নৈতিকতা একজন মানুষের প্রধান মুকুট।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২২ মার্চ, ২০১৪, ০৫:৩৪:০৪ বিকাল
অন্ধকার যুগের সূচনা হয়ে যায় অন্ধকারেই। আমরা এখন বিশ্বাস করি, রাজনীতিতে সবই সম্ভব। সংবিধান রক্ষার একটি নির্বাচন হয়ে গেল, কিন্তু গণতন্ত্র রক্ষার নির্বাচনের কথা যেন ভুলেই গেছে সরকার। এই বিস্মরণের জন্য দুঃখ নেই, অনুতাপ নেই। আমরা আশা করি যে-ই আসুক ভাল কাজ করুক। বরং সরকারি দলের প্রতাপশালী একজন নেতাকে বলতে শুনি, ‘আন্দোলনের নামে নাশকতা করলে তাদের হাত-পা কেটে দেওয়া হবে।’ অপরাধের শাস্তি হিসেবে হাত-পা কাটার শাস্তি সৌদি আরবে আছে। এটা হলো কুরানিক আইন যা মুসলিম দেশে যেখানে ইসলামি শরিয়ার আইন প্রচলিত আছে সেখানে কার্যকর হয়।সূরা বাক্কারার ১৭৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'তোমাদের জন্য প্রতিশোধের বিধানে রয়েছে জীবন হে ! জ্গানবান ব্যাক্তিগন। যাতে তোমরা ধর্মপরায়ন হতে পার।' যারা কুরআনের আইনকে মধ্যযুগীয় আইন বলে সমালোচনা করেন আমার ভাবতে অবাক লাগে এরা মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত কিনা? কি করে একজন মুসলিম হয় তা জানা আমাদের অবশ্য করনীয় কাজ। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টিই করেছেন তার এবাদতের জন্য। কুরআন ও সূন্নাহের জীবন যদি একজন মানুষের জীবনে না থাকে নৈতিকতা গড়ে উঠবে কেমন করে। গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন,' Nobody choses evil,he does evil out of ignorance." রাসূল সা: বলেছেন ,' যে কোন শিশু জন্মগ্রহন করে প্রকৃতির উপর এবং তার পিতা মাতা তাকে ইহুদি খৃষ্টানে পরিনত করে।'
আমাদের সমাজ ব্যাবস্হা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় আমাদের অনেকেই ভাল কথা বলছি। মসজিদ- মাদ্রাসা,শিক্ষায়তন ও রাজনৈতিক পরিমন্ডলে সবাই ভাল কথার বুলি আওড়াচ্ছেন। কিন্তু সমাজ থেকে পংকিলতা দূর হচ্ছে না বরং কোন কোন ক্ষেত্রে বেড়ে চলছে। সামাজিক যত অনাচারগুলো হচ্ছে তার সবই রাজনীতিকে কেন্দ্র করে।প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জড়িত। আজকে যারা টেরোরিজমের নামে মুসলমানের উপর দায় চাপাচ্ছে তাদের বলবো ইতিহাস পড়ুন। ইতিহাস বলে যত অঘটন ঘটেছে তার সবই ইহুদি ও খৃষ্টানদের কাজ। মুসলিমদের ভিতর এক ধরনের মুনাপেক আছে ওরা এই অমুসলিমদেরই ভাই। মদিনায় রাসূল সা: এর সময় ৩০০ মুনাপেক ওহুদের যুদ্ধ থেকে ফিরে এসেছে। রাসূল সা: তাদের হত্মা করতে পারতেন কিন্তু তিনি তা করেন নি।কারন যদি তিনি তা করতেন তাহলে ক্কেয়ামত পর্যন্ত বলা হতো রাসূল সা: মুসলমানদের হত্মা করেছেন। একজন মুসলিম নৈতিকভাবে বলবান এবং সমস্ত অশ্লিলতা থেকে দূরে থাকেন।যারা মানুষ হত্মার সাথে জড়িত বা অশ্লিলতা বা অন্যান্য অপকর্মের সাথে জড়িত তারা সঠিক অর্থে মুসলিম নয়।
আমাদের দুই শাসকদল রাজনীতিতে খেলোয়াড়ের ভূমিকায় অবতীর্ন হয়ে গত ত্রিশ বছর যে যার মত করে সম্পদ আহরন করেছেন।জনগনের জন্য উচ্ছিষ্ট কিছু করলেও দেশের প্রাণ্তিক মানুষের তেমন কোন উন্নতি হয় নি।বাগাড়ম্বর বক্তৃতা বিবৃতি দেয়াই তাদের কাজ।একবার সংসদ সদস্য হলেই ৫/১০ কোটি টাকার মালিক হয়ে যান।এই টাকা কোথা থেকে আসে তার কোন হিসেব নেই।রাজনীতি থেকে নীতির বিদায়ের দালিলিক প্রমাণ হয়ে আছে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া সাংসদ প্রার্থীদের হলফনামা। অসৎ উপায়ে সম্পদ হাসিলের তথ্য এমনভাবে নিবেদিত যে অস্বীকার করার উপায় নেই। তার পরও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীদের হলফনামা দেওয়ার বিধানের সমালোচনা করে বলেন, ‘এই হলফনামা এখন রাজনীতিবিদদের চরিত্র হনননামায় পরিণত হয়েছে।’ রাজনীতিবিদদের সবার চরিত্র এক নয়। যাঁদের আয়-ব্যয়ে পদ্মার এপার-ওপার ফারাক, তাঁদের হয়ে কেন সাফাই গাইবেন একজন শীর্ষ রাজনীতিবিদ? অথচ ২০০৫ সালের ১৫ জুলাই তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, ‘নির্বাচন কমিশনে আয়-ব্যয় ও সম্পদের মিথ্যা তথ্য প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।’ এখন তিনি তা ভুলে গেছেন। পরিহাস এখানেই, দুর্নীতির ব্যথা যেখানে সর্বাঙ্গে, সেখানে নীতিকথা যাত্রার বিবেকের মতো করুণ কাঁদুনির চেয়ে বেশি দাম পায় না।
আমাদের দেশে কি রাজনীতিবিদ, কি প্রশাসক—কেউই স্বীয় অপকর্মের জন্য ক্ষমা চাওয়ার কথা কল্পনাও করেন না। ২০০৬ সালে বিএনপি জোটের একগুঁয়েমিতে দেশ দুই বছরের অনির্বাচিতদের শাসনে পতিত হয়েছিল। তার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কিংবা তাঁর দল দুঃখপ্রকাশ করেনি। রানা প্লাজা ধসের দায় নেয়নি দায়ী বলে প্রমাণিতদের কেউই। বরং হাজারো মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর হোতারা জামিন পেয়ে যাচ্ছে। তাজরীন ফ্যাশনসের মালিকের নাকে তাঁর কারখানার শত শত শ্রমিকের পোড়া মাংসের ঘ্রাণ লাগেনি। সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে তাঁকেসহ তাঁর প্রশাসনের কয়েকজনকে দায়ী করে বিচারের মুখোমুখি করার সুপারিশ করা হলেও সরকার উদাস। পরিশেষে নিহত শ্রমিকদের স্বজনদের সঙ্গে নিশ্চিন্তপুরে নৃবিজ্ঞানী নামের একদল কর্মীর আইনি লড়াই, মাঠের সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার ফলে আদালতের নির্দেশে অভিযুক্ত মালিক দেলওয়ার হোসেনকে আটক করা হয়। অনেক হতাশার মধ্যেও যে জাতীয় ক্রিকেট দল দেশকে এক প্রতীকে এক আশায় উদ্বেলিত করতে পারে, তাদের জার্সির গায়ে লেখা থাকে ভারতের এমন কোম্পানির লোগো, যার মালিক সম্প্রতি দুর্নীতির দায়ে আটক হয়েছেন। তাঁর দ্বারা প্রতারিত মানুষেরা তাঁর মুখে কালি ছিটিয়ে মনের জ্বালা মিটিয়েছেন। সেই কলঙ্কের কালি কি আমাদের ক্রিকেট দলের গায়েও এসে কিছুটা লাগেনি?
লোভের কাছে আমরা কে না কাতর হই? নেপালের প্রধানমন্ত্রীর দুটো মুঠোফোন ছাড়া আর কোনো সম্পদ নেই! ভক্তিতে গদগদ হয়ে বলি, আহা রে, কী মহান মানুষ! কিন্তু স্বদেশে কোনো সত্যিকার মহান মানুষকে আমরা কদর করি না। রাজনীতিতে সৎ-শুদ্ধাচারী মানুষেরা করুণার পাত্র হন। আর দুর্নীতিবাজ-গডফাদারদের স্বাগত জানাতে তোরণের পর তোরণ নির্মিত হয়, স্কুলের ছাত্রদের দাঁড় করিয়ে রাজকীয় সংবর্ধনা দেওয়া হয়, সোনার উপকরণ তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই দেওয়া আর নেওয়ায় কারও লজ্জা হয় না।
আমাদের গণজাগরণ হয়েছে, কিন্তু নীতির জাগরণের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। রাষ্ট্র-রাজনীতি-অর্থনীতি নিয়ে কত কথা হয়, বরাদ্দ হয় বিপুল গবেষণার তহবিল। অথচ এই এক জবরজং সমাজ নিয়ে চলছি শত শত বছর; এর কোনো সংস্কার নেই। সংস্কারের প্রয়োজনও কোথাও জোরেশোরে উচ্চারিত হয় না। অথচ সংস্কারহীন সমাজ দূষিত বুড়িগঙ্গার মতো মরে যাচ্ছে।
মানুষে মানুষে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার ফল হিসেবে খুনোখুনি-সহিংসতা বাড়ছে। জেনেশুনে নিরপরাধ মানুষকে গুম করা বা পেট্রল দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া এখন ডাল-ভাতের মতো ব্যাপার। সমাজের মূলে আছে মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও বিশ্বাস। তাতে চিড় ধরেছে। এ অবস্থায় সামাজিক সম্পর্কগুলো হয়ে পড়েছে বদ্ধ জালের মতো, মানুষ তাতে মুক্তির আস্বাদনের চেয়ে অ-সুখ আর বন্দিত্বের স্বাদই বেশি পায়। তখনই সমাজ হয়ে ওঠে যুদ্ধক্ষেত্রের মাইনফিল্ডের মতো। কখন-কোথায় কোন সম্পর্কে চাপ পড়লে তা বিস্ফোরিত হবে, কেউ বলতে পারে না। কেবল কখনো কোনো রসু খাঁ, কখনো কোনো এরশাদ শিকদারের নাম জানাজানি হলে মৌসুমি মাতম ওঠে। তারপর সবাই ভুলে যায়। ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য আছে হরেক রকম উৎসব। পণ্য, বিজ্ঞাপন যেভাবে চালায়, সেভাবেই চলে আমাদের সমাজ। কোনো সমাজের পতন কেবল সেই সমাজের খারাপ লোকদের জন্যই ঘটে না, পতন ঘটে যখন ‘ভালো’রাও খারাপকে খারাপ বলতে দ্বিধা করেন। সব সংকটের মূলে রয়েছে এই নৈতিক সমস্যা।ঘোলা জলে সব মাছ নিঃশ্বাস নিতে পারে না। ঘোলা পানিতে ভেদা মাছ ভেসে ওঠে আর বড় মাছেরা আরও তলায় চলে যায়। অন্ধকার যুগে অন্ধকারের শক্তি ভেসে ওঠে, আর শুভচেতনা তলিয়ে যায়। এত এত অগ্রগতির শেষে আমরা এখন সেই দশায় এসে দাঁড়িয়েছি, যখন আদম আর হাওয়া (আ) নিষিদ্ধ গাছের ফল খেলেন আর বুঝতে পরের তখনি লুটে পড়েন রবের সেজদায়। কিন্তু সেই আদি মানব-মানবীর সঙ্গে আমাদের তফাত এতটুকুই যে তারা লজ্জিত হয়েছিলেন। দুর্ভাগ্য, আমাদের মনে হয় তা-ও নেই। আদর্শ ও নৈতিকতা সমাজকে পরিশীলিত করতে পারে,দূর করে দিতে পারে সব অন্ধকার আর এই মানুষই অধিকারি হতে পারে সোনার মুকুটের তার প্রতিদিনের পদযাত্রায়।
বিষয়: বিবিধ
১১৪৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সত্যি বলেছেন। একমাত্র নৈতিকতাই পারে সকল অপশক্তিকে রুখে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করতে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন