আপনি যদি জীবন সঙ্গী হারিয়ে ফেলেন কি করবেন?
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৫ মে, ২০১৪, ০১:২৮:৪৯ দুপুর
মানুষের একটি জীবন আছে আর তা আল্লাহ নির্ধারিত করে রেখেছেন।কে কতদিন বাঁচবে , কার জীবনের অবস্হান কি হবে এ সব আল্লাহই ভাল জানেন।আল্লাহ অতীত , বর্তমান ও ভবিষ্যত সবকিছুই জানেন।শুধু মানুষকে পাঠিয়েছেন যেন তাদের কর্মের বিচার করতে পারেন।আল্লাহ জানেন কে জান্নাতে বা জাহান্নামে যাবে।তিনি আমাদের জান্নাতে বা জাহান্নামে প্রবেশ করিয়ে দিতে পারতেন।কিন্তু তিনি শ্রেষ্ঠ বিচারক।আমাদের বিরুদ্ধে যুক্তি ছাড়াই কিছু করে ফেলেন না।জান্নাতিদের যদি জান্নাতে রাখা হতো তাহলে তারা আরাম আয়েশের কারনে কিছুই বলতোনা। কিন্তু জাহান্নামিরা বলতো আল্লাহ আমরা দুনিয়াতে ভাল কাজ করতাম।এই একটি কারনে তিনি মানুষকে দুনিয়ায় পাঠালেন যেন আখেরাতে কেউ অভিযোগ করতে না পারে।তারা তাদের কর্মের লিখিত বই-এ চুলচেরা সব দেখতে পাবে।
আমাদের প্রত্যেকের এই জীবন আনন্দ এবং দু:খের।এখানে চরম আনন্দ যেমন নেই তেমনি চরম দু:খ ও নেই।এই দুটোর মাঝামাঝি অবস্হায় আমাদের দুনিয়ার জীবন শেষ করতে হয়।স্বাভাবিকভাবে প্রতিটি দাম্পত্য জীবনই আনন্দের সাথেই শুরু হয়।কিছুদিন যেতে না যেতে কিছু জীবনে মেঘের ঘন ঘটা শুরু হয়ে যায়।কারো অকাল মৃত্যু,কারো বিচ্ছেদ আবার কেউ মধ্য বয়সে জীবন সঙ্গী হারিয়ে ফেলেন। এ অবস্হায় অনেকের জীবনে নেমে আসে চরম অশান্তি ও সংসারে ভাংগন।অধিকাংশ ক্ষেত্রে একজন মহিলাকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় তার সন্তানদের নিয়ে।উপার্জনক্ষম মানুষটি চলে যাওয়ায় আকাশ ভেংগে পড়ে মাথার উপর।যদি স্বামি বিষয় সম্পত্তি রেখে যান তাহলে কোনভাবে ব্যাবস্হা করে নিতে পারেন।আবার বিধবা হওয়ার কারনে স্বামীর আপনজনদের নিগ্রহ অনেকের জীবনকে আরো অতিষ্ঠ করে তোলে।অনেক পরিবারে দেরি না করে তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।আমাদের দেশ বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশের মেয়েরা অবলা ও কম শিক্ষিত বিধায় তারা অনেক সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন।বাল্য বিবাহ,শিক্ষিত না করা,মেয়েদের বোঝা মনে করার কারনে বাবা মা তাদের বিয়ে দিয়ে বাঁচতে চান। বিশেষ করে এরাই ক্ষতিগ্রস্ত হন বেশি।
সমাজ বিশ্লেষন করলে ও আমাদের চারপাশ দেখলে এ রকম অনেক ঘটনা চোখে ভেসে উঠে।একাকিত্ত ও জীবনের সাথে বুঝাপড়া করে জীবনের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে দেখা যায়।অনেক পরিবারে পাত্র পাত্রির ইচ্ছে না থাকলেও বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়।সেখানেও এ রকম অনেক অঘঠন ঘটে।যখন একজন তার স্বামি হারিয়ে ফেলেন তখন ইসলামিক রীতি অনুযায়ি তাকে চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করতে হয়। এটা তার শোকের সময়।এই শোক পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠার আগে অল্প বয়সী মেয়েটিকে মুখোমুখি হতে হয় কঠিন বাস্তবের৷ সামাজিক ও মানসিক চাপে কেউ কেউ বিপর্যস্ত হন৷ তবু জীবন থেমে থাকে না৷ এগিয়ে যেতে হয় সামনের দিকে৷শোক শেষে যদি মেয়েটিকে শশুর বাড়ি থেকে বলা হয়,
‘বা রে, তুমি তো আবার বিয়ে করবে, আমার ছেলের সম্পদে তোমার কিসের অধিকার? আর নাতিটাকে আমাদের কাছেই রাখছি। আমি আছি। ওর ফুপুরাও আছে। আমরাই মানুষ করব। ওর জন্য যা খরচপাতি, তা আমরাই করব। তোমাকে আর এ সংসারে দরকার নেই।’ এই সংলাপ সাধারনত শাশুড়িরাই করে থাকে।কাঁটার উপর এই ঘা অনেক বিধবা না সইতে পেরে আত্মাহুতি দিয়ে দেয়।এগুলো-ই আমাদের সমাজের বাস্তবতা।
যে মেয়েটির বয়স ২৫ পেরোয়নি। দুর্ঘটনায় মারা গেছেন স্বামী। শোকের কালো চাদরে তখনো ঢেকে ছিল পুরো পরিবার। তারপরও অপ্রিয় বিষয়গুলো খুব দ্রুত পারিবারিক আলোচনায় উঠে আসে। স্বামীর কর্মস্থল থেকে বড় অঙ্কের টাকা পাওয়ার কথা। তা নিয়ে পারিবারিক কূটচাল চলতে থাকে। সন্তানকে নিয়েও চলছে নানা ঝামেলা। কোথায় থাকবে শিশুটি। বিধবা মায়ের কাছে নাকি দাদির কাছে! রীতিমতো যেন সিরিয়ালের কাহিিনি। অনাকাঙ্ক্ষিত শোক-কষ্ট কাটিয়ে না উঠতেই তাঁর সামনে একের পর নিষ্ঠুর চ্যালেঞ্জ। এসবের মোকািবলায় রীতমিতো হতোদ্যম হয়ে পড়েন বিধবা তরুণীটি। সব বাবা মা-ই যে তাদের লোপে নেন তা নয়।যাদের অর্থিক সামর্থ আছে তারা হয়ত কিছুটা সাহয্য করতে পারেন কিন্তু আমাদের দেশে অধিকাংশ পরিবারই নিজেদের টানাপোড়নে ব্যাস্ত। তার উপর যদি এ রকম একটি অবস্হা তৈরি হয় তাহলে বিধবা তরুনীকেই কলন্কের গ্লানি বহন করতে হয়।আবার অনেক কে দেখা যায় রুপ সৌন্দর্যের কারনে বিধবাকে বিয়ে করতে এগিয়ে আসেন কিন্তু আগের পরিবারের ফুটফুটে ছেলে বা মেয়েটিকে মেনে নিতে পারেন না।এই অবস্হায় বিধবা তরুনিটির দাম্পত্য জীবনের স্বপ্ন আর থাকে না।আবার অনেকে এই জই ঝামেলা থেকে একাকিত্বকে বরন করে নেয়।সন্তানকে নিজের মত করে গড়ে তোলে। ধৈর্য ও শাহসের সাথে সামনে এগিয়ে যায়। এই % টা খুব কম।যে সমস্ত বাবা মা সন্তানদের ভাল শিক্ষিত করে তোলেন তাদের জীবনে এ রকম বিপর্যয় আসলে তারা একটি চাকুরির ব্যাবস্হা করে নিতে সক্ষম হয়।তারা সমাজে দাঁড়াতে পারে সঠিকভাবে।
সামাজিকভাবে একজন নারীর জীবনে তাঁর পরিচয় বদলাতে থাকে। কন্যা, বোন, মা, স্ত্রী, শাশুড়ি—একেক সময় একেক রকম। কিন্তু কম বয়সে স্বামী মারা গেলে তাঁকে বিধবা নামে বিশেষভাবে পরিচয় করানো হয়। সামাজিক নানা সরব ও নীরব পীড়ন তো আছেই—অনেকেই জটিল মনোপীড়নের শিকার হন। পারিবারিক, সামাজিক, মানসিক চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েন। থাকার জায়গা নিয়েও প্রশ্ন। শ্বশুরবাড়ি না বাবার বাড়ি । উদ্বাস্তু হয়ে পড়েন তিনি। নিমেষেই পরিচিত মুখ অপরিচিত হয়ে ওঠে। কেউ কেউ ‘অপয়া’ অপবাদ দিতেও ছাড়েন না। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকেই বোঝা মনে করেন মেয়েটি। এই অবহেলা, কটুক্তি, ভুক্তভোগী স্বামীহারা কম বয়সী নারীর মানসিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার—অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডার, কনভার্সন ডিসঅর্ডার, স্লিপ ডিসঅর্ডার, মাদকাসক্তি—আত্মহত্যার চেষ্টাও করতে দেখা যায় অনেককে।এসবের পরও জীবন থেমে থাকার নয়। সব সামলে সব প্রতিবন্ধকতা মোকািবলা করে অল্প বয়সে স্বামী হারানো মেয়েটিকে অবশ্যই সামনের দিকে এগোতে হবে দৃঢ় পায়ে৷ অকাল বৈধব্যের সমস্যাপূর্ণ ঢেউগুলোর সামনে তাঁকে ভেঙে পড়লে চলবে না। আবার পারিপাশ্বির্ক ভাবনা থেকেও মেয়েটি নতুন কোনো সম্পর্কে নিজেকে জড়াতে ভয় পান। কিন্তু একটি মানুষ সারা জীবন একা থাকবেন এটিও কোনো সমাধান হতে পারে না। সব সময় পরিস্থিতি তো তাঁর প্রতিকূলে থাকবে না, কখনো না কখনো অনুকূলে আসতে পারে৷তাহলে কী করবেন তরুনিটি?
এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পারিবারিক, মানসিক, সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন। নারীকে আত্মবিশ্বাসী ও সাহসী করে তুলতে হবে। নারীর শিক্ষা ও উপার্জনমুখী কাজে অংশগ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ছেলে বা মেয়ে হোক—তাকে সুযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম বা কর্মজীবী নারী এ ধরনের পরিস্থিতি মোকািবলায় বেশি সামর্থ্যের পরিচয় দেন। সংসারে ও কর্মস্থলে মতামত রাখার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে। জীবনে চলার পথে আবার নতুন কাউকে পছন্দ হতে পারে৷ কিন্তু যিনি জীবনসঙ্গী হবেন, তাঁর মানসিকতা ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে৷ শুধু তিনি নন, তাঁর পরিবারের সবার মতামত আছে কি না জেনে নিতে হবে। আপনার সন্তান থাকলে অবশ্যই সন্তান আপনার কাছে থাকবে,তাকে সহযুগিতা করা বাবা মা'র দায়িত্ব। এ বিষয়ে তার সাথে খোলাখুলি আলোচনা করতে হবে৷ভাল ভাল পরামর্শগুলো দিতে হবে। কোনো কথাই লুকানো উচিত নয়৷ খুব কাছের বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।তবে চারপাশের কথা ভেবে নতুন কোনো সম্পর্কের পরিণতি টানতে হবে, সেটিও ঠিক নয়৷
বৈধব্যের ফলে সৃষ্ট জটিলতাকে কাটিয়ে উঠতে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব—সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যাতে তাঁর মধ্যে জীবনকে নতুনভাবে দেখার স্বপ্ন ও আগ্রহ জেগে ওঠে৷মানসিক বিপর্যয়ে চিকিৎসা নিতে দেির করা যাবে না। পুরুষশাসিত সমাজে কোনো নারী বিধবার শৃঙ্খলে বাঁধা পড়ে যেন মানসিক রোগী হয়ে না পড়েন সে ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
বিষয়: বিবিধ
১২৪৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন