একজন মুসলিমের আচরনেই ইসলামের সৌন্দর্য প্রতিভাত হয় আর বিপরীত অবস্হান হলে তার পরিনামও কঠিন হয়।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ৩১ মার্চ, ২০১৪, ০২:২২:০৬ দুপুর
একজন মুসলিমকে আর একজন মুসলিম বা অমুসলিমরা জানতে পারে তার কথা বার্তা ও আচার আচরনের মাধ্যমে। রাসূল সা: এর কাছাকাছি যারাই এসেছিল তারা ইসলাম গ্রহন করেছিল তাঁর চরিত্র মাধুর্য দেখেই। তাঁর সাথে যারা শক্রুতা করেছিল তাদের তিনি কল্যান করতেন।যে বুড়ি পথে কাঁটা বিচিয়ে দিতেন,সে অসুস্হ হলে তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। মক্কা বিজয়ের দিন শক্রুদের হাতের কাছে পেয়েও তিনি মাপ করে দিয়েছিলেন। এভাবে অসংখ্য ঘটনা জড়িয়ে আছে ইসলামের ২৩ বছরের নবুওতি জীবনে।আজকে আমরা যারা মুসলমান তাদের মধ্যে এ সহনশীলতা নেই।একে অপরকে সাহায্য করা দূরে থাকুক হত্মা করতেও কুন্ঠিত হই না।প্রতিবেশীর সাথে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকে।অফিস আদালতে সামান্য স্বার্থের জন্য একে অপরের শক্রুতে পরিনত হতে দেখা যায়।এই পরিবর্তিত অবস্হায় ইসলামের কল্যান তথা ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম করা একটি দু:স্বপ্ন বটে।সূরা হুজরাতের ৬ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' ওহে যারা ঈমান এনেছ! যদি কোন সত্যত্যাগী কোন খবর তোমাদের কাছে নিয়ে আসে তখন তোমরা যাচাই করে দেখবে,পাছে অজান্তে তোমরা কোন লোকদলকে আঘাত করে বস,আর পরক্ষনেই দু:খ কর তোমরা যা করেছ তার জন্য।' শুধু বাইরে নয় আমাদের নিজ নিজ পরিবারেও আমরা হঠাৎ কোন খবর শুনলে ব্যাথিত হয়ে যাই এবং এ কাজগুলো করে থাকি।আমরা প্রতিটি মুসলিম ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে থাকি।আমাদের চরিত্র দেখে অন্যরা যদি শিখতে না পারে তাহলে আমরা ইসলামেরই ক্ষতি করছি। আমাদের সবারই সেজন্য কিছু নিয়মনীতি মেনে চলা উচিত।
পারস্পরিক কুধারণা পোষণ পরিহার : সূরা হুজরাতের ১২ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' ওহে যারা ঈমান এনেছ! অধিকাংশক্ষেত্রে সন্দেহ এড়িয়ে চল।কেননা কোন কোন সন্দেহ নিশ্চই পাপজনক।তোমরা গুপ্তচরবৃত্তি করো না এবং অন্যদের আড়ালে নিন্দা করো না।'হজরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা কুধারণা পোষণ করা থেকে দূরে থাক। কেননা কুধারণা হলো সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা। (বুখারী ও মুসলিম)।
পারস্পরিক শত্রুতা পরিহার : হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকি আর হত্যা বা তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করা কুফরি। (বুখারী, মুসলিম)।
পারস্পরিক অভিশাপ পরিহার : হজরত সামুরা ইবনে জুনদুব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা একে অপরকে আল্লাহর অভিসম্পাত, তাঁর গজব ও জাহান্নামের বদদোয়া করো না। (আহমাদ, হাকেম, তিরমিযী-১৯২৬ : হাসান ও সহীহ্)।
পারস্পরিক সম্পর্ক পরিত্যাগের পরিণাম : হজরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। যেসব পাপী আল্লাহর সাথে শরিক করেনি তাদেরকে ক্ষমা করা হয়। কিন্তু পরস্পর সম্পর্ক ত্যাগকারী ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয় এদেরকে ফিরিয়ে দাও যতক্ষণ না এরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করে। (মুসলিম)।
পাঁচটি অপরাধের ভয়াবহ পরিণাম : হজরত ইবনে উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : হে মুহাজির দল! পাঁচটি কর্ম এমন রয়েছে যাতে তোমরা লিপ্ত হয়ে পড়লে শাস্তি তোমাদেরকে গ্রাস করবে। আমি আল্লাহর নিকট পানাহ চাই তোমরা যেন তা প্রত্যক্ষ না কর। (১) যখনই কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা প্রকাশ্যভাবে ব্যাপক হবে তখন সে জাতির মাঝে প্লেগ ও এমন রোগ ব্যাপক হবে, যা তাদের পূর্বপুরুষদের মাঝে ছিল না। (২) যে জাতি মাপে কম দেবে সে জাতি দুর্ভিক্ষ, খাদ্য সঙ্কট এবং শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারের শিকার হবে। (৩) যে জাতি জাকাত দেয়া বন্ধ করবে সে জাতির জন্য বৃষ্টি বন্ধ করে দেয়া হবে। যদি অন্যান্য প্রাণিকুল না থাকত তাহলে তাদের জন্য আদৌ বৃষ্টি হতো না। (৪) যে জাতি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতিশ্রতি ভঙ্গ করবে সে জাতির উপরে তাদের বিজাতীয় শত্রুদলকে ক্ষমতাসীন করে দেয়া হবে, যারা তাদের বহু ধন-সম্পদ নিজেদের কুক্ষিগত করবে। (৫) যে জাতির শাসকগোষ্ঠী আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী দেশ শাসন না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি তাদের মাঝে সন্ত্রাস/গৃহযুদ্ধ স্থায়ী রাখবেন। (বায়হাকী ও ইবনে মাজাহ)।
পরকালে যারা আল্লাহর রোষানলে থাকবে : হজরত আবু যার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : কিয়ামাতের দিন তিন ব্যক্তির সাথে আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদের প্রতি তাকিয়েও দেখবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তিনি এ কথাটি পুনঃ পুনঃ তিনবার বললেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তারা কারা? তিনি বললেন : তারা হলো যে ব্যক্তি টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরে, যে ব্যক্তি দান করার পর ‘দিয়েছি দিয়েছি’ বলে প্রচার করে বেড়ায় এবং যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম করে তার পণ্যদ্রব্য বিক্রয় করে। (মুসলিম)।
ঋণ পরিশোধে গড়িমসির পরিণাম : হজরত আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যে ব্যক্তি লোকের মাল নিয়ে তা আদায় করার সংকল্প রাখে সে ব্যক্তির তরফ থেকে আল্লাহ তা আদায়ের ব্যবস্থা করে দেন। আর যে ব্যক্তি আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে মাল গ্রহণ করে আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে দেন। (বুখারী-২৩৮৭, ইবনে মাজাহ-২৪১১)।
মিথ্যা কসমের মারাত্মক পরিণাম : হজরত আবু উমামাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম দ্বারা কোন মুসলিমের অধিকার হরণ করে আল্লাহ তার জন্য দোযখ ওয়াজিব ও জান্নাত হারাম করেন। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! যদি সামান্য কিছুও হয়, তাহলেও? তিনি বললেন : যদি পিল্লুগাছের একটি সামান্য ডালও হয়। (মুসলিম-১৩৭)।
সাতটি সর্বনাশী কাজের পরিণাম : হজরত আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : সাতটি সর্বনাশী কাজ থেকে দূরে থাক। সাহাবাগণ (রা.) জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! সেগুলো কী কী? তিনি বললেন : আল্লাহর সাথে শিরক করা, যাদু করা, ন্যায়সঙ্গত অধিকার ছাড়া হত্যা করা, সুদ খাওয়া, ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ করা, জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা ও সতী মুমিনা নারীর চরিত্রে মিথ্যা অপবাদ দেয়া। (বুখারী-২৭৬৬, মুসলিম)।
বিষয়: বিবিধ
১১৯৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন