সৌন্দর্যকে বাজারে ফেরি করে আয় করে ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান— এটা কি নারীর ক্ষমতায়ন? এই দায় কি এই সুন্দরি নারীগণ বহন করতে পারবেন?

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৩:২৯:৩২ দুপুর

সমাজের সৌন্দর্য তত্ত্ব ও নারি সৌন্দর্য নিয়ে যুগ যুগ ধরে উঁচুতলার মানুষগুলো এবং রাজা রাজড়াদের অনেক কাহিনী বিবৃত হয়েছে।সম্রাট শাহজাহান মমতাজ মহল নির্মান করেছিলেন তার স্ত্রী মমতাজের স্মরনার্থে।এই সুন্দরি নারিদের দিয়ে গুপ্তচরবৃত্তি সহ অনেক অস্পৃশ্য কাজ করিয়ে নিয়েছে যুগে যুগে সমকালীন শক্তি।আবার এই সুন্দরিদের অনেকে একাধিক পুরুষদের ব্যাবহার করে হত্বা পর্যন্ত করতে কুন্ঠিত হয় নি।বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে পৃথিবির সব দেশেই যে নারি ক্ষমতায়নের কথা বলছে, আসলে কি নারিরা মর্যাদার সাথে তাদের ক্ষমতা রক্ষা করে চলছেন না ব্যাবসায়িক পন্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন তা তাদের ভেবে দেখতে হবে।বিজ্গানের উন্নতির এ যুগে আমাদের নৈতিকতার কতটুকু অবক্ষয় হচ্ছে তা প্রমান করছে আমাদের সংবাদ মাধ্যমগুলো।নারিরা যে অবহেলিত ,নির্যাতিত ও নিপিড়িত হচ্ছে তার প্রমান ভুরি ভুরি।এর একটি প্রধান মাধ্যম হলো পর্নোগ্রাফি ও পর্নোগ্রাফিক সিনেমা।বর্তমান যুগে নারিদের নিয়ে যে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা হচ্ছে তার একটি অশ্লীল রুপ হলো বিচারকরা এই নারিদের গোপন অংগ অবলোকন করে তাদের বিচার কার্য সম্পাদন করেন।আমি বিনয়ের সাথে তাদের প্রশ্ন করতে চাই-তারা কি তাদের মেয়েদের এই গোপন অংগ দেখতে পারেন? এটা সত্য যে ইসলামের অনুসারি অনেক সুন্দরি মেয়ে আছে যারা এখানে প্রদর্শিত হয় না।শুধুমাত্র কাফের মুশরিক ও মুসলমান নামের তাদের অনুসারিরাই এ কাজে অগ্রবর্তি।আবার অনেক বিধর্মি বা এমন মুসলমানদের ও দেখেছি যারা নামাজ কালাম তেমন করেন না কিন্তু পরিবার রক্ষনে সচেতন।এরা ও তাদের সামাজিক মর্যাদার কারনে নিজেদের পরিচ্ছন্ন রাখেন।

আমাদের উপমহাদেশে বাংলা চলচ্চিত্রে সুচিত্রা সেন এক কিংবদন্তি নায়িকা।কয়েকদশক ধরে বাংলা সিনেমায় খ্যাতি অর্জন করেছেন।এই খ্যাতির পিছনে ছিল তার সৌন্দর্য ও অভিনয়।এ রকম তার অনুসারি ও রয়েছে বাংলা ভাষাভাষি অন্চলে।যদিও আজকের চলচ্চিত্রে যে অসম্ভব রকম অশ্লিতা এসেছে তা ছিল না তখন।এখন চলচ্চিত্রে চুমু ও নেকেড অংগভন্গি ছাড়া কোন চলচ্চিত্র-ই তৈরি হচ্ছে না।আর যারা এখন ডার্টি ফিল্মগুলো তৈরি করছেন তারাতো অশ্লিলতার কিছুই বাকি রাখছেন না। এই সুন্দরি প্রতিযোগিদের বিশাল অংকের বিনিময়ে চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়োগ দিয়ে থাকেন আর তারা অর্জন করছে কোটি কোটি টাকা।এই টাকাগুলোর বিশাল অংশ আসে সমাজের নিম্ম শ্রেনি থেকে।একজন রিক্সাপুলার বা দিন মজুর সারাদিন তার কাজ করে যখন ঘরে ফিরবে তখন সিনেমা হলগুলোর সাইনবোর্ড বা বিলবোর্ডে এই সুন্দরিদের অশ্লীল অংগভংগি দেখে সেখানে ঢুকে পড়ে।সামাজিক ঘটনার নামে এই চলচ্চিত্রগুলোর ভিতর থাকে প্রেম কাহিনি ও নায়ক নায়িকার অভিনয়কৃত দাম্পত্য জীবনের আংশিক পর্নচিত্র।যখনই এই নির্বোধ ও অশিক্ষিত মানুষগুলো সিনেমা হল গুলো থেকে বের হবে তখন তাদের প্রতিক্রিয়া কি? যার ঘরে স্ত্রী আছে সে হয়ত তার ঘরে যাবে কিন্তু প্রশ্ন হলো ৮০% লোক যারা সিনেমা হলে যায় তারা যুবক যুবতি।এরাই শিকার হচ্ছে চরিত্র হননের।ফলশ্রুতিতে সমাজের যুবতি ও মধ্যম বয়সি মেয়েরা হচ্ছে ধর্ষনের শিকার।তাহলে এই চলচ্চিত্র অংগন থেকে সমাজ ধর্ষন নামক এই রোগের সুবিধা পাচ্ছে।কোন ঘটনা ঘটলে সরকার ও প্রশাসন সে ঘটনার কোন সূরাহা করতে চান কিন্তু এ ঘটনাগুলোর মুল কোথায় তা খুঁজতে চান না।কোন অশুভ কাজের যদি মুল উৎপাটন করা না হয় তা বার বারই ঘটবে এবং এটাই স্বাভাবিক।

বিংশ শতাব্দীর আমেরিকান অভিনেত্রী মেরিলিন মনরো ছিলেন অসম্ভব সুন্দরি।তার এই সৌন্দর্যের জন্য তাঁকে অনেক সময়ই বিরক্ত করেছেন তখনকার অনেক ক্ষমতাশীল রাজনীতিবিদও।তিনি আত্মহত্মার পথ বেচে নিয়েছিলেন।কেন তিনি আত্মহত্মা করলেন? তার কোন কিছুর কি অভাব ছিল? তিনি সুন্দরি ছিলেন,সামাজিক প্রভাব ছিল,সুন্দর আবাস ছিল,অর্থের কোন অভাব ছিল না।কিন্তু তাকে জীবন দিতে হয়েছিল।এই অবসাদের মুল কারন হলো প্রকৃতির নিয়ম থেকে দূরে সরে যাওয়া।যারা ধর্মের শৃংখলে নিজেদের আবদ্ধ করতে ব্যার্থ হয়েছেন তাদের সবারই এ রকম পরিনতি হয়েছিল। আবার ব্রিটেনের প্রিন্সেস ডায়ানার কথাও আমরা কমবেশি জানি। পাপারাজ্জিদের থেকে আজীবন গা বাঁচিয়ে চলতে হয়েছে তাঁকে। ধারণা করা হয়, প্যারিসের অটো ট্যানেলের একটি পিলারে ধাক্কা লেগে হওয়া দুর্ঘটনাটির কারণও ছিল পাপারাজ্জি। এই দুর্ঘটনাই তাঁর মৃত্যু ডেকে আনে।কিন্তু এটাই কি মুল কারন? দাম্পত্য জীবনের কলহ কি দায়ি নয় এর নেপথ্যে?

আরো কিছু সামাজিক কারন রয়েছে।এখনো এই একবিংশ শতাব্দীতেও আমাদের দেশে একজন সুন্দর নারী রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে তার দিকে তাকিয়ে থাকে হাজারো পুরুষের চোখ! উত্যক্তের শিকার অনেক নারীই মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছেন। শুধুই সুন্দর হওয়ার কারণে কমবয়সী মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে ভয় পায় তাদের পরিবারগুলো। পথে উত্যক্ত হওয়ার আশঙ্কায় তাকে শিক্ষার আলো থেকে এভাবেই বঞ্চিত করা হচ্ছে। সমাজে নারীর সৌন্দর্যের দুর্ভোগের এখানেই শেষ নয়। আমাদের দেশে বাল্যবিয়ের অন্যতম একটি কারণ কন্যাশিশুটি সুন্দর। পরিবার যখন তাদের সুন্দর মেয়েটিকে নিজেদের কাছে অনিরাপদ মনে করে তখন প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই তার বিয়ের আয়োজন করে।এ সব ঘটনা দুর্ঘটনা থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ হলো শিক্ষার বিস্তার ও তার সাথে ধর্মীয় প্রনোদনা।একটি শিশু ছোট বয়স থেকে ধর্মীয় আচার আচরনে বেড়ে উঠলে এ রোগগুলো নিশ্চই কমে যাবে।বাবা মা শিশুদের প্রতি যত বেশি যত্নবান হবেন ততবেশি সমাজ উন্নতি করবে।প্রত্যেকটি পরিবার যদি আদর্শ হয় এ সমস্যার অনেকটাই সমাধান হতে পারে।তার সাথে প্রয়োজন সরকারি আইনকানুন বলবৎ করা যাতে মানুষ এই পশু নামক মানুষদের কাছ থেকে রেহাই পায়।

নারীর সৌন্দর্যকে আজকের সমাজ বাণিজ্যিক কাজে যেভাবে ব্যবহার করছে তা আমাদের ভবিষ্যৎকে ভাবিয়ে তুলছে। সৌন্দর্যকে প্রায় সময়ই পুঁজি করে পণ্যের প্রসার ঘটানো হচ্ছে। ভিন্ন ভিন্ন পণ্যের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সুন্দর নারীকে করা হচ্ছে ব্র্যান্ড অ্যাম্ব্যাস্যাড্যার। লাক্সের জন্য যেমনটা এখন রয়েছেন ক্যাটরিনা কাইফ, ফ্রান্সের প্রসাধনী প্রতিষ্ঠান ল'রিয়েলের পণ্যের জন্য ঐশ্বরিয়া রাইয়ের সঙ্গে সমপ্রতি ক্যাটরিনাও যুক্ত হয়েছেন। জেনিফার লোপেজ, বিয়োনিজ নোলস-ও এই পণ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্ব্যাস্যাড্যার ছিলেন। আবার সৌন্দর্যকে বৈশ্বিক রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেও পণ্যের প্রসার ঘটানো হচ্ছে। নৃবিজ্ঞানী সুসান র্যাঙ্কল (২০০৪) দেখিয়েছিলেন, বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আঞ্চলিকভাবে সুন্দর নারীদের বাছাই করে পণ্যের বাজার বিস্তৃত করা হয়।নারির ক্ষমতায়ন হবে সুস্হ নারিজাতির সমাজে বিচরন।রাষ্ট্রের যে কোন অংগেই নারিরা কাজে নিয়োজিত হোক না কেন তাদের নিরাপত্বা দেয়া জরুরি সরকার সহ অন্যান্য নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের।সেলিব্রেটির নামে যে সমস্ত অনুষ্ঠান হয়ে থাকে তা সরকারের নাগালেই হয় আর তাতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি পাঠানো হয়।পৃথিবির বড় বড় হোটেল সহ আমাদের দেশেও যে সব হোটেল রয়েছে সেখানে এই সুন্দরি নারিরা পর্ন হিসেবে ব্যাবহার হচ্ছে।কোন দ্বৈত নীতিই একটা সমাজকে রক্ষা করতে পারে না।একটা নীতিই অবলম্বম করতে হবে, আর তা হলো ধর্মীয় নৈতিকতা ও মানবতা।নারির সৌন্দর্যকে বাজারে ফেরি করে প্রতিষ্ঠানের অর্থ আয়— এটা কি নারীর ক্ষমতায়ন? কখনো তা হতে পারে না। এই দায় কিছুটা হলেও বহন করতে হবে এই সুন্দরি নারীগনকে। যদি আপনারা তা বহন করতে অপারগ হন আমি নিশ্চিত এ সমাজকে আরো মুল্য দিতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

১৬৬৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

171451
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৯
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : ভালো লাগলো
171474
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:০৫
বুড়া মিয়া লিখেছেন : ঐসব নারীরা নিজেদের মানুষ বলে দাবী করতে চায়, কেউ কিছু বললে – তার রাস্তায় উলঙ্গ হয়ে হাউ-কাউ করে।

কিন্তু তাদের কার্যকলাপ যে প্রমাণ করে তারা মনুষ্য-শ্রেণীভুক্ত নয় এবং তারা সামান্য গরু-ছাগলের মতো প্রাণী যা ব্যাপকভাবে পণ্য হিসেবে ব্যবহার হয়, মনুষ্য-জাতির দাবীদার এ প্রাণী গুলোকে পশুদের মতোই কেটে ছিড়ে তাদের মাংস বিক্রি করা হয় – তা তাদের বোঝানো যায় না! – ফিরিয়েও আনা যায় না!

তাই এদেরকে মানুষরা মারলে নারী নির্যাতন না বলে পশু নিয়ন্ত্রণ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার দাবী জানাতে হবে।
171500
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:৩২
হতভাগা লিখেছেন : উনাদের চাহিদা আছে বাজারে সবসময়ই

চাহিদা থাকতে থাকতে যত পারে কামিয়ে নেবে

সেটা দিয়ে বাকী জীবন তার আরাম আয়াসে কেটে যাবে ।


171533
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৯
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : নারীদের সম্মান বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নয় তাকয়ায় প্রকাশ হয়।
আপনার লিখা অনেক ভালো লেগেছে ,ধনবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File