গনতন্ত্র ও রাজনীতির জন্য পরনির্ভরতা কমিয়ে নিজেদের যোগ্য করে তুলুন।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৬:৫৬:২৫ সন্ধ্যা
কতকাল আমরা আর গণতন্ত্র ও রাজনীতির হাতে জম্মি হয়ে থাকবো? এ প্রশ্নটি এখন সারা দেশের মানুষের হৃদয়ে বিচরন করছে।এ দু'টো শব্দের সাথে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সুখ সমৃদ্ধি,সামাজিক স্হিতিশীলতা জড়িত।স্বাধীনতার চেতনায় যে লক্ষ লক্ষ মানুষের আত্মাহুতি হয়েছিল তা থেকে প্রজন্ম তেমন কিছুই পায়নি বরং শুধুমাত্র হাত বদলিয়েছে।শাসক এসেছে তাদের ভোগের জন্য আর তার সাথে এক শ্রেনীর সুবিধা বাদি শ্রেনীর বিকাশ হয়েছে।সমাজে এখন কোটি পতির অভাব নেই।বছরের শুরুতে যে ভিক্ষুক,বছরের শেষে সে লক্ষপতি আর দু'তিন বছরে কোটিপতি।কি করে আসে এ টাকা সেটাও কাছের মানুষ টের পাচ্ছে।এভাবে সমাজ বদলে যেতে শুরু করেছে কালো টাকায়।এরা যখন যে সরকার আসে তাদের চাউনিতে থাকে।এভাবেই চলছে ৪২টি বছর।এ রাজনীতির ধারক ও বাহকরা আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিকৃত অনুসারি।১৯৭১ সালের পর ১৮ বছর যখন পার হলো, সে স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আমরা আবার জেগে উঠেছিলাম।তখন অনেকে ভেবেছিলাম আমাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে।
১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারকে হটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার উদ্দেশে যে কঠিন, কঠোর সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছিল তা ছিল অভূতপূর্ব, অতুলনীয়। গণতন্ত্রের জন্য রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও জনসাধারণের এত গভীর ভালবাসা ও ত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, ছাত্র-শিক্ষক সবাই গণতন্ত্রের দুর্দশা দেখেও প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করতে জাগছে না, এক ধরনের উদাসীনতা অথবা অবসাদ সবার মধ্যে কাজ করছে। এর কারণ হতে পারে রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা বা রাজনৈতিক দলীয় বিভক্তি। এক পক্ষ আওয়ামী লীগ ঘরানার সমর্থক গোষ্ঠী যাদের অন্যতম পুঁজি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজাকার, আলবদরদের তাদের কৃতকর্মের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করে রাজনৈতিক ফায়দা ও জনসমর্থন লাভ করা। অন্য পক্ষ বিএনপি ঘরানার যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি হয়েও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের ব্যাপারে কিছুটা উদার। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন এখন দু’পক্ষকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে গণতন্ত্রকে জিম্মি করেছে। জাতীয় নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, বিনা ভোটে, খালি মাঠে গোল করার মতো ১৫৩ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে যাওয়া গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড হতে পারে না। নির্বাচনে সকল দলের, সকল মতের অংশগ্রহণ করা এবং অবাধ সুষ্ঠু ও স্বচ্ছতার সঙ্গে জনগণের ভোট প্রদান করাকেই গণতন্ত্র বলা যায়। ১৫৩টি আসনের প্রায় ৪ কোটি ভোটারকে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা গণতন্ত্র চর্চা হতে পারে না। অন্যদিকে বাকি আসনগুলোর ভোটকেন্দ্রে বিএনপির মতে ৫%, অন্যান্য পর্যবেক্ষণকারীদের মতে ১০-১৫% কিন্তু সরকারের মতে ৪০% ভোট পড়লেও কোন কোন কেন্দ্রে শূন্য ভোট, কোন কেন্দ্রে জাল ভোট, আফিল পদ্ধতির প্রয়োগ ইত্যাদি গণতান্ত্রিক পদ্ধতির প্রতিফলন নয়। গণতন্ত্রকে সত্যিকারভাবে অনুসরণ করলে ৫ই জানুয়ারি উপরিউক্ত সমস্ত কর্মকাণ্ড, পূর্বাপর ঘটনা পুনঃনির্বাচনের যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠিত করে এবং নির্বাচন শেষে যোগাযোগমন্ত্রী বলেছিলেন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে কিন্তু সর্বজনগ্রাহ্য হয়নি, অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন যে এ নির্বাচন সংবিধান বাঁচানোর নির্বাচন, প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতা হলে শিগগিরই (২৪শে জানুয়ারির পর) আরেকটি সর্বদলীয় নির্বাচন হতে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও একই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তদুপরি এক কালের স্বৈরাচারী এরশাদের দলকে নির্বাচনে আনা, পরে দলের অনেক সংসদ সদস্যকে মন্ত্রী নিয়োগ দেয়া এবং একই দলকে মন্ত্রিপরিষদে রেখে বিরোধী দলের মর্যাদা দেয়া এ সবই সংসদীয় গণতন্ত্রের সঙ্গে সংগতিহীন। এখন নির্দ্বিধায় সরকার বলছে যে, পাঁচ বছরের আগে পুনঃনির্বাচন নয়, যা হবে পাঁচ বছর পরে হবে। বিএনপিকে দল গোছানোর জন্য পাঁচ বছর সময় দেয়া হলো। দু’দলের মধ্যে সংলাপের ব্যাপারও ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়। কারণ, সরকারি দল একদিকে বলছে জামায়াতকে ত্যাগ করে এলেই বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হতে পারে, অন্যদিকে বলছে পাঁচ বছরের আগে কোন নির্বাচন নয়, অর্থাৎ এ বিতর্কিত, অসম্পূর্ণ নির্বাচন দিয়েই সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে চায়। সুতরাং, সংলাপ আদৌ হবে কিনা এবং পরবর্তী নির্বাচন কতখানি অংশগ্রহণমূলক হবে সব নির্ভর করে সরকারি দলের সদিচ্ছা এবং বিএনপির আন্দোলনের কৌশল ও শক্তির ওপর। বিএনপির ভোটে সাড়া না দেয়াটাকে আমি কৌশল মনে করবোনা কারন আওয়ামিলীগকে এ পথে আসার সুযোগ বিএনপি-ই করে দিয়েছে।১৭৩ দিনের হর্তালের জন্য তখনকার ক্ষমতাশীন সরকারের দায় নিতে হবে।আমাদের যে সরকারই ক্ষমতায় আসে তারা ক্ষমতা ছাড়তে চান না।এ আঠার মত লেগে থাকাটাও একটা স্বৈরশাসনের-ই রুপ।হাঁ, এখানে কথা হলো বিএনপি ভুল করেছে বলেই তো জনগন আওয়ামিলীগকে ভোট দিয়েছে।তাই বলে আওয়ামিলীগ পুকুর চুরি করবে তাতো হয় না।তারা সেই বিএনপির ছোট অন্যায়কে পুঁজি করে বড় অন্যায়ের দিকে ধাবিত হয়েছে।সেজন্য বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন সরকারি দলের হাতে জিম্মি, বিএনপির হাতে নয়। গণতন্ত্রের এ জিম্মি দশা খুব করুণ। কষ্টার্জিত গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।আমরা এখন সংসদে কার্যকরি অবস্হান দেখতে পাচ্ছি না।গত বৃহসপতিবারও সংসদে দেখা গেছে এমপি মন্ত্রীরা ঘুমাচ্ছে, কেউ বা পেপার পড়ছে আবার কেউ খোশ গল্প করছে।
এ অবস্হা নিরসনের একমাত্র পথ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একাদশ নির্বাচনের পথ সুগম করা।এ না হলে বাংলাদেশে রাজনীতি তথা মানুষের জীবনের উপর আবারো সন্কট তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।আর একটি ব্যাপার হলো আমরা এখনো দেখছি না রাজনীতিবিদদের কোন সমঝোতার।এ সমঝোতা যে সম্ভব নয় তার অনেক কারন রয়েছে।প্রধান যে দুই রাজনৈতিক দল(আওয়ামিলীগ ও বিএনপি) তাদের দুই নেত্রির ব্যাক্তিগত প্রতিহিংসার যদি লাঘব না হয় তাহলে সমঝোতা হবে না।তাদের ভাবতে হবে, তারা একটা দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।এটা কোন পরিবারতন্ত্র নয় যে দুটো পরিবারের সাথে তাদের জয় পরাজয়।আর এটা এমনও নয় যে কেউ ক্ষমতায় আসলে বাইরের শক্তির দ্বারা নিজেদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখবেন।আমরা একটি স্বাধীন দেশ।আমাদের সবকিছু রয়েছে।শুধু প্রয়োজন সেগুলোকে রাষ্ট্রীয় কাজে সঠিকভাবে ব্যাবহার করা।কিন্তু আমরা দেখছি দু'টি বড় দল অন্যান্য ছোট দলগুলোকে নিয়ে পেশি শক্তিতে রুপান্তরিত হচ্ছে।আর একটি বড় পরিতাপের বিষয় হলো আমাদের জনগনের মাঝে যারা শুশিল বা বুদ্ধিজীবি বলে পরিচিত তারা নেক্যারজনক ভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এই দুই দলে।এই বিভক্তির কারন ও হলো দু'টি বড় রাজনৈতিক দল।যখন যে ক্ষমতায় আসে তখন তারা সুবিধা নিয়ে থাকে।গত কয়েক বছরে সত্য কথা বলতে গিয়ে বা সত্য কথা প্রচার করতে গিয়ে সাংবাদিকরা যে ভাবে নির্যাতিত হয়েছে ও হচ্ছে তা আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে প্রচারিত হয়েছে।বিরোধীদের উপর দমন পীড়নে জেল গুলো এখন ভারি হয়ে উঠেছে।এ কোন গনতান্ত্রিক আচরন নয়।
তাহলে আমরা এখন কি করতে পারি? আমাদের গনতন্ত্রের বিকাশ ঘটতে অনেক সময়ের প্রয়োজন।তবে আমাদের রাজনীতিবিদ,বুদ্ধিজীবিগন ও দেশের প্রান্তিক প্রতিনিধিরা মিলে যদি একটি সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে,একটি সঠিক নির্বাচন দিয়ে যারাই ক্ষমতায় আসুক তারা সমস্ত অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকবেন আর বিরোধীরা যারা আসবেন তারাও সরকারের সহযোগী হয়ে ৫ বা ১০ টি বছর দেশের কল্যানে কাজ করবেন,তাহলে সম্ভব দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।আর যদি গনতন্ত্রে বিশ্বাসী না হয়ে থাকেন তাহলে বড় দুই দল সিদ্ধান্ত নিন আপনারা এক এক দল ৫ বছর পর পর ক্ষমতায় আসুন ১৫১ টি আসন নিয়ে।বাকি ১৪৯ আসন ভাগ করে দিন রেশিও অনুপাতে বিরোধী দলদের যাতে সব বিরোধী দল খুশি থাকে।এভাবে স্হিতিশীলতার সাথে দেশ ও সমাজকে স্হিতিশীল থাকতে দিন।হানাহানি বন্ধ করুন।প্রান্তিক মানুষ সহ আমাদের যারা ভুক্তভুগি তাদের বাঁচতে দিন।মানুষ এখন আপনাদের কাছে কোন গনতন্ত্রের কথা বা অন্য কোন কথা শুনতে চায় না উন্নয়ন ছাড়া।আন্তর্জাতিক দেশগুলো আমাদের বন্ধু ও সহযোগী নি:সন্দেহে কিন্তু আমাদের ভিতরের সমস্যা সমাধানের পথ আমাদেরই খুঁজে বের করতে হবে।আমাদের ঘরে অন্যদের ঢুকতে দেয়ার মানে হলো আমাদের সেই যোগ্যতা নেই।আমাদের রাজনৈতিক মানসপুত্র ও মানসকন্যাদের একথা ভাবার সময় যদি না আসে তাহলে ভাবতে এ জাতি তাদের দৈন্যতা নিয়ে আরো কয়েকযুগ অন্ধকারে বাস করবে আর সমাজ বিশৃংখলিত হয়ে আমরা হারাব আমাদের সন্চিত ঐতিহ্য।আমি আশাবাদি আর এ আশার উদয় হোক প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে যেভাবে আমরা স্বাধীন করেছিলাম এ দেশকে লক্ষ লক্ষ আত্মাহুতির বিনিময়ে।
বিষয়: বিবিধ
১২০৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন