কপোটতা যেমন অন্তরকে কলুষিত করে তেমনি জীবনের অনাবিল আনন্দকে নি:শেষ করে।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৫:০২:৩৫ বিকাল

জীবনের অনেক কথা মনকে মাঝে মাঝে আন্দোলিত করে।পুরোনো দিনের ভাল মন্দের দিকগুলো অন্যকে জানিয়ে সাবধান করা,সেরা সময়গুলোর স্মৃতিচারন,সম্ভাবনার দিকগুলো তুলে ধরার মধ্যে নিশ্চই আনন্দ আছে। আমার মত প্রতিটি মানুষের জীবনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন এসেছে।ধাপে ধাপে বন্ধুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষাজীবন শেষ করে যখন চাকুরি জীবনের ২৩ বছর পেরিয়ে এলাম সেখানেও অনেক বিচিত্র মানুষের সাথে চলতে হয়েছে , কাজ করতে হয়েছে। মানুষের মধ্যে এত কপোট থাকে তা ভাবা যায় না। কোরআন বলেছে, কপোটরা থাকবে জাহান্নামের শেষ প্রান্তে সংকীর্ন যায়গায়।ভাবলে অবাক লাগে কেন? কাফের মুশরিকদেরইতো জাহান্নামের নিছে থাকা উচিত কারন তারা ইসলাম গ্রহন করেনি আর তাদের বিধর্মী হিসেবে আমরা সবাই চিনি ও জানি। কিন্তু আল্লাহ শ্রেষ্ঠ বিচারক।একজন বিধর্মী আমাদের ক্ষতি করতে আসলে দূর থেকে আসবে আর আমরা তাদের প্রতিরোধ করতে পারবো। কিন্তু কপোটরা যেহেতু মুসলমানের ছাদের নিছে থাকে ও মুসলমানদের সাথে চলে তাদের বুঝা অনেক কঠিন।সেজন্য এই কপোট লোকদের ব্যাপারে কঠোর ব্যাবস্হা রাখা হয়েছে।অনেকে কপোটদের চিনতে পারেনা যদিও তার মধ্যেই রয়েছে কপোটের চরিত্র।প্রকৃত কপোট হলো,ইসলামের কথা মুখে বলা কিন্তু অন্তরে ইসলাম বিদ্দেষ রাখা।কর্মক্ষেত্রে এ রকম বহু লোক রয়েছে যারা নিজের সহকর্মীদের ভাল হলে তার অন্তরে তীরের মত গেঁথে যায়।ছটপট করতে থাকে,বিভিন্ন যায়গায় গীবত ও চোগলখুরি করতে থাকে।এ ভাবে না যে আল্লাহ আমার এতটুকু রিজিকের ব্যাবস্হা রেখেছেন।এই সমস্ত লোকের ঈমান নেই।সুতরাং তাদের ইবাদাত কোনটাই কবুল হওয়ার মত নয়।আর এখনকার মুসলমান নামধারিরাতো ৫ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে মসজিদে নামাজই পড়ে না সেহেতু তাদের আল্লাহর খাতায় তো নামই নেই আর ইবাদাতের কি আছে। রাসূল সা: বলেছেন,' কপোটরা যদি জানতো ঈশা ও ফযর নামাজ জামাতে সামিল হলে কি পুরস্কার রয়েছে তাহলে তারা হামাগুড়ি দিয়ে মসজিদে যেত।' ৫ ওয়াক্ত নামাজ কায়েম ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

আমার স্কুলের প্রাথমিক দিকের কথা তেমন খেয়াল নেই তবে পন্চম শ্রেনীতে এসে যখন বৃত্তি দেয়ার জন্য পরীক্ষার হলে গেলাম তখন ডিষ্ট্রিক্ট এর ভাল ছাত্রগুলোর সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল।তার মধ্যে একজন বন্ধু ছিল মুনির যে প্রাথমিক বৃত্তিতে দ্বিতীয় হয়েছিল।জীবনে খুব বড় না হলেও আজও বন্ধুত্ব ধরে রেখেছে।মাঝে মাঝে কথা হলেই বলে আমার কপোট বন্ধুদের সাথে কি তোমার যোগাযোগ আছে? তার কথার স্মরনে এই বিষয়ের উপর আলোকপাত করার ইচ্ছে করলাম। সে ছিল অত্যন্ত চটপটে ও লাজুক। তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল একটি মেয়ে যে নাকি সাধারন বৃত্তি পেয়েছিল তবে বেশ সুন্দরি।ভাল ছাত্রটির সাথে মিশে নিজে ভাল রেজাল্ট করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল।বন্ধুটি এইচএসসিতে ভাল রেজাল্ট না করায় নিছে পড়ে গেল। সে ব্যাথা আজও ভুলতে পারেনি বন্ধুটি।এটা ছিল তার জীবনের একটি বড় ভূল।আবেগের বশে কোন কিছু করলে তা জীবনে স্হায়ী হয় না। তাই মাঝে মাঝে বলে-দোস্ত মেয়েটি ছিল কপট। আসলে মেয়েটি এর কিছুই জানে না শুধু বন্ধু বাৎসল্যই ছিল।

আমরা যখন একসাথে পড়তাম,সাথে আবার কিছু কপোট বন্ধু ছিল যারা তার সহজ স্বাভাবিকতাকে ব্যাবহার করতো।তার বাসায় খেত,ঘুমাতো কিন্তু পড়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করতো না কারন তারা ছিল তার প্রতিদ্বন্দি।অথচ তার জন্য এতটুকু প্রয়োজন ছিল যে,গ্রামে মাঠে জমির আইলে যখন পাকা ধান পড়ে থেকে যার উপর মানুষ হেঁটে যায়,শুধু ধানের গোছা ধরে জমির ভিতরে ফেলে হাঁটা।বন্ধুটি নিজের জীবনের লক্ষ্যটি বুঝতে না পারায় তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারে নি।কলেজের পরের দিনগুলো সে প্রায় সময়ই উপেক্ষিত থাকত। শুধু মাঝেমধ্যে তাকে উপহাস করা হতো এই বলে, ‘তোমার ভুলের কারনে তুমি হেরে গেলে?’ আমি খেয়াল করতাম, এই কথাগুলো তাকে খুব কষ্ট দিত। আমার এখনো মনে পড়ে, এ ধরনের কথার পরে সে চোখ নামিয়ে নিত ও অশ্রু ঝরাতো। তার বাবা মা আজ নেই কিন্তু আমাদের জিজ্গেস করতো, ‘কেন আমার ছেলেটি পড়াশুনায় এমন হয়ে গেল? আরো বলতো ঐ মেয়েটিই আমার ছেলেকে ধংস করেছে।

মাঝেমধ্যে ঢাকা বেড়াতে আসতো। মনে হতো তার সেই আগের সেই হাঁসি আছে কিন্তু একটা প্রচন্ড ব্যাথা যেন তাকে তাড়া করে বেড়াতো। এখন আর তেমন দেখা যায় না। কোন বন্ধুর কাছে যায় না। ছোট একটা সংসার নিয়ে উপজেলায় বাস করছে।এখানেই গল্পের শেষ নয়। বেশ কিছুদিন আগে ফোন করে খবর নিয়ে জানতে পারলাম সেই মেয়েটি তাকে স্বপরিবারে দেখতে এসেছে। মেয়েটি তাকে বললো বন্ধু , আমি তো তোমাকে শুধু সহপাঠিই ভেবেছিলাম।অন্যরা ঠাট্টা বিদ্রুপ করলেও ঐ বয়সে সম্পর্ক নিয়ে ভাবার কোন কারন ছিল না।আমরা তো পড়াশুনায় একে অন্যের প্রতিদ্বন্দিই ছিলাম।আমি যখন জেনেছি তখন জীবন অন্য এক ধারায় আমাকে নিয়ে গেছে।তোমার ভাবাটা ছিল একচেটিয়া।তাছাড়া আমাকে কখনো তুমি জানতেও দাওনি।

প্রশ্ন হলো, কেন এই আক্ষেপ? কেন ৪৮ বছর পরেও এই ঘটনা নিয়ে ভাবা?। জীবনকে বর্তমান নিয়ে চিন্তাভাবনা করার মাধ্যমে সুন্দর করা যায়। তবে যারা তার প্রতিবেশী বন্ধু তাদের উচিত ছিল তাকে সময় দেয়া ও যোগাযোগ রাখা। যে কথাটি আমি বিশ্বাস করি, তা হলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ, ক্ষমাশীল না হতে পারা। সবকিছু ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখতে পারলে কোন দু:খ থাকে না। জীবনের অনেক ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই যাঁরা অন্যদের প্রতি ক্ষমাশীল ছিলেন। আমি বলতে চাই, জীবনের উদ্দেশ্য হিসেবে আমরা ক্ষমাশীল হওয়াকে বেছে নিতে পারি। হতে পারে এটা অনেক সোজা অথবা অনেক কঠিন। কিন্তু উদ্দেশ্য হিসেবে খুব খারাপ নয়।

আমরা কীভাবে কম স্বার্থপর হতে পারি, সবার কথা ভাবতে পারি এবং সবার ভালোবাসা পেতে পারি? এই ভালবাসার কাজটির জন্য অন্তরের পরিশুদ্ধতার প্রয়োজন আর সু-শিক্ষা এ ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের শিল্পের চর্চায় ব্যস্ত রাখাটা ভালো কাজ। নির্জনে কোনো বিষয় নিয়ে গভীরভাবে আল্লাহর ধ্যানে নিজেকে মগ্ন করা, নিজেকে উজাড় করে দিয়ে কোনো বন্ধুর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা, আধ্যাত্মিকতার সন্ধান করা—এ সবকিছুই মানুষ হিসেবে আমাদের উন্নত করে। আমরা বুঝতে পারি, আমাদের আগে অসংখ্য জ্ঞানী মানুষ পৃথিবীতে এসেছেন এবং আমাদের জন্য অনেক প্রশ্নের উত্তর রেখে গেছেন।

একটা মজার জিনিস হলো, মানুষ কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই বয়সের সঙ্গে সঙ্গে একসময় অনেক ক্ষমাশীল হয়ে ওঠে। এটাই হয়তো মানুষের বৈশিষ্ট্য। আমরা যত বেড়ে উঠি,বুঝতে পারি যে স্বার্থপর হওয়াটা আসলে কতটা অর্থহীন, কতটা অযৌক্তিক। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ভাবনার পরিবর্তন হয় এবং মানুষকে ভালোবাসতে শিখি। যখন আমরা দেখি যে আমাদের বিপদে কেউ এগিয়ে এসেছে, আমাদের সাহায্য করছে, তখন আমরা বুঝতে পারি আমরা আসলে কারও কাছ থেকে পৃথক নই। আমরা যখন দেখি আমাদের প্রিয় মানুষ জীবন থেকে একে একে বিদায় নিচ্ছে, তখন আমরা বিশ্বাস করতে শুরু করি যে আমরাও একদিন বিদায় নেব। প্রায় সব মানুষই তার শেষ দিনগুলোয় অনেক বেশি ভালো আর উদার হয়ে ওঠে। আর এ সময়ে অনেকের জীবন থেকে কপোটতা কমে যায়। কিন্তু যদি ৪০ এর পর অন্তরে বিদ্দেষ থাকে তাহলে বুঝতে হবে সেই অন্তরে কপোটতার রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।এর একমাত্র ঔষধ হলো নিজের ক্রুটি খুঁজে দেখা ও আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়া।আমি মন থেকে কামনা করি, আমরা মনকে যত বিস্তৃত ও বড় করবো , ততই স্বার্থপরতা কমে আসবে এবং ভালোবাসা বাড়বে। আমরা পারিবারিক জীবনে সফল হব ও আমাদের সন্তানরা বড় হতে শিখবে। সন্তান কখনো বড় হয় না যদি বাবা মা কপোট চরিত্র ধারন করে। আমরা যতদিন নিজেদের ভালো-মন্দ নিয়ে চিন্তা করব না, ততক্ষন আশা করতে পারি না আমাদের সন্তানেরা ভালো হয়ে উঠবে।

সেজন্য সন্তানদের তারুণ্যের প্রথম দিনগুলোয় বাবা মা কে সজাগ থাকতে হবে কোন কারনে তারা উদ্বিগ্ন কিনা?—কীভাবে জীবনে সফল হবে? কী করলে তারা জীবনটাকে সুন্দর করে সাজাতে পারবে? কিন্তু আমরা বাবা মা'রা কি কখনো ভালো করে জীবনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা গুলোর অদ্ভুত একটা দিক খেয়াল করেছি? তারা স্কুলে ভালো করছে কিনা? যাতে ভালো কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে। এরপর যাতে ভালো একটা চাকরি পেতে পারে। এসব জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু দিক, গোটা জীবনটা নয়। যদি, আমরা ক্ষমাশীল হওয়াকে জীবনের লক্ষ্য হিসেবে নেই, তাহলে একজন কর্মী ও স্বাপ্নিক হিসেবে নিজেকে আরও পরিপূর্ণভাবে আবিষ্কার করতে পারবো। নিজের সেরাটা খুঁজে পেতে এটা আমাদের অনেক সাহায্য করবে। আমরা তখন বুঝতে শিখবো যে, সাফল্য একটা পাহাড়ের মতো, এটাতে যতই চড়বো, ততই তা বড় হবে। সাফল্যের চিন্তাই আমাদের জীবনের সুন্দর সময়গুলোকে নিয়ে নেবে।তবে জীবন থেকে কপোটতা দুর করতে হবে পুরোপুরি।

তাই আমি নিজেসহ আমাদের সবার জন্য উপদেশ হলো, জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে ধীরে ধীরে আরও ক্ষমাশীল হওয়া, স্বার্থপরতা ছেড়ে দেওয়া আর ভালোবাসায় পূর্ণ হওয়া। এখন থেকেই সেটা শুরু হওয়া উচিত। আমাদের সবার মাঝেই স্বার্থপরতা রোগটা আছে। এর প্রতিষেধক খুঁজে বের করা এবং একজন সংবেদনশীল ভালো মানুষ হওয়া খুব জরুরি।এরপর জীবনের আকাঙ্ক্ষাগুলো পূরণ করা। ভ্রমণ করা, ধনী হওয়া, বিখ্যাত হওয়া, কিছু আবিষ্কার করা, নেতৃত্ব দেওয়া, সৎ উপায়ে সম্পদ অর্জন করা আবার তা সৎ উপায়ে খরচও করা। সেসব কাজ করা, যেগুলো আমাদের ক্ষমাশীল হতে সাহায্য করবে। সেগুলো না করা , যেগুলো আমাদের নিষ্ঠুর-স্বার্থপর হতে বাধ্য করবে। আমাদের হূদয়ের উজ্জ্বল দিকটি অন্য সব মহাপুরুষের মতোই। যেসব কাজ আমাদের এই উজ্জ্বলতাকে ঢেকে দেয়, সেগুলো বর্জন করা, হূদয়ের উষ্ণতা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া। এভাবে যদি আমরা ১০০ বছরও পেরিয়ে যাই দেখবো যে ভালোবাসায় আমরা একে অন্যকে বরন করে নিতে শিখেছি।। আমি আশা করি,এভাবেই জীবনটা অনেক সুন্দর হবে। তবে কপোট লোকরা অন্যের ভাল পছন্দ করে না এবং অন্যের সৌন্দর্যকে তাদের অন্তরে ধারন করতে পারেনা। সেই ব্যারোমিটারটা হলো অন্যের কোন কিছু ভাল হলে কপোটদের অন্তরে যন্ত্রনা বৃদ্ধি হয়।তাই যতবেশী ধর্মকে অনুশীলন করা যায় ততই এই কপোটতা কমে যাবে ও অন্তরের পরিশুদ্ধতা বৃদ্ধি পাবে। একে অন্যের সাথে হৃদ্যতা বৃদ্ধি পাবে ও জীবনের প্রকৃত আনন্দ খুঁজে পেতে সহায়ক হবে।

বিষয়: বিবিধ

১৩৫৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

181980
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:৩০
সজল আহমেদ লিখেছেন : ভাল লাগল।
181999
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০৩
নীল জোছনা লিখেছেন : নিজেকে অনেক কিছু থেকেই মুক্ত রাখতে চাই কিন্তু পরিবেশ আমাকে সেটা থাকতে দেয় না। চারিদিকে এত কলুষিত জীবন যে সেখানে নিজেকে সেফ রাখাটাই মুশকিল হয়ে দাড়িয়েছে।

অনেক অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটি লেখা উপহার দেওয়ার জন্য।
182005
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৫
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
182256
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:১৯

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File