ঐক্যবদ্ধ চেতনার স্ফুরন ঘটাতে না পারলে জাতির উন্নতি সম্ভব নয়।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২২ মার্চ, ২০১৪, ০৮:৫৪:০১ রাত

বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে একটি ক্ষুদ্র দেশ হলেও আমার মনে হয় কোথাও প্রাচুর্যের শেষ নেই। পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় প্রাকৃতিক পরিবেশ অতি মনোরম।১৬ কোটি মানুষের বাস এক রকম সমস্যা হলেও কোন সরকারই তাদের সম্পদে পরিনত করার উদ্দোগ নেয় নি। পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মালেশিয়া , সিংগাপুর কি আমাদের থেকে এগিয়ে যায় নি? আমাদের সবকিছুই আছে কিন্তু নেই শুধু একে অন্যের মধ্যে বন্ধন ও ঐক্যের,নেই নির্ভরতার প্রয়াস। দু'জন পাশাপাশি বাস করলে দরকার হয় সম্পর্ক উন্নয়ন ও আদান প্রদানের।এই একটি যায়গায় আমরা হেরে যাচ্ছি। আমার প্রতিবেশী গরিব হলে কিভাবে তার সম্পদ কুক্ষিগত করবো সে বাসনা এখন দেখতে পাচ্ছি। এ কারনেই কি দেশ স্বাধীন হয়েছিল? এ কারনেই কি একটি ঐক্য গড়েছিল এদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ? আমরা ধীর্ঘকাল পরাধীন ছিলাম।পরাধীন থাকলে নিজের সম্পদও নিজের কাছে নিজের মনে হয় না। যে জন্য এ দেশ স্বাধীন হয়েছিল তার কোন কিছুই জাতি ভোগ করতে পারেনি একমাত্র শাসক , আমলাশ্রেনি তাদের তাবেদার কিছু শ্রেনি ছাড়া। বিদেশী শাসকদের তাড়িয়ে এখন দেশীয় শাসকরা শোষন করছে। বাংলাদেশ যদি স্বাধীন হতো তাহলে বিদেশীরা আজও কেন আমাদের আভ্যন্তরীন বিষয় নিয়ে তোড়জোড় করে,নির্দেশ দেয়ার চেষ্টা করে। বন্ধু কি কখনো চাপ সৃষ্টি করতে পারে আমাদের আভ্যন্তরীন বিষয়ে? হাঁ তারা করছে কারন আমরা বিভক্ত হয়ে পড়েছি। যখন ঐক্যবদ্ধ ছিলাম আমাদের কাছে গোলাবারুদ তেমন ছিল না,আমাদের অদম্য শক্তি শাহস আমাদের জয়ি করেছে।এখন আমরা বিভক্ত ও হায়েনার আচরন নিয়ে একে অন্যের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছি। নিজের রক্ত নিজেই চুষছি। এ এক মহা লজ্জার ব্যাপার।মানুষের ন্যুনতম অধিকারগুলোর স্বীকৃতি ৪২ বছরেও কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি বরং তৈরি হয়েছে হাজার হাজার নব্য কোটিপতি।পূঁজিবাদি সমাজ যেভাবে গড়ে উঠেছে তাতে প্রান্তিক মানুষের জীবন রক্ষা হওয়ার কোন উপায় নেই। এদেশের কৃষক সর্বকালের সর্বহারা।তারাই এদেশেকে তাদের হাড়ভাংগা খাটুনি দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে। উৎপাদন করে যাচ্ছে অবিরাম।উৎপাদিত দ্রব্যের মুল্য মিলে বা নি মিলে চেষ্টা করে যাচ্ছে দেশকে সহায়তা করতে।তাদের ঢেলে সাজানোর,তাদের দু:খ দুর্দশা মিটানোর ব্যাপারে মরিয়া হয়ে উঠেনি কোন সরকার।তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেনি মধ্যস্বত্ব ভোগি বা অন্য ব্যাবসায়িরাও।বরং কিভাবে তাদের ঠকিয়ে নিজেদের ব্যাবসা চাংগা করবে তাই করে যাচ্ছে। মোটকথা কারো সাথে কোন হৃদ্যতা গড়ে উঠছে না।সব যায়গায়ই প্রহসন ও কু-রাজনীতির একটা প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একটি দেশের কাঠামোকে মজবুত করার জন্য যে সম্মিলিত প্রয়াস জরুরি তা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো ভাবছে না। এর প্রধান কারন হলো দেশপ্রেম নেই।কোন মানুষ যদি দেশপ্রেমিক হয়, নিজের মাকে ভালবাসে, কখনো সম্ভব নয় মায়ের সম্ভ্রম হানি করা। প্লেটোর রিপাবলিকে সক্রেটিস কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, দেশপ্রেম কি? তিনি বলেছিলেন দেশপ্রেম হলো নিজের যায়গায় নিজে কাজ করা।আমরা সবাই যে যেখানে আছি সততার সাথে ও দেশের কল্যানে কাজ করছি কি? এমন কোন প্রতিষ্ঠান কি আছে যেখানে ঘুষ বানিজ্য নেই? আপনি বাড়ির গ্যাস,বিদ্যুৎ,মিটার আনতে যখনি অফিসে যাবেন,আপনাকে টেবিলের পর টেবিল ঘুরাবে।আর আপনি কয়েকদিন ঘুরতে ঘুরতে যখন হতাস হবেন তখনি আপনাকে নেমে যেতে হবে অনৈতিক কাজে। সরকারি লগ্নি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে লোন নিতে যাবেন,ঘুষ দেয়া ছাড়া টাকা নিতে পারছেন না।কোন ব্যাবসা করতে যাবেন অফিস সহ সব যায়গায় ঘুষ দিতে হবে।যে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এ অবস্হা সে সমাজের উন্নতি কি করে আশা করা যায়? এখান থেকেই সন্ত্রাসের সৃষ্টি হয়। মানুষ যখন নিজের বাঁচার নুনতম প্রয়োজন মিটাতে ব্যার্থ হয় তখনি সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের পথ ধরে। এ পথকে উত্তোরন করার দায়িত্ব সরকারের যার দায়িত্ব কেউ বহন করছে না।

দেশকে কে এগিয়ে নিয়ে যাবে? রাজনৈতিক দলগুলোর কাজ নিজেদের ঐক্যের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তাদের সহযোগিতা করার কাজ দেশের সব সেক্টরের। যদি রাজনৈতিক দলগুলো হানাহানিতে ব্যাস্ত থাকে,গুম - খুন করে একে অন্যকে তাহলে কিভাবে সম্ভব হবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।ইদানিং টক শো গুলো দেখলে বুঝা যায় তারা একে অন্যকে কিভাবে ব্যাক্তিগতভাবে ঘায়েল করতে চায়।একি দেশপ্রেম না অন্য কিছু? হিংসা বিদ্বেষ যদি রাজনীতিবিদদের সংগি হয়ে যায় তাহলে সন্ত্রাস আর দুর্নীতি হবে তাদের প্রধান অস্ত্র।দেশে যে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের কথা আমরা শুনি এবং দেখি, তার পেছনে যে মানসিকতাটা কাজ করে তাহলো শ্রম ও সৃষ্টি না করে সহজে উপরে উঠে যাওয়া। ঘুষ দেয়, কেননা ঘুষ দিলে আর কোনো অসুবিধা থাকে না, কাজটি দ্রুত সম্পন্ন হয়। ঘুষ যে দেয় সে আবার নেয়ও। এই ঘুষেরই তো আরেক রকম প্রকাশ হচ্ছে সন্ত্রাস। পরিশ্রম না করে উন্নতি করা অর্থাৎ বড় লোক হওয়ার পথ এখন সৃষ্টিশীলতার পথে মস্ত এক প্রতিবন্ধকের সৃষ্টি করছে। কৃষক জানে না কীভাবে ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ দেয়ার সামর্থ্যও তার নেই; কৃষক শ্রম দেয়, উৎপাদনের কাজে প্রাণপণে ব্যস্ত থাকে। কৃষকের সংস্কৃতি একেবারেই ভিন্ন ধরনের; সেটি পুরোপুরি সৃষ্টিশীল; কিন্তু কৃষক তো দৃষ্টান্ত নয়। কৃষক চিরকালই উপেক্ষার, বড়জোর করুণার পাত্র; অনুৎপাদনের সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে এমন ক্ষমতা কোনোকালেই কৃষকের করায়ত্ত ছিল না, এখনো নেই। তবে গ্রামে গেলে বুঝা যায় এখনো তাদের ঐক্য বদ্ধ চেতনা আছে, একে অন্যকে সহযোগিতার আগ্রহ আছে।

শ্রমিকও পরিশ্রম করে। গার্মেন্টসের মেয়েদের শ্রম দেখে বোঝা যায় মানুষ কতটা পরিশ্রমী হতে পারে। কিন্তু এদের শ্রমও দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে না। দৃষ্টান্ত হচ্ছেন রাষ্ট্রের শাসক শ্রেণীর লোকেরা, যাদের অধিকাংশই পরিশ্রম করেন না, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস করেন, যাদের মূল প্রবণতাটা হচ্ছে লুণ্ঠনের। এ দেশের আদর্শই সমাজের জন্য আদর্শ হয়ে ওঠে এবং হয়ে রয়েছে। আমলারা সর্বদা দৃশ্যমান নন, অনেক সময়েই অদৃশ্য থেকে কাজ করেন; কিন্তু তাদের কাজ যে সৃষ্টিশীল নয় এটা বোধ করি তারা নিজেরাও স্বীকার করবেন। এনজিও সেক্টরে অনেক রকমের কাজ হচ্ছে, কিন্তু এসব কাজও অত্যন্ত সীমিত। সর্বোপরি এনজিওদের কাজের লক্ষ্য হচ্ছে বিদ্যমান সমাজ কাঠামোকে অক্ষুন্ন রেখে অর্থনীতির পুঁজিবাদী বিকাশের ধারাটিকে সাহায্য করা এবং পুঁজিবাদের যে অন্তর্নিহিত আদর্শ, ব্যক্তিকে বড় করা, সমষ্টি থেকে ব্যক্তিকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা, সেটাতে মহোৎসাহে হাওয়া দেয়া। অথচ সৃষ্টিশীলতার পথে প্রধান অন্তরায়টিই হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত সমাজ কাঠামো এবং উন্নয়নের পুঁজিবাদী পথ ও আদর্শ। ক্ষুদ্র ঋণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুঁজিবাদীর জন্ম দেয়, যারা এই ঋণের বন্ধনে জর্জরিত থাকে, তারা বাইরে যেতে পারে না। আর বড় ঋণ যারা নেয়, তারাও বিনিয়োগ না করে তালে থাকে টাকাটা মেরে দেয়ার। এটি অন্তরায়ের একটি দৃষ্টান্ত।

রাষ্ট্র বদলেছে, কিন্তু আসলে বদলায়নি শাসকদের মননশীলতা। তার কাঠামোটি আগের মতোই আমলতান্ত্রিক। এর সব সদস্য, চাই তিনি সচিব হন কি পিয়ন হন, সবাই বিচ্ছিন্নতাকে নিজের জন্য অহংকারের ব্যাপার বলে মনে করেন। পুরনো রাষ্ট্র ভেঙেছে আবার নতুন গড়ে উঠেছে, কিন্তু তার আমলাতান্ত্রিক কাঠামোটা বদলায়নি; বরং বদলানোর ভান করে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রীয় নীতি ব্রিটিশ আমলে ছিল পুঁজিবাদী, পাকিস্তানি আমলে সেটা অক্ষুন্ন ছিল, বাংলাদেশের আমলে সেটা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বরং দুর্দান্ত হয়ে উঠেছে। আজ তো প্রশ্ন জাগে, জনগণ যে এমন অবিশ্বাস্য রকমে আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশকে স্বাধীন করল, সেটা কি পুঁজিবাদের বিকাশের রাস্তাটাকে পরিষ্কার করে দেয়ার জন্য? মানি আর নেইবা মানি, বাস্তবে কিন্তু সেটাই ঘটেছে; পুঁজিবাদ আগের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। পুঁজিবাদ অবশ্যই উৎপাদনে বিশ্বাস করে; কিন্তু আমাদের দেশে যে পুঁজিবাদ বিদ্যমান ও কার্যকর, সেটি ঐতিহাসিকভাবেই লুণ্ঠনপ্রবণ এবং এখনো তেমনই রয়েছে। এখন আদর্শ হিসেবে সে আরো বেশি পরিব্যাপ্ত। যে সমাজ কাঠামো এখানে বিদ্যমান, সেটি ইংরেজ একদিন নিজের প্রয়োজনে তৈরি করেছিল। এটি শোষণমূলক। এতে অল্প মানুষের সুযোগ রয়েছে বেশি মানুষকে শোষক করার; শোষণ করে ধনী হওয়ার। এই ব্যবস্থা উৎপাদনে উৎসাহী নয়, উৎসাহী লুণ্ঠনে। সমাজের এই গঠন এবং পুঁজিবাদের ওই আদর্শ এদেরকে বদলাতে না পারলে সৃষ্টিশীলতা বাড়বে না, কেননা এরা উভয়েই হচ্ছে মস্ত বড় প্রতিবন্ধক। এনজিওদের কাজ এদেরকে ভাঙা নয়; বরং শক্তিশালী করা।

সৃষ্টির জন্য একতা চাই। ঐক্য অত্যাবশ্যক। আমরা বারবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। যোগ দিয়েছি বিভিন্ন আন্দোলনে, কিন্তু ঐক্য টেকেনি। সবচেয়ে বড় ঐক্য দেখা গেছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে। এর তো কোনো তুলনা হয় না। শ্রেণী, পেশা, সম্প্রদায়, অঞ্চল সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে মানুষ এক হয়েছিল একটি স্বপ্নের দ্বারা তাড়িত হয়ে। দুঃস্বপ্নের মধ্যে ছিল আমাদের প্রতিদিনের বসবাস; কিন্তু আমরা অসম্ভব রকমের সৃষ্টিশীল হয়ে উঠেছিলাম। যুদ্ধের ব্যাপারে আমাদের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না, গেরিলা যুদ্ধের তো নয়ই অথচ গেরিলা যুদ্ধে কি অসাধারণ উদ্ভাবন শক্তি তখন দেখা গেছে। সুশিক্ষিত ও সুসজ্জিত ৯০ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য যে আত্মসমর্পণ করেছে সেটা তো এমনি এমনি ঘটেনি। এটা ছিল বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের সৃষ্টিশীলতার কাছে পাকিস্তানি হানাদারদের ধ্বংসাত্মক শক্তির পরাজয়। যুদ্ধ শেষে তো কথাই নেই, এখন তো আত্মস্বার্থকেন্দ্রিকতার জয় জয়কার। যার দরুন বিজয়ের পর যুদ্ধকালীন সৃষ্টিশীলতাকে আমরা ধরে রাখতে পারলাম না, হানাদারদের হারিয়ে দিয়ে আমরা হেরে গেলাম-হানাদারদের পেছনে ছিল যে আদর্শিক দৈত্যের প্ররোচনা, সেই পুঁজিবাদের কাছে। একটি শীর্ষবিন্দুর দিকে ঐক্যের যে আলো জ্বলে উঠেছিল, তা নিভে গেল, পথ হারিয়ে আমরা লিপ্ত হলাম পারস্পরিক সংঘর্ষে। এই পরাজয়ও ঐতিহাসিক বটে।

বিনিয়োগ ঘটছে না। অভাব টাকার নয়, কিন্তু অভাব আস্থার। শেয়ারবাজারে শেয়ার কিনতে গিয়ে লোকে প্রতারিত হয়েছে। স্বল্প সঞ্চয়কারীরা ব্যাংকে টাকা গচ্ছিত রাখেন। কথা নেই, বার্তা নেই তার ওপর ট্যাক্স বসে যায়। এমনকি সরকারি তালিকাভুক্ত ব্যাংকও লোপাট করে দেয় টাকাওয়ালারা। বিদেশ থেকে ভাই ভাইকে টাকা পাঠায় বিনিয়োগের জন্য। স্থানীয় ভাইটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয় ‘ভাই ভাই রেস্টুরেন্ট’-এর, এক সময় দেখা যায় রেস্টুরেন্ট তো নেই-ই, এমনকি সাইনবোর্ডটিও নেই। ভাই ঠকিয়েছে ভাইকে। এমন প্রতারণা সর্বত্র ঘটে। ফলে মানুষের আস্থা যায় নষ্ট হয়ে। আপন ভাইকেই যখন বিশ্বাস করা যাচ্ছে না, বিশ্বাস করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হতে হচ্ছে, তখন আস্থা রাখবে সে কার ওপর? কেমন করে? সরকার বিনিয়োগ বিনিয়োগ বলে চিৎকার করছে, কিন্তু এর জন্য যে পরিবেশ দরকার তা নিশ্চিত করছে না, করতে পারছে না। বিনিয়োগকারীকে দেখা হয় বেআইনি আয়ের উৎস হিসেবে; পদে পদে তাকে নিগৃহীত করে আমলাতন্ত্রের সদস্যরা যে যতটা পারে হাতিয়ে নেয়। হতভাগ্য বিনিয়োগকারী নাকে খত দিতে দিতে পলায়ন করে।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভালো উৎপাদন হচ্ছে। যেমন কৃষিপণ্য। কিন্তু সে জন্য সংরক্ষণের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেই, তদুপরি রয়েছে মধ্যবর্তী ব্যবসায়ীদের ভীষণ রকমের তৎপরতা; যার দরুণ উৎপাদকরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। খাদ্যে আমরা প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছিলাম, কিন্তু সেটাকে ধরে রাখতে পারিনি মনোযোগের অভাবে। বাংলাদেশে ওষুধ বেশ তৈরি হচ্ছে। রফতানিও হচ্ছে; কিন্তু এখনো পুরোপুরি আস্থা অর্জন করতে পারেনি। কেননা মান নিয়ে সন্দেহটা সবসময়ই থেকে যাচ্ছে। আস্থার ব্যাপারে সবচেয়ে জরুরি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে রাষ্ট্র, রাষ্ট্রই তো দৃষ্টান্ত ও কেন্দ্রস্থল হবে সর্বপ্রকার আস্থার। রাষ্ট্র যখন ভরসাস্থল হতে ব্যর্থ হয়, লোকে তখন ভরসার জায়গাজমি খুঁজবেটা কোথায়?

শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই এগিয়েছি। কিন্তু সৃষ্টিশীলতার জন্য সর্বাধিক প্রয়োজন ছিল সর্বস্তরে মাতৃভাষাকে মাধ্যম হিসেবে চালু করা। সেটাই ছিল শিক্ষা ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ওইখানে সফল হলে সৃষ্টিশীলতার দ্বার আমাদের জন্য অবারিত হয়ে যেত। কিন্তু সেটা ঘটেনি। আমরা কিছু কিছু বই অনুবাদ করেছি, কিন্তু মৌলিক পাঠ্যবই তেমন একটা লিখতে পারিনি। উচ্চ আদালতেও বাংলাভাষা চালু হয়নি। মেয়েদের শিক্ষা এগিয়েছে। কিন্তু মেয়েদের নিরাপত্তা মোটেই বৃদ্ধি পায়নি না কর্মক্ষেত্রে, না গৃহে। ইতিহাসের চর্চা চলে; বইপত্র লেখা হচ্ছে, কিন্তু তাতে বর্ণনা যত পাওয়া যায় বিশ্লেষণ তত মেলে না। মতাদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে ইতিহাস গভীরতা পায় না। দার্শনিক বিষয়ক রচনাতেও দার্শনিক অবস্থানের ঘাটতি চোখে পড়ে। উপন্যাসে ছোট ছোট কাহিনী পাওয়া যায়, সমাজকে পাওয়াটা কষ্ট হয়; অনেক সময়ই মনে হয় যেন রূপকথা বলা হচ্ছে। বিজ্ঞানের ওপর বই লেখা হয় কম। স্কুল-কলেজে বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে।

সব কিছু মিলিয়ে ছবিটা বন্ধ্যত্বের। সেটা তো বুঝলাম। কিন্তু এর থেকে অব্যাহতি পাওয়ার উপায়টা কি? উপায় হচ্ছে বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে ঐক্য গড়া। সাময়িক ঐক্য নয়, স্থায়ী ঐক্য চাই। সে ঐক্য গড়ার জন্য প্রয়োজন দেশপ্রেমের; যার নিদর্শন বিভিন্ন আন্দোলনে দেখা গিয়েছে, সর্বোচ্চ মাত্রায় পেয়েছি আমরা একাত্তরে। দেশপ্রেম বলতে মাতৃভূমির প্রতি তো অবশ্যই, তার চেয়েও অধিক মাত্রায় দরকার দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা। আর এই ভালোবাসার অর্থ মানুষ যেভাবে আছে তাকে সেই দুর্দশার ভেতর থাকতে দেয়া নয়, তাকে যথার্থ অর্থেই মুক্ত করা। মুক্তিই কেবল পারে উন্নতি আনতে; তার বাইরে উন্নতির সব কথাই বাগাড়ম্বর মাত্র। দেশপ্রেম সম্ভব করে তোলে সর্বোত্তম বিনিয়োগ, যে বিনিয়োগে মানুষ আপন প্রাণ পর্যন্ত অর্পণ করতে প্রস্তুত তাকে। যে মুক্তির কথা বলছি তার নাম হচ্ছে সামাজিক বিপ্লব। এই বিপ্লবই কেবল পারবে সৃষ্টিশীলতার প্রতিবন্ধক যে সমাজ কাঠামো এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতি ও তার মতাদর্শ তাদের ভেঙে ফেলে মানুষের মধ্যে ঐক্য আনতে এবং সৃষ্টিশীলতার প্রতিবন্ধক যে সমাজ কাঠামো এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতি ও তার মতাদর্শ তাদের ভেঙে ফেলে মানুষের মধ্যে ঐক্য আনতে এবং সৃষ্টিশীলতাকে উন্মুক্ত করে দিতে।

বিষয়: বিবিধ

১০৮৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

196336
২২ মার্চ ২০১৪ রাত ০৯:১৪
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : ভাল লাগলো, ধন্যবাদ সুন্দর লেখার জন্য
196358
২২ মার্চ ২০১৪ রাত ১০:০৩
ফেরারী মন লিখেছেন : দেশপ্রেম বলতে মাতৃভূমির প্রতি তো অবশ্যই, তার চেয়েও অধিক মাত্রায় দরকার দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা। আর এই ভালোবাসার অর্থ মানুষ যেভাবে আছে তাকে সেই দুর্দশার ভেতর থাকতে দেয়া নয়, তাকে যথার্থ অর্থেই মুক্ত করা

যথার্থই বলেছেন। অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File