ধৈর্য ধারনের মাধ্যমে যেমন আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছা যায় তেমনি দুনিয়ার সব অকল্যান থেকে মুক্ত থাকা যায়।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ৩০ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৪:১৪:২৫ বিকাল
মানুষের জীবনে ধৈর্য ধারন করা ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।দুনিয়া ও আখেরাতের সব কল্যান লাভ হয় এই ধৈর্যের মাধ্যমে।মানুষ যখন অধৈর্য হয়ে যায় তখন তার উপর আরো বেশী অকল্যান আসতে থাকে।আমরা যদি আমাদের পার্থিব জীবনের সর্বক্ষেত্রের মানবিয় বিপর্যয় পর্যালোচনা করি দেখতে পাব ধৈর্য না ধরাই এর মুল কারন।মুসলিম হোক বা অমুসলিমই হোক ব্যাক্তি , পরিবার ,সমাজ ও রাষ্ট্রে এর কার্যকারিতা ও বাস্তবায়ন না হলে আমাদের জীবন হয়ে উঠবে বিক্ষিপ্ত।ধৈর্য-সহিষ্ণুতা আরবী ভাষায় যার নাম সবর। এই সবর বা ধৈর্য-এর গুরুত্ব এতো বেশি যে কুরআনুল কারিমে সত্তরের অধিক স্থানে সবরের উল্লেখ আছে। বিভিন্ন রূপে এই শব্দটি আছে শতাধিক জায়গায়। সবর ছাড়া কোন কাজই সুষ্ঠুভাবে সুন্দরভাবে সমাধান করা যায় না। দুনিয়ার কাজই হোক আর আখিরাতের কাজই হোক প্রতিটি কাজ সমাধা করার জন্য, জীবনে সফল হবার জন্য চাই কঠোর সাধনা। আর এই সাধনায় সিদ্ধিলাভের জন্য চাই সবর বা ধৈর্য।মহান আল্লাহ সূরা বাক্কারার ৪৫ আয়াতে বলেন,'আর তোমরা ধৈর্য ধরে ও নামাজ পড়ে সাহায্য কামনা কর।আর এটি নিশ্চই বড় কঠিন বিনয়ীদের ছাড়া।' সমস্যা আর সমাধান হচ্ছে জীবনের অপর নাম। সমস্যা আসবেই তা সমাধান করে এগিয়ে যেতে হবে। এতে ধৈর্য হারা হলে চলবে না। যে ধৈর্য হারিয়ে ফেলবে, সাধনার পথ থেকে বিচ্যুৎ হবে সে, হবে ব্যর্থ।এজন্য ঈমানদারদের সূরা বাক্কারার ১৫৩ আয়াতে আবারো আল্লাহ স্মরন করে দিয়েছেন,' ওহে যারা ঈমান এনেছ! সাহায্য কামনা কর ধৈর্য ও নামাজ পড়ে।' যে পৌনঃপুনিকভাবে চেষ্টা করে সে সফল হয়।রবার্ট ব্রুস একটি মাকড়সার বার বার ব্যার্থতার পর যখন দেখলেন এর পর সে কৃতকার্য হয়েছে তখন তিনি যুদ্ধে অভিযান চালিয়ে জয়ী হয়েছিলেন। যে সকল মহাপুরুষের নাম ইতিহাসে সোনালী অক্ষরে লিখিত হয়েছে তাদের জীবন নিরন্তর সাধনারই জীবন। আমাদের কবি বলেছেন, ‘কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে/দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয়কি মহিতে?’ ইকবালের ভাষায় ‘হাজার তারার মরনে হয় একটি ভোর।’বিপদ-আপদ, মুসিবত, দুঃখ কার জীবনে না এসেছে। যিনি যতো বড় তাঁর জীবনে তত বেশি ঘাত প্রতিঘাত এসেছে।একজন মানুষ অপরাধি না হলেও আল্লাহ তার ঈমানের পরীক্ষা করতে পারেন এই জীবনে।আমাদের কারো কাছে বিপদ আসলে বলা যাবে না এ লোক খারাপ সে জন্য বিপদ এসেছে।আমাদের সবার অন্তর জানে আমরা কে কি কাজ করছি।আমরাই এই বিপদের মুহূর্তে আমাদের বিচার করতে পারি।সে মুহূর্তে আল্লাহর সাহায্য কামনা করাই ঈমানদারদের জন্য উত্তম কাজ।একই সূরার ১৫৫/১৫৬ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'আমরা নিশ্চই তোমাদের পরীক্ষা করবো কিছু ভয়,ক্ষুধা দিয়ে,জান মালের ক্ষতি দিয়ে,ফল ফসলের ক্ষতি দিয়ে, আর সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের।'
মানুষের মাঝে শ্রেষ্ঠ মানুষ হচ্ছেন- নবী-রাসূলগণ। আর সবচেয়ে বেশি বাধা, বেশি বিপদ এসেছে তাঁদের জীবনেই। কুরআনুল কারিমের সূরা ইয়াসীনের ৩০ আয়াতে আল্লাহ পাক আফসোস করে বলেছেন, ‘আফসোস-পরিতাপ বান্দাদের জন্য তাদের নিকট যখনই কোন রাসূল এসেছে তখনই তারা তাদেরকে ঠাট্টা বিদ্রুপ করেছে।’ কুরআনুল কারিমে এর ভূরি ভূরি নজির আছে। কোন নবী-রাসূলের চলার পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। কিন্তু তাঁরা ধৈর্যচুত হননি। কর্তব্য কাজে শিথিলতা প্রদর্শন করেন নি। বরং বাধা যত এসেছে তারা চরম ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে, আদর্শে অটল অবিচল থেকে তত বেশি কর্তব্যকর্মে আত্মনিয়োগ করেছেন।আমাদের সমাজে ধার্মিকতা সম্পর্কে অনেকেরই স্পষ্ট ধারনা নেই।যারা ইবাদাত করেন তারা না বুঝে দায়সারা ভাবে ইবাদাত করেন।আমার ছাত্র জীবনের শেষ প্রান্তে একবার বাংলাদেশ সরকারের একটি অফিসে আমার এক নিকট আত্মীয়ের সাথে গিয়েছিলাম যেখানে তিনি একজন কনট্রাক্টর হিসেবে কাজ করতেন।সময়টা ছিল রোজার দিন ও যুহরের নামাজের সময়।আমার সেই নিকট আত্মীয়ের একটা ৩ লাখ টাকার চেক হিসাব রক্ষকের কাছে পড়ে ছিল।অনেক দিন চেকটি ভদ্রলোক আটকিয়ে রাখলেন।একটি খামে আমার আত্মীয় ১০ হাজার টাকা দিতেই তিনি বললেন,মিয়া সাহেব আপনি রোজার দিন এটা আমার হাতে দিচ্ছেন আর আমি এখন নামাজে যাচ্ছি, এ ড্রয়ারে রাখুন।তিনি হাতে নিলেন না কিন্তু চাবি দিয়ে ড্রয়ার বন্ধ করলেন। কি বুঝলেন পাঠক? এ রকম ধার্মিক লোক আমাদের অফিস আদালত গুলোতে।এবার দেখুন আল্লাহ সূরা বাক্কারার ১৭৭ আয়াতে ধার্মিকতা সম্পর্কে কি বলছেন,' ধার্মিকতা তাতে নয় যে তোমাদের মুখ পূর্ব বা পশ্চিমে ফেরাও।ধর্মনিষ্ঠা হচ্ছে যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে,আখেরাতের প্রতি , ফেরেস্তাদের প্রতি,গ্রন্হখানিতে,নবীদের প্রতি,যে তার প্রতি মহব্বত বশত ধন দান করে আত্মীয় স্বজনদের,এতিমদের,মিসকিনদের,পথচারিদের,ভিখারিদের, দাসদের মুক্তিপন বাবদ,যে নামাজ কায়েম করে,যাকাত আদায় করে,প্রতিজ্গা করার পর ওয়াদা রক্ষা করে,অভাব অনটনে ও বিপদকালে ধৈর্যশীল থাকে, এরাই তারা যারা সত্যনিষ্ঠ ও নিজেরাই ধর্মপরায়ন।'
একজন কবি বলেছেন, ‘বিশ্বযদি চলে যায় কাঁদিতে কাঁদিতে/আমি একা বসে রব কর্তব্য সাধিতে' হাঁ, তারা তাই করেছেন। হযরত নূহ (আ.) দীর্ঘ সাড়ে নয় শত বছর একাধারে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। ঠাট্টা করেছে, বিদ্রুপ করেছে, কওমের লোকেরা তাকে পাগল বলেছে, তাঁর ওপরে দৈহিক মানসিক নির্যাতন চালিয়েছে। কিন্তু তিনি অধৈর্য হননি, পরিত্যাগ করেননি কর্তব্য কর্ম। কর্তব্য সাধনে নিমগ্ন থেকেছেন, এক নয়, দুই নয়, সাড়ে ন'শ বছর।জুলুম এসেছে, নির্যাতন-নিপীড়ন এসেছে তবু বিচলিত হননি, ধৈর্য হারা হয়ে কর্তব্য সাধনে পরান্মুখ হননি। আল্লাহর নবী হযরত জাকারিয়া (আ.) কাফিরদের আক্রমণের মুখে মুজিজা বলে বৃক্ষের ভেতরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কাফিররা আলামত দেখতে পেয়ে করাত দিয়ে গাছসহ তাঁর মাথা থেকে গোটা শরীর ফেড়ে দ্বিখন্ডিত করে ফেলেছিল। কিন্তু সেই যন্ত্রণায়ও তিনি একবারও মুখে আহ্ উহ্ শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি। উদাহরনেরতো কোন অভাব নেই। তা আমাদের পড়তে হবে, জানতে হবে এবং নিজেদের জীবনে তা কার্যকরী করে তুলতে হবে।আমাদের ধর্মীয় পিতা হচ্ছেন হযরত ইবরাহীম (আ.), পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেছেন, ‘মিল্লাতা আবিকুম ইবরাহীম’ এটা হলো তোমাদের পিতা ইবরাহীমের ধর্ম। হযরত ইবরাহীম (আ.), হযরত ইসমাঈল (আ.), মা হাজেরা, তাঁদের কার্যাবলীর অনুসরণ করে চলছে মুসলিম উম্মাহ এবং করবে কিয়ামত পর্যন্ত। তাঁদের জীবনের পরতে পরতে রয়েছে মহান আল্লাহর প্রতি অটল অবিচল ঈমানের দীপ্ত তেজ, ছিল অপূর্ব আত্মত্যাগ ও সীমাহীন ধৈর্য ও সবর। হযরত ইবরাহীম (আ.) এর কথাই ধরা যাক। পিতা আজর পৌত্তলিক, দেশবাসী সবাই মূর্তিপূজক। স্বয়ং বাদশা নিজেকে ঘোষণা দিয়েছে খোদা বলে। দুনিয়ার কোথাও নেই তৌহীদে বিশ্বাসী কোন ব্যক্তি। কেবলমাত্র একজন যিনি আল্লাহকে প্রভু বলে মানেন- তিনি ইবরাহীম (আ.) কিন্তু তিনি দুনিয়ার সমস্ত বৈরিতার মুখোমুখি হলেন নিঃশঙ্ক চিত্তে। ঘোষণা দিলেন তৌহীদের। ভয় আসল, প্রলোভন আসল, জীবনের ওপর হুমকি আসল, কিন্তু তিনি অটল অবিচল। বিন্দুমাত্র টলছেন না। অবশেষে বিশাল অগ্নিকুন্ড সাজিয়ে তাতে নিক্ষেপ করা হলো তাঁকে। তখনো তিনি ধৈর্য হারালেন না, বিচলিত হলেন না। দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। আকাশ ছোঁয়া অগ্নিকুন্ডলি। এলো ফেরেশতারা, প্রস্তাব দিল, অনুমতি চাইল আগুন নিভিয়ে দেয়ার, সাহায্য করার। এবারেও ধৈর্যের বাঁধ ভাংছেনা ইবরাহীমের। নিষ্কম্প নির্বিকার কন্ঠে সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে পরম প্রত্যয়ে জানিয়ে দিচ্ছেন, ‘হাসবুনাল্লাহ’- ‘আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট’- প্রয়োজন নেই তোমাদের কোন সাহায্যের। সবর-ধৈর্য তাওয়াক্কুল ও ইসতিকামাত কাকে বলে! সুবহানাল্লাহ- এর আর কোন নজির নেই।
অপর দিকে পরবর্তী সময়ে মা-হাজেরা ও ইসমাঈল (আ.) যে সহিষ্ণুতা, ধৈর্য ও ত্যাগের উদাহরণ সৃষ্টি করলেন তার নজিরও বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। সে দীর্ঘ কাহিনী এখানে লেখার অবকাশ নেই, প্রয়োজনও নেই। আমি শুধু বিষয়টি অনুধাবনের জন্য আভাস দিয়ে যাব মাত্র। হযরত ইবরাহীম (আ.) এর পরিবার তখন ফিলিস্তিন এলাকায় বসবাস করছেন। দুই সহধর্মিণী সারা ও হাজেরা আর একমাত্র পুত্র দুগ্ধপোষ্য শিশু ইসমাঈল (আ.)।' মক্কা সেখান থেকে প্রায় হাজার মাইল দূরে। এক জনমানবহীন ঊষর ধূসর মরু ভূমি। বয়স ৮০ বছরে পৌঁছেছে ইবরাহীমের, প্রধান স্ত্রী সারা বিবির গর্ভে সন্তান হবার কোন সম্ভাবনা নেই। তখন পর্যন্ত নবী ইবরাহীমের বংশের প্রদীপ, একমাত্র উত্তরাধিকারী অই দুগ্ধপোষ্য শিশু ইসমাঈল। তাকেই মা-সহ দিতে হবে বনবাসে। মহান আল্লাহরও অনুমোদন রয়েছে সারা বিবির এই ইচ্ছায়। অগত্যা নবী ইবরাহীম (আ.) সুদূর মরু পাড়ি দিয়ে পৌঁছলেন এসে পার্বত্য মরু উপত্যকায়। যেখানে পানি নেই, খাবার নেই, কোন ফলবান বৃক্ষ নেই, শত মাইলের মধ্যে কোন লোক বসতি নেই, হয়তো আছে সাপ, বিচ্ছু, নেকড়ে, হায়েনা ইত্যাদি হিংস্র প্রাণী।
চারদিকে খাঁ খাঁ করা মরু, ঊর্ধ্বে মেঘহীন আকাশে আগুন ঝরানো মরু সূর্য। এই ভয়াল বিজন মরুগিরি উপত্যকায় এক অবলা নারী ও এক দুধের শিশুকে নির্বাসন দিয়ে নবী ইবরাহীম যখন ফিলিস্তিনের পথ ধরছেন, তখন হাহাকার করে উঠল অসহায় নারী হাজেরার প্রাণ। হযরত ইবরাহীমের জামার আস্তিন আকর্ষণ করে অশ্রুভরা চোখে, বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে যখন হাজেরা বললেন, প্রিয় স্বামী- এই ভয়াল বিজন পার্বত্য মরু উপত্যকায় এই দুগ্ধ পোষ্য শিশুসহ আমাকে রেখে আপনি কোথায় যাচ্ছেন? সান্ত¦না দেবার ভাষা নেই হযরত ইবরাহীমের কন্ঠে। নয়নে তাঁরও অশ্রুর প্লাবন। ধৈর্য ধর হাজেরা। আমি যা করছি- এটাই আল্লাহর ইচ্ছা। স্তব্ধ হয়ে গেলেন মা হাজেরা। কন্ঠে নেই আর তাঁর কোন অনুযোগ-অভিযোগ, প্রশান্ত চিত্তে শুধু উচ্চারণ করলেন আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের যদি এই অভিপ্রায় হয়ে থাকে যে, এখানেই আমি ও আমার সন্তানকে থাকতে হবে! আবার সেই শিশু যখন কৈশোরে পদার্পণ করল- তখন রাব্বুল আলামীনের নির্দেশ এল ইবরাহীম! তোমার সর্বাধিক প্রিয় বস্তুকে কোরবানী কর আমার ভালবাসায়। সর্বাধিক প্রিয়? সেতো আমার বংশের একমাত্র প্রদীপ, আমার একমাত্র উত্তরাধিকারী, একমাত্র পুত্র ইসমাঈল। আল্লাহ তাকেই কোরবানী দিতে বলছেন তাঁর ভালবাসায়! ইন্না সালাতী, ওয়া নুসুকী, ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।’‘অবশ্যই আমার নামায, আমার কোরবানী, আমার জীবন-মরণ সব কিছু একমাত্র আল্লাহরই জন্য। আল্লাহর সন্তুষ্টির চেয়ে বড় কিছু নাই মুমিনের যিন্দেগীতে। তিনি যদি প্রাণ চান, প্রাণ বিলিয়ে দিতে হবে হাসি মুখে বিনা দ্বিধায়, বিনা সংকোচে। মনস্থির করে ফেললেন এবং কোরবানি করলেন।আল্লাহ খুশি হয়ে গেলেন ইব্রাহীমের প্রতি আর সে স্হানে পশু স্হাপন করে রোজ ক্কিয়ামত পর্যন্ত আমাদের জন্য ইবাদাতে পরিনত করলেন।
বর্তমান মুসলিমদের ভীতরে ধর্মের আবরনে যারা বাস করছে তারা সুযোগ পেলেই ইসলামের ক্ষতি করার অপচেষ্টা করে।এদের বন্ধু হিসেবে নেয়ার কোন কারন নেই।কারন তারা ঈমানদারদের যে কোন মুহূর্তেই ক্ষতি করতে পারে।সমাজে বিভিন্ন দলগুলোর কার্যক্রম দেখলে এটা প্রতীয়মান হয় যে, একদলের যখন ক্ষতি হয় তখন অন্য দল তাতে খুশি হয়।এ সময় যারা খাঁটি ঈমানদার তাদের আল্লাহর প্রতি দৃড় থাকতে হবে।সূরা আল ইমরানের ১২০ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' যদি শুভ কিছু তোমাদের জন্য ঘটে তবে সেটা তাদের দু:খ দেয় আর যদি মন্দ কিছু ঘটে তবে তারা পরমান্দিত হয়।আর যদি তোমরা ধৈর্যশীল ও ধর্মপরায়ন হও তবে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের এতটুকু ক্ষতি করবে না।' আর ঈমানদারদের আল্লাহ সূরা আরাফের ১২৬ আয়াতে শিখিয়ে দিয়েছেন দোয়া করার জন্য এভাবে,' আমাদের প্রভু! আমাদের উপর ধৈর্য বর্ষন কর আর আমাদের মৃত্যু ঘটাও মুসলিম রুপে।' আল্লাহর নৈকট্য ও সফলতার জন্য আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরন করতে হবে।সমাজে বসবাসের ক্ষেত্রে কারো সাথেই ঝগড়া বিবাদ করা চলবে না।হতে পারে আত্মীয় বা প্রতিবেশী খারাপ আচরন করেছে বা জুলুম করেছে।এ ক্ষেত্রেও আল্লাহর উপর অটল ভরসা রাখতে হবে।সূরা আনফালের ৪৬ আয়াতে আল্লাহ বলেন,"আল্লাহ ও তার রাসূলকে মেনে চল আর বিবাদ করোনা পাছে তোমরা দুর্বল চিত্ত হয়ে পড়।আর অধ্যবসায় অবলম্বন কর।নিশ্চই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।' মানবজাতির কাছে এই কুরআনের বারতা এসেছে শুধুমাত্র তাদের কল্যানের জন্য। কিন্তু মানুষের এ কুরআন বিমুখতা তাদের অনিষ্ট ডেকে নিয়ে এসেছে।এই বিশ্ব ব্রমান্ডের মালিক একমাত্র আল্লাহ।মানুষের উচিত ছিল তারই বিধান মেনে চলা।তিনিই সুপথ দেখিয়েছেন কিন্তু একশ্রেনির মানুষ ভ্রান্ত পথকে বেচে নিয়েছে।সূরা ইউনুছের ১০৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' আর তোমার কাছে যা প্রত্যাদিষ্ট হয়েছে তুমি তারই অনুসরন কর।তবে অধ্যবসায় চালিয়ে যাও যে পর্যন্ত না আল্লাহ বিধান দেন আর তিনিই সর্বোত্তম বিধানকর্তা।'
সৎ কর্মশীলরা আপাতদৃষ্টিতে কালো অন্ধকার দেখলেও আসলে তারাই জয়ী।সমাজ পর্যালোচনা করলে কি চোখে পড়ে না,একজন সৎকর্মশীল জড়সড় হয়ে জীবন যাপন করছেন।অর্ধাহারে অনাহারে জীবন যাপন করছেন অথচ তিনি একজন নামাজি , পরোপকারি।জীবনের টানাপোড়নে অস্হিরতা থাকলেও তিনি আল্লাহর আদেশকেই মেনে নেন,অবিচল থাকেন জীবনের সর্বক্ষেত্রে।এই ধরনের মানুষদের আল্লাহ সুসংবাদ দিয়েছেন সূরা হুদের ১১৫ আয়াতে এভাবে,' আর ধৈর্যধারন কর,কেননা আল্লাহ নিশ্চই সৎকর্মশীলদের কর্মফল ব্যার্থ করেন না।' আমরা সূরা ইউছুফে দেখতে পাই ইয়াকুব আ: ধৈর্যের কি পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছিলেন।যখন তার(ইউছুপ) ভাইরা তার সার্টের উপর ঝুটা রক্ত লাগিয়ে আনলো,ইয়াকুব আ: সূরা ইউসূফের ১৮ আয়াতে বললেন,' ধৈর্যধারনই উত্তম।আল্লাহই সাহায্য কামনার স্হল,তোমরা যা বর্ননা করছ সে-ক্ষেত্রে।' এ দুনিয়ার জীবন যেমন ক্ষনস্হায়ি তেমনি মানুষের কাছে যা আছে তা ফুরিয়ে যায় অতি তাড়াতাড়ি।আল্লাহর কাছে যা রয়েছে তা অফুরন্ত।যারা আল্লাহর অংগিকারকে স্বল্পমুল্যে বিক্রয় করে তাদের জন্য রয়েছে বিরাট শাস্তি।সেজন্য আল্লাহ সূরা নাহলের ৯৬ আয়াতে বলেন,' যা তোমাদের কাছে রয়েছে তা নি:শেষ হয়ে যায় আর যা আল্লাহর কাছে আছে তা স্হায়ী।আর যারা ধৈর্য অবলম্বন করে তাদের প্রতিদান দিব শ্রেষ্ঠ প্রতিদানে।'
আল্লাহ পাক আলকুরআনে এ রকম অসংখ্য আয়াতে ধৈর্য অবলম্বন কারিদের পুরস্কারের কথা বলেছেন।দুর্ভাগ্যবশত আমরা কুরআনের কাছে না যাওয়ার কারনে পৃথিবীতে অনাচার সৃষ্টি করছি।যখনই তাদের কাছে কুরআন ও হাদিসের কথা বলা হয় বা ইসলাম কায়েমের কথা বলা হয় তারা এ থেকে দূরে সরে যায়।ধর্মনিরপেক্ষতা ও বিভিন্ন জাতিয়তাবাদ এবং ইসলামের মুলচেতনা থেকে সরে যাওয়া বিভক্ত দলগুলো যারা দুনিয়ার স্বার্থে ইসলামকে ব্যাবহার করছে তাদের ব্যাপারে সূরা বাক্কারার ১১ আয়াতে বলা হয়েছে ,' আর যখন তাদের বলা হয় , দুনিয়াতে তোমরা গন্ডগোল সৃষ্টি কর না,তারা বলে আমরাই তো শান্তিকামি।' আসল কথা হলো এরা আখেরাতে বিশ্বাসি নয়।তবে যারা ইসলামের খাঁটি ঈমানদার বান্দাহ তারা অটল থাকেন ঈমানের উপর।তাদের দ্বারা সমাজ ও জীবনের কোন ক্ষতি সম্ভব নয়।দুনিয়ার সমস্ত অকল্যান থেকে বেঁচে থাকতে হলে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে তাহলে সম্ভব আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছা আর তারই সাধনা করা উচিত আমাদের সবার।
বিষয়: বিবিধ
৩২৩৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন