শুরু করলে তাদের বন্ধুরা সরে পড়লো তাদের জীবন থেকে।ইসলামের অনুসরনের কারনে বাবা মা'র বন্ধুরাও তাদের অনেকটা দূরত্বে নিক্ষেপ করলো কিন্তু তাতে তাদের মনকষ্টের কোন কারন রইলোনা।কারন তারা বুঝতে পারলো পিছনের দিনগুলো ছিল নিতান্তই অপরাধের, সেজন্য আল্লাহর কাছে তারা ইস্তেগফার করা শুরু করে নতুন জীবন শুরু করলো।আল্লাহর ইচ্ছায় বড় দু'বোনের বিয়ের প্রস্তাব আসলো যারা ইতিমধ্যে তাদের ভালবেসেছিল।ধুম ধামে মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেল।মেঝো মেয়ে আবার কমনোয়েল্থ স্কলারশিপ নিয়ে বাইরে চলে গেল।
মহুয়া মেডিকেলের শেষ বর্ষে পদার্পন করলো।এবার তার জন্য একটা প্রস্তাব আসলো যে পরিবার নাকি তার জন্য কয়েক বছর অপেক্ষা করে আছে।ছেলে বিলেত ফেরত একজন ডাক্তার।হঠাৎ কথাটি শুনে থমকে গেল মহুয়া! মা বললেন আমরা ছেলেটিকে দেখেছি।তা ছাড়া ছেলের পিতা তোমার বাবার একজন বন্ধু।মহুয়া বললো ছেলে কি জানে আমি বোরখা পরি।বললো সব জানে আর ছেলেটি কোরানে হাফেয হওয়ার পরই স্কুল , কলেজ ও মেডিকেল অতিক্রম করেছে।ইতিমধ্যে ছেলের মা মেডিকেলে মহুয়াকে দূর থেকে দেখে এসে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাসায় এসে রিং পরিয়ে দিয়েছে।কথা পাকাপাকি হলো তবে মহুয়ার পরিবার থেকে বলা হলো মহুয়ার ফাইনাল হওয়ার পরেই বিয়ে হবে।এক বছর পর মহুয়ার বিয়ে হলো ধুমধামে। ছ'মাসের মাথায় ওরা স্বামী-স্ত্রী উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ চলে গেল।বিদেশে চলে গেলেও মহুয়ার বোরখার অন্তরাল থেকে সুঘ্রান বইতে শুরু করলো।তার অনেক বান্ধবি যারা বোরখা পরতো না তারা তাকে অনুসরন করে বোরখার অন্তরালে নিজেদের সমর্পন করে নিল।আর মহুয়ার জীবন আরো বর্নাঢ্য জীবনের দিকে পদার্পন করলো---
বিষয়: বিবিধ
৩৩৭৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন