আপনার ছেলে মেয়েকে জীবনের প্রথমেই আল-কুরআন শিক্ষা দিন সৎ ও সভ্য জীবন যাপনের জন্য।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৮ এপ্রিল, ২০১৪, ০৪:৫২:০৪ বিকাল
আল্লাহপাক মানুষকে সমস্ত সৃষ্টির সেরা সৃষ্টি বা আশ্রাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।আর শুধু সৃষ্টি করেই ছেড়ে দেন নি,তাদের এ দুনিয়ার জীবন কিভাবে চলবে তার দিক নির্দেশানা দিয়েছেন পবিত্র গ্রন্থ আলকুরআনের মাধ্যমে এবং তার সাথে একজন প্রশিক্ষক নিযুক্ত করেছেন যিনি শেষ প্রেরিত পুরুষ হযরত মোহাম্মদ ইবনু আব্দুল্লাহ।তিনি নবুওতের ২৩ বছর ওহির মাধ্যমে এক অশিক্ষিত বর্বর জাতিকে আলকুরআনের আলোকে আলোকিত করেছিলেন।তারই ধারাবাহিকতায় রোজ ক্কেয়ামত পর্যন্ত প্রকৃত অনুসারিরা এই দ্বীনকে অনুসরন করে আসছে।এই পৃথিবীর চলার পথে আমরা দু'টি পথ দেখতে পাই। একটি অন্ধকার বা বাঁকা পথ আর একটি সরল সোজা পথ। আলকুরআন ও হাদিস সোজা পথে চলার সন্ধান দেয়।আর মানব রচিত পথ মানুষকে বাঁকা পথের দিকে নিয়ে যায়।রাসূল সা: বলেছেন,'প্রতিটি মানুষ প্রকৃতির উপর জন্মে আর তার বাবা মা তাকে ইহুদি খৃষ্টানে পরিনত করে।'
মহাগ্রন্থ আল-কোরআন আল্লাহ তায়ালার পবিত্র বাণী। এই বাণী ব্যতীত কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর তরফ হতে সরাসরি মানুষকে বলার মতো আর কিছু-ই নেই। সারা পৃথিবীর মানব মন্ডলীর ইহলৌকিক শান্তি ও পরলৌকিক মুক্তি কোরআনের শিক্ষানুসরণের উপর-ই পরিপূর্ণভাবে নির্ভরশীল। তাই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনকে সহজ করে দিয়েছেন সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য। আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন- ‘আর আমি এই কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি’ (সুরা- ক্বামার-৪০)
পবিত্র কোরআনের ভাষা আরবি হলেও তার বর্ণনাশৈলী, বাচনভঙ্গি পৃথিবীর প্রচলিত আরবি ভাষার অনুরূপ নয়। এই কিতাবের ভাষা প্রচলিত আরবি ভাষার থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। সাহিত্যের সর্বশীর্ষে উন্নীত। কিন্তু দুর্বোদ্ধ নয়; বরং সহজ লব্ধ। প্রাঞ্জল তার বর্ণনাশৈলী, যেন স্বর্ণের তারে মুক্তোর মালা। যে কেউ ইচ্ছা করলে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে এর অমীয় বাণী। এই বানী পাঠকের উপর বর্ষিত হয় রহমতের বারী ধারা রুপে। অন্তরে অবতীর্ণ হয় সদা সাকিনা। চেহারায় উদ্ভাসিত হয় হেরার জ্যোতি, নূরানী আভা। ফলে মাত্র সাত-আট বছরের শিশু পর্যন্ত গোটা ৩০ পারা কোরআন মুখস্ত করতে পারে অনায়াসে। এ কিতাব সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের অফুরন্ত ভান্ডার। সকল জ্ঞানের নির্যাস। সকল প্রকার ভুল-ভ্রান্তির ঊর্ধ্বে চিরন্তন শাশ্বত সত্যের পয়গাম। কাজেই যারা জ্ঞানী হতে চায়, শিক্ষিত হতে চায়, তাদের অবশ্যই কোরআন শিখতে হবে। আমরা সক্রেটিস, কার্লমার্কস্, লেলিন, মাওসেতুং, নীংশে, রুশো, ভলোতেয়ার, রাশেলসহ বিখ্যাত পন্ডিত ব্যক্তি এবং আইনস্টাইন, মার্কনী, নিউটন প্রভৃতি বৈজ্ঞানিকদের রচনা পাঠ করি জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য। কিন্তু সকল দার্শনিকের বড় দার্শনিক, সকল বৈজ্ঞানিকদের বড় বৈজ্ঞানিক আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তায়ালার রচনা আল-কোরআন পড়ি না এবং আমাদের পরিবারকেও পড়াই না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞান ভান্ডার ও সর্বশেষ ধর্মীয় গ্রন্থ আল-কোরআনের জ্ঞান না থাকলে কীভাবে বিদ্বান হওয়া যায়! অথচ জ্ঞান শিক্ষা করা ইসলামে ফরজ। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন- “দ্বীনি জ্ঞান আর্জন করা প্রতিটি মুসলমানের উপর ফরজ।” (ইবনে মাজাহ শরীফ- পৃষ্ঠা নং-৩৪, হাদীস নং-২২৪) প্রতিটি মুসলমানের জন্য জরুরি হল- আকাইদ, নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত ও মুয়ামালা-মুয়াশারা (সামাজিক-লেনদেন) সংক্রান্ত বিধি নিষেধের জ্ঞান অপরিহার্যরূপে অর্জন করা। দ্বীনের সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে মেধাকে সুতীক্ষè করাও জরুরি। নবী করীম (সা.) ঘোষণা করেছেন দ্বীনি জ্ঞান-বিজ্ঞান মুুমিনের হারানো সম্পদ, যেখানে যেভাবে পার তা অর্জন কর। (তিরমিজি শরীফ- হাদীস নং-২৬৮৭; ইবনে মাজাহ শরীফ- হাদীস নং-৪১৬৯; মেশকাত শরীফ-১/৩৪)
আপনার শিশুকে সর্বাগ্রে কোরআন শিক্ষা দিন।আজকাল মুসলিমরা তাদের যে আদর্শ তা থেকে দূরে সরে গেছে।ছোট শিশু কথা বলা শুরু করলে তাকে ইংরেজী লেটার বা বিশেষ শব্দগুলো শিখানো হয় অথচ আলকুরআনের হরফগুলো শিখানো হয় না।শৈশবের এ সময়টা এমন একটা সময়,যখন শিশুদের মেধা থাকে খুব তীখ্ন।এ সময় যা বলা হয় তা-ই মনে থাকে দীর্ঘকাল।মুসলিম শিশুর জন্য এ সময়টাই উত্তম আলকুরআন রপ্ত করার সময়।মাত্র দু' বা তিন বছরে আপনার শিশু আলকুরআন মুখস্ত করে নিতে পারে।আর যদি মুখস্ত নাও করে, ছহিশুদ্ধ কুরআন এবং তার সাথে বিশেষ সূরাগুলো যদি মুখস্ত করে নেয় তাহলে তার বাকী জীবন সে ধর্মের বন্ধনে সুন্দর ও সাবলিল জীবন যাপন করতে পারবে।আমি আমার চার ছেলেমেয়েকে এভাবেই গড়ার চেষ্টা করেছি যারা হিফজ করার পর স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে তাদের কোন বাধা তৈরি হয় নি।ধর্মীয় দিক থেকে বেড়ে উঠলে শিশুরা সমাজের জন্য সম্পদ তৈরি হয়।আজকের সমাজের অনাচার ও অবিচারের জন্য আমরা অভিভাবকরাই বিশেষভাবে দায়ী।সমাজে আজ গুম , খুন করা করছে? তারা আমার আর আপনারই সন্তান।তারা এ সমাজেরই মানুষ।আমরা সবাই যদি সোচ্চার না হই, আমাদের পরিবারের যত্ন না করি তাহলে সমাজ আরো ভয়াবহ অবস্হার সম্মুখীন হবে। সেজন্য অভিভাবকদের উচিত শিশুর জন্মের আগেই বিশুদ্ধ নিয়্যাত করা যাতে জন্মের পরে সুচিন্তিত পরিকল্পনা নিতে পারে।আজকের দুনিয়ায় সামাজিক যে অনাচার চলছে তার কারন মানুষ।পরিবারিক বন্ধনে সন্তানের সঠিক লালন পালন না করার কারনে হত্মা ,ব্যাভিচার,চুরি রাহাজানি,লুটপাট ও ঝগড়া বিবাদের মত অসামজিক কাজগুলো ঘটে যাচ্ছে।অভিজ্ঞতার আলোকে প্রমাণিত যে, শৈশবে ছোটমনি ও কচিকাঁচাদের মধ্যে কোরআন ছাড়া অন্য কোন জ্ঞান অর্জনের ক্ষমতা বা যোগ্যতা তেমন থাকে না । তাই তাদের সর্বপ্রথম কোরআন শিক্ষা দেয়া উচিত। যাতে তাদের সময় সঠিকভাবে কাজে লাগে। অনেক অভিভাবক সন্তানের দীর্ঘায়ুর ওপর নির্ভর করে শিশুকালে কোরআন শিক্ষা দেয় না। তাদের ধারণা সন্তান অনেক বড় হবে, অনেক দিন বাঁচবে। এখনও অনেক সময় আছে, বড় হয়ে অবসর সময়ে নিজে নিজে কোরআন শিখে নিবে। মূলত তারাই কোরআনকে এভাবে অবহেলা করে নিজেরা যেমন বন্চিত হয় তেমনি বন্চিত করে সন্তানকে। আর ইংরেজি, বিজ্ঞান, গণিত ও রসায়নকে মেইন সাবজেক্ট মনে করে প্রাধান্য দেয়। অথচ জরিপ করে দেখা গেছে যে, বড় হওয়ার পর এরূপ ৯৯% লোক বিভিন্ন কর্মব্যস্ততা, সাংসারিক ঝুট-ঝামেলা ও পারিবারিক কলহ-বিবাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে কোরআন শিক্ষা থেকে চিরতরে বঞ্চিত হয়েছে।
যে কোনো ভাষা শিক্ষার পূর্বে কোরআন ও ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা দিন।শিশুকে সর্বাগ্রে কোরআন ও দ্বীনের অপরিহার্য বিষয়গুলো শিখাতে হবে। চাই তা উর্দু-ফার্সি ভাষাই হোক, চাই বাংলা-ইংরেজি-আরবী ভাষায় হোক। তবে তা যে কোনো ভাষা শিখার পূর্বেই হতে হবে। কেননা শৈশবে বসন্তের প্রতিরোধক টিকা যেমন সারা জীবন শরীরে দাগ ও প্রভাব বহন করে থাকে তেমনি শিশুদের কোমল ও স্বচ্ছ অন্তরে কোরআনের আলো তার হৃদয়কে সর্বদা জ্যোতির্ময় ও আলোকিত করে রাখে। শীতকালের খেজুরের রস যেমন অত্যন্ত সুমিষ্ট ও পরম তৃপ্তিদায়ক তেমনি যেকোন ভাষার সংমিশ্রণ ব্যতীত এককভাবে কোরআন শিক্ষা শিশুর ভবিষ্যত জীবনে আমল-আখলাক, স্বভাব-চরিত্র ও আচার আচরণ সুমধুর করতে সহায়ক হয়। পক্ষান্তরে শৈশবে কোরআন শিক্ষা না দিলে অন্তরে প্রকৃত নূরের বিকাশ ঘটে না। বাস্তবতার আলোকে এ দাবির সত্যতা আজ প্রমাণিত।
সুতরাং একটু মনে করুন যে, দুই বা আড়াই বছরের জন্য আমি আমার সন্তানকে দ্বীনি মাদ্রাসা নামক অধ্যাত্মিক ক্লিনিকে পাঠালাম। প্রথমে তার পরমাত্মা চিকিৎসা করে সুস্থ হোক। পরে শারীরিক চিকিৎসা করে দেহ সুস্থ করে নিবে। দুই বা আড়াই বছর বড় বেশি লম্বা সময় নয়। এই আড়াই বছরে তার দুনিয়াবী তেমন কোন ক্ষতি হবে না । শৈশবের এইরূপ আড়াই বছর অনেকের খেলাধুলা করেই নষ্ট হয়ে যায়। আর যদি কিছু হয় তবে সে তো মুসলমান। মুসলমানের জন্যই তার দ্বীন-ধর্মই সর্বাগ্রে। আল্লাহ্ তায়ালার হুকুম আহকামের সামনে দুনিয়ার কি মূল্য? আল্লাহর রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যদি দুনিয়ার মূল্য আল্লাহ তায়ালার নিকট মশার একটি পাখার সমতূল্যও হতো তাহলে তিনি পৃথিবীর কোনো কাফেরকে এক অঞ্জলি পরিমাণ পানি পান করতে দিতেন না।’ (তিরমিজি শরীফ- হাদীস নং-২৩২০; ইবন্ মাজাহ শরীফ- হাদীস নং-৪১১০)। অধিকাংশ মানুষ এখন দুনিয়া নির্ভর।দুনিয়ার প্রয়োজনে দরকার হলে ৫/১০ টি ভাষাও শিখে ও প্রচুর টাকা খরচ করে কিন্তু আরবি ভাষা শিখার কথা আসলে সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।এটা এক ধরনের কুরআনের প্রতি অবজ্গা।সুতরাং মূর্খ- অর্বাচীনদের মত দুনিয়ার মোহে না পড়ে নিজ সন্তানদের সর্বাগ্রে কোরআন ও ধমীয় জ্ঞান শিক্ষা দেয়াই হবে প্রকৃত মুসলমানিত্ব। আল্লাহ আমাদের সঠিক জ্গান দান করুন ।
বিষয়: বিবিধ
২২৪৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন