আলকুরআনের রশ্মি ছড়ায় আমার অমর মাতৃভাষায়।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০১:৩৩:৫৬ দুপুর
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি।আমার অমর মাতৃভাষা, যে ভাষায় আমি কথা বলি।যে ভাষা আমার জীবনকে পূর্নতা দিয়েছে।১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি যারা প্রান দিয়েছিলেন, সে চেতনায় বাংলা ভাষা আজ বিশ্বের দরবারে স্হান করে নিয়েছে।পৃথিবী ব্যাপি "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে।বর্তমানে বিশ্বের ২৫ কোটি মানুষের মাতৃভাষা বাংলা।বাংলাদেশ না হলে এই মাতৃভাষা পৃথিবীতে বিস্তার লাভ করা সম্ভব ছিলনা।সেজন্য বাংলাভাষা ও স্বাধীনতার চেতনা একে অপরের পরিপুরক।ভাষার শিকড় যে আমার ধর্মের আবরনে ১৪০০ বছর পূর্বে গ্রথিত হয়েছে তা জানতে পেরেছি অনেক পরে।আল্লাহ যে ভূমিতেই নবী রাসূল প্রেরন করেছেন সে ভাষাতেই তার বানি পাঠিয়েছেন যেন তাদের বুঝতে কষ্ট না হয়।আলকুরআনে ২৫ জন নবী রাসূলের কথা বর্ননা করা হয়েছে।অথচ যুগ যুগ ধরে লাখ লাখ নবী রাসূল এসেছেন মানুষের সংস্কারের জন্য।কোন কোন নবী রোজ ক্কেয়ামতে উঠে আসবেন তাদের কোন উম্মত থাকবে না।তাঁরা আল্লাহর বানি প্রচার করেছিলেন তাদের এই হায়াতি জিন্দেগীতে কিন্তু কেউ স্বীকার করে নেয় নি কিন্তু তাঁরা কামিয়াব হয়েছেন।এখন আমার হৃদয়ে ভাবনার জাল বুনে, কে আমায় অত্যন্ত সুন্দর, পবিত্র, সহজ, প্রাঞ্জল, মধুর ও সৌরভমণ্ডিত ভাষা দিয়ে আমার লেখনিকে প্রস্ফুটিত করেছেন?যে ভাষা ব্যবহারে আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন পূর্ণ অধিকার ও অবাধ স্বাধীনতা। পার্থিব জীবনে এ ভাষাই আমার পরিচয়ের মূল।
আমি ছিলাম রিক্ত ও নিঃস্ব।দীর্ঘ পরিসরে আরবি ভাষায় কোরআন পড়ে পড়ে মুখস্ত করে ফেলেছি অনেক আয়াত। পৃথিবীতে অসংখ্য হাফেয ও ক্কারি রয়েছে আলক্কুরআনের।যাদের ভাষা আরবি তাদের সাথে কথা বলে বুঝেছি কত আনন্দের সাথে বুঝে পড়ছে।মাতৃভাষার কারনে নিজ ধর্মকে বুঝতে তাদের অনেক সহজ হয়েছে।আমাকে প্রশ্ন করে তোমার ভাষায় আলকোরআন তর্জমা হয় নি? এর পরই আমার মস্তিষ্ক খুলে গেল।মাতৃভাষায় আল কোরআন পড়তে পড়তে আমারই সঙ্গোপনে মাতৃভাষার প্রতি এবং কোরআনের শিক্ষা ও জ্ঞানের প্রতিটি উপদেশ আমাকে নাড়া দিতে থাকলো।এতদিন যা নাবুঝে পড়েছি,এখন বুঝে পড়ায় অতি সহজে রপ্ত করতে পারছি।চমৎকার ভাললাগা আর ভালবাসার মধ্যে ইবাদাতকে পূর্নতায় নিতে আমার ভাষা আমাকে সাহায্য করছে।পড়তে পড়তে যখন সূরা আররোমের ২২ ও সূরা ইব্রাহিমের ৪ আয়াত এসে উপস্হিত হলো তখন আমার মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা আরো বেড়ে গেল।সূরা ইব্রাহিমের ৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'আর আমরা এমন কোন রাসূলকে পাঠাইনি তার স্বজাতির ভাষা ব্যাতিত,যেন তাদের জন্য তিনি সুস্পষ্ট করতে পারেন।" আর সূরা আর রোমের ২২ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে মহাকাশমন্ডলি ও পৃথিবীর সৃষ্টি,আর তোমাদের ভাষা ও বর্নের বৈচিত্র।নি:সন্দেহে এতে তো নিদর্শনাবলী রয়েছে জ্গানী লোকদের জন্য।'
তাহলে আমাদের ভাষা সহ পৃথিবীতে যে সকল ভাষা রয়েছে তা আল্লাহরই সৃষ্টি।যে, যে ভাষায় আল্লাহর গুন গান করে আল্লাহ শুনেন ও দেখেন।তবে আলকোরআন যেহেতু আরবি ভাষায় নাজিল হয়েছে সে ভাষা মুসলিমদের রপ্ত করাও কম জরুরি নয়।আল্লাহর পাঠানো ভাষায় কথা বলতে পারা ও কুরআন পঠনে যে কোন ক্লান্তি নেই তা আমরা অনুমান করতে পারি।পৃথিবীতে যত বেশী আলকুরআন পঠিত হয়,অন্য কোন ধর্মগ্রন্থ তেমন পঠনের কথা আমরা শুনিনি।আলকুরআনের প্রেরনায় বিশেষ করে আয়াতগুলো যখন আমার ভাষায় চিন্তা ও গবেষনা করি তখনই হৃদয় ভরে উঠে এবং শ্রদ্ধায় অবনত হয় আমার মন প্রান।ভাষার আলোয় আলোকিত হলো আমার জীবন,আমার চলার পথকে করলো প্রশস্ত।আমার অলস সময়গুলোকে ভাষার আলো ছড়িয়ে দিল দিক দিগন্তে,আর সেই আলোর পথ ধরেই চলছে আমার বর্তমান সোনালি দিনগুলো।
মাতৃভাষায় কোরআন পড়তে পড়তে অচেতন হৃদয়ে চেতনার বাঁধভাঙা জোয়ার আসতে থাকে। যে ভাষা দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত অকৃত্রিমভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে, তাকে চেনার মতো করে চিনতে পারার মধ্যেই মনুষ্যত্ব নীহিত। তাই তো আমি আমার মায়ের ভাষাকে মন প্রান দিয়ে ভালোবাসার চেষ্টা করি।আমি নিঃসংকোচে ও অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে বলতে চাই,যারা এখনো মাতৃভাষাকে ভালবাসতে পারেনি তারা
দেরি না করে নিজেদের এগিয়ে নিন।যারা আরবি পড়তে পারে না তাদের উচিত আরবিটা শিখে নেয়া ও তার সাথে বাংলায় আয়াতগুলো গবেষনা করা। মাতৃভাষায় আল কোরআন পড়তে পড়তে মাতৃভাষা চেতনার উজ্জ্বল আলোয় হৃদয় উদ্ভাসিত হবে। মাতৃভাষা ও অমাতৃভাষা, বোধ্যভাষা ও অবোধ ভাষা, জ্ঞান ও অজ্ঞতার মাঝে যে আলো-আঁধার কিংবা দিন-রাতের মতোই আকাশ-পাতাল পরিমাণ ব্যাবধান রয়েছে, এ মহাসত্যকে আবিষ্কারে সক্ষম হলাম। আর মাতৃভাষার মূল্য, মর্যাদা, তাৎপর্য, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়কে হাড় কাঁপানো তীব্র শীতে কম্বলের ভিতরে ওমের মতোই হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। জীবন বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে মাতৃভাষার আল কোরআনের বরকতেই এ অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। জীবন নামের মহাযুদ্ধে জয়ী হতে শিখলাম। মাতৃভাষায় কোরআন পড়তে পড়তেই (অজ্ঞতার) অন্ধকার থেকে আলোর পথে এসে দাঁড়াতে শিখলাম। আমার মাতৃভাষা চেতনার উৎস তো পবিত্র কোরআনই (ভাষা সম্পর্কিত আয়াত) মনভরে হৃদয় দিয়ে দেখলাম কোরআনের সূরা ইব্রাহিমের ৪ আয়াত ও সূরা রুমের ২২ আয়াতসহ বিভিন্ন আয়াত মাতৃভাষা প্রেমের চেতনা ছড়াচ্ছে। তাই তো গভীর রাতেও ভাষা সম্পর্কিত আয়াতগুলোর সঙ্গে চলে আমার প্রাণের আলিঙ্গন। কেননা এ আয়াতগুলোকে সযতনে সংরক্ষণ করেছি হৃদয় গভীরে। এ আয়াত নিয়ে চিন্তা-গবেষণাতে পরম শান্তি পাই হৃদয় মাঝে, তাই শান্তির স্বপ্ন চলে যায় বহু দূরে। আমাদের সমাজের অনেকেই তো কোরআন পড়ে। কিন্তু ক’জন হৃদয় দিয়ে পড়তে জানে? ক’জন হৃদয়ের চোখ মেলে আল কোরআনের দিকে চাইতে জানে? যদি তারা হৃদয় দিয়েই কোরআন পড়ত তবে ভাষা সম্পর্কিত নজরকাড়া আয়াতগুলো তো তাদের নজর কাড়ত। তারা ভাষার আয়াতগুলোর বিকৃত ও উদ্ভট ব্যাখ্যা না করে চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণে সক্ষম হতো। ভাষা সম্পর্কিত আয়াত পড়ে মানুষের ভাষার প্রতি স্বয়ং আল্লাহর ভালোবাসা ও অনুরাগ দেখে আমি মুগ্ধ। অভিভূত ও বিস্মিত হই। আমি অবাক হয়ে কেবল ভাবি আর আল্লাহর কাছে মাতৃভাষা চেতনার আলো চাই, আরও আলো, পরিপূর্ণ আলো। সে চেতনার আলো যেন আল্লাহর ইবাদতে অর্থাৎ নামাজ-কোরআন পাঠে আমাদের অনারব মুসলমানদের ভাষাগত, শিক্ষাগত ও জ্ঞানগত মুক্তি এনে দেয়। দিগ্বিজয়ি বীরের মতোই আমরা যেন বুক ফুলিয়ে, শির উঁচিয়ে হাঁটতে পারি কোরআনের শিক্ষার আলোয়, জ্ঞানের শক্তিতে। অজ্ঞতার অন্ধকারের কাছে যেন নতজানু না হয়ে থাকি।
ভাষার আয়াতগুলো নিয়ে গভীর চিন্তা ও গবেষণাতেই আল্লাহ যেন আমাদের অনুভূতির চোখ খুলে দেন এবং দূরদর্শিতা এনে দেন সত্য উপলব্ধি ও সত্যদর্শনের। আর যার নিজস্ব দর্শন আছে সেকি আল কোরআন ফেলে, নিজের দর্শনকে বাদ দিয়ে ধোঁকাবাজদের দর্শনের পিছু নেবে? আমি চলছি কোরআন অনুসারে আমার নিজস্ব দর্শনের ভিত্তিতে। যেখানে আল্লাহ মানুষের ভাষাবৈচিত্র্যের বিবেচনায় তার কিতাবের মাঝে ভাষাগত ঐক্য সৃষ্টি করেননি। বরং একেক জাতির ভাষায় একেক কিতাব নাজিল করেছেন এবং যেখানে তার নবী-রাসূলদের মাঝেই (আরবি ভাষার) ভাষাগত ঐক্য সৃষ্টি করেননি। কোনো অবস্থায়ই কোনো জাতির ওপর বিজাতির ভাষায় কিতাব কিংবা সহিফা নাজিল করেননি। বরং বিশ্ববাসীর ভাষাগত ঐক্যের পথ পরিহার করেছেন। আল্লাহ শুধুই গুরুত্ব দিয়েছেন বান্দাদের জাতিসত্তার ভাষা, মাতৃভাষা বা কণ্ঠের ভাষাকে। কেননা মাতৃভাষা একমাত্র প্রাকৃতিক বোধগম্য ভাষা। তিনি ভাষার ভিত্তিতেই যেমন জাতিসত্তা গড়েছেন, তেমনি ভাষাই জাতির অনুভূতির চোখ, দেহের চোখ ও মনের চোখে আলোর দ্যুতি ছড়ায়। তাই এ ভাষাই নিশ্চিত শিক্ষার ভাষা। অনুভূতির ভাষা, চিন্তার ভাষা ও চেতনার ভাষা। মাতৃভাষা অনন্ত সম্ভাবনাময় যেন সূর্যেরই্ উন্মেষ। মায়ের ভাষাতেই মায়ের বুকে হেসে-খেলে বড় হয়েছি তাই তো আমি তা বড় ভালোবাসি।
আমি বাংলার আকাশজুড়ে ধর্মের ক্ষেত্রেও ভাষা চেতনায় জাগৃতির রেখা দেখতে পেয়েছি সুবহে সাদিকের মতোই। তাই তো বড় সাধ জাগে মনে, ‘আমি হব সকাল বেলার পাখি, সবার আগে ভাষা, চেতনার উন্মেষ ঘটাতে ধার্মিক সমাজকে করব ডাকাডাকি। আমরা যদি ঘুমিয়ে থাকি তবে কেমনে সকাল হবে? আমরা যদি জানতে শিখি সকাল হবেই হবে। আমাদের দীপ্ত শপথ নিতেই হবে। ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত আমরা আনিব রাঙা প্রভাত, আমরা টুটাব তিমির রাত।’ যে সমাজ আজও আঁধারে বন্দি হয়ে আছে সে সমাজকে আলোতে ডেকে আনাকেই জীবনের সবচেয়ে বড় দায়বদ্ধতা মনে করি। দুর্গম পথকে সবার জন্য সুগম করতে চাই, আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন। ভাষা শহীদদের বুকের তাজা রক্তে ভেজা বাংলার বুক থেকে আর একটি শক্তিশালী ও সফল আন্দোলন সংঘটিত করতে চাই। তা হল মাতৃভাষার ইসলামী আন্দোলন। সব জাতিতে আল্লাহর শিক্ষা ও জ্ঞানমুক্তির আন্দোলন।যারা ভাষার মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় জীবন উৎসর্গ করেছেন, সালাম সালাম, হাজার সালাম জানাই তাদের স্মরণে, আমার হৃদয় রেখে যেতে চাই তাদের স্মৃতির চরণে। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো মহান একুশের ইতিহাস আমি কি ভুলিতে পারি?
কিন্তু ভাষার বিকাশের নামে,আন্দোলনের নামে , ভাষা দিবস পালনের নামে যে বিজাতীয় স্মৃতি পালিত হয় তা ইসলামি সংস্কৃতি নয়।যারা ভাষাড় জন্য জীবন দিয়েছেন তাদের জন্য আল্লাহর স্মরনে দোয়া করা শ্রেয়, এতেই তাদের আত্মার প্রশান্তি আসবে।
বিষয়: বিবিধ
১২৩৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন