প্লট ও ফ্লাট যারা ক্রয় করেছেন বা যারা ক্রয় করবেন কিছু জিনিস ক্ষতিয়ে দেখবেন কি?
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০২:০৬:০৬ দুপুর
উন্নত বা অনুন্নত সব দেশেই প্লট বা ফ্লাটের ব্যবসা আছে।তবে বিশেষ করে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ ব্যাবসাটি চলে বিভিন্ন কারসাজিতে।বড় কোম্পানিগুলো তাদের সম্মান রক্ষার্থে কিছু ভাল কাজ করেন কিন্তু তার সাথে কিছু খারাপ কাজও করেন যা সাধারনের বুঝার কোন উপায় নেই।আর ছোট কোম্পানিগুলোর মধ্যে কিছু তো ভাল আছে যারা ব্যাবসা করে বাজারে নিজেদের দাঁড় করাতে চান।আবার কিছু আছে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তাদের ব্যাবসা চালান। আমি এ ব্যাপারে বিশেষজ্গ নই তবে দীর্ঘদিন পৃথিবীর বড় বড় কোম্পানি গুলোর সাথে চাকুরির সুবাদে যে অভিজ্গতা অর্জন করেছি ও প্রফেশনাল ইন্জিনিয়ারদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি বা আমার নিজের একটি ছোট কোম্পানীর সাথে পার্টনারশিপ থাকার কারনে কিছু মৌলিক বিষয় জনসাধারনকে জানানো ফরয মনে করছি। তানাহলে আল্লাহ হয়ত আমাকে আমার এই জ্গানের জন্য প্রশ্ন করতে পারেন।আমাদের সমাজে ইতিমধ্যে অনেক কোম্পানি সম্পর্কে কথা উঠে এসেছে যারা মানুষ থেকে টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন পরও প্লাট বা ফ্লট দিতে পারেন নি।কারো টাকা গচ্ছা গিয়েছে আবার কেউ দেনদরবার করে টাকা পেয়েছেন।আপনাদের এখানে এই একটি ও তার সাথে আর একটি ব্যাবসার রেফারেন্স দিচ্ছি।যারা মানুষের টাকায় কিভাবে বড় হয়ে যায়।আমি অস্বীকার করছি না তারা উপকার করছেনা।যাদের হাতে বাড়ি করার টাকা নেই তাদের একটা সুযোগ করে দিচ্ছেন এটা নি:সন্দেহে। কিন্তু আমি যেটা বলতে চাচ্ছি সেটা হলো এই কোম্পানিগুলো তাদের কমিটমেন্ট ঠিক রাখছে কিনা? ধরুন-কোন কাষ্টমার যদি প্লট বা ফ্লাট খরিদ করতে কোন কোম্পানীর কাছে আসে তখন কোম্পানিগুলো তাদের প্লট বা ফ্লাটের ডিজিটাল ন্ক্সাটা দেখান।সেখানে বাড়ির নক্সা বা প্লটের লিজেন্ডটা বেশ আকর্ষনীয় করে দেখান যাতে কাষ্টমার আকর্ষিত হয়।কিন্তু খোঁজ নিলে দেখা যাবে আদৌ যায়গাটা তাদের কিনা নয়।এরকম ঘটনা ঘটেছে অনেক।যারা ফ্লাট বা প্লট কিনতে চায় তাদের অনেকে যানেন না যে প্লট বা ফ্লাট সম্পর্কিত কি কি জিনিস কোম্পানির কাছে জানতে হবে।ডেপলাপারের কাছে কোন জিনিসগুলো চাইতে হবে বা কি কি প্রশ্ন করতে হবে তা জানা থাকলে কাষ্টমারকে ঠকতে হয় না।আমার অনেক বন্ধু গহীন পানির প্রজেক্টে প্লট কিনে ১৫/২০ বছর পর পেয়েছেন অথচ তাদের কমিটমেন্ট ছিল ৫ বছর পর যায়গা ডেভলাপ করে দিবেন।একজন মুসলিম হিসেবে আমি তাদের প্রশ্ন করছি? আল্লাহ সুদকে করেছেন হারাম আর ব্যাবসাকে করেছেন হালাল।যখন কোম্পানিগুলো কোন প্লট বা ফ্লাট বিক্রয় করেন তখন কাষ্টমারকে সুস্পষ্ট কথা বলেন কি না। আর কাষ্টমারও বুঝে উঠতে পারেন না তাদের চটকদারি কথার কারনে।ইনস্টলমেন্ট শেষ হলে যায়গাটা রেজিস্টারি করে হয়ত দেন কিন্তু তার পর যে ১০/১৫ বছর পার হয়ে যায় তার খেসারত যায়গার মালিককে দিতে হয়।কোম্পানী কাষ্টমারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সেটা পুনবিনিয়োগ করে নিজেদের লাভবান করেন।এই ওয়াদা ভংগ করে যে টাকা অর্জন করলেন-এটাই হলো হারাম।আর একটি ব্যাবসা হলো ট্রাভেল এজেন্সির ব্যাবসা।আমার একজন বন্ধু মানুষ যার এই ব্যাবসা ছিল তাকে প্রশ্ন করেছিলাম।আর আমি যেহেতু মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় কোম্পানীতে আছি সেখানেও যখন ট্রাভেল এজেন্টরা আসে তারা কি করে সেটা আমার নখদর্পনে আছে।আমি গড়পড়তা সবার কথা বলছিনা তবে ভাল প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম যারা হালাল হারাম বেচে ব্যবসা করে।আমাদের দেশের মত দেশের মানুষগুলো বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে।অনেকের কিছু করার থাকে না আবার অনেকে দেশে নিচু মানের কাজকে লজ্জা মনে করে।অনেকে ঘরবাড়ি বিক্রি করে আবার অনেকে নিশ্ব হয়ে বিদেশ ফাঁড়ি দেয়।দেশে অনেকে কাজ করতে লজ্জা পান কিন্তু বিদেশে সেটা হয় না কারন সেখানে বিদেশীরা থাকে, নিচু মানের কাজ করলে দেশের কেউ দেখবে না।কারন শ্রমের যে একটা মর্যাদা আছে তা সুশিক্ষিত না হওয়ার কারনে বুঝতে পারে না অনেকে।আর একটি কারন হলো ডলার-রিয়াল-ইউরো বা ফাউন্ডে কনভার্ট করলে টাকার অন্কটি বেড়ে যায় সেটাও আর একটি কারন।যদি কোন ট্রাভেল এজেন্টের কাছে ১০০টি ভিসা থাকে, সে নিবে ১০০টি লোক।সৌদি আরবে যদি একটি ভিসার দাম হয় ৩ লাখ টাকা তাহলে হয়ত আরো ২০০ লোক থেকে ১ লাখ টাকা করে আগাম নিবে যাদের নেয়া সম্ভব হবে না।যদি এই ২ কোটি টাকা ৬ মাস পরে তাদের ফেরত দিয়েও দেয় তাহলে এই টাকা বিনিয়োগ করে যে অর্জন করলো তাতে লাভবান হলো ট্রাভেল এজেন্ট এবং অর্জনটা হলো হারাম।এ ভাবেই অনেক কোম্পানি অল্পদিনে ফেঁপে ফুলে উঠে।
যাই হোক ফিরে আসি ডেপলাপারস এরদিকে।অনেক ক্রেতা আছেন যারা প্রলোভনে পড়ে যান আর নিয়মকানুন না জেনেই কন্ট্রাক্ট করে ফেলেন এবং ইনস্টলমেনন্ট দিতে থাকেন।ওয়েষ্ট এর তুলনায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোতে এই কোম্পানিগুলোর যমযমাট ব্যবসা।এর কারন হলো, মধ্যপ্রাচ্যে যারা কাজ করতে আসেন তাদের টার্গেট থাকে ১০/১৫ বছর থেকে দেশে যাওয়া কারন এ সব দেশে নেশনালিটি পাওয়া যায় না।সে কারনে ডেভলাপারস কোম্পানিগুলো তাদের এই দুর্বলতার আশ্রয় নেয় আর ক্রেতারাও ভাবে আমাকে তো দেশে একদিন যেতেই হবে।ব্যাবসা যদি নিয়মনীতি মেনে কেউ করে তাহলে কোন অসুবিধে নেই।কিন্তু কোন এক বা দুটি কোম্পানি যদি অনিয়ম করে তা আচর করে অন্য ভাল কোম্পানিগুলোকেও।নাম বলবো না, আমাদের দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলোর রিপ্রেজেন্টেটিভ এখানে ইতিপূর্বে এসেছে, এখনো মাঝে মাঝে আসেন যাদের মুখে লম্বা দাঁড়ি ও সূন্নতি পোষাক এমন লোকও মিটিং এ হাদিস বলে কেঁদে দিয়েছে আর লোকজন বলেছে এমন লোকের কাছ থেকেই প্লট বা ফ্লাট নিলেই ভাল।পরবর্তিতে ঐ ক্রেতারাই তাদের কঠোর সমালোচনা করেছে যারা তাদের সাথে প্রতারনা করেছে।ইসলামের ভিতরে এই মোনাপেকি আচরনের লোক যে থাকতে পারে তা অনেকে জানে না।মুসলমানদের জানতে হবে মোনাপেক রোজ ক্কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে।সুতরাং আপনি যখন লেন দেন করবেন কারো সাথে তাকে পরিক্ষা নীরিক্ষা করতে হবে।সুতরাং আপনি একটি প্লট বা স্বাস্হসম্মত মালিক যদি হতে চান নিম্নের বিষয়গুলো জেনে নিবেন অবশ্যই:
১-প্রতিটি প্লট বা ফ্লাট গ্রহীতাকে তাদের যায়গার প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে।ডেপলাপার থেকে খতিয়ান,মৌজা ও দাগনম্বর নিয়ে স্হানীয় রাজিস্টার অফিসে গেলে এ সব তথ্য পাওয়া যাবে।কোন জরিপে কে মালিক ছিল তা দেখে নিতে হবে।জমিটি ডেভলাপার কোম্পানি নেয়ার সময় বহুল প্রচারিত জাতীয় পত্রিকায় বিজ্গাপন দিয়েছিল কিনা জানতে হবে।অনেকে মফস্বলের অখ্যাত পত্রিকায় বিজ্গাপন দেয় সেক্ষেত্রে জানতে হবে কি কারনে বা কোন সুবিধার জন্য তা দেয়া হয়েছে।কোম্পানিটি জয়েন্টস্টক কোম্পানির বা রিহাবের অন্তর্ভুক্ত কিনা।যদি রিহাবের অন্তর্ভুক্ত না হয় তাহলে ফাইল সাবমিট করেছে কিনা জানতে হবে।ইতিপূর্বে কয়েকটি কোম্পানি সম্পর্কে জাতীয় পত্রিকায় এসেছে বলে জনগন জানতে পেরেছে।খাস জমি এবং অতীতে হিন্দুদের নামের জমিতে বাড়ি তৈরি হয়েছে কিনা, নিজের ভবিষ্যতের প্রয়োজনে জেনে নিতে হবে।
২-নির্ধারিত জমির মাটি পরীক্ষা কোন কোম্পানি করেছিল? তারা এ কাজে দক্ষ কিনা? বাজারে তাদের পূর্ব পরিচিতি ও সুনাম আছে কিনা জানতে হবে।অনেকে পূর্বে করা বা অন্যের
জরিফের ডাটাগুলো কিছু এদিক সেদিক করে রিপোর্ট দিয়ে দেয় বস্তুত: তাদের রিপোর্ট ৮০% কাছাকাছি হতে পারে কিন্তু ১০০% নিশ্চিত হয় না তা অবশ্যই ক্ষতিয়ে দেখতে হবে।একজন সাধারন ফ্লাটমালিক এ সব তথ্যের ভুল ধরতে হয়ত পারবেন না কিন্তু নিজেদের কাছে রিপোর্টের কপি থাকলে কোন প্রফেশনালকে দেখানো যেতে পারে।
৩-ফ্লাট মালিকেরা অবশ্যই পুরো ভবনের এক সেট ড্রুয়িং নিজ দায়িত্বে ডেপলাপার কোম্পানি থেকে চেয়ে নিবেন।পরিপূর্ন ভাবে ভবনের কাজ শেষ হলে,ভবন যেভাবে বানানো হয়েছে,যে পথ দিয়ে পাইপ লাইন নেয়া হয়েছে,ইত্যাদি অন্কন করে হুবহু একটি ড্রয়িং বানানো হয় সেটাকে এজ বিল্ট ড্রয়িং বলা হয়।সেই ধরনের একটি সেট সংগ্রহ করে পুর সেটের মাঝে
structural,architectural,electrical,drainage,water supply drawings ভুলক্রমে বাদ পড়েছে কিনা নিজ দায়িত্বে পরখ করে দেখে নিতে হবে।এ ছাড়াও একটি ভবন তৈরিতে আরো বিভিন্ন নক্সা বা ড্রয়িং থাকে যেমন- elevation ,section,details ইত্যাদি।যে সমস্ত কোম্পানির সুনাম আছে তাদের কাছে এর সিডি থাকবে বা প্রিন্ট থাকবে।ভূমিকম্প জনিত ব্যাবস্হা নিয়ে বিল্ডিং বানানো হচ্ছে কিনা তা দেখে নেওয়া জরুরি।
৪-যারা ফ্লাট ক্রয় করতে চান তারা ডিজিটাল নক্সা দেখে ও চটকদারি বিজ্গাপন দেখে অবিভূত হয়ে পড়েন।তারা অনেকে বুঝতে চান না,ভবন তৈরিতে মালমসলা বা অন্যান্য উপাদান টাইলস ফিটিংস কি মানের দেয়া হয়েছে বা এগুলোর যথাযথ মান ঠিক আছে কিনা।বালি কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল,ইটের মান কেমন ছিল,সিমেন্ট কোন কম্পানির এবং তা ভেজাল মিশ্রিত কিনা,রডের প্রকৃতি কেমন ও কোন কম্পানির ও কারা সরবরাহকারি।ভবন তৈরির আধুনিক নীতিমালা অনুযায়ি যে সকল মালামাল ভবনের কাজের স্হলে আসবে তাদের ছবি তুলে রাখতে হয়।সাথে সাথে কাজে চলমান ভবনের ছবি তুলতে হয় যাতে সন্দেহমুক্ত হওয়া যায় যে ছবিটা ভবনের কাজ চলাকালীন সময়ে সরবরাহকৃত মালসামানের ডিজিটাল ছবি।লোহার কিয়দংশ নাম দেখা যায় এমন কংক্রিটের দেয়ালের ক্লোজআপ ছবি,ইটের লগো ও গাঁথুনির ছবি,সিমেন্টের প্রলেপের ছবি।রেসপনসিবল ইন্জিনিয়ারের দস্তখত ও থাকতে হবে এবং ডেভলাপার কোম্পানি দ্বারা সত্যায়িত হতে হবে।দরজা জানালার গ্রিল ও কাঠের কাজের নির্মান কারি কারা ও দরজার কাঠে গুন ধরলে কাকে ধরা হবে এসব খুটি নাটি ব্যাপারগুলো জানতে হবে কারন আপনি সারাজীবনের জন্য যে বিনিয়োগটি করছেন তা যেন সফলতা লাভ করে।
৫- structural drawing সংগ্রহ করে ভবনের উচ্চতা বর্ননা করে বিম,কলাম,মাটি খননের গভীরতা,ফাইলিং রডের সাইজ ইত্যাদি পুন: বিশ্লেষনের জন্য কোন একজন দক্ষ সিভিল ইন্জিনিয়ারকে দেখাতে পারেন।তিনি বলে দিতে পারবেন নির্মান কাজে কোন কারচুপি করা হয়েছে কিনা।স্টিল ড্রয়িং,বিম ও কলামের আকৃতি দেখে তিনি বলে দিতে পারবেন প্রয়োজনের তুলনায় এ সবের গঠন ও প্রকৃতি দুর্বল কিনা।অনুন্নত দেশগুলোতে যেহেতু বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক লোক থাকে সেজন্য যাকে ড্রয়িং দিবেন সেখানে যেন ডেভলোপার কোম্পানির নাম ঠিকানা ও টেলিফোন না থাকে যাতে করে ডেভলোপারের দুর্বলতা প্রকাশ করে অন্যায় সুবিধা নিতে না পারে।
৬-আপনি যে এলাকায় ফ্লাট কিনতে চাচ্ছেন সে এলাকার সরকারি বিধিবিধান কি তা উন্নয়ন কতৃপক্ষের কাছ থেকে জেনে নিন।সে এলাকায় সর্বচ্চো কত তলা ভবন নির্মান করার অনুমতি আছে।আপনার অনুমোদিত ভবন থেকে সীমানা পর্যন্ত কতটুকু ছাড় দিতে হবে।অতীতে বড় বন্যার সময় পানির উচ্চতা কত ছিল এবং জলাবদ্ধতা হয় কিনা।আপনার ভবনের মাটির উচ্চতা কতটা হওয়া বিধিসম্মত কেননা সরকারি হিসাবে উচ্চতা কত হতে হবে তার একটা বিধিবদ্ধ নিয়ম আছে।
উপরের বিষয়গুলো বাহিরের তথ্য সমৃদ্ধ।আভ্যন্তরীন বিষয়গুলো নিছে দেওয়া গেল:
১-আপনি যে ফ্লোরে থাকতে চান তার উপরের ফ্লাট ও নিছের ফ্লাটগুলো একই কিনা দেখুন।যদি একই হয় তবে সবাই একই সমস্যা ও সুবিধা - আসুবিধার সম্মুখিন হবে।বিশেষ করে বাথরুমের সমস্যার সম্মুখীন হয় সবাই।গোসলখানা ও টয়লেট থেকে সমস্যা তৈরি হয় বেশী এতে করে প্রতিবেশীর সাথে তিক্ততার সম্পর্ক গড়ে উঠে।সেজন্য পাইপের সংযোগ ও ফ্লোর ঢালাই , আস্তর ও ফিনিশিং ঠিকমত হয়েছে কিনা দেখে নিবেন।অনেক ফ্লাটে দেখা গেছে ৪/৫ বছর পরই এ রকম সমস্যা তৈরি হয়েছে যে, বেড রুম বা টয়লেটের ছাদ দিয়ে পানি এসে নিছের ফ্লাটে যারা অবস্হান করছে তাদের থাকার অনুপযোগী করে তুলছে।এ সব বিষয়ে প্রথমেই কতৃপক্ষের যোগাযোগ বা আপনার নিজস্ব কোন ইন্জিনিয়ারকে দিয়ে পরীক্ষা করে নিতে পারেন।
২-ভবনে আগুন লাগলে পালানোর ব্যবস্হা আছে কিনা? ভবনের মাঝখানে যে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে হয়,বিপদের সময় সেটা দিয়ে বেরোনো যাবে কিনা তা পর্যালোচনা করতে হবে।একটি কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে,আগুন ব্যাপকভাবে জ্বলে উঠার বহু আগেই মানুষ মৃত্যুবরন করে শুধুমাত্র ধুঁয়া ও উত্তাপের কারনে।তাই সিঁড়ির সামনে বা লাগোয়া কক্ষে যদি আগুন লাগে তখন অনেকেই পালাতে পারে না।সেই অবস্হায় বিকল্প সিঁড়ি আছে কিনা দেখতে হবে।আমরা গত কয়েক বছরে গার্মেন্টস ফেক্টরিগুলোতে যে আগুন লাগা দেখেছি বা সেখানে যে মানুষগুলো পুড়েছে তা থেকে প্রতিয়মান হয়েছে সেখানে কোন বিকল্প সিঁড়ি ছিল না।বাংলাদেশ অনবরত বৃষ্টি বাদলের দেশ।ব্যালকনিতে বৃষ্টির পানি জমাটা স্বাভাবিক তবে সেই পানি নিষ্কাশনের জন্য ট্রাপ রাখা হয়েছে কিনা।ফ্লাট বুঝে নেয়ার আগে টয়লেট,রান্নাঘর , ফ্লোর ও বেলকনিগুলোতে পানি ঢেলে পরিক্ষা করে নিতে হবে পানি গড়িয়ে সঠিক যায়গা দিয়ে পড়ছে কিনা বা নিছের ফ্লোরে পানি পড়ছে কিনা।আপনি যে তলায় থাকবেন ইলেক্ট্রিকাল কক্ষটি সেই তলায় থাকাটা আবশ্যক।মেইন ইলেক্ট্রিকাল রুম দিয়ে আপনার ভবনের কানেকশনটি কোথায় লাগানো আছে দেখে নিতে হবে।ভূমিকম্প বা অন্য কোন কারনে ফ্লাটের মুল ইলেক্ট্রিকালের তার ছিঁড়ে গেলে সেটার রাস্তা উদ্ধার করা মুশকিল হয়ে যেতে পারে।সে সময় এস বিল্ড নকশার সাহায্য নিতে হবে।নিজের ইচ্ছামত করিডোর দিয়ে তার টানতে গেলে অসৌন্দর্য ও অনিরাপদের জন্য অন্যরা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।ভবনে ময়লা ফেলার জন্য গার্বেজ হোল আছে কিনা দেখে নিতে হবে।ভবনের এটা একটা বাড়তি সুবিধা, বিশেষ করে বড় বড় ডরমিটরি হলে থাকা আবশ্যক।তানাহলে দরজার বাইরে ময়লা রাখলে দুর্গন্ধ যেমন ছড়াবে তেমনি রোগব্যাধিতেও আক্রান্ত হবে।
৩-ভবনে টেলিফোন সংযোগের ব্যাবস্হা নিচের তলা থেকে হলে নিরাপদ ও সুন্দর হয়।ফলে বাহিরে টানা তারের কারনে ভবনের সৌন্দর্য বিনষ্ট ও পাখি বসার সুযোগ থাকবে না।ভবনের ছাদে অবশ্যি সেন্ট্রাল ডিস এন্টেনারের সুযোগ ও প্রতি তলায় স্প্লিটার কানেকশন থাকা উচিত।এতে অন্যরা ইচ্ছেমত কাজ করার সুযোগ পাবে না।বজ্রপাত আঘাত হানলে সেটি মাটিতে চলে যেতে হবে,সেজন্য প্রয়োজনীয় পিতলের থাম বসানোর মাধ্যমে পুরো ভবনটির আর্থ প্রটেক্টেড করা হয়েছে কিনা।নতুবা জীবনের ঝুঁকি ছাড়াও ভবনের লাইট,টিভি,ফ্রিজ ,মোবাইল সহ সমুদয় ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।ভবন যদি বড় হয় তাহলে কক্ষের ভিতর প্রয়োজন মত মোবাইল সিগনাল পাওয়া যায় কিনা নতুবা মজবুত সিগনালের জন্য ওয়ারলেস একসেস সরন্জাম বসাতে হবে।ভবনের নিচে কোন মেহমান আসলে তার সাথে কথা বলার জন্য ভিডিও কিংবা অডিও যোগাযোগের ব্যাবস্হা আছে কিনা।না থাকলে ভবিষ্যতে করতে পারার জন্য সুযোগ রাখা হয়েছে কিনা।ভবনে আগুন লাগলে মুহূর্তে সবাইকে সতর্ক করার জন্য ফায়ার এলার্ম এর ব্যাবস্হা আছে কিনা, থাকলে বিস্তারিত জেনে নেয়া।এ সমস্ত ইলেক্ট্রনিক্স কারা সরবরাহ করেছে এবং ওয়ারেন্টি আছে কিনা জেনে নিতে হবে।কেননা বিপদের সময় তারা সার্ভিস না দিলে তা বাসিন্দাদের জন্য মরন সমস্যা হয়ে দেখা দিবে।
৪-বাসায় উঠার পর সব সময় পরিবারের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে চুলা জ্বালানো ও নিভানো হয়েছে কিনা,ইলেক্ট্রিক কানেকশন গুলোতে প্রয়োজনীয় কভার লাগানো হয়েছে কিনা,ছোটদের এসবের কাছে ঘেঁষতে না দেয়া,আগুন লাগলে কিভাবে বের হয়ে যেতে হবে পরিবারের সবাইকে প্রশিক্ষন দেয়া।মনে করুন ভবনে আগুন লেগেছে, এ সময় কত কম সময়ে আহত না হয়ে বুদ্ধিমত্তার সাথে বেরিয়ে যাওয়া যায় তার পূর্ব প্রস্তুতি থাকতে হবে।ঘর থেকে বের হওয়ার সময় দ্রুত সম্ভব হলে দরজা জানালা বন্ধ করতে হবে কারন আগুনের ভয়ে পালানোর সময় আতন্কে দরজা জানালা খোলা রেখেই সবাই পালায়।এতে ঘরে অক্সিজেন ঢুকে পড়ে,ফলে আগুন তাড়াতাড়ি বিস্তারের সুযোগ পায়।এই ধরনের বিপদে অনেকে বেশী ওজনের জিনিস নিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করে যা অনুচিত।আপনার হাল্কা ও গুরুত্বপুর্ন জিনিসপত্র যেমন-গহনা ,টাকা কড়ি,পাসপোর্ট,চেকবই ও অন্যান্য দলিলপত্র এক যায়গায় বেগে পুরে রাখুন যাতে এক মিনিটও সময়ক্ষেপন না হয়।কয়েকবছর পূর্বে এ রকম এক অভিজ্গতা হয়েছিল আমার।আমি যে কম্পাউন্ডে থাকি সে বিল্ডিংটি ১৭ তলা।আমি ১৭ তলাতে অবস্হান করছি দীর্ঘ ৮ বছর।আমার একটি প্রতিবেশি এসেছিল যে নাকি একজন লেবানিজ ইন্জিনিয়ার।একদিন তিনি তার স্ত্রী ও দু'জন স্কুল পড়ুয়া টিন এজারদের নিয়ে নিচে নামার প্রশিক্ষন দিচ্ছিল কিভাবে আগুন লাগলে নিছে নামতে হবে।আমি ভেবে ছিলাম হয়ত কোন বিপদ হয়েছে।আমিও দৌড়ে তাদের সাথে নামলাম।পরে তিনি আমাকে বললেন মাসে একবার আমি এই প্রশিক্ষন দিয়ে থাকি।সত্যিই আমরা জীবনে অনেকে হেরে যাই এই পূর্ব প্রস্তুতি না থাকার কারনে।অনেকে সিঁড়িতে মালামাল রাখেন, কখনো এ অবস্হা সৃষ্টি করবেন না।কারন আগুন লাগার মুহূর্তে পালাতে এগুলো বাধা সৃষ্টি করবে।
৫-ভাড়া বাসায় থাকা ও নিজের টাকায় ক্রয় করা বাসার মাঝে বিস্তর পার্থক্য আছে।ভাড়া বাসায় মালিক থাকে একজন তাই একজনের সিদ্ধান্তে সমস্যার সমাধান সম্ভব।আর ফ্লাট ভবনে মালিক থাকে অনেক, তাই এখানে সমস্যার সমাধান তাড়াতাড়ি হয়ে উঠে না, তবে যদি মালিকদের পক্ষ থেকে একটা ম্যানেজমেন্ট করে নেয়া যায় তাহলে তেমন সমস্যা থাকেনা।মানুষ আয় রোজগারের সময় ফ্লাট কিনে আবার যখন ফ্লাটে উঠে তখন অনেকের সে রকম আয় রোজগার থাকে না।সেজন্য যে জিনিসটি মাথায় রাখতে হবে সেটা হলো বিভিন্ন জিনিসের সার্ভিস খরচ।প্রথম দশ বছর ভবনের চামড়া উঠবেনা,প্রথম পাঁচ বছর লিফ্টের কোন সমস্যা থাকবে না,প্রথম তিন বছর ভবনের কোন রং চটবে না,প্রথম দুই বছর জেনারেটরের কোন সমস্যা থাকবে না,প্রথম এক বছর পানির পাম্প মেশিনের কোন সমস্যা থাকবে না,প্রথম ছয় মাস ঘরের লাইট ও পানি নিষ্কাশনের কোন সমস্যা থাকবে না।শুরুর প্রথম দিকে দারোয়ান , সুইপার,পানির বিল,ইলেক্ট্রিক বিলের ঝামেলা থাকবে না। তবে এসব খরচ দিনে দিনে বাড়তে থাকবে।সে সব খরচের কিছু ব্যাক্তিগত ও কিছু সমষ্টিগত।তবে ফ্লাট ভবনের বেশিরভাগ খরচ সমষ্টিগত।দারোয়ান,সুইপার,রং করা,পাম্পমেশিন ঠিক করা,ভবনে প্রয়োজনীয় সার্ভিস করা,লিফ্টের ম্যানটিনেন্স,বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতির সংরক্ষন বাবদ প্রতিমাসে খরচ আসবেই।এই সব খরচের কথা খেয়াল রাখতে হবে।ভবন যত আধুনিক হবে খরচও তত বেশী হবে।ফ্লাট নেয়ার সময় এ কথাগুলো মাথায় থাকলে পরে ঝামেলায় পড়তে হবে না।অনেক সময় দেখা গেছে ২০ জন মালিকের মধ্যে পাঁচ জন খরচ বহন করতে পারছে না।তখন দেখা যায় মনোমালিন্য।
উপরের বিষয়গুলো আমার অভিজ্গতা ও আমাদের দেশের আর্থসামাজিক অবস্হার আলোকে জানালাম।তবে আপনারা নিশ্চই ইমারাত বিশেষজ্গের সাথে পরামর্শ করেই এ কাজগুলোতে হাত দিবেন।কখনো এই ব্যবসায়িদের চটকদারি কথায় কর্নপাত করবেন না।একটি প্লট বা ফ্লাট আপনার ও আপনার পরিবারের জীবন সাথি।সুতরাং কোন ইনভেষ্টমেন্ট করার আগে ভেবে নিবেন বার বার।আমি নিজেও অনেক যায়গায় ঠকেছি কিন্তু আপনাদের যেন ঠকতে না হয় সে প্রয়াসে এ লিখাটি হয়ত আপনাদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষনে কাজে লাগবে।মানুষ বহুবিধ উপায়ে কল্যান অর্জন করতে পারে।যখনই কোন কল্যান আমাদের মানসপটে ভেসে উঠে তা জানিয়ে দেয়া একজন মানুষের ধর্ম।এটা যে করতে না পারবে সে হয়ে উঠবে একজন কপট লোক হিসেবে।বাংলাদেশে প্রচুর মানসম্মত ডেভলোপার কোম্পানি আছে তবে আপনাকে তাদের অতীত কাজ ক্ষতিয়ে দেখতে হবে ও যাচাই করতে হবে।আপনি যদি সাইনবোর্ড ও চটকদারি বিজ্গাপন দেখে অবিভূত হয়ে পড়েন তাহলে অনেকাংশে প্রতারিত ও হতে পারেন।আপনাকে এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে কোন কোম্পানি সততা , দক্ষতা ও ঈমানদারির সাথে কাজ করছে।একজন অবিশ্বস্ত ও হাতুড়ে ডাক্তার যেমন একজন মানুষের মৃত্যুর কারন হতে পারে তেমনি একটি অদক্ষ ডেভলোপার কোম্পানি হতে পারে হাজার মানুষের মৃত্যুর কারন।সেজন্য আমাদের নিজ নিজ ভাবনা দক্ষতা ও অভিজ্গাতার আলোকে একটি নীড়ের সন্ধান করতে হবে যা স্বস্তি দিবে পরিবারকে যুগ যুগ ধরে।
বিষয়: বিবিধ
৪১৬৬ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যাক মানুষের উপকারের জন্য আল্লাহ আপনারে উত্তম ফল দান করুন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন