সৎ, ন্যায়নিষ্ঠ, প্রাজ্ঞ, জ্ঞানী, যোগ্য, চরিত্রবান, দক্ষ গুনাবলী দিয়ে মন্দের মোকাবিলা না করা পর্যন্ত শান্তি আনা সম্ভব নয়।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০২:০৪:৫৪ দুপুর

মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় যে জাতি হিসেবে আমাদের দাঁড়াতে সহায়ক হচ্ছে না, তা বলাই বাহুল্য। পৃথিবীর অনেক জাতির ইতিহাসে তাদের জাগরণের পেছনে ছিল- বিদেশী আগ্রাসন, অপমান, নিগ্রহকে উপেক্ষা এমনকি আমরা পাকিস্তানীদের নিপীড়ন থেকে লক্ষ রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন করেছি এবং আত্মসম্মানবোধে পুনর্জাগরিত এক জাতি বলা চলে।প্রকৃত অর্থে আমরা কি আমাদের পুনর্জাগরিত করতে পেরেছি? আমাদের যে অবস্হান তা হলো বিদেশীদের আমরা তাড়িয়েছি ঠিক কিন্তু দেশীয় আর একটি শোষক শ্রেনীর অভ্যুদয় হয়েছে,যা একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হবে না। সরকারি দল আর বিরোধী দলের মধ্যে যত অনৈক্যই থাকুক না কেন, জনপ্রতিনিধিদের নানা সুযোগ-সুবিধা লাভে ঐক্য অক্ষুণ্ন আছে। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে তাদের কথা পাল্টে যায়।মন্চে উঠলেই অশ্রাব্য কথা ও আচরন বিরোধীদের উপর ছুঁড়ে মারা।আবার তিনি যখন বিরোধীদলে থাকেন তিনি গনতন্ত্রের কথা বলেন ও মাঠে জনগনকে নিয়ে আন্দোলন করেন।একটা বিশেষ পদে থেকে দু'জন দু'জনকে যখন গালি গালাজ করেন তা দেখে প্রজন্ম কেন আমাদেরও লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়।এ যেন বাপের তালুক জনগনকে যা ইচ্ছে তা শুনাবে।আসলে কারনটি এখানে নয়।মুল কারনটি হলো সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ যাতে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে আর যখনই যে অধিষ্ঠিত হন তিনি তার ক্ষমতা প্রদর্শন করেন। দ্বিতীয় কারনটি হলো-সু-শিক্ষা ও রাজনৈতিক প্রজ্গা না থাকা। আমাদের দু'নেত্রীই এসেছেন তাদের পূর্বসূরীর জনপ্রিয়তা নিয়ে।তারা যদি বুঝতে চাইতেন যে আমরা আজ যেখানে এসেছি আমাদের নিজের যোগ্যতায় আসিনি।সে কারনে আমাদের চারপাশে যাদের রাখবো অন্তত তারা হবে দেশের সৎ,বিচক্ষন ও রাজনৈতিক প্রজ্গা সম্পর্ন।তাহলে তারা শিখতে পারতেন ও তাদের পরামর্শ কাজে আসতো।এখন যারা তাদের পরামর্শ দিচ্ছেন তাদের অনেকের আপাদমস্তক ঘুনে ধরা।সুতরাং এই ঘুনে ধরা মানুষগুলো দ্বারা ঘর তৈরি হলেও যে কোন সময় ভেংগে পড়বে বৈ কি? পৃথিবীর কিছু শাসক এমন আছেন যাদের আচরন থেকেও আমরা শিখে নিতে পারি। ইরানের প্রেসিডেন্ট যখন বাসে দাঁড়িয়ে যান, স্বভাবতই তখন জনগন শ্রদ্ধায় মাথা অবনত করবে। উরুগুয়ের বর্তমান প্রেসিডেন্ট যখন রাজপ্রাসাদ আর রাজকীয় যানবাহনের সুবিধা ত্যাগ করে সাধারণ মানুষের মতো জীবন যাপন করেন, বেতনের ৯০ শতাংশ সাধারণ মানুষের জন্য ব্যয় করেন, তখন জাতি হিসেবে আমরাও গর্ববোধ করতে পারি। এ ধরনের উদাহরণ দেখে আমাদের শাসকরা কি অনুপ্রানিত হতে পারেন না? বিশাল জনগোষ্ঠির সামনে যখন কেউ কটুক্তি করে একে অন্যকে নিয়ে,যেখানে মানুষ তাকিয়ে থাকে তার মুখ থেকে উন্যয়নের কথা,মানুষের আকাংখার কথা শুনার জন্য তখন সে জাতির মানুষ তাদের নিকৃষ্ট ভাবতে থাকে। মন্দকে যদি ভাল দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া না যায় তাহলে সম্মানিত যেমন হওয়া যায় না তেমনি শান্তি আসাও সম্ভব নয়।

সব দেশেই দুধরনের মানুষ রয়েছে। এর একটি হলো উৎকৃষ্ট এবং অপরটি নিকৃষ্ট। স্বভাবতই প্রশ্ন দেখা দেয়, এ দুই ধরনের মানুষের মধ্যে কারা উৎকৃষ্ট এবং কারা নিকৃষ্ট? একজন সাধারণ বুদ্ধি-জ্ঞানসম্পন্ন মানুষের দৃষ্টিতে উৎকৃষ্ট হল এমন সব ব্যক্তি যারা সৎ, ন্যায়নিষ্ঠ, প্রাজ্ঞ, জ্ঞানী, যোগ্য, চরিত্রবান, দক্ষ এবং গুণাবলির নিরিখে জ্যেষ্ঠ। অপরদিকে এর বিপরীত ধর্মীরা হল নিকৃষ্ট। আরও স্পষ্টভাবে বলতে গেলে নিকৃষ্ট হল তারা, যারা অসৎ, দুর্নীতিগ্রস্ত, অজ্ঞ, মূর্খ, অযোগ্য, দুশ্চরিত্র, অদক্ষ এবং সার্বিক বিবেচনায় কনিষ্ঠ।

যেসব দেশ, জাতি, সম্প্রদায়, গোষ্ঠী দীর্ঘকাল যাবৎ নিজেদের প্রাধান্য অক্ষুন্ন রেখে সফলতার সঙ্গে সামনে এগিয়ে চলতে সক্ষম হয়েছে তাদের পেছনের অন্তর্নিহিত শক্তি ছিল রাষ্ট্র, সরকার ও সমাজের সর্বত্র উৎকৃষ্টদের দ্বারা নিকৃষ্টদের নিয়ন্ত্রণ।বর্তমানে যেসব দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা অনুসৃত হয়, সেসব দেশে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার দায়িত্ব লাভ করেন। এ নির্দিষ্ট সময়টি রাষ্ট্রভেদে ৪-৫ বছর হয়ে থাকে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা প্রায় সব ক্ষেত্রেই একটি রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হন। যে কোনো দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে নৈতিকতা বোধসম্পন্ন মানুষের সংখ্যা যত বেশি হবে, সে হারে দেশটিতে উৎকৃষ্টদের নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বলতর হবে। আর গণতান্ত্রিক দেশ হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হলে পেশী শক্তির প্রাধান্যতায় যারা নির্বাচিত হয়ে আসেন, তারা যে কোনো বিবেচনায় যে উৎকৃষ্ট নন, সে বিষয়ে দেশের সচেতন মানুষের মধ্যে কোনো সংশয় নেই।

একটি রাষ্ট্র অথবা সরকারের সেবক হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করেন, তাদের বলা হয় সরকারি কর্মচারী। রাষ্ট্র অথবা সরকার নির্বাচনে বিজয়ী দলের নেতৃত্বে ও কর্তৃত্বে পরিচালিত হলেও সরকারের কর্মকাণ্ডের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সুশাসন বহুলাংশে সরকারি কর্মচারীদের সততা, দক্ষতা, জ্যেষ্ঠতা, যোগ্যতা, মেধা প্রভৃতির ওপর নির্ভর করে। আবার সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে যারা প্রথম শ্রেণীর মর্যাদাপ্রাপ্ত, তারাই মূলত সরকারি কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ পদ অর্থাৎ সচিব বা সমমর্যাদাসম্পন্ন পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার যোগ্য, যদিও এ ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা, সততা, দক্ষতা ও যোগ্যতা সর্বাগ্রে গণ্য।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, কার্যালয় বা সংস্থার শীর্ষ পদধারীরা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সরকারি কর্ম কমিশন কর্তৃক আয়োজিত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে সাধারণত যে কোনো ক্যাডার বা বিভাগের প্রারম্ভিক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত। এ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হলে প্রার্থীদের কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হয়। অতীতে অধস্তন বিচার বিভাগের প্রারম্ভিক পদ অর্থাৎ সহকারী জজ পদে নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্ব সরকারি কর্মকমিশন পালন করত। কিন্তু বর্তমানে এ দায়িত্বটি জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন পালন করছে। সরকারের অপরাপর ক্যাডার সার্ভিসের প্রারম্ভিক পদের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে যেসব যোগ্যতার কথা বলা হয়েছে, সহকারী জজ পদে নিয়োগ পরীক্ষার ক্ষেত্রেও সমরূপ যোগ্যতার আবশ্যকতা রয়েছে। আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীতে কর্মকর্তা পর্যায়ের প্রারম্ভিক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে আন্তঃবাহিনী নির্বাচনী বোর্ডের সামনে যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে হয়। সামরিক বা বেসামরিক উভয় ধরনের কর্মকর্তা পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে অতীতে সব সময় যে নীতিটি অনুসৃত হতো তা হল, নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠতার যে তালিকা প্রস্তুত হতো তার ভিত্তিতে বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে (এসিআর) কোনোরূপ বিরূপ মন্তব্য না থাকলে পর্যায়ক্রমিক পদোন্নতিগুলো কার্যকর হতো।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তনশীল এবং এ পরিবর্তনটি নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ওপর নির্ভর করে। ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর সরকারের পরিবর্তন ঘটলেও সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে অতীতে সে পরিবর্তন কখনও প্রভাব ফেলত না। অতীতে সব সময় দেখা যেত, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কর্মচারীদের এক মন্ত্রণালয় থেকে অপর মন্ত্রণালয়ে অথবা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বদলি করা হতো এবং চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ অবধি তারা চাকরিতে নিয়োজিত থাকতেন। কিন্তু বর্তমানে জাতীয় রাজনীতিতে বড় দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে নীতি ও আদর্শগত যে বিভাজন, এর ছোঁয়া দেশের প্রতিটি শ্রেণী-পেশার মানুষকে স্পর্শ করেছে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ থেকে সামরিক ও বেসমারিক কর্মচারীরাও মুক্ত নন।বর্তমান শতাব্দীর সূচনালগ্ন থেকে দেখা গেছে, সরকারের বিভিন্ন বিভাগে শীর্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে অতীতের মতো জ্যেষ্ঠতা, সততা, দক্ষতা, যোগ্যতা, মেধা- এ বিষয়গুলোকে আর বিবেচনায় আনা হচ্ছে না। এখন এ বিষয়গুলো হয়ে গেছে গৌণ। আর মুখ্য বিষয়টি হল শীর্ষ পদে পদায়নের জন্য বিবেচিত কর্মকর্তাটি ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক মতাদর্শী কি-না? রাজনৈতিকভাবে ভিন্নমতাদর্শী বিবেচনায় বিগত প্রায় দেড় দশক বড় দুই রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন থাকাবস্থায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মকর্তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। ওএসডি কর্মকর্তাদের সবাই যে রাজনৈতিক মতাদর্শী তা নন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে এমন অনেক মতলববাজ কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা সরকারের শীর্ষ মহলের সঙ্গে যোগসূত্র থাকার সুবাদে নিজ নিজ বিভাগের জ্যেষ্ঠ, সৎ, দক্ষ কর্মকর্তাদের স্বীয় উচ্চপদ লাভে পথের কাঁটা ভেবে মিথ্যা অপবাদের মাধ্যমে ওএসডি করার কলকাঠি নেড়েছেন।

সরকারের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ের উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত এ চারটি পদের সহস্রাধিক কর্মকর্তা ওএসডি হিসেবে কোনো কাজ না করেও সরকারের কাছ থেকে বেতন-ভাতা ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। ওএসডি কর্মকর্তাদের অধিকাংশই জ্যেষ্ঠ, সৎ, দক্ষ, যোগ্য ও মেধাবী। এসব কর্মকর্তাকে পদোন্নতি বঞ্চিত করে দীর্ঘদিন ওএসডি করে রাখায় তাদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। তাদের অনেককে আক্ষেপের সঙ্গে বলতে শোনা যায়, সরকারি কর্মচারী হিসেবে সারাজীবন সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ থেকে কাজ করার পুরস্কার আজ কনিষ্ঠ ও নিকৃষ্ট দ্বারা চাকরিতে অতিক্রান্ত এবং কাক্সিক্ষত পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়ে অবমাননাকর ওএসডি হিসেবে অন্তর্ভুক্তি।সরকারের প্রতিটি বিভাগের জ্যেষ্ঠতার তালিকায় যিনি শীর্ষ ব্যক্তি, তার বিভাগের শীর্ষ পদে আসীন হওয়া তার বৈধ অধিকার। বৈধ অধিকারীকে প্রাপ্য পদ থেকে বঞ্চিত করা তার ওপর শুধু অবিচারই নয়, তা জুলুম ও নিপীড়নসম। কিন্তু আজ শুধু ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক মতাদর্শী নয়, এ অপবাদে যেভাবে সরকারের প্রতিটি বিভাগে কনিষ্ঠ ও নিকৃষ্টদের দ্বারা উৎকৃষ্টদের অতিক্রান্ত করে তাদের ন্যায্য অধিকার ও প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, তাতে প্রতিটি বিভাগের আদেশের শৃংখল (চেইন অব কমান্ড) ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। তাছাড়া সরকারের যে কোনো বিভাগ জ্যেষ্ঠ, সৎ, দক্ষ, যোগ্য ও মেধাবীদের পরিবর্তে যদি কনিষ্ঠ, অসৎ, অদক্ষ, অযোগ্য ও মেধাহীনদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বা পরিচালিত হয়, তাহলে সে বিভাগ কখনও সংশ্লিষ্ট সবার সন্তুষ্টি সহকারে কার্যসম্পাদন করে দেশ ও জনগণের আস্থাভাজন হতে পারবে না।

সরকারের রাজনৈতিক মতাদর্শীরা উৎকৃষ্টকে অতিক্রান্ত করে অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও লোভনীয় পদে পদায়ন পরবর্তী ওই পদ থেকে অবসরগ্রহণ করে ক্ষান্ত হচ্ছেন না। পদের মোহ ও ক্ষমতা তাদের এমনভাবে পেয়ে বসছে যে, নিজ মতাদর্শের সরকার যতদিন ক্ষমতায় আছে, ততদিন বয়স উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও তাদের পদ ও ক্ষমতা উভয়ই থাকতে হবে! তাই বিশেষ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতির কোটায় একমাত্র রাজনৈতিক মতাদর্শী বিবেচনায় তাদের চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, পরবর্তী পদোন্নতির আশা না থাকায় তাদের স্বীয় কার্য সম্পাদনে নীতি-নৈতিকতা কখনও অন্তরায় হিসেবে দেখা দেয় না। তাদের একটিই কথা, যে দলের সুবাদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তি, সে দলের স্বার্থ ও নিজ স্বার্থই তাদের কাছে মুখ্য আর দেশ ও জনগণের স্বার্থ গৌণ।পৃথিবীর সর্বত্র পদশূন্য হওয়া সাপেক্ষে পদোন্নতি দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশই বোধহয় ব্যতিক্রম। আমাদের উচ্চতর পদ কাঠামোর উপসচিব থেকে সচিব অবধি চারটি পদে নির্ধারিত পদসংখ্যার তুলনায় অনেক বেশিসংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। পদশূন্য না থাকায় পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কেউবা আগের পদে বহাল রয়েছেন, আবার কারওবা কপালে জুটেছে ওএসডির খড়গ। পদোন্নতির ক্ষেত্রেও দেখা যায় জ্যেষ্ঠতা, সততা, দক্ষতা, যোগ্যতা ও মেধার চেয়ে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা অধিক বিবেচ্য।

এ কথা অনস্বীকার্য যে, জ্যেষ্ঠতা, সততা, দক্ষতা, যোগ্যতা ও মেধাকে মূল্যায়ন না করে কনিষ্ঠদের সব ধরনের অযোগ্যতাকে উপেক্ষাপূর্বক রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে পদায়নের কারণে সুশাসন আজ মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন। আর এ কারণেই দেখা যায়, বিভিন্ন বিভাগে নৈরাজ্য অসহনীয় পর্যায় পৌঁছে গেছে। বিভিন্ন বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা কোনো ধরনের যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া অতিক্রান্ত হওয়ার কারণে তাদের অনেকেই তীব্র হতাশার মধ্যে চাকরি টিকিয়ে রাখার জন্য অফিসে যাওয়া-আসা করছেন। দেশ, জনগণ ও নিজ বিভাগকে তাদের অনেক কিছু দেয়ার থাকলেও তারা আজ সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত। দেশের শীর্ষ মহলকে ভুল বুঝিয়ে আজ যেভাবে সরকারের অধিকাংশ বিভাগের শীর্ষ পদে উৎকৃষ্ট ও জ্যেষ্ঠদের অতিক্রান্ত ও বঞ্চিত করে নিকৃষ্ট ও কনিষ্ঠরা জেঁকে বসেছেন- এভাবে চলতে থাকলে সরকারের সুশাসন, নির্বাচনী ওয়াদা এবং দেশ ও জনগণের কল্যাণ ও মঙ্গলের বিষয়গুলো মুখ থুবড়ে পড়বে। তাই যত দ্রুত উৎকৃষ্টদের প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে উপযুক্ত পদে আসীন করানো যাবে, তত শিগগির আমরা নিকৃষ্ট ও অযোগ্যদের হাত থেকে পরিত্রাণ পেয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের পথে এগিয়ে যেতে পারব।

সরকারের কর্তাব্যক্তিরা সুশাসনের ঘোষণা দিচ্ছেন। এই কি সুশাসনের নমুনা? পৃথিবীর ইতিহাস প্রমাণ করে, নির্মমতা-নিষ্ঠুরতা কোনো স্বৈরশাসককেই রক্ষা করেনি। মানুষ আশা করে, রাজনীতি দিয়ে রাজনীতির মোকাবেলা করা হবে। নিরস্ত্র মানুষের ওপর অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ না হলে কল্যান আসবে কোথা থেকে? মতাদর্শিক ভিন্নতা উত্তম আদর্শ দিয়েই মোকাবেলা করতে হবে। রক্ত কেবল রক্তক্ষরণই ডেকে আনে। আজকের এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে পৃথিবি মানুষের হাতের মুঠোয় এবং ঘটনাবলী জণগণের সামনে যথার্থভাবেই উন্মোচিত হচ্ছে।সুতরাং মানুষকে বোকা ভাবার কোন কারন নেই। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে জনগন তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। এ নয় যে মানুষ ক্ষমতাসীন দলকে ছেড়ে অন্য দিকে তাদের মত প্রদান করছে।তারা যুগে যুগে অন্যায়ের বিরোধীতা করে অন্য শক্তিকে কাছে নিয়ে আসে যদিও তারা চিরদিন-ই অবহেলিত। মানুষকে কিছু সময়ের জন্য নির্বোধ ভাবা যায় এবং কিছু মানুষকে হাত করে কিছুদিন চলা যায় কিন্তু সব মানুষকে সব সময় নির্বোধ ভাবলে নিজেকেই তলিয়ে যেতে হবে কালের গর্ভে যেখান থেকে উঠে আসা সম্ভব নয়।

বিষয়: বিবিধ

১৫২৫ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

181144
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:১৫
রাইয়ান লিখেছেন : সুন্দর লেখা...অনেক ধন্যবাদ ।
181148
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:১৯
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : Rose Rose Roseধন্যবাদ Rose Rose Rose
181166
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:০৯
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : আমাদের দু'নেত্রীই এসেছেন তাদের পূর্বসূরীর জনপ্রিয়তা নিয়ে।তারা যদি বুঝতে চাইতেন যে আমরা আজ যেখানে এসেছি আমাদের নিজের যোগ্যতায় আসিনি।সে কারনে আমাদের চারপাশে যাদের রাখবো অন্তত তারা হবে দেশের সৎ,বিচক্ষন ও রাজনৈতিক প্রজ্গা সম্পর্ন।তাহলে তারা শিখতে পারতেন ও তাদের পরামর্শ কাজে আসতো।......একজন সাহসী সৎ ন্যায়পরায়ন সিন্দাবাদের জন্য এ জাতি আজ প্রহর গুণছে...ধন্যবাদ সুন্দর লেখাটির জন্য
181306
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৯
181309
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৩
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : চরিত্রবান নয় লম্পটদের ও অস্ত্রের মূল্যায়ন সমাজে বেশি , ভালো লাগলো পিলাচ পিলাচ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File