জীবন যাত্রার মান নির্ভর করে জ্ঞানীদের সৎ চিন্তা চেতনা, নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৩ এপ্রিল, ২০১৪, ০৪:১১:০৫ বিকাল
জ্ঞানবিজ্ঞান, কাব্য-সাহিত্য, বুদ্ধিচর্চা ও মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশে শহুরে জীবনের অবদানকে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। আঠারো শতকে লন্ডনের কফি হাউসে নাগরিক সমাবেশে রসায়ন, প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতি ও জ্ঞানবিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা হতো। প্যারিসের লেফট ব্যাংক বারে পাবলো পিকাসো সৃষ্টি করেছিলেন তাঁর অনবদ্য শিল্পকর্ম। শেক্সপিয়র বা জেমস জয়েসের অনবদ্য সৃষ্টির সূত্রপাত হতো না যদি তাঁদের জীবনে শহুরে জীবনের ছোঁয়া না লাগত।
আইনস্টাইন পর্যন্ত শহরের কমিউটিং ট্রেনের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন এবং শহুরে জীবন দ্বারা ভীষণ অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। এত ভালো যার, তত মন্দ তার। শহুরে জীবন তত সহজ ও আনন্দদায়ক নয়, যতটুকু আমরা ভাবি। প্রতিটি ওষুধের যেমন কমবেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বিষক্রিয়া রয়েছে, শহুরে জীবনেরও তেমন শরীর, মন ও জীবনযাপনের ওপর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং বিরূপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যে লন্ডনের ক্যাফে বেন ফ্রাঙ্কলিনকে উজ্জীবিত করেছিল, সেই লন্ডনে ছড়িয়ে পড়েছিল মারাত্মক কলেরা। পাবলো পিকাসোকেও শেষ নাগাদ প্যারিসের জড়জীবন ছেড়ে শহরের বাইরে নিরিবিলি পরিবেশে ফিরে যেতে হয়েছিল তাঁর জীবন ও শিল্পকর্মের জন্য। আধুনিক শহর মানবসভ্যতাকে অনেক খ্যাতনামা কবি-সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক উপহার দিয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। মানবসভ্যতার বিকাশ জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক বিপ্লব বিশ্বের চেহারা পাল্টে দিলেও শহর হলো জড়, অনৈসর্গিক, অস্বাভাবিক, অপ্রাকৃতিক, কট্টর এবং সুস্থ শরীর, মন ও জীবনযাপনের পরিপন্থী। ইদানীং বিজ্ঞানীরা শরীর ও মস্তিষ্কের ওপর শহুরে জীবনের বিরূপ ও ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে নানাবিধ গবেষণা শুরু করেছেন। গবেষণার ফলাফল নিয়ে বিজ্ঞানী, পরিবেশবাদী ও আমাদের মতো মানুষের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার শেষ নেই। গবেষণার ফলাফলে প্রকাশ, শহুরে জীবন মানুষের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যপ্রণালীকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো মানুষ একটি ব্যস্ত, জনাকীর্ণ ও কোলাহলময় রাস্তায় বা জায়গায় কয়েক মিনিট সময় কাটিয়ে আসার পর তার স্মরণশক্তি স্বাভাবিক থাকে না এবং তার আত্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়। আমরা কেউই অস্বীকার করতে পারি না যে শহুরে জীবন হলো নিদারুণ পরিশ্রান্তিকর। আর সেই জন্যই হয়তো পিকাসোকে প্যারিস ছাড়তে হয়েছিল। শহুরে জীবন মানুষের চিন্তাশক্তিকে প্রায়ই নিস্তেজ, অচেতন ও মন্থর করে দেয়। এসব বিরূপ প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি শহুরে জীবন এমন সব স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে, যা কারো কারো ক্ষেত্রে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। মানুষের মন হলো একটি সীমাবদ্ধ যন্ত্র- বলেছেন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মনোবিজ্ঞানী। আমরা এখন ক্রমান্বয়ে বুঝতে ও জানতে শুরু করেছি, শহুরে জীবনের বিভিন্ন দিক কিভাবে মানুষের মনের সীমাবদ্ধতার গণ্ডিকে অতিক্রম করে মানুষকে বিপদে ফেলতে পারে। শহুরে জীবনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, আমরা প্রকৃতি (nature) বিবর্জিত জীবনযাপন করছি, যা শরীর ও মনের জন্য অবশ্যম্ভাবী ধ্বংসের কারণ হতে চলেছে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, হাসপাতালে রোগীরা অতি তাড়াতাড়ি সেরে ওঠেন যদি তাঁরা জানালা দিয়ে সবুজ গাছপালা দেখেন। মহিলারা বাসাবাড়িতে সানন্দে ভালো কাজ করতে পারেন এবং উৎফুল্ল থাকেন যখন তাঁদের বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট থেকে সবুজ ঘাসের আঙিনা দেখতে পান। এমনকি এভাবে ক্ষণিকের এক ঝলক প্রকৃতি দেখা মানুষের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাকে প্রচণ্ড সতেজ ও উদ্দীপিত করতে পারে। এই প্রকৃতি শহরের জড় জীবনের ক্লান্তি আর অবসাদ দূর করে মানুষকে দিতে পারে অনাবিল আনন্দ আর স্বস্তি- হোক না সেটা ক্ষণিকের জন্য।
শহুরে জীবনের বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল নিয়ে আমরা এসব কথাবার্তা এমন সময় বলতে শুরু করেছি যখন মানবসভ্যতা প্রথমবারের মতো এবং ঐতিহাসিক মাইলফলক অতিক্রম করেছে। বর্তমানে বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ শহরেই বসবাস করছে। ফলে শহুরে জীবনের ওপর চাপ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বাসযোগ্য পরিবেশের অভাবে শহুরে জীবন বিপন্ন ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। খোলামেলা প্রাকৃতিক পরিবেশে জনবসতি গড়ে তোলার পরিবর্তে বাস, ট্রাক, গাড়ি, ট্রাফিক ও লাখ লাখ মানুষ পরিবেষ্টিত কংক্রিটের জঙ্গলে বসবাসে আমরা অভ্যস্ত ও বাধ্য হচ্ছি। আমরা খুব কমই উপলব্ধি করতে পারছি, এই অনৈসর্গিক ও অস্বাভাবিক দূষিত পরিবেশে বসবাস ও জীবনযাপনের কারণে আমরা শারীরিক ও মানসিকতভাবে কত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমাদের মস্তিষ্ক ও চিন্তাচেতনায় নীরবে কী বিপর্যয় ঘটে যাচ্ছে। এসব শারীরিক ও মানসিক, মানবিক বিপর্যয়ের কথা বিবেচনায় নিয়ে উন্নত বিশ্বের নগর পরিকল্পনাকারীরা নগর পরিকল্পনায় এখন যত বেশি সম্ভব গাছপালা, বাগান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনায় সচেষ্ট হচ্ছেন। ম্যানহাটানের কেন্দ্রে সেন্ট্রাল পার্ক তৈরি করাটা কোনো দৈব ঘটনা ছিল না। পরিকল্পনাকারীরা ম্যানহাটানের মধ্যে একটি পার্কের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন বলে সেন্ট্রাল পার্ক তৈরি হয়েছিল। আমাদের শরীর, মন প্রকৃতি ও নৈসর্গিক শোভা দেখতে চায়, উপলব্ধি করতে চায়। আমাদের জানা দরকার, শহর পরিকল্পনায় শহরের ভেতরে যত বেশি সম্ভব বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগানো, ছোট হোক বড় হোক, ফুল, ফল বা ছোট-বড় গাছ পরিবেষ্টিত পার্ক স্থাপন শহুরে জীবনের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো বহুলাংশে দূর করতে পারে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, শহরের প্রাকৃতিক ও বসবাসযোগ্য পরিবেশ নিয়ে আমাদের চিন্তাচেতনা এবং সামর্থ্য সীমিত ও সংকীর্ণ।
লন্ডনভিত্তিক 'ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট' কর্তৃক ১৪০টি শহরের ওপর পরিচালিত সমীক্ষার ফলাফলে ঢাকা শহর ২০১৩ সালে আবার দ্বিতীয় নিকৃষ্ট বাসযোগ্য শহর হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। প্রথম স্থানটি দখল করেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক শহর। যুদ্ধে আক্রান্ত না হলে দামেস্কের পরিবর্তে ঢাকা আসত শীর্ষস্থানে। সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অপরাধপ্রবণতার হার, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার সহজলভ্যতা, প্রাকৃতিক পরিবেশ, শিক্ষা ও জনগণের জন্য যানবাহনের সুযোগ-সুবিধাসহ অবকাঠামোগত বিশেষত্বের ওপর ভিত্তি করে শহরের এই মূল্যায়ন করা হয়েছে। উল্লিখিত কোনো মাপকাঠিতেই ঢাকা বাসযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করা হয়েছে। যানজট ঢাকাকে স্থবির করে ফেলেছে। শুধু ঢাকার কথাই বলি কেন, যানজটের কারণে পুরো দেশই অচল হয়ে পড়ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে বলা যেতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ 'লাইফলাইন'। অথচ এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে দু-একদিন অন্তর ৫০-৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পদ্মা সেতুর দরকার আছে। কিন্তু পদ্মা সেতুর চেয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংস্কার ও উন্নয়ন কি বেশি জরুরি নয়? ঢাকার যানজট এক অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। যানজটের কারণে ইদানীং মানুষ ঘর থেকে বেরোতে ভয় পায়। যানজটে পড়লে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় পড়ে থাকতে হয়। সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতে না পারার ভয়ে অস্থিরতা ও আতঙ্ক বাড়ে। সাধারণ মানুষ এমনকি অ্যাম্বুল্যান্সের রোগীদের অসুবিধা হলেও আমাদের নেতা-নেত্রী ও ভিআইপিদের কখনোই যানজটের সমস্যায় পড়তে হয় না। তাঁরা ইকোয়াল বা সমানের চেয়ে বেশি বলেই আমাদের ট্রাফিক পুলিশরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তা বন্ধ রেখে ট্রাফিক থামিয়ে অবৈধ রাস্তা দিয়ে তাঁদের চলাচলের ব্যবস্থা করেন। নেতা-নেত্রীদের বা ভিআইপিদের আইন লঙ্ঘন এখন রীতিমতো আইনে পরিণত হয়েছে। আর তাই হয়তো ট্রাফিক পুলিশের সামনেই মানুষ ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে। মানুষের জন্য এখন আর রাস্তায় চলাচল বা গাড়ি চালানো যায় না। হাজার হাজার মানুষ যত্রতত্র ছোটাছুটি করছে, চলন্ত গাড়ি থামিয়ে যত্রতন্ত্র রাস্তা পার হচ্ছে। আমি প্রায়ই ভাবি, লাখ লাখ টাকা খরচ করে ঢাকা শহরে এত ফুট ওভারব্রিজ কেন তৈরি করা হয়েছে। নগণ্যসংখ্যক মানুষ এসব ওভারব্রিজ ব্যবহার করে। এসব ওভারব্রিজ ব্যবহার করার জন্য মানুষকে বাধ্য করা হয় না, এমনকি উদ্বুদ্ধও করা হয় না। যেখানে সেখানে টাউন সার্ভিস বাস দাঁড়িয়ে পড়ে। ট্রাফিক আইন না মানাটা আমাদের অভ্যাসের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইন আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে না; আইনকে আমরা তাড়িয়ে বেড়াই, পদদলিত করি। কারণ পেশিশক্তি হলো আসল শক্তি, ঢাকা শহরে মানুষের চাপ যে হারে বাড়ছে তাতে সামনের দিনগুলোতে ঢাকার নাগরিক জীবনে বিপর্যয় নেমে আসবে। ক্রমবর্ধমান গাড়ির কারণে শহরে রাস্তাঘাটে চলাফেরা যেমন দায় হয়ে পড়েছে, তেমনি শব্দদূষণ ও পরিবেশদূষণে বিপর্যস্ত হচ্ছে ঢাকার নাগরিক জীবন। জাতি হিসেবে আমাদের ধৈর্যের প্রচণ্ড ঘাটতি রয়েছে। ঘাটতি রয়েছে নিয়ম-শৃঙ্খলাবোধের। আমরা যে কত বিশৃঙ্খল জাতি ঘরের বাইরে গেলেই তা প্রতি মুহূর্তে হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায়। এ দেশে পথচারীর যেমন তাড়া, তেমনি রিকশাওয়ালা, ঠেলাগাড়িওয়ালা বা গাড়িওয়ালারও সমান তাড়া। তাড়ার চোটে আজকাল সাইকেল, মোটরসাইকেল এবং রিকশা পর্যন্ত ফুটপাত দিয়ে চলা শুরু করেছে। এ কারন গুলোর জন্য পথচারী অসহায়।
গাড়ি চালাতে গিয়ে অকারণে হর্ন বাজানো আমাদের বদ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। যখন-তখন হর্ন বাজালে শব্দদূষণের কারণে মানুষের নাগরিক জীবনে অশান্তি সৃষ্টিসহ শারীরিক ক্ষতি সাধিত হয়- এটা হাজার বলেও মানুষকে শেখানো যাচ্ছে না। শুনেছি আমাদের পাশের দেশ মিয়ানমারে হর্ন বাজে না। শব্দদূষণ আমাদের শরীর ও মনে মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে সক্ষম। শব্দদূষণের কারণে সারা বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ শ্রবণশক্তি হারাচ্ছে। একসময় ভাবা হতো, শব্দদূষণ শুধু বিরক্তি উৎপাদন করে; কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, আচার-আচরণ ও মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ছাড়াও শব্দদূষণ ঘুমের ব্যাঘাত, কাজকর্মে অমনোযোগ, শিশুদের মানসিক বিকাশ রোধ, মানসিক চাপ এবং উগ্রতা ও আক্রমণাত্মক মনোভাব সৃষ্টির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শব্দদূষণের কারণে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের মতো প্রাণঘাতী রোগের সৃষ্টি হতে পারে। শব্দদূষণের কারণে শরীরে অ্যাড্রেনালিনের নিঃসরণ বেড়ে যায়, যা রক্তনালি সংকোচনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। রক্তনালি সংকোচনের ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। হৃৎপিণ্ডের রক্তনালি সংকুচিত হলে হৃদরোগের উৎপত্তি হয়।
ঢাকার পরিবেশদূষণের ওপর বলতে গেলে বড়সড় একটি প্রবন্ধ লেখার প্রয়োজন হবে। তাই সংক্ষেপে শুধু বলতে হয়, ঢাকা শহর ময়লা-আবর্জনা ধুলাবালিতে ডুবে আছে। এখন আর এই ধুলাবালি ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা সম্ভবপর হয়ে উঠছে না। পচনশীল ময়লা-আবর্জনার কারণে চারদিকে দুর্গন্ধ ও রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে। ঢাকা পৃথিবীর নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর শহর। ঢাকার পরিবেশদূষণের কারণে মানুষ দিন দিন বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে। পরিবেশদূষণের কারণে অধিক হারে মানুষ অ্যাজমা ও নানা রকম অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশি। পরিবেশদূষণের কারণে সংক্রামক রোগের হার বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে অ্যান্টিবায়োটিকের নির্বিচার ব্যবহার, যা সৃষ্টি করছে ভয়ানক অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স আরেক বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সমস্যা। হাসপাতাল হলো রোগীদের শেষ আশ্রয়স্হল। ইদানিং ডাক্তারদের অবস্হান দেখে মনে হচ্ছে কারো বেঁচে থাকার কোন উপায় নেই। একজন অসুস্হ মানুষকে সুস্হ করে তোলা ডাক্তারের কাজ।কিন্তু ডাক্তার যদি রোগীর উপর চড়াও হয় তাহলে রোগী যাবে কোথায়।কথায় বলে কুইনিন জ্বর সারাবে বটে কিন্তু কুইনিন সারাবে কে? বিশেষ মেডিকেল কলেজ ছাড়া আজকাল ধনীর দুলাল দুলালিরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে যেভাবে ডাক্তার হয়ে বের হচ্ছে সেটা প্রভাব ফেলছে আমাদের সমাজ জীবনে।অসংখ্য ডাক্তার আছে যারা পড়াশুনা করেছে রোগীর পরিচর্যা ছাড়া অর্থাৎ শিক্ষানবিশ অবস্হায় তারা প্রেকটিকেলি রোগীর উপর পরিচর্যা করেনি,এরাই ডাক্তার হয়ে বেরিয়ে এসে কোথাও যখন বসে তখন হীতে বিপরীত হয়।তাছাড়া আজকাল প্রফেসরগন ব্যাস্ত থাকেন তাদের ক্লিনিকগুলো নিয়ে যার ফলে মেডিকেল কলেজগুলোতে তারা পাঠদান করতে পারেন না আর মেডিকেল কলেজ গুলো ইন্টার্নশিপ ছাত্রদের দ্বারা।জেলা উপজেলার হাসপাতাল গুলোতে প্রায়ই প্রফেশনাল ডাক্তার থাকেন আর থাকে না ঔষধও।এতে গরীব রোগিরা বিপাকে পড়ে।যাদের ক্ষমতা আছে তারা ঔষধ কিনে নেয় অন্যরা ভুগতে থাকে বছরের পর বছর।
আমরা সমাজ বা রাষ্ট্রীয় জীবনে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হই, তার মূল কারণ মানুষ। আমরা যারা নীজেদের জ্গানী ও পরিশীলিত মনে করি তারাই বেশী অপরাধি। একজন চোর চুরি করে তার অভুক্ততাকে নিরাময় করার জন্য।কিন্তু একজন তথাকথিত শিক্ষিত যদি রাষ্ট্রের আসনে বসে চুরি করে তারে আমরা কি বলবো? নিশ্চয়ই তিনি সিমালংঘনকারি। আমরা নিজেরাই নিজেদের সমস্যা সৃষ্টি করি। আমরা যদি প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতাম, একটু সচেতন ও সহনশীল হতাম, একটু বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতাম, স্বার্থপর না হতাম, তাহলে আমার মনে হয় আমাদের এত সমস্যা থাকত না। আমাদের সরকার ও বিরোধীদল গুলো যদি দেশ সম্পর্কে একটু সৎ চিন্তা করতো তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হতো।সংসদের সিংহভাগ সাংসদ এখন কোটিপতি।একজন সাংসদ সংসদে গেলেই অল্পদিনেই কিভাবে কোটিপতি বনে যান।শুধু সাংসদরা কেন,তাদের আশে পাশের লোকজনেরও ভাগ্যের পরিবর্তন হয়ে যায়। আবাসন খাতগুলোও যেভাবে সারা দেশে জমির জবর দখল করে পরিকল্পিত ও অপরিকল্পিত বিল্ডিং উঠাচ্ছে তাও আমাদের জন্য অশনিসংকেত ডেকে আনছে। প্রকৃতিকে সবুজের আওতায় না আনতে পারলে আমাদের জীবন যাত্রা ব্যাহত হবে অচিরেই। সমস্যা থাকলেও সহজ হোক, কঠিন হোক, উত্তরণের কোনো না কোনো পথ পাওয়া যেত। তখন অবশ্যই আমাদের জীবনযাত্রার মান আরো অনেক উন্নত হতো। মনমানসিকতা সুন্দর হতো এবং জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে আমাদের মানমর্যাদা অনেক বৃদ্ধি পেত। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। এ যে কত বড় ব্যর্থতা আর অসম্মানের ব্যাপার, তাও আমরা উপলব্ধি করতে পারছি না, এই কষ্ট সই কী করে! বা এত অসুস্থতা নিয়েই বা বেঁচে থাকি কী করে!
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর লিখেছেন। জীবনে কোন না কোন দিন আপনার এই বাণীগুলো অনেক কাজে লাগবে বলে মনে করি। অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন