দুই নেত্রীর বাংলাদেশ ও অরাজনৈতিক ভাষা ব্যাবহার জাতিকে মর্মাহত করছে।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৩:১২:৫৮ দুপুর

বাংলাদেশে গনতান্ত্রিক পরিবেশ আছে কি নাই তা জনগন ভাল বলতে পারবে। কারন আল্লাহর পর জনগন-ই দেশের শাসন ক্ষমতায় নিজেদের প্রত্যক্ষ ভোটে সাংসদদের সংসদে পাঠায়।ভাষার মাসের আর একদিন বাকি।এই ভাষার মাসটিকেও রাজনীতিবিদদের মর্যাদা দিতে দেখি না। শুধুমাত্র সভা সেমিনার বা ২১ তারিখ আসলে খালি পায়ে সহিদ মিনারে গিয়ে ফুল দেয়াই কি ভাষা আন্দোলনের উদ্দ্যেশ্য ? যে ভাষার জন্য ১৯৫২ সালে প্রান দেয়া হয়েছিল সে ভাষার তাৎপর্য আজকের প্রজন্ম জানে না।ভাষার যে আংগিকে চর্চা হওয়া দরকার তা হচ্ছে না।ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই দেশ স্বাধীন হয়েছে।সেই স্বাধীন দেশের শিক্ষা ব্যাবস্হা আজ তিন শ্রানীতে বিভক্ত। এলিট শ্রেনীর জন্য ইংরেজি অনুসরনে এক ব্যাবস্হা।বাংলা মিডিয়াম অনুসরনে এক ব্যাবস্হা আর বিশাল দরিদ্র মানুষের জন্য মাদ্রাসা শিক্ষার আর এক ব্যাবস্হা। একটা স্বাধীন দেশে কিভাবে এটা সম্ভব? একটি ব্যাবস্হা কি এমন হওয়া উচিত ছিল না? যে ব্যাবস্হায় সারা দেশে একটি সিলেবাস থাকবে।বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজী ভাষা সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ভাষার প্রয়োগ থাকবে।আর বেশী বেশী উন্নত জাতির বইগুলো বাংলা ভাষায় ভাষান্তরিত হবে। এর কারন খুঁজতে গেলে আমরা দেখবো এদেশের রাজনীতি ও আমলারাই দায়ী এ জন্য। কারন তারা তাদের ছেলেমেয়ে ও পরিবারকে বিদেশে রেখে পড়াচ্ছেন আর রাজনীতি করছেন সাধারন মানুষগুলোকে নিয়ে। আবার তাদের এই সোনার ছেলে মেয়েরা পড়া লেখা করে এসে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। জাতির সাথে এ প্রহসন যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। আজকে পৃথিবী ব্যাপী যে জংগিবাদের কথা চলে আসছে এবং আমাদের দেশে রাজনৈতিক নেতা বা শুশিলদের অনেকে এ নিয়ে কথা বলছেন, তারা কি ভেবেছেন কারা এদের ব্যাবহার করছে? রাজনীতিবিদ ও ব্যাবসায়িক একটা শ্রেনিচরিত্র তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করে আসছে। বাংলাদেশের মাদ্রাসা গুলোর পড়াশুনার অবস্হা পর্যালোচনা করলে দেখবেন সেখানে একমাত্র ধর্মিয় পড়াশুনা ছাড়া আন্তর্জাতিক মানের কোন পড়াশুনা নেই। কওমি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডকে আলদা না রেখে তাদের একটা বোর্ডের অধীনে কিভাবে আনা যায় তার চিন্তা ভাবনা করতে হবে। আরবী ও ইংলিশের প্রভাবে একটা সিলেবাস করা যায় কিনা? অথবা আরবি হলেও সেখানে জেনারেল সিলেবাসকে কিভাবে সংযুক্ত করা যায় যাতে তারা সাধারন ছাত্র ছাত্রীদের সাথে প্রতিযোগিতা করে দেশের একটি পরিশীলিত জনগোষ্ঠিতে পরিনত হতে পারে তার ব্যাবস্হা সরকারকে করতে হবে। তা নাহলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো এই মাদ্রসার ছাত্রদের ব্যাবহার করবে জংগিবাদে।এই বিশাল জংনগোষ্ঠি আমাদের সম্পদে পরিনত না হয়ে অদক্ষ হয়ে গড়ে উঠছে আর বেকার একটি জনগোষ্ঠি হওয়ার কারনে তারা বাঁচার তাগিদে বিভিন্ন পথ খুঁজছে আর পরিনিতিতে জংগিবাদের মত সংগঠনগুলো তাদের আশ্রিত করে দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। আমি মনে করি প্রথম দায় হলো সব সরকারের আর দ্বিতীয় দায় আমাদের জনগোষ্ঠির সবার।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে অরাজনৈতিক ভাষা ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে শীর্ষ পর্যায়ের নেতা-নেত্রীরা রাজনৈতিক সমালোচনার চেয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণেই বেশি দক্ষ। আর এই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ অব্যাহত থাকে। তার সঙ্গে যোগ দেন তাদের অনুগতরা।তাদের ভাষা আমাদের যেমন লজ্জা দেয় তেমনি আমাদের প্রজন্মকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সেদিন একটি স্কুলের মেধাবি ছেলে বলছে একি আমাদের রাজনীতির প্রধানদের কথা? আমরা এ কথাগুলো শিখতে চাই না। অরাজনৈতিক ভাষা রাজনীতিকে আরো অসহিষ্ণু করে তোলে।বাংলাদেশে রাজনীতিবিদদের মুখ থেকে বের হওয়া দুটি শব্দ 'গোলাপি' বা 'অশান্তি বেগম' বা ঘোমটাওয়ালা বুবু-এই শব্দ গুলো দিয়ে কোন দুজন রাজনীতিবিদকে ইঙ্গিত করা হয় তা সবার জানা। তাদের একজন আরেকজনকে কথায় কথায় পাকিস্তান অথবা ভারতে পাঠিয়ে দেন। একজনকে বলা হয় জামায়াতের আমির। তার জবাবে আরেকজনকে বলা হয় জাতীয় পার্টির আমির।

নবম জাতীয় সংসদে এরকম আরো অনেক শব্দের ব্যবহারে একবার চরম বিরক্ত হয়েছিলেন সাবেক স্পিকার এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। তিনি এতোই বিরক্ত হয়েছিলেন যে, সংসদের বাইরে গিয়ে কোনো কোনো সংসদ সদস্যকে গায়ে তেল মেখে কুস্তি লড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।সাভারে রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ২৪ এপ্রিল বলেন, 'কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে জানতে পেরেছি। ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে।' রানা প্লাজা ধসে প্রাণ হারিয়েছেন এক হাজারের বেশি মানুষ।নাম, উপনাম এবং বিশেষণ ব্যবহার ছাড়াও নেতা-নেত্রীরা কখনো কখনো অতীত আলোচনায় এতোই নির্মম হয়ে ওঠেন যে, তারা পরস্পরের দেশপ্রেম নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। কেউ হয়ে যান রাজাকার। আবার কেউ নব্য বাকশাল। একজন আরেকজনকে খুনি, হত্যাকারী বলতেও দ্বিধা করেন না। একজন আর একজনকে জন্মের মত কুৎসিৎ কথা বলতেও দিধাবোধ করেন না। এ কি শিক্ষার অভাব না পরস্পর ব্যাক্তিগত দ্বন্দ। দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়েতো তাদের দ্বন্দ থাকার কথা নয়।তবে রাজনীতিবিদদের এই ভাষাকে মোটেই রাজনৈতিক মনে করেন না দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। একটি রাজনৈতিক দল আরেকটি রাজনৈতিক দলের কাজের গঠনমুলক সমালোচনা করবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা না করে নেতারা ব্যক্তিগত আক্রমণ, নিন্দা এবং অপপ্রচারে লিপ্ত। আর তাতে যেসব ভাষা ব্যবহার করা হয় তাতে আমরা লজ্জা পাই।'পরস্পরকে অরাজনৈতিক ভাষা ব্যবহার করে ঘায়েল করার এই কৌশল বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। আর এই সময় এর মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এটা কোনো সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি নয়। এই ভাষা দিয়েই বাংলাদেশের রাজনীতির মান সম্পর্কে ধারণা করা যায়।বাংলাদেশের সংস্কৃতিতেও এই ধরনের নিন্দা বা ব্যক্তিগত কুৎসা রটানোর রেওয়াজ আছে। তবে দুঃখ হলো, রাজনীতিবিদরা এর উর্ধ্বে উঠতে পারছেন না। তাদের ভাষা থেকে দেশের সাধারণ মানুষ কোনো ইতিবাচক শিক্ষা পাচ্ছে না। আর রাজনীতিবিদদের সমর্থকরা তাদের এ জাতীয় কথাবার্তায় হাততালি দিয়ে আরো উৎসাহ দেন।এ ভাষার মাস থেকে অন্তত তাদের জীবনকে পরিশিলিত করার চেষ্টা করতে পারে।

রাজনীতিবিদদের এই ভাষা রাজনীতিকে আরো অসহিষ্ণু এবং সংঘাতময় করে তুলছে।বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ব্যক্তি ও পরিবারকেন্দ্রিক। তাই তাদের সমালোচনা এবং আক্রমণও ব্যক্তি ও পরিবারকে কেন্দ্র করে। তারা মনে করেন ব্যক্তিগত আক্রমণের মাধ্যমে ব্যক্তিকে ঘায়েল করা গেলে দলও ঘায়েল হয়। তাই তারা রাজনৈতিক সমালোচনার পরিবর্তে ব্যক্তিগত কুৎসা বা সমালোচনায়ই বেশি উৎসাহী। কিন্তু দেশ ও জাতি তাদের এ কথাগুলো থেকে কি পাচ্ছে যদি তারা ভাবতেন তাহলে তাহলে তারা কিছুটা পরিশীলিত হতে পারতেন। তাদের ভাষা থেকে নতুন প্রজন্মের কিছু শেখার নেই। বরং নতুন প্রজন্ম তাদের এই আচরণে ত্যাক্ত বিরক্ত। উন্নত জাতি গঠন করতে হলে নেতৃত্বকে সুন্দর ও সাবলিল ভাষা ব্যাবহার করতে হবে।দেশের উন্নয়নের জন্য কথা বলতে হবে।নতুন প্রজন্মকে শিক্ষার দিকে ঝুঁকিয়ে দিতে হবে। ভাষার প্রয়োগকে প্রতিটি স্তরে দ্রুত পৌঁছে দিতে হবে।রাজনীতিবিদদের সংঘাত,হিংসা-বিদ্বেষ ও নোংরা আচার আচরন বর্জন করে দেশ শাসনে এগিয়ে যেতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

১১৬৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

183982
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:৪০
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম, জাজাকাল্লাহুল খাইরান, অনেক সুন্দর পোস্ট
184009
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:২৩
সজল আহমেদ লিখেছেন : ভাল লাগল।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File