সেকুলার রাজনীতিবিদদের মুখে মদিনা সনদের স্তুতি নিতান্তই রহস্যজনক।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৯ মার্চ, ২০১৪, ০৬:৫১:৪৯ সন্ধ্যা

মদিনা সনদের পিছনে একটা মহান ইতিহাস রয়েছে তা অনেকের জানা নেই।গত ৫ ই মে হেফাজতের যে শো ডাউন হয়েছিল ঢাকায় তা মদিনা সনদকে কেন্দ্র করে। এই সনদ বাস্তবায়ন করার জন্য প্রধান যে কলাকুশলি তা হলো উন্নত চরিত্রের মানুষ।রাসূল সা: ১৩টি বছর পরিশ্রম করেছিলেন মক্কায় এই মানুষগুলো তৈরি করার জন্য।৩৬০ টি মূর্তি সামনে রেখে মক্কার চত্বরে নামাজ আদায় করেছিলেন।জুলুম,অত্যাচার অবিচার , আবরোধ এবং নিজ ভূমি থেকে হিজরত করতে বাধ্য হয়েছিলেন।অসংখ্য যুদ্ধ প্রতিরোধ করেছিলেন,তায়েফে নিজেকে রক্তাক্ত করেছিলেন,ওহুদে আহত হয়েছিলেন,মানবকল্যানে নিজেকে অভুক্ত রেখেছেন,পরিবারে মাসের পর মাস চুলোয় আগুন জ্বলেনি,খেজুরের বিছানায় শুয়ে জীবন অতিবাহিত করেছেন।যারা আজ মদিনা সনদের কথা বলেন তারা কোন অবস্হা থেকে বলছেন? কি কারনে বলছেন আমার জানতে ইচ্ছে করে।যে রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় প্রতিদিন মানুষ নির্যাতিত হচ্ছে,অকারনে জীবন দিচ্ছে,অসংখ্য মানুষ ক্ষুধার্ত থাকছে,মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্র হচ্ছে আর শাসকরা জনগনের টাকায় তাদের সামনে হাঁকিয়ে চলছেন দামি গাড়ি নিয়ে,বিলাস জীবন যাপন করছেন তাদের মুখে যখন মদিনা সনদের কথা শুনি এটা একটা কৌতুক মনে হয়।গত ২২ মার্চ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ইসলামী চিন্তাবিদ, মাওলানা-মাশায়েখদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদাত্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন, ‘বাংলাদেশ শাসিত হবে মদিনা সনদের আঙ্গিকে এবং কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন এ দেশে প্রণয়ন করা হবে না’। তার এ উচ্চারণটি বিরাট মানসিক ঔদার্যের পরিচয় বহন করে সন্দেহ নেই-কিন্তু তবুও অকুণ্ঠচিত্তে এই ঘোষণাটি মেনে নিতে ইসলাম প্রিয় মানুষ পারে কিনা আমার সন্দেহ রয়েছে। কারন প্রতিটি কথার সাথে কাজের মিল থাকতে হয়।যিনি মদিনা সনদের প্রনেতা তার জীবনের সাথে প্রতিটি কথা ছিল শতভাগের পূর্নতায় ভরা। যে মানুষগুলো সংবিধানে আল্লাহর কথাটিই রাখতে সম্মত নয় সেই মানুষগুলোর কথায় মদিনা সনদ বাস্তবায়নের কথা শুনে আমার শতভাগ প্রহসনই মনে হয়।তবে আল্লাহ কারো উপর রহমত নাজিল করলে সে ভাল হতে পারে এ বিশ্বাস আমাদের আছে।

ইসলামের মৌলিক ৫ টি বিষয় ( আল্লাহ ও রাসুল (সাHappy এর উপর বিশ্বাস স্হাপন, দিনে রাতে ৫ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে কায়েম করা,যাকাত দেয়া,রমজানের রোজা রাখা ও বায়তুল্লাহর হজ্জ করা)। এর মাধ্যমে দ্বীনের কাজগুলো করা।একজন মানুষের জন্য ১০টি মৌলিক দায়িত্ব রয়েছে যা সূরা নিসার ৩৬ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন এভাবে,'আল্লাহর এবাদত কর আর তার সাথে কাউকে শরীক করো না,পিতা মাতার সাথে সদয় আচরন কর,নিকট আত্মীয়দের প্রতি,নিকট প্রতিবেশীর প্রতি,এতিম ও মিসকিনদের প্রতি,নিকট সম্পর্কীয় প্রতিবেশীর প্রতি,দূরের প্রতিবেশীর প্রতি, পার্শবর্তি সাথির প্রতি,পথচারির প্রতি আর তোমাদের ডানহাত তোমাদের যাদের ধরে রেখেছে তাদের প্রতি।' প্রতিনিয়ত ভাল কাজের আদেশ ও খারাপ কাজের নিষেধের কাজগুলোর মাধ্যমে একজন মুসলিম সমাজে বসবাস করবে যাতে নিজে ভাল থাকে ও অন্যকে ভাল রাখার সহায়তা করতে পারে। যে সমাজে একজন মানুষ এ নিয়মনীতি মেনে চলে সে সমাজ ভাল হতে বাধ্য। প্রতিটি মানুষ যদি একে অপরের কল্যান কামনা করে সে সমাজে হত্মা,খুন,ব্যাভিচার,অন্যান্য রাহাজানি হতে পারে না।আজকের সামাজিক প্রেক্ষাপট দেখলে কি মনে হয়? যারা সুন্দর কথা বলছে, তাদের জীবনে ইসলামের সৌন্দর্য নেই, দিনের আলোতে যা বলছে,রাতের আঁধারে তার বিপরীত কাজ করছে।লাখ মানুষের সামনে যা বলা হচ্ছে তার এক শাতাংশ ও কার্যকর হচ্ছে না। প্রশাসন দিন দিন ভংগুর হয়ে পড়ছে।জন জীবন বিপন্ন হচ্ছে। সমাজে ইসলামের বিপরীত কাজগুলো হচ্ছে। টিন এজারদের মধ্যে ব্যাভিচার ও আত্মহত্মার প্রকোপ বাড়ছে।অন্যায়ের এ প্লাবনে মিডিয়াতে যা বলা হয় তা নিতান্ত প্রহসন বলে আমাদের অনেকের কাছে মনে হচ্ছে। ইসলাম কেউ মানুক বা না মানুক যদি মানবতার মৌলিক বিষয়গুলোও মানার ব্যাবস্হা থাকতো তাহলেও সমাজ স্হির হতে পারতো।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে ইতিপূর্বে পত্র পত্রিকায় ফলাওভাবে প্রচারিত হয়েছে যে তিনি নামাজি ও ফযরের পরে কুরআন তেলাওয়াত করেন। এগুলো নিতান্তই একজন মুসলিমের ব্যাক্তিগত কাজ আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়ার।মানুষকে জানানোর কোন দরকার আছে বলে মনে হয় না।অবশ্য কিছু কিছু চাটুকার তাদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য প্রচারনা চালান ও খুশি রাখার চেষ্টা করেন। তাদের জানা দরকার মানুষের ছোট বড় সব কাজই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।একজন প্রধান মন্ত্রী এমনিতেই সম্মানীয়। আল্লাহ অনেকের মধ্য থেকে তাকে সম্মানীয় করেছেন আর তার দায়দায়িত্ব অনেক জাতির জন্য।তিনি যদি তার দায় দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করেন তাহলে আল্লাহর কাছে জবাবদীহি করবেন এবং আমরা সবাই আমাদের কাজের জন্য আল্লাহর কাছে দায়বদ্ধ।মদিনা সনদের মূল বিষয়াবলীর মধ্যে ছিল আন্তঃধর্ম সহাবস্থান, নাগরিকের জান-মালের নিরাপত্তা বিধান, মানবাধিকার, বন্দীর প্রতি আচরণ, মজলুমের প্রতি সহানুভূতি, প্রতিবেশীর হক, সুবিচার নিশ্চিত করা ইত্যাদি। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নবম সংসদের পাঁচ বছরের শাসনকাল ও বর্তমানে দেশে বিরাজমান সার্বিক পরিস্থিতির দিকে গভীর দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে তাকে সাধুবাদ জানাতে দ্বিধাগ্রস্ত মানসিকতার মূল কারণ হলো, মদিনা সনদটি উনি পুরোপুরি অধ্যায়ন করেছেন বা তার অন্তর্নিহিত সত্যটিকে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছেন কিনা আমি নিশ্চিত নই। মদিনা সনদের মৌলিক দিক ও দর্শনটি ছিল-কেউ কারো ধর্মের প্রতি হস্তক্ষেপ না করে পরস্পরের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের অঙ্গীকার। এখানে মহানবী (সা.)-এর মহানুভবতার আঙ্গিকে বিশ্বের বিরল ও একক নেতৃত্বে মুসলমানগণ মক্কা শরীফ থেকে হিজরত করে মদিনায় আসার পর তাৎক্ষণিক সংঘাত ও সংঘর্ষকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য মহানুভবতার আঙ্গিকে, বিশ্বের মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের নিদর্শনস্বরূপ এই সনদটি তৈরি করেছিলেন। যা আজ পর্যন্ত ইতিহাসে অদ্বিতীয়, অনন্য সাধারণ ও অবিস্মরণীয় রাষ্ট্রীয় বিধি-ব্যবস্থা হিসেবে সমাদৃত।

মদিনা সনদের প্রবক্তা, যুগশ্রেষ্ঠ মানুষ, নবীদের শিরমনি ও আখেরি নবী ও রাসূল সা: নিজে ছিলেন চরিত্রে উন্নত আর তার আশে পাশে যারা ছিল তারাও ছিলেন অনুকরনীয়।দুনিয়ার লোভলালসা তাদের কারোরই ছিল না। কিন্তুমাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠনিঃসৃত সেই অভাবনীয় সনদের সপক্ষের উক্তি কার্যকর করতে না পারার ব্যাপারে সন্দেহের প্রথম কারণ হচ্ছে এই যে, তার চতুর্পার্শ্বে দুর্গের মতো যারা প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তারা বুদ্ধিজীবীর নামাবলী গায়ে দিয়ে সত্যিকার অর্থে বিবেক-বিবর্জিত বুদ্ধির বারবনিতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তাদের অনেকের কথাবার্তা, চালচলন, মন ও মননশীলতায়,জীবনভোগে এবং সম্পদের পাহাড় গড়াতে অতি আধুনিক। এদের সিংহভাগ ইসলামের মৌলিক কাজগুলোর সাথেও সম্পৃক্ত নয়। এদের অনেকে আবার দিনে বড় বড় কথা বলে রাতে পড়ে থাকে ফাইভ স্টার হোটেলের বলরুমে এলকোহল পান ও নৃত্যরত অবস্হায়। তাহলে এই বিপরীত মুখি মানুষ দ্বারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিভাবে মদিনা সনদের বাস্তবায়ন করবেন তা অনেকটা ভাবার ব্যাপার। তবে তিনি যে কারনেই মুখ থেকে কথাটি বের করলেন,আমি আশা করি সমাজিক শৃংখলা ও আইনের শাসনটা যদি বলবৎ করতে পারেন তাহলে অন্তত জাতি একটু স্বস্তি পাবে।

ইসলাম শান্তির ধর্ম, সহনশীলতার ধর্ম; ঔদার্য ও মানবতাবাদের একটি বিশাল আঙ্গিক। তবে বর্তমান অবস্থায় এটি প্রতিষ্ঠা করা শুধু দুরূহই নয় অবাস্তব এবং অসম্ভব। এর বিশেষ একটি কারন হলো দেশে যারা ইসলামের কাজ করেন তারা বিভক্ত যাদের ব্যাপারে সূরা আনয়ামের ১৫৯ আয়াত ও সূরা রুমের ৩২ আয়াতে বর্নিত হয়েছে। বিভক্ত মুসলিম দ্বারা যেখানে ইসলাম কায়েম সম্ভব নয় সেখানে সেকুলার বা অন্য কেউকে দিয়ে এ কাজ কখনো সম্ভব নয়। এগুলো মানুষকে বলা হলো ভোটব্যাংক বৃদ্ধি করার অপকৌশল মাত্র। ধর্ম ব্যাক্তিজিবনে লালন হলে এবং যদি ইসলামি শক্তি একসাথে সত্যের পথে এগিয়ে যায় তাহলে ইসলাম কোন দেশে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশে সে সূচনা হওয়া খুবই ক্ষীন কারন জনগনের ২% সত্যিকার নামাজি কিনা সন্দেহ আছে। একজন নামাজি তাকেই বলে যে কোন অন্যায় করে না। সমাজে এইরকম নামাজি ক'জন আছে তা প্রত্যেকে নিজেদের দিয়ে অনুমান করতে পারি।আমাদের রাজনীতিতে দু'টি দলই ইসলামকে ব্যাবহার করে তাদের সব এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে থাকে।এমনকি প্রয়োজনে ধর্মান্ধদের ব্যাবহার করতেও তারা কার্পন্য করে না।

বর্তমান সরকারকে প্রায়শ পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা ধর্মের অনুশাসনকে রাজনৈতিক কলাকৌশলে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগকে আফগানিস্তান ফেরত লাদেন সমর্থক মুফতি শহিদুল ইসলামকে মনোনয়নও দিতে দেখেছি। খেলাফত মজলিসের সাথে চুক্তি করতে দেখেছি,যামাতকে নিয়ে সরকার গঠন করতে দেখেছি।

ইসলামের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর যদি শুভবুদ্ধির উদয় হয় তাহলে তাকে আমি উদারচিত্তে অভিবাদন জানাব এই কারণে যে, ইসলাম মানেই শান্তির ধর্ম। যদি ইসলামকে তিনি ভাল বেসেই মদিনা সনদ কায়েম করতে চান তাহলে সেকুলারকে বাদ দিয়ে সংসদকে আবেহায়াতের পানি দিয়ে গোসল করিয়ে মুক্ত ও পরিচ্ছন্ন করতে হবে। এটা করা সত্যিই কঠিন কাজ। ইসলামের আক্কিদায় অন্য ধর্মের সঙ্গে সহ-অবস্থান করার কথা বলা আছে, কিন্তু এর সাথে অন্য কোন চেতনার সমন্বয় ঘটানো যায়-এই কথাটি হারাম। সূরা কাফিরুন তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

পরিশেষে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই মদিনা সনদ বাস্তবায়ন অনেক পরের কথা, যদি সম্ভব হয় দেশ থেকে দুর্নীতি, দলীয়করণ, বিচার ব্যবস্থার বিকলাঙ্গতা,জংগিবাদ দূর করে সামাজিক ন্যায়বিচার,শিক্ষার সুস্হ প্রসার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিস্থাপন করতে পারেন-তাহলে এই গভীর আতঙ্ক আর আশঙ্কা ও অবক্ষয়ের অতলে নিমজ্জিত জাতির উত্থানের একটি অবকাঠামো তৈরি হতে পারে আর জাতি এ জন্য আপনাকে চিরদিন স্মরন করবে।

বিষয়: বিবিধ

১৩৬৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

199913
২৯ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫০
শিশির ভেজা ভোর লিখেছেন : সেকুলার মানে ধর্মহীনতা নয় সব ধর্মকে সম্মান করা। কিন্তু তথাকথিত জামাত শিবিরের নেতারা একে ধর্মহীনতা বলে মিথ্যা প্রচার করছে।
199961
২৯ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:৫৫
নীল জোছনা লিখেছেন : বর্তমান আওয়ামী লীগকে এই কারণে ভালোবাসি যে তারা একটি সেকুলার রাষ্ট্র কায়েম করতে পেরেছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File