ইসলামে সামাজিক জীবন ও নারির সম্মান।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২১ এপ্রিল, ২০১৪, ০৮:০৮:৪৭ রাত

পারিবারিক জীবনের ভিত্তি হলো ইসলামি সমাজ কায়েম। ইসলামে এর মুল ছিল আমাদের আদি পিতা ও মাতা আদম ও হাওয়া (আ) কে কেন্দ্র করে।এর স্বপক্ষে আল্লাহ সূরা আন-নিসার ১ আয়াতে বলেন,' ওহে মানবগোষ্ঠি! তোমাদের প্রভুকে ভয়ভক্তি কর যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একই নফস থেকে, আর তার জোড়াও সৃষ্টি করেছেন তার থেকে,আর এই উভয় থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু নর ও নারি। অতএব ভয়শ্রদ্ধা কর আল্লাহকে যার দারা তোমরা পরস্পরের ও মাতৃজঠরের সওয়াল জওয়াব কর।নি:সন্দেহে আল্লাহ তোমাদের উপর সদা প্রহরি।' ইসলামি পরিবার শুরু হয় বিয়ের মাধ্যমে। বিবাহ একটি পবিত্র কাজ যা একটা সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে একজন বর ও কনের সম্মতিতে স্হাপিত হয়। মায়ামমতাকে ঘিরে থাকে এ কাজটি।রাসূল সা: বলেন,'বিবাহ করবেনা একমাত্র সুন্দরের কারনে,এই সৌন্দর্য মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।এবং সম্পদের জন্য ও বিয়ে করবে না,এই সম্পদের কারনে জীবন অবাধ্য হয়ে যেতে পারে।বরং বিয়ে কর ধার্মিকতাকে বিবেচনা করে।'একটা ভাল সমাজ গঠনের মুলই হলো একজন পুরুষ ও মহিলার একে অপরের প্রতি আন্তরিক বন্ধন যা পবিত্র বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে রুপায়িত হয়।বৈবাহিক জীবনের উন্নয়ন হয় একে অন্যের প্রতি ভালবাসা,যত্ন এবং সহযোগিতার মাধ্যমে। এর মাধ্যমে মানুষ শান্তি অর্জন করে ও সামাজিক অনাচার থেকে মুক্তিলাভ করে।সমস্ত নবী রাসূল ও আখেরি নবীর এটাই ছিল সূন্নত।

একজন মুসলিম আর একজন মুসলিমা নারিকে বিবাহ করবে এটাই স্বাভাবিক যদিও কোন কোন ক্ষেত্রে সতি ইহুদি বা খৃষ্টান নারিকেও বিবাহ করা যায়। একজন মুসলিম নারির জন্য কোন অমুসলিম পুরুষকে বিবাহ করা বৈধ নয়। আমি আগেই বলেছি বিবাহ হলো ধর্মিয় ও সামাজিক রীতি কিন্তু কোন অবৈধ যৌনাচার নয়।ইসলাম কখনো পুরুষ ও মহিলা বা ছেলে মেয়ের খোলাখুলি অবৈধ মেলা মেশার অনুমতি দেয় না। তাহলে প্রশ্ন আসে মুসলিম দেশগুলোতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো সহ সব যায়গায় এত অশ্লিলতা কেন? এর কারন হিসেবে বলা যায় পরিবার গুলোতে ইসলামের চর্চা নেই। বাবা মা যেভাবে বংশ পরমপরায় বেড়ে উঠেছে সেই সামাজিক রীতিনিতিই তারা মেনে চলছে যদিও তারা মুসলিম বলে দাবি করে।দ্বিতীয় কারন হিসেবে বলা যায়-মুসলিম দেশগুলোর সরকারগুলো পাশ্চাত্যের অনুসরনে মানব রচিত বিধানের অনুসরন করছে।নিজেদের সংস্কৃতির অনুসরন না করে বিজাতীয় সংস্কৃতি আমদানি করছে। ইসলাম এমন একটি ধর্ম যার চর্চার মাধ্যমে একজন মানুষ পরিশীলিত হয়।আল্লাহর বিধিনিষেধের কাছে মাথা নত না করা পর্যন্ত কেউ তাকে খাঁটি মুসলিম হিসেবে দাবি করতে পারে না। স্বামি বা স্ত্রী যদি আল্লাহর আইনের কাছে মাথা নত না করে তাহলে সে পরিবার ইসলামি পরিবার হতে পারে না।

আজকের সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারিরা অবহেলিত কেন?

ধরে নিলাম অমুসলিম দেশগুলো তাদের তৈরি করা মতবাদে জীবন চালিত করছে। তাদের জীবন এই জীবনকে ঘিরে।সেখানে ব্যাভিচার ও নগ্নতা প্লাবিত হয়ে আছে এবং এক ধরনের মুসলিমরা সেখানে বসবাসের জন্য হিজরত করছে। চৌদ্দ 'শ' বছর পূর্বে ইসলাম নারিকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। রাসূল সা: বলেন,'মায়ের পায়ের নিছে জান্নাত।' আর একটি হাদিসে মায়ের ব্যাপারে তিন বার সম্মতি দিয়েছেন এর পর বাবার। এমনকি দশম হিজরিতে আরাফার ময়দানে রাসূল সা: বলেন,' হে লোক সকল! তোমাদের পরিবারের তোমাদের উপর কিছু অধিকার রয়েছে,তাদের প্রতি সৎ ব্যাবহার ও দয়া করবে,তারা তোমাদের সহধর্মিনী ও সাহায্যকারি।' তিনি আরো বলেন,'তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম যে তার স্ত্রীর প্রতি সদয়।' রাসূল সা: এর এ হাদিসগুলো থেকে কি প্রমান হয়? ইসলামে নারিকে যে মর্যাদা দেয়া হয়েছে তা আর কোন ধর্মেই দেয়া হয় নি। সভ্যতার নামে ইউরোপ ও লেটিন এমেরিকার দেশগুলো নারিদের নিয়ে অশ্লীল আচরন করছে তা ভাবা যায় কি? এমেরিকায় প্রতি মিনিটে একজন ধর্ষিতা এবং কানাডায় প্রতি তিন মিনিটে একজন ধর্ষিতা হচ্ছে। ওয়ার্লড ক্রাইম রিপোর্টে আমরা এই অধুনা সভ্য দেশগুলোকেই প্রথম সারিতে দেখতে পাচ্ছি। লুত আ: এর কাওম যেখানে বসবাস করছে আর তারা দেশের সংবিধানেও তা আইনে পরিনত করেছে।আবার তারা আমাদের মুসলিমদের সভ্যতা শিখাতে আসে।আমাদের দুর্ভাগ্য ফাসেক মুসলিম সরকার গুলোর এখনো বোধদয় হচ্ছে না।

ইসলামের সামাজিক জীবন যাপন পদ্ধতি কি ছিল তা দেখার জন্য আমাদের ফিরে যেতে হবে চৌদ্দ 'শ' বছর আগে কিভাবে রুপায়িত হয়েছিল একটি সুন্দর ইসলামি সমাজ। যেখানে বর্বতার অবসান হয়েছিল একমাত্র আল্লাহকে রব বা মনিব হিসেবে মেনে নেয়ার কারনে। রোমান সভ্যতার সময়ে নারিদের দাস হিসেবে দেখা হতো।গ্রীকরা নারিদের পন্য হিসেবে কেনা বেচা করতো।আমাদের পাশের দেশ ভারতে হিন্দু ধর্মে ও তার স্বামী মারা যাওয়ার পরে তার জ্বলন্ত চিতায় নিজেকে জীবন্ত ঝাপিয়ে পড়ে আত্মাহুতি দিতে হতো।ইসলাম পূর্ব জীবনে কন্যা সন্তানদের জীবন্ত প্রোথিত করা হতো।৫৮৭ খৃষ্টাব্দে ফ্রান্সে একটি কনফারেন্স হয়েছিল, সেখানে তারা নারিদের মানবীয় দিক থেকে বিবেচিত হবে কিনা সে বিষয় আলোচিত হয়েছিল।মধ্যযুগে কেথলিক চার্চ নারিদের সেকন্ড সিটিজেন হিসেবে আখ্যায়িত করতো।১৯৬৪ সালের পূর্ব পর্যন্ত অক্সফোর্ড ও কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নারিদের পুরুষদের চেয়ে হেয়ভাবে মুল্যায়ন করা হতো।১৮৮২ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডে নারিদের ব্যাক্তিগত অধিকারকে খর্ব করা হতো।আমরা যদি ইতিহাসের এই প্রতিচ্ছবিগুলো পর্যালোচনা করি তাহলে দেখবো ইসলামই নারিদের সিংহাসনে বসিয়েছে।

ইসলাম এমন একটি সাধারন জীবন বিধান যা বাস্তবতাকে স্বীকার করে নেয়। এটা মনে করার কারন নেই যে পুরুষ এবং সত্রী সর্বক্ষেত্রে সমান।আল্লাহ সূরা বাক্কারার ২২৮ আয়াতে নারি পুরুষের আধিকার সম্পর্কে বলেন,'তাদের স্বামীদের অধিকতর হক রয়েছে তাদের ইতিমধ্যে ফিরিয়ে নেবার যদি তারা মিটমাট করতে চায়(তালাকের ক্ষেত্রে) আর স্ত্রীদের তেমন অধিকার রয়েছে যেমন আছে তাদের উপর ন্যায়সংগতভাবে।অবশ্য পুরুষের অধিকার নারিদের কিছু উপরে।' নারিস্বাধিনতার নামে আজ পৃথিবি ব্যাপি যে সংস্কৃতির আন্দোলন হচ্ছে তাতে নারিদের পদদলিত করা হচ্ছে। ইসলাম নারিদের কর্মক্ষেত্রে বাধা দেয় নি।নারিদের দিতে হবে আলাদা কাজের ক্ষেত্র যেখানে তারা তাদের মান সম্ভ্রম রক্ষা করে কাজ করতে পারবে। আজকের পৃথিবীতে নারি পুরুষের অবাধ মেলামেশায় নারিরাই নারিদের অবহেলিত করছে। অশ্লিল বিজ্গাপন ও বিপননে নারিরা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে কি তাদের নিজেদেরকে হেয় করেন নি? নারি অধিকার আন্দোলনের নেত্রিরা কি ভেবে দেখেছেন পিতার সম্পদের অধিকার নারিরা কিভাবে ভোগ করে যা সূরা নিসার ৭,৩২ ও ১৭৬ আয়াতে বর্নিত হয়েছে।ইসলামি জীবন বিধানে নারিদের সম্মান দেয়া হয়েছে একজন মাতা হিসেবে,কন্যা হিসেবে ও একজন পুরুষের সহধর্মিনি হিসেবে। শুধুমাত্র কিছু নারি ইসলামকে অনুশীলন না করার কারনে তাদের পন্য হিসেবে ব্যাবহার করছে পার্থিব জীবনের লালসায়।একজন পুরুষ ও নারি যদি যার যার অবস্হানে নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে চলে তাহলে সামাজিক জীবনে কোন বিপর্যয় আসতে পারে না।একজন মুসলিম তখনি প্রকৃত ইসলামিস্ট হবে যখন কোরআন ও সূন্নাহের যথাযথ অনুশীলন করবে আর এটাই একমাত্র পথ সামাজিক শান্তি ও ন্যায় বিচার ফিরিয়ে আনার।আসুন আমরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ কে রব হিসেবে ও রাসূল সা:কে আমাদের আদর্শে আদর্শায়িত করার চেষ্টা করি।

বিষয়: বিবিধ

১৬১২ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

211368
২১ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৮:১১
সন্ধাতারা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
211381
২১ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৮:৩৫
হারিয়ে যাবো তোমার মাঝে লিখেছেন : সম্মান দিয়েছে কিন্তু আমরা সেটা জানি না এবং মানি না বলেই মনে করি ইসলাম আধুনিক নয় সেকেলে।
211396
২১ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৯:২১
ফেরারী মন লিখেছেন : একজন মুসলিম তখনি প্রকৃত ইসলামিস্ট হবে যখন কোরআন ও সূন্নাহের যথাযথ অনুশীলন করবে আর এটাই একমাত্র পথ সামাজিক শান্তি ও ন্যায় বিচার ফিরিয়ে আনার।আসুন আমরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ কে রব হিসেবে ও রাসূল সা:কে আমাদের আদর্শে আদর্শায়িত করার চেষ্টা করি।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File